#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ৮
তেজ চাঁদের নাক, গাল স্লাইভ করতে করতে বলে,
-“আমার চাঁদমনি কি জানে তার এই সরু নাকে চিকচিক পাথরটা কত সুন্দর লাগছে?এতটা সুন্দর লাগবে জানলে অনেক আগেই আমি তোমার নাক ফোঁড়ানোর ব্যবস্থা করতাম।না এবার আর তোরে মুখ খোলা রেখে বাসার বাহিরে আনা যাবে না।এত সৌন্দর্য দেখার অধিকার কারো নেই আমি ছাড়া।”
চাঁদ লজ্জায় লাল হয়ে নিচে তাকিয়ে আছে।লোকটা লাগাম হীন কথাবার্তা বলা শুরু করলো কবে থেকে।চাঁদ লজ্জাকে সাইডে রেখে কৌতুকের সুরে বলল,,
-“আজ বোধহয় রাস্তাতেই থাকতে হবে আমার।ইশ কেনো যে আহান ভাইয়ার সাথে গেলাম না।”
চাঁদের এমন কথায় প্রথমে তেজ বোকা বনে গেলেও পরে বুঝতে পেরে ফিক করে হেসে দেয়।
অন্যদিকে চাঁদ তেজের হাসির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কি অসাধারণ লাগে তাকে হাসলে।চাঁদ নিজের অজান্তেই তার হাতটা নিয়ে তেজের গালে রাখে।
তেজ এতক্ষণ হাসলেও চাঁদের এমন কান্ডে কিছুটা অবাক হয়ে গেলেও পরে কারণ বুঝতে পেরে একটা দুষ্টমির হাসি দিয়ে বলল,,
-” কিরে গাল ধরলি যে! চুমু টুমু দেওয়ার প্ল্যান আছে নাকি?”
চাঁদ এতক্ষণে হুশে ফিরলো তাড়াতাড়ি হাতটা নামাতে গেলেই তেজ ধরে ফেলে।হাতটার উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল,
-“আরে সমস্যা নেই এই পুরো আমিটাই তো তোর।দু একটা চুমু দিতেই পারিস তবে সেটা বিয়ের পর আপাতত চোখ দিয়ে দেখে পেট ভর”। কথাটা বলেই চোখ টিপ মেরে হোহো করে হেসে উঠল তেজ।
চাঁদ আবারও মুগ্ধ হলো।লোকটা কারণে অকারণে কখনোই হাসে না।আজ বেশিই হাসছে।আর তার হাসিটাও কি অমায়িক। মনে মনে বলছে চাঁদ।
এর মাঝেই তেজের ফোন বেজে উঠে। দুজনই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তেজের মা কল দিয়েছে।তেজ কল রিসিভ করতেই ফোনের অপরপাশ থেকে তার মা বলল,
-“তেজ কোথায় তোরা?তাড়াতাড়ি আয়।তোর দাদী আসছে।সে তোদের দেখতে চায়।এমনেই রেগে আছে কেনো তাকে না জানিয়ে তোর বিয়ে চাঁদের সাথে ঠিক করেছি।তুই ছাড়া ওনাকে কেউ বুঝাতে পারবে না। তাড়াতাড়ি আয়।
তেজ একটা ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল-“আসছি আম্মু, ডোন্ট ওয়ারি”।
চাঁদ এতক্ষণ নিশ্চুপ শ্রোতা ছিলো।সে বুঝতে পেরেছে ওখানে কিছু একটা গন্ডগোল হয়েছে তাই তো খালামনি কল করেছে।তেজও কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।চাঁদ নিজের শরীর টা এলিয়ে দিলো গাড়ির সিটে।সারাদিন আজ বড্ড ধকল গিয়েছে।
_____________________________
“চাঁদ উঠো বাসায় এসে পরছি,এই চাঁদ উঠো” – এমন কয়েকবার ডাকার পর চাঁদের ঘুম ভাঙ্গলো তাকিয়ে দেখে সে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল আর এখন বাসার সামনে এসে পড়েছে তার মানে অনেকক্ষন ঘুমিয়েছে। এর মাঝেই তেজ তাড়া দিয়ে বলে-
” তাড়াতাড়ি নামো চাঁদ আজ দাদী বলেছে তোমাকেও আমার সাথে যেতে ওনার কথা আছে চলো।আর ভয় পেয়ো না আমি আছি”।
চাঁদও ভরসা পেয়ে মুচকি হাসি দিলো। গাড়ি থেকে নেমেই দু’জন এক সাথে তেজেদের বাসায় গেলো।
তেজেদের বাসায় সবাই নিরব হয়ে বসে আছে।বুঝাই যাচ্ছে কিছু ক্ষণ আগে তেজের দাদী তান্ডব করেছিলো।এখানে হাজির নেই তেজের বাবা ও চাঁদের ভাই আর বাবা।কারণ ওরা থাকলে ঝড় আরো বড়সড় হতো।
চাঁদ আর তেজ বাসায় এসেই প্রথমে দাদীকে সালাম দেয়।তেজের সালামের জবাব দিয়ে চাঁদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে –
” দাদুভাই তুমি এ মেয়েটার মাঝে কী এমন দেখেছো যে ওরেই বিয়ে করার কথা বললে? আমাদের রাহা তো ওর থেকেও বেশি সুন্দর স্টাইলিশ ওরেও তো বিয়ে করলে পারতে।”
“-আমি বাসায় বউ আনতে চাচ্ছি কোনো মডেল নয়,আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড দাদী।” দৃঢ় গলায় বলল তেজ।
“-তুমি কি বলছো দাদুভাই এখনকার ছেলেরা আধুনিক বউ চায় আর সব থেকে বড় কথা এই মেয়েটা বড্ড রোগা এমন বউ বংশ প্রদীপ জ্বালাতে পারবে না।” তেজের দাদীও মিন মিন করে বলল।
“-আমি আবারও বলছি আমি বউ আনবো অন্য কিছু না।আর কে প্রদীপ জ্বালাতে পারবে কে পারবে না সেটা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানেনা।আর ও একটু দুর্বল এটার সাথে বিয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।”
তেজ এবার রাগী স্বরে বলে উঠে চলে গেলো তার রুমে।
আর তার দাদীও তেজকে আর কিছু বলার সাহস পায় নি কারণ সবাই জানে তেজের কথার উপর কোনো কথায় সে মানবে না।দাদীর পুরোটা রাগ গিয়ে পড়লো চাঁদের উপর।চাঁদ গুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে দূরে।দাদী আক্রোশে ফেটে পড়ে চাঁদকে চিল্লিয়ে বলে উঠলোঃ
“-এই মেয়ে এই তোমার কী লজ্জা শরম নেই? নিজের খালাতো ভাইকে বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছো আর তুমি দেখো গায়ের রঙ টা কত শ্যমলা আর অন্য দিকে আমার নাতনি রাহাকে দেখো কি সুন্দর তাও আমার নাতি বুজছে না।কী যাদু করছো বলো চরিত্রের ঠিক আছে তো তোমার?”
চাঁদ এবার অপমানে মাথা নত করে ফেলল।দাদী তাকে এসব ভাবে ছিঃ।তেজের মা চাঁদকে জড়িয়ে বলল-
“মা আপনি ওরে কিচ্ছু বলবেন না।আপনার নাতিই ওরে বিয়ের কথা বলেছে।আর তেজ যদি একবার এসব শুনে তো লঙ্কা কান্ড বেঁধে যাবে।”
দাদী হুঙ্কার দিয়ে উঠলঃ
“- এখন ঘরের বউ আমাকে শিখিয়ে দেবে আমি কী বলবো,কাকে বলবো ? এই দিন আমার দেখতে হলো শেষমেশ। সব এই মেয়েটার জন্য। নিজের বাপের বাড়ির মানুষকে বাসায় আনার এত শখ তোমার বউমা?”
উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে গেছে।তুহা,হৃদি,প্রহেলিকা একসাথে ঘুটিশুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ চাঁদের হাত কেউ শক্ত করে ধরলো। চাঁদ তাকিয়ে দেখে তার ভাই আহান।কলিজা ছ্যাত করে উঠে তাহলে কী আহান সব শুনে ফেলল।যা ভেবেছিলো তাই।আহান সব শুনে ফেলেছে।সে তার বোনের হাত শক্ত করে ধরে তেজের দাদী মনোরমার দিকে ফিরে চেঁচিয়ে বলল,
“-আপনার সাহস কী করে হয় আমার বোনের উপর চেঁচামেচি করার।ভুলে যাবেন না আপনাদের বাড়ির ছেলেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে,, আর সরি টু ছে খালামনি তোমাদের আগে পারিবারিক ভাবে আলোচনা করে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া উচিত ছিলো।”
আহানের চিৎকারে পাশের রুম থেকে তেজের বাবা চাচা হাজির হলো তেজ ও এসেছে সাথে চাঁদের বাবাও। সবাই ঘটনা বুঝে আহাম্মক হয়ে গেছে।তেজের বাবা নিজের মায়ের কর্মকান্ডে মাথা নত করে ফেলেছে।চাঁদের বাবাও রেগে গেছে।
এর মাঝেই আহান তেজকে বললঃ
“-বিয়ের আগেই ভাইয়া আপনার বাড়িতে আমার বোন অপমানিত হচ্ছে বিয়ের পর যে কী হবে ভেবেই আমার শরীর হীম হয়ে আসছে।আমার বোন এতটা ফেলা যায় নি যে এমন ঘরে বিয়ে দিতে হবে যেখানে বিয়ের আগে থেকে তাকে অপমানিত হতে হচ্ছে।”
এই বলেই হনহন করে বোনের হাত ধরে চলে গেছে আহান।চাঁদের বাবাও গম্ভীর কন্ঠে নীলিমা বেগম আর প্রহেলিকাকে আসতে বলে চলে গেছে।তার পিছু পিছু নীলিমা বেগম আর প্রহেলিকাও বের হয়ে গেছে।পেছন থেকে তেজের বাবা আমজাদ সাহেব দু একবার ডাকলেও তারা কেউ ফিরে চায়নি।এদিকে তেজের মাও শ্বাশুড়ির কথায় অপমানিত হয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছে।তাকে স্বান্তনা দিচ্ছে তুহা আর হৃদির মা।
তেজ কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে কাঁচের ছোট টেবিলটা পা দিয়ে লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে,হাতের পাশে থাকা ফুলদানী টাও ভেঙে ফেলে। আর চিল্লিয়ে বলে,
“-আমি না করার পরও ওরে অপমান করার সাহস কোথায় থেকে আসছে দাদী? আপনার কারণে শুধু মাত্র আপনার কারণে আমার ভালোবাসার মানুষটার পরিবার তাকে আমার হাতে তুলে দিতে দ্বিধা করছে।এটাও আমার মানতে হবে।নো নেভার।”
তেজ রেগে ঘরে ঢুকে গেছে।এদিকে লাথি মারায় পা ও কেটে গেছে।রাহা আর রাহার মা ভয়ে গুটিয়ে গেছে।দাদী ও ভয় পেয়েছে অনেক।
________________________________
রাত দুটো।প্রহেলিকা চাঁদকে ডাকছে।ঐ বাসা থেকে এসে চাঁদ কেঁদে কেটে ঘুমিয়েছিল একটু আগে।হটাৎ ডাকে সে হন্তদন্ত হযে উঠে।তাকে উঠতে দেখে প্রহেলিকা বলল,
-“চাঁদ তাড়াতাড়ি চল তেজ ভাইয়ার প্রচুর শরীর খারাপ।সবাই ওখানে তাড়াতাড়ি আয়।”
চাঁদের ঘুম উবে গেছে।তাড়াতাড়ি উড়না গায়ে দিয়ে ছুটে গেছে তেজের রুমে,,
চলবে,,,,