সূচনায় সমাপ্তি ৬

0
186

#সূচনায়_সমাপ্তি
#পর্ব_০৬
#লেখনীতে_নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা

কিন্তু বিপত্তি ঘটল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে। রিমির জানা ছিল না যে, রুথিলাকে আবদ্ধ করে রাখা রুমটিকে গোপন ক্যামেরার আওতায় রাখা হয়েছিল। তাই তাদের সব পরিকল্পনাই প্রকাশিত হয়ে যায়। রুথিলার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেয়ার কয়েক মিনিটের মাঝে রিমির বসের আগমন ঘটে আবদ্ধ কক্ষটিতে। তাকে রিমির পাশাপাশি রুথিলাও দেখে হকচকিত হয়ে যায়। রুথিলা কখনো ভাবতেই পারেনি এমন কিছু। রুথিলা অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,

“রাফিদ ভাইয়া!”

এতটুকু বলেই সে দৌঁড়ে গিয়ে উক্ত ব্যক্তিটিকে জাপটে ধরে বলে ওঠে,

“ভাইয়া তুমি বেঁচে আছো? আমি ভাবতেই পারছি না। ভাইয়া আমাকে বাঁচাও, ওরা আমাকে মে’রে ফেলবে।”

এই কথাটা শুনে উক্ত ব্যক্তি এমন ভাবে হাসতে শুরু করল যেন রুথিলা কোনো কৌতুক বলেছে। এমন বিদঘুটে হাসির শব্দ শুনে রুথিলা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। উক্ত ব্যক্তি এক ধাক্কায় রুথিলাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিল তারপর বলল,

“ওরে বাচ্চাটা, আমার ছোট্ট রুথি। তুই এখনো ভাবছিস আমি তোকে বাঁচাতে এসেছি। ছোট মস্তিষ্কে তো কোনো বুদ্ধির লেশমাত্র নেই।”

রিমি আশ্চর্য হয়ে রুথিলা আর নিজের বস রাফিদের কথোপকথন দেখছে। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। রুথিলা কেন রাফিদকে ভাইয়া বলছে? এই প্রশ্নটা মনের মাঝে জেগে উঠল রিমির। তারপর ঘটে গেল এক অতি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। রুথিলা অবাকের শেষ সীমান্তে পৌঁছল হয়ত। রাফিদ রিমিকে এক টানে নিজের কাছে নিয়ে এল আর বলল,

“মনে হচ্ছে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। তোর জামাইরে কেমনে মা’রছি মনে নেই? তোর তো খুব মরার শখ হইছে তাইতো আমার কথার অবাধ্য হলি। নিজের পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাক।”

“ছিহ্ তুই এতটা নিকৃষ্ট! নিজের বোনকে অবধি ছাড় দিলি না নিজের লোভের সামনে। আমার আর কী করবি! আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে তো কেড়েই নিয়েছিস।” কটমটিয়ে বলে উঠল রিমি।

“মুখে দেখি খুব বুলি ফুটেছে! মনে নেই সেদিনের কথা?” রাফিদ বিদঘুটে অঙ্গ-ভঙ্গিমা করে বলল।

মুহূর্তেই রিমির মুখ বিমর্ষতায় ছেয়ে গেল। আর তা দেখে রাফিদ বিজয়ের হাসি হাসল খানিক। রুথিলা কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে যেন। তবে রাফিদের দিকে পুনরায় দৃষ্টিপাত করতেই রুথিলা আতঙ্কিত হয়ে বলল,

“এসব কী করছ তুমি? ভাইয়া দোহাই লাগে আমার সামনে এমন কিছু কোরো না।”

কিন্তু রাফিদ প্রত্যুত্তরে বলল,

“আমার কথা অমান্য করার ফল তো রিমিকে পেতেই হবে।”

এতটুকু বলেই রিমির শরীরের দিকে হাত বাড়ালো রাফিদ। রুথিলা আর রিমি চিৎকার করে উঠল। রিমি নিজেকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল তবে রাফিদের কূটকৌশলের নিকট ব্যর্থ হলো। রুথিলা আশপাশে চোখ বুলিয়ে একটা চাবুক খুঁজে পেল। এছাড়া আর কিছুই নেই সেখানে। রুথিলা অতি সন্তর্পণে তা হাতে তুলে নিল। তবে সেসবে খেয়াল নেই রাফিদের। সে তো নিজের হিংস্রতায় ব্যস্ত। রুথিলা চাবুক দিয়ে নিজের সর্বশক্তিতে আঘাত করলো তার অতি প্রিয়জন, তার ভাইজান, তার রাফিদ ভাইয়াকে। হঠাৎ আক্রমণে রাফিদ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো আর চিৎকার করে ডেকে উঠল “হিরন” বলে। রিমি রুথিলার এহেন পদক্ষেপ দেখে ঘাবড়ে গেল। নিজের প্রতি বিন্দুমাত্র দৃষ্টি না দিয়ে সে রুথিলাকে বলল,

“তুমি বেরিয়ে যাও, পালিয়ে যাও প্লিজ। এই লোক তোমাকে মেরে ফেলবে।”

কথাটা বলা মাত্রই হিরন চলে এল এবং রুথিলাকে পেছন থেকে আক্রমণ করল। রুথিলা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। কী করা উচিত আর কী নয় তা সে নির্ধারণ করতে পারছে না। হিরন রুথিলাকে বেঁধে ফেলল আষ্টেপৃষ্টে। রিমি নিজের বাঁচার আশাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানালো। সে বুঝতে পারল ঘনিয়ে আসছে তার জীবনের অন্তিম মুহূর্ত। হিরন আর রাফিদ নিজেদের ইচ্ছে মতো রিমির ওপর নির্যা’তন চালালো। রুথিলা নিজের চোখের সামনে এসব দৃশ্য সহ্য করতে পারল না। তার মুখ বাঁধা থাকলেও সে আর্তনাদ করে উঠল। নিজেদের ক্ষুধা নিবারণের পর নগ্ন রিমিকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হলো। তারপর রাফিদ যেই কাজটি করল তা দেখে জ্ঞান হারালো রুথিলা। কোনো বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষের দ্বারাই এসব কাজ সম্ভব। মৃত রিমিকে শিরচ্ছেদ করা হলো। একদম শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা হলো। কারাগারের ন্যায় আবদ্ধ কক্ষটিতে যেন রক্তগঙ্গার স্রোত বয়ে গেল। হিরন আর রাফিদ হাসলো খানিক ঘর কাঁপিয়ে। তারপর রুথিলাকে বাঁধন মুক্ত করে চলে গেল। রিমির দিখন্ডিত লাশটি নিথর পড়ে রইল।

ঘণ্টা ছয়েক পর,

দুর্গন্ধ পেয়ে রুথিলার গা গুলিয়ে উঠল। চোখ মেলে সে নিজেকে বাঁধন ছাড়া অবস্থায় আবিষ্কার করল। তারপর ভয়ংঙ্কর অতীত তার দৃষ্টিপটে ভেসে উঠল। দৃষ্টি বুলিয়ে মৃত রিমিকে দেখল সে। হৃদয়জুড়ে হাহাকার বয়ে গেল। রিমির পরিণতির জন্য নিজেকেই দায়ী করল রুথিলা। তারপর চিৎকার করে কেঁদে উঠল। কিন্তু রুথিলা কিছুতেই বুঝতে পারছে না, তার ভাইজান কী করে বদলে গেল এতটা? আর সে তো মৃত ছিল। হঠাৎই কী করে জীবিত হলো? জীবিতই থাকবে যদি এতদিন ছিল কোথায়? আকস্মিক এই রূপেই কেন দিল দেখা? আর কেনই বা এসব করছে? তবে কী ভুল কারণে রুথিলা নিজের স্বামীকে হারালো! হাজারো প্রশ্নের উৎপত্তি হলো রুথিলার মনে।

১৫.

অনলাইনের প্রতিটি মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ আকারে যেই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হচ্ছে তা প্রত্যেকটি মানুষকে শঙ্কিত করে তুলতে সক্ষম। সংবাদটির তথ্যসূত্র সম্পর্কে সন্দিহান রূপক মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার ওয়েবসাইটগুলোতে ঢু মে’রে নিশ্চিত হলো সংবাদটি মোটেও গুজব নয় শতভাগ সত্য। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে উঠল তার। এতদিন লা’শ পাওয়া যেত গহীন জঙ্গলে আর আজ তা পাওয়া গেল সরাসরি সাঙ্গু নদীতে! কী আশ্চর্য, কার এত খু’ন করার ভুত চেপেছে মাথায়? মায়াপুরী, পাহাড়িকন্যা বান্দরবান যে কার অভিশাপে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হলো! তা জানতে বড়ো ইচ্ছে জাগে রূপকের। সাগ্রত কিছু পূর্বে নতুন তথ্য দিল। আর তা হলো যেই নারীর লা’শ পাওয়া গিয়েছে তা দ্বিখণ্ডিত। তবে সেই নারী কোনো উপজাতি নন। সবগুলো নিউজ থেকে এতটুকুই জানা গেল। তবে সাগ্রত খানিকটা স্বস্তি প্রকাশ করল এই ভেবে যে বহুদিন পরে বান্দরবানে সম্পূর্ণ মৃতদেহ উদ্ধার হলো। অন্তত পরিচয় নিশ্চিত করণের সময়ের অপচয় লাঘব হবে। রূপক মোবাইলটা পকেটে পুরে চটপট তৈরি হয়ে নিল। ঘটনাস্থল প্রদর্শন করতে হবে, যদি কোনো আলামত পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে উক্ত লা’শের বেশ কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। সাগ্রত সেই সকাল থেকে মোবাইলে মুখ গুজে রয়েছে। আর আপডেট নিউজ দেখছে। যেহেতু উক্ত স্থানে সেনা সদস্যরা রয়েছে তাই সাগ্রত আর রূপক এক প্রকার বিলম্ব করেই ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।

“এবার কী কোনো ক্লু পাওয়া যাবে সাগ্রত?” মাথা চুলকে প্রশ্ন করল রূপক।

“স্যার বলতে পারছি না।” হতাশা ব্যঞ্জন স্বরে বলল সাগ্রত।

“আচ্ছা এস আই শামীমের কী খবর?”

“স্যার উনি একটা নিখোঁজ কেসে ফেসে গেছেন। সেই নিয়েই কাজ করছেন এখন। আর পাশাপাশি মৃত মারমা কিশোরীদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে চলেছেন।” সাগ্রত ক্ষিপ্রতার সাথে জবাব দিল।

“আবার কে নিখোঁজ হলো?”

“স্যার একজন মানবাধিকার কর্মী বোধহয়। ঠিক খেয়াল নেই।”

“আচ্ছা সে যাই হোক, এবার চলো। আজকে বান্দরবান সদরে রওনা হচ্ছি। অনেকদিন হলো নীলগিরিতে রয়েছি। এবার ফিরতে হবে।” রূপক কিঞ্চিৎ বিরক্তিতে উত্তর করল।

ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়ার সময় অসাবধানতার দরুন রূপকের ব্যাগ থেকে কিছু ফাইল ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। সামান্য শব্দের ঝংকার তুলে তা সাগ্রতের কানে আলোড়ন তুলে মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয়। ফাইল থেকে কাগজপত্রগুলো ছিটকে ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে। রূপক বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়, তড়িঘড়ি সেগুলোকে আড়াল করে গুছিয়ে নেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। তবে ততক্ষণে সাগ্রতের আগমন রূপকের নিকটবর্তী হয়েছে। সাগ্রতের দৃষ্টি একটা কাগজের ওপর নিবদ্ধ হয়। সে অতি কৌতূহলবশত তা হাতে তুলে নেয়, যা রূপকের দৃষ্টি এক প্রকার এড়িয়ে যায়। সাগ্রত অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,

“স্যার তিন বছর পূর্বে ইস্যু করা ডিভোর্স পেপার আপনার কাছে কী করছে?”

~ চলবে ইনশাআল্লাহ ~

[রেসপন্স করার অনুরোধ রইল। রিচেক হয়নি, ভুলক্রটি মার্জনীয়। কপি করা নিষেধ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here