স্পন্দনের শুভ্রতা,পর্ব: ২

0
2655

–” শুভ্রু তুই বড্ড খারাপ। আগের মত আমাকে আর ভালোবাসিস না এমনকি আদরও করে দিস না এখন।”

স্পন্দনের এমন কথা শোনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো শুভ্রতা। ‘আদর’ শব্দটি শোনে তার চোখ চড়কগাছ। মানুষ কতটা নির্লজ্জ হলে একজন মেয়ের সামনে এই ধরনের বাক্য উচ্চারণ করতে পারে স্পন্দনকে না দেখলে জানতো না শুভ্রতা।

–” স্পন্দন ভাইয়া, তুমি ঠিক আছো তো? জ্বর কমেনি এখনও তোমার? আমাকে কিসব আবোল তাবোল বলছো।”

স্পন্দন শুভ্রতার রুমে ঢুকলো। এলোমেলোভাবে সে পা এগিয়ে দিচ্ছে তারমানে এখনো তার জ্বর কমেনি। শুভ্রতা জোরে শ্বাস ছেড়ে খাট থেকে নেমে স্পন্দনের হাত ধরতেই স্পন্দন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

–” লাগবে না তোর আদর। লজ্জা করছে না একজন ছেলের হাত ধরতে। বাসায় বাবা ভাই নেই তোর? ছেলে দেখলেই লুচুগিন্নি শুরু হয়ে যায় তোর তাই না?”

শুভ্রতা এইবার মুখ হা করে তাকিয়ে আছে স্পন্দনের দিকে। কি বলে এই ছেলে। সত্যিই জ্বরে মাথাটা গেছে ওর। অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে বলল,

–” কি চাই তোমার? ঝটপট বলে ফেলো আমার প্রচুর কাজ আছে। তোমার আম্মু আর আমার আম্মু তো তোমাকে দেখাশোনা করার জন্য চাকরানী করে রেখে গিয়েছে আমাকে।”

খাটের উপরে পা দুলিয়ে বসলো স্পন্দন। বাচ্চাদের মত মুখ করে বলল,

–” আদর লাগবে আমার। আগে যেভাবে আদর করতি আজও সেভাবে আদর করবি ওকে?”

–” ভাই তুমি যাও তো। মাথায় রাগ উঠাবে না। কোন জন্মে আমি তোমাকে আদর করছি বলো তো?”

গাল ফুলিয়ে বলল স্পন্দন,

–” আমি যখন স্কুল থেকে বাসায় ফিরতাম তখন আমাকে দেখেই দৌঁড়ে এসে কোলে উঠে বলতি, তন্দন ভাইয়া তক্লের এনেত। দেও তকলেট। তখন তো চকোলেট দেয়ার সাথে সাথে দু’গালে হাজারটা চুমু দিতি। কিছু ভুলিনি আমি।”

শুভ্রতা স্পন্দনের কথা শোনে মাথায় হাত দিয়ে বসলো। সেই উনিশ শতকের কথা এখন বলছে। ছোট থাকাকালীন বাচ্চা ছিল বড় ভাই চকোলেট দিয়েছে খুশিতে কিস দিয়েছে এখন সমস্যা কোথায়? কিন্তু স্পন্দনও নাছোড়বান্দা সে আদর না নিয়ে এক পাও বের হবে না। মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলল শুভ্রতা,

–” ভাইয়া দেখো তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। এখন তো আমি বড় হয়ে গেছি। এখন এমন করতে নেই। তাছাড়া যখন তোমার হুস ফিরে আসবে তখন তুমি নিজেই বীরপুরুষ হয়ে যাবে।”

–” উহু উহু। আমার আদর চাই মানে চাই।”

শুভ্রতা পড়লো ভীষণ ঝামেলায়। বাসায় তারা দুইজন বাদে আর কেউ নেই। স্পন্দন ও শুভ্রতার ফুফুর মেয়েকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে তার জন্য তাদের দুইজনের মা সেখানে গিয়েছেন। তাদের দুজনের বাবা অফিসে। স্পন্দনের জ্বর থাকাতে তাকে বাসায় দেখে রাখার জন্য শুভ্রতাকে রেখে গেছেন কিন্তু শুভ্রতা বুঝেনি জ্বরের ঘোর এতখানি বাড়াবাড়ি হবে। স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

–” তোমাকে কিস করলে যখন তোমার হুস আসবে তখন কি আমাকে আস্ত রাখবে? কাঁচা গিলে খাবে কিন্তু এখন তোমাকে ঠিক করার জন্য কিছু একটা করতে হবে কিন্তু কি করবো?”

ভাবতে ভাবতে শুভ্রতার মাথায় বুদ্ধি আসলো। স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

–” তুমি আমার বিছানায় শুয়ে পড় আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি দেখবে ভালো লাগবে।”

শান্ত বাচ্চাদের মত স্পন্দন বিছানায় শুয়ে পড়লো। শুভ্রতা স্পন্দনের চুল টেনে দিচ্ছে, বিলি কেটে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বলল স্পন্দন,

–” আমাকে আদর না দেওয়ার জন্য তোকে একটা শাস্তি দিবো শুভ্রু?”

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো শুভ্রতা,

–” কি?”

–” যতক্ষণ না পর্যন্ত বলব ততক্ষণ পর্যন্ত তুই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি।”

–” এ্যা।”

–” এ্যা নয় হ্যাঁ। তো আমি ঘুমাচ্ছি তুই মাথার চুলগুলো টেনে দে।”

শুভ্রতা ভালো মেয়ের মতো স্পন্দনের মাথার চুল বিলি কেটে দিলো। বিশ মিনিট পর দেখল স্পন্দন ঘুমিয়ে আছে তাই বিছানা থেকে উঠতে যাবে সেই সময় স্পন্দন তার হাত খপ করে ধরে বলল,

–” উঠলেই মাইর হবে মাইর।”

শুভ্রতা রাগে ফিসফিস করে বলল,

–” একেই বলে জাতে মাতাল তালে ঠিক। ঘুমিয়ে আছে কিন্তু আমাকে শাস্তি দেওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরেনি। জল্লাদ লোক একটা।”

বেশকিছুক্ষন পর দেখল স্পন্দন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। শুভ্রতা উঠতে গিয়েও থেমে গেলো। নিজের অজান্তে স্পন্দনের ঠোঁটে তার ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিয়ে নিজেই বেশ লজ্জা পেলো। লজ্জায় সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে বারান্দায় চলে গেলো। মুচকি হেসে বলল,

–” তোমার প্রেমের মোহে অন্ধ আমি
তোমাতেই আচ্ছন্ন আমি।
তোমাকে দেখলেই এই মন হয় ব্যাকুলতা।
এই শুভ্রতা শুধু স্পন্দনের শুভ্রতা।”

সমাপ্ত,

#স্পন্দনের_শুভ্রতা_২
#অনুগল্প
#ফারজানা_আফরোজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here