Sroty: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ০৭
লেখাঃ Israt Jahan
ফালাক মেহেরের জামার পেছনে ফিতার বাঁধন প্রায় খুলেই ফেলেছে।মেহেরের ঠোঁট ছেড়ে যখন ওর গলার কাছে নেমে এল তখন মেহের ফালাকের বুকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু তাতে ফালাকের থেমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না।সারা গলা জুড়ে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে ফালাক। মেহের দাঁতে দাঁত চেঁপে সহ্য করে যাচ্ছে।হঠাত মেহের কথা বলে উঠল।
মেহেরঃ আমার পিতামাতাকে কারগার থেকে মুক্তি দেওয়া যায় না?
ফালাক মেহেরের কথা শুনে থেমে গেল।মেহেরের মুখের দিকে তাকাল।
ফালাকঃ তাতে তোমার ফায়দা।আমার কি ফায়দা?
মেহেরঃ চিরকাল তো প্রতিটা নারীর দেহের স্বাদ গ্রহণ করেছেন তাদের উপর জোড় খাটিয়ে।এমন কোনো নারী কি তার স্বেচ্ছায় আপনার কাছে এসেছে? কিন্তু আমি আসব।আমার স্ব-ইচ্ছায়।কোনো বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা থাকবেনা মাঝে।
ফালাকঃ হা হা হা।শেষ পর্যন্ত তুমিও?শুনে অবাক হলাম।তোমাকে আমি বাকি সকলের থেকে আলাদা কিছু ভেবেছিলাম।কিন্তু তুমিও ওইসব স্বার্থান্বেষী নারীদের মত নিজেকে স্বেচ্ছায় ধরা দিতে চাইছো আমার কাছে।তুমি তো জানোই তোমার কাছে আসতে আমার কোনো মর্জি লাগবেনা।
মেহেরঃ স্বার্থান্বেষী নারী মানে?
ফালাকঃ হুম।তুমি যেমন তোমার পিতামাতাকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে নিজেকে সঁপে দিতে চাইছো আমার কাছে ঠিক তেমনই কিছু নারী নিজে থেকে আমার কাছে ধরা দিয়েছিল।কারণ কি জানো?আমাকে হত্যা করা বা ওই সময় আমার দুর্বলাতার সুযোগ নিয়ে আমার রাজ্য আক্রমণ করা।কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের। নিজেদের সম্মান তো তার হারিয়েছে সাথে প্রানটাও।
ভয় নেই তোমার প্রাণ আমি নেব না।কারণ তুমি চাইলেও তোমার কাছে আমি যাব আর না চাইলেও যাব।
মেহের আবার ফালাকের পা জড়িয়ে ধরল।
মেহেরঃ একটু দয়াশীল হউন আমার পিতামাতার প্রতি।তাদেরকে আর কষ্ট দিবেন না।আমাকে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে রেখেছেন তার এক ভাগ সুখটুকু তাদের দিন।
ফালাকঃ মেহের তোমার এই স্বভাবটা আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছেনা।দাস-দাসীদের ন্যায় ব্যবহার টা হয়ে যাচ্ছে।তোমার সাথে এটা মানাচ্ছেনা।আর তুমি একজন ধার্মিক নারী হয়ে একজন মানুষের কাছে নত হচ্ছো?সত্যি আশ্চর্যজনক।
কথাটি শুনতেই মেহের দ্রুত ফালাকের পা ছেড়ে দিল।পিতামাতার কষ্ট লাঘবের চিন্তায় মেহেরের চিন্তাশক্তি লোপ পেয়ে যাচ্ছে।ফালাক মেহেরকে টেনে ওঠাল।
ফালাকঃ বাধ্য হয়ে নয়।মন থেকে টান অনুভব করবে যেদিন সেদিন তোমার পিতামাতাকে পুরোপুরি মুক্ত করে দেব।
কথাটা বলে ফালাক মেহেরের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।আর মেহের রাগে ক্ষিপ্ত ঠোঁটে থাকা ফালাকের ছোঁয়া ঘষে ঘষে মুছতে থাকল।বিকালে মেহের মন খারাপ করে যখন বাগানে বসে ছিল তখন ফালাকের পিতা মেহেরের কাছে আসল।
পিতাঃ মেহেরুন?
মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে পিতাকে দেখে উঠে দাড়াল।
মেহেরঃ জ্বি পিতা,বলুন।
পিতাঃ মন খারাপ?একা বসে আছো যে?
মেহেরঃ ভালো লাগছিল না কক্ষে।
পিতাঃ চলো সরোবরের পাড়ে গিয়ে বসি।
মেহেরঃ চলুন।
মেহের পিতাকে ধরে নিয়ে সরোবরের পাড়ে গিয়ে বসলো।পিতা-ই আগে কথা শুরু করলো।
পিতাঃ বুঝতে পারছি মা তোমার কষ্টটা কোথায় হচ্ছে।কিন্তু তাজকে কে বোঝাবে?ও যখন আমাকে বলল আব্বাজন আমি বিবাহ করছি তখন মনে হয়েছিল যে আমার তাজ হয়তো আবার সেই আগের সেই কোমল হৃদয়ের তাজ হয়ে উঠছে। ও ফিরে আসতে চাইছে শান্তির পথে।কিন্তু এখানে আসার এইসকল কথা যখন জানতে পারলাম তখন আবার হৃদয়টা আবার ভেঙ্গে গেল।তারপরও কোথাও যেন একটা আশার প্রদীপ জ্বেলে উঠেছে আমার হৃদয়ে।ও যখন তোমার প্রেমে পড়ে তোমাকে বিবাহ করেছে তখন ওর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ শিথিল হয়ে আসছে। এ কথা কেনো বলছি জানো?কারণ কিছুদিন আগ পর্যন্ত ফালাক প্রেম,ভালোবাসা আর বিবাহে আগ্রহী ছিলনা বা বিশ্বাস ও করতোনা।যখন মন চাইতো তখন-ই কোনো নারীকে তুলে আনতো।এসব দেখতে দেখতে আমি নিঃশ্বেস হয়ে যাচ্ছিলাম। রাজমহল ত্যাগ করে গ্রামে কুঁড়েঘরে গিয়ে বসত করতে শুরু করলাম।ভাবলাম আমার কষ্ট আর রাগ দেখে হয়তো ওর এসব অত্যাচার থামবে।কিন্তু দিন দিন ওর অত্যাচারের পরিমাণ বেড়েই চলছিল। আর আজ তার কিছুটা হলেও কমেছে।আর তার কারণ হলে তুমি মা।তুমি ওর জীবনে আসার পর ওর রাজপ্রাসাদে আসার পর ও বাহিরের কোরো নারীর দিকে নজর দেয়নি।তার মানে ও তোমার সাথে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাইছে।এমন করে যদি ওর সব খারাপ দিক গুলো ও ত্যাগ করতো। এটাও সম্ভব যদি তুমি ওকে স্বামীর মর্যাদা দাও। না না তুমি এটা ভেবোনা যে আমি ওর হয়ে তোমার কাছে সুপারিশ করছি।তুমি যদি ওর দুর্বল অংশ হতে পারো তাহলে তোমার সব কথা শুনতে বাধ্য ও।
মেহেরঃ পিতা আপনাকে ও তো উনি অনেক ভালোবাসেন।আপনার হুকুম ও সাথে সাথেই গ্রাহ্য করেন।
পিতাঃ আমি জানতাম তুমি এই প্রশ্নই করবে। তাজের দুর্বলতা যেমন আমি তেমন আমার দুর্বলতা ও।ও জানে আমি ওর থেকে দূরে থাকলেও ওকে ছাড়তে পারবোনা।আমি ওর উপর কখনো কঠোর হতে পারিনি।কিন্তু তুমি পারবে সেই কঠোরতা ওকে দেখাতে।মানুষের দুর্বলতা-ই মানুষকে ঘায়েল করতে পারে।আমার তাজের ও তাই প্রয়োজন।
মেহের মনে মনে ভাবছে,
মেহেরঃ এই কথাটা তো আমার মাথাতেই আসেনি।পিতা ঠিক-ই বলেছে।কারো দুর্বলতা জানতে পারলে তাকে খুব সহজে দমিয়ে রাখা যায়।ফালাকের দুর্বলতা ওর পিতা।কিন্তু আমি তো পিতার সাথে খারাপ কিছু করতে পারবোনা। আচ্ছা ফালাকের মাতা,তার কথা তো উনি কখনো বলেন না।আমি কি প্রশ্ন করবো?
পিতাঃ কি ভাবছো মেহেরুন?
মেহেরঃ মার্জনা করবেন পিতা।আমি একটি প্রশ্ন করতে চাইছিলাম আপনাকে।
পিতাঃ এতো সংকোচবোধ করতে হবেনা,বলো।
মেহেরঃ আপনার রানী অর্থাৎ আমার স্বামীর মাতা।ওনার কথা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি আমি।
পিতাঃ আমি ফালাকের পালকপিতা।
মেহেরঃ ফালাক এই রাজপ্রাসাদের উত্তরাধিকারী নয়?
পিতাঃ অবশ্যই।তাজ-ই এই রাজপ্রাসাদের উত্তরাধিকারী।
মেহেরঃ তাহলে ওনার জন্মপিতা আর জন্মমাতা…..
পিতাঃ এ বিষয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নই মেহেরুন।তশুধু তোমাকে যা বললাম তা একবার মাথাতে নিও।এতে তোমার আর তোমার পিতামার মঙ্গল হবে।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।মাগরিব এর আজান দিবে।আমাকে একটু অন্দরমহলে নিয়ে চলো মা।
মেহেরঃ জ্বি পিতা চলুন।
মেহের সন্ধ্যার পর কক্ষে বসে ভাবছে,
মেহেরঃ পিতা আমার থেকে কিছু কথা লুকালেন। প্রথমত,ফালাক পূর্বে এমন ছিলনা।কোমাল হৃদয় ছিল তার।কি এমন হয়েছিল যা ওকে এমন নির্মম আর অত্যাচারী হতে বাধ্য করেছে?আর দ্বিতীয়ত, ওর আসল পিতামাতা কে আর তারা কোথায়?কি হয়েছে তাদের সাথে যে তারা ফালাকের সাথে থাকেন না?পিতা কিভাবে ওর পালকপিতা হয়ে উঠলো যদি ও এই রাজ্যের রাজার পুত্র হয়ে থাকে? কে দেবে আমাকে এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর?পিতা আমার কাছে কেনো লুকালো ফালাকের পিতামাতার কথা?তবে পিতার এতগুলো কথার মাঝে একটা কথা আমার চিন্তাধারা উন্নতি করেছে। সেটা হচ্ছে দুর্বলতা।হ্যা,একটা মানুষের দুর্বলতা-ই তাকে ঘায়েল করার জন্য সঠিক উপায়।ফালাকের দুর্বলতা আমি জানলেও কিন্তু সেখানে আমি আঘাত করতে পারবোনা।কারণ পিতাকে আমি আমার নিজের পিতার সমুতল্য ভাবি।
হঠাত মেহের ফালাকের কন্ঠস্বর পেলো।ফালাক রাজচিকিৎসকের সাথে কথা বলতে বলতে কক্ষে প্রবেশ করছে।
ফালাকঃ আপনি চিন্তিত হবেন না।ঘা শুকিয়ে গেছে অনেকটা।
রাজচিকিৎসকঃ মহারাজ আমি আপনার সুস্থতার জন্যই বলছি।আরো কিছুদিন ঔষধটা আপনার লাগানো জরুরি।
ফালাকঃ আচ্ছা আমি বুঝতে পেরেছি।ঔষধ না লাগানো অবদি আপনি আমাকে ছাড়বেন না।
রাজচিকিৎসকঃ ছাড়ি কি করে বলুন।সেই ছোট্ট থেকে আপনার শরীরে কোনো বড় চোট পেলে তা পুরোপুরি সেড়ে না ওঠা অবদি আপনি সুস্থ হন না। জ্বর আপনার শরীরে থাকেই।
ফালাকঃ হ্যা।আমার শরীরের খোঁজ খবর রাখার জন্য আপনি আর পিতা-ই আছেন।আপনারা ছাড়া আমাকে আর কে খেয়াল রাখে।
কথাটা ফালাক মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলল।
মেহেরঃ আপনার মত হিংস্র পশুর খেয়াল রাখা মানে নিজেকে আপনার শীকার বানানো। রাজচিকিৎসক কি বলল উনি ফালাকের সেই শৈশব থেকে চিনেন?তাহলে আমি আমার সব প্রশ্নের উত্তর ওনার থেকেই পেতে পারি।কিন্তু উনি কি তা আমাকে বলতে রাজি হবেন?
রাজচিকিৎসকঃ মহারানী?
মেহেরঃ জ্বী বলুন।
রাজচিকিৎসকঃ রাত্রে একটু মহারাজের শরীরের দিকে খেয়াল নিবেন।দেখবেন রাতে ওনার শরীরে জ্বর থাকে কিনা।আজকে সারাদিন-ই ওনার গায়ে জ্বর ছিল।ঔষধটা দিয়েছি তবু আপনি যদি খেয়াল রাখেন।যদি দেখেন ওনার শরীরে জ্বরটা এখনো আছে তবে নিশ্চই আমাকে একবার জানাবেন। তবে জ্বর টা থাকার সম্ভাবনা আছে।কারণ উনি সারাদিনে একবার ও ঔষধ সেবন করেননি।
ফালাক এক দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের কি উত্তর দেয় তা শোনার জন্য।যদিও জানে যে মেহের এ ব্যাপারে অপারগতা জানাবে।তবুও ওর মনের একটা কোণে আশা জাগে মেহের হয়তো মায়ার দৃষ্টিতে ওকে একবার দেখবে।
মেহেরঃ জ্বি আচ্ছা।আমি ওনার যথাসম্ভব খেয়াল রাখব।
মেহের ফালাকের চোখের দিকে তাকালো।ফালাক অনেক খুশি হয়েছে তা ওর চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মেহের মনে মনে বলছে,
মেহেরঃ নাট্যকার্য চালিয়ে যদি ফালাকের দুর্বলতা হতে পারি বা দুর্বল স্থান জানতে পারি তো তোমাকে ঘায়েল করা আমার কাছে কানামাছি খেলার সমান।
আজকে রাত্রে ফালাক অধীর অপেক্ষায় আছে ঠিক কখন মেহের নিজে থেকে ওর কাছে আসবে। ফালাক জানে যে মেহের নিজের স্বার্থসিদ্ধি লাভে ফালাকের সাথে স্ত্রী রূপে অভিনয় করবে।কিন্তু ফালাকের পরিকল্পনা যে অন্যকিছু।আজ আর ফালাক যেচে পড়ে মেহেরের কাছে আসবেনা। কিছুসময় পর মেহের এসে ফালাকের পাশে শুইলো।ফালাক সোজা হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে কপালের উপর হাত রেখে আছে।মেহের মাঝে অনেক দূরত্ব রেখে শুয়ে আছে।তবুও ফালাক কিছু বলছেনা আর কিছু করছেওনা।
মেহেরঃ আজকে হঠাৎ সম্রাটের চরিত্রে পরিবর্তন দেখছি।তিনি কি তার পশুত্ব আজ আর দেখাবেনা? মুহূর্তে মুহূর্তে রূপ বদলায়।কখন কি রূপ ধারণ করে তা বোঝা বড় কষ্টকর।
দুজনে দুরকম চিন্তাভাবনা করতে করতে দুজনেই একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুমের মাঝে কারো ফালাকের বিলাপ শুনে মেহেরের ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ফালাক ঘুমের মাঝে চিৎকার করছে,
ফালাকঃ রক্ষা করো কেউ, আমার আম্মিকে কেউ রক্ষা করো।ওস্তাদ আম্মিকে রক্ষা করুন।আম্মিকে আমার আব্বুজান খুব কষ্ট দিচ্ছে।ওরা সবাই খুব কষ্ট দিচ্ছে।ওস্তাদ আল্লাহকে বলুন আম্মিকে রক্ষা করতে।আম্মি……….
মেহের ফালাকের এমন আর্তনাদ শুনে খুব ভয় পেয়ে গেল।ফালাকের শরীরে হাত রাখল।
মেহেরঃ হে আল্লাহ্।শরীরে আগুন ধরে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।শরীরের তাপমাত্রা অনেক।জ্বর বেড়েছে। কি করবো এখন?রাজচিকিৎসক কে ডেকে আনি।না থাক,উনি বৃদ্ধ।ওনাকে এত রাতে ডেকে এনে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার।এটুকু সেবা তো আমি নিজেই করতে পারবো।
মেহের ফালাক শরীর থেকে হাত সরিয়ে নিতে গিয়ে ফালাক ওর হাতটি টেনে ধরল।মিটিমিটি করে চোখ খুলছে আবার বন্ধ করছে।
ফালাকঃ একটু শান্তি দাও আমাকে।আমি শান্তি চাই।আমাকে আর আঘাত করোনা।আমার পা জ্বলে যাচ্ছে।
মেহেরঃ পা জ্বলে যাচ্ছে মানে?কি বলছে উনি এসব?
মেহের বহুকষ্টে হাতটা ছাড়িয়ে ফালাকের পা আর পায়ের তালু দেখতেই চমকে গেল।ফালাকের পায়ের তালু অসম্ভব পরিমাণ কালো।মনে হচ্ছে পুরো পায়ের তালুটাকে কেউ আগুনের ছ্যাঁকা দিয়েছে।লোহার শিক গরম করে ছ্যাঁকা দিলে যেমন দাগ হয় ঠিক তেমন দাগ পুরো পায়ের তালুতে।পায়ের তালুতে হাত দিতেই মেহের দেখল তালু ঘেমে একাকার।কিন্তু শরীর অনেক গরম। মেহের দ্রুত পাত্রে পানি নিয়ে পানিপট্টি দিতে শুরু করলো।অনেকক্ষণ দেওয়ার পর জ্বরটা কম মনে হল মেহেরের কাছে।আর ফালাকের শরীর ও তখন ঘামছে।শরীরে হাত দিয়ে দেখল গায়ের জামা ঘেমে একদম ভিজে গেছে।মেহের ঘুমন্ত ফালাকের জামা খুলে দিল।তখনো ফালাক ঘুমের মধ্যে বিলাপ করছিল।কিন্তু কিছু বোঝা যাচ্ছিলনা। মেহের মুখেন কাছে কান নিয়ে শুনতে চেষ্টা করল ফালাক কি বলছে।সেই একই কথা,”কষ্ট হচ্ছে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।”কথাগুলো শুনে মেহের সরে আসতেই ফালাক এক টানে মেহেরকে ওর বুকের উপর নিয়ে এল।তখন ফালাক চোখ পিটপিট করে তাকানোর চেষ্টা করছে মেহেরের দিকে।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে মেহেরকে।মেহেরের মুখটা ফালাকের মুখের একদম সামনে আর কাছে। মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে। মেহেরের মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল ফালাক। মেহের ফালাকের বাহুডোর থেকে ছুটতে পারছেনা। মুখটা অন্যপাশে সরিয়ে নিল।আচমকা মেহেরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মেহেরের খুব কাছে চলে এসেছে।মেহেরের শরীরের উপর নিজের শরীরের পুরোটা ভর ছেড়ে দিল।মেহের ফালাককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। ফালাক মেহেরের হাতদুটো আটকিয়ে মেহেরের দুপ্রান্তে বিছানার সাথে চেঁপে ধরল।দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।একজনের চোখে ঘৃণার আভাস আর অন্য জনের চোখে ভালোবাসা পাওয়ার আর কাছে যাওয়ার ব্যাকুলতা।ফালাকের চোখে তখন পানি টলমল করছে।
চলবে……