Ex গার্লফ্রেন্ড পর্বঃ৬

0
625

Ex গার্লফ্রেন্ড
পর্বঃ৬
#আবির হাসান নিলয়

সবাইকে যখন উল্টাপাল্টা বোঝাচ্ছি তখন
পাগলিটা এসে হাজির..।
জান্নাতঃতুই স্যারের কাছে নালিশ দিলি কেন?
আমিঃআমি কেনো দেবো?
জান্নাতঃতাহলে স্যার জানলো কি করে?
আমিঃমামাটা তো তোর তাই তুই গিয়েই
জিজ্ঞাস কর
জান্নাতঃমেজাজ খারাপ করবি না
আমিঃমেজাজ খারাপ করছিস তুই,সেগুলো
আমি করিনিই তুই সেটা আমাকে বলছি।
জয়ঃকি কথা বলছিস তোরা?
আমিঃস্যার আমাকে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে
যেতে বললো না তখন..!
জয়ঃহ্যা
আমিঃতখন স্যার আমাদের মারামারির কথা
বললো।আর আমি নাকি প্রিন্সিপাল স্যারের
কাছে গিয়ে নালিশ দিছি
জয়ঃসেটা দিস নি,কিন্তু তুই আমাদের কেনো
মিথ্যা বললি?
আমিঃসবার থেকে ওকে ভালো সাজাতে
চাইছিলাম।কিন্তু ও তো সবার কাছে অনেক
আগে থেকেই পাল্টে গেছে।
জান্নাতঃতোর সাথে কথা আছে চল
সাদিয়াঃকি কথা?
জান্নাতঃদুজন বিয়ে করবো,দেখবি তুই?
সাদিয়াঃমজা নিবি না
জান্নাতঃসবার সাথে বাসায় যা
সাদিয়াঃআমিও আসি?
জান্নাতঃগতকাল আমাকে নিছিলি?
সাদিয়াঃনা,কিন্তু আমি তো নিলয়কে বিশ্বাস
করি।তবে তুই করিস না।
জান্নাতঃতবুও তোকে লাগবে না।
সাদিয়াঃহু?

আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে সবাই চলে
গেলো।জানিও না এই পাগলিটা কোথায়
নিয়ে যাবে আমাকে।
জান্নাতঃচল এখন
আমিঃকোথায়?
জান্নতঃজাহান্নামে
আমিঃহোপ,এই বয়সে মরে জাহান্নামে
যাওয়ার ইচ্ছা নাই
জান্নাতঃবা** তুই বেশি কথা বলিস
আমিঃওকে আমি চুপ

এবার জান্নাত আমার হাত ধরে কলেজের
বাইরে এসে একটা রিক্সায় উঠলাম।তবে
যেদিকে যাচ্ছি সেটা বাসার পুরো উল্টো দিক
ইচ্ছা করলেও কিছু বলতে পারছিলাম না।
যদি রেগে বকা দেয়।সে যাই হোক, জান্নাত
নিজে থেকেই বলতে শুরু করলো…..
জান্নাতঃতোকে কি আমার ভালোবাসা ভুল
ছিলো?যার জন্য এতো কষ্ট দিচ্ছিস?
আমিঃকষ্ট পেতে হয়,তাহলে বোঝা যায়
কোনটা সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা।
জান্নাতঃতুই কি ভেবেছিস,তুই সাদিয়াকে
বিয়ে করবি আর আমি সেটা খুব সহজেই
মেনে নেবো?
আমিঃকেউ আবার মেনে নেয়াকে কঠিক
আর সোজাভাবে করে মেনে নেয়?
জান্নাতঃআমি সত্যি বলছি তুই যেদিক ওকে
বিয়ে করতে যাবি সেদিন রাতেই আমার
লাশ পরে থাকবে।
আমিঃআমার এসব বাজে কথা একদমই
ভালো লাগে না।
জান্নাতঃকি করলে তুই মেনে নিবি বল?
আমিঃজানা নেই আমার
জান্নাতঃযখন আমার মৃত দেহকে ব…….

আর কিছু বলার আগেই রিক্সার উপরই
জান্নাতের ঠোঁটের সাথে নিচের ঠোঁট মিলিয়ে
নিতেই জান্নাত এমদম চুপ হয়ে গেলো।
হয়তো এমনটা করবো আশা করেনি।তবে
যে হারে মরার কথা বলছিলো,এটা না করলে
কিছুতেই চুপ করতো না।জান্নাতকে আমার
এটা দ্বিতীয় ভালোবাসার ছাপ।প্রথমবার
যখন আমাদের রিলেশন অনেক বেশিই
সুন্দর ছিলো।ছিলো না তখন কোনো প্রকার
মিথ্যা এবং অবহেলার ছায়া।সেই দিনগুলো
তো অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।জানিনা
জান্নাত কি মনে করছে,তবে এতোদিন পর
আমার তো সেই লাগছে?

কিছু সময় চুপ থাকার পর জান্নাত বলল….
জান্নাতঃআমাকে ভালোবাসিস?
আমিঃতো কাকে ভালোবাসবো?
জান্নাতঃতাহলে তুই আমার বাসায় আজকেই
বিয়ের কথা বলবি।
আমিঃআজ কিভাবে হয়?এখন বিকেল
জান্নাতঃতাহলে কি সাদিয়ার সাথে বিয়ে শেষ
হওয়ার পর বলবি?
আমিঃকি শুরু করলি তুই?ওকে কেন বিয়ে
করতে যাবো আমি।আর দোষ আমার না,
তুই নিজেই কাউকে জানাতে বারণ করছিলি।
এখন তোদের মাঝে কি হয়েছে আমি কি
করে বলবো।আর সাদিয়াকে আমি কিছু
বলতে পারবো না।আব্বু আম্মু সাথে ওর
অনেক মিল।যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে তখন
উনারা আমাকে খারাপ ভাববে।
জান্নাতঃসালা তুই নিজে লুচ্চা সেটা বললেই
পাড়িস। তুই আমার সাথেও থাকবি আবার
আমার বোনের সাথেও থাকতে চাস।
আমিঃতোর বোন যদি আমার সাথে থাকতে
চায় সেখানে আমি কি করবো।আর তুই
তো জানি আমি কাউকে বারণ করি না।
জান্নাতঃআর একটা কথা বললে লাথি দিয়ে
রিক্সা থেকে ফেলে দেবো।
আমিঃআমরা যাচ্ছি কোথায়?
জান্নাতঃমামা বাসায়
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃগেলেই বুঝবি
আমিঃআইচ্ছা

জান্নাতের কাদে হাত রাখতেই ও নিজেও
আমার কাদে মাথা রাখলো।জান্নাতকে বোঝা
অনেক কঠিন।ও কখন কি চায় সেটা ওর
থেকে অন্য কেউ ভালো বলতে পারবে না।
সবটা সময় ওর মাথায় কিছু একটা ঘুরপাক
খায়।তবে সেগুলো আমাকে জ্বালানোর জন্য
সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।

অনেকটা সময় পর জান্নাতের মামা বাড়ি
আসলাম।রিক্সা থেকে নেমে বাসার ভিতরে
গিয়ে দেখলাম দুজন অর্ধবয়স্ক মহিলাদের
সাথে একটা বাচ্চা বসে আছে।জান্নাত এগিয়ে
গিয়ে উনাদের জড়িয়ে ধরলো।অনেকবার
এই বাসায় আসছি তাই মহিলাদের সাথে
সাথে এই বাসার কম বেশি অনেককেই চেনা।
বসে থাকা মহিলাদের মাঝে একটা ওর বড়
মামি আরেকজন ছোট মামি।আর বাচ্চাটা
ওর বড় মামির ছেলে।উনাদের কাছে গিয়ে
সালাম দেয়ার পর বসতে বলল।
—কেমন আছো নিলয়?
আমিঃজ্বি ভালো,আপনারা কেমন আছেন?
—আমরাও ভালো আছি,বাসার সবাই সুস্থ
আছেন তো?
আমিঃজ্বি,সবাই সুস্থ
জান্নাতঃমামি আমার কথা কি শুনবা তোমরা?
—হ্যা বল
জান্নাতঃআজ রাতে বাসায় কল দিয়ে আমার
বিয়ের কথা বলবে।যদি পাত্রের কথা বলে
তখন নিলয়ের কথা বলবো।

কি মেয়েরে বাবা,নিজের বিয়ের কথা নিজেই
এসে বলছে।আল্লাহ জানেন,সামনে এই
মেন্টালের জন্য আর কি অপেক্ষা করছে।
জান্নাতঃঐ নিলয়
আমিঃহ্যা বল
জান্নাতঃবল মামিদের
আমিঃজ্বি মামি,সরি আন্টি।জান্নাত যে বলল
সেটাই আরকি।
—তাহলে আমরা রাতে কল দেবো
জান্নাতঃহুম,তবে আমাদের কথা বলতে
পারবে না।বললে আবার এসে তোমাদের
খবর করে ছারবো হু।
—আচ্ছা বলবো না,এখন কিছু খেয়ে নে।
জান্নাতঃনা,এখন আর খাবো না।
—কিছু তো মুখে দিয়ে যা
জান্নাতঃআবার আসবো,আজ না।নিলয় আয়
আমিঃকিছু খেয়ে গেলে সমস্যা কি?মামিশাশুড়িদের
বাসায় আসলাম,খালি মুখে যাওয়া যায়?
জান্নাতঃউঠ কুত্তা

আমাকে টানতে টানতে বাসার বাইরে নিয়ে
আসলো।জান্নাত নিজেও হাসছে,ভেবেছিলাম
আমাকে মারবে।তবে সেটা আর করলো না।
সামনে থেকে একটা রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম
আমার বাসার সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে
জান্নাত গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।

বাসার ভিতরে এসে দেখলাম আম্মু কিছু
একটা পরিষ্কার করছে।
আমিঃকি করছো?
আম্মুঃবাসায় ছেলে দেখতে আসছিলো,তাই
সব কিছু পরিষ্কার করছো।
আমিঃওহ..হোয়াট?বাসায় ছেলে দেখতে
আসছে মানে?
আম্মুঃতোকে দেখতে আসছিলো,কিন্তু তুই
তো অনেক বিজি মানুষ,কল দিয়েও পাওয়া
যায় না।
আমিঃফোন সাইলেন্ট করা ছিলো,কিন্তু কে
কাকে দেখতে আসছিলো।
আম্মুঃতোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছিলো
আমিঃকার জন্য
আম্মুঃসাদিয়ার জন্য
আমিঃতোমরা কি বললে?
আম্মুঃরাজি না হয়ে কি করবো?
আমিঃআমার কাছে জিজ্ঞাস করবানা?
আম্মুঃতোকে আমি কল দেয়নি সেটা বল?
আমিঃদিছো কিন্তু….
আম্মুঃআমি কিছু বলি নাই।নিলু বলছে,
ভাইয়া আসুক তারপর ওর থেকে শুনে এটা
নিয়ে কথা বলবো।
আমিঃনিলু বলছে?
আম্মুঃতো থেকে নিলুর জ্ঞান বেশি হয়েছে।
আমিঃভালো করছো

আর কোনো কথা না বলে রুমে এসে ফ্রেস
হয়ে নিলাম।ফ্রেস হয়ে রুমে এসে জান্নাতকে
কল দেয়ার আগে সাদিয়া কল দিলো।কল
রিসিভ করার পর বলল……
সাদিয়াঃকি করো
আমিঃদাড়িয়ে আছি,তুই?
সাদিয়াঃবসে আছে।
আমিঃকিছু বলবি?
সাদিয়াঃকেনো ব্যস্ত নাকি?
আমিঃঅনেক ক্ষুধা লাগছে খাবো
সাদিয়াঃতোরা দুজন কোথায় গেছিলি?
আমিঃওর মামা বাড়ি
সাদিয়াঃকেনো?
আমিঃএমনি আরকি
সাদিয়াঃওহ,আচ্ছা খেয়ে নাও।রাতে কথা
হবে ওকে?
আমিঃহুম?

কল কেটে দিতেই জান্নাতকে কল দিলাম।
আমিঃহারামজাদি তোর বোনের জন্য বাসায়
বিয়ের প্রস্তাব পাঠাইছিলো।
জান্নাতঃতুই বলবি তুই রাজি না।
আমিঃকারণ কি দেখাবো?
জান্নাতঃতুই আমাকে ভালোবাসিস?
আমিঃপাক্কা এটা বলবো?
জান্নাতঃহুম
আমিঃএকটা কাজ করলে কেমন হয়?
জান্নাতঃকি কাজ?
আমিঃসাদিয়াকেও বিয়ে করলাম আবার
তোকেও বিয়ে করলাম।?
জান্নাতঃশুয়োর লাথি দেবো
আমিঃভালোই তো হবে,তখন আমি একেবারে
তোদের বাসায় থেকে গেলেও পারবো?
জান্নাতঃআজাইরা কথা বলবি না
আমিঃসব তোর কাছে আজাইরা, পাবলিক
এখন দুটো করেই বিয়ে করতে চায়
জান্নাতঃরাখ তোর বিয়ে সালা
আর কিছু না বলে কেটে দিলো।

পাগলিটাকে রাগিয়ে তুলে ভালোই মজা
পেলাম।যে অল্পতে রেগে যায় তাকে রাগাতে
কার না ভালো লাগে বলুন?

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here