Ex গার্লফ্রেন্ড পর্বঃ৫

0
922

Ex গার্লফ্রেন্ড
পর্বঃ৫
#আবির হাসান নিলয়

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম জান্নাত
অনেকগুলো কল করেছে।কল ব্যাক করতে
যাবো তখনি জান্নাত আবার কল করলো।
আমিঃহ্যালো
জান্নাতঃতোকে কি আমি অনেক বেশি
বিরক্তি করি?
আমিঃবিরক্তিই তো করিস
জান্নাতঃসরি বিরক্তি করার জন্য কিন্তু রাতে
কল ধরলি না কেনো?
আমিঃঅনেক ক্লান্ত ছিলাম,তাই ঘুমাই গেছিলাম
জান্নাতঃওহ,আজ দেখা করবি কলেজে?
আমিঃপ্রতিদিন তো দেখা হয়
জান্নাতঃআজ একটু সকাল সকাল আসিস
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃতখনি বলবো
আমিঃওকে
আর শুয়ে না থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি
হতে শুরু করলাম।রেডি হয়ে নাস্তা করে
কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।আজ একাই
যাচ্ছি।কারণ জান্নাত কোনো এক কারণে
আজ সকাল সকাল যেতে বলছে।অন্যদিন
সবাই একসাথে গেলেও আজ একাই।

কলেজে এসে মাঠে দাঁড়াতেই জান্নাত কাছে
আসলো।আমার আগেই জান্নাত চলে আসছে
আমিঃবল কি বলবি?
জান্নাতঃতুই সাদিয়াকে ভালোবাসিস?
আমিঃসেসব তোর জেনে লাভ কি?
জান্নাতঃবল আমাকে প্লিজ
আমিঃহঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?
জান্নাতঃবাসায় কি হয়েছে জানিস কিছু?
আমিঃকি হয়েছে
জান্নাতঃতোর আর সাদিয়ার বিয়ের কথা
বলা হচ্ছে।
আমিঃকিহ..মানে কি?
জান্নাতঃমানে তুই জানোস না?কুত্তীটা তোকে
ভালোবাসে।বাসায় এই কথা বলায় সবাই
রাজি হয়ে গেছে।
আমিঃতাহলে তো ভালোই হয়েছে,বড়লোক
বাসার জামাই হবো।
জান্নাতঃতোর জামাইয়ের গুষ্টি,শুয়োর তোর
আমার রিলেশনের কথা তুই সাদিয়াকে বল
আমিঃহোয়াট দ্যা ফাও কথা,আমাদের এখন
আবার কিসের রিলেশন।
জান্নাতঃদেখ আমি মজা করছি না
আমিঃতো আমি কেনো মজা করবো?
জান্নাতঃতুই সবাইকে বলবি নাকি আমি
নিজেই সবাইকে সব বলবো?
আমিঃকি বলবি তুই?
জান্নাতঃএইযে তোর আর আমার রিলেশন
আছে।আমদের দুজনের কোর্ট ম্যারিড আছে
আমিঃওরে আল্লাহ?,তোরে আমি কোন
জন্মে বিয়ে করছি?
জান্নাতঃএটা না বললে কেউ বিশ্বাস করবে না
আমিঃদেখ ভাই,আমি এসব ঝামেলাতে নাই
জান্নাতঃঝামেলা মানে,এতোদিন আমার
সাথে থেকে এখন আমার বড় বোনকে বিয়ে
করতে যাচ্ছিস।
আমিঃতোর সাথে ছিলামই কখন?

জান্নাত কিছু সময় চুপ থাকার পর আবার
বলতে শুরু করলো….
জান্নাতঃতুই আমাকে ভালোবাসিস কি?
আমিঃনা
জান্নাতঃসাদিয়াকে ভালোবাসিস?
আমিঃনা
জান্নাতঃযদি তোকে বিয়ে করতে বলে তখন
তুই আমাদের মাঝে কাকে বিয়ে করবি?
আমিঃযদি দুজনের অপশন থাকে তাহলে
দুজনকেই বিয়ে করবো।
জান্নাতঃবা*** আজাইরা কথা বলবি না
আমিঃআজাইরা কথা কই বললাম?
জান্নাতঃথাক শুয়োর তুই,তুই তোর সাদিয়াকে
নিয়েই থাক।
আমিঃসাদিয়া আমার না,তোর বোন
জান্নাতঃশুয়োর?

আর কিছু না বলে চলে গেলো।অনেক হাসি
পাচ্ছিলো,তবে ওর সামনে হাসলে উল্টো
বেশি কথা বলতো।আমিও আর সেখানে বসে
না থেকে উঠে কলেজে আসলাম।বন্ধুরা
অনেক আগেই এসএমএসে কলেজে আসছে
জানিয়ে দিয়েছে।তাই সোজা ওদের কাছে
গেলাম।
জয়ঃকোথায় ছিলি?
আমিঃপ্রেম করলাম
মারিয়াঃমজা নিস কুত্তা?
আমিঃতো কিতা করমু বল
রিয়াঃকিসের জন্য আসছিলি?
আমিঃএকটা কাজ ছিলো রে,তোরা কখন
আসছিস এখানে?
রাহুলঃএইতো আসলাম।
মারিয়াঃজান্নাত কি কলেজে আসছে?
সাদিয়াঃহুম অনেক আগেই আসছে।
ওদের কথা বলা দেখে হারামি গুলো আমার
দিকে দেখলো।চোখ দিয়ে কিছু বোঝানোর
চেষ্টা করছিলো।বুঝতে পারছিলাম ওরা
আমাকে কি বলতে চাইছে।তবে কিছু না
বলে চুপচাপ অবুঝ বাচ্চাদের মতো বসে
রইলাম।

হারামিদের দিকে না তাকিয়ে ওদের কথায়
মনোযোগী হলাম।
মারিয়াঃওর সাথে কথা ছিলো
সাদিয়াঃকি কথা?
মারিয়াঃএমনি আরকি
সাদিয়াঃঐযে সুমু যাচ্ছে
মারিয়াঃএই সুমু
সুমুঃজ্বি আপু
মারিয়াঃজান্নাতের সাথে দেখা হয়েছে?
সুমুঃআমি তো মাত্র আসলাম
মারিয়াঃদেখা হলে আমার কথা একটু বলো
সুমুঃঠিক আছে আপু

সুমু হচ্ছে জান্নাতের ফ্রেন্ড,তবে আমাদের
এলাকার না।জান্নাতের ব্যাচের কোনো
ছেলে মেয়েই আমাদের এলাকাতে নেয়।
শুধুমাত্র জান্নাত নিজেই এই ব্যাচের।ছোট
বড় অনেকেই আছে তবে ওর সমবয়সী কেউ
নেই এলাকাতে।সে যায় হোক,সবাই মিলে
কথা বলছিলাম তখন খেয়াল করছিলাম
সাদিয়া কেমন আড় চোখে তাকিয়ে দেখছে।
এক মেয়েও দেখছি ছোট বোনের মতো
ছ্যাঁচড়ামি শুরু করে দিছে।হঠাৎ সাদিয়া
সবার উদ্দেশ্য বলল…..
সাদিয়াঃহয়তো সামনে আমার জন্য একটা
গুড নিউজ অপেক্ষা করছে।যদি সেটা
হয় তাহলে সবাইকে ট্রিট দেয়ার দায়িত্ব
আমার।যেটা চাইবি সেটাই হবে।
জয়ঃআমাগো লইয়া ঘুরতে যাইবি?
সাদিয়াঃঘুরতে যাবো কেনো?
জয়ঃতাহলে বললি কেনো?
সাদিয়াঃখাওয়ার কথা বলছি
রাহুলঃআমাগো বাপ মা কি কিছু খাওয়াই
নাই,যে তোর ট্রিট খাবো?তবে তুই জোর
করলে না করবো না?
সাদিয়াঃকুত্তা
আমিঃকিসের গুড নিউজ?
সাদিয়াঃআমার বিয়ে
আমিঃহোয়াট?তোর বিয়ে মানে?

একটা এক্সট্রা ভাব নিলাম,জেনো মাইয়া
প্রেমে বেশি করে পড়ে?
সাদিয়াঃআরে রাগছো কেনো?যখন ঠিক
হবে তখন সবার আগে তুমিই জানবে।
রাফিঃও কেনো জানবে?
সাদিয়াঃকারণ ও আমার প্রতিবেশী।
রাফিঃতোর বাসা আর ওর বাসার দূরত্ব ৫
মিনিট। আর আমার সাথে আর তোর বাসার
দূরত্ব ৩ মিনিট। তাহলে আমার আগে ও
কিভাবে জানতে পারে?
সাদিয়াঃ…?(কিছু বললো না)
আমিঃসালা চুপ কর
রাফিঃনা,তুই আমারে বুঝা কিভাবে হয়
সুমুঃতুই চুপ করবি?
রাফিঃআমি কেনো চুপ করবো?
আমিঃসালা গাওড়া,আল্লাহর রস্তে তুই
একটু থাম।
রাফিঃতুই বললি তাই থামলাম।
আমিঃহো ধন্যবাদ ভাই
রাফিঃতবে সাদিয়া,ট্রিট যদি দিস তাহলে
আমাদের ট্যুরে যাওয়ার টাকা দিবি
সাদিয়াঃবাট….
রাফিঃকোনো কিন্তু না,বিয়ে তোর হবেই তাই
আমাদের ট্রিটটাও দিতে হবে।
সাদিয়াঃযা দিমু
মারিয়াঃআমরাও যেতে পারবো তো?
আমিঃতগো টাকায় তোরা যাবি আর আমরা
সাদিয়ার টাকায় যাবো?
মারিয়াঃসালা ছ্যাঁচড়া
আমিঃআমি জানি জানু?

কথা বলার মাঝে জান্নাত আসলো।
জান্নাতঃকিছু বলবে?
মারিয়াঃহ্যা,আয় বস
জান্নাতঃনা,এমনেই বলো
আমিঃকেউ বকা দিছে নাকি?যার জন্য এমন
করে টমেটো হয়ে আছিস।
জান্নাতঃতোরে কথা বলতে বলছি?
আমিঃভাব হু?
জান্নাতঃমারিয়া আপু বলো
মারিয়াঃআম্মু তোকে বাসায় যেতে বলছে
জান্নাতঃকেনো?
মারিয়াঃসেটা বলেনি
জান্নাতঃএটা তো কল দিয়েও বলা যায়
মারিয়াঃহ্যা,কিন্তু আমার ফোন রিসেট দিছি
তাই সব কিছু ডিলিট হয়ে গেছে।
জান্নাতঃভালোই মিথ্যা বলতে পারো
মারিয়াঃআরে না সত্যি
জান্নাতঃএটাই বলতে চেয়েছিলে?
মারিয়াঃহ্যা,আমাদের মাঝে বস।এখানে
বসে সবার সাথে আড্ডা দে
জান্নাতঃছ্যাচড়া ছেলেদের সাথে বসে আড্ডা
দেয়ার আমার ইচ্ছা নাই।
জয়ঃআমাদের কোনদিক দিয়ে ছ্যাঁচড়া
লাগে তোর?
জান্নাতঃএটার চাইতে অন্য একটা প্রশ্ন
করলেই পারতি।
জয়ঃকি প্রশ্ন?
জান্নাতঃকোন দিক দিয়ে আমাদের সামান্য
ভালো দেখায়।
আমিঃতুই তো খুব ভালো,মোনালিসার
বংশধর। তোকে ভালো না লেগে কি আমাদের
ভালো লাগবে বল..!
জান্নাতঃভালো করে কথা বল
আমিঃতুই বড়দের সম্মান করে কথা বল
জান্নাতঃবড় হয়ে যদি ছোটদের মন নিয়ে
খেলে তাহলে কিসের সম্মান পাবে বল?
আমিঃছোটরা যদি ছ্যাঁচড়ামি করে লেগে
থাকে,সেখানে বড়দের কি দোষ।
জান্নাতঃমেয়েদের সম্মান করতে শেখ

আর কোনো কথা না বলে চলে যাবে তখন
জান্নাতের উদ্দেশ্য বললাম…
আমিঃসম্মান তাদেরই করা যায়,যারা সম্মান
পাওয়ার যোগ্য এবং বড়দের শ্রদ্ধা করে বড়
ভাই মনে করে।

এটুকু বলতেই কাছে এসে উরাধুরা মাইর
শুরু করলো।অনেক কষ্টে সবাই মিলে
আমাকে আর জান্নাতকে আলাদা করলো।
কলেজের সবার সামনে একটা মেয়ের
হাতে মাইর খেলাম এর থেকে লজ্জার কি
আছে।মন চাইছে ইচ্ছামতো পিটাই।কিন্তু
কিছু বলতে পারছিলাম না।জান্নাত ওখানে
না থেকে চলে যাবে তখন লক্ষ্য করলাম
ওর চোখে জল টলমল করছে।কি মেয়েরে
বাবা…!নিজেই মারবে আবার নিজেই কান্না
করবে।?

নিজেকে ঠিক করে আর ওখানে বসলাম না।
ক্লাসের দিকে রওনা দিলাম।কিছু সময় ক্লাসে
বসে থাকার পর ক্লাসে স্যার আসলো।ক্লাসে
স্যার এসে প্রথমেই বলল….
স্যারঃনিলয় দাড়া
আমিঃজ্বি স্যার
স্যারঃসকালে কার সাথে মারামারি করছিস?
আমিঃকোথায় স্যার
স্যারঃতাহলে প্রিন্সিপাল স্যার তোকে কেনো
তার কাছে যেতে বলল?
আমিঃস্যার আমি তো কোনো গ্যাঞ্জাম করিনি
স্যারঃতুই স্যারের থেকে ঘুরে আয়,স্যার
আমাকে বললো তোকে পাঠিয়ে দিতে।
আমিঃওকে স্যার।

আর ক্লাসে না থেকে প্রিন্সিপাল স্যারের
রুমের দিকে যেতে লাগলাম।আমি আবার
কার সাথে মারামারি করলাম,আর আজ
এমনিতেও কোনো মারামারি হয়নি কলেজে।
এক বালতি চিন্তা নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের
রুমে গিয়ে দেখলাম জান্নাত বসে আছে।
বুঝতে পারলাম কুত্তীটা স্যারকে বলছে।
আমিঃস্যার আসবো?
স্যারঃহ্যা আয়
আমিঃধন্যবাদ
স্যারঃএখন বল কি হয়েছে?
আমিঃআমি তো কিছুই জানিনা স্যার
স্যারঃজান্নাতের সাথে কি হয়েছে?
আমিঃস্যার ও নিজে থেকেই আমাকে মারছে,
তারপর ও নিজেই কান্না করছে।
জান্নাতঃও আমাকে রাগিয়ে তুলেছে তাই
ওকে মেরেছি।
আমিঃতাই বলেএকটা ছেলের গায়ে হাত
তুলতে হবে?
স্যারঃচুপ,এটা বাসা না তোদের।
আমিঃস্যার আমার এখানে কি কাজ বলেন?
ও নিজেই মারছে আবার নিজেই আপনার
কাছে নালিশ দিতে আসছে।
জান্নাতঃআমি নালিশ দিছি নাকি তুই?
আমিঃআমি কেন দেবো?
স্যারঃএকদম চুপ(ধমক দিয়ে)

স্যারের ধমক খেয়ে দুজন চুপ হয়ে গেলাম।
হুদাই আর কথা বলে লাভ নাই।
স্যারঃতোরা এখন আর ছোট নেই,যে তোদের
হাত ধরে বোঝাতে হবে কোনটা ভালো আর
কোনটা খারাপ।কলেজে এসে একটা ছেলে
আর আরেকটা মেয়ে মারামারি করা মানে
অনেক বড় কিছু।তাই তোদের ভালো করে
বলছি,আর কখনো জেনো এই খবর আমি
না শুনি।
আমিঃওকে স্যার
স্যারঃআর জান্নাত তুই বুঝতে পারছিস?

কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।এই মেয়ের
স্বভাব এমনই।কেউ কিছু বললেই রাগ
দেখিয়ে চলে যাবে।যদিও প্রিন্সিপাল স্যার
জান্নাতের মামা।তবে ওর চলে যাওয়া
আমার মোটেও ভালো লাগেনি।
স্যারঃওর সাথে গ্যাঞ্জাম করার কোনো
দরকার নেই।জান্নাতের থেকে একটু দূরে
থাকার চেষ্টা করিস।
আমিঃজ্বি স্যার
স্যারঃযা ক্লাসে যা
আমিঃধন্যবাদ স্যার।

স্যারের রুম থেকে বের হয়ে সোজা ক্লাসে
এসে ক্লাস করতে লাগলাম।ক্লাসের মধ্যে
বন্ধুরা সবাই জিজ্ঞাস করলেও কোনো উত্তর
দেয়নি।সব গুলো ক্লাস শেষ করে বাইরে
আসতেই সবাই ঘিরে ধরলো কি হয়ছে।তখন
উল্টাপাল্টা কাহিনী শোনাচ্ছি তখন মেন্টাল
কুত্তীটা এসে হাজির।?

চলবে………….
গতকাল রেজাল্টের জন্য গল্প দেয়নি।পাশ
করেছি তবে A+ মিস করেছি।তাই আলাদা
করে জিজ্ঞাস করবেন না কতো পেয়েছি ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here