সেই আদুরে দিন পর্বঃ১৮

0
906

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat

‘কি রে!আয় ভেতরে আয়।’রৌদ্রুপ আগুন্তকঃ মেয়েটি ভেতরে আসতে আহ্বান জানালো।কিন্তু মেয়েটা ভেতরে আসার লক্ষ্মণ না দেখিয়ে বলল,’এসব কি রোদ?এই মেয়ে কে?কি বলছে?ও নাকি তোর বউ।’

রৌদ্রুপ হাসিমুখেই বলল,’হ্যাঁ!ঠিকই শুনছিস!ও ই আমার বউ।’

মেয়েটা একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শুদ্ধতাকে দেখে নিয়ে রৌদ্রুপের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,’বিয়ে করলি কবে?’

‘কাহিনি আছে।তুই ভেতরে আয় না!’

মেয়েটা ভেতরে আসলো।রৌদ্রুপ বলল,’নাস্তা করেছিস?’

‘হ্যাঁ করেই আসলাম।’

‘আচ্ছা তাহলে বস।আমি চটপট নাস্তা করেই আসছি।’

‘আচ্ছা।’
মেয়েটা ড্রইং রুমের সোফায় বসলো।শুদ্ধতা ডাইনিং টেবিলের দিকে যেতে যেতে একবার ওর দিকে তাকালো।মেয়েটাও তাকিয়ে আছে।ওর দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ক্রোধ!কিন্তু মুখে হাসি!শুদ্ধতা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।এসব মানুষ খুব খারাপ হয়।এদের মুখে মধু অন্তরে বিষ থাকে।কখন যে অন্তরের বিষটা মুখে চলে আসে আর ছোবল দিয়ে দেয় সেটা টেরও পাওয়া যায় না।

নাস্তা খেয়ে আরমান সাহরীফ নিজের ঘরে চলে গেলেন।বেশিক্ষণ বসে থাকতে নিষেধ করেছেন ডাক্তার।শুদ্ধতাও গেলো বাবাকে ঔষধ খাওয়াতে।আর রৌদ্রুপ ড্রইং রুমে চলে এলো।একটা সোফায় আয়েশ করে বসে বলল,’কি করবে ওদের এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এসেছে?’

‘না।মিটিং বসবে দশটায়।দেখিস নি?’

‘চেক করা হয় নি।’

‘ওই মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

‘ওহ!আচ্ছা।’
ওদের কথার মাঝেই শুদ্ধতা চলে এলো।শুদ্ধতা কে দেখে রৌদ্রুপ ওকে হাত টেনে পাশে বসিয়ে বলল,’ও হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড সিশা।এখন আমরা কলিগও।’

শুদ্ধতা সৌজন্যমূলক হেসে বলল,’হ্যালো আপু।’

‘হাই।’সিশাও সুন্দর ভাবেই জবাব দিলো।
তারপর রৌদ্রুপের দিকে চেয়ে বলল,’বের হবি কখন?’

‘এখনই।তুই বস আমি রেডি হয়ে আসছি।’

‘তাড়াতাড়ি আয়।’
রৌদ্রুপ সাথে শুদ্ধতাও উঠে রুমে গেলো।শুদ্ধতা মনে একটা খচখচানি ভাব কাজ করছে সিশাকে ঘিরে।মনে হচ্ছে ও মোটেও খুশী হয় নি বিয়েটাতে।রৌদ্রুপকে বিষয়টা জানানো ভালো হবে?না!জানিয়ে ফেলাই ভালো।তাই শুদ্ধতা একটু ইতস্তত করে বলল,’আচ্ছা।আপনার বান্ধবীর কি বিয়ে হয়েছে?’

শুদ্ধতার হঠাৎ এমন প্রশ্নে রৌদ্রুপ হালকা ভ্রু কুঁচকে বলল,’কেনো?’

‘না মানে এমনিই!’

‘না ও এখনো বিয়ে করে নি।ওর রিলেশন আছে।বিয়ে করবে বোধহয় কয়েকদিনের মাঝে।’

‘ওহ!’কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো শুদ্ধতা তবুও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না সে!মেয়েটা তখন ওমন করে তাকালো কেনো সেটাই খটকা লাগছে শুদ্ধতার।শুদ্ধতা রৌদ্রুপের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,’বেশু সুন্দর জামাই হলে বউয়ের শান্তি নাই।জামাই যতো সুন্দর হবে বউয়ের ব্লাড প্রেশার ততো বাড়বে।’

রৌদ্রুপ রেডি হয়ে শুদ্ধতার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,’আমি বিকেলের দিকে চলে আসবো।আর বিকেলেই আমরা বাবাকে নিয়ে আমাদের বাসায় শিফট হবো।তুমি তৈরি হয়ে থেকে।’

‘আচ্ছা।’শুদ্ধতা হাসিমুখে উত্তর দিলো।সাথে রৌদ্রুপও হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে কানেকানে বলল,’আসি জান।সাবধানে থেকো।আমি কল দিবো।’

তারপর রৌদ্রুপ আর সিশা বেরিয়ে গেলো।

মিটিং এর আগে একবার টেরোরিস্টদের দেখে আসলো রৌদ্রুপ।তারপর মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত আসলো ওদেরকে ক্রসফায়ার করা হবে।আর লাশও ফেরত দেওয়া হবে না।তারপর প্রেস ব্রিফিং করে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়।সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।সাংবাদিক আর মিডিয়া ঘিরে ধরেছে রৌদ্রুপ,সিশা ওদের।কোনোমতে ওদের থেকে বেঁচে গাড়িতে উঠে পড়লো দুজনেই।রৌদ্রুপ স্টিয়ারিং এ বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,’টমস কই রে?ওরে দেখি নাই।’

‘ও বোধহয় বাসায় গেছে।’

‘ওহ!তোরে বাসার সামনে নামায় দিবো?’

‘হ্যাঁ তাই দে।’

‘আচ্ছা।’

এরপর দুজনেই নিরব হয়ে গেলো।আজকে সারাদিন কিছুতেই মন ছিলো না ওর এমনকি মিটিং এ ও না।ভেতরের খাচায় বন্দি মনটা বারবার ছটফট করে মরছিলো।কিছুতেই যেনো বিশ্বাস হচ্ছিলো না রৌদ্রুপের বিয়ে হয়েছে।ভেতর থেকে বারবার চাইছে রৌদ্রুপকে বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করতে কিন্তু পারছে না।আড়ষ্টতা ভর করেছে।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,’দোস্ত তোর বিয়ের কাহিনি বল।হুট করেই কিভাবে বিয়ে করে ফেললি?’

রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে মনে করে একটু হাসলো।তারপর বলল,’প্রথমেই সরি!কারণ তোকে বলিনি আমি শুদ্ধ’কে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।তবে হ্যাঁ বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়েছে।ওর বিয়ে অন্যকারো সাথে ঠিক হয়েছিলো বরপক্ষ ঝামেলা করায় পরে আর হয় নি।আর তখন আমাদের মিশন চলছিলো।আমি নিক্সকে ফলো করে ওর পেছনেই যাচ্ছিলাম পরে আর খেয়াল রাখতে পারি নি ও বিয়ে বাড়ির ভিড়ে হারিয়ে যায়।তাই আর কি করবো বিয়ে দেখতে আরম্ভ করি।কিন্তু বিশ্বাস কর একটু ভাবি নাই এত্তো বড়ো একটা সুযোগ আসবে আমার জন্য।এটা মিরাকল ছাড়া কিছুই না।’ রৌদ্রুপের চোখে প্রিয়জনকে পাওয়ার উচ্ছ্বাস আর সিশার বেদনার পরিহাস!

কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে হাসিমুখে বলল,’কংগ্রাচুলেশনস!তা পার্টি দিবি কবে?’

‘এই ঝামেলা চুকে যাক।তারপর সুন্দর একটা দিন দেখে পার্টি দিয়ে দিবো।’

‘ওহ!’

‘আচ্ছা।এখন বল তুই বিয়ে করবি কবে?তোর বয়ফ্রেন্ড কি বলে?’

‘এই তো রিসেন্টই করে ফেলবো।সবাই বিয়ের লাড্ডু খেয়ে ফেলেছে আমি কেনো বাদ থাকবো।’

রৌদ্রুপ হাসতে হাসতে বলল,’খেয়ে নে।খেলেও পস্তাবি না খেলেও পস্তাবি।তারচেয়ে ভালো খেয়ে পস্তা।অন্তত পেট তো ভরা থাকবে।’এটা বলেই আবারও হাসলো রৌদ্রুপ।

সিশাও মলিনমুখে হাসলো।গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরে তাকালো।মানুষ যদি কোনো এক অলৌকিক শক্তিতে জানতে পারতে তার পাশের মানুষটা তাকে কতো ভালোবাসে তাহলে হয়তো ‘ভালোবাসি’ না বলতে পারার কষ্ট’টা বুকের মধ্যে জমাট বেঁধে থাকতো না।

সিশার বয়ফ্রেন্ড আছে।বয়ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে।পারিবারিক ভাবে এরসাথেই বিয়ে ঠিক হয়েছে।ছেলেটা ওকে ভালোবাসলেও ও বাসে না।সেই প্রথম থেকেই রৌদ্রুপের প্রতি ওর মুগ্ধতা ছিলো কিন্তু গোপনে যে মনও দিয়ে ফেলেছে সেটা অনেক পরেই টের পেয়েছে তবুও বলি বলি করে বলা হয়ে ওঠে নি ভেবেছিলো হয়তো বুঝে নিবে।

সিশাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে রৌদ্রুপ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো।সিশা বাসায় একাই থাকে।বাবা মায়ের সাথে থাকলে অফিসটা দূরে হয়ে যায় তাই এখানে ফ্ল্যাট নিয়েছে।ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে দুইটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে পড়ে রইলো।এখন জেগে থাকা মানেই বিপদ।মস্তিষ্ক উত্তপ্ত হয়ে আছে।কখন কি অঘটন ঘটে যায় বলে যায় না।
————–
শুদ্ধতা তৈরি হয়েই ছিলো।রৌদ্রুপ আসার পর বাবাকে নিয়ে ওরা রওনা হলো।সন্ধ্যার সময় ওরা বাসায় পৌঁছে গেলো।দারওয়ান গেট খুলে দিতেই গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করলো।এটা সেই বাড়ি যেখান থেকে ওরা পালিয়েছিলো।এই বাড়িতে দুইটা দারোয়ান ছাড়া আর কেউ থাকে না।
————-
প্রশাসন থেকে যেমন সিদ্ধান্ত এসেছে তেমনই কাজ হয়েছে।ওদের ক্রসফায়ার করা হয়েছে।আপাতত দেশ এখন মুক্ত।এই কৃতিত্ব রৌদ্রুপ,টমস আর সিশাকে দেওয়া হয়েছে।তাই ওদের সম্মাননা প্রদান করতে দুইদিন পর একটা অনুষ্ঠানের ও আয়জন করা হয়েছে।রৌদ্রুপ ভেবেছে ওই অনুষ্ঠানে ও শুদ্ধতাকে নিয়ে যাবে।আর ওখানেই এনাউন্সমেন্ট’টা দিয়ে দিবে।তারপর বড় করে একটা পার্টি দিয়ে সব ঝামেলা শেষ করে একটা হানিমুনে ট্যুর দিবে।বিয়ের পর শান্তিতে একটা ট্যুরও দেওয়া যায় নি।তাই হয়তো শুদ্ধতারও মন খারাপ।এখন নিশ্চিত ট্যুরের কথা শুনলে ও খুশী হয়ে যাবে।তাই রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে ডেকে বলল,’তোমার জন্য একটা খুশীর খবর আছে।’

‘কী?’

‘আমরা কিছুদিন পর একটা হানিমুন ট্রিপ দিবো।’

‘ওকে।কাল আমার বান্ধবীদের দাওয়াত দিয়েছি আমি আপনাকে দেখানোর জন্য।’

‘কিহ!আমাকে দেখানোর কি আছে?’

‘আরে ওরা ভাবে আমার বর বুইড়া।তাই আচমকাই ওদের সামনে আপনাকে নিয়ে গিয়ে সবার স্ট্রোক করিয়ে দিতে চাই।’শুদ্ধতা কিছুটা ভাব নিয়েই বলল।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here