হিংস্রপ্রেম পর্ব ১

0
1365

Story: #হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ০১
লেখাঃ #Israt_Jahan

ফালাকঃসেনাপতি ইকরাম?
ইকরামঃবলুন সম্রাট।
ফালাকঃ আমার রাজ্যটাকে অনেক ছোটো মনে হচ্ছে কেনো আমার কাছে? (রাজমহলের ছাদে দাড়িয়ে দূর দৃশ্য দেখার যন্ত্র দিয়ে দেখছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন)
ইকরামঃকি বলছেন সম্রাট! এই ১ বছরের মাঝে আপনি কতগুলো রাজ্য দখল করেছেন তা কি হিসেব করেছেন?আপনার রাজ্যের পার্শ্ববর্তী যত রাজ্য ছিলো তা সব আপনি কৌশলে এবং যুদ্ধের মাধ্যমে তা দখলে এনেছেন।
ফালাকঃ তুমি কি নিশ্চিত? আমার পার্শ্ববর্তী আর এমন কোনো রাজ্য কি আছে যা আমি নিজের দখলে আনতে পারিনি?যেখানে আমি আমার রাজত্য বহাল করতে পারিনি?
ইকরামঃ সম্রাট এটা আমি আপনাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছিনা।মাফ করবেন।তবে আমাকে দিনের কিছু ভাগ সময় দিন আমি আপনাকে সঠিক খবর এনে দিচ্ছি।
এর মাঝে মন্ত্রী উপস্থিত হলেন।
মন্ত্রীঃ সালাম সম্রাট।
ফালাকঃ আরে মন্ত্রী সাহেব যে। এতো শিঘ্রই চলে আসলেন?
মন্ত্রীঃ আপনি যে কাজে আমাকে পাঠিয়েছিলেন তা সম্পূর্ন করে তবেই আপনাকে খবর দিতে এসেছি। আমাদের রাজ্যের দক্ষিণ পার্শ্বে ঈষাণ দিকে একটি রাজ্য আছে রাজ্যটির নাম শেরপুর।সেটা এখনো আমাদের দখলকৃত হয়নি। আমি সেই রাজ্যের মানচিত্র সংগ্রহ করে নিয়েসেছি।
ফালাকঃ সাবাস মন্ত্রী আয়্যুব।আপনি সবসময় আমার আশা থেকে বেশিকিছু দিয়েছেন আমাকে। কি সেনাপতি সাহেব?? হাহাহা। লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমি সর্বদা অগ্রিম চিন্তার মাঝে থাকি এবং আমার পরিকল্পনাটা ও অগ্রীম। তুমি আমাকে কবে খবর এনে দিবে সেইদিন পর্যন্ত আমি অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকবো? সে যাই হোক। মন্ত্রী আমি আপনার সাথে এই বিষয় নিয়ে কিছুসময় বাদে আলোচনা করছি।আপনি এখন আসতে পারেন।
ইকরামঃ ক্ষমা করুন সম্রাট।আমার ভুল হয়ে গেছে।
ফালাকঃসেনাপতি ইকরাম এতো লজ্জিত হওয়ার কি আছে?সব কাজ কি সবার জন্য? তোমার কাজ তো অন্যকিছু।
ইকরামঃআদেশ করুন সম্রাট।আমি এক্ষণি তা পরিপূর্ণ করবো।
ফালাকঃহাহাহাহা। তুমি তো কিছুদিন আমাকে অনাহারে রেখেছো।
কথাটা শুনে সেনাপতি কিছুটা অবাক হলেন।
ইকরামঃ আমার বোধগম্য হয়নি সম্রাট। আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?
ফালাকঃনাহ্ তোমার তো দেখছি মস্তিষ্কে মরিচা ধরে যাচ্ছে। মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে কথাটা বললেন।
-তুমি কি সত্যি বুঝতে পারছোনা আমি কোন কারণে অনাহারে আছি?
ইকরামঃবুঝতে পেরেছি সম্রাট।মাফ করবেন বেশি সময় অতিবাহিত করে ফেলেছি বোঝার জন্য। কিন্তু সম্রাট আপনার রাজ্যের এমন কোনো সুন্দরি নেই যাকে আপনি গ্রহণ করেননি।এমনকি আপনার দখলকৃত রাজ্যের রাজাদের রাজকন্যা ও আপনার থেকে রেহাই পায়নি।
সেনাপতির শেষের কথাটি শুনে রাজা ফালাক রাগান্বিত হয়ে সেনাপতির দিকে তাকালেন।সেনাপতি কাচুমাচু মুখ করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেন।কথাটি তার মুখ ফোঁসকে বেরিয়ে গেছে।
ইকরামঃ সম্রাট! মন্ত্রীর আনা তথ্যে যে রাজ্যের কথা উল্লেখ হয়েছে শুধুমাত্র সেই রাজ্যের কন্যাই বাকি আছে আপনার…….
কথা থামিয়ে দিলেন রাজা।
ফালাকঃহুম বুঝেছি। রাজসভায় সবাইকে উপস্থিত হতে বলো।রাজ্য শেরপুর সম্পর্কে আমার আরো সুস্পষ্ট তথ্য চাই। আজকে ঐ রাজ্য দখলের বিষয়ে আলোচনা সভা বসবে।
★রাজসভা★
ফালাকঃতো মন্ত্রিসাহেব রাজ্য শেরপুর ও শেরপুরের রাজা স্পর্কিত কি কি তথ্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো উপস্থাপন করুন।
মন্ত্রীঃ মহারাজ! শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খান তিনি এতজন নিষ্ঠাবান মুসলমান।নুন্যতম নামাজ বা পঞ্চোপাসনার তিনি অবহেলা করেন না।তার বৃদ্ধিমত্তা,বীর
ত্ব,বিচার ক্ষমতা,দানশীলতা
,ধৈর্য এসবকিছুর গুণেই তিনি গুনান্বিত।এবং তার সৈন্যসামন্ত সবাই অশিচালনায় খুবই দক্ষ।তার হাতিশালে সহস্রের থেকেউ অধিক হাতি ঘোড়াশালে অজস্র ঘোড়া আছে। তার তুলনায় আমাদের সেগুলি খুবই সীমিত।তার রাজ্যে অভাব অনটন দরিদ্রতা খুবই কম।মাঠে ঘাটে ধান ফসলে কোনো অভাব নেই। সে রাজ্যের প্রজারা খুব সন্তুষ্ট রাজা জাভেদ খানের উপর।তার রাজমহলের নারী-পুরুষ উভয় অশিচালনা জানেন এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন প্রতিনিয়ত।এতবছরে রাজা জাভেদ খান তার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধেই পরাজিত হননি।
ইব্রাহীমঃসম্রাট এর আগে আপনি যে কয়টি রাজ্য দখল করেছেন তা সে ছলেবলে কৌশলেই হোক বা আপনার যুদ্ধের মাধ্যমেই হোক তাদের আপনি খুব সহজেই পরাজিত করতে পেরেছেন কিন্তু রাজা জাভেদ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়া একটু দুসাধ্য হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।তার মত ক্ষমতাধর আমরা নই।( রাজদরবারের পদে অধীনস্থ ব্যক্তি)
ফালাকঃহাহাহা(তাচ্ছিল্যের হাসি)।আপনি কি আমাকে এতো বছরে এইটুকু চিনেননি?আমি শুধু যুদ্ধের মাধ্যমেই নই কূটনৈতিক চিন্তাভাবনার দ্বারাও আমি যে কোনো জিনিস হাসিল করতে পারি। সে যাই হোক তো মন্ত্রী আয়্যুব রাজা জাভেদ খানের পুত্র-কন্যা কতজন আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি কে?
মন্ত্রীঃ মহারাজ!রাজা জাভেদ খানের একজনই মাত্র কন্যা।রাজকন্যা মেহেরুন।আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি তার কন্যা স্বয়ং নিজে। তিনি পুত্রের থেকেও অধিক কিছু মনে করেন রাজকন্যা মেহেরুনকে। কারণ তিনি অশিচালনা থেকে শুরু করে ধনুকচালনা রাজ্যচালনা সবকিছুতেই পারদর্শী।রাজনৈতিক কূটনৈতিক সব বিষয়ে রাজা জাভেদ খান তার কন্যার পরামর্শ গ্রহণ করেন।এবং তাতে রাজা জাভেদ খান কখনোই বিফল হননি।
ফালাকঃএ আমাকে কি শোনালেন মন্ত্রীসাহেব?এ কেমন নারী তাকে যে দেখার জন্য আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।তাহলে তো আর দেরী করা যাবেনা।রাজ্য শেরপুর দখল ও রাজকন্যা মেহেরুন নাহ্ মেহেরুন নয় আমি তাকে মেহের বলেই ডাকবো এই দুটো জিনিসকে নিজের দখলে আনার জন্য আমি আর বেশি সময় অতিবাহিত করতে চাইনা।গোটা ভারতবর্ষে আমি রাজ করতে চাই।প্রতিটি রাজ্যে আমার রাজত্ব চলবে।আচ্ছা রাজকন্যা মেহের এর রূপের বর্ণনা যে দিলেন না আপনি?
মন্ত্রীঃ রাজকন্যা মেহেরকে আজও পর্যন্ত কোনো পরপুরুষ দেখেননি।
ফালাকঃআচ্ছা? না জানি তার নামখানার মত সে কতোটা অপরূপ।
রাজা ফালাক রাজসভায় উপস্থিত সকলের সাথে আলোচনা পর্ব শেষ করলেন।আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো রাজ্য শেরপুর কবে কখন কিভাবে আক্রমণ করবেন।রাজা ফালাক তাজ পরিকল্পনা করলো সে প্রথমে শেরপুর রাজ্যে ছদ্মবেশে যাবে। তারপর রাজা জাভেদ খানের কাছে গিয়ে একটা কাজ চাইবে। সে ঠিক তাই করলো।রাজা জাভেদ খানের কাছে গিয়ে আকুতি মিনতি করে একটা কাজ চাইলো।আর রাজা জাভেদ খান একটু দয়ালু প্রকৃতির ছিলো।তাই সে বিশ্বাস করে রাজা ফালাক কে কাজ দিয়ে দিলো। কিছুদিন পর রাজা জাভেদ খানের হাতিশালে সব হাতি আর ঘোড়াশালে সব ঘোড়া আস্তে আস্তে মারা যেতে লাগলো।রাজা জাভেদ খান ভেবে পাইনা এর রহস্যটা কি?একদিন রাজকন্যা মেহেরুন তার পিতার সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য তার পিতার কক্ষে প্রবেশ করে।
মেহেরুনঃঅনুমতি পেলে ভেতোরে আসবো পিতা?
জাবেদ খানঃআরে মেহেরুন মা যে এসে।
মেহেরুনঃআপনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে পিতা।
পিতাঃঅনেক বড় চিন্তার মাঝে আছি মা।আমার হাতিশাল ঘোড়াশাল সব যে শূণ্য হয়ে গেলো।এখন আমি আমার শত্রুদের মোকাবেলা করবো কি করে? আমার প্রজাদের বিপদে আপদে তাদের নিকট ছুটে যাবে কি করে?
মেহেরুনঃআমি এই বিষয়ে কথা বলতে এসেছি পিতা। আমাদের হাতি আর ঘোড়া গুলো যেভাবে মারা গেলো তাতে আমার মনে হচ্ছেনা যে শুধু মাত্র কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এগুলো মারা গেছে। এসবের পেছনে আমি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
পিতাঃকি বলছো তুমি মা? রহস্য?
মেহেরুনঃহ্যা পিতা। আমি খবর নিয়েছি রাজমহলে আপনি একজন নতুন কর্মী নিয়োগ করেছেন সেটা বেশিদিন হয়নি।
পিতাঃহ্যা।কিন্তু তার সাথে এগুলোর কি সম্পর্ক?
মেহেরুনঃসম্পর্ক আছে পিতা।আপনি অতি দয়া দেখাতে গিয়ে বোকামির পরিচয় দিয়েছেন পিতা। মাফ করবেন কথা বলার জন্য। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হলাম।
পিতাঃতুমি কি বলতে চাইছো আমাকে পরিষ্কার করে বলো মেহেরুন।
মেহেরুনঃপিতা আপনি একবার ভেবে দেখলেন না ঐ লোক কোনো ভীনদেশী চর ও হতে পারে।কারণ সে আমাদের রাজমহলে প্রবেশ করার পর দিন থেকে এই করুণ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
আপনি এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন?
পিতাঃহ্যা আমি বুঝতে পেরেছি।সেদিন তার মায়াভরা মুখ দেখে তার প্রতি আমার দয়া হয়েছিলো। কিন্তু একবারও তাকে যাচাই করে দেখার প্রয়োজন বোধ করলাম না।কি করে এতো বড় ভুল করলাম? তাকে এক্ষণি হাজির হতে বলো।
মেহেরুনঃআপনি বলার আরো অনেক আগে আমি তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তিনি আসেননি। অন্যসব কর্মীরা বললো তাকে কাল রাত থেকে আর কোথাও দেখা যাইনি।
মেহেরুনঃতারপর থেকেই তার প্রতি আমার সন্দেহ দ্বিগুণ হয়েছে।
পিতাঃসন্দেহ করার আর কোনো অবকাশ নেই মেহেরুন।যে কোনো সময় রাজ্য আক্রমণ হতে পারে। আমি কিভাবে আমার রাজ্য, রাজত্যকে রক্ষা করবো?আমি যে দিশেহারা হয়ে পড়ছি।
মেহেরুনঃভেঙ্গে পড়বেন না পিতা।আপনি ভেঙ্গে পড়লে রাজ্যের বাকিসবার কি হবে। তারা তো আপনার থেকেই শক্তিসঞ্চার করে।
পিতাঃ এতদিনে ঐ গুপ্তচর আমার রাজমহলের আর রাজ্যের সকল তথ্য জেনে গেছে।
মেহেরঃতাতে কি হয়েছে? আপনি রাজ্যে সমস্ত স্থানে খবর পৌঁছে দিন। রাজ্য যে কোনো সময় হামলা হতে পারে।কোন রাজ্যের রাজা বা কারা এসব কিচ্ছু জানা নেই।সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলুন।আর হ্যা রাজ্যে যদি কোনো অচেনা বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায় তাহলে তাকে যেনো খুব দ্রুত রাজদরবারে উপস্থিত করা হয়।
পিতাঃ হ্যা।আর সময় অতিবাহিত করা যাবেনা।
ফালাকঃহা হা হা। এতক্ষণে রাজা জাভেদ খানের কিরূপ অবস্থা হয়েছে তা আমার দেখার ভীষণ সাধ ছিলো।
ইকরামঃআগামীতে যে আরো কত ভয়াবহ অবস্থা হবে তা যদি জানতে পারতো রাজা জাভেদ খান!
ফালাকঃআর কতোদিনই বা রাজ্য চালাতে পারবে রাজা জাভেদ।শেষ কিছুদিন না হয় একটু রাজত্য করুক নিজের রাজ্যে।তারপর তার অবস্থান কোথায় হবে শুধু তিনিই জানেন।(উপরে ইশারা করে দেখিয়ে)।
মন্ত্রীঃ সম্রাট আপনি ঠিক কোন ক্ষণে রাজ্য শেরপুর আক্রমণ করতে চাচ্ছেন আর তা কিভাবে?
ফালাকঃতা আমি আপনাদের সঠিক সময়ে জানিয়ে দিবো মন্ত্রী সাহেব।
মন্ত্রীঃ যথাইচ্ছা মহারাজ।
এরপর রাজা ফালাক মাঝখানে ৭ দিন অতিবাহিত করলো।এদিকে রাজা জাভেদ ও তার কন্যা মেহেরুন সহ সবাই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে যুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য। এরই মাঝে রাজা জাভেদ খানের ছোটো ভাইয়ের একমাত্র পুত্র জন্মগ্রহণ করলো।সেই খুশিতে রাজমহলে বড় করে উৎসবের আয়োজন করলো রাজা জাভেদ খান। ঐ ছোট্ট শিশুটির মুখটা দেখে রাজা জাভেদ খানের কেমন যেনো সব দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে গেলো।শিশু বাচ্চাকে তিনি বড্ড ভালোবাসেন আর তার রাজকন্যা মেহেরুন ও। রাজা জাভেদ খানের আফসোস ছিলো যে তার কোনো পুত্র সন্তান নেই সেই সাথে মেহেরুনের ও।এই খুশিতে তারা ভুলে গেলো তাদের পরিকল্পনা কি ছিলো।যেদিন উৎসব হবে সেদিন সকালে…..
পিতাঃ মেহেরুন মা?
মেহেরুনঃজি পিতা? আদেশ করুন।
পিতাঃআরে না না আদেশ করবো কেনো?সেই সূর্যোদয়ের পর থেকে তুমি উৎসবের সব আয়োজন নিজে হাতে একাই সামলাচ্ছো।তো তুমি কখন তৈরি হবে শুনি? আর একটু পর যে বাইরে থেকে সব অতিথি চলে আসবে যে।
মেহেরুনঃপিতা আমার একমাত্র ভ্রাতার জন্ম উপলক্ষে উৎসব।সেই উৎসবে আমি কোনো ত্রুটি রাখতে চাইনা।
পিতাঃঅনেক সাধ ছিলো তোমার তাইনা? তোমার একটা ছোট্ট ভাইজান থাকবে?
মেহেরুনঃছিলো তো। তাতে কি হয়েছে? চাচাজানের পুত্র কি আমার নিজের ভাই নয়? আপনি অনেক দুঃখ পান তাইনা? আপনার রাজ্যের উত্তরাধিকারী নেই বলে।এখন তো আর দুঃখ হওয়ার কথা নয়।এ রাজ্যের ভাবিরাজা যে জন্মেছে।
পিতাঃআমার উত্তরাধিকারীনি তো অনেক আগেই জন্মেছে।সে আর কেউ নয় আমার রাজকন্যা মেহেরুন।
মেহেরুনঃবি বলছেন এসব পিতা?আমি কেনো হবো?
পিতাঃতুমি আর কোনো কথা বাড়িয়োনা তো মেহেরুন।যাও নিজের কক্ষে গিয়ে অতি শিঘ্রই তৈরি হও।
মেহেরুনঃজি পিতা।
পেছন থেকে মেহেরুনের চাচা আরব খান তাদের পিতা কন্যার কথা সব শুনলেন আর রাগে ফুসতে থাকলেন।তিনি বড় আশাই আছেন এ রাজ্যের রাজা তিনি হতে না পারলেও তার পুত্র আজগার খান(শিশু) ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হবে।কিন্তু রাজা জাভেদ খানের কথা শুনে তার ক্রোধ যেনো অত্যাধিক হয়ে গেলো।সে ঐ স্থান থেকে অন্দরমহলের বাইরে চলে আসতে লাগলেন। হঠাৎ করে তার সাথে একজন মালির ধাক্কা লাগলো।সে ফুলগুলো এনেছে অন্দরমহল সাজানোর উপলক্ষ্যে। মালিটি ক্ষমা ভিক্ষা চাইলো আরব খানের কাছে। আরব খানের ক্রোধ তখন সীমাহীন ছিলো তাই সে মালিকে স্বজোড়ে থাপ্পড় মেড়ে দিলো। মালিটি তার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে আসছিলো।তখন আরব খানের কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছিলো মালিটির চেহারা।মাথায় পাগড়ি আর মুখে দাড়ি গোফের জন্য লোকটির চেহারায় বোঝা যাচ্ছিলোনা। আরব খানের কেমন যেনো সন্দেহ হলো। এ রাজ্যে বা রাজমহলে তাকে কখনো দেখা যাইনি। আরব খান খুব সচেতনভাবে মালিটিকে ধরলো এবং রাজমহলের বাগান কিনারায তাকে টানতে টানতে নিয়ে এলো। মালিটিকে বিভিন্নরকম জেরা করছিলো কিন্তু মালি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলোনা।তখন আরব খান সিদ্ধান্ত নিলো রাজা জাভেদ খানের সামনে তাকে হাজির করবে।এ কথা শুনে মালি তার মুখ খুললো এবং সে যে ছদ্মবেশী ছিলো তা আরব খানের সামনে তার ছদ্মবেশী রূপ উপস্থাপন করলো। এই রূপ দেখে আরব খান কিছু বলার আগেই মালিটি তার পরিচয় দিলো সে মোহননগর রাজ্যে রাজা ফালাক তাজ। ফালাক তাজের অসম্ভব উপস্থিত বুদ্ধি ছিলো। সে আরব খানকে বিভিন্নরকম কথার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিলো।তাকে সাম্রাজ্যের অধিপতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলো।রাজা ফালাক এমন তথ্য অনেক আগেই সংগ্রহ করেছিলো যে রাজা জাভেদ খানের কোনো পুত্র নেই তাই আরব খান চাই শেরপুর রাজ্যের সিংহাসনে তার পুত্রকে সে দেখতে। আরব খান প্রথম অবস্থায় রাজা ফালাকের প্রতিশ্রুতি মানতে চাইছিলোনা। কারণ সে ভাবছিলো এতে তার কি স্বার্থ?
[#উভয়ের_কথোপকথন]
ফালাকঃআমার কি স্বার্থ তা কি আপনার জানা খুবই প্রয়োজন?
আরবঃঅবশ্যই। তুমি আমাকে ধোঁকা দিবে তা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। এক্ষণি আমি তোমাকে মহারাজের সামনে উপস্থিত করবো।চলো আমার সাথে।
ফালাকের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলো।
ফালাকঃদাড়ান আরব সাহেব। আমার উদ্দেশ্য আপনাকে জানাতে চাই।
আরবঃকি উদ্দেশ্য?
ফালাকঃএ রাজ্যের রাজকন্যা মেহেরুনের রূপে আমি মুগ্ধ। তাকে আমি আমার রাজ্যের রানী করতে চাই। কিন্তু আপনাদের মহারাজ তাতে রাজি নন।তিনি চান তার কন্যাকে এ রাজ্যের রাজসিংহাসনে বসাতে। তার কন্যার হাতে এই সাম্রাজ্য তুলে দিতে চাই।
কথাগুলো সম্পূর্ন বানিয়ে বললো ফালাক।
আরবঃ হ্যা। ভাইজান যে মেহেরুনকেই রাজসিংহাসনে বসাতে চাই ইহা সত্য। মেহেরুনের যে বিবাহের প্রস্তাব এসেছিলো তা তো ভাইজান আমাকে বলেনি।এতো গোপনীয়তা? তার মানে ভাইজান আমার সাথে………….। কিন্তু একটা বিষয় কি করে সম্ভব।মেহেরুনকে তার পিতামাতা আর আমরা ছাড়া বাহিরের অন্য কেউ কখনো দেখেনি।তাহলে রাজা ফালাক কি করে দেখলো?তার মানে সে আমাকে মিথ্যা কথায় ভোলাতে চাইছে।
-তুমি মিথ্যুক।রাজকন্যা মেহেরুনকে আমরা আর তার দাসী ছাড়া পৃথিবীর কেউ তার রূপ দেখেনি।তাহলে তুমি কিভাবে তাকে দেখেছো? বলো?উত্তর দাও?
ফালাকঃ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।এই বিষয়টা আমার মাথাতে একটুও আসেনি।কথাটা অন্যদিকে ঘোরাতে হবে।
-আপনার কাছে আর কোনো কিছুই গোপন রাখতে চাইনা।কিছুদিন আগে আপনাদের রাজমহলের কর্মী সেজে রাজমহলে প্রবেশ করেছিলাম।একদিন বাগানে কাজ করছিলাম তখন রাজকন্যা মেহেরুন তার দাসীদের সঙ্গে করে বাগানে এসেছিলো ঘুরতে।অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মুখের উপর থেকে পর্দা সরে যায় আর তখনই আমি তার রূপ দর্শন করি।আর তার পূর্বেই অন্দরমহলের ভেতরের মানুষের কাছ থেকেই আমি খবর পেয়েছি সে অনেক রূপবতী।কার নিকট থেকে পেয়েছি তা আমি বলতে ইচ্ছুক নই। কি? এখন আমাকে বিশ্বাস হয়েছে আরব খান? আমি যদি রাজকন্যা মেহেরুনকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি তাহলে তাতে কিন্তু আপনারই সবথেকে বেশি ফায়দা। এখন আপনি ভেবে দেখুন।
আরব খান কিছুক্ষণ ভেবে রাজা ফালাকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করলো। এরপর ফালাক আরব খানের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করলো কিভাবে কি করে রাজা জাভেদ খানকে আটক করবে। আসলে আরব খান ছোটো থেকেই সিংহাসনে বড় ভাইকে দেখে সবসময় ঈর্ষান্বিত হতো।সে সবমসয় চাইতো রাজসিংহাসনে তাদের পিতা তাকে বসাক। কিন্তু তা হয়নি আর তা হওয়া কোনো যুক্তি ও নেই। সে ভেবে নিয়েছিলো জাভেদ খানের যেহেতু কোনো পুত্র সন্তান নেই তাই তার পুত্র সন্তান হলে তাকেই সে রাজসিংহাসনে বসানোর চিন্তা করবে।আর রাজা জাভেদ খান তা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু তার সেই আশা ভরসা বিফলে গেলো যখন সে নিজে কানে শুনলো যে রাজা জাভেদ খান তার কন্যাকে রাজসিংহাসনে বসাবেন।
যা কখনোই মেনে নেওয়ার যোগ্য নয়।একজন নারীকে রাজা জাভেদ খান বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন যেখানে তারই ভাইয়ের পুত্র সন্তান রয়েছে।তাকে উপেক্ষা করে সে তার নিজের কন্যাকে সিংহাসনের অধিকার দিবের।আরব খান রাজা জাভেদ খান কে কেবল স্বার্থবাদী হিসেবে বিবেচনা করেছে।আর তাই রাজা ফালাকের সাথে সে হাত মিলিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক চারিদিকে রাজা ফালাকের সৈন্যসামন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাজমহলের রক্ষী প্রহরী অন্যান্য লোকেরা তা বুঝতে পেরেছে যে রাজমহলে বাহিরের লোক ঢুকে পড়েছে।কিন্তু আরব খানের নিষেধাজ্ঞার কারণে কেউ কিছু করতে পারছেনা আর রাজা জাভেদ খান কে ও কিছু জানাতে পারছেনা। আরব খান তাদের ভুল বুঝিয়েছে যে এসব বাহিরের লোকদের সে আমন্ত্রণ করে এনেছে।
ফালাকঃ মূর্খ আরব খান। রাজ্য দখলে আসার পর তোমার হাল কি হবে তা তোমার চিন্তাশক্তির বাহিরে।এতক্ষণে আমার সব সৈন্যবাহিনী রাজমহল ঘিরে ফেলেছে। সবাই বুঝতে পেরেও কিচ্ছু করতে পারছেনা।কারণ তারা অপ্রস্তুত ছিলো যে।আস্তে আস্তে সবকিছু জাভেদ খানের আয়ত্তের বাহিরে চলে আসছে।তার আর আমাদের আটকানোর ক্ষমতা থাকবেনা। সবাই আক্রমণ করা শুরু করে দিয়েছে।রাজা জাভেদ খানের সৈন্যরা যে যেমনভাবে পারছে লড়াই করছে কিন্তু তাতে কোনো সুবিধা করতে পারছেনা। মুখ থুবড়ে পড়ে পড়ে যাচ্ছে। আমি কিছু সৈন্যের সাথে লড়াই করে অন্দরমহলে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য রাজা জাভেদ খানকে বন্দি করা। সে কোন কক্ষে আছে তা আমার জানা নেই। এতক্ষণে নিশ্চই তার কানে পৌঁছে গেছে রাজা ফালাক তার দুয়ারে দাড়িয়ে তার সাথে যুদ্ধের আহ্বান করতে এসেছে। আমি রাজ্যের পেছন দিক থেকে প্রবেশ করে সামনের দিকে আসছি। একদম মাঝের যে কক্ষটি দেখলাম সেটাতেই প্রবেশ করলাম।কিন্তু একি কক্ষ যে ফাঁকা।তার মানে রাজা জাভেদ খান কি পালিয়েছে? হা হা হা। নির্বোধ পালিয়ে কতদূর যেতে পারবে।সব জায়গায় যে আমার সৈন্যরা বিস্তার করছে।কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবো হঠাৎ মনে হলো স্নানাগার থেকে কিছু যুবতী নারীর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি তো নিজেই নির্বোধ হয়ে গিয়েছি। স্নানাগার না খুঁজেই আমি বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।
জাভেদ খানঃ আমাকে বাঁধা দিওনা।আমাকে যেতে দাও আরব। আমার কন্যা যে তার কক্ষে রয়েছে। সে ওখানে নিরাপদ নয়। তার কাছে যে এখন পর্যন্ত খবর যাইনি যে রাজমহল আক্রামণ হয়েছে। আর তুমি আমাকে এখানে লুকিয়ে রাখছো?
আরবঃভাইজান আপনাকে কি করে ওখানে যেতে দিই? আপনি ওখানে গেলে যে রাজা ফালাক তার কার্যসিদ্ধি করতে পারবেনা। আর তার কার্যসিদ্ধি করতে না পারলে আমার উদ্দেশ্য সফল হবেনা।
-ভাইজান আপনি আর ভাবীসাহেবা ঐ রাজার সামনে পড়লে যে আপনাদের হত্যা করে ফেলবে।
রানীঃআরব তুমি কি বুঝতে পারছোনা আমরা ওখানে না গেলে যে আমার একমাত্র কন্যার সর্বনাশ করে দিবে ঐ পশুতুল্য রাজা।
আরবঃভাবীসাহেবা! আপনি তো জানেন আমাদের মেহেরুন কতোটা আত্মবিশ্বাসী আর কতোটা বুদ্ধমতী সে। আর সাথে তার অস্ত শিক্ষা তো আছেই। আপনারা কেনো এতো ভাবছেন? একটু ধৈর্যধারণ করুন। মেহেরুন যদি না ফিরে আসে তাহলে আমি নিজে যাবো। তবু আপনাদের যেতে দিবোনা।
জাভেদঃ আরব?? তুমি আমাদের হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে বলছো?
ফালাকঃ আমি ধীর পায়ে স্নানাগারের দিকে এগোতে থাকলাম। স্নানাগারের পর্দা সরিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার চক্ষুদ্বয় ও বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। অর্ধনগ্ন শরীরে একজন অপরূপ সুন্দরী…. না না এ যে কম বলা হয়ে গেলো। তার যা সৌন্দর্য যাকে বলে বিশ্রি সুন্দরী।সুন্দরীশ্রেষ্ঠা সে। কিছু দাসী তাকে স্নান করাচ্ছিলো গোলাপের পাপড়ি আর দুধ মিশ্রিত পানিতে। এর আগে অনেক সুন্দরী নারীকে আমি কাছে পেয়েছি। কিন্তু এমন নারী আমি জীবনে কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে ফেললো তার কিছু দাসী। চিৎকার দিয়েই সেই স্থান থেকে তারা পলায়ন করলো। আসলে আমার সারা শরীরে এমনকি মুখমন্ডলে রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে।অন্য মানুষের রক্ত ছিলো সেগুলো। এ নারী নিশ্চই রাজা জাভেদ খানের কন্যা মেহেরুন। এতে আর ভুল নেই। আমাকে দেখা মাত্রই সে তার অর্ধনগ্ন শরীর মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। কিন্তু তাতেও যে তার রূপ উপচে পড়ছিলো। আমি তার দিকে এমন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। মনের অজান্তেই তার অনেক নিকটে এসে দাড়িয়েছি আমি।তার গালের কোণে লাল গোলাপের একটি পাপড়ি লেগে আছে।যা তার সৌন্দর্যকে ঢেকে দিচ্ছে। আমি হাত বাড়ালাম পাপড়িটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে তার হাতে একটা তড়োযার লুকায়িত ছিল তা আমি খেয়াল করিনি।হাতটা বাড়ানোর সাথে সাথেই সে তোড়ায়ারি বের করে আমার হাতে আঘাত করলো।হাতের পিছা কিছুটা কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলো। তখন আমার চেতনা(ঘোর) ফিরলো। আমি শুধু একবার আমার হাতে রক্তের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম।কেনো যেনো এই আঘাতটা আমার কাছে আঘাত মনে হচ্ছিলোনা। আবারো সেই তার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলাম।কিন্তু এবার চেতনা হারিয়ে নয়।সে আমার দিকে তড়োয়ার হাতে করে যখন আমাকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে এলো আমি তখন তোড়ায়ারির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে দূরে সরে এলাম। আমি যে তার বিপরীতে অস্ত্র তুলতে পারছিনা। তার সুন্দর শরীরটাতে আঘাত লাগলে সে যে কষ্ট পাবে আর তার শরীরের সৌন্দর্য ও নষ্ট হবে। আমি কেবল নিজেকে তার থেকে রক্ষা করে চলেছি।তারপর তাকে আটকানোর একটা বুদ্ধি এলো মাথায়।সে যখনই আবার আমাকে আঘাত করতে এলো তখন তার হাতটা ধরে ফেললাম। সে আমার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেই চেষ্টা যখন সফল হলো আমি তখন তার শরীর থেকে কাপড়টা টেনে ফেলে দিলাম।সে তখন নিজের শরীর ঢাকতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর আমিও এটাই চাইছিলাম যাতে তার ধ্যান তার শরীর ঢাকার দিকে থাকে। সে দুহাত দিয়ে অর্ধ শরীর ঢেকে রেখেছে। আমি তার দিকে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি।আর রাজা ফালাক সেই সুযোগটি ই কাজে লাগালো।তখন চিন্তা ভাবনা ছিল রাজকন্যা মেহেরুনকে তুলে নিয়ে যাওয়া।সে ঠিক তারই পরিকল্পনা করছিল কিভাবে সে রাজকন্যা মেহেরুন কে তার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবে।রাজা ফালাক আস্তে আস্তে রাজকন্যা মেহেরুনের দিকে এগোচ্ছে।কিন্তু তার পরিকল্পনা কার্যকারী হওয়ার আগেই রাজকন্যা মেহেরুন এর পিতা জাভেদ খান এসে উপস্থিত হল মেহেরুনের কক্ষে।মেহেরুন কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রাজা ফালাকের কাছ থেকে ছুটে পালাতে চাইল তার কাছে। কিন্তু ফালাক তার আগেই মেহেরুনকে ধরে তার গলার কাছে তড়োযার ঠেঁকিয়ে স্নানাগার থেকে শয়নকক্ষে প্রবেশ করলো।মেহেরুনের পিতা সেই দৃশ্য দেখে ক্রোধান্বিত কন্ঠে চিৎকার করে বলল,
-“সম্রাট ফালাক! আল্লাহর কসম আমার কন্যার শরীরে এক চুল পরিমাণ আঘাত লাগলে তোর শিরচ্ছেদ করবো আমি।
-“এ কাজ তো আমি মনের ভুলেও কখনো করবোনা সম্রাট জাভেদ।আপনার কন্যার সৌন্দর্যে আমার চেতনা হারানোর পরিক্রম হয়েছিল।ওকে আমার এখন চাই সে যেভাবেই হোক।
আমি ওকে আমার সঙ্গে করে নিজের রাজ্যে নিয়ে যাব।
-“আমার প্রাণ থাকতে আমি কখনোই তা হতে দিবনা।
-“এর জন্যই তো আপনার প্রাণ থাকবেনা সম্রাট জাভেদ।
সম্রাট ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন খব ভয় পেয়ে গেল। ও কখনোই পারবেনা ওর চোখের সামনে নিজের পিতার রক্তাক্ত মৃত দেহ দেখতে।ও কিছুসময় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে রাজা ফালাকের সাথে যেতে ও রাজি হয়ে যাবে এখন। কারণ ওর পিতা আর তার রাজ্য যদি সে বাঁচাতে পারে তাহলে রাজকন্যা মেহেরুন তার জীবন বিপন্ন করে দিতে প্রস্তুত।এখন আপাতত ও রাজি হবে রাজা ফালাকের সঙ্গে যাওয়ার জন্য।পরে সুযোগ বুঝে ওখান পালিয়ে আসবে।এটাই ছিল রাজকন্যা মেহেরুনের পরিকল্পনা।তাই সে তার পিতাকে বলল,
-“পিতা আমি কখনোই সহ্য করতে পারবোনা ঐ মর্মান্তিক দৃশ্য তখনই আমার মৃত্যু ঘটবে।তার থেকে বরং আমি রাজা ফালাকের সঙ্গে তার রাজ্যে যাব।রাজা ফালাক আপনার কাছে আমি আমার পিতার প্রাণ ভিক্ষা চাইছি।দয়া করে তার কোনো ক্ষতি করবেন না।
-“আমি জানতাম রাজকন্যা মেহেরুন খুবই সাহসী আর বুদ্ধমতী।একটু আগেও আমি তার যে সাহসী রূপ দেখলাম এখন আমি তার যে রূপ দেখছি তার সাথে আমি তার সেই রূপের কোনো মিল পাচ্ছিনা।এত সহজে সে আত্মসমর্পণ করবে তা আমার চিন্তার বাহিরে ছিল। তার মানে তার পরিকল্পনা ভিন্ন কিছু।সে আমাকে বোকা বানাতে চাইছে।
কন্যার এমন ধারা কথা শুনে রাজা জাভেদ খান অবাক হল।মেহেরুনকে সে বলল,
-“মেহেরুন!মা তুই ভাবলি কি করে এই নরপিশাচের হাতে আমি তোকে তুলে দিব?আমি বেঁচে থাকতে তা কখনোই পারবোনা।তার থেকে আমার মৃত্যু অনেক শ্রেয়।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here