হৃৎপিণ্ড_২ (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব ২

0
511

#হৃৎপিণ্ড_২
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২
#জান্নাতুল_নাঈমা
_____________________
চোখের নিমিষেই কেটে গেলো আরো দু’টো দিন৷ ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে একটু লাইব্রেরি গিয়েছিল মুসকান। পছন্দ সই দুটো উপন্যাস বই কিনে ব্যাগে ঢুকিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে রিকশা নেবে এমন সময় পেছন থেকে ডেকে ওঠলো মিতুল। মুসকান রিকশায় না ওঠে পিছন ঘুরে দাঁড়ালো। হাস্যজ্জ্বল চেহেরাটি মেলে ধরে এগিয়ে এলো মিতুল। মুসকান ঈষৎ হেসে প্রশ্ন করলো,

“আপনি এখানে? ”

“এইতো ভাগ্নির জন্য সৈয়দ আবদাল আহমদ সংকলিত চিরকালের ছড়া কবিতা বইটি কিনে নিলাম। সামনে ওর বার্থডে কি গিফট করবো কি গিফট করবো ভাবতে ভাবতে এটাই মাথায় এলো।”

মৃদু হাসলো মুসকান নম্র সুরে বললো,

” ওও আচ্ছা। ”

“তুমি বই কিনলে বুঝি? ”

“দেখেছেন নিশ্চয়ই ”

ধাতস্থ হয়ে উত্তর দিলো মিতুল,

” হ্যাঁ দেখেছি। বলছিলাম মুসকান মুন্নি তোমায় সেদিন কিছু বলেছে? ”

মুখো ভঙ্গি একেবারেই পাল্টে গেলো মুসকানের। তৎক্ষনাৎ মনে পড়ে গেলো সেদিনের কথা। গত সপ্তাহে ডান্স ক্লাসে মুন্নি তাকে বলেছিলো মিতুল অর্থাৎ মুন্নির মামা তাকে পছন্দ করে ফাইনাল এক্সাম টা হয়ে গেলেই জবে ঢুকবে এবং বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে তার বাসায়। বিষয়’টা নিয়ে তার তেমন মাথা ব্যথা ছিলো না৷ মিতুল আর সে একি ভার্সিটির স্টুডেন্ট। সিনিয়র বড় ভাই। বাসা পাশের উপজেলা’তেই। একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করতেই পারে। পছন্দের ভিত্তি’তে বাসায় বিয়ের প্রপোজালও পাঠাতে পারে। এসব ঘটনা খুবই স্বাভাবিক। তাই এ বিষয় নিয়ে বিন্দু পরিমাণ সমস্যা তার নেই। কিন্তু সমস্যা টা ঘটেছে অন্য জায়গায়। মিতুল’কে যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানীবান মানুষও ভেবেছিলো মুসকান৷ অত্যাধিক লম্বা মানুষের বুদ্ধি যে হাঁটুর নিচে পড়ে থাকে তার প্রমাণ বহুবার পেয়েছে সে। নতুন করে আবারো পেলো মিতুলের মাধ্যমে। তাই ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে মিতুলের দিকে দৃঢ় দৃষ্টি’তে তাকালো মুসকান। অত্যন্ত নম্রতা বজায় রেখে বললো,

“যুগ’টা অনেক বেশীই আপডেট এবং ইউনিক হয়ে গেছে তাইনা? মা,চাচীদের বলতে শুনেছি বিয়ের প্রপোজাল নাকি ছেলের পরিবারের মুরুব্বি’রা মেয়ের পরিবারের মুরুব্বি’দের দেয়। কিন্তু মামার হয়ে ক্লাস টু’তে পড়া ভাগ্নি যে বিয়ের প্রপোজাল দিতে আসে সিরিয়াসলি এমন ঘটনা কখনো শুনিনি বা দেখিনি। ”

প্রচন্ড লজ্জা পেলো মিতুল। লজ্জায় কপাল ঘেমে ওঠলো তার৷ কপালের সে ঘাম গুলো চোয়াল বেয়ে পড়ছিলো। মুসকান এক ঝলক মিতুলের অবস্থা দেখে নিয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

” আপনার থেকে এমন কিছু আশা করিনি মিতুল ভাই। বাচ্চা মেয়েটাকে দিয়ে এসব আপনি না বলালেও পারতেন। আপনি আমায় পছন্দ করেন তা সোজাসাপ্টা আমাকে বললেই পারতেন। সে যাইহোক পছন্দের কথা আমি জেনে গেছি। বাট আই হেভ নাথিং টু ডু। আপনি যেহেতু ভেবে রেখেছেন জবে ঢুকে বাসায় বিয়ের প্রপোজাল দেবেন সো সে পথেই থাকুন৷ আসি আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে ভালো থাকবেন। ”

কথাগুলো বলেই রিকশায় ওঠে বসলো মুসকান। মিতুল সিরিয়াস ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বিদায় জানালো মুসকানকে। রিকশায় বসেই চোখেমুখে বিরক্তি ফুটিয়ে তুললো মুসকান। দু’হাত সমান তালে কচলাতে কচলাতে বিরবির করে কিসব বলতে শুরু করলো। মেজাজ তার প্রচন্ড খিঁচে গেছে। তার সাথে আজ যাই ঘটুক না কেন সব কিছুর পিছনে শুধুমাত্র একটি মানুষ’ই দায়ী। আজ তার হাজারটা বিয়ের প্রস্তাব আসুক বা প্রেমের প্রস্তাব আসুক অন্যান্য মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক বিষয় হলেও তার ক্ষেত্রে এটি প্রচন্ড অস্বাভাবিক বিষয়। কারণ এসবের পিছনে দায়ী শুধু একটি মানুষই আর সে হলো মি.ইমন চৌধুরী। ঐ মানুষ’টার জন্য তার কৈশোর ধ্বংস হয়ে গেছে আর যৌবনের শুরুটা প্রায় নরকেই পরিণত হয়ে গেছে।
.
বাড়ি ফিরে গোসল সেরে খেতে বসেছে মুসকান। এমন সময় মুরাদ স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলো। বেশ উদ্ভাসিত মুখে মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো,

“কিরে তিনটা বাজে আর খাবার এখন খাচ্ছিস? কতোবার বলতে হবে খাবারে অনিয়ম করিস না। সকাল বিকাল গ্যাসট্রিকের ওষুধ না খেলেই তো বুকে ব্যথায় অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। নিজের প্রতি এটুকু যত্নশীল তো হওয়াই উচিত মুসু।”

শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে কথাগুলো বলে সোফায় বসলো মুরাদ। গলা উঁচিয়ে রিমি বলে ডাকতেই ভেজা চুলে গামছা বাঁধা অবস্থায় রুম থেকে বেরিয়ে এলো রিমি। গ্লাসে পানি ভরে মুরাদ’কে দিয়ে ফ্যানের পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো। তারপর এসে বসলো মুসকানের পাশে৷ মুসকান চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছে। ভাই এতোগুলো কথা বললো অথচ সে টুঁশব্দটিও করলো না। একটা সময় তার মুখে খই ফুটতো আর আজ কতো চেঞ্জ। মুরাদ গায়ের শার্ট খুলে সোফার একপাশে রেখে রিমির উদ্দেশ্যে বললো,

” আজ রাতে আম্মার সাথে বা মুসুর সাথে ঘুমাস। ”

রিমি মুরাদের দিকে তাকাতেই মুরাদ ইশারা করলো কিছু বলতে। রিমি চোখ বোজার ভঙ্গি করে হ্যাঁ সূচক ইশারা করে আড় চোখে মুসকানের দিকে তাকিয়ে বললো,

” হ্যাঁ হ্যাঁ তা তোমাদের আসতে ক’টা বাজবে? ”

“সন্ধ্যার পরই আমি আর দিহান বেরিয়ে যাবো। এই ধর মাঝরাত বা ভোর রাত হবে৷ ইমন কিন্তু বলে দিয়েছে ফার্স্ট এ বাড়িতেই আসবে। ইরা আন্টিও এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেনি। ”

গলায় খাবার আঁটকে গেলো মুসকানের। তবুও মুরাদ এবং রিমিকে কিছু বুঝতে দিলো না। বাম হাত বাড়িয়ে গ্লাসে পানি ভরে খেয়ে নিলো। তারপর অর্ধেক প্লেট ভাতেই পানি ঢেলে হাত ধুয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। রিমি হতভম্ব হয়ে মুখ দিয়ে শুধু উচ্চারণ করলো ‘মুসু!’ মুরাদ উদবিগ্ন হয়ে কয়েকবার মুসকানের নাম ধরে ডাকলো। তারপর রিমিকে বললো,

” ধুর খাওয়াটাই নষ্ট করে দিলাম। খাওয়া কমপ্লিট হলেই বলা উচিত ছিলো। তুই কেন আমার সাথে তাল মিলালি ইশারায় বলতে পারতিস খেয়ে নিক”

কপট রাগ দেখিয়ে বসা থেকে ওঠে নিজ রুমে চলে গেলো মুরাদ। রিমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ভাই বোনের কাণ্ড দেখে। দু’হাত কোমড়ে রেখে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,

” যাহ বাবা আমি আবার কি করলাম!”
.
সন্ধ্যা থেকেই বাড়িতে রান্নাবান্নার তোড়-জোড় চলছে। বাড়ির পরিস্থিতি দেখে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে চলে গেলো মুসকান৷ দীর্ঘদিন যাবৎ তার মা অসুস্থ। ডায়বেটিস প্লাস হাই প্রেশারের রোগী৷ ইমন আসছে এবং তাদের বাড়িতেই প্রথম আসবে। তা শুনে মুসকানের মা মরিয়ম আক্তার কতোটা খুশি হয়েছে তা কেবল আজ তার মুখের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যাবে৷ মায়ের এমন দীপ্তিমান মুখশ্রী দেখে শান্তি লাগছে মুসকানের। কোনভাবেই সে শান্তি এবং মায়ের মুখের হাসিটুকু নষ্ট করতে মন চাইছে না৷ সে যদি রাগ দেখিয়ে কিছু বলতে যায় তাহলে হয়তো মায়ের হাসিটা বিলীন হয়ে যাবে। সেই সাথে দুশ্চিন্তায় দ্বিগুণ অসুস্থও হয়ে পড়বে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুসকান। মাথা যন্ত্রণা করছে খুব সেই সাথে বুকের ভিতর বড্ড অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে। রাত তখন আটটা বাজে। সন্ধ্যায় খিদে পেলেও বাড়িতে এলাহী আয়োজন দেখে কাঙ্ক্ষিত পুরুষটির আগমনি গানের সুরে খিদে জিনিসটার কথাই ভুলে গেলো মুসকান৷ বসার ঘরে গিয়ে গ্লাসে পানি ভরে নিজ রুমে গিয়ে একটা স্লিপিং পিল খেয়ে নিলো। গত ক’বছরে ঘুমের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে যায় ঠিক তখনি এই অস্ত্রটির মাধ্যমেই ঘুমকে বসে আনে সে। আজ যদি ঘুমকে সে বসে না আনে উত্তেজনায় ছটফট করতে করতে হয়তো মরেই যাবে। সেই সাথে বাড়ির সকলের অত্যাধিক বাড়াবাড়ি দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাও কষ্টকর হয়ে যাবে। আবার দেখা যাবে সেরা অভিনেতার অভিনয় দেখে তার ছোট্ট হৃদয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যাবে৷ এতো এতো সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষমতা তার নেই৷ তাই এসব সমস্যা যুক্ত পরিবেশ থেকে নিজেকে শত হাত দূরে রাখারই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করলো মুসকান।
.
চারদিকে ভেসে আসছে ফজরের আজান ধ্বনি। রাতের বিদঘুটে অন্ধকারে প্রচন্ড ভয় হয় মুসকানের। রাতের আকাশে চন্দ্রের বিস্তৃত আলোটুকু কখনো একা উপভোগ করেনি সে। বাইরে যতোই সকলের সম্মুখে নিজেকে শক্তিশালী মানবী রূপে প্রকাশ করুক না কেন ভেতরে সে একেবারে মাখনের মতোন। হার্ট তার ভীষণ দুর্বল। টুকটাক কিছু বিষয়ে প্রচন্ড রকমের ভয় পায় সে। তবে সবচেয়ে বেশী যে বিষয়ে ভয় পায় সেটি হলো ভূত। অজানা বিষয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা যেমন বেশী তেমন অজানা বিষয়ে মানুষের ভয়টাও বেশী। আদেও পৃথিবীতে ভূত আছে কিনা সেটা দেখার বিষয় নয়৷ রাতের অন্ধকারে ভূত নামক অহেতুক এই জিনিসটাকে স্মরণ করেই যতোশতো ভয় তার। অন্ধকারে তার ভীষণ ভয়। বিষয় টা সোজাসাপ্টা বলতে গেলে সে ভূতে ভয় পায়। তাই সারা রাত রুমে লাইট অন করে অত্যাধিক গরমেও ফ্যান জুরে পাতলা একটা কাঁথা গায়ে চেপে ঘুমায় সে। বরাবরের মতো আজো তেমন ভাবেই ঘুমিয়েছিলো। আজান ধ্বনি শুনতেই চোখ বোজা অবস্থায় আশেপাশে হাতড়িয়ে ফোন খোঁজার চেষ্টা করে যখন পেলো না ঠিক তখনি চোখজোড়া মেলে তাকালো। বিদঘুটে অন্ধকার কিচ্ছু দেখতে না পেয়ে আচমকাই চোখ বুজে ফেললো। বক্ষঃস্থলে শুরু হয়ে গেলো তীব্র ঝড়। এক ঢোক গিলে আবারো ফোন খুঁজতে শুরু করলো কিন্তু পেলো না। ঠিক তখনি ফিল করলো কারো রুমে সে ব্যতিত অন্যকারো অস্তিত্ব। ভয়ে পুরো শরীর শিউরে ওঠলো মুসকানের। চোখ,মুখ খিঁচে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে কাঁথা দিয়ে পা থেকে মাথা অবদি ঢেকে ফেললো। মনে মনে দোয়া দরূদ পড়ে জোর পূর্বক ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ঘুম কিছুতেই হলো না। কারো তীব্র নিঃশ্বাসের শব্দে পুরো রুম গমগম করছে। ভয়ে ভয়ে এবার মুসকান কাঁথার নিচ থেকেই আম্মু এবং ভাইয়া বলে মৃদু চিৎকার দিলো। সঙ্গে সঙ্গেই রুমে বাতি জ্বলে ওঠলো৷ মুসকান স্পষ্ট সুইচ টেপার শব্দ পেলো। অর্থাৎ তার রুমে কেউ এসেছে দুরুদুরু বুকে মুখের ওপর থেকে কাঁথা সরাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো। বুকের ভিতর টা আচমকাই ধড়াস করে ওঠলো। অস্ফুটে স্বরে বলে ওঠলো,

“নানাভাই!”

সঙ্গে সঙ্গেই নিজের মুখটা চেপে ধরলো। চোখ বুজে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে ইমন বড়ো বড়ো পা ফেলে মুসকানের সম্মুখে বসে তার বলিষ্ঠ হাতজোড়া দ্বারা কাছে টেনে নিলো মুসকানকে। মুসকান চোখ মুখ খিঁচে বিছানার চাদর খামচে ধরলো। ইমন চোখ দু’টো বদ্ধ করে মুসকানকে প্রচন্ড শক্ত করে জড়িয়ে নিলো বুকের মাঝে। দু’চোখ বেয়ে অঝরে অশ্রু ঝড়তে শুরু করলো মুসকানের। দীর্ঘসময় সেভাবেই স্থির ছিলো দু’জন। কিন্তু ইমন যখন দু’হাতে মুসকানের চোয়াল ছুঁয়ে কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলো ঠিক তখনি ছিটকে দূরে সরে গেলো মুসকান। অশ্রুসিক্ত নয়নে ক্রুদ্ধ গলায় বললো,

“আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার? ”

বিস্ময়ান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইমন। তবে দৃষ্টিজোড়ায় মিশে ছিলো শীতলতা। রূদ্ধশ্বাস ছেড়ে কোনমতে উত্তর দিলো,

“আমি অনেক টায়ার্ড মুসু। যতো অভিমান যতো রাগ সব কাল থেকে দেখাবে এখন একটু কাছে এসো। বড়ো হয়ে গেছো তুমি বাচ্চাদের মতো আচরণ করো না। ”

” চুপ করুন! বেরিয়ে যান রুম থেকে নয়তো ভয়ানক কিছু ঘটে যাবে। ”

” তুমি কাছে না এলে আমিই ভয়ানক কিছু ঘটাবো!”

চলবে…
রিচেক দেইনি ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here