#হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ১৫
লেখাঃ Israt Jahan
আমার আর তোমার সম্পর্ক তুমি খারাপ নজরে দেখছো কেন?
মেহেরঃ আদৌ কি শুধু আমার সাথেই আপনার সম্পর্ক?বাহিরের নারীর প্রতি আপনার আর কোনো নেশা নেই?আপনি আমাকে এই কথা বিশ্বাস করতে বলছেন?এই যে আপনি দিনের বেশির ভাগ অংশ বাহিরে থাকেন তা কি শুধুই রাজকার্যের জন্য?কি ভেবেছেন আমি কিছু বুঝিনা।যে পুরুষ বয়স মাত্র একুশ থেকে নারীদেহের প্রতি আসক্ত হয়েছে আর তা শুধু একজন নারীর প্রতি নয় বহু নারীর প্রতি।আর মাত্র এই কয়েকদিনেই আমাকে বিবাহ করে আপনার সেই অভ্যাস সেই নেশা কেটা গেছে?
ফালাক রাগ আর সংবরণ করতে পারছেনা।
মেহরের গাল চেঁপে ধরল ও।
ফালাকঃ বন্ধ করো তোমার এই নোংরা ভাষা।আমি সহ্য করতে পারছিনা। খারাপ কিছু হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
মেহেরঃ কি খারাপ কিছু হবে?মেরে ফেলবেন আমাকে?হ্যা আপনি তো পারেন।আপনার সেই অভ্যাস আছে।নিজের চাহিদা মিটিয়ে তারপর তাকে হত্যা করা।আমাকেও তাই করবেন বুঝি। আমি প্রস্তুত।আর পারছিনা প্রতিনিয়ত আপনার কাছে এভাবে নিজেকে…..
পুরো কথাটা শেষ করার আগেই ফালাক মেহেরের গালে চড় মেরে বসল।
ফালাকঃ এতগুলো দিনে আমি কতবার তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার বস্ত্র খোলার চেষ্টা করেছি? বলো?আজ আমি তোমার কাছে আসতে চেয়েছি কারণ আমি ভেবেছি তুমি আমাকে মন থেকে গ্রহণ করতে পেরেছো।কিন্তু আমার উপর অভিমান করে আছো।আমি সেই অভিমানের পালা শেষ করে আমাদের ভালোবাসার সূচনা করতে চেয়েছি।
মেহেরঃ আমার অভিমান ভাঙ্গাতে চেয়েছিলেন নাকি আপনি অনাহারে আছেন তাই আহার করতে এসেছিলেন?
ফালাকঃ আহ্…..একদম চুপ।তোমার আর একটা কথাও আমি শুনতে চাইনা।বেরিয়ে যাও আমার কক্ষ থেকে।
মেহেরঃ আমি শুধু এই কক্ষ থেকে নয় আপনার এই রাজ্য থেকে আপনার কবল থেকে বেরিয়ে যেতে চাই।
কথাটা বলেই মেহের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। ফালাক পেছন থেকে ওকে আটকে ধরল।
ফালাকঃ আমি যতদিন বেঁচে থাকব ঠিব ততদিনই তুমি আমার কাছে থাকবে।আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবনা।তুমি আমার পূর্বের জীবনের কথা জানলে কি করে….বলো?
মেহেরঃ আমি সব জানি।
ফালাকঃ কি জানো বলো?আর কে বলেছে তার নাম বলো।
মেহেরঃ কেন?তাকেও হত্যা করবেন বুঝি?আপনি তা করতেই পারেন।কারণ আপনার মাঝে কোনো মানুষের আত্মা বসবাস করেনা।কোনো হিংস্র জানুয়ার বসবাস করে।
ফালাকঃ মেহের আমার ধৈর্যের পরীক্ষা তুমি নিওনা।আমি ঠিক কতটা হিংস্র হতে পারি তা তোমার জানা নেই।তা তুমি ধারণাও করতে পারবেনা।
মেহেরঃ আমি জানি আপনি কতটা হিংস্র হতে পারেন।আপনি তো ওই কাশেমের থেকেও সহস্রগুণ হিংস্র।সে আপনার সামনে আপনার মাতার সম্মান কেড়ে নিয়েছিল আর আপনি তার বদলে দিনের পর দিন শত শত নারীর সম্মান কেড়ে নিয়েছেন।ওদের সম্মান কেড়ে নেওয়ার সময় আপনার নিজের মাতার কথা একবার মনে পড়েনি?মনে পড়েনি আপনার যে আপনার মাতাকেও কেউ খুব কষ্ট দিয়ে তাকে অসম্মান করে হত্যা করেছে।এগুলো মনে পড়লে আপনি কখনোই অন্য কোনো নারীর সর্বনাশ করার কথা চিন্তাও করতে পারতেন না। আপনি আপনার মাতার শোকে কোনোদিনও শোকাহত হননি।আপনি সন্তান নামের কলঙ্ক।
মেহের ফালাককে ওর মাতা সম্পর্কে এমন বহু বহু কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু একবার ও ওর মুখের দিকে খেয়াল করছেনা যে এই মুহূর্তের ফালাকের অবস্থা এখন কি হচ্ছে।ফালাক মেহেরের হাত ছেড়ে দিয়ে ওর মাথা চেঁপে ধরে রেখেছে।প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে ও।চারপাশ অন্ধকার দেখছে।মাথা ধরে চোখ বন্ধ করে ফালাক বার বার ওর আব্বাজান কে ডাকছে।গলার স্বরটাও কেমন ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে।কথা আটকে আসছে ফালাকের।মেহের সবটাই দেখছে কিন্তু ও বুঝতে পারছেনা ফালাক এমন কেন করছে।ফালাক মেহরের দিকে তাকিয়ে পানি চাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু মেহের ওর ইঙ্গিত বুঝতে পারছেনা।ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ফালাকের দিকে চেয়ে।ফালাক আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা। মেহেরের সামনে মাথা ঘুরে পড়ে গেল।মেহের তখন দ্রুত ওর কাছে গেল।ফালাককে ডাকছে কিন্তু ফালাক উত্তর নিচ্ছেনা।
মেহেরঃ সম্রাট? সম্রাট?উনি তো কোনো উত্তর নিচ্ছেন না।কি হলো ওনার?
মেহের উঠে পানির পাত্র আনল।ফালাকের মুখে পানি ছেটাতে গিয়ে ওর মনে পড়ে গেল আব্বাজানের কথা।উনি বলেছিল যে ফালাক ওর মাতার সাথে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা মনে পড়ে গেলেই ও নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনা। ওর সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায় আর ওর মাতার সাথে ঘচে যাওয়া অন্যায় ও এখনো সহ্য করতে পারেনা। আর তাই ও এখন এগুলো শুনে সহ্য করতে না পেরে চেতনা হারিয়েছে।কিন্তু মেহের কি ভাবছে বসে?
মেহেরঃ আজ হয়তো আমার হাতে কোনো সুযোগ আছে।জানি সেটা অন্যায়।কিন্তু আমার পিতামাতাকে মুক্ত করার এটাই অনেক বড় একটা সুযোগ।ক্ষমা করবেন সম্রাট।আপনার দুর্বলতার সুযোগ-ই আমাকে নিতে হল।
খুব ভোরে ফালাকের চেতনা ফিরল।
ফালাকঃ উহ্….মাথা এত যন্ত্রণা করছে কেন? এ আমি কোথায়?আমি কারাগারের মাঝে কেন? এটা তো আমার প্রাসাদের কারাগর নয়।
চলবে…..
Syory: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ১৬
লেখাঃ Israt Jahan
.
.
ফালাক মাথা যন্ত্রণাতে চারপাশ ঝাপসা দেখছে। কিন্তু ও বেশ বুঝতে পারছে যে ও এখন অন্য কোনো রাজ্যের কারাগারে বন্দী।বহু কষ্টে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াল।কারাগারের সামনে কোনো প্রহরীকে দেখতে পাচ্ছেনা ও।লোহার মোটা শিক ধরে দাঁড়িয়ে বাহিরে কিছু দেখার চেষ্টা করছে।কিন্তু পাহাড়াতে কেউ নেই।
ফালাকঃ কি করে হল এতকিছু?আমি তো কিছুই মনে করতে পারছিনা।কারা এত বড় দুঃসাহস দেখাতে পারল আমার সাথে?
মাথাটা ধরে আবার মাটিতে বসে পড়ল।
ফালাকঃ তৃষ্ণা পেয়েছে খুব।কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা।কার কাছে পানি চাইব?
পানির কথা মনে পড়তে ওর মনে পড়ে গেল কাল রাতের ঘটনা।
ফালাকঃ মেহের….তুমি?
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল ফালাক।হ্যা, ও এমন আশঙ্কা করতো।ওকে কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারলে তা শুধু মেহের-ই করতে পারবে।আর আজ সেই শঙ্কা সত্য হল।কারো পায়ের আওয়াজ ফালাক শুনতে পাচ্ছে।কারাগারের দ্বার খুলে কেউ একজন ভেতরে এসে ফালাকের সামনে দাঁড়াল। ফালাক খুবই স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।
প্রহরীঃ সম্রাট ফালাক তাজ।আজ তুমি কোথায় জানো?
ফালাক শুধু চেয়ে শুনছে প্রহরীর কথা।কোনো জবাব দিচ্ছেনা।
প্রহরীঃ কি খুব ভয়ে আছো?ভয়ের পালা তো কেবল শুরু।তোমাকে যে কি কি উপায়ে আপ্যায়ন করা হবে তা তোমার কল্পনাতেও নেই।
ফালাকঃ তোদের রাজকন্যা কোথায়? তাকে বল আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।পানি খেতে চাই আমি।
প্রহরীঃ কত বড় বুকের পাটা তোমার! এই অবস্থার পরও তুমি রাজকন্যার হাতে পানি পান করতে চাও?
আরবঃ ওকে আমি পানি পান করাবো।
প্রহরী মাথা নত করে আরবকে সালাম জানাল।
আরবঃ তুমি বাহিরে চলে এস।জানোনা হিংস্র জানুয়ারকে খাঁচায় বন্দী করলে কখনো সেই খাঁচার ভেতর ঢুকতে নেই?
প্রহরীঃ ক্ষমা করবেন।আমি এক্ষণি বেরিয়ে আসছি।
ফালাক উঠে দাঁড়িয়ে আরবের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আরবঃ ফালাক তাজ! তোকে আমি ঠিক কিভাবে হত্যা করলে শান্তি পাব তা আমি এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা।আমার সহ্য হচ্ছেনা।হাত নিশপিশ করছে তোর শরীরকে ক্ষত বিক্ষত করার জন্য।
ফালাকঃ তার জন্য তো তোকে আমার খাঁচাতে আসতে হবে।তোর তো কলিজা নেই আমাকে খাঁচার বাহিরে আনতে।নম্রুদের বাচ্চা!
আরবঃ কি বললি তুই আমাকে?
ফালাকঃ যা বলেছি তা তোর মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে।
খুব দাপট দেখতে পাচ্ছি তোর মাঝে।তোর ভাই কি জানে তুই সম্রাট ফালাক তাজের সঙ্গে কি ষড়যন্ত্রে নেমেছিলি?
আরবঃ ভয় দেখাচ্ছিস তুই আমাকে?হা হা হা
বলে দিবি সবাইকে? তোর মত জানুয়ারের কথা কেউ বিশ্বাস করবে?
ফালাকঃ মেহের কোথায়?লুকিয়ে রেখেছিস ওকে? এতবড় বীরপুরুষ তোরা…!খাঁচা তে আটকে রাখার পরও তোদের এত ভয়?তাই বুঝি আমার শিকারকে আমার চোখের সামনে আসতে দিচ্ছিস না?
আরবঃ তার জবাব তোর শিকার-ই এস দেবে।
নিজের রাজ্যে ফিরে পাওয়ার পরও মেহের যেন কোনো কিছুতেই আগের মত কোনে শান্তি খুঁজে পাচ্ছেনা।রাজ্যের প্রজারা আজ সবাই রাজমহলে বাহিরে ভীড় জমিয়েছে।সম্রাট জাভেদ আর তার কন্যার জয়ধ্বনি দিচ্ছে সবাই।জয়ধ্বনিতে মুখরিত রাজমহল।কিন্তু মেহের যেন সেই জয়ের খুশিতে খুশি হতে পারছেনা।মেহের সমস্ত প্রজাদের সঙ্গে সৌজন্যতা বিনিময় করছিল।আরব এসে ওকে ফালাকের ব্যাপারে কিছু কথা বলল।যা শুনে মেহের আর এক মুহূর্ত সময় অতিবাহিত না করে কারাগারের সামনে গেল।ফালাক দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে বসে আছে। মেহেরের নূপুরের ধ্বনি ওর কানে পৌঁছাতেই চোখ দুটো খুলে মেহেরের দিকে তাকাল।উঠে গেল, মেহেরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ফালাক।শুধু দুজনের মাঝে লোহার মোটা শিকের দেয়াল খাড়িয়ে আছে।চোখে মুখে বিদ্রুপের ছায়া নিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে।
ফালাকঃ আব্বাজান কোথায়?
মেহেরঃ কক্ষে আছেন।
ফালাকঃ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?
মেহেরঃ হুম।
ফালাকঃ সেবা দিতে না পারলে বিষ খাইয়ে মেরে দিও।
মেহের অবাক চোখে ফালাকের চোখের দিকে তাকাল।
মেহেরঃ নিজের সঙ্গে সবাইকে তুলনা করেন? আপনার কি মনে হয় আপনি আমার পিতামাতার সঙ্গে যা করেছেন আমিও আব্বাজানের সঙ্গে তাই করব?
ফালাকঃ ধন্যবাদ।
মেহের অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর ফালাক স্বাভাবিক ভঙ্গীতে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুসময় দুজনেই চুপ হয়ে রইল।
তারপর ফালাক কথা বলতে শুরু করল।
ফালাকঃ কষ্ট হচ্ছে?
মেহেরঃ কষ্ট? হুহ…..এই সময়টার জন্য আমি কতগুলো দিন প্রার্থনা করেছি তা আপনি জানেন?
ফালাকঃ জানি।কষ্টটা যে আমার জন্য হচ্ছে সেটা বলিনি আমি।
মেহের প্রশ্নবোধক ভঙ্গীতে তাকিয়ে আছে।
ফালাকঃ এই প্রথম বিশ্বাসঘাতক আর ভীরুতার পরিচয় দিয়েছো তাও নিজের স্বামীর সঙ্গে।আর সেটা ভাবতেই নিজের বিবেকের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাচ্ছো। এর জন্যই কষ্টটা হচ্ছে।
মেহেরঃ আমি বিশ্বাসঘাতক নই।
ফালাকঃ নিজের মানুষ হয়ে নিজের কাউকে পেছন থেকে ছুড়ি মেরেছো ভীরুদের মত।আমি হতাশ তোমার কিছু কিছু কর্মে।আশা করিনি এভাবে পেছন থেকে আঘাত করবে।
খুব স্বাভাবিক ভঙ্গীতে ফালাক কথা বলছে মেহেরর সঙ্গে।ফালাকের কথাগুলো শুনে মেহের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ওর কথার কোনো জবাব দিতে পারছেনা।
মেহেরঃ হ্যা আমি ভীরুতার পরিচয় দিয়েছি।
আপনি বুঝি খুব বীরত্বপূর্ণ কাজ করেছেন?অন্যায় ভাবে জোর-জবরদস্তি করে প্রতিটা রাজ্য দখল করেছেন।
ফালাকঃ আর তোমার প্রেম?সেটা দখল করতে পারিনি?
মেহেরঃ শরীরটা দখল করতে পেরেছেন প্রেম না।
ফালাকঃ ইয়া আল্লাহ্ কতদিন অবুঝ করে রাখবে আমার প্রিয়তমা কে?
মেহেরঃ একদম চুপ।প্রস্তুত থাকুন নিজের অপকর্মের শাস্তি পাওয়ার জন্য।আমার সাথে করা অন্যায় আমার পরিবারের উপর করা অত্যাচার সবকিছুর শাস্তি আমি আপনাকে দেব।
ফালাকঃ তোমার দেওয়া শাস্তি আমি নিদ্রারত অবস্থাতেও নিতে রাজি।কিন্তু অন্য কেউ হলে সে আর প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবেনা আমার থেকে।
মেহেরঃ এখনো এত জোর?কোথায় আছেন তা কি দেখতে পাচ্ছেন?
ফালাকঃ তোমার কি ধারণা তোমরা আমাকে এই সামান্য লোহার শিকের ছোট্ট কক্ষে বন্দী করে রাখতে পারবে?
মেহেরঃ আপনি তা দেখতে চান?
ফালাকঃ আমি তো দেখতে চাই-ই।কিন্তু তুমি দেখতে চাওনা যে আমি ইচ্ছা করলে এখন এই মূহুর্তে কক্ষের দ্বার ভেঙ্গে তোমার কাছে আসতে পারি?
মেহেরঃ হা হা হা….গতকাল রাত্রি থেকে মাথাটা একেবারেই বিগড়ে গেছে মনে হচ্ছে।
হাসি থামিয়ে জোর গলায় মেহের বলছে-“আপনি আপনার ক্ষমতার বড়াই শুধু ওই চার দেয়ালের মাঝেই দেখাতে পেরেছেন।মেহেরের কারাগারে সেই বড়াই চলবেনা।”
মেহের কথা শেষ করে কারাগারের সামনে থেকে হেঁটে চলে যাচ্ছে।তখন কারাগারের সামনে ওই প্রহরী দাঁড়িয়ে ছিল।ফালাক রাগকে বশে আনতে না পেরে শিকের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে পেছন থেকে প্রহরীর গলা জাপটে ধরে খুব জোরে দু বার শিকের সাথে ওর মাথা বারি দিল।ওই মুহূর্তেই প্রহরীর প্রাণ বেরিয়ে গেছে।প্রহরীর কোমড় থেকে চাবিটা নিয়ে তালা খুলেই কারাগারের বাহিরে চলে এসেছে।মেহের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখছে।সামনের ওপর এভাবে প্রহরীর মাথার পেছন অংশ থেতলে যেতে দেখে ওর সারা শরীর ভয়ে অবশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।রীতিমত হাত পা কাঁপছে মেহেরের।শরীরে কতটা জোর থাকলে কেউ কাউকে এভাবে ধরে আঘাত করতে পারে।পুরো মুখ আর মাথা রক্তে ভিজে গেছে প্রহরীটার।ওই জায়গা থেকে পালিয়ে যাওয়ার শক্তিটুকুও মেহের হারিয়ে ফেলেছে।প্রহরীর উপর থেকে চোখ সরিয়ে ফালাকের মুখের দিকে তাকাল।প্রহরীর মাথার রক্ত ছুটে এসে ফালাকের সারা মুখে ছিটে ছিটে লেগেছে।কতটা ভয়ংকর দেখাচ্ছে ওই লাল মুখটা। মেহের আর তাকিয়ে থাকতে পারছেনা।ওখান থেকে ছুটে যাওয়ার আগেই ফালাক পেছন থেকে ওর হাতটা ধরে টেনে জড়িয়ে ধরল।মেহেরকে শক্ত করে পেছন থেকে চেঁপে ধরে আছে। চোখ মুখ শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে ফালাক বলছে-“আমার ক্ষমতার বড়াই শুধু চার দেয়ালারে মাঝে তাইনা? আমি তোমাকে বলেছিলাম না যে আমি না চাইলে তুমি কোনোদিনও আমার থেকে মুক্তি পাবেনা। আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন তুমি আমার বাহুডোরে থাকবে।বলেছিলাম না আমি?”
মেহের ছুটে বের হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।ফালাক ওকে পেছন থেকে সামনে ঘুরিয়ে ওর কোমড় এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আর অন্য হাত দিয়ে ওর গাল চেঁপে ধরে ওকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে।
ফালাকঃ খুব ভয় লাগছে এখন?ভয় জিনিসটা আরো কুড়ি বছর আগে আমার মন থেকে উধাও হয়ে গেছে।ওটা তোমাদের মত ভীরুদের জন্য আছে পৃথিবীতে।এমন সহস্র রক্ষী আর প্রহরীর শিরচ্ছেদ করার ক্ষমতা ওই উপরওয়ালা আমাকে দিয়েছে।
মেহেরঃ আহ্….ছাড়ুন আমাকে।নিজের প্রাণের মায়া থাকলে আমাকে ছেড়ে দিন।আপনি এই চাইলেও এই প্রাসাদ থেকে আর বের হতে পারবেন না।
ফালাকঃ মূর্খ।মূর্খতার পরিচয় দিতে দিতে একদম অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছো।এই প্রাসাদ থেকে তো আমি বের হবোই আর সঙ্গে এই প্রাসাদের রাজকন্যাকে ও হরণ করে নিয়ে যাব।হরণ কেন বলছি এটা তো এখন আমার রাজ্যের সম্পদ।তাই এটার উপর জোর আর অধিকার দুটোই আমার বেশি।আজ তোমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে আরো একবার বিবাহ করে ফুলশয্যা কক্ষে প্রবেশ করব।
পেছন থেকে লোহার দন্ড দিয়ে ফালাকের ঘাড়ে আঘাত করল আরব।ফালাকের আঘাতটা গুরুতর না লাগলেও হঠাৎ করে আঘাতটা পাওয়াতে তাল সামলাতে না পেরে ফালাক মেহেরের থেকে কিছুটা ছুটে গেল।সামনে ফিরে তাকাতেই আরব ফালাকের চোয়াল পেঁচিয়ে আবার আঘাত করল।মুখের মাংস ছিলে রক্ত ছুটে লাগল মেহেরের গালে।মেহের গালে হাত দিতেই রক্ত ওর আঙুলের মাথায় জড়িয়ে গেল। চিৎকার করে উঠল মেহের।এরপর ফালাক একদম তাল হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
মেহেরঃ চাচাজান….না।ওকে এভাবে আঘাত করবেন না।
ফালাক পুরোপুরি চেতনা হারানোর আগ পর্যন্ত মেহেরের দিকে তাকিয়ে ছিল।ওকে আঘাত করাতে মেহের আর্তনাদ করছে তা ফালাক চেতনা হারানোর মাঝেই দেখতে পাচ্ছে।
আরবঃ ঠিক-ই বলেছিস।এভাবে নয় ওকে এর থেকে আরো ভয়ানকভাবে আঘাত করব আমি।শেষ করে ফেলব ওকে।
আরব লোহার দন্ডটা উঁচু করে ওর মাথা বরাবর আঘাত করার জন্য আগাতেই মেহের চিল্লিয়ে উঠল।দৌড়ে গিয়ে হাত আটকে ধরল চাচাজানের।
মেহেরঃ না…..।চাচাজান থামুন।
আরবঃ তুই কি ওকে মায়া দেখাচ্ছিস?
মেহেরঃ ওর আর চেতনা নেই।
আরবঃ হুম।ওকে জাগ্রত অবস্থায় আঘাত করব আমি।ঠিক যেভাবে ও আমাকে আঘাত করেছিল।
কয়েকজন প্রহরী ধরে ফালাককে আবারো কারাগারে বন্দী করল।ওর সারা শরীর লোহার মোটা শিকল দিয়ে বাঁধা।
জাভেদঃ আরব?ওই শয়তান নাকি আমাদের এক প্রহরীকে হত্যা করেছে?
আরবঃ মহারাজ মেহেরুন স্বচোক্ষে তা দেখেছে। ওকে কিভাবে আক্রমণ করেছিল তা ওর থেকেই শুনে নিন।
জাভেদঃ ওকে আক্রমণ করেছিল?ওকে ডাকো তো।
মেহেরকে ডেকে পাঠাল ওর পিতা।মেহের পিতার কক্ষে এল কিন্তু ওর মুখ চোখের অবস্থা ভালো নয়। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কেঁদেছে কক্ষে বসে।
জাভেদঃ মেহেরুন মা তুমি ঠিক আছো?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?ও কি তোমাকে কোথাও……
মেহেরঃ না পিতা।ও আমাকে কোথাও আঘাত করেনি।
আরবঃ তুই একি বলছিস?আমি নিজে চোখে দেখেছি ও তোকে কিভাবে চেঁপে ধরেছিল।
মেহেরঃ ও আমাকে আঘাত…..
আরবঃ মেহেরুন তোকে দেখছি আজ কাল বড্ড মায়া দেখাচ্ছিস ওর প্রতি।কেন?আর কিভাবে ওর প্রতি এত মায়া সৃষ্টি হল তোর মাঝে?যে তোর সাথে এত অন্যায় করেছে,আমাদের সাথে কুকুরের মত আচরণ করেছে।এমন কোনো দিন ছিলনা যে আমার শরীর থেকে রক্ত ঝরেনি।এমনকি তোর পিতাকেও ওই জানুয়ারটা আঘাত করেছে।আমার ছোট্ট বাচ্চাটাকে ও আমার থেকে কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল।চিৎকার করে কান্না করেছি ওকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে।
জাভেদঃ ওকে দয়া দেখানোর মত কোনো জায়গা নেই।ওর কর্মের সাজা ওকে পেতেই হবে।
রক্ষীঃ মহারাজ….! সম্রাট ফালাক কারাগারের দ্বার ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।
জাভেদঃ কিভাবে?তাকে তো শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।
রক্ষীঃ ওই শিকলের সাহায্যেই।
আরবঃ কি বলছো তুমি?শিকলের সাহায্যে কি করে?
রক্ষীঃ হাতের শিকল দ্বারের শিকে পেঁচিয়ে তা বহু জোরে জোরে টানছে।শিকগুলো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে যাবে দ্বার।
জাভেদঃ আরব তুমি আর দেরী করোনা।ওখানে গিয়েই দেখো পরিস্থিতি কেমন।
আরবঃ ঠিক আছে মহারাজ।
মেহেরঃ পিতা আমিও যাই?
জাভেদঃ তুমি?না না তুমি গেলে ও যদি তোমার উপর কোনো আক্রমণ করে বসে?
মেহেরঃ ও আমার কোনো ক্ষতি করবেনা পিতা।
আমাকে যাওয়ার অনুমতি দিন।আমি ওখানকার পরিস্থিতি গিয়ে দেখতে চাই।
জাভেদঃ ঠিক আছে যাও।
মেহের ছুটে কারাগারের দিকে যাচ্ছে।গিয়ে দেখতে পেল আট দশজন রক্ষী আর প্রহরী মিলে ওকে আটকে রাখার চেষ্টা করছে।চাচাজান কারাগারের কক্ষে ঢুকেই আবারো সেই লোহার দন্ড দিয়ে ফালাককে মারতে শুরু করল।হাত পায়ের অস্থিসন্ধিতে আরব আঘাতগুলো করছে।
ফালাকঃ কাপুরুষের বাচ্চা আমাকে একবার মুক্ত কর তারপর আমার সাথে লড়াই করতে আয়।তোর শরীরে কত তেজ আছে তখন দেখাস।তুই তো কুকুরের থেকেও অধম।কুকুর ক্ষিপ্ত হলে সামনে থেকে আক্রমণ করে পেছন থেকে না।
আরবঃ তুই কুকুরের বাচ্চা।তোর জন্ম হয়েছে কুকুরের পেট থেকে।
ফালাকঃ আরব……
সিংহের মত গর্জন করে আরবের আঘাতকে উপেক্ষা করে ওর বুকে লাথি মেরে দিল ফালাক। ছিটকে গিয়ে কারাগারের দ্বারের মুখে পড়ল আরব। মেহের সবকিছু দূর থেকে দেখছিল।ফালাককে এমনভাবে আঘাত করতে দেখে এতক্ষণ ওর চোখে পানি টলমল করছিল।চাচাজানকে পড়ে যেতে দেখে ছুটে গিয়ে তাকে ধরল।মেহের অগ্নিদৃষ্টিতে ফালাকের দিকে তাকাল।এতসময় ফালাক মেহেরকে দেখতে পায়নি।মেহেরকে দেখা মাত্রই ফালাক আরো বেশি জোর প্রয়োগ করছে ওদের হাত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য।ওকে দেখলে মনে হচ্ছে কোনো হিংস্র গেরিলাকে আটকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।সে সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ওই বাঁধন থেকে ছুটে আসার চেষ্টা করছে।আরব বুঝতে পারল ওকে এর থেকে আরো বেশি আঘাত না করলে কুপোকাত করা যাবেনা।দুজন রক্ষী আর আরব তিনজন মিলে ফালাককে মারতে শুরু করল।মেহের আর এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছেনা।এদিকে ফালাক তাকিয়ে দেখছে যে মেহের চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কাউকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছেনা।এটা দেখে ফালাকের মনের বল সব হারিয়ে গেল।চাইলেও আর ওদের আঘাতকে প্রতিরোধ করতে পারছেনা। কিন্তু মেহের যে বললেও ওর চাচাজান ওকে আঘাত করা থামাবেনা।সবার বিরুদ্ধে গিয়ে ও ফালাককে আগলাতে পারবেনা।ওর যে সত্যিই শাস্তি প্রাপ্য। মেহের ওকে এভাবে আর মার খেতে দেখতে পারছেনা।দৌড়ে পিতার কক্ষে চলে এল।
মেহেরঃ পিতা।
পিতাঃ কি হয়েছে মা তুই এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?
মেহেরঃ আমাদের রাজ্যে এভাবে আঘাত করে কোনো অপরাধীকে হত্যা করার নিয়ম নেই। চাচাজান যেভাবে মারছেন তা আমাদের নিয়মের বাহিরে।আপনি কাউকে তার বড় কোনো অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেন।অথবা সারাজীবন তাকে কারাগারে ফেলে রাখেন।কিন্তু চাচাজান যেভাবে মারছেন তা আপনার শাস্তি দেওয়ার নিয়মের বাহিরে।
আরবঃ কি করছে আরব?
মেহেরঃ আপনি নিজে গিয়ে দেখুন।চাচাজানকে আটকান।
জাভেদ খান কন্যার কথামত আরবকে বাঁধা দিল এভাবে ফালাককে আঘাত করার ব্যাপারে।
ফালাকের শরীর মুখ আর চেনার উপায় নেই। গায়ের জামা ছিড়ে রক্তাক্ত দেহ দেখা যাচ্ছে।এক চুল অংশ ফাঁক নেই যেখানে আঘাত পড়েনি।একদম চেতনাহীন হয়ে পড়ে আছে ফালাক।জাভেদ, সেনাপতি, আরব, মেহের পরিবারের প্রায় সবাই এক জায়গায় বসে আলোচনা করছে।
আরবঃ মহারাজ ওর মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিন। ওকে আমরা এভাবে আটকে রাখতে পারবনা।ও তুমুল শক্তির অধিকারী।চেতনা ফিরলেই ও যে কোনো উপায়ে কারাগারের দ্বার ভেঙ্গে বেরিয়ে আসবে। ভয়ে ওর কাছে কোনো প্রহরী এগুতে চাইনা।ওর শক্তির সাথে ওরা পেরে ওঠেনা।
মেহেরঃ কি বলছেন চাচাজান? মৃত্যুদন্ড?
আরবঃ হ্যা মৃত্যুদন্ড। ওর ওটাই আসল সাজা।
মেহেরঃ পিতা আপনিও কি তাই চান?
মাতাঃ ওর শাস্তি কঠোর হওয়া উচিত।কিন্তু এটাও ঠিক ও আমাদের কারাগারে বন্দী রাখলেও অন্যসব কয়েদিদের থেকে আমাদের কিছুটা হলেও যত্নে রেখেছিল।শেষ কিছুদিন কারাগার থেকে মুক্ত করে প্রাসাদের কক্ষে রেখেছিল।হয়তো ব্যবহার খুব খারাপ ছিল ওর।কিন্তু বাঁচিয়ে রেখেছিল আমাদের।
জাভেদঃ হ্যা সেটা ঠিক।এখন আমার কি করা উচিত আমি ভেবে পাচ্ছিনা।
সেনাপতিঃ মহারাজ আপনি সিদ্ধান্তগ্রহণ এর আগ পর্যন্ত ওকে কিভাবে আটকে রাখবেন সেই ব্যবস্থা আমাদের আগে করতে হবে।
আরবঃ হ্যা মহারাজ সেনাপতি আমিন ঠিক-ই বলেছেন।
জাভেদঃ যা দেখলাম ওকে কোনোভাবেই কারাগারে আটকে রাখা যাবেনা।কোনো প্রহরী বা রক্ষী ওর শক্তির সঙ্গে পারবেনা।তাহলে কি উপায়ে ওকে বন্দী করা যায়?
মেহেরঃ যে কোনো রক্ষী,কোনো প্রহরী বা চাচাজান সবার উপরেই ও আঘাত প্রয়োগ করতে পারবে কিন্তু আমার উপরে নয়।
আমিনঃ কি বলতে চাইছেন রাজকন্যা?
মেহেরঃ আমি ওকে পাহাড়া দেব।
জাভেদঃ তুমি কি পাগল হয়ে গেলে মেহেরুন? ও তোমাকে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।আর তুমি কিভাবে ওকে পাহাড়া দেবে?
মেহেরঃ আমার কথাগুলো আগে আপনারা মনযোগ সহকারে শুনুন।আমাকে ও কখনোই আঘাত করতে পারবেনা।আমার কক্ষের ভেতর আরো একটি লোহার কক্ষ তৈরি করুন।পুরোটাই লোহার দেয়াল থাকবে।কোনো ফাঁক থাকবেনা। আর আমার কক্ষের চারপাশে শতাধিক রক্ষী আর প্রহরী পাহাড়াতে থাকবে।আমি নিজে ওকে পাহাড়া দেব।
মাতাঃ ও যদি কোনোভাবে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে?
মেহেরঃ ওই যে বললাম ও আমাকে আর যাই হোক আঘাত করতে পারবেনা।শুধু আমাকে কেন ও এখন আর কোনো নারীকেই আঘাত করেনা।আর আমার কাছে আত্মরক্ষার জন্য সবসময় অস্ত্র থাকবেই।
সবাই মেহেরের কথায় যুক্তি খুঁজে পেল। পুরো একদিনের মাঝে মেহেরের কক্ষের ভেতর আরো একটি লোহার কক্ষ তৈরি করার ব্যবস্থা করে ফেলল।কক্ষ তৈরির পর অচেতন ফালাককে ওই কক্ষে রেখে গেল প্রহরীরা।আর মেহেরের কক্ষের চারপাশে অনেক রক্ষী নিয়োজিত করল।প্রায় মধ্যরাত ফালাক নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। অনেক ভাবনা চিন্তার পর মেহের নিজের কক্ষে এল। ভয় মেহেরের মনেও কাজ করছে।আজ প্রথম মেহের ফালাকের এই ভয়ংকর রূপ দেখেছে।মেহের ও কক্ষে প্রবেশ করল আর তখনই ফালাকের চেতনা ফিরল।ফালাকের সমস্ত শরীর ব্যাথা।উঠে বসার ক্ষমতাও নেই।শুয়ে চারপাশ দেখছে।
ফালাকঃ এত কঠিন ব্যবস্থা করা হয়েছে আমাকে আটকে রাখার জন্য।এটা নিশ্চই আমার প্রিয়তমার পরিকল্পনা ছিল।
মেহের কিছুসময় বিছানায় বসে থেকে ফালাকের কক্ষের দ্বারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।ও কিছুতেই স্থির হতে পারছেনা ওকে না দেখে।দ্বার খুলেই দেখতে পেল ফালাকের নিস্তেজ শরীর।মনে হচ্ছে একটা মৃত মানুষ।এদিকে ফালাক মেহেরের নূপুরের আওয়াজ শুনে ইচ্ছে করে চোখ বন্ধ করে ফেলল। মেহর ওকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে বুকের বাম পাশটায় কেমন একটা ধাক্কা অনুভব করল। এক মূহুর্ত সময় দেরী না করে রাজচিকিৎসক এর কাছ থেকে কিছু ঔষধ নিয়ে এল।শরীরের জামা কাপড় খুলে সারা গায়ের রক্ত একটা পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে দিল।পুরো শরীর জুড়েই ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। ফালাক সব টের পাচ্ছে কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ করছেনা।ওর প্রয়োজন এখন এই সেবাটুকু।কথা বলার শক্তিটুকু ওর মাঝে নেই।অনেক্ষণ ধরে ফালাকের সারা শরীরে ঔষধ মালিশ করতে করতে ওর কাছেই ঘুমিয়ে পড়ল ও।দুজনেরই মাথার নিচে কোনো বালিশ নেই।নিজের হাতের উপর ফালাক মেহেরের মাথা তুলে নিল।
মেহেরঃ সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখলাম ওর বুকের উপর আমি মাথা পেতে ঘুমিয়েছিলাম।
মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখি ও আমার দিকে চেয়ে আছে।শরীরের জামা-কাপড় সামলে নিয়ে ওর বুকের উপর থেকে মাথা তুলে উঠতেই ও আমার হাত ধরে টেনে এক ঝটকায় ওর বুকের উপর নিয়ে নিল।
ফালাকঃ সারাটা রাত এখানেই ছিলে তুমি। আর রাতে আমি তোমার সাথে কি করেছি জানো?
মেহেরঃ কি করেছেন আপনি?
মেহের ওর নিজের জামা কাপড়ের দিকে নজর দিচ্ছে সবকিছু ঠিক আছে কিনা।
ফালাকঃ হা হা হা।এভাবে কি দেখছো?ভয় পাওয়ার কিছু নেই।বেশি কিছু করার শক্তি ছিলনা। শুধু এই নরম ঠোঁটজোড়াতে আর কপালে আমার ঠোঁটের গভীর স্পর্শ দিয়েছি।তারপর সারা রাতটাই এভাবে আমার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলাম।
চলবে……