সেই আদুরে দিন পর্বঃ১৯

0
978

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ১৯
#Arshi_Ayat

রাতের খাওয়া শেষে রৌদ্রুপ ল্যাপটপে কাজ করছিলো আর শুদ্ধতা বাবার ঘরে গেছে তাকে ঔষধ দিতে।ঔষধ খেয়ে আরমান সাহেব নরম কন্ঠে মেয়েকে ডেকে বললেন,’শোন মা,তোকে কিছু বলবো।’

‘হ্যাঁ বাবা বলো।’শুদ্ধতা উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল।

‘রৌদ্রুপ ছেলেটার ত্রিকুলে কেউ নেই।খুব একা ও।ছোটোবেলা থেকে কারো ভালোবাসা পায় নি।ছেলেটা ভেতরে ভেতরে ভালোবাসার কাঙাল।ওকে ওর মতো করে মানিয়ে নিস।ও তোকে প্রচন্ড ভালোবাসে।কষ্ট দিস না কখনো ওকে।’

শুদ্ধতা প্রসন্ন হেসে বলল,’তুমি চিন্তা করো না বাবা।আমি ওনার খেয়াল রাখবো।’

আরমান সাহরীফ সন্তুষ্টির হাসি দিয়ে বলল,’আচ্ছা ঘরে যা।অনেক রাত হয়ে গেছে।’

‘আচ্ছা বাবা।তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।আমি আসি।’
শুদ্ধতা রুমের লাইট অফ করে চলে এলো নিজের ঘরে।রৌদ্রুপ বিছানায় বালিশের সাথে হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।শুদ্ধতাকে ঘরে ঢুকতে দেখে স্বভাবসুলভ একটা হাসি দিয়ে আবারও কাজে মন দিলো।শুদ্ধতা ওর পাশে এসে বসলো।মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো কিন্তু রৌদ্রুপ তাকালো না শুদ্ধতার দিকে।এবার বেশ বিরক্ত হলো সে।বিছানা থেকে নেমে দাড়াতেই শাড়ির আঁচলে টান খেলো।পিছন ফিরে দেখলো রৌদ্রুপ একহাতে ওর শাড়ির আঁচল ধরে রেখেছে আরেকহাতে টাইপ করছে।চোখ এখনো ল্যাপটপেই।শুদ্ধতা আঁচল ধরে টানাটানি করেও লাভ হলো না যেতে হলে শাড়িটা ছাড়াই যেতে হবে।শুদ্ধতা ক্রুর দৃষ্টিতে রৌদ্রুপের দিকে চেয়ে বলল,’আমার আঁচল ছাড়ুন।’

কাজ হলো না কোনো।আগের মতোই একহাতে টাইপ করছে আর অন্যহাতে আঁচল ধরে রেখেছে।প্রচন্ড রাগ লাগছে শুদ্ধতার।ধরবেও না ছাড়বেও না।মুখ গোজ করে দাড়িয়ে রইলো শুদ্ধতা।রৌদ্রুপ মেইলটা সেন্ড করে ল্যাপটপ’টা অফ করে রেখে দিলো।তারপর শুদ্ধতার দিকে পূর্ণদৃষ্টি মেলে চেয়ে বলল,’কি হয়েছে বলো?’

‘আপনি আমার আঁচল ছাড়ুন।’

‘ছাড়বো তবে প্রমিস করো ছাড়া পেলে দৌড় দিবে না।’

‘আচ্ছা দিবো না।’

রৌদ্রুপ ছাড়লো।দৌড় দেওয়ার প্রবল একটা ইচ্ছা থাকলেও কথামতো দৌড় দিলো না শুদ্ধতা।দাড়িয়ে রইলো অন্যদিকে চেয়ে।রৌদ্রুপ বলল,’বসো।’

শুদ্ধতা বসলো।ওর হাতের ওপর হাত রেখে রৌদ্রুপ বলল,’রাগ কেনো?’

‘আমি সেই কখন থেকে তাকিয়ে ছিলাম আপনার দিকে আর আপনি একটুর জন্যেও তাকান নি আমার দিকে।আমার সতীন ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।’

শুদ্ধতার কথা শুনে রৌদ্রুপ হেসে ফেললো।তারপর তার আদুরী,অভিমানী বউটাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,’তুমি কি জেলাস!তোমার দিকে তাকাইনি বলে?’

‘অবশ্যই!আপনি আমি ছাড়া অন্যকারো দিকে তাকালেই আমি জেলাস হবো এটা স্বাভাবিক নয় কি?’

‘হ্যাঁ স্বাভাবিক।তবে আমার বউটা কি জানে সে যতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো ততক্ষণ আমি টাইপ করতে পারি নি ট্যারা চোখে চেয়ে তাকেই দেখেছি।এ থেকে কি প্রমাণিত হয় জানো?’

‘কি?’

‘এই যে পৃথিবীতে তোমার চেয়ে বেশি ইম্পোর্টেন্ট আমার কাছে কিছুই নেই কিন্তু এই যে আমার সুন্দরী বউ আপনি বোধহয় জানেন না আমি একটা কাজ কতো মনোযোগ দিয়ে করি।যখন কোনো কাজ করি তখন সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে কাজটার প্রতি।সেইজন্যই আমার কাজগুলো পারফেক্ট হয়।ধরো তুমি যখন আসলে তখন আমি কাজটা ফেলে রেখে তোমার প্রতি মনোযোগ দিলাম কিন্তু আমার মনোযোগ তোমার প্রতি পুরোপুরি বসবে না।আমার ফেলে রাখা কাজটা আমাকে খোঁচাবে ফলে আমি অমনোযোগী স্বামী হবো স্বভাবতই তুমি বলবে আমার স্বামী আমার দিকে কোনো মনোযোগই দেয় না।এরপর তুমি আমাকে সন্দেহ শুরু করবে।এখন বলো কাজ ফেলে রাখা ভালো ছিলো নাকি না শেষ করে আসা ভালো ছিলো?’

শুদ্ধতা নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,’শেষ করা।’

রৌদ্রুপ শুদ্ধতার চিবুক স্পর্শ করে বলল,’হয়েছে আর অনুতপ্ত হতে হবে না তবে এখন আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ আমার বউয়ের প্রতি।দুনিয়া উচ্ছন্নে যাক।তাই না বউ?’

রৌদ্রুপের চোখেমুখে দুষ্টুমি খেলা করছে।বুঝতে পেরে শুদ্ধতা বলল,’চলুন ঘুমিয়ে পড়ি।অনেক রাত হয়ে গেছে।’

‘প্রত্যেকদিনই তো ঘুমাই।আজকে ঘুমাবো না।’

শুদ্ধতা বুঝতে পেরেও বলল,’তো আজকে কি করবো?’

রৌদ্রুপ কিছু বলল না।বেডসাইডের লাইট অফ করে দিয়ে শুদ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে কানে কানে বলল

‘বিনিদ্র রাত্রি যাপন করবো,ভালোবাসার ঝড় তুলবো।আমার উত্তপ্ত আলিঙ্গনে তোমাকে পোড়াবো,তুমি পুড়বে,তোমার দগ্ধ তনুমন বৃষ্টি চাইবে,ওষ্ঠের ছোঁয়ার শান্ত করবো তোমার হৃদয় মন!’
——————–
সিশা কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে।শরীর,মন কোনোটাই ভালো না তার।হয়তো ঘুরে আসলে মন ভালো হবে সেই চিন্তাতেই ছুটিটা নেওয়া।তবে কলিগরা বিশেষ করে রাফি স্যারও বলেছিলো যেনো কালকের অনুষ্ঠানে থাকে।কাল ওদের তিনজনকে সম্মাননা দেওয়া হবে।কিন্তু সিশা রাজি হয় নি।কারণ ও আগেই বুঝেছে অনুষ্ঠানে রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে নিয়ে আসবে।সবার সাথে বউ বলে পরিচয় করাবে যেটা চোখের সামনে সিশা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবে না।কোনোভাবেই না!তাই তো আজই চলে যাবে।সিশা খুবই শক্ত মনের মানুষ।ওর ভেতরে কি চলে সেটা কেউই টের পায় না।এই যে ও ভেতরে ভেতরে বিরহের আগুনে দগ্ধ হচ্ছে কিন্তু ওপর থেকে মনে হচ্ছে ও বেশ আছে!না কোনো দুঃখ,না কষ্ট কিছুই নেই।অথচ ভেতরের আগুন কেউ দেখছে না,পোড়া গন্ধও কারো নাকে লাগছে না।কি অদ্ভুত তাই না!

রৌদ্রুপের ফোনে একটা মেসেজ করে চলে গেলো শহর ছেড়ে।যদিও দেখা করার ইচ্ছে ছিলো প্রবল তবুও মনকে শাসন করলো।
—————
শুদ্ধতার বান্ধবীরা এসেছে সবাই।কিন্তু সিনাত আসে নি এখনো।সিনাতকে ফোন দিলেও ওর ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে।কালও ফোন ধরে নি।তাই আসার কথাটা ম্যাসেজে বলেছিলো।দেখেছে কি না কে জানে!দেখলে তো আসার কথা।শুদ্ধতা ভেতরে ভেতরে ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু সিনাতের খবর নেই।তাই কি আর করার ওকে রেখেই সবাইকে দুপুরের খাবার দিয়ে দিলো।বান্ধবীরা খেতে খেতেই একজন বলল,’কি রে আজকে সবাইকে দাওয়াত দিলি যে!কোনো খুশীর খবর আছে নাকি?’

খুশীর খবর বলতে কি বুঝিয়েছে তা আর বুঝতে কারো বাকি নেই সবাই একযোগে হাসা শুরু করলো।শুদ্ধতা বিরক্তি দৃষ্টিতে একবার সবার দিকে তাকিয়ে বলল,’হাসো!হাসো!শুধু একবার ওকে দেখলে হাসি কই থাকবে সেটাই দেখবো।’

খাওয়া শেষ হতেই শুদ্ধতা সবাইকে বসতে বলে সে লাইব্রেরীতে গেলো কারণ ওই ঘরেই রৌদ্রুপকে সে বন্দী করে রেখেছে।যেনো সারপ্রাইজটা লন্ড ভন্ড না হয়।লাইব্রেরির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো রৌদ্রুপ সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে।শুদ্ধতা ওর কাছে গিয়ে ডেকে বলল,’উঠুন!’

ওঠার নাম নেই রৌদ্রুপের বোঝাই যাচ্ছে সে খুব আয়েশ করেই ঘুমিয়েছে।শুদ্ধতা মনে মনে বলল,’কাল আমার ঘুম উড়িয়ে নিজে এখন ঘুমাচ্ছে।চলবে না।এটা আমি হতে দিতে পারি না।’

মুখের মধ্যে পানির ছিটা দিয়ে বেচারা রৌদ্রুপকে উঠিয়ে দিলো।রৌদ্রুপ চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলো।শুদ্ধতা বলল,’চলুন নিচে।ওরা অপেক্ষা করছে।’

‘আচ্ছা দেখা করে আমি চলে আসবো।আমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।’

‘এহ!কোনো ঘুম নেই।ওদের সাথে গল্প করতে হবে।’

‘আমার না প্রচুর ঘুম পাচ্ছে শুদ্ধ।প্লিজ!’

‘কোনো প্লিজ না।আসুন।’

‘আচ্ছা চলো।’
রৌদ্রুপ মুখ গোমড়া করে উঠে শুদ্ধতার পেছন পেছন গেলো।প্রচন্ড হাসি পেলো ওর তবুও হাসলো না।এখন হাসা বারণ।কাল রাতে দুজনের কেউই ঘুমায় নি।রৌদ্রুপ ভেবেছিলো সকালে একটা জমপেশ ঘুম হবে কিন্তু কিসের কি!সকাল ছয়টায় অফিস থেকে জরুরি কল আসতেই কোনোরকম গোসলটা দিয়েই দৌড়।তবে শুদ্ধতা আট’টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা বানিয়ে বাবাকে খাইয়ে নিজে খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো।এইজন্যই এখন খারাপ লাগছে না।কিন্তু রৌদ্রুপকে জব্দ করতে পেরে বেশ লাগছে।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here