#অরণ্যবহ্নি
||৪র্থ ও ৫ম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
প্রতিটি মুহূর্ত অন্ত হওয়ার সাথে সাথে রাত্রি নামছে আকাশের বক্ষে। সামায়া অপেক্ষা করছে রাত্রি নামার। আজ সারা রাত্রি সে জেগে থাকবে বলে ঠিক করেছে, অবশ্যই ফোন হাতে। উদ্দেশ্য আবেগের পিছু নিবে এবং ফোনে ভিডিও করবে গোটা দৃশ্য প্রমাণ স্বরূপ।
নিজেকে একপলক আয়নায় দেখে নিল রমণী। কোনো গোয়েন্দা চলচিত্রের মূল নায়িকা মনে হচ্ছে তার নিজেকে। উঁচু করে এক ঝুঁটি, পরনে জ্যাকেট, হাঁটু অবধি ফ্রক ও জিন্স প্যান্ট। মনে মনেই পুলকিত হলো সে। ছেলেবেলায় তো নিজেকে জীবন নামক এই ছবিতে অভিনয়কৃত অভিনেত্রীই ভাবতো।
ঠিক সেই মুহূর্তে দরজায় করাঘাতের আকস্মাৎ শব্দ, কম্পিত হয় সামায়া।
“বুড়িমা দোয়ার খোলো। তোমার জন্য তোমার প্রিয় লাচ্ছি নিয়ে এসেছি।”
দরজা খুললে হাসি মুখে প্রবেশ করেন মিহিরুন্নিসা বানু। হাতে তাঁর এক গ্লাস ভর্তি লাচ্ছি।
“দিদা, আমার পেট সম্পূর্ণ ভরে গেছে রাতের ভোজনের পর। এখন এই এক গ্লাস ভর্তি… না, না, আমার দ্বারা হবে না।”
মুখটা বিদঘুটে করে নাকোচ করে সে। বৃদ্ধাকে কেমন যেন বিচলিত হতে দেখা যায়।
“না, না, তা বললে হবে না। তোমাকে পান করতেই হবে। নাহলে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।”
অবাক সামায়া হুট করে দিদার এরূপ আচারণে। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে সে।
ঘোর ভাঙে এবার মিহিরুন্নিসা বানুর। মিথ্যে হাসেন তিনি।
“মানে এতো খেয়েছো, যদি লাচ্ছিটা না খাও তবে গ্যাস হয়ে যাবে। এজন্য বলছিলাম। আর আমি নিজের হাতে করেছি বুড়িমা, তুমি খাবে না?”
যুবতী আর উপেক্ষা করলো না, কারণ সে বুঝে গিয়েছে মানুষটিকে খায়িয়েই ছাড়বেন। মৃদু হেসে সময় ব্যয় না করে পান করে নিল। চওড়া এক হাসি দেখলো দিদার মুখশ্রীতে, যার অর্থ অপরিষ্কার।
মিহিরুন্নিসা বানু চলে গেলেন। সামায়া ফোনে গান শুনতে শুনতে অপেক্ষা করতে লাগলো গভীর রাত্রি নামার। তবে ঘুমে প্রায় ঢলে পড়ছে সে। যদিও এমনটা হওয়ার কথা নয়। কারণ দুপুরবেলা সে বেশ ঘুমিয়েছে, যাতে রাত্রি জাগতে পারে।
অতঃপর গভীর নিদ্রায় তলিয়ে পড়ে সে। দ্বারের আড়াল হতে তা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্থান ত্যাগ করেম মিহিরুন্নিসা বানু।
___
সামায়ার নিদ্রা ভঙ্গ হয়। এক গভীর জঙ্গলে মাটিতে শায়িত অবস্থায় নিজেকে পায় সে। হচকচিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে।
আশ্চর্যবোধক ও ভীতিতে তার প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ঠিক তখনই শুকনো পাতায় কারো হাঁটার মড়মড় শব্দ। কম্পিত হয় তার লোম লোম।
তবুও এই স্থান হতে বের হওয়ার আশায় সে ধীর পায়ে শব্দটির উৎসের দিকে এগিয়ে যায়। কিছুটা যাওয়ার পর সে দেখতে পায় একটি বিশালাকার মানুষ যেন তড়িৎগতিতে ছুটে গেল জঙ্গলের মধ্যকার একটি বাড়িতে।
বাড়িটি কোনো সাধারণ বাংলাদেশী বাসা নয়। আমেরিকার গ্রাম অঞ্চলে যে রূপ কাঠের ডুপ্লেক্স ঘর দেখা যায় তেমন। বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি জানালায় আলো দৃশ্যমান।
সাহায্যের আশায় সামায়া বাড়িটিতে প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গেই যেন তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আরও শীতলতা ধারণ করলো। বাড়িটি যেন প্রস্তুত ছিল তার আগমনের জন্য। হিটারে আগুন জ্বলছে, বসার ঘরে টেবিলে মৃদু আলোর ল্যাম্প জ্বলছে, সবকিছু কেমন পরিপাটি।
“কেউ আছেন এই বাড়িতে? কেউ আছেন?” চিৎকার করে প্রশ্ন করলো। কোনো সাড়া নেই, অদ্ভুৎ এক নিস্তব্ধতা।
তখনই তার মনে হলো কেউ যেন তার বা’ম পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। তাৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে দৃষ্টি ফেলে সে। একটি সিঁড়ি চলে গিয়েছে উপরতলা অবধি। তরুণী উপরে যেতে রওনা হয়, বুঝতে পারে সিঁড়িপথ অত্যন্ত সংকীর্ণ। খুব কষ্টে তার স্থান হচ্ছে।
উপরে একটি কামরাই, যার ছাদ অত্যন্ত নিচু। সামায়া আর এক ইঞ্চি লম্বা হলেই ছাদ তার মাথা ছুঁয়ে ফেলতো। শেষ সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই সে দেখতে পায় একটি সোনালি আলোর লাইট জ্বলছে সিলিংয়ে, তার নিচ বরাবর একটি নিচু চৌপায়া যাতে রাখা আছে একটি বই খোলা অবস্থায়। যেন এই মাত্রই কেউ পড়ছিল।
নিচে ফিরে যেতে পিছনে ঘুরতে নিবে তখনই টিকটিক শব্দ শুনতে পায় সামায়া নিচ হতে। খেয়াল করে মেঝেতে রাখা একটি টেবিল ঘড়ি হতে আওয়াজটি আসছে। তখনই তার নিজের ঠিক পিছন বরাবর কারো অস্তিত্বের খেয়াল হয়।
কেউ যেন খুবই নিচু গলায় ফিসফিসিয়ে বারবার একই বাক্য উচ্চারণ করছে। তা হলো-
“গিভ মি দ্য চাইল্ড’স স্যোল।”
সামায়া ভয়ে ভয়ে ঘাড় ঘুরাতেই দেখতে পায় সেই এক বিভৎস রূপী মানবকে। যার দু’চোখ উল্টে আছে, দু’ঠোঁট যেন ছিঁড়ে নিয়েছে কেউ।
নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আঁখি দুটি বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে সে।
“সামু! সামু! কী হয়েছে তোর? চেঁচাচ্ছিস ক্যানো?”
দিদার ডাকে ধীর গতিতে চোখ খুলে সামায়া। তার সাড়া গা ঘেমে গোসল হয়ে গিয়েছে। দ্রুতো উঠে বসে ঝাপটে ধরে দিদাকে।
“দিদা আমাকে মেরে ফেলবে ও। আমাকে বাঁচাও। আমাকে বাঁচাও।”
মিহিরুন্নিসা বানু বুঝতে পারেন নাতবৌ বাজে স্বপ্ন দেখেছে। আস্তে আস্তে পিঠে হাত বুলিয়ে দেন তিনি।
“নাইটমেয়ার ছিল সোনা বোন। দেখ তাকিয়ে তুই সবে ঘুম থেকে উঠলি।”
ধীরে ধীরে শান্ত হয় সামায়া। যদিও ভীতি কাটেনি তার। চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখতে পায় শকুন্তলা দেবী, বাবাই, আবেগ তিন জনেই উপস্থিত এ কামরায়। শব্দ করে শ্বাস ফেলে সে। এসব কী হচ্ছে তার সাথে! কোনোদিন তো এমন হয়নি।
“বুড়িমা, যাও। তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আজ থেকে তুমি আমার সাথে ঘুমাবে। তাহলে তোমার আর ভয় লাগবে না।”
“ঠিক আছে, দিদা।”
উঠে তোয়ালে ও কাপড়-চোপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে সে। কামরায় উপস্থিত প্রত্যেগে এই যুবতীর এরূপ আচারণ নিয়ে নির্লিপ্ত হলেও আবেগ মুখশ্রীতে স্পষ্ট চিন্তার রেখা।
___
“দিদা, আমার একটা কথা বলার ছিল জরুরি। তুমি কি একটু সময় দিতে পারবে?”
মাথায় সোনালী কাজ করা শুভ্র রঙা ওড়নাকে মাথায় হিজাবের মতো করে পরছিলেন মিহিরুন্নিসা বানু। সে সময়ে আবেগ এসে উক্ত কথাটি বলে।
তিনি হিজাবটা রেখে তার দিকে তাকায়। ইশারায় থামতে জানিয়ে দোয়ারের দিকে এগিয়ে যান। দোয়ারের বাহিরে পর্যবেক্ষণ করে দরজা লাগিয়ে দেন।
“বলো কী বলবে দাদু? তবে ধীরে বোলো, দেয়ালের কান থাকে।”
“দাদু আমার মনে হয় না সামু যেই স্বপ্ন দেখছে তা কোনোভাবে স্বাভাবিক। এ কিন্তু উপসর্গ হতে পারে, যা অন্যদিকে ইঙ্গিতময়।”
“এমনটা হলেও ভুল হবে না। কারণ সবচেয়ে বড়ো ত্রুটি তো তুমি করেই ফেলেছো ঐ বিয়ে করে। আমি জানি না সামুর কিছু হলে আমি কী উত্তর দিব হানিফকে।”
“দিদা, তুমি তো জানো আমি কখনোই নিজের জানতে সামুর ক্ষতি হয় এমন কিছু করবো না। আমি বাধ্য হয়ে…”
“দিদা! দিদা! এতোক্ষণ ধরে কী করছো? তাড়াতাড়ি বের হও।”
সামায়া উৎসুক গলায় দরজায় করাঘাত করতে করতে এ কথাগুলো উচ্চারণ করে। সে বেশ উত্তেজিত আজ, সবার সাথে আরশিনগরে সদ্য খোঁজ পাওয়া পুরোনো কেল্লা দেখতে যাবে। তার মন ঠিক করতেই হয়তো এই নাস্তা খাওয়ার সময় প্রস্তাব এ রেখেছেন দিদা।
মিহিরুন্নিসা বানু আবেগকে চুপ করতে ইশারা করে। দ্বার খুলে দেন। হুড়মুড়িয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কন্যা।
“আর কতোক্ষণ দিদা! তুমি জানো আমি কতো এক্সাইটেড যাওয়ার জন্য! নিশ্চয়ই আবেগ ভাই প্যাঁচাল পারছিল, তাই দেরি হচ্ছে।”
“ও রে বুড়ি, এই তো রেডিই আমি। এই ওড়নাটা পরলেই শেষ।”
অতঃপর ওড়না পরে সবাই বেড়িয়ে পড়ে। শকুন্তলা দেবী এবং বাবাইও যাচ্ছে তাদের সাথে। মাতব্বর বাড়ির সদর দরজা পাড় হওয়ার মুহূর্তে দারোয়ান যুবক মিন্টুকে ডাক দেন দিদা।
“এই নে বাড়ির চাবি। দেখে রাখিস, অপরিচিত কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে।”
“ঠিক আসে দাদী। আফনে কোনো চিন্তা কইরবেন না। আমি সব দেইখা-হুইনা রাখমু।”
“দিদা এইটা কে? আগে তো দেখলাম না।”
“এটা নতুন দারোয়ান বুড়িমা। চলো, এখন গাড়িতে উঠো।”
||৫ম পর্ব||
কেল্লাটির ধরন অনেকটা লালবাগকেল্লার মতো হলেও আকারে বেশ ছোটো তুলনামূলক। এখানে ঘুরতে আসা বেশিরভাগই দম্পতি, কেউ নামমাত্র, কেউ কাগজ-পত্রেও। আর আড্ডার ক্ষেত্র হলো কেল্লাটির কাছ ঘেঁষে থাকা হাজেরা বিবি বিল। ছোটো ছোটো গোলাপি রঙা পদ্ম ভাসছে তাতে। গোটা বিল ঘিরেই কলরব।
সামায়া বিভিন্ন ভাবে সেলফি তুলছে। তবুও তার মন ভরছে না, কয়েকটা ছবি তুলতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু কার হতে তুলাবে? তখনই সামনে ভেসে উঠে ‘আবেগ ভাই’ নামক প্রিয় মানুষটির গম্ভীর মুখশ্রী। দুষ্টু বুদ্ধি খেলা করে মাথায়।
সতর্কতা অবলম্বনে দিদা ও শকুন্তলা দেবীর অবস্থান দেখে নিতে ভুল করে না। তাঁরা বিলে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছেন ও গল্প করছেন।
পা টিপে টিপে আবেগের পিছনে যেয়ে একদম কাছ ঘেঁষে দাঁড়ায় রমণী। আর একটু হলেই গা মিশবে গায়ে।
মৃদু কণ্ঠে প্রচণ্ড মায়া নিয়ে ডেকে উঠে, “আবেগ ভাই?”
“হুম, বল। শুনছি আমি। আর এভাবে পা টিপে টপে এলি কেন চোরের মতোন?”
নির্বিকার ভাবে উত্তর দেয় যুবক। যেন সে পূর্ব হতেই জ্ঞাত ছিল নারীটির আগমন সম্পর্কে। হতাশ হয় সামায়া, মানুষটিকে বিন্দুমাত্রও বিচলিত কিংবা অবাক না করতে পেরে।
“আপনি কীভাবে বুঝলেন আবেগ ভাই আমি আসছি? আমি তো কতো আস্তে আস্তে আসলাম।”
আবেগ আকস্মাৎ তার দিকে ঘুরে। গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধায়,
“তোর গায়ের ঘ্রাণ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ঘ্রাণটাই নয়, চলনটাও আমার অতি পরিচিত মায়াবালিকা।”
এমন হৃদয় দোলানো দৃষ্টি, হৃদয় কাঁপানো কণ্ঠ শুনে নিজেকে মাতাল মাতাল বোধ হয় সামায়ার। মায়াময় এক দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে থাকে শুধু।
তুরি বাজিয়ে আবেগ জিজ্ঞেস করে,
“কী হলো? কী এতো দেখছিস? আমার মনে হয় রূপ বেড়ে গিয়েছে নতুন করে!”
ঘোর ভাঙে। আবারও দুষ্টু হাসি ফুটায় মুখে তার।
“কিছু না। আমাকে একটু ছবি তুলে নেন আমার ক্যামেরাম্যান হয়ে।আপনি তো বেকার মানুষ। তাই ভাবলাম আপনাকে কিছু কাজ-টাজ দিয়ে ধন্য করি। সুতরাং, মোটেও মানা করবেন না।”
আবেগ জ্ঞাত সে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে এই নারী আরও ঘণ্টা তিনেক তার সঙ্গে প্যাঁচাবে। তা উপেক্ষা করতেই বিরক্তি নিয়ে সামায়ার ফোন হাতে নেয় সে।
বিভিন্ন ভঙ্গিতে বিভিন্ন জায়গায় যেয়ে দাঁড়ায় সে। ‘আবেগ ভাই’ নামক ব্যক্তিগত ক্যামেরাম্যানটি তো আছেই প্রতিটি মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করতে।
হঠাৎ করেই মুঠোফোন আপন আওয়াজে বেজে উঠে। আবেগ তার দিকে মুঠোফোনটি এগিয়ে দেয়। মা আলিমা বেগম কল করেছেন। মাতব্বর বাড়িতে আসার পর থেকে রাগে সিম বন্ধ রাখায় এতোদিন কারো সাথে যোগাযোগ করেনি সে।
“হ্যালো আম্মু।”
“কথা বলিস না মুখপোড়া! আমাদের টেনশনে রেখে তুই ফুর্তি করতাসোস! বাসায় আস খালি তোর ঠ্যাং দু’খানা যদি আমি না ভাঙসি! গেসোস তো গেসোস, ফোন বন্ধ কইরা রাখসোস কেন?”
“আরে আস্তে আস্তে আম্মু। আমি কি ইচ্ছে করে ফোন বন্ধ করে রাখসি না কি? ফোনে প্রবলেম হচ্ছিল। এই আজকেই আবেগ ভাই ঠিক করে এনে দিল। আর এতোদিন পরে কথা হচ্ছে, তুমি বকছো আমাকে?”
“আচ্ছা, কেমন আছিস? কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো ঐখানে? তোর ঠিক মতো খেয়াল রাখে তো চাচীআম্মা?”
মায়ের প্রশ্ন গোপণে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রমণী।
“হুম আম্মু, আমি ভালো আছি। তুমি আমার চিন্তা কোরো না। তোমরা কেমন আছো বলো? ভাইয়া-ভাবী? সুহু?”
“সবাই ভালো আছে। সুহু ‘মাম্মা’ বলে রোজ ডেকে বেড়ায় তোকে। কিন্তু তোর বাবাকে কিছুদিন ধরে বেশ চিন্তিত লাগছে। বুঝতে পারছি না।”
“হবে কিছু একটা। উনার কতো চিন্তা। যাকগে মা আমি ভালো আছি। খুব শিঘ্রই চলে আসবো। তুমি চিন্তা কোরো না। রাখি।”
বলে তাড়াহুড়ো কল কেটে দিল সামায়া। আর কথা বললে হয়তো নিজের কথাগুলো আর লুকাতে পারবে না।
কলে কথা বলতে বলতে সে অনেকটাই লোকালয় হতে দূরে এসে পড়েছে। এখানে তেমন কেউ নেই। বিলের দিকে পা বাড়ায় সে।
তখনই তার মনে হলো কোনো উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ড তার হাত চেপে ধরলো। তাৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে সে। দৌড়ে আসে উপস্থিত অনেকেই, বিশেষ করে আবেগ।
তাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে ভীতিগ্রস্ত কন্যা। আবেগ সান্ত্বনার স্পর্শে এক হাতে জড়িয়ে ধরে।
“কিচ্ছু হয়নি। হ্যালুসিনেশন হয়েছিল তোর মনে হয়। আপনারাও চলে যান, এমনেই ভয় পেয়েছে।”
শেষ বাক্যটি চিৎকার শুনে আসা মানুষগুলোকে উদ্দেশ্যে করে বলে যুবক।
আর ঘুরাঘুরি হয় না। ঐ মুহূর্তেই রওনা হয় নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সামায়া এতোটাই ভয় পেয়েছে যে ভীতিতে সম্পূর্ণ মিইয়ে গিয়েছে সে।
গোটা রাত আর সামায়া ঘুমাতে পারে না। দিদার কোলে মাথা রেখে কাটিয়ে দেয়।
___
আবারও একই স্বপ্ন দেখলো সামায়া। ফজরের নামাজ পড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলে নিদ্রায় তলিয়ে গিয়েছিল সে। তার এখন মন চাচ্ছে ছুটে নিজের বাসায় গিয়ে মায়ের কোলে যেয়ে লুকাতে, সেখানেই তো তার সবচেয়ে অধিক নিরাপদ মনে হয় নিজেকে।
ঘুম হতে জেগে মায়ের নম্বরে কল করে সে। রিং বাজতে বাজতে একাই কল কেটে যায়। হতাশ হয়, অবশ্য সে জ্ঞাত এসময় মায়ের কল ধরার সময় কোথায়? ভাবীরা সকালে উঠতে অভ্যস্ত নয়, অগত্যা একাই সামলাতে হয় তাঁকে।
শকুন্তলা দেবী কামরায় প্রবেশ করেন। হাতে তাঁর ধোঁয়া উঠানো গরম চায়ের মগ।
“দিদিমণি আপনার জন্য চা নিয়ে এলাম। নিন।”
ম্লান হেসে চা হাতে নিয়ে ঠোঁট ডুবায় সে। এক চুমুক চা গলা বেয়ে নামতেই দেহ ও মন সতেজ হয়ে যায় তার। এক কাপ চা ব্যতীত তার দিনের সূচনা কখনোই হয় না।
“দিদা কোথায় মাসি? তাকে যে দেখছি না।”
“মেমসাবে তো আবেগ দাদাবাবুর সাথে গোয়াল ঘরে গেছেন।”
“ওহ, আমিও আসছি তাহলে।”
সামায়া চায়ের মগ হাতে নিজের কামরা থেকে বের হয়। এই মাতব্বর বাড়ির প্রতিটি কোণ কোণ তার পরিচিত, প্রতিটি সদস্যও। হয়তো তেমন অধিক না, তবে চেনাই। কিন্তু সবাই হুট করেই যেন বদলে গেছে। চেনা সোজা-সরল ভাষী দিদাটা কেমন রহস্য করে কথা বলে, ঘাড়ত্যাড়া ও দুষ্টু আবেগ ভাই কেমন গম্ভীর হয়ে গিয়েছে। কী হয়েছে এমন তার অনুপস্থিতিতে গত কয়েক বছরে!
||৬ষ্ঠ পর্ব||
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=346132240848202&id=100063542867943
চলবে…
(দুঃখিত না দিতে পারায়। আসলে কমপ্লিট হয় নাই কাল রাতের মধ্যে। আর আজ ফর্ম ফিল-আপের ডেইট কলেজের, বেশ ব্যস্ত ছিলাম ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই। আজকের পর্ব সহ আগামীকালের পর্ব আগামীকাল পেয়ে যাবেন।)