সন্ধ্যায় সন্ধি পর্ব ৯

0
914

#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ৯

তেজ নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে তার বিছানায়। হাতে পায়ে বেন্ডেজ। একটু আগে ডাক্তার এসে জ্বর মেপে ঔষুধ দিয়ে গেছে।তেজকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তার পরিবার চাঁদের পরিবারের সবাই।

তখন কাচের টেবিল লাথি দিয়ে পা কেটেছে তারপর রুমে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়না হাত দিয়ে ভেঙ্গেছে যার কারণে হাত পা সব কেটে রক্ত ঝড়েছে আর অতিরিক্ত রক্ত ঝরার ফলে জ্বর এসেছে।

আহানের অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছে।তার তখন ওভাবে বলা উচিৎ হয় নি।তবে তারও বা কী করার ছিলো, নিজের বোনকে এভাবে অপমানিত হতে দেখে ওর মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।

সবাই নিরবতা পালন করছে।তেজের মা এক ধারে কেঁদেই যাচ্ছে,পাশে বসে নিলীমা বেগম স্বান্তনা দিচ্ছে। তেজের আরেক পাশে চাঁদ বসে আছে সেও কান্না করছে তাকে তার ভাই ধরে রেখেছে।

এর মাঝেই তেজের দাদী জ্বলে উঠে বললেন-

“সব দোষ এ মেয়েটার,ওর জন্যই আমার নাতির এ অবস্থা। অপয়া,অলক্ষী একটা মেয়ে।
দাদী আরো কিছু বলার জন্য উদ্যত হলেই আহান থামিয়ে দিয়ে বলে-

” কার জন্য এ অবস্থা সবাই খুব ভালো করে জানে,তাই আপনি অহেতুক চেঁচামেচি না করলেন।যদি নাতিকে এতই ভালোবেসে থাকেন তো নাতির এ সময়ে আপনার এত কথা কীভাবে মুখ থেকে বের হয়?”

আহান থামতেই আহানের বাবা আহানকে ধমক লাগিয়ে দেন। তখন তেজের বাবা আমজাদ সাহেব ওনার মায়ের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন-

“আম্মা আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ করুন।আমাদের ছেলের এ অবস্থায় আমাদের উপর রহম করুন। আপনি এখন আপনার রুমে যান আম্মা। এসব নিয়ে পরে কথা হবে।”

ছেলের কথায় দমে গেলেন মনোরমা।ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে চলে গেলেন। তেজের মা সবাইকে ঘুমাতে যেতে বলল।সবাই চলে গেলেও চাঁদ যায় নি।সে তেজের সাথে বসে আছে।

_________________________
ভোর হবে হবে ভাব।চাঁদ দেখে তার খালামনি বসে বসে ঝিমাচ্ছে। সে জোড় করে খালামনিকে ঘুমাতে পাঠালো।খালামনি যাওয়ার আগে বলে গেছে তেজ উঠলেই জেনো তেজকে জোড় করে খাবার খাওয়ায়। কাল সারাদিন নাকি কিছুই খায় নি তেজ।চাঁদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালেই তেজের মা চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বিদেয় নেয়।

তেজ ঘুম থেকে উঠে পিটপিট করে তাকায় দেখে তার রমনী তার পাশেই মাথা কাত করে শুয়ে আছে।বুঝাই যাচ্ছে গভীর ঘুমে সে।আর তার হাতটা তেজের মাথায়। নিজের অজান্তেই তেজের মুখে হাসি ফুটে উঠে।সে আলগোছে চাঁদের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।

অন্য দিকে নিজের হাতে কোনো শক্তপোক্ত উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেয়ে ঘুম হালকা হয়ে যায় চাঁদের।সে পিটপিট করে চেয়ে দেখে তেজ তার হাত ধরে আছে।চাঁদ আস্তে করে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয় কিছু না বলে। তেজ চাঁদের এমন কান্ডে ভ্রু কুচকে তাকায়। চাঁদ সেটা তোয়াক্কা না করে উঠে চলে যায়। তেজ কেবল ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে। আর ভাবে এই মেয়ের আবার কী হলো এমন ফুলে আছে কেনো।পরক্ষণে কাল রাতের কথা মনে করে চাঁদের চুপচাপ থাকার কারণ বুঝতে পারে।

তেজের ভাবনার মাঝেই একটা প্লেটে করে ভাত আর তরকারি নিয়ে আসে চাঁদ।তেজ খাবার দেখে মুখ কুঁচকে ফেলে আর বলে-

“এই তুমি এত সকালে খাবার কেনো এনেছো আর তাও আবার ভাত,আমি খাবো না নিয়ে যাও।”

“আচ্ছা খাবার নিয়ে যাচ্ছি তবে আমার মুখ কেউ দেখতে পাবে না যদি এই খাবারের প্লেট খালি না হয়”

চাঁদের এমন কথায় তেজ কপাল কুঁচকে ফেলে আর ধমক দিয়েই বলে-

” হুমকি দিচ্ছিস?তোর মতন একটা পুচকি মেয়ে আমাকে এই তেজ আবরারকে হুমকি দিচ্ছে ভাবা যায়।

চাঁদ কিছুই বলে নি শুধু চুপ করে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তেজ বুঝতে পেরেছে ম্যাডাম আজ প্রচুর রেগেছে।তাই তেজ উপায় না পেয়ে বলল-

” আচ্ছা আসো খাবো আমি।তবে খাওয়াতে হবে তোমার হাত দিয়ে ”

চাঁদ নিঃশব্দে এসে তেজের পাশে বসে সুন্দর করে মেখে তেজের মুখের সামনে এক লোকমা ধরেছে কিন্তু কিছু বলে নি।তেজও চুপ করে মুখে দিয়ে ফেলছে খাবার।সাথে চাঁদের হাতে কামড় ও দিয়েছে কিন্তু চাঁদ একটা শব্দও করে নি।যতবার খাবার দিয়েছে ততবারই কামড়ে দিচ্ছে তেজ।এবারের কামড়টা একটু জোড়েই পরে গেছে কিন্তু তবুও চাঁদ কিচ্ছু বলে নি কিন্তু চোখে জল এসে পড়েছে।তেজও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু তবুও চাঁদের মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের করতে পারে নি তেজ।

চাঁদ খাবার শেষ করিয়ে হাত ধুয়ে ওষুধের পাতা থেকে একটা ট্যাবলেট নিয়ে তেজের সামনে ধরে।আর অন্য দিকে চাঁদের এমন নিরবতা তেজের সহ্য হচ্ছে না তাই চাঁদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে চাঁদকে নিজের উপর ফেলে দেয় তেজ।

চাঁদের কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে নিজের কান ধরে বলে উঠলো-

“সরি চাঁদমনি।চাঁদমনির তেজ তাকে এত সরি বলছে তাও কি এই অধম তেজকে একটু ক্ষমা করা যায় না জান? আর কখনো এত রাগ দেখাবো না সত্যি বললাম। এই যে কান ধরলাম”

চাঁদ তেজের এমন কান ধরা দেখে ফিক করে হেসে দিলো।তেজের ও শান্তি অবশেষে মেয়েটা হাসলো।
চাঁদ হাসি থামিয়ে তেজের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল-

“হেসে দিয়েছি বলে ক্ষমা করেছি তেমনটা না,আপনার এই রাগ কমান, নাহয় দেখবেন এই রাগের জন্য একদিন পস্তাতে হবে”।

চাঁদের কথায় তেজ ভ্রু কুঁচকে ফেলে আর বলে-

” আমি কী করবো আমার এত রাগ উঠে গিয়েছিল, আমি থাকতেও দাদী তোমাকে অপমান করেছে তোমার ভাই দ্বিধায় পরে গেছে আমার পরিবারে বা আমার কাছে তোমাকে দিবে কিনা,তুমি নিরাপদ কিনা।আমার রাগ উঠাটা কি স্বাভাবিক নয়? ”

-না স্বাভাবিক নয়।যে জিনিস ঠান্ডা মাথায় সমাধান করা যায় সে জিনিস কেনো রেগে করবো আর নিজের ক্ষতি করাটা কোন জায়গার সমাধান শুনি?”

-হয়েছো হয়েছে গিন্নি কম সাজ।আমার এখন ভালো লাগছে শরীর। তুই যা তোর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে ঘুম দে।আজ তো শপিং এ যাওয়ার কথা ছিলো আমাদের আকদের কিন্তু তোর ভাই বাবা কী সিদ্ধান্ত নিলো, তোরে এই অযোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দেয় কি না।” তেজ একটু পিঞ্চ মেরেই বলল।

চাঁদ খোঁচাটা বুঝতে পেরে সেও দুষ্টমির সুরে বলল –

” হ্যাঁ সেটাই তো।আমি তো আর বানের জলে ভেসে আসিনি বা আপনার দাদীর ভাষ্যমতে ফেলনা ও না তাই আমার বাবা ভাইকে একটু ভাবতেই হবে।”

চাঁদ কথাটা দুষ্টমির সুরে বললেও তেজের গায়ে লেগে যায়। রাগও উঠে খুব।সে হাতের কাছে ফুলদানি টা আছাড় মেরে ভেঙে দেয়।চাঁদ আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে থাকে কেবল।চাঁদের পায়ে গিয়ে পরে ফুলদানির ভাঙা টুকরো।কিছু ভাঙার শব্দে তেজের মা, চাচী দৌড়ে আসে।তেজ রেগে চাঁদকে বলে-

“যা আমার রুম থেকে বের হ,তোদের যেহেতু আমাকে নিয়ে এত সন্দেহ যা আমার বাসায় আসার দরকার নেই না দরকার আছে আমার বউ হওয়ার। ”

চাঁদেরও এবার ইগো তে লাগল সেও বেশ চিল্লিয়ে বলল-

“এতক্ষণ মজা করে বললেও এখন আমার সত্যিই সন্দেহ হচ্ছে আপনি ঠিক কতটা আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন। রাগ উঠলে তো নিজের মাঝেই থাকেন না আঘাত করতেও ভাবেন না কোন দিন রাগের মাথায় আমাকেই মেরে ফেলেন। এবার সত্যিই আমার ভাবা উচিত। ”

চাঁদ হনহনিয়ে চলে গেলো।তুহা খেয়াল করলো চাঁদের পা দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝড়ছে।তুহার চিৎকারে সবাই এবার খেয়াল করলো চাঁদের পা।বুঝায় যাচ্ছে বেশ ক্ষানিকটা কেটেছে।এতক্ষণে তেজেরও নজরে বিষয়টা পরেছে।সে চাঁদকে ডাক দিলেও চাঁদ তোয়াক্কা না করে কাটা পা নিয়েই চলে যাচ্ছে।তেজ এক লাফে খাট থেকে নেমে চাঁদের পিছে ছুট লাগায় সাথে ঘরের সবাই।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here