সেই আদুরে দিন পর্বঃ১৬

0
936

#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ১৬
#Arshi_Ayat

নাস্তার মেন্যু তে আজকে অমলেট আর ব্রেড আছে।মূলতঃ তাড়াতাড়ি বের হতে হবে বলে বেশি কিছু করা হয় নি।আপাতত এগুলো মুখে নিয়েই বের হতে হবে।খেতে খেতে শুদ্ধতা জিগ্যেস করলো,’আচ্ছা আপনি তো আমায় অনেক আগে থেকেই ভালোবাসতেন।কিন্তু একবারও বলার প্রয়োজন মনে করেন নি কেনো?’

‘আসলে যতো দিন যাচ্ছিলো লাইফটা ক্রিটিকাল হয়ে যাচ্ছিলো।বেশিরভাগ দিনই নিজের বাড়িতেই থাকা হতো না।এই মিশন,ওই মিশন,কেস এগুলো সলভ করতে করতেই দিন শেষ।আল্টিমেটলি নিজেকেই দেওয়ার মতো সময় পেতাম না।তাই রিলেশন,কমিটমেন্ট এগুলো তে জড়াতে চাইতাম না।মনে হতো তোমাকে আমি সময় দিতে পারবো না।খুশি রাখতে পারবো না।আর আমার জন্য তোমার মন খারাপ হোক এটা আমি চাইতাম না।’

‘যদি সেদিন বিয়ে হয়ে যেতো আমার তাহলে?’

‘হয় নি তো!আর সত্যি বলতে আমি তোমার বিয়ের কথা একদিন আগে জানতে পারি।আর ওইদিন ই আমি প্যারিস থেকে ব্যাক করি।এখন ওই অবস্থায় আমি কি করবো?তুমি আমাকে চেনোও না।কেনো আমার কথা শুনবে?তোমার গায়ে হলুদও শেষ হয়ে গিয়েছিলো।তুমি খুব খুশিও ছিলে।আমি নিজ চোখে দেখেছি।তোমার মন ভাঙতে ইচ্ছে হয় নি আমার।তোমার হলুদের ভিডিও দেখে আমি দুই বোত হুইস্কি খেয়ে পড়েছিলাম।দেবদাস ফিল আসছিলো তখন।প্রেম না করেই দেবদাস।আহা!’

শুদ্ধতা খিলখিলিয়ে হাসলো।তারপর বলল,’তাহলে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন না কেনো?’

রৌদ্রুপ ঠোঁট বাকিয়ে বলল,’এখন বলছো এই কথা।কিন্তু সত্যি সত্যি করলে তুমি আমার মুখই দেখতে না।সারাজীবন ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকতে।কারণ তুমি তোমার বাবাকে অনেক ভালোবাসো।আর তুমি তোমার বাবার অসম্মান করতে চাও না বলেই বাবার কথা মতো বুড়ো একটা লোককেও বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।সেখানে আমি যদি তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম তুমি বুঝতে পারছো তোমার নজরে আমি কতোটা ছোটো হয়ে যেতাম।তুমি আমায় ঘৃণা করতে।আমি ভালোবাসার মানুষের চোখে ভালোবাসা ছাড়া ঘৃণা দেখতে চাই না।’

রৌদ্রুপের কথায় যুক্তি আছে।শুদ্ধতা মাথা নাড়লো।রৌদ্রুপ আবারও বলল,’জানো যখন তোমায় এক্স হবু বরটা চলে গেলো।তখন আমার মনে হয়েছিলো তোমাকে পাওয়ার সুযোগ আল্লাহ নিজ হাতে সুযোগ করে দিয়েছে আমাকে।ইট’স মিরাকল।আলটিমেটলি আমাদের বিয়েটা হওয়ারই ছিলো।কিন্তু আমি একটা ভয়ে ছিলাম।’

শুদ্ধতা ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,’কি ভয়?’

‘তুমি বুড়ো গেটআপ দেখে আবার বিয়ের জন্য না করে দাও কি না?’

শুদ্ধতা আবারও হাসলো।বলল,’সত্যি বলতে আপনাকে আমার প্রথমে বিয়েই করতে ইচ্ছে হয় নি।সত্যি বলতে জীবনেও চাই নি আমার জামাই বুড়ো হোক।’

রৌদ্রুপ মুচকি হেসে বলল,’তাহলে কি তামিল হিরো চেয়েছিলে নাকি?’

‘না।চেয়েছিলাম আমি আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে বুড়ো হবো।আমাদের দুজনের চুলেই একসাথে পাক ধরুক।একসাথে দাঁত পড়ুক।তারপর বুড়ো বুড়ি মিলে শেষ বিকেলের অস্তমিত সূর্যটা দেখবো।সেই ডুবন্ত সূর্যের আলোয় আমাদের পাকা চুলগুলো সোনালি দেখাবে।ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং!কিন্তু এখন আমার আগেই যদি আমার অর্ধাঙ্গিনীর চুলে পাক ধরে যায় তাহলে কিভাবে হবে?ইট’স নট ডান!

‘বাহ!তুমি এতোকিছু ভেবে রেখেছো!তবে তোমার ভাবনাটা ইউনিক।’

শুদ্ধতা ভাব নিয়ে বলল,’দেখতে হবে না কার বউ!’

রৌদ্রুপ প্রশ্রয়ের হাসি দিয়ে বলল,’হ্যাঁ। এবার চলো বের হই।’

‘আচ্ছা।চলুন।’
দারোয়ানের কাছে চাবি দিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো।নির্ধারিত ট্যাক্সিতে ওরা বসে পড়লো।ট্যাক্সি’টা চলতে শুরু করলে শুদ্ধতা বলল,’এখন কোথায় যাচ্ছি?’

‘তোমাকে নিয়ে একটা জায়গায় যাবো।একজনের সাথে দেখা করাতে।তারপর আমি অফিসিয়াল একটা কাজে যাবো।’

‘কোথায় যাবো?আর কার সাথে দেখা করাবেন?’শুদ্ধতার চোখে মুখে কৌতুহল।

‘গেলেই দেখবে।’

‘বললে কি সমস্যা?’শুদ্ধতা বক্র নয়নে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল।

‘ঠিক সমস্যা নয় তবে আমি বলতে চাই না।তুমি গিয়েই দেখবে।’

শুদ্ধতা ঠোঁট বাকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল ‘বললে কি এমন হতো?ঢং’ রৌদ্রুপ শুদ্ধতার মনে মনে বলা কথাটা না শুনতে পেলেও অনুমান করে হাসলো।

ট্যাক্সি দিয়ে ওরা চট্রগ্রাম স্টেশনে আসলো ওরা।গন্তব্য ঢাকা।দু’টো টিকিট কিনে শুদ্ধতাকে ট্রেনের বগিতে বসতে বলে রৌদ্রুপ কিছু শুকনো খাবার কেনার জন্য বাইরে গেলো।আসার সময়ও বেশি কিছু খাওয়া হয় নি।ট্রেনের বগিতে বসে শুদ্ধতা আশেপাশে খেয়াল করতে লাগলো।অনেকেই আসছে,যাচ্ছে,বসছে।বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।এরই মধ্যে রৌদ্রুপ চলে এলো আর আস্তে আস্তে ট্রেনও চলতে শুরু করলো।জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ চলন্ত ট্রেনের দিকে তাকিয়ে আছে।বিদায় দিচ্ছে প্রিয়জনদের!

রৌদ্রুপ শুদ্ধতার পাশে এসে বসে কিছু খাবারের প্যাকেট দিয়ে বলল,’খিদে পেলে খেয়ে নিও।’

শুদ্ধতা মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিয়ে ট্রেনের বাইরে চোখ রাখলো।চট্টগ্রাম শহরটা যে এতে সুন্দর!কিছুদিন থেকেই ওর মায়া পড়ে গেছে।যেতেই মন চাচ্ছে না।তবুও কিচ্ছু করার নেই।তবে মাঝেমধ্যেই আসবে রৌদ্রুপকে নিয়ে এটা ভেবেই সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠলো ওর মুখে।
——————-
বেলা দুপুরে ওরা ঢাকায় পৌঁছে গেলো।রৌদ্রুপ শুদ্ধতাকে নিয়ে উত্তরার একটা এপার্টমেন্টে পৌঁছালো।এটা মূলতঃ সিশার এপার্টমেন্ট।এই এপার্টমেন্টের চাবি রৌদ্রুপ,টমস,সিশা তিনজনের কাছেই আছে।আর ওদের মধ্যে সব ধরনের গোপন প্ল্যান এখানেই হয়।ঘরের ভেতরে আসতেই শুদ্ধতা দেখলো আরমান সাহরীফ বসে আছেন।হাতে,পায়ে,মাথায় ব্যান্ডেজ!শুদ্ধতা আতংকিত হয়ে হয়ে সবেগে দৌড়ে বাবার সামনে এসে বলল,’বাবা কি হয়েছে তোমার?’

আরমান সাহরীফ হালকা হেসে বলল,’কিছু হয় নি আমার।তুই কেমন আছিস।’

শুদ্ধতা প্রায় কান্নাই করে দিলো।পেছন থেকে রৌদ্রুপ এসে ওকে ধরে বলল,’বাবার কিছু হয় না।তুমি শান্তি হও।’

শুদ্ধতা চিল্লিয়ে বলল,’কি শান্ত হবো?আপনি দেখছেন না সারা শরীরে ব্যান্ডেজ?আমি কি শান্ত হবো?’

‘শুদ্ধ প্লিজ শান্ত হও।শোনো আমার কথা।’

‘কিচ্ছু শুনবো না আমি।আমার বাবার কি করে এমন হলো?যাওয়ার সময় ভালো মানুষ দেখে গিয়েছিলাম।এসেই এমন দেখবো ভাবতে পারি নি।এইজন্যই বোধহয় আমার মনটা কেমন করে উঠতো!’শুদ্ধতা কাঁদতে কাঁদতেই বলল।আরমান সাহরীফ মেয়েকে কাঁদতে দেখে বললেন,’এতো বিচলিত হস না পাগলী বুড়ি আমার।দেখ তোর বাবার কিছু হয় নি।প্লিজ কাদিস না।’

শুদ্ধতা চেখ মুছতে মুছতে বলল,’কি হয়েছিলো তোমার?’

‘আমি বলছি।’রৌদ্রুপ বলল।শুদ্ধতা কৌতুহলী হয়ে ওর দিকে চাইলো

একবার শুদ্ধতার বাবার দিকে চেয়ে রৌদ্রুপ বলল,’আমার পরিচয় আগে থেকে বাবা জানতো।আমি আমাদের বিয়ের পর যে পার্টি’টা হয়েছিলো তখনই বাবাকে সব বলে দি।আমাদের প্ল্যান ছিলো কাউকে টোপ বানিয়ে ওদের অবস্থান নির্ণয় করা।বাবা প্ল্যান’টা শুনে বললেন উনি সাহায্য করবেন কিন্তু আমি মানা করি কিন্তু উনি এক প্রকার জেদ ধরেই ছিলেন যে উনি আমাদের হেল্প করবেন তো প্ল্যান মোতাবেক আমরা যেদিন রাতে পালাই সেদিন আমি ইচ্ছে করে তোমার এন আই ডি কার্ডটা আমাদের বাসায় ফেলে এসেছিলাম যেনো ওরা আমাকে খুঁজতে এসে তোমার ইনফরমেশন পায় এবং বাবাকে কিডন্যাপ করে।বাবা জানতো ওনাকে কিডন্যাপ করা হবে।বাবার গলার চেইন আর পাঞ্জাবির বোতামে এ সূক্ষ্ণ দুইটা ক্যামেরা দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।তো ওরা আমাদের দোওয়া টোপ’টা গিলে ফেললো।বাবাকে তুলে নিয়ে গেলো।আমরা ভেবোছিলাম ওদের গতিবিধি জেনে আমরা বাবাকে উদ্ধার করে নিবো কিন্তু ওরা এতো হার্ড টর্চার করবে ভাবতে পারি নি।পরে সুযোগ বুঝে বাবাকে উদ্ধার করে ফেলেছিলাম আমরা।ওদের গতিবিধিও জেনে নিয়েছিলাম।আর এগুলো আমি চট্টগ্রাম বসেই নিয়ন্ত্রণ করছিলাম।আমার টিমমেট’রা আমাকে সব ইনফরমেশন দিতো আর সেই অনুযায়ী নির্দেশনা দিতাম আমি।তারপর বাবাকে উদ্ধার করে আমরা এখানে রাখলাম।এখন বাবা ভালো আছেন।’

সব শুনে শুদ্ধতার রাগে হাত পা কাঁপছে।হুট করেই সাতানব্বই নম্বর চড়টা রৌদ্রুপের গালে দিয়ে কাদতে কাদতে গটগট করে হেটে চলে গেলো।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here