সেই আদুরে দিন পর্বঃ১৫

0
896

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat

সিনাতের ভাগ্যটা নেহাৎ ভালো ছিলো তাই ধরা পড়তে পড়তেও বেঁচে গেলো সে।আনা আর রিভান সামনের ড্রাম কয়েকটা খুঁজলেও পেছনের দিকে তেমন খোঁজে নি।একটা ফোন আসার পর তড়িঘড়ি করে তিনজনই বেরিয়ে গিয়েছিলো।ওরা যাওয়ার আরো দশমিনিট পর সিনাত যখন শিউর হলো ওরা চলে গেছে তখন ও ড্রাম থেকে বেরিয়ে চেয়ারের ওপর রাখা ব্লেড’টা হাতে নিয়ে অতি সাবধানতায় ওই গোডাউন থেকে বেরিয়ে গেলো।ওর মনে হচ্ছে জায়গাটা ও চিনে।এর আগেও বোধহয় এক/দুই বার আসা হয়েছে তবে পুরোপুরি মনে নেই।সিনাত জোর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে।রাত বাড়ছে সাথে মনের ভেতর ভয়ও বাড়ছে।রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সিনাত একটা সি এন জি দাড় করালো হাত দেখিয়ে।সি এন জি ওয়ালার দিকে তাকিয়ে বুঝলো লোকটা মধ্যবয়স্ক।তাই কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে সি এন জি তে উঠলো তবে পুরোপুরি ভয়টা এখনো কাটে নি।সিনাত সি এন জি ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’আঙ্কেল আপনি আমাকে বাসাবো নামিয়ে দিতে পারবেন?’

লোকটা কিছু না বলে শুধু মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিলো।সিনাত সি এন জির ভেতর থেকেই খেয়াল রাখতে লাগলো রাস্তাগুলোর দিকনির্দেশনা।অনেকটা সময় পার হওয়ার পর চেনা পরিচিত রাস্তা পেয়ে সিনাতের উদ্বিগ্ন ভাবটা কাটলো কিন্তু যেই সি এন জি ওয়ালা ডান দিকে না গিয়ে বাম পাশের পথ ধরলো তখনই সিনাত ঘাবড়ানো গলায় বলল,’আঙ্কেল এই রাস্তায় যাচ্ছেন কেনো?ডান দিকের রাস্তা দিয়ে যান।’

লোকটা গম্ভীর গলায় বলল,’চুপচাপ বসে থাকো।কথা বলবা না।’

সিনাত যা বোঝার বুঝে ফেললো।এখন দুইটা পথ খোলা আছে হয়তো সি এন জি থেকে লাফিয়ে পড়তে হবে নয়তো লোকটাকে ভয় দেখিয়ে সি এন জি দাড় করাতে হবে।সিনাত দ্বিতীয় পথটাই বেছে নিলো।কারণ চলন্ত সি এন জি থেকে লাফ দেওয়া মানে সাক্ষাৎ মৃত্যু!এতো তাড়াতাড়ি মরার সখ সিনাতের কোনোকালেই ছিলো না।তাই হাতের ব্লেডটা হঠাৎ সি এন জি চালকের গলার কাছে ধরে বলল,’আমার কথা মতো না চালালে একদম গলায় পোঁচ দিয়ে দিবো।’

লোকটা বোধহয় কিছুটা দমে গেছে।এটাই সুযোগ।সিনাত উত্তপ্ত কন্ঠে বলল,’তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘোরান।’

লোকটা গাড়ি ঘুরিয়ে ফেললো।সিনাত ভেতরে ভেতরে বেশ ভয় পেলেও ওপরের ভাবটা এমন যে সে একদমই ভয় পায় নি এদিকে ভয়ে তার পা কাপছে।কোনোমতে শুধু নিজেকে সামলে রেখেছে।সি এন জি যখন বাসাবো রোডে ঢুকলো তখনই সিনাত বলল,’থামান এখানে।’

লোকটা সি এন জি থামাতেই সিনাত টলমল পায়ে নামতেই মাথা চক্কর দিয়ে পড়ে গেলো।শুধু জ্ঞান হারানোর আগে সি এন জি ওয়ালার লোলুপ দৃষ্টি’টা দেখতে পেয়েছিলো।
——————-
‘জানো তোমাকে আমি কতবছর ধরে ফলো করি।’রৌদ্রুপ শুদ্ধতার মাথায় তেল দিতে দিতে বলল।

শুদ্ধতা অবাক হয়ে বলল,’আপনি আমাকে ফলো করতেন?’

‘হ্যাঁ।তুমি সারাদিন কি করেছো না করেছো সবকিছুর খবরই আমি রাখতাম।’

‘সত্যি?কতোবছর ধরে ফলো করেন?’শুদ্ধতা উৎসাহ নিয়ে জিগ্যেস করলো।

‘প্রায় চারবছর।যখন তুমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়তে তখন থেকে।তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম তোমাদের ভার্সিটির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে যে অনুষ্ঠানটা হয়েছিলো সেখানে।ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আসায় নিরাপত্তার জন্য আমাদের একটা টিম পাঠানো হয়।তখন আমি সদ্য জয়েন করেছি।এইসব জায়গায় জুনিয়রদেরই পাঠানো হয়।তো ওই অনুষ্ঠানে তুমি কাকে যেনো খুঁজছিলে।খুঁজতে খুঁজতেই হঠাৎ আমাদের ধাক্কা লাগলো।তুমি জাস্ট না দেখেই সরি বলে শাড়ির আঁচল উড়িয়ে চলে গেলে আর আমি শুধু হা করে তাকিয়ে রইলাম।বিশ্বাস করো পুরো অনুষ্ঠানে আমি ডিউটি রেখে শুধু তোমার পিছনেই ঘুরেছি।কিন্তু তুমি তো তুমিই একবারও খেয়াল করো নি।’

শুদ্ধতা হাসতে হাসতে বলল,’আহারে বেচারা আমার কাছে পাত্তা পায় নি।’

রৌদ্রুপ ঠোঁট বাকিয়ে বলল,’সমস্যা নাই এখন সারাজীবনের জন্য পাত্তা পেয়ে গেলাম।’

‘আচ্ছা আপনি আমাকে বলেন নি কেনো?’

‘তোমার হাতের গরম গরম চড় কে খেতে চায় বলো?তোমার ভার্সিটির রেকর্ড শুনে আমি শিহরিত!পুলকিত!আনন্দিত!উচ্ছ্বাসিত!আহা!তুমি থাপ্পড়ে হাফ সেঞ্চুরি দিয়ে ফেলছো।এতো থাপ্পড় কেউ মারে!অবশ্য ভালোই হয়েছিলো আমার এক্সট্রা কোনো ছেলেকে পেঁদানি দিতে হয় নি তুমিই থাপ্পড় চ্যাম্পিয়ন ছিলা।আচ্ছা এখন পর্যন্ত মোট কয়টা দিছো?’

‘ছিয়ানব্বইটা।আর চারটার জন্য সেঞ্চুরি হলো না।’

‘আহারে।থাক একদিন সুযোগ পেলে সেঞ্চুরি করে ফেলো।’

‘আর কিভাবে!ছেলেরা এখন আমাকে প্রপোজ তো দূরের কথা দেখবেও না।’

‘হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক।যাক ব্যাপার না।একদিন তোমার সেঞ্চুরির আশা পূর্ণ হবে।আমিন।’

‘সুম্মা আমিন।’
বলে দুজনই হাসলো।রৌদ্রুপ শুদ্ধতার চুল আচড়ে বিনুনি করে দিলো।
——————
সিনাতের জ্ঞান ফিরতেই দেখলো জায়গাটা অন্ধকার।এক নিমিষেই ভয় পেয়ে গেলো সে।আশেপাশে ভালোভাবে না তাকিয়েই সে গগনবিদারী চিৎকার দিলো।ওর চিৎকারে সবাই ছুটে আসলো।সিনাতের মা লাইট জেলে মেয়ের কাছে সে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,’কি হয়েছে মা?’

সিনাত মা’কে পেয়ে কেঁদে ফেললো।এখানে অনেকেই উপস্থিত আছেন।ওর বাবা,ভাই,ভাবীরা।সবাই উৎসুক চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে।দুইদিন ধরে কোথায় গেছে কেউ জানে না।নিখোঁজ হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরই ওরা থানায় ডাইরি করেছিলো।এদিকে মেয়ের শোকে তো সিনাতের মা পাগল প্রায়।গলা দিয়ে কারোই ভাত নামছিলো না।পাড়া প্রতিবেশীরা বলছিলো মেয়ে নাকি কারো সাথে পালিয়ে গেছে।দুর্নাম রটে গেছে ওর নামপ তবে সিনাতের পরিবারের মানুষরা একদমই সেসব কথায় কান দেয় নি কারণ তারা জানে সিনাত এই ধরনের মেয়েই না।এই ঘটনা জানার পর সিনাতের সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সে বিয়েতে না করে দেয়।তবে এতে সিনাতের পরিবারের আফসোস নেই শুধু তাদের মেয়ে ফিরে পেলেই হবে।সিনাত অনেক্ক্ষণ পর নিজেকে শান্ত করে বলল,’পানি খাবো।’

বড় ভাই মিরাজ পানি এগিয়ে দিলো বোনের দিকে।সিনাত পানি পান করে একটু জিরিয়ে নিতেই ওর বাবা বলল,’খারাপ লাগছে মা?’

‘না বাবা।এখন ঠিক আছি।’

‘কি হয়েছিলো তোর কোথায় গিয়েছিলি?’সিনাতের ছোট ভাই ফিরোজ জিগ্যেস করলো।

সিনাত সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় সবটা খুলে বলল পরিবারের কাছে।সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো।কারা এমনটা করতে পারে!

ওইসময় সিনাত যখন সি এন জি থেকে বেরিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো তখন সি এন জি ওয়ালা আবার ওকে সি এন জি তে তুলে নিতে গেলেই কোথা থেকে সিনাতের বড় ভাই চলে আসলো।নিজের বোনকে দেখে তাড়াতাড়ি সি এন জি ওয়ালা ঘুষি টুষি মেরে,ছোট ভাইকে ফোন দিয়ে আনালো।রাস্তায় লোকও জড়ো হয়ে গেলো।ওরা পুলিশে ফোন দিলো।পুলিশ এসে ওই সিএনজি ওয়ালাকে নিয়ে গেছে তারপর দুইভাই মিলে বোনকে বাসায় নিয়ে এসেছে।ডাক্তারকে ফোন করায় ডাক্তার বলেছিলো হয়তো অতিরিক্ত ভয় পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছে।যদি একঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফেরে তাহলে উনি আসবেন।তাই সিনাতকে ওর ঘরে শুইয়ে দিয়ে সবাই চলে গেলো।সবার ভেতরেই দুশ্চিন্তা গ্রাস করছিলো।বোনের জ্ঞান ফিরছিলো না বলে।জ্ঞান ফিরতেই যখন সিনাত চিৎকার দিলো সবাই ছুটে ওর রুমে চলে আসলো
———-
প্রভাতের আলোর সুপ্ত বিচরণ চলছে ধরণী জুড়ে।অতঃপর আরো একটা রাতের সমাপ্তির পর শুরু হলো নব্য দিনের সুচনা।

শুদ্ধতা ঘুমঘুম চোখে ফ্রেশ হতে গেলো।এখনই বের হতে হবে ওদের।এটা অবশ্য কাল রাতেই রৌদ্রুপ বলেছিলো।এখন শুধু ফ্রেশ নাস্তা করে বেরিয়ে পড়বে দুজনই।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here