#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা
পর্বঃ১০
তেজ যত্ন করে চাঁদের পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে আর আড়চোখে চাঁদের দিকে তাকাচ্ছে। এতে চাঁদের কোনো হেলদোল নেই সে উল্টোদিকে চেয়ে আছে।তখন চাঁদের পিছে তেজ ছুটে অবশেষে ধরতে সক্ষম হয়েছে।তারপর পাঁজাকোলে করে রুমে নিয়ে এসেছে।খাটে বসিয়েছে অনেক জোড় করে। চাঁদ তো এ বাসায় থাকবেই না।অবশেষে তার খালামনির কান্নাকাটিতে বসেছে।তেজের দাদী অবশ্য একবার এসেছে কিন্তু কিছু বলে নি।
চাঁদের সামনে খাবার ধরে রেখেছে তেজ কিন্তু চাঁদ মুখে নিচ্ছে না। তেজ বুঝতে পেরেছে সে বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে চাঁদকে।কিন্তু এ মেয়ের সামনে এখন কিছু প্রকাশ করা যাবে না তাহলে আরো বেশি ফুলে যাবে তাই তেজ জোড় করে চাঁদের মুখটা চেপে ধরে খাবারটা মুখের ভিতর দিলো।চাঁত হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল অবাক দৃষ্টিতে।তেজ মুখ টিপে হাসা শুরু করলো।চাঁদ জেনো না বুঝে তাই মাথা নিচু করে রেখেছে।ভাবছে এখনই একটা বোম ফাটবে।চাঁদ নামক বোম।কিন্তু কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন চাঁদের কোনো আওয়াজ পাওয়া গেলো না সে তখন মাথা তুলে চাঁদের মুখপানে চাইলো।চাঁদের মুখ পানে চেয়ে তেজ বিষ্ময়ে হতবাক কারণ চাঁদ কাঁদছে।তেজ বেশ পেরেশানিতে পরলো।চাঁদের গাল ধরে আদুরে সুরে বলল,
–“সরি তো চাঁদ, আমি কখনোই আর এমন করবো না।আমার হঠাৎ রাগ উঠে যায়।আর যেখানে তোর কথা আসে সেখানে আরো বেশি রাগ উঠে কিন্তু আমি ইচ্ছাকৃত তোকে পায়ে আঘাতটা করি নি বিলিভ কর।”
চাঁদ এবার টলমলে চোখে তেজের দিকে তাকালো তারপর একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল,
-“পায়ের আঘাত টা না হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে দেন নি কিন্তু মনের আঘাতটা,সেটা তো ইচ্ছাকৃতই দিয়েছেন তেজ ভাইয়া।”
তেজ করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার আর কিই বা বলার থাকতে পারে।ভুল তো তারই ছিলো।তবুও সে আবারও কিছু বলার জন্য উদ্যত হলেই চাঁদ উঠে চলে যায়।তেজ আর আটকায় নি।দোষ যেহেতু করেছে শাস্তি তো পেতে হবে।
তেজেদের খাবার টেবিলে সবাই বসেছে সকালের খাবার খেতে।এর মাঝেই চাঁদকে তেজের রুম থেকে বের হতে দেখেই ডাক দিলো চাঁদের খালামনি জাহানারা বেগম। চাঁদ ব্যস্ততা দেখালেও খালামনি তাকে টেনে নিয়ে গেলো খালামনির রুমে।এদিকে খাবার টেবিলে বসে থাকা মনোরমা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো তার ছেলের বউয়ের দিকে কিন্তু কিছু বলেন নি।কারণ গতকাল যখন তার ছেলে হাতজোড় করে রুম থেকে চলে যেতে বলছিলো তখন সে বেশ অপমানিত বোধ করেছিলেন। তাই ঠিক করেছেন যা করবেন আস্তে ধীরে করবেন।
অন্য দিকে জাহানারা বেগম চাঁদকে ঘরে নিয়েই চাঁদের হাত ধরে কেঁদে দিলেন। চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–“মা আমার ছেলে ইচ্ছে করে তোকে ব্যাথা দেয় নি তবুও আমি মা হয়ে তোর কাছে ক্ষমা চাইছি তুই ক্ষমা করে দে আমার ছেলেকে আর বাসায় গিয়ে বলিস না কিছু। তোর বাবা ভাই জানলে আরো রেগে যাবে।বিয়ের ব্যাপার টা আরও ঘেঁটে যাবে।”
চাঁদ খালামনির হাতটা শক্ত করে ধরে উত্তেজিত ভাবে বলল,
–” আরে না না খালামনি তুমি ক্ষমা চাইছো কেনো।আমি কিছু বলবো না কাউকে তুমি চিন্তা করো না।আমি এখন আসি কেমন।”
এই বলে চাঁদ রুম থেকে বের হওয়ার সময় খালামনি পিছন থেকে বলে উঠলো,
–“বিয়ের ব্যাপার টা কি ভাবলি বললি না তো।”
চাঁদ উত্তর না দিয়েই তাড়া দেখিয়ে চলে গেলো।এসব কিছুই দরজার আড়াল থেকে দেখেছে তেজ।চাঁদ বেরিয়ে গেলেই রুমে প্রবেশ করলো তেজ।তেজকে দেখে জাহানারা বেগম ফ্যালফ্যাল করে কেদেঁ দিলো।তার ছেলেটা তো চাঁদকে অনেক ভালোবাসে। সেই ছোট বেলা থেকেই চাঁদকে আগলে রাখতো সব কিছু থেকে।এখন যদি একটু উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে যায় ছেলেটাকে সামলাবে কী করে এ ভাবেই কলিজাটা কেঁপে উঠছে তার।
তেজ মায়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছে তাই ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে আদুরে সুরে বলল,
–“সুইটহার্ট কী হয়েছে হ্যাঁ, কান্না কেনো করছো? তুমি কান্না করলে এই তেজের কষ্ট লাগে তুমি জানো না? একদম কান্না করো না।আর ভয় পেয়ো না চাঁদ যে সিদ্ধান্তই নিবে আমি হাসিমুখেই গ্রহণ করবো,তুসি চিন্তা করো না।”
তেজের মা ছেলের এমন আদুরে কথা শুনে আরও কেঁদে দিলো।তেজ মাকে স্বান্তনা দিয়ে রুমে চলে যায়।
___________________________
এখন প্রায় দুপুর একটা।তেজ রুমে শুয়ে আছে।হঠাৎ বাহির থেকে প্রহেলিকার কন্ঠ ভেসে আসতে শুনে তেজ ভ্রু কুঁচকে ফেললো। অজানা আতঙ্কে বুক কেঁপে উঠলো।তরিঘরি করে উঠে বাহিরে যায়। ড্রয়িং রুমে গিয়ে সে স্তম্ভিত। সবাই চুপ হয়ে গেছে তেজকে দেখে।
তেজ সবাইকেই প্রশ্ন করছে কি হয়েছে কিন্তু কেউ উত্তর দিচ্ছে না।ফলস্বরূপ তেজ রেগে যায়। রাগান্বিত স্বরেই জিঙ্গেস করে প্রহিলাকাকে,
–“কিরে প্রহেলিকা কি এমন হয়েছে যা আমাকে বলা যাবে না,তাড়াতাড়ি বল ইডিয়েট।”
তেজের ধমকে প্রহেলিকা কিছুটা কেঁপে উঠলো আর তাড়াতাড়িই বলে উঠলো,
–“আ আসলে তেজ ভাইয়া চাঁদ তোমাদের বাসা থেকে যাওয়ার পর বাবা আর ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে জেনো কি বলেছে বিয়ের ব্যাপারে।তাই বাবা বলেছে আজ একটু পর তোমাদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসবে”।
প্রহেলিকা আর থামে নি।দ্রুত রুম ত্যাগ করলো।আর ড্রয়িং রুমে বসা প্রত্যেক টা সদস্য ভাবতে ব্যস্ত, বিয়েটা হবে তো?চাঁদকি তবে বিয়েটা করবে না ?
চলবে,,