? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?
#পর্ব_১৫
পরের দিন হিয়ার আগে আগেই আজ উজান উঠে পড়ে,আজ খালা আসবে না তাই উজান উঠে নিজে থেকে রুটি আর ডিম ভেজে সকালের নাস্তা টা বানিয়ে নেয় আর ঠিক করে আজ যে করেই হোক হিয়াকে ওহ নিজের হাতের বানানো এই নাস্তা টা খাইয়েই তারপর কোচিং এর জন্য যেতে দিবে নইলে হিয়ার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ হু
উজান ওঠার খানিকক্ষণ বাদে হিয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে ওর বই খাতা গুলো একটু নেড়েচেড়ে কোচিং এর জন্য তৈরি হয়ে ডাইনিং এ আসে ওর পানি খাবার বোতল টায় পানি ভরবার জন্য,আর হিয়াকে একদম তৈরি হতে দেখে উজান উঠে এসে হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে ডাইনিং এ বসিয়ে দিয়ে একটা প্লেটে রুটি আর ডিম তুলে হিয়ার সামনে ধরে
হিয়াঃ কি?
উজানঃ খাও
হিয়াঃ কি খাবো?
উজানঃ যেটা খেতে দিছি সেটা খাও
হিয়াঃ যেটা খেতে দিছি সেটা খাও মানে,,আপনি জানেন না আমি আপনার কিছু খাই না
উজানঃ খাও না আজ খাবে,অনেকদিন ধরে সহ্য করেছি তোমার এসব ন্যাকামি আমি,আর না,আজ থেকে তুমি আমার এখানেই খাবে দুপুর বিকেল রাত সব সময়ের জন্য আন্ডারস্ট্যান্ড
হিয়াঃ এই যে শুনুন এই সব জোর আমাকে করে কোনো লাভ নেই,ছাড়ুন আমাকে আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে
উজানঃ আগে রুটি টা পুরো শেষ করো তারপর
হিয়াঃ আমি খাবো না
উজানঃ হিয়া?
হিয়াঃ প্লিজ ভাইয়া
উজানঃ কানের নিচে একটা থাপ্পড় মারবো(গলা কাপিয়ে চিৎকার করে)ভাইয়া আমি তোমার
হিয়াঃ আমি খাবো না (আস্তে মিনমিন করে)
উজানঃ কি কি বললা আরেকবার বলো
হিয়াঃ আমি খাবো
উজানঃ আমি খাবো কি
হিয়াঃ কিছু না?
উজানঃ চুপচাপ রুটি টা শেষ করো
উজানের চোখ রাঙানো লাল লাল চোখ দেখে হিয়া এবার কেঁদে ফেলে,কি করে উজান ওকে এরকম করে বকা দিলো,এতো গলার জোর ওনার,হিয়ার চোখ দিয়ে টুক টুক করে জল বের হচ্ছে,আর উজান সেই জল দেখেও না দেখার ভান করছে যেনো হিয়া এখন জোরে জোরে কাঁদলেও উজানের কোনো যায় আসবে না,হিয়া টুকটুক করে কাঁদছে আর রুটি টা টুকরো টুকরো করে একটু একটু করে মুখে দিচ্ছে
উজানঃ ডিম চোখে যাচ্ছে না,,
হিয়াঃ আপনি আমাকে এ-র কম করে বকতে পারেন না
উজানঃ শোনো হিয়া আমি চাইলে এর চাইতেও খারাপ ভাবে তোমাকে রাগ করতে পারি,,ফারদার আর এমন কিছু করবা না যাতে, আমাকে কখনো সেই খারাপ ভাবে তোমাকে রাগ করতে হয়, বকতে হয়,সবকিছুর একটা লিমিটেশন আছে তুমি ইদানীং একটু বেশি করো
হিয়াঃ আমি আর খাবো না
উজানঃ হিয়া
হিয়াঃ বললামই তো আমি খাবো না খাবো না খাবো না?
উজান আচমকা সপাটে রুটির প্লেট টা টেনে ছুঁড়ে ফেলে দিলে হিয়া চমকে উঠে আবার চুপসে যায় নিমিষে
উজানঃ আজকে থেকে আমার কোন কিছু তুমি ধরবা না,না আমার হাড়ি ধরবা,না পাতিল,না আমার ফ্রিজ না আমার গ্যাস কিচ্ছু তুমি ইউস করবা না
হিয়াঃ আমি তাহলে কোথায় রান্না করবো,,
উজানঃ যেখানে খুশি করবা আমার কি তাতে,আমার কোনো কিছু খাবা না সেই আবার আমার জিনিস দিয়েই নিজের খাবার বানাবা,আমি তো তা হতে দেবো না,নেভার
হিয়াঃ তাহলে আমি খাবো কি
উজানঃ খাওয়ার কি দরকার এমনিতেই তো তোমার গায়ে জোর খুব, না খেয়েই থাকবা
হিয়াঃ আপনি এরকম করতে পারেন না কিন্তু আমার সাথে
উজানঃ আর যেটা তুমি করছো,লোকে শুনলে এটাকে কি ভাববে বলতে পারো,মা মা যদি শোনে তুমি এখানে আমার না খেয়ে একা একা বাজার করে এনে,কতো কষ্ট পাবেন উনি কোনো ধারনা আছে তোমার
হিয়াঃ মা কে আমি বুঝিয়ে বলবো
উজানঃ সে তোমার যা ইচ্ছে তুমি করবে,আমার বাড়িতে থাকতে সমস্যা নেই কিন্তু আমার খেতে সমস্যা যতোসব ইডিয়টিক আচরণ
হিয়া উঠে ওর চোখ গুলো মুছে কাঁদতে কাঁদতে ওর রুমে গিয়ে ওর ব্যাগ টা নিয়ে বের হয়ে রেকের কাছে জুতা বের করতে করতে
হিয়াঃ আসবো না আমি আর আপনার বাড়িতে,একটু থাকতে দিয়েছেন বলে এতো এতো খোটা,আমি চলে যাবো সিলেট আর থাকবো না আপনার কাছে,আর আসবো না আপনার বাড়িতে
উজানঃ হ্যা যা-ও তুমি,আর আসবে না আমার বাড়িতে,বেয়াদব মেয়ে একটা
হিয়াঃ আসবো না আসবো না আসবো না
হিয়া কাঁদো কাঁদো চোখে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কোচিং এ চলে যায়,উজান কিছু ক্ষন চুপ করে থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করে ওর অফিসের জন্য তৈরি হয়,তারপর হিয়ার কোচিং এ একটা ফোন করে শুনে নেয় হিয়া ঠিক মতো পৌঁছে ছে কি না,শুনা হয়ে গেলে উজান নিশ্চিন্ত হয়ে ওর অফিসে চলে যায় যাওয়ার আগে অবশ্য দুপুরের জন্য ভাত আর একটা মুরগী রান্না করে রেখে যায় যাতে হিয়া এসে খেতে পারে
এদিকে আজ দুটো পেরিয়ে তিনটে হয়ে আসে,উজানদের বাড়ির ওয়াচম্যান উজানকে ফোন করে বলে হিয়া মা এখনো বাড়িতে ফিরে নাই,আসলে এ-ই ওয়াচম্যান আঙ্কেল টা কে উজান এই কাজ টা দিয়েছে যে হিয়া যখনি কোচিং থেকে ফিরবে বা কোথাও যাবে উনি যেনো উজান কে ফোন করে বলে,আসলে হিয়া রানী তো আমাদের তার হাসবেন্ড কে ঠিক ঠাক আসা যাওয়ার কোনো ইনফরমেশন দেয় না তাই উজান মশাই আমাদের এই প্লান কসেছে আর ওয়াচম্যান আঙ্কেল কে বকশিস স্বরুপ বলেছে প্রতি মাসে এই কাজের জন্য উজান ওনাকে দু হাজার টাকা করে দেবে,আর উজানের দেওয়া কাজ অনুযায়ী ওয়াচম্যান যখন বলে হিয়া এখনো ফিরে নি উজান তখন কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তাহলে কি হিয়া সত্যি সত্যি বাড়ি ছেড়ে কিন্তু,উজান কোচিং এ সিফাত কে ফোন করলে সিফাত বলে কোচিং তো দুটোর পর পর ই শেষ হয়েছে আর হিয়া কে তো সে বের হতেও দেখলো তাহলে এখন,উজান আর কিছু না শুনে সোজা ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে আসে,উজান আসতে আসতে প্রায় চারটে বেজে যায় কিন্তু হিয়া এখনো নেই,তাহলে কি হিয়া সত্যি তখন যে বললো বাড়ি ফিরবে না তারমানে কি হিয়া এখন সিলেটে,উজান আর ভাবতে পারে না,পাগলের মতো ফোন করতে থাকে হিয়াকে কিন্তু ফোন টা বেজেই চলে রিসিভ আর হয় না,বাড়ির ভেতর থেকে বের হবার সময় উজান খেয়াল করে হিয়ার রুম থেকে ফোনের আওয়াজ আসছে তার মানে হিয়া ফোন নিয়ে যায় নি,উজান আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে হিয়া ঠিক আছে তো,উজান অবন্তী,ঝিনুক যে যে আছে সবাই কে ফোন করে হিয়া ওদের কাছে সাথে নাকি,সবাই বলে হিয়া নেই,উজান বোধ হয় এবার পাগল হয়ে যায় এরকম,উজান পুরো কোচিং থেকে শুরু করে বাড়ির রাস্তা সব জায়গায় হিয়াকে খুঁজতে থাকে কিন্তু হিয়া কোথাও নেই,এদিকে এখন বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে রাত আটটা হিয়ার এখনো কোনো খোঁজ নেই,উজান ওর বাড়িতে আসে থানা তে একটা মিসিং ডায়েরি করে যদি কিছু করা যায় আর ওর একটা কাডে চেনা জানা ওর এক ফ্রেন্ডের থানার এক ওসির নাম্বার লেখা ছিল একবার সাব্বির এর বাইক টা চুরি হওয়ার ওটা খুঁজে দিতে উনি সাহায্য করেছিলো,উজান ঔ কার্ড টা খুঁজতে আবার বাড়িতে আসে,এসেই ওর সব ফাইল ওলট পালট করতে শুরু করে
উজানঃ সাব্বির টাও ফোন তুলছে না,বাবা কেও ফোনে পাচ্ছি না আমি কি করবো এখন,কোথায় তুমি হিয়া প্লিজ ফিরে আসো,আমি আর কখনো তোমাকে এরকম করে বকবো না প্রমিস
উজান দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে,আর আপন মনে হিয়ার সাথে কথা বলতে থাকে,,হঠাৎ কয়েক সেকেন্ড পর ডাইনিং এর কাছে কিছু একটার আওয়াজ পেয়ে উজান ওর রুম থেকে বেড়িয়ে ডাইনিং এর দিকে এগুতেই দেখে হিয়া ওর রুমের দিকেই আসছে,হিয়াকে দেখে উজান তো ওর চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না এতোক্ষণ ধরে ও হিয়াকে খুঁজলো আর হিয়া এখন ওর সামনে,উজান আশ পাশ কিছু আর চিন্তা না করে দৌড়ে গিয়ে হিয়াকে জরিয়ে ধরে হিয়াকে ওর বুকে আগলে নেয়,তারপর এক এক করে হিয়ার পুরো মুখে চুমু একে দিয়ে বাচ্চা দের মতো কাঁদতে শুরু করে
হিয়াঃ কি করেছেন আপনি,আরে গেট টা তো খোলা আছে,ফয়সাল কে বাহিরে খেলতে দেখলাম ও কিন্তু যখন তখন ঢুকে যাবে __ভাইয়া ছাড়ুন না আমাকে
উজানঃ না ছাড়বো না,কোথায় কোথায় ছিলে তুমি সারাদিন,আমার তোমার জন্য কতো চিন্তা হচ্ছিলো তুমি জানো,কেনো আমাকে এ-র কম করে তুমি কষ্ট দেও কেনো হিয়া কেনো
হিয়াঃ আরে আমাকে বলতে তো দিন
উজানঃ কি কি বলবে তুমি একটা ফোন করে কি বলা যেতো না আমি ঠিক আছি,কি বলো যেতো না বলা__কোথায় কোথায় তোমাকে আমি খুঁজেছি তুমি জানো,আর একটু হলে তো আমি থানায় চলে যেতাম
হিয়াঃ আরে থানা আসলো এখানে কোথা থেকে,আর আপনি এরকম করে কাঁদছেন কেনো,চুপ করুন আমার কষ্ট হচ্ছে
উজানঃ বকেছি না হয় আমি একটু,বলেছি না হয় বাড়ি থেকে চলে যেতে তাই বলে তুমি সত্যি সত্যি বাড়ি থেকে,একটাবার আমার কথা তুমি ভাববা না,তোমাকে ছাড়া আমি এ বাড়িতে একা থাকতে পারবো
হিয়াঃ আমার কিন্তু এবার ভীষণ রাগ লাগছে,আপনি একটু চুপ করবেন কি
উজানঃ না করবো না,খুব শান্তি পেলে না আমাকে শাস্তি দিয়ে খুব,আমার প্রতি কি একটুও তোমার দয়া হয় না,যেই যেই কথা গুলে আমি মন থেকে বলি না সেগুলো আঁকড়ে ধরেই তুমি আমাকে ভুল বুঝো কেনো বলতে পারো
হিয়াঃ আরে
উজানঃ ভালোবাসি তোমাকে হিয়া কি হয় আমাকে একটু বুঝলে
উজানের এই ভ্যান ভ্যান কান্নায় হিয়ার খুব বিরক্ত ধরে যায়,উজান তো ওর কথা না শুনে গড় গড় করে সব বলে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই,হিয়ার এবার রাগ উঠলে হিয়া উজানকে থামানোর জন্য ধপ করে উজান কে ডাইনিং এ একটা ধাক্কা দিয়ে উজান কে আটকে ধরে উজানের ঠোঁটে ওর ঠোঁট দুটো শক্ত করে ডুবিয়ে ধরে,,
কিছুক্ষণ পর হিয়া উজানকে ছেড়ে দিয়ে উজানের চুল গুলো জোরে করে খামচে ধরে নিজের রাগ মিটিয়ে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে কাবাড থেকে জামা কাপড় বের করে ওয়াশরুম যাবে বলে উজানের রুমে ঢুকে
হিয়াঃ সবসময় শুধু ওনার বাজে বাজে কথা,মনে হয় দুনিয়াতে উনি একাই কাউকে ভালো বেসেছেন,এতো ওভার ওভার কিছু ই না কখনো ভালো না,যতোসব আদিক্ষ্যেতা
কথাটা বলেই হিয়া ঠাস করে ওয়াশরুমের গেট লাগিয়ে দেয়,এদিকে আমাদের উজান হিয়ার দেওয়া কিসিং ট্রমা টা থেকে এখনো নিজেকে বের করতে না পেরে হ্যাবলার মতো ঔ ডাইনিং এর ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে,বেচারা বউ এর আদর পাবে বলে এতো কিছু কিন্তু আজ যখন আদরের ছোঁয়া পেলো তখন কি তার এই অবস্থা,সবই কপাল
এদিকে হিয়া ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ওর রুমে এসে তখনো খ্যাট খ্যাট করতে থাকে,উজান আপাতত হিয়ার ফ্লোর বিছানায় বসে হিয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে
হিয়াঃ ওরকম হ্যা করে কি দেখছেন,কোনোদিন দেখেন নি আমাকে
উজানঃ কোথায় গিয়েছিলে তুমি
হিয়াঃ সেটা শুনে আপনি কি করবেন ফাউল লোক একটা,কোথায় ভাবলাম এসে আপনাকে জড়িয়ে ধরে আমার আজকের খুশির খবর টা আপনাকে দেবো কিন্তু এসে কি দেখলাম উনি বাচ্চা দের মতো হাউমাউ করে কাঁদছে,আমি কি ছোট বাচ্চা যে এতো সহজে এই শহরে হারিয়ে যাবো?
উজানঃ হ্যা তুমি ছোট বাচ্চা,এবার বলবা কি কোথায় ছিলা তুমি সারাদিন
হিয়াঃ আপুর বাড়িতে
উজানঃ আপু
হিয়াঃ হ্যা হ্যা আপুর বাড়িতে
উজানঃ আপু কোথা থেকে আসলো এখানে
হিয়াঃ কেনো আমার আপু কি ভিন গ্রহে থাকতো যে এখানে আসতে পারবে না
উজানঃ না আমি তা বলি নি,কিন্তু তুমি যে কালকে বললে,,আপুকে পেলে কোথায়
হিয়াঃ (উজানের পাশে গিয়ে বসে মুখে এক বালতি হাসি দিয়ে)জানেন আজ যখন কোচিং থেকে ফিরছিলাম তখন হুট করে কে জানি আমাকে পেছন থেকে টেনে ধরে ওনার বুকে আগলে নিলো,আমি তো পুরো থ কে আমাকে এভাবে মাঝ রাস্তায় এভাবে জরিয়ে ধরে কাঁদছে পরে আর বুঝতে বাকি রইলো না যে ওটা আপু,আপু তো আমাকে রাস্তায় জরিয়ে ধরেই পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো,সাথে আমিও,মানে পুরো মেলায় হারিয়ে যাওয়া বোন কে খুঁজে পেলে যা হয়,তারপর আপু আমাকে নিয়ে সোজা চলে গেলো ওর বাড়িতে এই আমাদের কোচিং এর সামনেই আপুর বাড়ি,জানেন আপু আর ভাইয়ার না এখন বাবুও হয়েছে ছ মাস কি মিষ্টি দেখতে,তারপর ঔ তো ঔ খানে আপুর সাথে গল্প করতে করতে কখন যে রাত হয়ে আসলো কতোদিনের জমানো গল্প ছিলো বলুন তো একদিনে কি সব বলা যায়,আর আমি তো তখন আপনার সাথে রাগ করে তাড়াহুড়ো তে ফোন টাও নিয়ে যাই নি যে আপনাকে একটা ফোন করে জানাবো
উজানঃ আমার নাম্বার টাও কি তোমার মনে ছিলো না,আপুর ফোন থেকে তো একটা কল করতে পারতে
হিয়াঃ এই যা এই কথা তো আমার মাথায় আসেনি
উজানঃ মাথায় কিছু থাকলে তো কিছু আসবে,ইডিয়ট
হিয়াঃ আর আপনি কি ছিচ কাঁদুনে এই টুকুনির জন্য কেউ এরকম করে কাঁদে
উজানঃ যেদিন আমি হারিয়ে যাবো সেদিন তুমিও বুঝবা নিজের ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর ভয় টা কি রকম
হিয়াঃ ভাইয়া,,
উজানঃ আবার ভাইয়া,এখন মারি একটা থাপ্পড় গালে
হিয়া কিছু না বলে চোখ মুখ ফুলিয়ে উঠতে ধরলে উজান হিয়ার হাত ধরে টেনে হিয়াকে ওর পাশে বসিয়ে হিয়ার কোলে ওর মাথা রাখে
উজানঃ এসব রাগ আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই,এখন চুপচাপ আমার মাথার চুল গুলো টিপে দেও অনেক জ্বালাইছো আজকে তুমি
হিয়া উজানের চুল গুলো প্রথমে জোরে করে খামচে ধরে তারপর আস্তে আস্তে উজানের মাথায় হাত বুলাতে থাকে
উজানঃ আপুকে বাড়িতে আসতে বলোনি
হিয়াঃ হ্যা বলেছি তো
উজানঃ আপু জানে আমার কথা
হিয়াঃ হ্যা বললাম
উজানঃ কি বললো আপু
হিয়াঃ আপনাকে দেখতে চেয়েছে,বলেছে আপনাকে নিয়ে যেতে বাড়িতে
উজানঃ তা কবে যাবো আমরা আপুর বাড়িতে
হিয়াঃ হ্যা যাবো তো,সময় আসুক,আপু কাল বগুড়া যাচ্ছে ওর শ্বশুর বাড়িতে ফিরলেই যাবো আপনাকে নিয়ে
উজানঃ ঠিক আছে
__________________________
এক সপ্তাহ পর
নীলিমাঃ আসতে পারি
উজানঃ নীলিমা তুমি
নীলিমাঃ এতো অবাক হচ্ছ যে
উজানঃ না অবাক হবো কেনো
নীলিমাঃ তুমি জানতে না আজ থেকে এই অফিসে আমিও জয়েন করছি
উজানঃ হ্যা শুনেছি কিন্তু আজ থেকে করবে সেটা সিউর জানতাম না
নীলিমাঃ বাবা বললো তোমাদের এই ঢাকার ব্রাঞ্চে জয়েন করতে তাহলে বাবা সিলেটের অফিসে আঙ্কেলের সাথে সামলে নিতো সব টা
উজানঃ হুম,,আচ্ছা আমি রহিম চাচাকে বলছি তোমার কেবিন টা দেখিয়ে দিতে তুমি একটু বসো
উজান উঠে যেতে ধরলে নীলিমা উজানকে থামিয়ে দেয়
উজানঃ হোয়াট নীলিমা
নীলিমাঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করি
উজানঃ বলো
নীলিমাঃ তুমি কি কখনো একটা মুহুর্তের জন্য আমাকে ভালোবাসো নি উজান
উজানঃ না
নীলিমাঃ মিথ্যে বলছো তুমি
উজানঃ তুমি মিথ্যে ভাবলে আমার কিছু করার নেই নীলিমা,আর এটা একটা প্রফেশনাল জায়গা এখানে এসব ডিসকাল না করাটাই বেটার
নীলিমাঃ তোমার প্রফেশনাল জায়গা তুমি তোমার কাছে রাখো,এখানে আমাদের কেউ দেখছে না
উজানঃ কি করছো নীলিমা আমার হাত টা ছাড়ো
নীলিমাঃ আমি জানি তুমি হিয়াকে এখনো ঠিক মতো মেনে নেও নি,আর নিবেই বা কি করে হিয়ার কি কোনো যোগ্যতা আছে নাকি তোমার ওয়াইফ হবার
উজানঃ জাস্ট শেট আপ নীলিমা,ফারদার আর কখনো আমার সামনে হিয়া কে নিয়ে এসব উল্টা পাল্টা কিছু মুখে আনবা না
নীলিমাঃ ভালোবাসি তোমাকে উজান,তুমি হিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দেও,আমরা অনেক সুখি হবো এক সাথে বিলিভ করো
উজানঃ কি করছো নীলিমা আমাকে ছাড়ো,নীলিমা প্লিজ,নীলি
নীলিমাঃ না আমি তোমাকে ছাড়বো না,আগে তুমি বলো তুমি কি আমাকে কখনো একটা বারের জন্য চাও নি কখনো না
উজানঃ নীলিমা আমার রাগ তুলো না কিন্তু,নীলিমা তুমি এরকম করলে কিন্তু আমি এই অফিস ছাড়তে বাধ্য হবো
নীলিমা উজানের দু হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলতে থাকে,পারলে হয়তো উজান কে যেকোনো মুহুর্তে সে জরিয়ে ধরবে এরকম অবস্থা,শেষ মেষ উজান রাগ হয়ে নীলিমার দু বাহু ধরে চিৎকার করে উঠে কিছু বলতে যাবে ওমনি সময় হিয়া ওর মুখে এক বালতি হাসি নিয়ে উজানের কেবিনে ঢুকে পড়ে,উজান ভাবতে পারে নি হিয়া এসময়টাতে এভাবে ওর অফিসে কিছু না বলে এসে যাবে
উজানঃ হিয়া তুমি!!
উজান খেয়াল করে হিয়া ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে যেই হাতে উজান নীলিমার হাত দুটো ধরে আছে,উজান সাথে সাথে নীলিমার থেকে ওর হাত দুটো ছাড়িয়ে সরে দাঁড়ায়
উজানঃ হিয়া আমি,তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না
হিয়াঃ আমি কিছু ভাবছি না,আমার উচিৎ ছিলো নক করে আসা___আপনারা কথা বলুন আমি আসছি
উজানঃ হিয়া আমার কথা টা শুনো হিয়া,হিয়া__কেনো করলে এটা তুমি নীলিমা কি পেলে এসব করে
হিয়াঃ ধ্যাত আমিই বা কি মনে করে গেট নক না করে ওনার কেবিনে,,আমিও না একটা,,কিসের যে অধিকার দেখাই ওনার উপর,,
উজান নীলিমা কে কথা টা বলে বের হয়ে যেই হিয়াকে খুঁজতে যাবে তার আগেই হিয়া উজানের অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়,,উজান হিয়াকে না পেয়ে হিয়াকে ফোন করে কিন্তু হিয়া ফোন রিসিভ করে না,হিয়া ফোন রিসিভ করতো কিন্তু ফোন টা ব্যাগে সাইলেন্ট থাকায় হিয়া শুনতে পারে না,উজান কোনো রকম দুটো ইম্পর্ট্যাটেন্ট ফাইল চেক করে তড়িঘড়ি করে হিয়ার টেনশনে বাড়িতে আসলে দেখে গেটে আজো লক করা,তার মানে হিয়া এখনো আজকে বাড়িতে ফিরে নাই
উজানঃ কোথায় তুমি হিয়া,,আমার কথা টা তো একবার অন্তত তুমি শুনবে,,তোমার আপুর নাম্বার টাও তো আমার কাছে নেই আজো কি তুমি আপুর বাড়িতে,,প্রতিদিন এই তোমার অভিমান এ আমি ক্লান্ত হিয়া,,আর কতো আমাকে কষ্ট দিবা তুমি আর কতো
উজান হিয়াকে খুজতে আবার বেরিয়ে পড়ে,এখন হিয়াকে খুঁজবে কি না সেটাও সে বুঝে উঠতে পারছে না যদি হিয়া সেদিনের মতো ওর আপুর বাড়ি গিয়ে থাকে তাহলে,,
হিয়াঃ কি হয়েছিল আমার আজকে,আমি কেনোই বা গেলাম আজ ওনার অফিসে,আমি জানি আমি ওনার কাছে এতো গুলো টাকা চাইলেও উনি আমাকে কোনো প্রশ্ন না করে সবটা দিয়ে দিবেন কিন্তু আমি কেনো নেবো ওনার টাকা____কেনো গেলাম আমি ওনার কাছে টাকা চাইতে,,আচ্ছা নীলিমা আপু ওনার অফিসে কি করছে দুজন কে কিন্তু বেশ মানিয়েছে উনি যে কি করে আপুর মতো একটা মেয়ে থাকতে আমার জন্য পাগল সত্যি,উনি তো আমার একদিনের দূরে যাওয়া টা সহ্য করতে পারলো না সেদিন কিন্তু এ-র পর যদি আমি আর কখনো,,,,
এদিকে এখন বিকেল পেড়িয়ে রাত,,উজান কন্টিনিউয়াসলি হিয়াকে ফোন করতে থাকে,,কিন্তু কোনো লাভ হয় না,,উজান শেষে বাধ্য হয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে আসে,এরি মধ্যে সন্ধ্যা থেকে বাহিরে হঠাৎ তুমুল বৃষ্টি শুরু হওয়াতে উজান ভাবে যদি বৃষ্টির জন্য হিয়া ওর আপুর বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি চলে আসে,উজান তাই দেড়ি না করে বাড়িতে ফিরে লিফট থেকে নেমে যেই ওর ফ্লাটের গেট খুলতে যাবে ওমনি ফয়সাল এসে উজানকে জাপ্টে ধরে
ফয়সালঃ বন্ধুউউ
উজানঃ কি চাই বন্ধু
ফয়সালঃ পরী কোথায় ছাঁদ থেকে নামে নি এখনো
উজানঃ কিছু বললি ছাঁদ এর কথা শুনলাম মনে হলো
ফয়সালঃ বললাম তোমার পরীটা ছাঁদ থেকে নামে নি এখনো
উজানঃ হিয়া ছাঁদ এ আছে
ফয়সালঃ হ্যা তখন তো ঔ বিকেলে ছাঁদ এ বল খেলতে গিয়ে পরী কে দেখলাম বসে আছে,নামিনি এখনোওও
ফয়সালের কথায় উজান আর এক মুহুর্ত ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড়ে ছাঁদ এ যায়,আর গিয়েই দেখে হিয়া সত্যি সত্যি ছাঁদে এই ঝরা বৃষ্টির মধ্যে হাটু মুড়ে বসে আছে,উজান দৌড়ে গিয়ে হিয়ার হাত ধরে এক টানে হিয়াকে দাঁড় করিয়ে একটা হাত তুলে হিয়াকে থাপ্পড় মারার জন্য,কিন্তু হাত টা তুলেও উজান ওর হাত টা নামিয়ে নেয়
উজানঃ আই সোয়ার হিয়া এ-র পর আর কখনো যদি তুমি এরকম কোনো,কোনো ছেলে মানুষী করছো তো আমি তোমাকে সিলেটে মার কাছে দিয়ে আসবো__আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয় না,আমার কোনো ফিলিংস নেই,,এতো টেনশনে তুমি আমাকে কি করে রাখতে পারো তোমার কি একটুও করুনা হয় না আমার উপর,,
গত দু ঘন্টা ধরে এক নাগাড়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকায় হিয়া এখন থর থর কাঁপছে,উজানের কিছু কথা ওর কানে যাচ্ছে আবার কিছু কথা ওর কানে যাচ্ছে না
উজানঃ আমাকে যখন ভালোই বাসো না তখন নীলিমা কে আমার সাথে ওভাবে দেখে তোমার কষ্ট হচ্ছে কেনো,কেনো কাঁদছো তুমি এতো,সেই রাইট আছে তোমার,কিসের অভিমান দেখাচ্ছ তুমি আমার উপর,,
হিয়াঃ আমি___আমি তো আমি তো নীলিমা আপুর জন্য আপনার উপর কোনো অভিমান করি নি,আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন
উজানঃ তাহলে কিসের জন্য আজকে তুমি বাড়ি না ঢুকে এভাবে ছাঁদ এ দাঁড়িয়ে,কতোক্ষণ ধরে যে ভিজছো কে জানে এ-র পর জ্বর জ্বর আসলে কি হবে,কিছু খাও ও তো নাই মনে হয় দুপুরে,কি করবো আমি তোমাকে নিয়ে হিয়া বলতে পারো আর কি করলে তুমি আমাকে এসব টেনশন থেকে মুক্তি দিবে কি করলে
উজানের কথার মাঝে হিয়া আবার আচমকা উজানকে শক্ত করে জাপ্টে ধরে উজানের ঠোঁটে আলতো করে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়
উজানঃ কি হয় তোমার,এই মুহুর্তে ভালোবাসছো পরের মুহূর্তে আবার দূরে ঠেলে দিচ্ছ,কি কি চলে মনের মধ্যে তোমার বলো আমাকে
হিয়াঃ আমাকে ভুলে যান আপনি,এতে আমিও ভালো থাকবো আপনিও ভালো থাকবেন
কথাটা আস্তে করে বলেই হিয়া উজানের বুকে সেন্স হারিয়ে পড়ে যায়,,
নোট:
তোমরা একটু ডিটেইলস কমেন্ট করলে ভালো হয়।।কোনটা খারাপ লাগছে, কোনটা ভালো লাগছে তোমরা জানাও। তোমাদের মতামত খুব গুরুত্বপূর্ণ।