সেই আদুরে দিন পর্বঃ২০

0
868

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ২০
#Arshi_Ayat

রৌদ্রুপ ড্রইং রুমে এসে সামনাসামনি একটা সিঙ্গেল সোফায় বসল।সামনে শুদ্ধতার বান্ধবীরা।ওরা ওকে দেখে স্বভাবতই জিগ্যাসু দৃষ্টিতে শুদ্ধতার দিকে চাইলো।শুদ্ধতার চোখেমুখে দুষ্টুমির হাসি ঝিলিক দিচ্ছে।মুখের ভাবভঙ্গিই বলে দিচ্ছে সে কতোটা মজা পাচ্ছে।ও ভেবেছিলো আরো কিছুক্ষণ সাসপেন্স রাখবে কিন্তু তা আর হলো না বান্ধবীদের মধ্যে একজন বলল,’কে উনি তোর দেবর নাকি?’

শুদ্ধতা তেতে উঠে বলল,’কোন দিক ওনাকে আমার দেবর মনে হয়?উনি তোদের দুলাভাই।’
শেষ কথাটা শুদ্ধতা একটু লাজুক কন্ঠেই বলল তবে ওর কথা শুনে সত্যিই সবার মুখের রং হাওয়া।এই ছেলে কি করে শুদ্ধতার বর হয়?ওর বরকে তো ওরা দেখেছে।প্রায় উত্তেজিত হয়ে একজন বলল,’কি বলছিস?দুলাভাইকে তো দেখেছি আমরা।উনি তো এমন না।’

শুদ্ধতা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,’আলাদিনের চেরাগ ঘষা দিয়ে বুইড়া থেকে জোয়ান বানায় ফেলছি।বুঝছিস!’

‘হয়েছে!বেচারিরা এমনিতেই প্রচুর অবাক হয়ে গেছে এখন তুমি ওদের মাথায় আরো তালগোল পাকিয়ো না।বলে দাও।’রৌদ্রুপ হাই তুলতে তুলতে শুদ্ধতাকে বলল।

শুদ্ধতা প্রথম থেকে সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় সবটা বলল ওদের।প্রথম থেকেই সবাই উৎসুক হয়ে শুদ্ধতার কথা গিলছিলো সব শুনে প্রায় সবাই রৌদ্রুপের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।বান্ধবীদের মধ্যে একজন খোঁচা মেরে বলল,’বাঃ রে শুদ্ধতা তোর কপাল এতো ভালো।এমন একটা ছেলে পেয়েছিস তা নাহলে তোর সাথে তো কেউই মিশতে চাইতো না।’

খোঁচাটা স্পষ্ট টের পেয়ে শুদ্ধতার চোখে জল চলে এলে তবে কেউ বুঝতে না পারলেও রৌদ্রুপ বুঝতে পারলে তাই নিজে উঠে ওকে সোফায় বসিয়ে পেছন থেকে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,’একটু আগে একজন বললেন না ওর কপাল ভালো আমার মতো কাউকে পেয়েছে।একচুয়েলি কপাল আমার ভালো আনফরচুনেটলি আপনাদেরও ভালো।আমার কপাল ভালো হওয়ার কারণ হলো ওর মতে পিউর হার্টের একজন মানুষ পেয়েছি আমি যে আমাকে বোঝে।আর আপনাদের কপাল ভালো আপনারা ওর মতো একজনের বান্ধবী যে কি না খোঁচার যোগ্য জবাব থাকতেও চুপচাপ রইলো কারণ সে চায় না বান্ধবীদের মধ্যে মনোমালিন্য হোক কিন্তু আমার তো সহ্য হলো না ওর চোখের পানি।তাই সামান্য কিছু বললাম।’

কথাটা শেষ করেই রৌদ্রুপ ওপরে চলে গেলো।শুদ্ধতা একবার ওর দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন হাসলো।হাসির বিনিময়ে হাসিও পেয়ে গেলো।

রৌদ্রুপের কথাগুলোর পর আড্ডা আর দীর্ঘস্থায়ী হয় নি।ওর এক এক সবাই চলে গেছে।ওরা চলে যাওয়ার পর ঘরে এসে দেখলো রাজা সাহেব খাটের ওপর হাত ছড়িয়ে শুয়ে আছে।কাছে গিয়ে দেখলো ঘুমিয়ে পড়েছে।শুদ্ধতা শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
———————-
পার্টি থেকে মাত্রই ফিরেছে ওরা।রৌদ্রুপ ফ্রেশ হতে গেছে আর শুদ্ধতা ব্যবহৃত অর্নামেন্টসগুলো খুলে রাখছে।আজ কালো রঙের সিফন জর্জেটের একটা শাড়ি পরেছিলো ওর সাথে মিল রেখে রৌদ্রুপও কালো স্যুট পরলো।দু’জনকেই বেশ মানিয়েছিলো।অনুষ্ঠানে পৌঁছে আনঅফিশিয়ালি অনেকের সাথেই শুদ্ধতার পরিচয় হয়ে গিয়েছে পরে যখন অফিশিয়ালি রৌদ্রুপ বলল তখনও অনেকে এসে আলাপ করলো তারমধ্যে মেয়ে কলিগরা বেশি।তাদের মধ্যে কারো কারো চোখে হিংসাও উঁকি দিচ্ছিলো যদিও শুদ্ধতার এসব দেখে বেশ মজা লাগছিলো কারণ যে মানুষটাকে সবাই চায় সেই মানুষটা শুধুই তার।তবে একটা জিনিস নজরে আসলো শুদ্ধতার ওই যে ওইদিন বাসায় যে মেয়েটা এসে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলেছিলো ওই মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না।ও কি আসে নি!নাকি!রৌদ্রুপকে একবার জিগ্যেস করবে ভেবেও করা হলো না যদি ওর খারাপ লাগে ভাবে ওকে সন্দেহ করছে কি না!তাই চেপে গেলো শুদ্ধতা।
ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে রৌদ্রুপ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে শুদ্ধতাকে মুচকি হাসতে দেখে বলল,’প্রেমে পড়লে?’

‘কার?’অবাক হয়ে বলল শুদ্ধতা।

‘আমার।’

‘জ্বি না।’শুদ্ধতা ভেংচি কেটে উত্তর দিলো।

‘তাহলে মুচকি হাসছো যে!জানো তো মুচকি হাসি প্রেমে পড়ার লক্ষ্মণ।’

‘ও!তাই নাকি?’একটু টেনে টেনে বলল শুদ্ধতা।রৌদ্রুপ উঠে এসে ওর ঘাড়ে থুতনি রেখে শুদ্ধতা যেভাবে বলেছিলো ঠিক একই ভাবে বলল,’হ্যাঁ!তাই।’ তারপর দুজনেই হাসতে লাগলো।পার্টি থেকে ফিরতে রাত হওয়ায় ফ্রেশ হয়ে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লো।
——————–
চোখের আড়াল হলে মনে আড়াল কথাটা সত্য নয়।কারণ আজ একসপ্তাহ ধরে একটা মানুষ ওর চোখের আড়ালেই আছে কই মনের আড়াল তো হচ্ছে না বরংচ মনটা বারবারই অশান্ত হয়ে পড়ছে!চোখদুটো তৃষ্ণায় ধুঁকছে!মন চাচ্ছে ছুটে চলে যেতে।এখানে মস্তিষ্কের নীতিবাক্যও কানে যাচ্ছে না।হ-য-ব-র-ল অবস্থা।এক সপ্তাহেরই ছুটি ছিলো আজ ফিরতে হবে।তবে যেদিনই বান্দরবান খালার বাড়ি এসেছিলো সেদিনই মনে মনে একসপ্তাহ গুনে নিয়েছিলো।এই একটা সপ্তাহে ওকে ছাড়া মনে হচ্ছিলো যেনো অনেকগুলো বছর কেটে গেছে।আর যখন ও সামনে থাকে তখন কখন রাত আর কখন দিন হয় কিছুই বোঝা যায় না।লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়ির সিটে মাথাটা এলিয়ে দিলে সিশা।

এখন সকাল নয়টা।রৌদ্রুপ একটু আগেই বেরিয়েছে।ওর বেরিয়ে যাওয়ার দশমিনিট পরই আচমকাই সিনাত এসে হাজির হয়।ওকে দেখে শুদ্ধতা অনেক খুশী হয় তবে মুখে অভিমানের ছাপ এনে বলল,’তুই আমায় ভুলে গেছিস।ফোন ধরিস না,আবার সেদিন সবাই এলো তুই কেবল আসিস নি।’

‘আচ্ছা বাবা সরি!বলছি কেনো আসি নি।আগে এক কাপ দে।’

‘আচ্ছা বস।আমি আনছি।’

শুদ্ধতা চা নিয়ে এলো।সিনাত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা তৃপ্তির সুর তুলে বলল,’দুলাভাই যে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করে আমায় বলিস নি কেনো?’

‘আমি জানলে তো বলতাম।প্রথম কয়দিনও কিছুই বলে নি।শুধু বলেছে মিশনে আছে।কাউকে কিচ্ছু বলতে না বললে বন্দুক দিয়ে খুলি উড়িয়ে দেবে।পরে অবশ্য বলেছে তবে তখন তোকে বলার মতো পরিস্থিতি ছিলো না।’

‘জানিস আমার কি হয়েছিলো?’

‘কি?’

সিনাত ওকে কিডন্যাপ করার ঘটনা আগা গোড়া সব বলল।সব শুনে শুদ্ধতা বলল,’আরে তোকে যারা কিডন্যাপ করেছিলো ওরা সব ট্যারোরিস্ট ছিলো।’

‘হ্যাঁ জানি।খবরে দেখেছি।তবে জানিস একটা সিরিয়াস বিষয় ঘটে গেছে।এই ঘটনার পর সিয়ামের ফ্যামিলি থেকে বিয়ের জন্য মানা করে দিছে।’

‘মানে কি!মানা করবে কেনো?’নড়েচড়ে বসলো শুদ্ধতা।

‘আরে কোনো মেয়ে দুইরাত বাসার বাইরে থাকলে কতো কথা ওঠে অথচ ওরা একবারও ভাবে না হয়তো ওরা যা ভাবছে সেটা নয় অন্যকিছু হয়েছে।সেইজন্যই বিয়ে ভেঙে দিয়েছে সিয়ামের পরিবার।’

‘তাহলে এখন?’

‘আব্বু,আম্মু টেনশনে পড়ে গেছে।আত্নীয় স্বজন সবাই বলাবলি করছে।না চাইতেও দোষ আমার ঘাড়েই এসে পড়ছে তবে রাহাত এসে আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে।ও বলেছে ও আমায় বিয়ে করবে।

‘কোন রাহাত?’ভ্রু কুঁচকালো শুদ্ধতা।

‘ওই যে তোর সাথে বিয়ের হওয়ার কথা ছিলো যে সে!’

‘কি বলছিস!ওর মা কিছু বলে নি?যে মহিলা আমাকে মায়ের কারণে রিজেক্ট করে দিলো সে তোকে মেনে নিলো!অদ্ভুত!’

‘হ্যাঁ।এই দেখ আংটি পরিয়ে দিয়ে গেছে।তুই যদিন দাওয়াত দিলি সেদিনই আংটি পরাতে এসেছিলো তাই আর আসতে পারি নি।’

‘ও!’ বলে শুদ্ধতা সিনাতের বাম হাতের অনামিকায় খেয়াল করলো একটা স্বর্ণের আংটি চকচক করছে।এই আংটিটাই একসময় শুদ্ধতাট হাতে ছিলো।বিয়ে ভাঙার পর বাবা বোধহয় ফিরিয়ে দিয়েছে ওদের।ওই একই আংটি আবার আরেকজনের হাতে।শুদ্ধতা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।তারপর বলল,’তুই রাজি?’

‘এছাড়া তো আর উপায় দেখছি না।আর আমার মনে হয় না রাহাত খারাপ।ও নাকি আমায় ভালোওবাসে।’

‘আচ্ছা।বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিস।মরিচীকাকে আসল ভেবে ভুল করিস না।’

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here