সে আদরের অন্য নাম পর্ব-১৯

0
446

? #সে_আদরের_অন্য_নাম ?

#পর্ব_১৯

হিয়াদের বাড়ি

তলপেটের ব্যাথায় নিজের বিছানায় গুটিসুটি হয়ে শুইয়ে আছে হিয়া,,ঔষধ গুলো তো সব ঢাকায় ছেড়ে এসেছে সাথে রিপোর্ট গুলোও,অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে হিয়ার বিলিডিং আজকে একটু বেশি ই হচ্ছে অন্য দিনের তুলনায়

হিয়াঃ তোমাকে কালকেই ফুফুর বাড়িতে যেতে হলো মা,,কবে ফিরবে তুমি,,খুব কষ্ট হচ্ছে তাড়াতাড়ি ফিরে আসো না তুমি আজ

সিয়ামঃ হিয়া আছিস রুমে

হিয়াঃ কে ভাইয়া,,আয় না ভেতরে

সিয়ামঃ কি রে শরীর খারাপ

হিয়াঃ না রে এমনি শুইয়ে আছি,,কোথাও বের হচ্ছিস তোরা

সিয়ামঃ হুম তোর ভাবী কে নিয়ে ডক্টরের কাছে যাচ্ছি,,তুই বাড়িতে থাকতে পারবি তো একা,,মা বিকেলেই আসছে

হিয়াঃ আমাকে নিয়ে একদম ভাবিস না ভাইয়া,তুই আপাতত ভাবীকে নিয়ে ভাব,,কি করে যে ভাবি এই ব্যাথা নিয়ে এই সংসার টা সামলে যাচ্ছে তুই কিন্তু ভাগ্য করে ভাবীর মতো একটা বউ পেয়েছিস

সিয়ামঃ তাই___পাগলি___আচ্ছা শোন তোর ভাবি তোর জন্য সব খাবারের ব্যবস্থা করে দিছে তুই শুধু উঠে একটু কষ্ট করে খেয়ে নিস বোন আমার

হিয়াঃ তুই যা তো ভাইয়া বিরক্ত করিস না,,এমনি দিন তো বাড়িতে এলে জ্বালিয়ে মারিস আজ এতো দরদ দেখাস না বোনের উপর বুঝলি

সিয়ামঃ যাচ্ছি যাচ্ছি,,

সিয়াম যাওয়ার আগে হিয়ার চুল গুলো টান দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,দুপুর তখন দুটোর কাছাকাছি,,হিয়া তখনো নিজের বিছানায় শুইয়ে আছে এক কাইত হয়ে,,খুব মনে পড়ছে তার উজানের কথা,,মানুষ টাকে যদি ছুঁইয়ে দিতে পারতো একবার ও শেষ বারের মতো

হিয়াঃ নিঃস্বার্থ ভাবে আমাকে ভালোবেসেছিলেন আপনি,,কখনো কোনো কিছুর চাহিদা মেটাতে আমার সাথে জোড় বা অসভ্যতামি করেন নি,,শুধু কি করে আমার ভালো হয় সেটাই চেয়ে ছিলেন কিন্তু আমার ভাগ্য দেখুন আপনার মতো একটা মানুষের সাথে দুঃব্যবহার করতে আমাকে বাধ্য করলো,,,,কি করছেন আপনি অফিসে আছেন,,দুপুরে খেয়েছেন ঠিক মতো??আজ কতো বার নুরজা খালা কে ফোন দিলাম আপনার খোঁজ নেবো বলে খালা আমার ফোন টাও রিসিভ করলো না,,,,কেমন আছেন আপনি

উজানঃ যেমনটা তুমি রাখছো____!!!!

উজানের সেই দূর্বল কন্ঠ মুহুর্তে হিয়ার অশান্ত মনকে আরো নাড়া দিয়ে উঠে,,চোখের জল গুলো মুছে পেছেন ফিরতেই উজানের দু হাতের শক্ত বেষ্টনে জড়িয়ে পড়ে হিয়া,,এই বেষ্টন ছেড়ে উঠার শক্তি হিয়ার নেই,,এটা হিয়ার কল্পনা নয় তো,,না কল্পনা না এটা সত্যি,,সত্যি সত্যি উজান ওকে আগলে ধরে আছে,কিন্তু কি করে সম্ভব

হিয়াঃ আপনি

উজানঃ নিজেকে কি খুব মহান মনে করো তুমি তাই না,,কি ভেবেছিলে আমাকে কিছু না বললে আমি জানতে পারবো না

হিয়াঃ____

উজানঃ একদম চোখ দিয়ে জল বের করবে না,,আমাকে কষ্ট দিয়ে এখন এসব নাটক করা হচ্ছে,,আমার উপর বাদই দিলাম আমার ভালোবাসার উপর কি তোমার এক ফোঁটাও বিশ্বাস ছিলো না হিয়া

হিয়াঃ আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন,,আমি তো আপনাকে খুব বিশ্বাস করি বিশ্বাস করুন

উজানঃ করো না বিশ্বাস তুমি আমাকে,,আমাকে বিশ্বাস করলে এতো বড় একটা কথা তুমি কখনোই আমার থেকে লুকোতে পারতে না হিয়া কখনোই না

হিয়াঃ আপনি বুঝতে চাইছেন না আমার পক্ষে আর কোনো রাস্তা ছিলো না

উজানঃ আমাকে ডিভোর্স দেওয়া টাই তোমার এই সমস্যার সমাধান মনে হলো হিয়া,,একটা অসুখ হয়েছে অপারেশন করাতে হবে এই তো ব্যাছ এটার জন্য তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে,,এটা তুমি ঠিক করো নি হিয়া,,তুমি আমাকে এর জন্য যা সাফার করিয়েছো আমি তা কখনো ভুলবো না,,এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে,,,,এ-র পর থেকে আমি যা বলবো সব তোমাকে শুনতে হবে

হিয়াঃ আপনি কেনো বুঝতে চাইছেন না এটা শুধু একটা অপারেশন না এটার সাথে আমার আপনার দুজনের জীবনের অনেক কিছু জড়িয়ে আছে,,এই অপারেশন টা করা হলে আমি কখনো আর মা হতে

উজানঃ পারবে না তাই তো____(একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিয়ার চোখের জল গুলো আলতো করে মুছে দিয়ে) আমার শুধু তোমাকে চাই হিয়া,,শুধু তোমাকে,,বাচ্চা চাইলে ফিউচারে এ্যাডপ্টও করা যাবে কিন্তু তুমিই যদি আমার কাছে না থাকো তাহলে আমি বাচ্চা দিয়ে ঠিক কি করবো হিয়া??

হিয়াঃ তা হয় না উজান

উজানঃ কেনো হয় না তুমি বুঝাও আমাকে,,এরকম তো হাজার হাসবেন্ড ওয়াইফ আছে যাদের বেবি হয় না তারা তারা কি হ্যাপি লাইফ লিড করছে না,,তারা কি করে সুখে আছে বুঝাও তুমি আমাকে

হিয়াঃ ওদের পরিস্থিতি আর আমার পরিস্থিতি এক না উজান

উজানঃ কি এক না বলো কি এক না??

হিয়াঃ একটা বিয়ে যখন হয় তখন একটা ছেলে শুধু একটা মেয়ের দায়িত্ব নেয় কিন্তু একটা মেয়েকে শুধু একটা ছেলের না ছেলেটার সাথে সাথে গোটা তার ফ্যামিলিটার ও দায়িত্ব নিতে হয় উজানননন,,,আর আপনি তো দেখছেনই আপনার পরিবারে মা আর অবন্তী বাদে কেউ আমাকে এখনো মন থেকে গ্রহন করে নি,,ইনফেক্ট আপনার বাবাও তো আমাকে

উজানঃ তো কি হয়েছে হিয়া,,তুমি নিশ্চয় আমার ফ্যামিলির বাকি মেম্বার দের সাথে সংসার করবা না

হিয়াঃ করতে না চাইলেও তারা সবাই এসে যাবে উজান,,এই যে অনিক দার বিয়ে হলো কিছু দিন পর হয়তো অনিক দাও বাবা হয়ে যাবে কিন্তু আপনি কখনো,,,,আপনার বাবা মারো তো কিছু আশা থাকবে বলেন তাদের বড় ছেলে

উজানঃ আমি তাদের কে বুঝিয়ে বলবো

হিয়াঃ আর কতো আপনি আমার জন্য সবার সাথে লড়বেন বলতে পারেন সেই প্রথম দিন থেকে তো আপনি এভাবে আমাকে আগলে রেখেছেন কিন্তু এভাবে আর কতোদিন

উজানঃ যদি বলি সারাজীবন রাখতে হলে তাই রাখবো

হিয়াঃ আপনি আবেগে ভাসছেন পরিস্থিতি টা একটু বুঝার চেষ্টা করুন,,কি আছে আমার,, আপনার তুলনায় আমাদের তেমন কিছুই নেই,,নিজের যে একটা ডক্টর দেখাবো সেই টাকা টাও আমি চাবার সাহস পাইনি বাড়িতে নিজের গা থেকে গয়না খুলে(হিয়া আর বলতে পারে না)____প্লিজ আপনি ফিরে যান

উজানঃ ফিরে কোথায় যাবো বলো আমাকে

হিয়াঃ যেখানে খুশি যান,,নিজের জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে নিন

উজানঃ আর তুমি

হিয়াঃ জানি না আমি কি করবো,,কিন্তু আমার জন্য আপনার জীবনটা অপূর্ণ থাকুক আমি তা কিছুতেই হতে দিতে পারি না

উজানঃ কিন্তু আমি যে তোমার কথা শুনতে বাধ্য নই হিয়া

হিয়াঃ আপনি কেনো জেদ করেছেন

উজানঃ তুমি করতে বাধ্য করছো,,,আচ্ছা হিয়া তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবা তো

হিয়াঃ পারবো,,পারতে হবে আমাকে

উজানঃ তাহলে নুরজা খালা কে বারবার ফোন করো কেনো,,আমি কেমন আছি সেটা জানার তো কোনো প্রয়োজন নেই তোমার

হিয়াঃ আপনাকে ভালো রাখার জন্যেই তো আমার এতো আয়োজন

বলেই হিয়া ডুকরে কেঁদে উঠে,,,উজানো হিয়াকে জড়িয়ে ধরে হিয়ার কানের ভাঁজে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করে

উজানঃ ভালোবাসি তোমাকে আমি হিয়া,,তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই যে পাগলের মতো ভালোবাসি তোমাকে,,তুমি ছাড়া আমার কিচ্ছু চাই না হিয়া কাউকে না,,,প্লিজ তুমি এভাবে কাঁদবে না,,,আমি আজকেই তোমার ওটির ব্যবস্থা করবো কিচ্ছু হবে না তোমার

দুজনে দুজনকে আগলে কাদঁতে শুরু করে,,হিয়া কি করবে ঠিক বুঝতে পারে না উজানকে এতো বুঝাবার পরো উজান কেনো বুঝতে চাইছে না,,কিছুক্ষন পর হিয়া ওর চোখ মুছে উজানকে ঠেলে উঠে দাঁড়াতেই উজান খেয়াল করে বিছানা হিয়ার রক্তে লাল হয়ে আছে অনেকটা,,উজান ভয়ে উঠে পড়ে হিয়াকে দেখে নিয়েই বুঝতে পারে পরিস্থিতি টা অনেক টা খারাপ হয়ে আছে

উজানঃ এসব কি হিয়া,,,,!!!!

হিয়াঃ খুব ব্যাথা হচ্ছে পেটে(কেঁদে দিয়ে)

উজানঃ (হিয়াকে জড়িয়ে ধরে) আমি এতোক্ষণ ছিলাম তা তুমি এই কথা টা আমাকে একবারো বলবা না,,,,খুব খুব কষ্ট হচ্ছে না তোমার,,দেখি তাকাও আমার দিকে,,কোথায় কোথায় ব্যাথা হচ্ছে বলো আমাকে

হিয়াঃ এখানে,,নিচ পেটে

উজানঃ তুমি কি হিয়া,,এরকম কোনো তুমি,,সব কষ্ট একায় সহ্য করে নিবা,,মাঝে মাঝে মনে হয় আমার ভালোবাসায় হয়তো ঘাটতি আছে কোনো যার জন্য তুমি আজো আমাকে তোমার সমস্যা গুলো খুলে বলতে পারো না

হিয়াঃ না আপনি এভাবে বলবেন না,,আপনার ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই,,,,আর এতো বিল্ডিং এর আগে কখনো হয় নি আমার আজ হঠাৎ করেই

উজানঃ হয়েছে চুপ এখন,,তুমি জামা টা পাল্টে নেও আমি সন্ধিকে ফোন করে বলছি সব ব্যবস্থা করে রাখতে

হিয়াঃ আপনি ভেবে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তো,,আমি কিন্তু কখনো

উজানঃ(হিয়াকে চুপ করে দিয়ে) আমার শুধু তোমাকে চাই হিয়া,,শুধু তোমাকে

____________________________

উজান হিয়াকে নিয়ে হসপিটাল পৌঁছে ঠিক রাতের দিকে,,সন্ধি আগে থেকে সব ব্যবস্থা করে রাখে,,ডক্টর রা হিয়ার সব নতুন করে চেক আপ করে ডিসিশন নেয় কাল সকালে হবে ওটি,,এর মধ্যে বাসবি আর অবন্তীও এসে যায় হসপিটালে,,এতো বড় একটা কথা লুকোবার জন্য বাসবি হিয়াকে ইচ্ছে মতো বকা দিয়ে দেয় সাথে মায়ের কোল জুড়ে ভরে দেয় আদর

পরের দিন ওটি হয়,,আর খুব সফল ভাবেই ওটি টা সম্পূর্ণ হয়,,

হিয়া পুরোপুরি সুস্থ হবার পর,,

অপারেশনের পরো হিয়া অনেকবার উজান কে বুঝিয়ে ছিলো অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলে ওর জীবন টা হয়তো সুখে থাকবে কিন্তু উজান সেটা মানতে নারাজ,,উজানের এক কথা হিয়ার মাঝেই উজানের সব সুখ হিয়ার মাঝেই উজানের সব পূর্ণতা,,হিয়াও তো ছিলো উজানের ভালোবাসার কাঙ্গাল,,কোন মেয়েই বা মন থেকে চাইবে তার নিজের ভালোবাসার ভাগ অন্য কাউকে দিয়ে দিতে,,হিয়াও একটা সময় হার মেনে যায় উজানের কাছে,,শুরু হয় নতুন করে দুজনের নতুন পথ চলা

সব নতুন করে শুরু হওয়াতে সন্ধি থেকে শুরু করে সব ফ্রেন্ড সার্কেল বায়না ধরে ওরা নতুন করে হিয়া আর উজানের মিছে মিছে বিয়ে দিয়ে একটা জমকালো খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করবে,,কারণ উজান হিয়ার সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে তে সন্ধি ছাড়া কেউ ই তখন উপস্থিত ছিলো না,,তাই সবার আবদার মেটাতে বাসবিও রাজি হয়ে যায়,,একটা ছোট দেখে রিসোর্টে ভাড়া করা হয় উজান হিয়ার জন্য,,এতে ঘুরতে যাওয়াও হবে সেই সাথে খাওয়া দাওয়াও হবে জমিয়ে,,সব কিছু একসাথে সেলিব্রেশন করতে সবাই এখন উপস্থিত রিসোর্টে

সন্ধিঃ শোন দেখ রুমে আসলেই উজান কিন্তু হিয়াকে নিয়ে এই ব্যালকুনিতে আসতে চাইবে আর এই ব্যালকুনিই হলো আমাদের লুকিয়ে থাকার একটা অন্য রকম জায়গা

অবন্তীঃ তাহলে এখন

সন্ধিঃ শোন আমি বলি কি আমরা তিনজন ভেতরে ঢুকে যাই আর তুষারকে বলি ভেতর দিয়ে লক করে দিয়ে দিতে

রাইসাঃ এ যা ঘরের ভেতর দিয়ে লক করে দিলে উজান বুঝবে না বুঝি

সন্ধিঃ আরে তুষার বলে দিবে ও লক করে চাবি ভুলে গিয়েছে দেখবি উজান এমনিতে আজ যা ব্যস্ত এ নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না

রাইসাঃ বলছিস

সন্ধিঃ আরে হ্যা তোরা না এক একটা ভীতু,,ওয়েট আমি তুষারকে খুঁজে আনছি

সন্ধি তুষারকে ডেকে আনলে প্লান অনুযায়ী তুষার ওদের তিনজনকে বারান্দায় লক করে দিয়ে দেয় আর উজানকে ভনিতা করে যা নয় তাই বুঝিয়ে দেয়,,এদিকে সন্ধি রা তো লুকালো এখন তুষার রা কোথায় লুকোবে সেই জায়গা খুঁজতে শুরু করে,,রাসেল দের সাথে কথা বলে ঠিক হয় যেহেতু ছেলে চারজন তাই তিনজন লুকোবে বেডের নিচে আর সাব্বির কে ঢুকে দেয় কাবাডের ভেতর,,বেচারা সাব্বির

উজানঃ বুঝলাম না সবাই এরকম হাওয়া হয়ে গেলো কোথায়

হিয়াঃ ও রে দেখুন তো কি ভুলো মন আমার,,তখন আমাকে আপনার কাছে দিয়ে সন্ধি আপু বললো ওরা নাকি এখন রিসোর্টে যেই অনুষ্ঠান টা হচ্ছে ওখানে যাবে,

উজানঃ এই এতো রাতে,

হিয়াঃ আপনি একদম ভাববেন না তুষার ভাইয়া রুপম ভাইয়া এরাও আছে ওদের সাথে,

উজানঃ তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডো নিশ্চয় ওদের সাথে গিয়েছে,

হিয়াঃ তা আর বলতে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here