Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ১৪
লেখাঃ Israt Jahan
মেহেরঃ সম্রাট?
ফালাক মেহেরের ঘাড়ের মাঝে মুখটা ডুবিয়ে রেখে ওর শরীরের গন্ধ অনুভব করছিল।তার মাঝেই মেহেরের কম্পিত কন্ঠের ডাক ওর কানে এল।
ফালাকঃ হুম?
মেহেরঃ আমি কক্ষে যেতে চাই।
ফালাকঃ কন্ঠের স্বরটা কেমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা লাগল। ও কি কাঁদছে? আমি ওকে ঘুরিয়ে ওর মুখটার দিকে তাকালাম।মাথা নিচু করে আছে।গালে হাত দিতে বুঝতে পারলাম গাল ভিজে গেছে ওর চোখের পানিতে।আমি ওকে কোনো প্রশ্ন করলাম না শুধু ওর দিকে চেয়ে রইলাম।তারপর রক্ষীদের বললাম- “আলো নিভিয়ে দাও।”
ফালাক আর মেহের পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। ফালাক শুধু ওকে তাকিয়ে দেখছে।মুখটা গম্ভীর করে মাথাটা নিচু করে হাঁটছে।কক্ষে পৌঁছানোর পর ফালাক কক্ষের আলো জ্বালাতে গেল।
মেহেরঃ সম্রাট…..আলো জ্বালাবেন না।
ফালাকঃ কেন?
মেহেরঃ এই মুহূর্তে আঁধারের মাঝেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।আপনার কি খুব কষ্ট হবে কিছু সময় আঁধারে থাকতে?
ফালাক মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে জবাব দিল- “তুমি চাইলে সারাটাক্ষণ-ই অন্ধকারে থাকব। তুমি কি অসুস্থবোধ করছো?”
মেহেরঃ যদি বলি অসুস্থতা শরীরের নয় মনের?
ফালাকঃ তাহলে আমি জানতে চাইব তার কারণ।
মেহেরঃ আমার একটা প্রশ্ন ছিল।অনুগ্রহপূর্বক তার উত্তরটা দেবেন।
ফালাকঃ বলো।
মেহেরঃ আপনি কি সুখী?
ফালাকঃ কিছুসময় পূর্ব থেকে আমি পুরোপুরি সুখী।
মেহেরঃ জানতে চাইবেন না আমি সুখী কিনা?
ফালাক নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। মেহের বিছানাতে বসে এতক্ষণ মাথা নিচু করে কথা বলছিল।এবার ফালাকের চোখের দিকে তাকাল।
মেহেরঃ আপনি প্রশ্ন করবেন না আমি জানি।কিন্তু আমি উত্তর দেব।আমি সুখী নই।আমি একদমই সুখী নই।আমাদের বিবাহ ছিল ওই উপরওয়ালার হাতে।তাই সেটা আমি ধীরে ধীরে গ্রহণ করে নিয়েছি।কিন্তু আমার স্বজন, তাদের ভালো থাকা খারাপ থাকা আপনার হাতে।আর আমার ভালো থাকা সুখী থাকাও আপনার হাতে।আপনি নিশ্চই আমাকে অসুখী রাখতে চান না।কিন্তু তবুও আপনি আমাকে অসুখী রাখছেন।ওরা চাইলেও আপনার থেকে আমাকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।তাহলে আপনি কি পারেন না ওদের এক চুল পরিমাণ একটু সুখ দিতে?আমাকে আপনার মত পুরোপুরি সুখী করতে?
ফালাকঃ (নিশ্চুপ)
ফালাক কোনো কথা বলল না।অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে চেয়ে রইল।কিন্তু ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠেছে যেটা মেহের দেখতে পাচ্ছেনা।ঠোঁটের কোণ কিছুটা বাঁকা করে ফালাক মৃদু হাসছে।
ফালাকঃ আমি জানি তারা চাইলে বা হাজার চেষ্টা করলে তোমাকে ওরা আমার থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবেনা।কিন্তু আমার ভয়টা যে তোমাতেই।তুমি আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাইলে একমাত্র বিধাতা ছাড়া পৃথিবীর আর কারো সাধ্যি নেই তোমাকে আমার কাছে বেঁধে রাখার।তুমি মেহেরুন, তোমাকে যে আমি পুরোটা চিনে নিয়েছি।তোমার জেদ, তোমার ক্রোধ, তোমার বলা তিক্ত কথা আর হৃদয়ের গহীনে সুপ্ত অবস্থায় থাকা তোমার ভালোবাসা।যা আমার হিংস্রতার থেকেও কঠোর।
তোমার বলা প্রতিটা তিক্ত বাক্য আমার কলিজাতে গিয়ে বিঁধেছে, জিদপূর্ণ হয়ে নিজের শরীরে নিজেকে নির্মমভাবে আঘাত করেছো, ক্রোধান্বিত হয়ে নিজের স্বামীকে হত্যা করতে হাতে অস্ত্র তুলতে বাধ্য করেছে আর আমার প্রতি তোমার হৃদয়ের সুপ্ত ভালোবাসা যা তুমি নিজেও উপলব্ধি করতে পারছোনা কিন্তু আমি এই কয়দিনে তা উপলব্ধি করে নিয়েছি।এর সবকিছুই যে খুবই ভয়ানক আমার হিংস্রতার থেকে।যে কোনো মুহূর্তে তোমার হৃদয়ের সুপ্ত ভালোবাসা ঘৃণাতে রূপ নিতে পারে। আর সেটা নিয়েই আমি চিন্তিত।
কথাগুলো ফালাক মনেমনে ভাবছিল দাঁড়িয়ে। মেহের বেশকিছুসময় তাকিয়ে ছিল ফালাকের উত্তরের আশায়।কিন্তু উত্তরটা আর পেলোনা। হতাশ হয়ে বিছানার এক কোণে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
ফালাক জানালার কাছে কিছুসময় দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর মেহেরের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়েছে।ও বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে এই মুহূর্তে মেহেরের আঁখিদ্বয় অশ্রুসিক্ত।নিরাবতা বিরাজ করছে দুজনের মাঝে।ফালাক কপালের উপর হাত রেখে মেহরকে বলছে- ” আমি একজন বিশ্বাসঘাতক ছিলাম।ছিলাম এ জন্যই বলছি কারণ এখন আর নই।এই প্রথম আমার কাউকে দেওয়া কথা আমি রেখেছি।” কথাগুলো বলেই ফালাক মেহেরের দিকে তাকাল তখন মেহের ও ওর দিকে চেয়ে আছে।মেহেরের চোখে প্রশ্ন।প্রশ্নটা মুখে আনার আগেই ফালাক মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশ হয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।মেহের প্রশ্নটা আর করতে পারল না।
প্রশ্নটা মনে মনেই উচ্চারণ করল- ” কি কথা রেখেছেন আপনি?আর কার দেওয়া কথা?”
এমনভাবেই ফালাক আর মেহেরের মাঝে সময়গুলো কেটে যাচ্ছে।ফালাকের মাঝে বিশেষকিছু পরিবর্তন মেহের লক্ষ্য করেছে।আজ কাল ফালাক খুব ঠান্ডা মেজাজের হয়ে গেছে।তবে একবার মাথায় রাগ চেঁপে গেলে ফালাক আবার তার পূর্বের চরিত্রে ফিরে যায়।সেটা মেহের পরিবর্তন করতে পারেনি।যে রাজ্য আক্রমণ করার কথা ছিল সেই রাজ্য ফালাক আর আক্রমণ করেনি।কারণ মেহের চাইনি। বিচারসভাতে মেহেরকে আর নিয়ে যায়না ফালাক তবে আগের মত ভুল বিচারও সে করেনা কারো সাথে। নারীদের বিশেষভাবে সম্মান দেওয়া শিখেছে ও। যত রাজকন্যা ওর কারাগারে বন্দী ছিল তাদের সবাইকে ও মুক্ত করে দিয়েছে আর তাদের রাজ্যও ত্যাগ করেছে ও।তবে সবগুলো রাজ্য নয়।যে রাজ্যগুলোর সাথে ওর বরাবরের শত্রুতা ছিল সেইসব রাজ্য ও ছাড়েনি।আর মেহের আজ কাল ফালাককে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে।কারণ যে রাজ্যগুলো ও ত্যাগ করেছে তারা সবাই এখনো ক্ষিপ্ত।যদি তারা কোনোরূপ ওকে আক্রমণ করে বসে বা ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করে?এই চিন্তাগুলো মেহেরকে খুব ভাবায়।মাঝে মাঝে তা ও ফালাকের সামনে প্রকাশ করে।আর তখন ফালাক মুখে বিদ্রুপের হাসি টেনে বলে- ” আঘাত পেলে নিজের আপন মানুষ কাছের মানুষের থেকে আঘাত পাব। বাহিরের কারো কাছ থেকে নয়।” সেদিন মেহের ওর কথার অর্থ বুঝেনি।পাল্টা প্রশ্ন ও করেনি।মেহের ফালাককে নিয়ে মনের মাঝে হাজার চিন্তার বাসা বুনে।পরক্ষণে ভাবে- “আচ্ছা…আমি ওকে নিয়ে এতকিছু চিন্তা করি কেন?ওকে তো আমি এখনো নিজের আপন কেউ ভাবিনা।তাহলে ওকে ঘিরে আমার চিন্তাধারা আসে কোথা থেকে আর কেনই বা আসে?” মেহের এখনো নিজের মনের মাঝের জড়তা ভাবটা কাটাতে পারেনি।তার একটামাত্র কারণ ওর পিতামাতা ফালাকের কাছে বন্দী। সবাইকে ও তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছে শুধু মেহেরের রাজ্যবিনা।এই ব্যাপারটা মেহেরের মনে বিশাল বড় রাগ আর অভিমানের দাগ কেটেছে। কিন্তু তার সাথে যে না জানা ভালোবাসাটা ও মেখে আছে এর জন্য সেই আগের মত রাগ আর অভিমান মেহের দেখাতে পারেনা।ও নিজেও বুঝতে পারছেনা যে ফালাক ওর মনে জায়গা করে নিয়েছে।হয়তো কাছাকাছি আছে বলেই তা বুঝতে পারছেনা।দূরত্বতা সৃষ্টি হলেই তা বুঝতে পারত মেহের।ফালাকের প্রতি ওর ভালোবাসাটা সুপ্ত অবস্থায় থাকার কারণেই মেহের আজ ও ওর জড়তা ভেঙ্গে ফালাকের কাছে নির্দ্বিধায় নিজেকে সঁপে দিতে পারেনা।আর ফালাক তা বুঝতে পারে বলেই মেহেরের সংস্পর্শে খুব কম যায়।ও মেহেরকে সময় দিতে চাই আরো।একদিন দুপুরে মেহের নিদ্রারত অবস্থার মাঝে ফালাকের চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেল।বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে কক্ষের বাহিরে গেল।দাসীকে জিজ্ঞেস করল- “কি হয়েছে তোমাদের সম্রাটের?ওনার চিৎকার করার আওয়াজ পাচ্ছি।উনি কোথায়?”
দাসীঃ (………….)
মেহেরঃ কথা বলছোনা কেন তোমরা?চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো যে?
দাসীগুলো একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করে উত্তর দিল একজন- “তেমন কিছু নয় মহারানী
আসলে কিছু প্রহরীদের ভুল কর্মে মহারাজ অনেক রাগান্বিত হয়ে গেছেন।”
মেহেরঃ তাই তাদেরকে শাস্তি দিচ্ছেন, তাইতো?
দাসীঃ জ্বী মহারানী।
মেহেরঃ উনি কি ওনার এই হিংস্রতা, বর্বরতা থেকে আর কোনোদিনও বের হতে পারবেন না?
দাসীঃ মহারানী আমরা আসি?
মেহেরঃ হ্যা যাও।আমি দাসীগুলোকে বিদায় দিয়ে কক্ষের দিকে পা বাড়ালাম ঠিক তখনই কারো আর্তনাদের আওয়াজ পেলাম।এই কন্ঠস্বর তো আমার খুব চেনা মনে হচ্ছে।আমি ছুটে যেতে লাগলাম যে দিক থেকে ওই আর্তনাদের শব্দ আসছে সেদিকে।হঠাৎ পেছন থেকে একজন দাসী আমাকে ডাকল।
দাসীঃ মহারানী?দাঁড়ান….ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?
মেহেরঃ মনে হল পশ্চিম পাশের ওই ডানদিকের কক্ষ থেকে কারো আর্তনাদ করার আওয়াজ পেলাম আমি।আওয়াজটা খুব চেনা চেনা লাগছে।ওই কক্ষে কে আছে?
দাসীঃ আপনি আপনার কক্ষে চলুন।তারপর আপনাকে বলছি।
মেহেরঃ এখনই বলো।কে আছে ওই কক্ষে? আমাকে নিয়ে চলো।
দাসীঃ না মহারানী।ওই কক্ষে আপনার প্রবেশ নিষেধ।
মেহেরঃ নিষেধ?কেন?
দাসী কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।কারণ এই কথাটিও মেহেরকে বলা নিষেধ ছিল যে ওই কক্ষে ওর যাওয়া নিষেধ।ওই কক্ষ সম্পর্কে মেহেরকে জানতে না দেওয়ার হুকুম ছিল দাসীদের উপর।ফালাক ওদের অনেক কঠোরভাবে বলে দিয়েছে যেন ওই কক্ষের ব্যাপারে মেহের যাতে কিছুই জানতে না পারে।
মেহেরঃ কি হয়েছে?এমন করছো কেন তুমি? নিষেধ কেন আর কে নিষেধ করেছে?
দাসীঃ মহারানী শুধু এটুকু বলতে পারব যে মহারাজ নিষেধ করেছে।কিন্তু কেন নিষেধ করেছে এ ব্যাপারে আমাকে জেরা করবেন না।মহারাজ জানতে পারলে আমার প্রাণ নিয়ে নেবে।আপনি দয়া করে কক্ষে ফিরে আসুন।
মেহেরের মনে সন্দেহের বীজ জন্ম নিল।ওর মনে হচ্ছে ওই কক্ষতে নিজের কেউ আছে।খুব চিন্তা হচ্ছে ওর।
মেহেরঃ আর পারছিনা এত চিন্তা নিতে। ও কি তবে আমার পিতামাতার কোনো ক্ষতি করে বসল? হে আল্লাহ্ ওর মাঝে মায়া মমতার আশ্রয় দাও।ও যেন আমার পিতামাতার কোনো ক্ষতি না করে।
রাত হয়ে এসেছে ফালাক এখন অবদি কক্ষে আসেনি।খোঁজ নিয়ে মেহের জানতে পারল ফালাক প্রাসাদের বাহিরে।পিতাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য মেহের পিতার কক্ষে গেল।ইদানিং পিতা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে।বয়সটা তো আর থেমে নেই। মেহের নিজ হাতে পিতাকে খাইয়ে দিয়ে তারপর কক্ষ থেকে বেরিয়ে এল।প্রাসাদের ভেতর একটু ঘোরাঘুরি করছিল মেহের।ঘুরতে ঘুরতে সেই পশ্চিম পাশে ডান দিকের কক্ষের সামনে চলে এল। ও ইচ্ছা করেই ওখানে গেল।দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কান্নার শব্দ শুনতে পেল।যে শব্দটা মেহেরের খুব চেনা একদম আপন মানুষের। বুকের মধ্যে ধক করে উঠল ওর।দরজাতে ধাক্কা দিতেই বুঝতে পারল দরজাটা বাহির থেকে তালা দেওয়া।
প্রহরীঃ মহারানী আপনি এখানে কি করছেন?
মেহের আঁতকে উঠে প্রহরীর দিকে তাকাল।
মেহেরঃ এই কক্ষে কে আছে?
প্রহরীঃ (………..)
মেহেরঃ বলো কে আছে?
প্রহরীঃ জানিনা মহারানী।আপনি নিজের কক্ষে যান।
মেহেরঃ কক্ষের দ্বার খোলো।
প্রহরীঃ নিষেধ আছে মহারানী।
মেহেরঃ আমি বলছি…. দ্বার খোলো।
প্রহরীঃ মহারাজ আমাকে হত্যা করে ফেলবে।
মেহের প্রহরীর হাত থেকে তলোয়ারটা কেড়ে নিয়ে ওর গলাতে আটকে ধরল।
মেহেরঃ আর এখন না খুললে আমার হাতে মৃত্যু হবে তোমার।
প্রহরী ভয়ে তালা খুলে দিল।মেহের কক্ষে ঢুকে চিৎকার করে উঠল।
মেহেরঃ পিতা….!
মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে জাভেদ খান।আর তার পাশেই ওর চাচা আরব খান পড়ে আছে। তার শরীর চাবুকের আঘাতে রক্ত জমে কেমন কালছেটে হয়ে গেছে।তাদের পাশেই বসে কাঁদছে ওর মাতা,চাচিআম্মা।মেহের ছুটে গিয়ে পিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল।ওদের মুখ থেকে সবকিছু শুনছে মেহের।
জাভেদ খানঃ বেশ কিছুদিন আগে ও আমাদের কারাগার থেকে বের করে এই কক্ষ দুটোতে থাকার ব্যবস্থা করেছে।আমরা খুব অবাক হলাম ওর কিছু ব্যবহারে।কারাগারে বন্দী অবস্থাতেও আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা ও ভালোভাবেই নজর দিত।কিন্তু এখানে আনার পর সেটা আরো বেশি করে নজর দিতে শুরু করল।খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করতে শুরু করল।তোমার মাতা একদিন তোমাকে দেখার জন্য খুব অনুরোধ করল কিন্তু ও সেই অনুরোধ রাখলনা।তোমার মাতা খুব রেগে গিয়ে ওকে যা তা বলেছিল তাতেও ওকে খুব শান্ত দেখিয়েছিল। এরপর খাওয়ার পাঠালেও তোমার মাতা আমি খাওয়ার খেতে পারিনা তোমার চিন্তাতে।তোমার মাতা রাগ করে খাওয়ার গুলো ছুড়ে ফেলে দেয়। এমনভাবেই চলছিল কিছুদিন।আজ প্রহরী ওকে এখানে ডেকে নিয়ে আসে।শান্ত গলাতে ও আমাদের খাওয়ার গুলো খেতে বলে কিন্তু আরব না খেয়ে তা ওর শরীরে ছুড়ে মারে।ও তখনো রাগান্বিত হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি।তোমার মাতা ওর কাছে আবার অনুরোধ করে আজ তোমাকে দেখতে চাওয়ার জন্য।তখন ও বলে আর কোনোদিনও তোমাকে আমরা দেখার সুযোগ পাবোনা।এমন কথা শোনার পর আমি ওকে চড় মারি।ও তখন ক্রোথে ফেটে পড়ছিল।আরব ওকে খুব কটুবাক্য শোনায়।যা শোনার পর ও আর নিজেকে সংযত রাখতে পারেনি।চাবুক নিয়ে এসে সেই মধ্যাহ্ন থেকে শুরু করে একটানা বিকাল পর্যন্ত ওকে চাবুকাঘাত করতে থাকে।আমি ওকে বারবার আটকানোর চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা।তোমার মাতা, চাচিআম্মা ওর পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে তবু ও আরবকে রেহাই দেয়না।আমি যখন ওর হাত থেকে চাবুকটা কেড়ে নিতে যায় তখন ও খুব জোরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।যখন আরব জ্ঞান হারায় তখন ওই পাষাণ ওর হাতের চাবুক ফেলে দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে যায়।কিছুসময় হল আরবের জ্ঞান ফিরেছে।কিন্তু কথা বলার শক্তিটুকু ওর নেই।ও হয়তো মরেই যাবে রে মা।ওকে শেষ করে দিল ওই শয়তান।এখন পর্যন্ত আমাদের কক্ষে খাওয়াটুকু পৌঁছায়নি আর চিকিৎসকের চিন্তা তো করিইনা। সামান্য খাওয়ারটুকু আজ আমাদের ভাগ্য থেকে উঠে গেল।
মেহেরঃ চাচাজান কি বলেছিলেন ওকে যার ফলস্বরূপ ওকে জানুয়ারের সমতুল্য হতে বাধ্য করল?
পিতাঃ বেজন্মা।বলেছিল ওর মাতা ওকে সঠিকভাবে জন্ম দিতে পারেনি হয়তো।তাই ও এমন অমানুষ হয়েছে।
মেহের কথাটা শুনে কিছুসময় চুপ করে রইল। ফালাক আর কিছু হোক ওর মায়ের সম্পর্কে বা নিজের জন্ম সম্পর্কে কোনো কথা সহ্য করতে পারেনি।তাই এত রেগে গিয়েছিল।কিন্তু মেহের ওর নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা চাচার শরীর আর পিতার আঘাতপ্রাপ্ত কপাল দেখে ফালাকের প্রতি ওর সকল টান, মায়া হারিয়ে গেল নিমিষে।
মেহেরঃ পিতা আপনি কান্না করবেন না।আপনারা এখন আমার হাতের নাগালে।আপনাদের হারানোর ভয় আমার আর নেই।অনেক সহ্য করেছি অনেক মায়া দেখিয়েছি।যে আমার পিতা আমার চাচার শরীরে আঘাত করতে পারে তাকে আমি ক্ষমা করা তো দূরে থাক নিজ হাতে হত্যা করব।
মেহের রাজচিকিৎসক এর থেকে ঔষধ নিয়ে এসে দাসীর মাধ্যমে ওর চাচার সেবার ব্যবস্থা করেছে। আর প্রহরীকেও নিষেধ করে রেখেছে যে মেহের এ ব্যাপারে সব জেনে গেছে তা যেন ফালাক জানতে না পারে।মেহের এখন চুপিচুপি ওর পিতামাতার সাথে গিয়ে দেখা করে আসে তা ফালাক জানতেও পারেনা।মেহেরের চাচা মেহেরকে বলে যে ফালাক কি কি উপায়ে ওদের উপর অত্যাচার করেছে। সেসব শুনে মেহের রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে ফালাককে হত্যা করার চিন্তা করে।কিন্তু ফালাকের সামনে গেলে ওর মুখটা দেখে মেহের আর পারেনা ওকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে।ফালাক মেহেরের মাঝে কিছুদিন অনেক পরিবর্তন দেখে।ঠিক আগের মত মেহের ফালাকের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে।একদিন দুপুরে ফালাক শুয়ে মনে মনে ভাবে- “আমি ওর পিতামাতাকে কারাগার থেকে মুক্ত করছিনা এটা ভেবেই হয়তো ও আজ কাল আমার উপরে রেগে থাকছে।ঠিক আছে আর তোমার কাছে কিছু লুকাবনা মেহের।আজ রাত্রেই সবকিছু বলে দেব। আর আগামীকাল তোমার সাথে ওদের সকলকে সাক্ষাত করিয়ে দেব।”
মেহেরঃ একি কক্ষ অন্ধকার কেন?আমি তো সন্ধ্যার পরে এসে কক্ষে আলো জ্বালিয়ে রাখলাম।তাহলে নিভিয়ে রাখল কে?
ফালাকঃ মেহেরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। ওকে বললাম- “আমি অন্ধকার করে রেখেছি।কারণ অন্ধকারের মাঝেই……
মেহেরঃ অন্ধকারের মাঝে কি?
ফালাকঃ ওকে সামনে ঘুরিয়ে দাঁড় করালাম। “অন্ধকারের মাঝেই আমি বার বার তোমার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পেরেছি।”
মেহেরঃ হুহ…ভালোবাসা।
ফালাকঃ হ্যা।তুমি কি জানো তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসো?
মেহেরঃ হুম জানি তো।
ফালাকঃ তাহলে আজ আর আমাকে বাঁধা দেবেনা তোমার ভালোবাসা আর তোমার শরীরের মিষ্টি গন্ধ অনুভব করতে।
কথাগুলো শেষ করে ফালাক আস্তে আস্তে ওর ঠোঁটটা মেহেরের ঠোঁটের কাছে এগুচ্ছে।তখন মেহের মুখটা অন্যপাশে ঘুরিয়ে নিল।
ফালাকঃ মেহের আজ আমি তোমার বাঁধা মানবোনা কিন্তু।তুমি কিন্তু আমার অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করছো।ঠিক আছে আজ তুমি নিজে আমাকে আমার প্রাপ্যটুকু বুঝিয়ে দেবে।
এই বলে ফালাক মেহরকে কোলে তুলে বিছানাতে চলে গেল।মেহেরকে শুইয়ে দিয়ে ফালাক ওর কাছে যেতেই মেহের বিছানা উঠে যেতে লাগছে।তখন ফালাক ওকে টেনে আনলো ওর বুকের মাঝে।
ফালাকঃ আজ আমি তোমাকে ছাড়ছিনা।আমার প্রাপ্যটুকু আজ বুঝিয়ে দিলে কাল সকালে তোমার জন্য খুব সুন্দর কিছু মুহূর্ত অপেক্ষা করছে।
মেহেরঃ আমাকে ছাড়ুন আমার ভালো লাগছেনা।
ফালাকঃ লাগবে তো।ভালো লাগার মত এখনো কিছু শুরু করিনি।
মেহের আর ফালাক দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ফালাক মেহেরকে কাছে পাওয়ার জন্য এতটায় ব্যাকুল হয়ে আছে যে মেহের চোখে ঘৃণার ছায়াটুকু ও দেখতে পাচ্ছেনা।ফালাক মেহরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর গলার মাঝে মুখটা নিয়ে মেহেরের শরীরে গন্ধ অনুভব করছে। ফালাকের গরম নিঃশ্বাস মেহেরের সারা গলার মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে।একসময় ফালাক মেহেরের সারা গলার মাঝে এলোপাথাড়ি চুমু দিতে শুরু করে।মেহের কেন যেন বাঁধা দিতে পারছেনা। কিন্তু যখনই চোখের সামনে পিতার রক্তাক্ত মুখটা ভেসে উঠল তখন এক ঝটকায় ফালাককে দূরে সরিয়ে দিল।
মেহেরঃ আর কতবার আমার শরীরকে পেলে আপনি আমাকে রক্ষা দেবেন?আমি তো আর পারছিনা তোমার এই নোংরা চাহিদা মেটাতে।আমি অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি।আমার তো মনে হচ্ছে ওই নারীগুলোর থেকে সব থেকে বেশি অভাগী আমি।যে আজও পর্যন্ত তোমার হাত থেকে রেহায় পেলাম না। নারীদেহ ভোগের নেশা যে এতবড় নেশা তা আমি আপনার কবলে না পড়লে জানতাম না।
ফালাক রাগে চিৎকার করে উঠল।
ফালাকঃ মেহের?তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।
মেহেরঃ অপমান তো আপনি আমাকে করছেন আর তা প্রতিনিয়ত।
ফালাকঃ তুমি আমার স্ত্রী।বাহিরের কোনো নারী না।আর আমিও পরপুরুষ নই।তাহলে আমি তোমাকে অপমান করছি কিভাবে?
Continue…….