হলদে_প্রজাপতি পর্ব-২৩

0
193

#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®

তেইশ

( আগের অধ্যায় গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)

সেই যেদিন সোনুদার কাছ থেকে প্রথম চুম্বনের স্বাদ পেয়েছিলাম , তবে থেকে ওকে আমি অসম্ভব ভয় পেতে শুরু করেছিলাম। ভয় প্রথম দিন থেকেই পাই, তবে তা যেন সেদিনের পর থেকে দশগুণ বেড়ে গিয়েছিল । অসম্ভব বুক ধড়ফড়ানি নিয়ে দিনের প্রতিটা পল কাটাতাম । সেদিনের পরে তিন দিন বিভিন্ন ছুতো ধরে কলেজেই গেলাম না । বাড়ি থেকে বের হতাম না । একেবারে নিজের ঘরের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে ফেললাম । আমার দোতলার যে ঘরটা, সেটার আবার মুশকিল হল , তার উত্তর-পূর্বদিকের বড় জানালাটা খুললে কিছুটা দূরে সোজাসুজি ম্যানেজারের বাংলোটা দেখা যায়। আমি ওই জানলাটা বন্ধ করে রেখে দিতাম । কোনোভাবেই যেন না সোনু দা’কে আমি দেখে ফেলি । চোখাচোখি হওয়া তো একেবারে নিষিদ্ধ ! নিজেই মনটাকে কারারুদ্ধ করে রেখে দিতে চাইতাম । সংযম । ঘোরতর সংযম অভ্যাস করে ফেলতে পারলে যদি এই প্রবল আকর্ষণ উপেক্ষা করা যায় । ও যেন ওর সমস্ত মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রয়োগে আমাকে ওর ভরকেন্দ্রের দিকে টানছে । আমাকে নিয়ে একেবারে ওর মধ্যে বিলীন করে ফেলতে চাইছে । আমার অস্তিত্বটুকুর আর কোন স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকবে না । সম্পূর্ণ অস্তিত্বই ওর মধ্যে যেন লীন হয়ে যাবে । ও যেন একটা আস্ত ব্ল্যাকহোল । যার মধ্যে একবার ঢুকে পড়লে চিরকালের মতো হারিয়ে যেতে হবে। তিন দিন পরে ভীষণ দুরু দুরু বুকে কলেজে যাওয়া আরম্ভ করলাম । তবে গাড়ির পিছনে প্রায় চোখ বন্ধ করে বসে থাকতাম যতক্ষণ না আমাদের বাংলোর কাছাকাছি অঞ্চলটা পেরিয়ে যাচ্ছে গাড়িটা । কোনভাবেই যেন না ওর সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায় । হয়ে গেলেই আমার সর্বনাশ । চরম সর্বনাশ। কিন্তু আমার মন দ্বৈত অনুভূতিতে দুলছিল। আরেকটা যে অনুভূতি , সেও মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইতো । সে বলতো – ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’…

আমি ক্রমশ শুকিয়ে যেতে লাগলাম । চোখ মুখ শুকনো । চোখের তলায় কালি । মুখ মলিন হয়ে কালচে হয়ে গেছে । খাবারে রুচি নেই । রাতে ঘুম আসতে চায় না । এলেও কিছুক্ষণ পরে ভেঙে যায়। সারা রাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করে কাটে । কখনও কখনও বুকের মধ্যে একটা অসম্ভব চাপা কষ্টের অনুভূতি হয় । চোখ দিয়ে নিজের অজান্তে জল বেরিয়ে আসে । বালিশ ভিজে ওঠে । আমি যে কোন শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি, সে যুদ্ধে জেতা সম্ভব কিনা, তার শেষ কোথায়, কতদিন কিভাবে এই লড়াই চালিয়ে যেতে পারবো, কিছুই জানিনা । কিন্তু এসবের মধ্যেই আমি কোথাও যেন উপলব্ধি করতে পারতাম, সোনু দা আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য কিছুটা রেস্টলেস হয়ে রয়েছে । এই কদিনের মধ্যে আমি একবারও তাকে চোখের দেখা দেখি নি । জোর করেই দেখি নি। তবুও কি করে যে এই উপলব্ধি আমার মধ্যে হলো আমি জানিনা । তবে তা যে একেবারে সঠিক ছিল, সেটা বুঝতে পেরেছিলাম দিন দশকের মাথায় ।

সেদিন কলেজ থেকে ফিরে বাংলোর সদর দরজা দিয়ে সবে ঢুকেছি, তখনই একতলার ড্রয়িংরুম থেকে একজনের গলার আওয়াজ পেয়ে আমার হৃদপিণ্ডটা লাফিয়ে প্রায় গলার কাছে উঠে এল । আমি কোন দিকে না তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উর্ধ্বশ্বাসে দোতলায় উঠে গিয়ে নিজের ঘরে খিল দিলাম । কিছুক্ষণ লাগলো বুকের ধড়ফড়ানি কমতে। তারপর, বাইরের পোশাক-পরিচ্ছদ চেঞ্জ করে দোতলাতেই আমার জন্য যে টয়লেটটা নির্দিষ্ট আছে, সেখানে গিয়ে হাত পা মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে জোর করে নিজের শরীরটাকে আবার ঘরে টেনে এনে বিছানায় এলিয়ে দিলাম । আমি শুনতে পাচ্ছি একতলা থেকে ক্ষীণ হলেও ড্রইংরুমের আলোচনার শব্দ , মাঝে মাঝে টুকটাক হাসির আওয়াজ আসছে এখনো । সোনু দা রয়েছে, চলে যায়নি।
আমি যাব না ।
কিছুতেই নিচে যাব না ।
কিছুতেই না ..
কিন্তু মানুষ ভাবে এক , হয় আরেক । কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন কাজের মাসি এসে আমার ঘরের দরজায় নক করে আমাকে বলে গেল নিচের ড্রইংরুমে আমাকে ডাকছে । কি করবো ? আমি কি করি? ভামিনী কাকিমার সংসারে এই ধরনের কোন অর্ডার এলে তা পালন না করে ঠ্যাঁটার মতো বসে থাকার কোন উপায় নেই । নাইটি পরেছিলাম । সেটা পরে সোনুদার সামনে যাওয়া যেতে পারে না । সেটা চেঞ্জ করে ঝটপট একটা সালোয়ার কামিজ পরে নিলাম। তারপরে সিঁড়ি বেয়ে একধাপ একধাপ করে নেমে আসতে লাগলাম । এক একটা সিঁড়ির ধাপ নামার সঙ্গে সঙ্গে আমার ভিতর ঘরের মন যেন বলে উঠলো- এইতো ঠিক হয়েছে, বেশ হয়েছে, এটাই তোর সাথে হওয়া উচিত ছিল..

দুরুদুরু বুকে অবশ পায়ে ঘরে ঢুকে দেখলাম সেখানে অজিত কাকু, বান্টি আর সোনু দা বসে রয়েছে। অজিত কাকু আর বান্টির দিকে সরাসরি তাকালেও সোনুদার দিকে আমি তাকালাম না । কিছুতেই না।
অজিত কাকু আমাকে দেখে বলে উঠলেন, কিরে তরু ? শরীর টরির খারাপ নয় তো ? কটা দিন আর বিশেষ ঘর থেকে বেরোস না যে। চোখ মুখ বসে গেছে দেখছি –
— এত ঘরকুনো হয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না ? এ’তো আমি দেখছি বান্টি যথেষ্ট ফ্রেশ রয়েছে । তার তরু দিদিরই শরীর খারাপ করেছে মনে হচ্ছে । গলাটা ওর । সর্বনাশ ! সেই গলা আবার ! আমার পা দুটো কাঁপছে। মনে হচ্ছে আমি সেখানে পড়ে যেতে পারি। সেদিন আমার ঠোঁটের ওপর ওর সেই উষ্ণ ঠোটের স্পর্শ মনে পড়ছে- আমি সামলে রাখতে পারছিনা নিজেকে । কিন্তু ও কিভাবে এত সহজ, স্বাভাবিক ? ওর গলা শুনে একবারও মনে হচ্ছে না , সেদিনের পরে এই আজকে ও আমাকে প্রথম দেখছে। ও এত স্বাভাবিক থাকে কি করে ? আমি কেন পারিনা ?
ও বললো , বোসো তরু-
আমি বান্টি যে সোফাটায় বসেছিল , তার কোণের দিকে গিয়ে বসলাম ।
ও বলল, এই বিকেল বেলাটা এভাবে ঘাড় গুঁজে ঘরের মধ্যে পড়ে থাকো কেন ? টাইম ওয়েস্ট হয়না ? আমার কাছে তো যেতে পারো । কম্পিউটার শিখতে ইচ্ছে করে না তোমার ? দেখো বান্টি তোমার থেকে ছোট হয়ে কি সুন্দর কম্পিউটার জানে । আমি বিকেলবেলার দিকটা ফ্রি থাকি । তুমি এলে আমি তোমাকে একটু একটু করে কম্পিউটার শিখিয়ে দিতে পারি । কালকে এসো আমার বাংলোয়।
কি সুন্দর সহজভাবে একটা আলোচনা করার ভঙ্গিতে কথা আরম্ভ করে শেষকালে এসে আমাকে অর্ডারটা দিয়ে দিল। কি করবো আমি ? সে ঘরে মূর্তির মতো স্থির হয়ে বসে রইলাম । ওরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিল । আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না । শুধু মাথার মধ্যে হাতুড়ির ঘায়ের মত বারবার কথাটা বাজছিল- কালকে এসো আমার বাংলোয় .. কালকে এসো আমার বাংলোয় .. ! এই আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা আমার হবে কি?

হলো না ।
যথারীতি হলো না ।
জানতাম হবে না!
পরের দিন কলেজ থেকে ফিরে এসে আমার সমস্ত সংযমের খোলস ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে চললাম ম্যানেজারের বাংলোর দিকে । নিজের সঙ্গে অভিনয়ের এই প্রয়োজন কি? এত বঞ্চনা নিজেকে ! বঞ্চনা বই আর তো কিছু নয় । আমি তো সেই প্রথম দিন যবে থেকে আমার সোনুদাকে দেখেছি , তবে থেকেই জানি- ‘ আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়..
তবুও শরীরে , মনে, অসম্ভব উত্তেজনা । সেদিনের কলেজ থেকে ফেরার সেই শেষবেলায় চুম্বনের কল্পনামাত্রই সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় । বুকে বারবার আছড়ে পড়ে হাজার সুনামির ঢেউ ।
হাজির হলাম বাংলোর গেটের সামনে । গেট খুলে ঢুকলাম ভেতরে। কলিং বেল টিপলাম । দরজা খুলে বেরিয়ে এল সোনু দা । আমাকে দেখেই ওর মুখটা সেই অদ্ভুত ধরনের অর্থপূর্ণ মুচকি হাসিতে ভরে উঠলো ।
বলল , এসেছো ? জানতাম আসবে ।
ও কি করে এত সহজ স্বাভাবিক থাকলো? সেদিনের পরে ও আমাকে দেখে কই আমার মতো কুঁকড়ে যাচ্ছে না তো ? তাহলে আমার কেন এমন হয় ?
— এস।
বলে ঘরের ভেতরে পা চালাল ও । যেতে যেতে কেমন যেন একটা অস্বস্তি হলো আমার । আড়ষ্ট গলায় প্রশ্ন করে বসলাম , ম্যানেজার কাকু কোথায়?
— উনি তো কালকে থেকেই নেই । এই উইকেন্ডে ফিরবেন না ।
কেমন যেন বুকের ভেতরটা শুকিয়ে এলো । কালকে থেকেই নেই। আজকে ম্যানেজার কাকু থাকবে না জেনেও ও আমাকে বাংলোয় ডাকলো? এটা কি উচিত হলো ? এরকম অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা জীবনে আমার কখনো হয়নি । একটা বাড়িতে একজন পুরুষ, তার জোয়ান বয়েস, আর কেউ কোথাও নেই । সেই বাড়িতে আমি চলে এসেছি । না জেনে এসেছিলাম, সে ঠিক আছে । এখন তো জেনে গেছি । এখন কি আর আমার এখানে থাকা উচিত? কে যেন ভেতর থেকে আমায় বলে উঠলো – এখান থেকে ফিরে চল তরু, কিছু একটা এক্সকিউজ দে ,ফিরে চলে যা, থাকিস না.. । আবার যেন অন্য কেউ বলে উঠলো – কি হবে ? আমি কি অপরিচিত কারোর কাছে এসেছি নাকি? এ তো সোনু দা ।
সোনু দা আমি চুপ করে আছি দেখে বলল, কি হলো ? ম্যানেজার কাকু নেই বলে ভয় পেয়ে গেলে নাকি? ঢুকবে না ভাবছো? ফিরে যাও তাহলে –
হাত দিয়ে দরজার দিকে দেখালো সে ।
— নান্না .. এসব কিছু ভাবি নি । কেন ঢুকব না ?
নিজের ভেতরের দ্বন্দটাকে একটা কথায় সঙ্গে সঙ্গে চাপা দিয়ে দিলাম আমি। সোনুদার পিছন পিছন গিয়ে ঢুকলাম তার স্টাডিরুমে। এর আগের দিনও এই ঘরেই এসেছিলাম । সোনুদা গিয়ে কম্পিউটার ডেস্কের সামনের চেয়ারে বসলো। বসার আগে সেই চেয়ারটার পাশে আর একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমাকে বলল, বস !
আমি বসলাম ।
সোনু দা কম্পিউটারটাকে সুইচ অন করল ।
তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করল, কম্পিউটারের ডিফারেন্ট পার্টস গুলো তুমি জানো কি কি?
এটুকু জানতাম । তবুও দুদিকে বেশ জোরে জোরে ঘাড় নেড়ে বললাম , না !
কিছু জানি দাবি না করাই ভালো । তাহলেই নিশ্চয়ই সোনুদা আমাকে প্রশ্ন আরম্ভ করে দেবে । কিছুই জানি না শুনে তার মুখে যেন একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল।
ঠোঁট টেনে হেসে বলল , মন দিয়ে শোনো। থিওরি পরে একটু একটু করে শেখাবো । এখন প্র্যাকটিক্যালি হাতে হাতে কম্পিউটারটা কিছুটা শেখো। প্রাক্টিক্যাল নলেজই একচুয়ালি কাজে আসে । তার জন্য একদম বেসিক লেভেল এর কিছু থিওরি জেনে রাখা প্রয়োজন । এই দেখো, মেন যেটা টিভির মতো স্ক্রিন দেখতে পাচ্ছো, দ্যাট ইজ কলড্ মনিটর ..
একে একে কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টস এবং তাদের কাজ সম্পর্কে বেসিক থিওরি বলে যেতে লাগল সোনুদা । আমি মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করছিলাম , তবে মন যথেষ্ট বিক্ষিপ্ত । পাঁচটা শব্দ পরপর শুনেই পরবর্তী কুড়িটা মিস করে যাচ্ছিলাম ।
কিছুক্ষণ একনাগাড়ে লেকচার দিয়ে যাওয়ার পর সোনু দা আমায় বলল , তুমি এই চেয়ারটায় বস –
বলে নিজের চেয়ারটা থেকে সে উঠে পড়ল । আমি আড়ষ্টভাবে উঠে সেই চেয়ারটায় বসলাম ।
এরপরে আমার ডান পাশ থেকে ঝুঁকে পড়ে আমার চেয়ারের পেছনে বাঁ হাতটা রেখে কম্পিউটার স্ক্রিনের ওপর চোখ রেখে আমাকে বলল, মাউসটা ধরো –
আমি হেজিটেট করতে লাগলাম । সে সটান আমার হাতের ওপর হাত রেখে আমার হাতটাকে তুলে নিয়ে মাউজের ওপর রাখল । ঠিকভাবে সেট করে দিল , বলল , এবার আমি যেমন যেমন বলছি তেমন তেমন করবে -, এই দ্যাখো , এই যে এইখানটা দেখছো .. এটা .. হ্যাঁ , হ্যাঁ এটাতে এরম ভাবে ক্লিক করলে দেখবে একটা উইন্ডো খুললো, এবার হ্যাঁ . .হ্যাঁ .. এখানে নিয়ে এসে এইভাবে .. এইভাবে এখানে রাখ .. এখানে যে আ্যরো’টা দেখাচ্ছে ,এখানে ক্লিক করে একটা সাব উইন্ডো খুলল দেখছো ?..

আর উইন্ডো ! সাব উইন্ডো ! আমার তখন শরীরের সমস্ত অনুভূতি ডান হাতের ওপর গিয়ে ভর করেছে। আমার হাতের ওপর ও ওর হাতের তালুটা সম্পূর্ণভাবে রেখেছে যে। আঙুলের চাপ দিচ্ছে আমার আঙ্গুলের ওপর । এই এখানে চাপ দিল, আবার পরক্ষণেই ওখানে চাপ দিলো । আঙ্গুলের খাঁজে খাঁজে জড়িয়ে যাচ্ছে ওর আঙুল । আমার কপালে বিন্দু বিন্দু স্বেদ। আমি বুঝতে পারছি আমার নিঃশ্বাস দ্রুত পড়ছে । অ্যাড্রিনালিন কাজ শুরু করে দিয়েছে । হার্টবিট তো নয় যেন , বুকের মধ্যে হাতুড়ির ঘা পড়ছে যেন। ওর নিঃশ্বাস ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমার গাল । ওর কথার বেগে উড়ে যাচ্ছে আমার কানের পাশে দু’চারটে চুল । আমি দেখতে পাচ্ছি আমার হাতের লোমগুলো খাড়া হয়ে উঠছে সব । ঘাড়ের কাছেও তাই । লজ্জা করছে আমার । লজ্জায় মরে যাচ্ছি । ও নিশ্চয়ই সেটা লক্ষ্য করছে । কি ভাবছে ? অথচ এভাবে লোমগুলো খাড়া হয়ে যাওয়া , সে কি আর আমার নিজের হাতে আছে? আমি কি আর ইচ্ছে করে করছি ? আমার সমস্ত শরীর এভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে যে, আমার কোনো বাধাই মানছে না । নিজের মতো জেগে উঠছে । প্রতিটা লোমকূপ, শিরা উপশিরায়, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে ।
ও কিছুক্ষণ পর বলল, বুঝলে? সবই তো আমি তোমার হাতে ধরে করিয়ে যাচ্ছি । নিজে কিছু করো ।
এতক্ষণ ও কি বলছিল , কিছুই মাথায় ঢোকে নি । কিন্তু এই শেষ কথাটা মাথায় ঢুকলো । কি করব ? আমি যে কিছুই বুঝতে পারছি না । আমার মাথা যে পুরো ইন্যাক্টিভ । এতক্ষণ ধরে কি বুঝিয়েছে , কিছুই মাথায় ঢোকে নি যে। গলা শুকিয়ে এল ।
ও বলল, তুমি শুনেছ আদৌ? শিখলে কিছু ?
আমি ঢোঁক গিলে শুকনো গলাটা একটু ভিজিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করলাম ।
ও এরপর মুখটা আমার দিকে ঘুরিয়ে আমাকে বলল, তাকাও আমার দিকে ।
আমি তাকালাম । ওর চোখের সঙ্গে আমার চোখের দূরত্ব বড়জোর কয়েক ইঞ্চি , গাল গালের কাছে ঘেঁষে রয়েছে, আমার শুকনো ঠোঁট দুটোর থেকে ওর ঠোঁটের দূরত্ব বড়জোর তিন ইঞ্চি । চোখের পাতা দুটো টুপ করে পড়ে যেতে চাইছে। আমি তবুও তাকিয়ে রয়েছি। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে। ওর মুখে আবার ফুটে উঠল সেই অর্থপূর্ণ মুচকি হাসিটা । চোখের দৃষ্টিতে কিছুটা পরিবর্তন হলো । কিরকম কে জানে, তবে পরিবর্তন হচ্ছে, হ্যাঁ হচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই হচ্ছে । ওর স্পর্শে পরিবর্তন আসছে । আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি ওর আঙুলগুলো জড়িয়ে ধরছে আমার আঙ্গুলের ভাঁজে ভাঁজে । একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে ও আমার দিকে। ওর নাকের দুটো পাটা ফুলে উঠছে। দ্রুত বইছে নিশ্বাস। ওর আঙুলগুলো আমার আঙ্গুলের খাঁজ ছেড়ে দিয়ে এবারে অদ্ভুত সরীসৃপের মতো ভঙ্গিমায় আমার সমস্ত হাতে হিল্লোল তুলতে তুলতে উঠে আসছে ওপরের দিকে । ও ওর গালটা রেখেছে আমার গালের ওপর । ক্লিন শেভড নয় ও । গাল ভর্তি খুব ছোট ছোট খোঁচা খোঁচা দাড়ির রুক্ষতা । সেই রুক্ষতা ও কিছুটা চালান করে দিল আমার গালে। স্থির থাকছে না ও । সেই রুক্ষতাটুকু তুলির টানে বুলিয়ে দিচ্ছে আমার নরম গালের ওপর । ততক্ষণে ওর ডানহাতটা কখন যেন চলে গেছে আমার বাঁ গালে । কানের লতির নিচে ওর মধ্যমার অস্থির আনাগোনা ।

আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম । কিছুক্ষণ পর আমার গালে ওর ঠোটের স্পর্শ পেলাম । তারপর চোখে, কপালে , কানের লতিতে, চিবুকে, ও ওর ডানহাতটা দিয়ে আমার মুখটা সম্পূর্ণ ওর দিকে ঘুরিয়ে নিয়েছে । সমস্ত মুখে ওর স্পর্শ । অবিশ্রাম স্পর্শ। ঠোঁটে , হ্যাঁ ঠোঁটও বাদ গেল না । আমার সমস্ত দেহ অবশ হয়ে পড়েছে । আমি চেয়ারের ওপর মাথাটা এলিয়ে দিয়ে পড়ে রয়েছি। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তো দূর, ঘাড়টাকে সোজা করে উঠে বসার ক্ষমতাও আমার নেই । হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম ও আমার দুটো কাঁধ ধরে আমার শরীরটাকে টেনে তুলছে । আমি চোখ বন্ধ করেই রয়েছি । অনুভূতি যখন সম্পূর্ণ দেহ-মনে ব্যপ্ত হয়ে যায় , তখন চোখ খুললে মনে হয় যেন অনুভূতিটাই হারিয়ে যাবে । ও আমাকে তুলে ধরে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরল আমায়। আমার উদ্যত বুক তখন পিষ্ট হচ্ছে ওর পুরুষালি বুকের পাঁজরের নিচে । আমার ঠোঁটটাকে যেন শুষে নিল ও ওর মুখের ভেতর । কতক্ষণ এভাবে ছিলাম জানিনা । কিছুক্ষণ পর অবিশ্রান্ত চুমুতে ও আমার সমস্ত মুখ, গলা , ঘাড়ের উন্মুক্ত অংশ ভরিয়ে দিল। তারপর আবার আমার নিচের ঠোঁটটা শুষে নিল নিজের মুখের ভেতরে । কতক্ষণ এমনটা চলেছিল জানিনা। কিছুক্ষণ পর ও আমাকে বসিয়ে দিলো চেয়ারের ওপরে । নিজে পাশের চেয়ারটা কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়ে তার ওপর বসলো । আমি চোখ খুলতে ভরসা পাচ্ছি না । তবু অদ্ভুত এক অনুভূতিতে একবার কেঁপে উঠল সমস্ত শরীর। তারপর নিজের অজান্তেই বুঝলাম বন্ধ চোখের আগল ঠেলে এক ফোঁটা , দু’ফোঁটা করে চোখের জল গাল বেয়ে পড়ছে নিচে। ক্রমশ পড়েই চলেছে। থামতে চায় না । অজস্র ধারায় পড়ছে । আমার বুকের ওড়না ভিজে যাচ্ছে। কেন এত কাঁদছি আমি ? এতো কান্না পাচ্ছে কেন আমার ? জানিনা । একটা সময় দুহাতে মুখটা চেপে ধরে নিঃশব্দে ডুকরে কেঁদে উঠলাম ।

তবে কি আমার সর্বনাশ আজ সম্পূর্ণ হলো ? নাকি আরো কিছু আছে বাকি ? আমি সেদিন আর সেখান থেকে ছুটে পালালাম না । সেদিন হয়তো আমি বুঝতে শিখে গেলাম , সবখান থেকে ছুটে পালানো যায় না..

ক্রমশ..

©®copyright protected

( আমার নতুন বই #দ্রৌপদী:দ্য মিস্ট্রির প্রি বুকিং চলছে। বইটি প্রি বুকিং করতে হোয়াটসঅ্যাপ করুন 7980038280 নাম্বারে এবং পেয়ে যান 20% ছাড়ে অথর্স সিগনেচার সহ । ধন্যবাদ। )

এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/

দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/

তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/

চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/

পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/

ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/

সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/

আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/

নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/

দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/

এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/

বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/

তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/

চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/

পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/

ষোল-

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/

আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/

উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/

কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/

একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/

বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/

ছবি : সংগৃহীত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here