সেই আদুরে দিন পর্বঃ২২

0
799

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ২২
#Arshi_Ayat

রৌদ্রুপ শুদ্ধতার বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা সিশার বাসায় চলে এলো।মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে।রাগে মাথার রগগুলো দপদপ করছে।সিশার বাসায় এসে দারোয়ানের কাছে জানতে পারলো ও বাসায় নেই।কলেও পাওয়া যাচ্ছে না।নিজের অজান্তেই কয়েকটা গালি দিয়ে ফেললো রৌদ্রুপ।অন্তত সিশাকে পাওয়া গেলে শুদ্ধতাকে বোঝানো যেতো কিন্তু এখন!অফিসে আছে কি না জানার জন্য রৌদ্রুপ ফোন দিতেই একজন আরদালি ধরলো।রৌদ্রুপ ব্যস্ত কন্ঠে বলল,’মিস শারমিন সিশা কি অফিসে আছে?’

‘না স্যার ম্যাম তো অনেক আগেই বেরিয়ে গেছেন।’

‘ওহ!আচ্ছা।ধন্যবাদ।’

রৌদ্রুপ ফোনটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বাড়ি চলে গেলো।কিচ্ছু ভাল্লাগছে না!হুট করে এমনটা কেনো হবে?বাড়ি ফিরতেই দারোয়ান জিগ্যেস করলো,’স্যার,ম্যাম কোথায়?’

রৌদ্রুপ মলিন মুখে বলল,’ওর বাসায়।’বলেই চলে গেলো।দারোয়ান বুঝতে পারলো হয়তো ভেতরে ভেতরে কিছু হয়েছে।রৌদ্রুপ আসার আগে শুদ্ধতাকে ওমন হন্তদন্ত হয়ে বেরুতে দেখেই সন্দেহ হয়েছিলো আর এখন শিউর!
——————-
হাঁটুতে মুখ গুঁজে একনাগাড়ে কেঁদেই যাচ্ছে শুদ্ধতা।কিচ্ছু ভালো লাগছে না।সবে মাত্র মানুষটাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলো সে।মনের একদম কাছাকাছি বসবাস ছিলো তার।হয়তো একসময় রাজত্বই করতো কিন্তু এটা কি হলো

আরমান সাহরীফ দরজা ধাক্কা দিয়ে বললেন,’মা,আর কাদিস না।দরজা খোল।’

‘বাবা,আমার ভালো লাগছে না।’

‘আয়,আমার সাথে একটু কফি খা।অনেক কেঁদেছিস।আর কাঁদিস না।বেরিয়ে আয়।’

বাবার বারংবার অনুরোধে শুদ্ধতা চোখমুছে দরজা খুললো।বেশিক্ষণ কাঁদার ফলে লাল হয়ে আছে।আরমান সাহরীফ মেয়েকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন।মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বললেন,’যা মুখ ধুয়ে আয়।আমি রমিজকে কফি দিতে বলছি।’

শুদ্ধতা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।মুখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখটা মুছে আয়নায় তাকাতেই দেখলো বেহায়া চোখগুলো থেকে আবারও পানি পড়ছে।কোনোমতে নিজেকে সামলে বেরিয়ে এলো শুদ্ধতা।ড্রইং টেবিলে বসে বাবার সাথে কফি খেতে লাগলো।মেয়ের শুকনো মুখেট দিকে তাকিয়ে আরমান সাহরীফ বললেন,’আমার রৌদ্রুপকে কেনো যেনো সন্দেহ হয় না।’

‘হঠাৎ তোমার এটা মনে হওয়ার কারণ কি?’শুদ্ধতা উৎসুক চোখে চেয়ে বাবাকে জিগ্যেস করলো।

‘জানি না,কিন্তু কেনো যেনো ওকে ভালো মনে হয় আমার।ও এই কাজ করতে পারে ভাবতে পারি না।’আরমান সাহরীফ হতাশ গলায় বললেন।

‘আমরা অনেক কিছুই ভাবতে পারি না কিন্তু পরিস্থিতি ভাবতে বাধ্য করে।আমিও তো মানুষটা একটু একটু করে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম কিন্তু এটা আশা করি নি তার কাছে।’ভেজা গলায় বলল শুদ্ধতা।আবারও চোখে জল চলে আসছে তার।
—————–
‘হ্যালো,বিদিশা বলছো?’

‘হ্যাঁ রৌদ্রুপ বলো।কি খবর?’

‘তুমি একটু ইমিডিয়েট দেখা করতে পারবে আমার সাথে?’

‘কেনো?কোনো সমস্যা?’

‘হ্যাঁ।বিরাট বড় সমস্যা।তুমি দেখা করতে পারবে?’

‘হ্যাঁ পারবো।কোথায় আসবো বলো?’

‘মোড়ের কফিশপটায় আসো।আমিও আসছি।’

‘আচ্ছা আসছি।’
রৌদ্রুপ ফোন রেখে বেরিয়ে গেলো।এতক্ষণ সিশাকে বহুবার কল দিয়েছে কিন্তু ফোন বন্ধ।আর টমস ইউ এস গেছে আজকের ফ্লাইটে।ওকে কন্ট্রাক্ট করা এখন সম্ভব নয়।তাই বিদিশাকেই কল করতে হলো।

দ্রুত কফিশপে এসে পৌঁছালো রৌদ্রুপ।ওর পৌঁছানোর মিনিট পাঁচেক বাদেই বিদিশাকেও দেখা গেলো।রৌদ্রুপের সামনের চেয়ারটায় বসতে বসতে জিগ্যেস করলো,’কি অবস্থা?এতো আর্জেন্ট ডাকলে কেনো?’

‘আচ্ছা সিশা কোথায় বলতে পারো?’

‘না আজ তো কথা হয় নি আমার সাথে।’

রৌদ্রুপ এবার ফেক রেজিস্ট্রি পেপারটা বিদিশার সামনে ধরে বলল,’দেখো তো!দ্বিতীয় সাক্ষীর সাইনে এটা তোমার সাইন কি না?’

‘হ্যাঁ।এটা তো আমারই সাইন।’

রৌদ্রুপ চোখ বড় বড় করে বলল,’কি বলছো!বিদিশা।এই সাইন কি তুমি করেছো?’

‘আশ্চর্য কথাবার্তা রৌদ্রুপ।এটা আমারই সাইন।’

‘কি করে হতে পারে?মিথ্যা বলছো কেনো?’

‘মিথ্যা বলছি না।একবছর আগে যখন তোমার সাথে সিশার বিয়ে হলো তখন তো আমি আর টমসই সাক্ষী হলাম।ভুলে গেলে?’

রৌদ্রুপ দুইহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলল,’কান্ট বিলিভ!আমি বিয়ে করেছি আর আমারই মনে নেই?এটা হতে পারে না।প্লিজ!বিদিশা সত্যিটা বলো।এটার জন্য শুদ্ধ আমাকে ভুল বুঝছে।’

‘এটাই সত্যি।তুমি মানো আর না মানো।’এটা বলেই বিদিশা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো।তারপর গটগট করে হেঁটে চলে গেলো।রৌদ্রুপ স্তব্ধ!আশ্চর্য!আসলেই সিশাকে বিয়ে করেছে সে?করলে মনে পড়ছে না কেনো?না এটা হতে পারে না।স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে পড়লো নাকি?
——————-
গভীর রাত!বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।আজ যেনো মন খারাপের পাল্লা দিয়ে শুদ্ধতার সাথে আকাশও কেঁদে যাচ্ছে।বিছানায় গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে শুদ্ধতা।আজ দুইদিন হলো সে বাইরে বের হয় না।রৌদ্রুপের কল ধরে না,মেসেজেরও রিপ্লাই দেয় না।মোটকথা পুরোপুরি এড়িয়ে যাচ্ছে।বাড়ির সামনে এসে ডাকলেও বের হয় না।একটু আগেও বারান্দার পর্দার ফাঁকে দেখেছে মানুষটা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে।তখনো বৃষ্টি শুরু হয় নি।এখন গেছে কি না কে জানে!শুদ্ধতা দেখার জন্য উঠে বারান্দায় এসে দাড়াতেই চমকে উঠলো। ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলোতে গাড়িতে হেলান দিয়ে মানুষটা দাড়িয়ে আছে।বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে আছে।নির্নিমেষ দৃষ্টিতে ওর বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে।শুদ্ধতার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো।বারান্দা থেকে ঘরে এসে ছাতা হাতে নিয়ে চুপিচুপি বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।গেট দিয়ে বের হয়ে রাস্তায় চলে এলো।রাস্তার এপাশে সে আর ওই পাশে রৌদ্রুপ।গোটা দুইটাদিন পর শুদ্ধতাকে দেখছে রৌদ্রুপ।ছাতাটা মেলে রৌদ্রুপের কাছে গিয়ে ওর মাথার ওপর ধরলো।বলল,’বাসায় চলে যান।অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’

রৌদ্রুপ কিছু বলল না।শীতল দৃষ্টিতে পলকহীন তাকিয়ে রইলো।শুদ্ধতা আবারও বলল,’ছাতাটা ধরুন।প্লিজ চলে যান।’

রৌদ্রুপ শক্ত করে ধরলো তবে ছাতাটা নয় প্রেয়সীর হাত।ছাতাটা অন্যহাতে বন্ধকরে দিলো।এবার উদ্দাম বৃষ্টিতে ভিজছে দুজনই।ভেজা হাতে রৌদ্রুপ শুদ্ধতার কটিদেশ ছুয়ে দিলো।কেঁপে উঠলো শুদ্ধতা।কিছুটা জোরপূর্বক শুদ্ধতাকে গাড়িতে তুলে নিলো সে।নিজের বসলো।তারপর কঠিন মুখশ্রী ধরে রেখে সর্বচ্চো স্প্রিডে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।শুদ্ধতা আতংকে নীল হয়ে গেলো।কাপা কন্ঠে বলল,’প্লিজ,আস্তে চালান।এক্সিডেন্ট হবে।’

রৌদ্রুপ কোনো কথাই শুনছে না।গাড়ির গতি হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।শুদ্ধতার আর্তনাদ যেনো কানে শুনছে না সে।একঘন্টার রাস্তা পঁচিশ মিনিট শেষ করে বাসার সামনে এসে পৌঁছে শুদ্ধতাকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।বেডরুমে নিয়ে গিয়ে খাটের ওপর বসিয়ে দিয়ে দরজাটা আটকে ফেললো।তারপর একহাত দিয়ে শুদ্ধতার কাছে এসে ওর দু’টো হাত চেপে ধরে আরেক হাতে মুখটা উঠিয়ে ধরলো।বলল,’চলে যেতে চাস আমার কাছ থেকে?ডিভোর্স চাস?শুনে রাখ জীবনেও দেবো না।তুইও দিতে পারবি না।আচ্ছা এতো পাষাণ হলি কিভাবে তুই?এই দুইটা দিন একবারও খোঁজ খবর নিলি না।আমি যে চাতকের মতো তোকে কল দিয়েছি,মেসেজ করেছি,বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করেছি।দেখেও কেনো আসলি না?কেনো?এতোটাই ঘৃণা করিস?বল।’রৌদ্রুপ উত্তেজিত হয়ে একের পর এক কথা বলে যেতে লাগলো।আর শুদ্ধতা নিশ্চুপ হয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়লে শুদ্ধতার মুখে।একনাগাড়ে কথা বলে ক্লান্ত হয়ে পাশেই বসে পড়লো রৌদ্রুপ।কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,’কাপড় পাল্টে নাও।’

বিনাবাক্যে উঠে গিয়ে কাপড় পাল্টে নিলো শুদ্ধতা।তারপর রৌদ্রুপও পাল্টে ফেললো।ও বের হতে হতে শুদ্ধতা।বেডশিট পাল্টে ফেললো।আর মেঝেটাও মুছে ফেললো।রৌদ্রুপ বের হতেই খাটের এক কোণে চুপটি মেরে বসে রইলো নিচের দিকে চেয়ে।

চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here