সম্মোহন পর্ব ২

0
807

#সম্মোহন

পর্ব- দুই

মীরা খুব ভালো করে দেখার চেষ্টা করে সুরাইয়াকে।নামের সাথে চেহারার কোনো মিল নেই। নামটা শুনলেই মনে হবে গেঁয়ো আর বয়স্ক কেউ। কিন্তু এ তো অত্যাধুনিক এবং একদম অল্প বয়েসী একটা মেয়ে। অবশ্য সাজগোজ মানুষের বয়স বদলে দেয়। খাড়া নাক, পাতলা ঠোঁট, লম্বা কতটা বুঝা যাচ্ছে না তবে মীরার থেকে বেশি এটা বুঝা যাচ্ছে। তার উপর পরেছে হাই হিল পাম্প সু। শর্ট স্লিভ লাল রং এর টাইট টপস এর সাথে স্কার্ট, আর লাল সেডের ই রোদ চশমা পরা সুরাইয়ার গা থেকে দামী পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে হু হু করে। এই গন্ধে কী ভীষণ মাদকতা!! বব কাটের স্ট্রেইট চুলে খেলনা পুতুলের মতো লাগছে। ছিপছিপে গড়ন, স্যাম বর্ণ কিন্তু দেখলেই কেমন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। যদিও ছোট একটা স্কার্ভ দিয়ে মুখটা ঢাকার চেষ্টা করেই যাচ্ছিলো সুরাইয়া। মীরা সেই চেষ্টার মধ্যেই দেখে নিলো ওকে। মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এমন সৌন্দর্য্য দেখে হিংসে হবার কথা থাকলেও এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে মীরা ছেলে হলে নির্ঘাত প্রেমে পরে যেতো। হা করে দেখছে।

-আপনাকে এখানে দেখতে পাবো ভাবতেই পারিনি। যাকগে ভালো হয়েছে। আচ্ছা আপনারা কত নম্বর রুমে উঠেছেন?

-602.

-ওখেই, দেখা হবে। টায়ার্ড ভীষণ। পথে বমি হয়েছে। সি ইউ!!

উত্তরের অপেক্ষা না করে সুরাইয়া পাম্প সু তে খটখট আওয়াজ তুলে লাল রং এর ট্রলিটা টানতে টানতে হোটেলের ভেতর চলে গেলো। মীরা কোনো কথা ই বলতে পারলো না। অথচ কত প্রশ্ন ছিলো! হঠাৎ মাথাটা ধরে গেলো। কপালে হাত দিয়ে মীরা বসে রইলো রিসিপশনের নরম সোফায়।

-এই মীর সরি সরি সরি। আরে ফোনটা আমি বাথরুমে ফেলে রেখেছিলাম। আর পুরো রুম খুঁজছিলাম। চলো চলো!

খুব ব্যস্ত হয়ে জাবেদ এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো কথাগুলো। তারপর হাত বাড়িয়ে দেয় মীরার দিকে। মীরা জাবেদের হাতটা শক্ত করে ধরে ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই উঠে দাঁড়ায়।

সুরাইয়াকে দেখার পর মীরার মন বেশ খারাপ। বীচে গিয়ে মুটামুটি মৌণতা পালন করছে। তার উপর হাই হিল পরে হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছে বালির উপর। বারবার জুতোর হিলটা বালিতে আটকে যাচ্ছে। এমন বোকার মতো কাজ কেনো করলো মীরা? জাবেদ মীরার এই অবস্থা দেখে বললো:

-মীর জুতো খুলে আমার হাতে দাও।

মীরা মুগ্ধ হয়ে তাকায় জাবেদের দিকে। জাবেদের চিবুকটা ধরে বলে:

-এত টেক কেয়ার করোনা জাবেদ। আমি এমনিতেই অনেক বেশি অভ্যস্ত হয়ে গেছি তোমাতে।

-মীর!

-হুম।

-কি হয়েছে বলোতো? কাল থেকেই দেখছি কেমন অদ্ভুত আচরণ করছো তুমি।

-আমার মন ভালো না।

বলেই রহস্যময় হাসি দেয় মীরা। তারপর ত্রিশ টাকা প্রতি ঘন্টায় ভাড়া করে দুটো সিট। মীরা জুতো খুলে পা তুলে বসে দেখছে এখানে পর্যটকের চাইতে দুই টাকা প্রতি পিছে ছবি তুলে দেয়া ডি এস এল আর হাতে ঘুরে বেড়ানো ছেলেদের ভীড় বেশি। কিছু ছোট ছোট ছেলে মেয়ে শামুক ঝিনুকের গয়না নিয়ে ঘুর ঘুর করছে ওদের আশ পাশ দিয়ে। সূর্যটা ডুবু ডুবু করছে। আর হাজার হাজার লোক সেই অস্তমিত সূর্যকে আটকে রাখছে মুঠোফোনে। মীরা ভাবছে এইভাবে জাবেদকে হাতের মুঠোয় আটকে রাখার কোনো পথ কি নেই?

মীরা আর জাবেদ পাশাপাশি বসে থাকলেও মীরা খেয়াল করে জাবেদ খুব আনমনা। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। মীরা দুবার ডাকলেও জাবেদ খেয়াল করলো না। এমন সময় ওদের সামনে একটা বাচ্চা ছেলে আসে এক থালা শামুক ঝিনুকের তৈরি সাজসজ্জার জিনিস নিয়ে। অনেকটা চেচিয়েই বলে:

-দিদি নেন! আপনেরে খুব মানাইবো।

ছেলেটার কথায় জাবেদের ধ্যান ভঙ্গ হয়। মীরা জাবেদের দিকে তাকায়। মীরা ভেবেছিলো জাবেদ হয়তো দু একটা জিনিস হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখবে। মীরার গায়ে ধরে বলবে ” তোমাকে কি দারুণ লাগছে মীর”। এটাই তো মীরার চেনা জাবেদ। কিন্তু জাবেদ ছেলেটাকে ধমকে বললো:

-যা তো এখান থেকে! বিরক্ত করিস না।

মীরা একশো টাকার একটা নোট বের করে ছেলেটার হাতে দিয়ে বলে:

– যাও বাবা! ওর কথায় দুঃখ পেওনা।

-আপনে দেখতে যেমন সুন্দর আপনেও মানুষটাও তেমন ভালা।

জাবেদ কিছু বললো না। বরং পূর্বের মতোই সমুদ্রের দিকে মনোযোগী হলো। সূর্য তখন ডুবে গেছে। অন্ধকার নেমে এসেছে। এই সময়টা সমুদ্রে মীরার দারুন লাগে। রাত যত বাড়ে সমুদ্রের গর্জনের গভীরতা তত বাড়ে।

-জাবেদ!

-হ্যাঁ!

-কি ভাবছো?

-কিছুনা। কেনো?

-এবসেন্স লাগছে তোমাকে।

-কই না তো!

-আচ্ছা ঠিকাছে। এনজয় ইউরসেলফ।

জাবেদ কিছু বলে না। মীরা কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার ডাকে:

-ডাক্তার সাহেব!

-বলো!

-আমাদের সম্পর্কের শুরুটা তোমার মনে আছে?

-থাকবে না কেনো? খুব মনে আছে। আমি বুড়ো আর তুমি বাচ্চা দেখে এটা ভেবোনা যে আমি সব ভুলে যাই। কিন্তু মীর আমার এখন এসব কথা ভালো লাগছে না।

-ওহ্। ঠিকাছে।

মীরা পর পর দুইবার এভাবে ডাকার পর ও জাবেদকে আনমনা দেখে আর বিরক্ত করলোনা। মীরা জাবেদের কথা শুনে নিজেই তখন ভাবছে। আসলেই তো মাত্র ঊনিশ বছর বয়সী মীরা কি করে ত্রিশোর্ধ লোকটাকে এভাবে ভালোবেসে ফেললো? কি করে ঊনিশ বছর যে মা বুকে আগলে রেখেছে সেই মা কে না জানিয়ে মাত্র এক বছর ধরে চেনা জাবেদকে বিয়েও করে ফেললো? অথচ মীরার মা কত স্ট্রাগল করেছে এই মীরাকে নিয়ে। মীরার যখন চার বছর বয়স তখন মীরার মা বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। তারপর থেকে মীরার মা একা একা মীরাকে মানুষ করেছে। মীরার নানা বাড়ির দারস্ত ও হয় নি। খুলনা শহরে ছোট্ট একটা রুম ভাড়া করে একটা প্রাইভেট চাকরি করে মীরাকে নিয়ে বেঁচে থাকা তো অত সহজ ছিলো না। তারপর মীরা এস এস সি পাশ করলো। হঠাৎ করেই মীরা বড় হয়ে গেলো। কাজে কর্মে চলা ফেরায় অদ্ভুত পরিপক্কতা লক্ষ করলো মীরার মা। মনে মনে ভাবলেন এটাই বিধাতার ফয়সালা। মীরাকে আর সামলাতে হয়না। সে নিজেই নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে পারে। মীরার মা কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো।

উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করবার পর ই মীরা ঢাকায় এডমিশন টেষ্ট দেয়। মীরা মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ ও পায়। তারপর হোষ্টেলে থেকে পড়াশোনা চালাতে থাকে। হোষ্টেলে সিট পাওয়াতে মীরার মা ঠিক করেন আপাতত আর ঢাকাতে আসবেননা। ক দিন পর আরেকটু গুছিয়ে তারপর আসবেন। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার দিন কয়েক পর হঠাৎ একদিন ভীষণ জ্বর হয় মীরার আর সেইসময় ওর রুমমেট ওকে নিয়ে যায় ডাক্তার জাবেদের চেম্বারে। সেইদিন ই জাবেদের মনে ধরে যায় মীরাকে। মীরার সেই জ্বর কাতুরে মুখের মায়াতে পরে যায় জাবেদ। সেদিন কিছু না বললেও তার সপ্তাহ খানেক পর মীরাকে ফোন করে জাবেদ। আর মধুমাখা গলায় বলেন:

-মীরা! এখন আপনার শরীর কেমন? আর জ্বর এসেছিলো?

-জ্বী না। কিন্তু আপনি…?

-আমি! আমি ইয়ে মানে; মীরা আমি ডাক্তার জাবেদ। গত সপ্তাহে আপনার যখন জ্বর হলো আপনার রুমমেট..

-ও আচ্ছা আচ্ছা। স্যার আপনি? চিনতে পেরেছি। আপনি আমাকে তুমি করেই বলুন স্যার।

-মাই প্লেজার। তারপর বলো আর কোনো অসুবিধা নেই তো?

-না স্যার। একদম সুস্থ আছি।

-আচ্ছা। তারপর ও আরেকবার দেখা করিও। মানে চেকাপের জন্য আর কি। এটা সব ডাক্তাররা বলেননা আর সব পেসেন্টকেও বলেননা। তুমি তোমার রুমমেট বা পরিবারের কাউকে নিয়ে এসে চেকাপ করিয়ে যেও। এটা আমার রেসপন্সিবিলিটি।

-ঠিকাছে স্যার আমি কাল যাবো।

মীরা কিছুটা অবাক হয়েছিলো সেদিন। কোনো ডক্টর এভাবে খোঁজ নেয়? আবার ভেবেছিলো কিজানি ঢাকার ডক্টররা হয়তো নেন। মীরার মা তখন ঢাকাতে। পরের দিন মা কে নিয়েই মীরা গিয়েছিলো জাবেদের চেম্বারে। সেদিন জাবেদের আচরণে মীরা মুগ্ধ হয়ে যায়। সতেরো বছর বয়স তখন ওর। ঐ বয়সটাই এরকম। সামান্য কিছুতেই মুগ্ধতা চলে আসে। তারপর জাবেদ ই রেগুলার ফোন করতে থাকে খোঁজ খবর নেবার ছলে। তারপর ওদের মধ্যে সখ্যতা বাড়ে। মাঝে মাঝে দেখা করা এদিক সেদিক ঘুরতে যাওয়া। এভাবে ছয় মাস কেটে যায়। মীরা জাবেদকে স্যার থেকে ভাইয়া বলা শুরু করে। নিজের সুবিধা অসুবিধা বলতে শুরু করে। মন ভালো লাগলেও সেইটা জাবেদকে বলে, আর খারাপ লাগলেও যেনো সেইটা ঠিক করবার দায় জাবেদের ই। আর্থিক কোনো সাহয্য কখনো না নিলেও মানসিক ভাবে কেমন যেনো পুরোপুরি নির্ভরশীল পড়ে জাবেদের উপর। আর এক সময় মীরা বুঝতে পারে শুধু বন্ধু ভাবলে কারো প্রতি এমন অনুভুতি হবার কথা না। জাবেদের সাবলীল কথা, মীরার প্রতি যত্নশীলতা, এত ঘনিষ্ট তবুও কখনোই আপত্তিকর কোনো কথা না বলা এইসব ই জাবেদের প্রতি ভালোলাগা বাড়ায়। মীরা অস্থির থাকে। হঠাৎ একদিন জাবেদ ফোন করে ভীষণ কাঁন্না শুরু করে দেয়। মীরা আরো অস্থির হয়ে যায়।

-কি হয়েছে ভাইয়া আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো?

-মীরা আজকে আমার ভীষণ মন খারাপ। আমি কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছিনা।

-কেনো? কি হয়েছে?

-আমার জীবনের একটা কথা তোমাকে আজ বলবো। শুনবে মীরা?

-নিশ্চয় ভাইয়া বলুন।

-মীরা আমি একজনকে ভালোবাসি। খুব বেশি।

মীরা বুঝতে পারে ও যা ভাবছে তা হবে না। অথবা যা ভাবছে বলে মনে করছে সেইটা আসলে ভালোলাগা বা টিন এইজের ফ্যান্টাসি। কদিন জাবেদ খোজ না নিলেই মীরা ভুলে যাবে জাবেদকে। আর জাবেদ এই যে মীরার এত যত্ন করছে, খোঁজ রাখছে এইসব এমনি। জাবেদ হয়তো মানুষটাই এমন ভালো। মীরার বাবা নেই, ঢাকা শহরে একা থাকে তাই জাবেদ একটু সাহায্য করছে। নিজেকে সামলে নেয় মীরা। হাসিমুখে বলে:

-ভাইয়া এটা তো খুব ভালো কথা। কিন্তু তার জন্য মন কেনো খারাপ?

-মীরা ও আমাকে ফাঁকি দিয়েছে? আমার সঙ্গে বেইমানী করেছে।

-কি বলছেন?

-হুম। আজকে এক বছর পুর্ন হলো ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ও চলে যাবার পর প্রতিটা দিন আমাকে পোড়ায় ওর স্মৃতি। খুব পোড়ায়। আমি নিজেকে সামলাতে পারিনা। আর আজকে যেনো সব স্মৃতি আরো ঘিরে ধরছে। মীরা তুমি জানো ওকে আমি এত ভালোবাসতাম ও যদি বুঝতো তাহলে আমার সাথে প্রতারনা করার দায়ে নিজেই নিজেকে মেরে ফেলতো!

-ভাইয়া যে যাবার সে গেছে। আপনার ছিলো না বলেই গেছে। তার জন্য দুঃখ করে কি হবে? ফিরে তো আর পাবেননা।

-আমি তো বেশি কিছু চাইনি মীরা। শুধু ভালোবাসা চেয়েছিলাম। ওর কেনো আমার ভালোবাসা ভালো লাগলোনা? কেনো ও অন্য একটা পুরুষকে ভালোবাসলো? সুন্দরী বলে?

-না। সুন্দরী বলে না। আসলে সে আপনার যোগ্য ছিলো না। আপনার জন্য নিশ্চয় আরো ভালো কিছু আছে তাই জন্যেই উনি চলে গেছে আপনার লাইফ থেকে। জায়গাটা ফাঁকা করে দিয়েছে। দেখবেন আপনি উনার চাইতে অনেক ভালো কাউকে পাবেন!

-তোমার মতো হবে সে? তোমার চাইতে ভালো তো কেউ নেই। আমি তোমার মতো কাউকে পাবো ওর বদলে?

মীরা চমকে উঠে। এ কি বললো জাবেদ? কোনো কথা বলতে পারে না মীরা। ফোন কেটে দিয়ে রুম অন্ধকার করে শুয়ে পড়ে। সারারাত আর উঠে না। ফোন ও চেক করে না। পরেরদিন সকাল হতেই মীরাকে ওর রুমমেট এসে জানায় নিচে জাবেদ অপেক্ষা করছে। মীরা দৌঁড়ে নামে নিচে। নামতেই জাবেদ মীরার হাত ধরে বলে:

-ভেঙ্গে যাওয়া মানুষটাকে জোড়া দিতে না পারো তাই বলে আরো ভেঙ্গে দিবা? আমি বুঝতে পারছি আমার মতো ভাঙ্গা মানুষকে তুমি তোমার জীবনে জায়গা দিবে না সেইটা বলে দিলেই তো হতো। ওভাবে ফোন বন্ধ করে দিয়ে আমাকে চিন্তায় ফেললে কেনো? আজকে আসি। যেমন তোমার পাশে ছিলাম। তেমন ই থাকবো। তোমার হাসি কান্নার ভাগ আগে যেমন নিতাম তেমন ই নিবো। এ নিয়ে ভেবো না। কাল রাতের কথাগুলো ভুলে যেও।

জাবেদ আর দাঁড়ায়না। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মীরা জাবেদের হাত ধরে ফেলে। আর বলে:

-শুধু ভাগ নিলেই হবে, দিবেননা? আপনি ভাঙ্গা আমি তো আর ভাঙ্গা নই। আমি ঠিক জুড়ে নিতে পারবো।

সেই থেকে দুজনের পথ চলা শুরু। আপনি থেকে তুমিতে আসা, ভালোবাসার দিন শুরু। কিছুদিন পর জাবেদ একদিন মীরাকে বলে:

-মীর এভাবে প্রেম করা তো ঠিক না। আমরা হয়তো শারিরিক কোনো সম্পর্কে যাইনি। কিন্তু দেখো ঘুরছি, ফিরছি, হাত ধরছি, দুজন দুজনকে অনুভব করছি এসব তো ঠিক না। চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। বাসায় না হয় পরে জানাবো।

-কিন্তু তোমার বাসা থেকে মানবে? আমার বাবা নেই। মা একা..

-থামোতো ওসব আমি সামলে নিবো। আমি তো তোমার সব জেনেই বিয়ে করছি।

মীরা আর কিছু না ভেবে রাজি হয়ে যায়। আর তারপর থেকে দুজনে স্বামী স্ত্রীর মতোই একে অন্যের পাশে ছিলো। জাবেদের অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো মীরাকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরবে। সেইজন্য কত ব্যস্ততা সামাল দিয়ে তিনটা দিন ম্যানেজ করলো। মীরা ও কত পড়াশোনা রেখে এলো।

পুরোনো এইসব কথা ভাবতে ভাবতে মীরার চোখে জল আসে। জাবেদের দিকে তাকিয়ে দেখে এক ই ভাবে বসে আছে। অথচ সেইসময় জাবেদ কত আলাদা ছিলো। এই জাবেদের সাথে কোনো মিল ই নেই। মীরার ফোনে একটা মেসেজ আসে।

“ডাক্তার জাবেদ বীচে যতবার আসেন ঐ সিটটাতেই বসেন, সাথে যে ই থাকুক, এখানে বসে সে প্রতিবার ই এমন উদাস হন, মিষ্টি একটা ব্যপার”

মীরা ভয় পেয়ে আশে পাশে তাকাতে থাকে! কেউ ফলো করছে ওদের?? একটু খুঁজে ডানে তাকাতেই মীরা দেখে ওদের ঠিক পাশেই আপদমস্তক কালো পোশাকে মুড়ানো সুরাইয়া দামী ক্যামেরাতে অস্তমিত সূর্যের ছবি তুলতে খুব ব্যস্ত। এবারও একটা ছোট স্কার্ভ দিয়ে মুখটা প্রায় ঢাকা। এই সন্ধ্যেবেলাতেও এমন বড় কালো সানগ্লাস পরে আছে কেনো মেয়েটা? অদ্ভুত তো! মেসেজটা কি সুরাইয়া পাঠালো?? কিন্তু ওর হাতে তো ফোন নেই। আর সুরাইয়া যে বলেছিলো ও টায়ার্ড!! এর ই মধ্যে টায়ার্ডনেস কেটে গেলো? খটকা লাগে মীরার। কী বলতে চায় এই সুরাইয়া?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here