সে আদরের অন্য নাম পর্ব-১৪

0
527

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?

#পর্ব_১৪

হিয়াঃ আপু আমি রেডি

সন্ধিঃ হয়ে গেলো এতো তাড়াতাড়ি

হিয়াঃ হুম আপনি ফাইলে সব নিয়েছেন তো ঠিক মতো, আর একবার না হয় দেখে নিন,আমি গেট গুলো ঠিক মতো লাগিয়ে দিয়ে আসছি তোতোক্ষনে

সন্ধিঃ ঠিক আছে হুম

হিয়া সব গেট লাগিয়ে উজানের রুমের গিয়ে গেট লাগাতে যাবে ওমনি উজান কে ড্রেসিং এর সামনে শার্টের কলার ঠিক করতে দেখে রীতিমতো চমকে উঠে,উজান হিয়াকে আয়নায় দেখতে পেয়ে মুখ উল্টো করেই মিচকে মিচকে হাসতে থাকে একটু আগের ট্রমা টা বেচারার এখনো কাটে নি

হিয়াঃ আপনি!!আপনি না বা বা বাহিরে ছিলেন তাহলে রুমে কি করে এলেন,আমি তখন যে ড্রেস চেঞ্জ করতে এসে আপনাকে

উজানঃ ইয়ে না আমি ঔ ব্যালকুনিতে ছিলাম তাই হয়তো তুমি খেয়াল করো নি

হিয়াঃ ওহ হবে হয়তো,আচ্ছা আপনি তৈরি তো আমরা কিন্তু তিনজনে রেডি

উজানঃ গেট টেট চেক করছো সব ভালো করে

হিয়াঃ হ্যা আপনি আসুন,আমরা নিচে নামছি

উজানঃ হুম

হিয়ারা তিনজন মিলে নিচে নামলে উজান গেট লাগিয়ে ওদের পিছনে পিছনে এসে সোজা গাড়ি নিয়ে সন্ধির ইন্টারভিউের অফিসে যায়,এদিকে সন্ধির ইন্টারভিউ শেষ হতে হতে রুপম তুষারকে নিয়ে কাজি অফিসে হাজির,সন্ধির ইন্টারভিউ খুব একটা ভালো হয় না না হওয়ারি কথা সন্ধি তো আর ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় আসে নি এসেছে তো তুষারকে বিয়ে করতে

সন্ধি কে দেওয়া কথা মতো উজান আগে থেকে সব আরেন্জ করে রাখে,আর সব নিয়ম নীতি অনুযায়ী দুজনের বিয়ে টাও এখন কম্পিলিট,কাজি অফিস থেকে বেড়িয়ে তুষার সবাইকে নিয়ে পাশের একটা রেসটুরেন্টে গিয়ে সবাইকে বিয়ের খাওয়া হিসাবে দুপুরের লাঞ্চ টা করিয়ে দেয়,তারপর সবাই মিলে ঘুরেফিরে সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নেয়,উজান প্রথমে অবন্তীকে ওর খালা বাড়িতে নামিয়ে দেয়,আর কথা মতো সন্ধি আর তুষার আজকে রাত টা হিয়াদের বাড়িতেই থাকবে,উজান অনেক রিকুয়েষ্ট করে রুপম কে ওদের বাড়িতে থাকবার জন্য কিন্তু রুপম রাজি হয় না,রুপম বুঝায় আজকের রাত টা সন্ধি আর তুষারের জন্য অনেক স্পেশাল ওরা এক রুমে থাকলে উজান হিয়া অন্য রুমে তাহলে হবে কি করে,উজান তবুও বলে কিছু একটা ম্যানেজ হয়ে যাবে তুই চল কিন্তু তবুও রুপম রাজি হয় না,কারণ উজান হিয়াকে একসাথে দেখার ক্ষমতা ওর আপাতত এই মুহুর্তে নেই,হাজার হোক একটা সময়ের জন্য হলেও সে হিয়াকে ভালোবেসেছিলো,যাগ রুপমকে জোর করে লাভ হলো না,শেষে রুপমকে ওর এক ফ্রেন্ডের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে উজান হিয়া সন্ধি আর তুষার মিলে ওদের বাড়িতে পৌঁছায়

সন্ধিঃ আমি আর তুষার এ রুমে থাকলে তোরা দুজনে কি করে

হিয়াঃ আরে আপু আমাদের এক ভাবে ঘুমোলেই হলো কিন্তু আজ তো তোমার আর ভাইয়ার স্পেশাল রাত,তোমাদের একটু ঠিক মতো প্রাইভেসি দরকার বুঝো না

সন্ধিঃ পাকনি রে,নিজেরা এখনো নিজেদের স্পেশাল রাত সেলিব্রেট করলো না আর আমাকে কি বলছে দেখো

হিয়াঃ ঔ হলো তো,কোথায় তুষার ভাইয়ার মতো এতো কেয়ারিং হাসবেন্ড আপনার আর কোথায় আমার রাম গরু,ওরকম বর হলে না স্পেশাল রাতের কথা ভাববো

হিয়ার কথায় উজান ভূ কুঁচকে হিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে নিজ রুম থেকে বেড়িয়ে হিয়ার রুমে গট গট করে চলে আসে,এদিকে হিয়া সন্ধি আর তুষার কে একটু পাকা পাকা কথা বলে নিজেও ওর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বিছানায় এসে বসে পড়ে ,কিন্তু এখন ঔ এক বিছানায় আবার উজানের সাথে উফফ ভেবেই হিয়ার মাথা ছিড়ে যাচ্ছে

উজানঃ কি করছো এটা

হিয়াঃ কেনো সীমান্ত রেখা আঁকছি দেখতে পাচ্ছেন না

উজানঃ হ্যা পাচ্ছি কিন্তু এ-সব কিসের জন্য

হিয়াঃ যাতে আপনি ঔ বালিশ টপকে আমাকে ঔ হুটহাট জড়িয়ে ধরতে না পারেন তাই জন্য

উজানঃ হোয়াট আ স্টুপিডিটি হিয়া!!বালিশ গুলো মাঝখান থেকে সরিয়ে চুপচাপ বই নিয়ে বসো কুইক

হিয়াঃ হ্যা বই,এই যে শুনুন ফাস্ট ওফ ওল এই বালিশ গুলো এখানেই থাকবে আর এমন ভাবে থাকবে যেনো আপনি আমার মুখ পর্যন্ত দেখতে না পারেন আর সেকেন্ড কথা আমি এই রাতে এখন বই নিয়ে বসবো! কি করে ভাবতে পারলেন এই ইডিয়টিক কথাটা বলুন তো আপনি

উজানঃ এ-র কম করে পড়াশোনা করলে না মেডিকেল তো দূরে থাক নার্সিং এও চান্স হবে না তোমার ইডিয়ট

হিয়াঃ (নিজের গায়ে কাথা জড়িয়ে নিয়ে) হলে হবে না হলে নাই তাতে আপনার কি হু,লাইট টা ওফ করুন আলো জ্বললে আমার ঘুম হয় না

হিয়া একটা ভেংচি কেটে মুখের উপর হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুইয়ে পড়ে,উজান রাগে চোখ মুখ পাকিয়ে লাইট ওফ করে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড় হয়,খুব রাগ হচ্ছে উজানের হিয়া কেনো ওর সাথে এমন করে সবসময়,সত্যি কি সে তুষারের মতো কেয়ারিং না,হিয়াকে এতো ভালোবাসার পরো কিসে এতো কমতি থাকছে হিয়ার,,

উজান কিছুক্ষণ বারান্দায় পায়চারি করে হিয়ার পাশে গিয়ে শুইয়ে পড়ে,তোতোক্ষনে হিয়া ঘুমিয়ে গেছে,উজান আলতো করে বালিশ গুলো সারিয়ে হিয়ার গায়ের চাদরটা ঠিক করে হিয়ার কপালে একটা স্নেহের চুম্বন এঁকে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে

সকালে ঘুম থেকে উঠলে হিয়া উজানের দু হাতের বাহুডোরে নিজেকে আবিষ্কার করে,চোখ খুলে আজ উজানের মুখ টা হিয়া দেখছে কি যে শান্তি লাগছে হিয়ার একমাত্র হিয়াই জানে সে কথা,হিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তো আছেই উজানের দিকে দৃষ্টি যেনো কিছুতেই নামছে না হিয়ার এই মুহুর্তে

উজানঃ (চোখ বন্ধ করেই) ওভাবে তাকিয়ে থেকো না জানপাখি প্রেমে পড়ে যাবে আমার

উজানের কথায় হিয়া একটু ভেবাচেকা খেয়ে নড়েচড়ে বসে,এবার উজান চোখ খুলে চোখ টা এক হাতে আলতো করে কচলে নিয়ে হিয়ার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে একটা মিচকে হাসি দিয়ে বলে উঠে

উজানঃ অবশ্য ইডিয়ট টা অনেক আগেই আমার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে যাকে বলে আরকি

হিয়াঃ হয়েছে আপনার ফালতু বকবক,এবার আমাকে কি ছাড়া যাবে

উজানঃ না যাবে না কটা বাজে তুমি এতো সকাল সকাল উঠে কি করবে

হিয়াঃ আন্ডা ভাঁজবো খাবেন

উজানঃ দেশি আন্ডা না বিদেশি কোনটা

হিয়াঃ দেশি না বিদেশি ও না ভিনদেশী চলবে

উজানঃ তুমি খাইয়ে দিলে ভিনদেশী কেনো ভিনগ্রহের ডিম খেতেও রাজি আমি

হিয়াঃ আপনি নাআআ একটা ফালতু

উজান একটা মিচকে হাসি দিয়ে হিয়ার চুল নিয়ে খেলতে শুরু করে,হিয়া উজানকে ছাড়িয়ে উঠতে ধরলেও উঠতে পারে না কেমন লেপ্টে আছে উজান ওকে ধরে ধুর

হিয়াঃ ঔ সুযোগ পেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরা হয়েছে তো,আপনি না কখনো শুধরাবেন না,কি হয় আমাকে একটু ঘৃণা করলে,এতো এতো কষ্ট দেই আমি আপনাকে আপনার কি কোনো অভিমান হয় না আমার উপর

উজানঃ না অভিমান হয় না কারণ এই ইডিয়ট টাকে আমি নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছি এখন সে পাহাড় সমান আঘাত করলেও আমার কখনো এক বিন্দু পরিমাণও অভিমান হবে না

হিয়াঃ নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছিলেন বলেই তো রুপম ভাইয়ার গলায় ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন আমায় তাই না

উজানঃ ভুল করেছি কতো বার বলবো

হিয়াঃ ভুল___ভুল না ছাই___আচ্ছা ছাড়ুন এখন ঔ খালাকে আজ তাড়াতাড়ি আসতে বলেছি সন্ধি আপুরা তো খেয়েই মনে হয় বেড়িয়ে যাবে,কাজ আছে ছাড়ুন নাআআআ

উজানঃ এরকম সবসময় পালিয়ে বের হও কেনো আমার কাছ থেকে তুমি,একটু কি দয়া হয় না তোমার আমার উপর,সন্ধিরা উঠে কি খাবে কিভাবে বের হবে খুব চিন্তা হচ্ছে তোমার তাই না,কোথায় আমাকে নিয়ে তো কখনো এতো ওয়ারিড তোমাকে হতে দেখি না,কি হয় আমাকে নিয়ে একটু ভাবলে

হিয়াঃ অনেক কিছুই হয়,আপনি বুঝবেন না

উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিয়ার উপর থেকে উঠে পড়ে,কিছুক্ষন পর খালা আসলে হিয়া উঠে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে খালার সাথে মিলে সবার জন্য সকালের নাস্তা টা বানিয়ে নেয়,সন্ধি আর তুষার কিছুক্ষণ বাদে উঠে পড়লে চার জনে মিলে ব্রেকফাস্ট করে নেয়,এদিকে গল্প করতে খেতে মিলতে সন্ধিদের ফ্লাইট এর সময় হয়ে আসলে সন্ধি আর তুষার, উজান আর হিয়াকে মন ভরে ধন্যবাদ দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে,এদিকে আজ এসবের চক্করে হিয়ার ক্লাস টা মিস হয়ে যায়,উজান হিয়াকে জোর পূর্বক জড়িয়ে ধরে হিয়ার কপালে একটা স্নেহের পরশ একে দিয়ে অফিসে একটা জরুরি মিটিং এ্যাটেন্ড করতে বেড়িয়ে পড়ে

বিকেল পাঁচ টাঃ

উজান ওর এক অফিস কলিগকে ডক্টর দেখাবার জন্য হসপিটালে নিয়ে এসেছে,আসলে কলিগ টা যেই ডক্টর টা দেখাবে ওনার সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লাগে আর উজানের পরিচিত হবার বদৌলতে উজান আগে আগেই ডক্টর টার সিরিয়াল নিতে সক্ষম হয়,ডক্টর দেখানো হয়ে গেলে উজান ওর কলিগ টাকে বিদায় দিয়ে যেই ওর গাড়ির কাছে গিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির দরজা টা খুলতে যাবে ওমনি উজানের চোখ পড়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা হিয়ার উপর,উজান প্রথমে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারে নি,হিয়া কেনো এখানে আসতে যাবে আজব,কিন্তু ঠিক করে দেখে উজান বুঝতে পারে ওটা হিয়াই,উজান দৌড়ে হিয়ার কাছে গিয়ে হিয়াকে ডাকলে হিয়া উজানের গলা শুনে পুরো কেঁপে উঠে,উজান এখানে কেনো

উজানঃ কি করছো তুমি এখানে

হিয়াঃ আপনি এখানে

উজানঃ আমি এখানে মানে,,আমি এখানে রাহাতকে ডক্টর দেখাবো বলে এসেছিলাম ওর কিছু দিন ধরে পায়ের হাঁটুতে সমস্যা করছে ঠিক করে হাটতে পারছে না তাই মোস্তফা স্যারকে দেখাতে,,ছাড়ো ওসব তুমি, তুমি এখানে কি করছো,তোমার শরীর ঠিক আছে তো,এখানে হঠাৎ কেনো কি করতে

হিয়াঃ আমি আমি মানে আসলে আমি না ঔ ঝিনুকের সাথে এসেছিলাম,আসলে কি বলুন তো ঝিনুকের না কদিন ধরে শরীর টা খারাপ লাগছে পেটে পেটে ব্যাথা করছে আর ওরো না আমার মতো এখানে তেমন কেউ নি সাবলেটে থাকে,তাই ও বললো যদি ওর সাথে এসে একবার

উজানঃ (একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে) হ্যা তা আমাকে একবার ফোন করে আসা যেতো না,এরকম কেনো করো হিয়া তুমি,তুমি এখানকার চেনো কিছু ,কি কি কিছু হয়ে গেলে কি করতাম আমি

হিয়াঃ কিছু হয় নি তো আমি ঠিক আছি

উজানঃ তা কোথায় তোমার ফ্রেন্ড

হিয়াঃ আসলে ওর না আরো অনেকক্ষন লাগবে তো উওরা থেকে ওর বোন আসছে তা আমি বললাম সন্ধ্যা হলে তো আমি একাই ফিরতে পারবো না তাই ওকে উপরে রেখে আমি বাড়ি যাবো বলে নিচে নেমে আসলাম

উজানঃ এই বলছো কেউ নেই এই আবার বলছো উওরা থেকে আসছে

হিয়াঃ উওরা তো এখানে না না,আসতে তো একটু হলেও সময় লাগে তাই

উজানঃ হুম,বাড়ি যাবে তো এখন

হিয়াঃ হুম

উজান হিয়াকে নিয়ে বাড়িতে আসে,নিত্যদিনের মতো শুরু হয় হিয়ার পড়াশুনা আর উজানের হিয়াকে পড়ানো,হিয়ার আজ পড়াতে তেমন একটা মন নেই দেখে উজান খুব রেগে যায়,দুদিন ধরে না পড়িয়ে আজ হিয়ার সব মনোযোগ গুলিয়ে গেছে,উজান হিয়ার সব বই খাতা গুছিয়ে রেখে হিয়ার উপর এক বালতি রাগ ঝেড়ে নিজের রুমে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে যায়

উজানঃ আগে ভাবতাম আমার প্রতি তোমার শুধু অনিহা কিন্তু না এখন তো দেখছি বই খাতা গুলোও তোমার কাছে আমার মতো অপ্রয়োজনীয় বস্তু,পড়াশোনা করতে হবে না ওরকমি করে বের হও__আমি আর কিচ্ছু বলবো না কিচ্ছু না

উজান চিৎকার করে কথা গুলো বলে যেনো হিয়া শুনতে পায়,হ্যা হিয়া শুনতে পায় কিন্তু হিয়ার সে দিকে কোনো মন নেই,হিয়া বই খাতা গুলো আরো ভালো করে গুছিয়ে রেখে ওর রুমের লাইট টা ওফ করে বাহিট গেট টা আলতো করে খুলে ছাঁদে যায়,আজকে আর ছাঁদের গেট লক করা নেই,যাগ হিয়া একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছাদের কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশ টা দেখতে থাকে

এদিকে অনেকক্ষন হলো উজান রুমের মধ্যে হিয়ার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে হিয়াকে খুঁজতে হিয়ার রুমে আসলে দেখে হিয়া নেই,উজান ব্যালকুনি রান্না ঘর সব চেক করে হিয়াকে ফোন করে কিন্তু হিয়া ফোন টা ফেলে রাখায় উজান হালকা চিন্তিত হয়ে পড়ে,তারপর কি মনে করতে গেটের দিকে গেলে বুঝতে পারে গেট টা খোলা,উজান ভাবে হিয়া হয়তো ফয়সালদের বাড়িতে আছে,উজান ফয়সালদের গেট নক করলে ফয়সালের মা বেড়িয়ে বলে হিয়া এখানে নেই,একটু আগে উনি ছাদে ছিলো তখন হিয়ার সাথে ওনার গুটিকয়েক কথা হয়েছিলো এখনো হয়তো হিয়া ছাঁদেই আছে,উজান ফয়সালের আম্মু কে একটা ধন্যবাদ দিয়ে একবার ওর রুমে যায় তারপর ওর ব্যাগ থেকে একটা গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে তৈরি গাজরা টাইপ মালা বের করে ওটা হাতে নিয়ে রুমের গেট লাগিয়ে ছাঁদ গিয়ে দাঁড়ালে দেখতে পায় হিয়া একটা শানে বসে আকাশের পানে তাকিয়ে নিজ মনে কি সব বক বক করছে তো করছেই

হিয়াঃ আপু খুব দরকার তোকে আমার,কোথায় হারিয়ে গেলি এভাবে,আয় না ফিরে আমার কাছে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোর মুখটা,খুব ইচ্ছে করছে তোর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি রোজকার মতো,আর কি কখনো আমি সে সুযোগ পাবো বলতে পারিস,তোকে অনেক কথা বলার আছে আমার

হিয়ার কথার মাঝে উজান গিয়ে হিয়াকে পেছন থেকে আলতো করে ধরে হিয়ার কাঁধে ওর থুতনি টা ঠেকিয়ে দিয়ে বলে উঠে

উজানঃ খুব মিস করো না আপুকে,যদি আমার সাধ্য থাকতো তাহলে আমি সব কিছু দিয়ে তোমার আপু কে খুঁজে এনে দিতাম

হিয়াঃ আপনি!!আপনি কেনো এসেছেন আমার কাছে,তখন তো খুব রাগ দেখালেন এখন কি দেখতে আসছেন আপনার ঔ রাগ দেখে আমি ভয়ে কুঁচি কুঁচি হয়ে বরফের মতো জমে গিয়েছে কি না হু?

উজানঃ তুমি যে আমাকে ভয় পাবা না আর সেই ভয়ে পেয়ে যে কুঁচি কুঁচি বরফও হয়ে যাবা না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি

হিয়াঃ জানেন যখন তখন কি দেখতে আসছেন এখানে,আমাকে একা থাকতে দিন ভালো লাগছে না আমার

উজান হিয়ার কথা কে অগ্রাহ্য করে হিয়ার চুল গুলো নিয়ে ওটাতে ঔ গাজরাটা পড়াতে চেষ্টা করে

হিয়াঃ কি করেছেন কি আমার চুল নিয়ে,ছাড়ুননন

উজানঃ আহ,বসো না ঠিক করে,কি করে পড়ায় এটা

হিয়াঃ কি কি পড়ায়

উজানঃ আরে এটা

হিয়াঃ হ্যা কোনটা

উজান গাজরা টা তুলে হিয়ার মুখের সামনে ধরে

উজানঃ এটা

হিয়াঃ এটা খোলা চুলে পড়ে না

উজানঃ তাহলে

হিয়াঃ এটা খোঁপা করা চুলে পড়তে হয়

উজানঃ চুল খোপা করে কি করে

হিয়াঃ আপনি পারবেন না

উজানঃ তাহলে তুমি খোঁপা করো আমি পড়িয়ে দেই

হিয়াঃ লাগবে না

উজানঃ কেনো পছন্দ হয় নি

হিয়াঃ হয়েছে

উজানঃ তাহলে পড়তে কি সমস্যা আমি এনেছি বলে

হিয়াঃ তাই মনে করলে তাই

উজানঃ তুমি কি মনে করো

হিয়াঃ কিছু না

উজানঃ তাহলে নিচ্ছ না কেনো

হিয়াঃ আআআআ,,,,আপনি এতো কথা পেঁচান কেনো

উজানঃ তুমি খোঁপা টা করে নিলেই তো এতো কথা হতো না আর আমি এতো কথা পেঁচাতাম ও না

হিয়া মুখ উল্টে উজানের কাছে থেকে গাজরা টা নিয়ে ওর চুল গুলো সব বা সাইডে এনে ডান সাইডে একটা কাটা কিলিপ দিয়ে গাজরা টা আলতো করে লাগিয়ে বুক বরাবর ছেড়ে দেয়

হিয়াঃ হ্যাপি

উজানঃ খুবববব,এটাকে কি খোঁপা করা বলে ঔ তো ওপাশের সব চুল খোলা

হিয়াঃ খোঁপা করি নি খোঁপা করবার ক্লিপ তো ঘরে

উজানঃ তাহলে এটা কি করলে

হিয়াঃ এভাবেও অনেকে পড়ে

উজানঃ এটাকে কি বলে তাহলে

হিয়াঃ আপনি এতো জেনে কি করবেন?

উজানঃ না এমনি তুমি আমাকে পড়াতে দিলে না তাই ভাবলাম খোপা হয়তো অনেক কঠিন জিনিস তাই

হিয়াঃ কেনো এভাবে আমাকে ভালো লাগছে না

উজানঃ না

হিয়াঃ কি!!?

উজানঃ না না সুন্দর লাগছে

হিয়াঃ হয়েছে না আপনার,এখন চুপচাপ মুখটা বন্ধ করুন আমাকে চাঁদ টা দেখতে দিন প্লিজ

উজানঃ ওক্কে ওক্কে

উজান হিয়াকে ওকে বলে হিয়ার পাশে গিয়ে বসে হিয়ার কোলে মাথা রেখে হিয়ার পেটে মুখ লুকিয়ে নেয়,হিয়াও আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে উজানের চুলে বিলি কাটতে থাকে,,

হিয়াঃ আপনি আমাকে খুব ভালো বাসেন তাই না

উজানঃ (মুখ তুলে বড় বড় চোখ করে) তুমি বুঝো তাহলে আমি তোমাকে ভালোবাসি

হিয়াঃ না বোঝার কি আছে,আমার জায়গায় যে কোনো মেয়ে থাকলেই বুঝতো

উজানঃ তাহলে এরকম দূরে দূরে থেকে আমাকে কষ্ট কেনো দেও

হিয়াঃ তাও তো আপনি কষ্ট পেয়েও ঘুরেফিরে ঔ আমার কাছেই আসেন

উজানঃ ভালোবাসি যে

হিয়াঃ কতো টা ভালো বাসেন তাই তো জানতে চাইছি

উজানঃ কতো সেটা তো পরিমান করে বলতে পারবো না তবে কি রকম সেটা বলতে পারি

হিয়াঃ কি রকম এই ফুল গুলোর মতো

উজানঃ না

হিয়াঃ তাহলে এই চাঁদ টার মতো

উজানঃ তাও না

হিয়াঃ তাহলে

উজানঃ সূর্যের মতো

হিয়াঃ সূর্যের মতোন ওটা আবার কি রকম

উজানঃ দেখো সবাই চাঁদের সাথে নিজের ভালোবাসা কে তুলনা করে,কিন্তু চাঁদ টার দিকে ভালো করে তাকাও তো,এটা কি চাঁদের নিজের আলো না তো

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু

উজানঃ চাঁদ টা কোথা থেকে আলো পাচ্ছে সূর্য থেকে তাই তো

হিয়াঃ হ্যা

উজানঃ তার মানে চাঁদের এই আলো টা তার নিজস্ব না এটা নকল,আর আমি তো আমার হিয়াকে কোনো অন্যের আলো দিয়ে ভালোবাসবো না আমি ভালোবাসবো সূর্যের মতো করে যে নিজে আলো বিলিয়ে চাঁদ কে এতো সুন্দর করে তুলে

হিয়াঃ এতো গভীর ভাবে কি করে ভাবতে পারেন আপনি!!

উজানঃ না ভাবার কি আছে,সামনে এরকম সুন্দরী বউ থাকলে এমনি ভাবনা গুলো গভীরে চলে যায় মিসেস শাহরিয়ার (হিয়ার নাক টা টেনে)

হিয়াঃ তাই__কফি খাবেন

উজানঃ কি বললে

হিয়াঃ বললাম কফি খাবেন

উজানঃ তুমি আমাকে কফির অফার দিচ্ছ রিয়েলি?

হিয়াঃ ঠিক আছে খেতে হবে না

উজানঃ আরে না না তা কখন বললাম_____হিয়া(অস্ফুটে)

হিয়াঃ হুম(আনমনে)

উজানঃ কিছু হয়েছে তোমার

হিয়াঃ কোথায় না তো

উজানঃ আমাকে মিথ্যে বলছো

হিয়াঃ একটা কথা দিবেন আমাকে

উজানঃ দেবার হলে অবশ্যই দেবো

হিয়াঃ না আগে বলুন দিবেন

উজানঃ তোমার চাওয়ার উপর ডিপেন্ড করে বলবো দেবো কি দেবো না, আগে সোজাসুজি বলো কি চাও তারপর

হিয়াঃ যদি কখনো আমি না থাকি বা বলি আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিতে আপনি কিন্তু ওদিন আমার এই কথা টা রাখবেন বলুন

হিয়ার মুখে কথাটা শোনা মাএ উজান হিয়ার কোল থেকে উঠে হিয়াকে ওর বুকে আগলে নেয়

উজানঃ আর কখনো এ-র কম কথা মুখে আনবে না,আমি আমি তোমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করবো মাথা ঠিক আছে তোমার,আর কোথায় কোথায় যাবে তুমি আমাকে ছেড়ে, কোথাও যাও শুধু পা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে রেখে দেবো বেয়াদব

হিয়াঃ (উজান কে ছাড়িয়ে দিয়ে)আমি আপনাকে ভালো বাসি না বাসি না বাসি না,আমাকে আপনি ছেড়ে দিন

উজানঃ ভালোবাস না আমাকে

হিয়াঃ কতবার বলবো ভালোবাসি না

উজানঃ ভালো না বাসলেও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে,মন না চাইলেও আমার সাথে সংসার করতে হবে,কষ্ট হলেও আমাকে সহ্য করতে হবে বুঝতে পারছো তুমি (ঝারি দিয়ে)

হিয়া আর কিছু না বলে দৌড়ে ছাঁদ থেকে নেমে ওর রুমে চলে যায়__উজান কিছুক্ষণ ছাদের মধ্যে বসে থেকে নিচে নেমে আসে,এসেই দেখে হিয়া ওর রুমে লাইট ওফ করে শুইয়ে আছে,উজান কিছু না বলে হিয়ার ব্যালকুনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে পায়চারি করতে থাকে,কিছুক্ষণ পর উজান গিয়ে হিয়াকে রাতের খাবারের জন্য ডাকলে হিয়া বলে ও খাবে না,শেষে উজান বাধ্য হয়ে নিজেও না খেয়ে সব ফ্রিজে রেখে হিয়ার পাশে গিয়ে হিয়াকে চিপকে জরিয়ে ধরে

উজানঃ নড়ার চেষ্টা করছো তো খুন করে ফেলবো,,কথায় কথায় রাগ আর বাজে বাজে কথা,,কখন যে কি চলে মনের মাঝে নিজেও ঠিক করে জানে না ইডিয়ট ?

উজান হিয়াকে জোর করে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে হিয়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,হিয়া কিছু বলতে পারে না,অনেক কষ্টে নিজের কান্না টা নিজের মনে চেপে ধরে হিয়া উজানের একটা হাত আগলে ধরে

হিয়াঃ রিপোর্ট গুলো পাওয়া না অবধি তো আমি আপনাকে ঠিক করে কাছেও আনতে পারছি না,যদি সত্যি সত্যি আমার ভাবনা টা সত্যি হয় তাহলে আমি কখনো আপনাকে __খুব ইচ্ছে করে আপনার মতো করে আমিও আপনাকে জরিয়ে ধরে থাকি কিন্তু সেই সময় টা কি কখনো আসবে আমার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here