#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ২১
#Arshi_Ayat
রৌদ্রুপ বাসায় এলো রাত একটায়।বাসায় কেউই নেই।বাড়িটা খালি খালি লাগছে।দুইদিন আগে শুদ্ধতা ওর বাবার সাথে বড় ফুপির বাসায় গেছে।রৌদ্রুপকে যাওয়ার জন্য বলেছিলো কিন্তু ওর ছুটি নেই।তাই যেতে পারে নি।ও যেতে পারবে না বলে শুদ্ধতাও যেতে চায় নি কিন্তু রৌদ্রুপই পাঠিয়ে দিলো।সারাদিন মেয়েটা একাই থাকুক।তারচেয়ে ঘুরে আসা ভালো।ও নিজেও চেয়েছিলো কিছুদিন শুদ্ধতাকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে কিন্তু ছুটি পেলো না।আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
সারাদিন প্রচুর ব্যস্ত থাকায় বাসায়ও আসা হয় নি আর রান্নাও হয় নি।দুপুরের খাবার রাইরে খেলেও রাতেরটা বাইরে খাবার রুচি হয় নি।কিন্তু এখন আবার রাঁধতেও ইচ্ছে হচ্ছে না।কি মুশকিল!শুদ্ধতা যাওয়ার সময় বেশি করে রেঁধে গিয়েছিলো কিন্তু ওটা কালই শেষ হয়ে গিয়েছে।এখন খালি পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে না খেলেই নয়।কিছুক্ষণ বসে থেকে রান্না ঘরে গিয়ে নুডলস বানিয়ে ঘরে আসলো রৌদ্রুপ।খেতে খেতে টেনিস খেলা দেখছিলো হঠাৎ দরজায় বেল বাজায় মোটামুটি অবাকই হলো ও।এতো রাতে কে আসবে!আর দারোয়ানই বা ঢুকতে দিলো কি করে।রৌদ্রুপ নিচে নেমে এসে দরজা খুললো।দরজার বাইরে সিশা দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখে হালকা হেসে বলল,’শুয়ে পড়েছিলি নাকি?’
‘না,বাসায় কিছু নেই তাই নুডলস রান্না করছিলাম আর সেটাই খাচ্ছি।কিন্তু তুই এখন?কোনো সমস্যা?’
‘হ্যাঁ।সেইজন্যই আসলাম।’
‘আচ্ছা আয় ভেতরে এসে বস।’
সিশা ভেতরে ঢুকলো।যদিও জানে তবুও জিগ্যেস করলো যেনো সন্দেহ না হয় রৌদ্রুপের।আদতে শুদ্ধতা নেই এটা জেনেই সে এসেছে।আজকে অফিসে রৌদ্রুপকে কয়েকবার কথা বলতে শুনেছে ও।কথার ধরণই বলে দিচ্ছে শুদ্ধতা বাসায় নেই।এই সুযোগটাই কাজে লাগালো সে।
‘কি রে।শুদ্ধতা বাসায় নেই?’
‘না।ওর ফুপির বাসায় গেছে।’
‘ওহ!আচ্ছা।’
‘তুই এখানে বস।আমি একটু ফোনটা নিয়ে আসি।’
‘কেনো তোর বেডরুমে গেলে সমস্যা হবে?’
‘না।সেটা না।তুই আসতেই পারিস।’
‘তাহলে চল।’
শিসা রৌদ্রুপের বেডরুমে এসে একদম খাটে বসে পড়লো।রৌদ্রুপ ওকে একটু অপেক্ষা করতে বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।এটাই সুযোগ এই ফাঁকে সিশা একটা গোপন ক্যামেরা ফুলদানিতে গুঁজে রাখলো।এমন ভাবে রাখলো যেনো সবকিছু ক্যামেরায় ধারণ হয়ে যায়।রৌদ্রুপ বের হয়েই দেখলো সিশা ওর লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে দেখছে।ওয়াশরুম থেকে ও যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেতো যে দরজার ওপাশে কি চলছে!
রৌদ্রুপকে বের হতে দেখে সিশা বলল,’শোন,যে জন্য এসেছি।’
‘আয় বস।বসে কথা বল।’
সিশা একবারে রৌদ্রুপের সামনে এসে বসল।তারপর বলল,’কাল কি তুই বিজি?’
‘হ্যাঁ কিছুটা।কেন?’
‘স্যার আমারে যে কাজটা দিছে।ওটা একটু তুই করে দে।আমি সাহাদের সাথে কাল সকালে বের হবো।’
‘ও আচ্ছা।বুঝেছি।যা করে দিবো।কিন্তু এইটা বলতে তুই বাসায় চলে এলি?ফোনেই বলতে পারতি।’
‘ভাবলাম তোর সাথে দেখা করেই বলি।আচ্ছা তবে আমি যাই তুই ঘুমা।’
সিশা এটা বলে আচমকাই রৌদ্রুপকে জড়িয়ে ধরে বলল,’থ্যাংকস দোস্ত।’
তারপর সরে গেলো।আচমকা হওয়ায় বাঁধা দিতে পারলো না রৌদ্রুপ।তারপর ওরা নিচে চলে এলো।তারপর হঠাৎ মনে পড়লো এমন ভান করে বলল,’আরে আমার ফোনটা তোর রুমে।’
‘আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।’এটা বলেই রৌদ্রুপ যেতে উদ্যত হলো কিন্তু সিশা তড়িঘড়ি করে আটকে দিয়ে বলল।না তুই দাড়া আমি নিয়ে আসি।এটা বলেই ও ওপরে চলে এলো।ক্যামেরাটা নিয়ে আবার নিচে এসে পড়লো।বিদায় নিয়ে চলেও গেলো।দরজা আটকে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো সে।প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।আরো আগেই ঘুমিয়ে পড়তো শুধু সিশা আসায় তা আর হয়ে ওঠে নি।
————
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে।শুদ্ধতা ফিরেছে কাল।আর আজই রৌদ্রুপ ছুটি পেলো চারদিনের।একদম খাপে খাপ।নাচতে ইচ্ছে করছে।আজ রাতেই লং ড্রাইভে যাবে আর কাল থেকে ঘোরাঘুরি শুরু।একদম ফুরফুরে মন নিয়ে রৌদ্রুপ বাসায় এলো।কিন্তু বাসায় এসেই দারোয়ানের কাছে জানতে পারলে শুদ্ধতা কোথায় যেনো গেছে।ওকে ফোন করেও পেলো না রৌদ্রুপ।তারপর চিন্তিত হয়ে আরমান সাহরীফকে ফোন দিয়ে বলল,’বাবা,শুদ্ধ তো বাসায় নিয়ে।আপনার কাছে গেছে?’
আরমান সাহরীফ থমথমে গলায় বলল,’হ্যাঁ ও আমার কাছেই আছে।’
‘কি হয়েছে ওর!হঠাৎ চলে গেলো যে।’
‘তুমি বাসায় আসো কথা আছে।’
‘আচ্ছা বাবা।’
রৌদ্রুপ ফোন রেখে দিলো।চিন্তা হচ্ছে এখন।স্বাভাবিক লাগছে না কিছু।হঠাৎ শুদ্ধতার এভাবে চলে যাওয়ার কারণ কি?আর গেলেও জানালো না কেনো?আর আরমান সাহরীফের কন্ঠ এমন শোনালো কেনো?রৌদ্রুপ বেরিয়ে পড়লো শুদ্ধতার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
ওর বাড়ি পৌঁছে গেলো একঘন্টার মধ্যেই।ড্রইং রুমের একটা সোফায় শুদ্ধতার বাবা অন্ধকার মুখ করে বসে আছেন।রৌদ্রুপ গিয়ে ওনার সামনে বসে বলল,’এনি থিং রং বাবা?শুদ্ধর কি কিছু হয়েছে?ও কোথায়?’
আরমান সাহেব পূর্ণ দৃষ্টি মেলে রৌদ্রুপের দিকে তাকিয়ে বলল,’তোমার থেকে বিশ্বাসঘাতকতা আসা করি নি।ভাবি নি তুমি এমনটা করতে পারো কিন্তু আমার ভাবা উচিত ছিলো।বোঝা দরকার ছিলো পৃথিবীতে আমার মেয়ের একমাত্র আপন আমিই।ঠকে গেলাম তোমায় বিশ্বাস করে।’হতাশাগ্রস্ত কন্ঠে বললেন আরমান সাহরীফ।
কিছু বুঝে উঠতে না পেরে কাতরতা মেশানো কন্ঠে রৌদ্রুপ বলল,’বাবা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।কি হয়েছে প্লিজ খুলে বলুন।’
আরমান সাহরীফ কিছু বলল না।শুধু একটা খাম এগিয়ে দিলো।রৌদ্রুপ খামটা হাতে নিয়ে খুলে দেখলো কিছু ছবি।রৌদ্রুপ আর সিশার।ছবিগুলো এমন ভাবে তোলা হয়েছে যে কেউ সহজেই বুঝবে ওদের মধ্যে সম্পর্ক আছে।কয়েকটা ছবি সেদিন রাতের রৌদ্রুপকে জড়িয়ে ধরার সময় আবার কয়েকটা ছবি বিয়ের আগের।এমন করে ছবি তুললো কে!রৌদ্রুপ আরমান সাহরীফের দিকে তাকিয়ে বলল,’এগুলো কে দিয়েছে আপনাকে?’
‘কে দিয়েছে জানি না।কুরিয়ার অফিস থেকে দিয়ে গেছে।’
‘বাবা বিশ্বাস করুন এমন কোনো সম্পর্কই নেই আমার ওর সাথে।আমরা শুধু ভালো বন্ধু।’
‘শুধু ছবিগুলো হলে আমি তোমায় কিছু বলতাম না কিন্তু এটা কি?’
এই বলে একটা কাগজও দিলো শুদ্ধতার বাবা।কাগজটা খুলেই সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলো রৌদ্রুপ।এটা রেজিস্ট্রি পেপার।কিন্তু এখানে বরের সাইনের জায়গায় নিজের সাইন আর বউয়ের সাইনের জায়গায় সিশার সাইন দেখে প্রচন্ড বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো রৌদ্রুপ!সাক্ষীর সাইনে দুইজন কলিগ টমস আর বিদিশার সাইন।তার ওপর রেজিস্ট্রির তারিখ আরো একবছর আগের দেওয়া।বোঝাই যাচ্ছে সাজানো নাটক।এই নাটকটা কে করতে পারে?সিশা?না ও কেনো করবে?কি লাভ ওর?কয়দিন পর তো ওর বিয়ে?রৌদ্রুপ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ।আরমান সাহরীফ নিরবতা ভেঙে বলল,’কি হলো চুপ হয়ে গেলে?তোমার কিছু বলার আছে?’
‘বললে আপনি বিশ্বাস করবেন?’একদম ঠান্ডা গলায় বলল রৌদ্রুপ।
‘তুমিই বলো এরপর কি বিশ্বাস করা যায়?’
‘আমি শুদ্ধ’র সাথে কথা বলতে চাই।’
‘ও চায় না।’
‘প্লিজ বাবা।’রৌদ্রুপ কাতর গলায় বলল।
‘যাও দেখো পারো কি না।মনে হয় না পারবে।’
রৌদ্রুপ শুদ্ধতার ঘরের সামনে গিয়ে দেখলো দরজা লাগানো।দরজায় নক করে বলল,’শুদ্ধ,দরজা খোলো।আমার কথাগুলো শোনো।’
ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।এবার আরেকটু বল প্রয়োগ করে আবারও বলল,’প্লিজ!শুদ্ধ দরজাটা খোলো।কথা শোনো।তুমি এভাবে সব ছেড়ে চলে আসতে পারো না।তোমার সবকিছু শোনা উচিত।বোঝা উচিত।’
এবার শুদ্ধতা কান্নারত কন্ঠে চিৎকার করে বলল,’কিচ্ছু শুনতে চাই না আপনি যান প্লিজ।’
‘যাবো না তুমি দরজা খোলো।’
‘বাবা,যেতে বলো ওনাকে।আমার সহ্য হচ্ছে না।’
মেয়ের কান্না কন্ঠ শুনে আরমান সাহরীফ রৌদ্রুপের পাশে এসে দাড়িয়ে বলল,’চলে যাও।আমি তোমাদের বিষয়ে কিছুই বলবো না।তবে আমার মেয়ের কান্নাও সহ্য করবো না।ও বড়ো হয়েছে ওর সিদ্ধান্ত ও নেবে।ওর বাবা এখনে বেঁচে আছে।আমার কাছে আমার মেয়ের কোনোদিনও অবহেলা হবে না।চলে যাও তুমি।আর এসো না।’
‘বাবা প্লিজ,আপনি অন্তত বুঝুন।এগুলো মিথ্যে।’
‘প্রমাণ করো।যদি প্রমাণ করতে পারো।তবে এবাড়িতে এসো।এর আগে না।’
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)