শ্রেয়সী পর্ব ৬

0
306

#শ্রেয়সী
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

ভোরের উষ্ণতায় সমগ্র ব্যস্ত নগরীতে স্নিগ্ধতার আড়ঙ্গ সমপর্ণ করছে। ব্যাস্ত নগরীর বিরাট অট্টালিকা গবাক্ষে একাকী বসে আছি। নামাজ শেষ হতে না হতেই রোদ্দু ধপাস করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। অঘোরে ঘুমচ্ছে। আজ প্রায় পাঁচ দিনের বেশি সময় অতিক্রম হয়েছে ঢাকা চলে এসেছি। আমার আর রোদ্দুর থাকার জন্য একটা হোস্টেল তুলে দিয়ে যায় দাদাভাই আর তনুফ ভাইয়া। পাশাপাশি একটা কোচিং-এ ভর্তি করিয়ে দেয়। এই কদিনে আমি এবং রোদ্দু দুজনই বেশ ভয়ে ভয়ে থেকেছি। কারণটা সেদিনের লোক গুলো। যারা আমাদের পিছু নিয়েছিলো। সেদিন দাদাভাইয়ের বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেছিলাম।
গাড়ি দুটো যেই না আমাদের গাড়িতে ধাক্কা দিবে তখনই দাদাভাই ডানে মোড় ঘুরিয়ে উল্টো দিকে গাড়ি নিয়ে আসে। পিছনের গাড়ির লোকেরা বিষয়টা বুঝে উঠতে পরার আগেই অনেক দূর চলে যায়। সেদিন আমরা ট্রেন মিস করি। যার ফলে বাসে করে আসতে হয়। সাথে তনুফ ভাইয়া আর দাদাভাইও আসে।

-“শ্রেয়ু কি করছিস?”

-“বসে আছি কেবল। উঠে পরলি যে? ঘুম শেষ?”

-“না ঘুম কি শেষ হয় বল? ঘুম হচ্ছে আমাদের জাতীয় ঐক্য। বিশেষ করে আমার জন্য। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে,’তোমার প্রিয় শখ কি?’ আমি বিনা বাক্যে বলে দিব ‘ঘুম’।”

-“তোর এত ঘুম আসে কোত্থেকে? কই আমার তো ঘুম পায় না।”

-“তুই কি মানুষ? যে ঘুম পাবে? তুই হলি জ্বী’ন। মানুষের ঘুম হারাম কারী।”

-“চুপ কর। সারাক্ষণ শুধু পটর পটর। উঠে রেডি হয়ে নে। ক্লাস আছে।”

-“শ্রেয়ু শোন!”

-“হ্যাঁ বল।”

-“ভালোবাসায় বিশ্বাস করিস?”

-“বয়স কত তোর?”

-“যা জিজ্ঞেস করছি সেটা বল আগে।”

-“আমিও যা জিজ্ঞেস করেছি বল।”

-“আপাতত ষোলো দুমাস পর সতেরো হবে ইনশাআল্লাহ।”

-“এই বয়সে কিসের ভালোবাসা? যা গিয়ে পড়াশোনা কর।”

রোদ্দু মুখ কালো করে বলে,
-“দেখিস তুই-ই কাউকে ভালোবাসবি তাও ভয়ংকরভাবে।” রোদ্দু আর এক মুহূর্ত সময় ব্যয় করে না৷

এখানে আসার পর বাড়ির জন্য খুব কষ্ট হয়। মন চায় এক ছুটে বাড়ি চলে যাই। খাবার খেতেও কষ্ট হয়। বাড়িতে তো নিজের হাতে খেতাম না। মা না হয় ভাবি খাইয়ে দিত। এখানে কে খাওয়াবে? চোখ দিয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরে। মা সত্যি বলেছিলো আমি এখানে দুদিনও টিকবো না। কিছুক্ষণ পর বাইরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফোনে আবদ্ধ করি। মায়ের নম্বরে ডায়াল করি। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরই মা কল তুলে,
-“কেমন আছিস শ্রেয়ু?”

-“ভালো নেই।”

ফোনের অপর পাশ থেকে আম্মু গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“ভালো থাকার জন্য গিয়েছিস। ভালো নেই কেনো?”

-“আমি কি কখনও একা থেকেছি? যে এখন একা ভালো লাগবে?”

-“ভালো থাকার জন্য রোদ্দুকেও পাঠিয়েছি।”

-“রোদ্দু তো ঘুমিয়েই কুল পায় না।”

-“চুপ ফা’জি’ল মেয়ে। আমাকে জ্বালাস না তাই বলে কল করেছিস। ভালো নেই বলে আমাকে খারাপ রাখতে চাইছিস?”

মায়ের কন্ঠ শুনে বুঝো উঠলাম মায়ের গলা ধরে আসছে। খুব কষ্টে কথা বলছে। কিছুক্ষণ থেমে মা আবার বলে,
-“শ্রেয়ু চলে আয় মা। তোর থাকতে হবে না ওখানে।”

-“কিন্তু আম্মু বাবা যে বললো পড়া শেষ হলেই এখান থেকে নিয়ে যাবে তার আগে না।”

-“তোর বাবা কে আমি বুঝিয়ে বলব তুই চলে আয় আমার কাছে।”

-“না বাবা কে বলতে হবে না। আমার ইচ্ছায় এসেছি পড়া শেষ হলে তবেই যাবো।”

-“আসতে হবে না তোর। থাক ওখানে পরে।”

রাগে খট করে ফোন কে’টে দেয় মা। ওষ্ঠদ্বয় চেপে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালাতে থাকি।
-“কিরে শ্রেয়ু তুই এখনও রেডি হলি না? ক্লাসের জন্য দেরি হয়ে যাবে তো।”

রোদ্দুুর বলা কথা আমার কর্ণপাত হলেও পাত্তা দেই না। রোদ্দু কথার প্রতিক্রিয়া না করার আমার সম্মুখে এসে বড় বড় চোখ করে বলে,
-“শ্রেয়ু কাঁদছিস কেনো?

-“এমনি।”

-“উঁহু! এমনি কেউ কাঁদে নাকি? এই তুই এত দিন হলো ঢাকা এসেছিস অথচ একটা বয়ফ্রেন্ড পাসনি বলে কাঁদছিস?”

অগ্নি দৃষ্টিতে তাকই রোদ্দুর দিকে। সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বার বার একই প্রশ্ন করছে আর ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করছে। আমি বিরক্ত হয়ে রোদ্দুর কথার উত্তর না দিয়ে রেডি হতে চলে যাই। আর এই মেয়ে এদিকে বাঁচালের মতো কথার ঝুলি ঝুলিয়ে রেখেছে।

সেদিনের পর মা কে আর কখনও ফোন করে ভালো নেই বলিনি। কারণটা বেশ বোধগম্য। তা হলো এই যে কোনো মা তার সন্তানের খারাপ থাকার কথা যেনে ভালো থাকতে পারে না। আমার মাও তো মা সেও আমার খারাপ থাকার কথা শুনে ভালো থাকতে পারে না। তাই আমি আর ভালো নেই বলিনি। সব সময় ফোন করে এটা ওটা নানা গল্প করতাম। আমার কথা বলার সাথে সাথে মাও ফোনে ওপর পাশ থেকে খিলখিল করে হেসে উঠতো। এই অনুভূতিটা ঠিক খারাপ নয় বেশ ভালো। শুনেছি ভাবি প্রেগন্যান্ট! এ নিয়ে বাড়িতে বিরাট আনন্দ। আফসোস আমি শামিল হতে পারিনি। তবে ফোন করে করে সব খবর নিচ্ছি।
এদিকে রোদ্দুও একজন বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলার মহান কাজ করে বসেছে। আমি নীরব দর্শক হয়ে সবই দেখি। বলার মত কিচ্ছু নেই।

দেখতে দেখতে একমাস কে’টে যায়। ঢাকায় আসার কিছু দিন পর মনে হচ্ছিলো সময়টা এখানে থমকে গেছে। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে ততোই মনে হচ্ছিলো সময় হাওয়ার মতো ছুটে চলেছে। এক মাসে তনুফ ভাইয়ে দুই-তিন বার দেখা করতে এসেছে। তবে দাদাভাই কদিন পরপরই দেখা করতে আসতো। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,”এত ঘন ঘন দেখা করতে আসো কেনো? আমাকে কি মিস করো?”

দাদাভাই মৃদু হেসে বলে,
-“বাড়িটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে৷ কেমন যেনো দম বন্ধকর মনে হয়। তোর জন্মের পর কখনও বাড়িটা ওমন ফাঁকা লাগেনি। কিন্তু এখন প্রচন্ড হাহাকার মনে হয়।” আমি বাকরুদ্ধ হয়ে চুপচাপ বসে শুনতাম কেবল। কারণ বলার মতো কিছুই নেই।

তনুফ ভাইয়া আমাকে আর রোদ্দুকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়। আমাদের কলেজটা ভার্সিটির সাথেই। রোদ্দুর হাহুতাশ শেষ নেই। প্রতি দিন কান্নাকাটি করে বলে,”আমি ওই কলেজে পড়বো না। বাড়ি চলে যাবো।”

ভ্রু কুঁচকে যায় আমার। ওকে জিজ্ঞেস করি,
-“কেনো? খারাপ কি? কলেজটা বেশ ভালো। তাহলে তোর সমস্যা কোথায়?”

-“তুই কি জানিস না শ্রেয়ু ভার্সিটির সাথে কলেজটা। যখত তখন সিনিয়ররা এসে রেগ করে যাবে। তখন আমার কি হবে রে?”

ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়েছে রোদ্দু। বিরক্ততে আমার মুখশ্রী কুঁচকে যায়।
-“রোদ্দু ন্যাকা কান্না থামা। তোকে কে বললো ভার্সিটির সিনিয়রা এসে রেগ করবে? কলেজ আলাদা ভার্সিটি আলাদা। আর এত এত স্টুডেন্ট থাকতে তোকেই কেনো রেগ করবে?”

-“তুই কি চোখে দেখিস না? কানা তুই? আমার মত এত সুন্দরী একটা মেয়ে কলেজে গেলে ছেলেরা কথা বলার জন্য কত কি করবে। যখন কথা বলব না তখন রেগ করতেই পারে। স্বাভাবিক!”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছোট ছোট চোখ করে বলি,
-“তোর কি মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশিই চিন্তা করছিস?”

-“একদমই না রোদ্দু দ্যা রৌদ্রসী সব সময় সঠিক চিন্তা ভাবনা করে। তোর মতো গাধা নই আমি।”

-“চুপ কর তো। আজাইরা অযৌক্তিক কথা বার্তা।”

-“হ্যাঁ! এখন তো আর আমার কথা ভালো লাগবে না নতুন জায়গা, নতুন কলেজ, নতুন বন্ধু আমার কি প্রয়োজন……. ”

রোদ্দুর বকবক গুলো শুনতে আমার একদমই ইচ্ছে হচ্ছে না আমি হাতে ডায়েরিটা নিয়ে বারান্দায় চলে আসি। রাতের ব্যাস্ত শহরটা কি মায়াবী ঠেকছে আমার কাছে। ইশ! মানুষ গুলো সারা দিন কতই না দৌড়ঝাঁপ করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে। খুব ইচ্ছে জাগছে মধ্য রাতে শহরের রাস্তায় হাঁটার। তবে সে ইচ্ছে পূরন হওয়ার নয় তাই সেদিকে আর মন দিলাম না।
প্রথম ক্লাস শুরু হবে কাল। কতশত চিন্তা কলেজ কে ঘিরে। কেমন হবে? কলেজের পথ চলাটা কি সহজ হবে? নাকি এখানেও হাজারও বাধা বিপত্তি থাকবে আমার জন্য? জানা নেই। রঙ্গিন হাজার স্বপ্ন বুনছি আমার ছোট্ট কিশোরী মনে। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস টেনে আগামী দিনের জন্য শুভ কামনা করছি কেবল। আল্লাহ যেনো জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর ভাবে পার করে।
_______________________

-“দেখলি শ্রেয়ু ছেলেটা কি অ’স’ভ্য। ধাক্কা দিয়ে গেলো আমাকে। যেই না সুন্দরী মেয়ে দেখেছে ওমনি নিজের আসল রূপ দেখিয়ে দিলো। তুই ছিলিস বলে না হয় একে আজ আমি খু’ন করতাম।”

-“আল্লাহর ওয়াস্তে চুপ কর রোদ্দু। ছেলেটা স্যরি বলেছে। তুই শুধু শুধু ঝামেলা করছিস।”

-“কিহ? আমি ঝামেলা করছি। তুই জানিস না কিছু ইচ্ছে করে করেছে এসব।

-“চুপ কর বইন। দয়া করে মুখটা বন্ধ রাখ।”

কে শোনে কার কথা। আমার কথা যেনো তার কান দিয়ে গেলোই না। ননস্টপ বকবক করেই যাচ্ছে। আমি বিরক্ত হয়ে ব্যাগ নিয়ে বাইরে চলে আসি।

কিছুক্ষণ আগে ক্লাসে শেষ করে ক্যান্টিনে যাওয়ার পথে এটা ছেলের সাথে রোদ্দুর ধাক্কা লাগে। ধাক্কাটা বেশ জোরেই ছিলো। ধাক্কা লাগার সাথে সাথে রোদ্দু ছিটকে চিৎপটাং হয়ে উল্টে পরে। আর ছেলেটা পরে যেতে যেতে নিজে সামলে নেয়। রোদ্দু কে এভাবে পরে যেতে দেখে আশেপাশে সবাই হেসে দেয়। আমি আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে তাকয়ে আমিও হেসে দেই। রোদ্দুর রাগ আকাশচুম্বী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এগিয়ে আসে ছেলেটার সামনে। ছেলেটার চোখে মুখে অপরাধবোধ স্পর্শ। কিন্তু রোদ্দু তো রোদ্দুই সে চিৎকার করে ছেলেটা কে বলে,
-“কানার বাচ্চা কানা চোখে দেখিস না? যেই না সুন্দরী দেখলি ওমনি এসে গায়ে ধাক্কা দিয়ে দিলি। এই তোর চোখে কি ছাউনি আছে? হ্যাঁ? অন্ধ কোথাকার।

-“দেখুন আমি দুঃখিত ইচ্ছে করে করিনি। তবুও মাফ চাচ্ছি।”

রোদ্দু ছেলেটার কথা ব্যঙ্গ করে বলে,
-“ইচ্ছে করে করিনি। হ্যাট শুনেছি এমন হাজার ডায়লগ। কেউ ইচ্ছে করে, করে না হয়ে যায় তাই তো?”

-“ছোট একটা ভুলই তো ছিলো এটাতে এভাবে এত রিয়েক্ট করার মানে ঠিক বুঝলাম না।”

-“এখন তো বুঝবি না। ধাক্কা দিয়েছিস মজা নিয়েছিস এখন কিভাবে বুঝবি।”

রোদ্দু পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করছে। আমি স্তব্ধ হয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি। এদের কিভাবে থামাবো তাও ভাবছি। হঠাৎ রোদ্দু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“এই বিভীষণের বংশধর। দেখছিস আমি এক পারছি না তাও চুপ করে আছিস? আয় আমার সাথে তাল মিলিয়ে ঝগড়া কর বলছি।”

-“রোদ্দু চুপ কর প্লিজ। প্রথম দিন এমনটা করিস না। উনি আমাদের বড় হবেন।”

-“বড় বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে? ওসব বড় টর মানি না একে বল সরি বলতে।”

-“দেখুন আমি প্রথমেই সরি বলেছি। আর কতবার বলব?”

-“সরি বললেই কি হয়ে যায় নাকি? আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন যদি মরে যেতাম তখন আমার ভবিষ্যৎ জামাইয়ের কি হতো? আপনি জরিমানা দিতেন নাকি?”

-“দেখুন তর্ক করে ফালতু সময় নষ্ট করার মতো ইচ্ছে আমার নেই। যান এখান থেকে।”

-“কে তর্ক করছে হ্যাঁ? ছেলে হয়ে মেয়েদের সাথে ঝগড়া করতে লজ্জা করে না?”

-“না করে না। আপনার করে না সিনিয়র ভাইদের সাথে তর্ক করতে। বে’য়া’দ’ব মেয়ে কোথাকার।”

-“এই অ’স’ভ্য ছেলে বেয়াদব কে? সিনিয়র এমন লু’চু হলে তর্ক করতে একদমই লজ্জা করে না। উল্টো আরো গর্ব হয়।”

ছেলেটা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-“হাহ্! আমিও আসছি কার সাথে তর্ক করতে। কথায় আছে মূর্খ মানুষের সাথে তর্ক করলে নিজেরই সম্মান হানি হয়।”

কথাটা বলেই ছেলেটা দ্রুত পায়ে চলে যায়। রোদ্দু চেঁচিয়ে ইচ্ছে মতো ছেলেটাকে কথা শোনাচ্ছে। আশেপাশে সবাই মিট মিট করে হাসছে। তা দেখে রোদ্দুর রাগ কয়েকশ গুন বেড়ে যায়। দ্রুত পায়ে ক্যান্টিনে চলে আসে।
___________________

ক্যান্টিনের বাইরে বেরিয়ে দেখি কত গুলো ছেলে বসে আছে। তার মধ্যে সেই ছেলেটাও আছে যার সাথে রোদ্দুর ঝগড়া হয়েছিলো। সেখানে সবার মধ্যমনি হয়ে দাড়িয়ে আছে একটি ছেলে। পরনে তার সাদা রঙ্গের শার্ট। ছেলেটার চেহারা ঠিক দেখতে পাচ্ছি না। কারণ আমি ঠিক ছেলেটার পিছনে। দেখে মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। ওরা কি বলছে তা আমি আড়াল থেকে শোনার চেষ্টা করছি। রোদ্দুর সাথে ঝগড়া করা ছেলেটা সাদা শার্ট পরা ছেলে কে বলছে,
-“দোস্ত চল একটা রেগ দিয়ে আসে।”

-“কাকে?”

-“একটা ব’জ্জা’ত, ই’ত’র, অ’ভ’দ্র, ফা’জি’ত মেয়ে কে।”

ছেলেটা উচ্চস্বরে হেসে বলে,
-“শেষমেশ একটা মেয়ে কে রেগ করতে বলছিস? মন টন চুরি করলো নাকি?”

-“ভুলেও না। মেয়েটা যা ঝগরুটে। আমার সাথে কি তর্কটাই না করলো।”

-“তুই শুধু শুধু মেয়েদের সাথে তর্ক করতে গেলি কেনো?”

এই কথাটা বলার সাথে সাথে ওদের পুরো বন্ধুমহলের সকলে হাসিতে ফেটে পরে। ছেলেটার একটু হলে লজ্জা লাগছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
-“একবার তো দেখবি। রেগ না হয় না কর। তবুও চল চিনে নে। ভবিষ্যৎ কিছু করলে টাইট দেওয়া যাবে।”

-“ওসব দেখে লাভ নেই। ছোট ছোট পুটিমাছ চেনার প্রয়োজনবোধ অন্তত আরাবীর নেই।”

-“তবুও চল দেখে আয়।”

বুঝতে পারলাম ছেলেটার নাম আরাবী। তার বন্ধু জোর করায় রাজি হয়। আমি তাৎক্ষণিক রোদ্দুর কাছে যাই। রোদ্দুকে নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। না হয় রক্ষে নেই। একবার যদি তাদের চোখে ধরা পরি তাহলে কলেজ এবং ভার্সিটির জীবন শেষ। উঠতে, বসতে, খেতে, হাঁটতে যেখানেই পাবে সেখানেই ধরে ধরে রেগ করবে। বাঁচার জন্য শরীররে সকল শক্তি দিয়ে যেই না দৌড় দিলাম ওমনি ধপাস করে হোঁচট খেয়ে৷ মুখ থুবড়ে পরে গেলাম।

~চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here