শ্রেয়সী পর্ব ৭

0
285

#শ্রেয়সী
#পর্ব_৭
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

ধপাস করে মুখ থুবড়ে পরে যাওয়ার মতো লজ্জাজনক ব্যপার আর কি হতে পারে। তার উপর যদি হয় কলেজের সবার সম্মুখে। তখন তো মনের গহীনে ঢাক-ঢোক পিটিয়ে বলে,”তুই পরে গিয়ে ম’রে যা। তোর আর বাঁচার অধিকার নেই।”
আমার পরে যাওয়ার শব্দে আশেপাশে থেকে সবাই দৌড়ে আসে। এসেছে তো এসেছে কেউ আমাকে সাহায্য তো দূর উল্টো আমার পরে যাওয়ার ভিডিও বানাচ্ছে। আশ্চর্য হয়ে যেই না চোখ তুলে সম্মুখে তাকালাম দেখলাম আরাবী নামে ছেলেটা তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। এর থেকে রেগও ভালো।
নিজের কপালের দোষ দিয়ে বিরবির করতে করতে উঠে দাঁড়িই। পাশ থেকে রোদ্দুর সাথে ঝগড়া করা ছেলেটা বলে,
-“ভাই এই মেয়েটা ওই ঝগরুটে, ফা’জি’ল, ই’ত’র মেয়ের বান্ধবী।”

এক এক করে সবার দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরখ করে নিলাম। সবাই কেমন রসিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরেকটি ছেলেকে দেখলাম সে কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে। আমার কাছে ভালো ঠেকছে না। সবার শেষে আরাবী নামের ছেলেটার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করতেই দেখি শান্ত, স্থীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার পানে। আমি ভয়ে ভয়ে সবাই কে সলাম দিলাম। সরি বলে যেই না বেরিয়ে যাবো এখান থেকে তখন আরাবী বলে,
-“সাজ্জাদ কাকে যেনো রেগ করবি?”

-“এই মেয়েটার বান্ধবী কে।”

-“বান্ধবী কে কোথায় পাবি? একে যখন পেয়েছি ওকেই রেগ করা যাক?”

-“না এই মেয়েটা ভালো। যখন ওর বান্ধবী আমার সাথে ঝগড়া করছিলো তখন ওও চুপ ছিলো বার বার থামানোর চেষ্টা করেছে।”

আরাবী তার বন্ধু থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে নিক্ষেপ করে জিজ্ঞেস করে,
-“নাম কি?”

আমি ভয়ে ভয়ে কাঁপা কন্ঠে জবাব দেই,
-“শ্রেয়সী রাহমানী!”

-“কোন ইয়ার?”

-“ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।”

-“বাসা?”

-“কলেজ হোস্টেল।”

-“গুড। কি রেগ দেওয়া যায় একে?”

আরাবীর কথায় পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বলে,
-“দোস্ত বাদ দে। পিচ্চি পোলাপান কলেজে আসে লেখা পড়া করতে। এসব করলে ওরা ভয়ে পেয়ে কলেজে আসার মনোবল হারিয়ে ফেলবে।”

-“চুপ কর শাহীর। আমি কি করবে আর কি করবো না তা অন্তত তোদের কাছ থেকে শুনতে তাই না।”

-“শুনিস না। তবে মেয়েদের সাথে এমন না করাই শ্রেয়।”

আরাবী ওষ্ঠে বক্র হাসি দিয়ে বলে,
-“কেনো? মেয়েদের সাথে প্রেম করাই বুঝি উত্তম?”

-“আমার তোকে বলাটাই ভুল হয়ে গেছে। তোর যা ইচ্ছা তাই কর।”

কথাটা বলে শাহীর নামে ছেলেটা চলে যায়। আরাবী সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে আবদ্ধ করে।
-“তোমার বান্ধবীর নাম কি?”

-“রৌদ্রসী।”

পিছন তাকিয়ে দেখি রোদ্দু দাঁড়িয়ে। রোদ্দুই তার নামটা বলেছে। নামটা বলার সাথে সাথে আমার পাশে এসে দাঁড়ায় রোদ্দু কে দেখে সাজ্জাদ নামে লোকটা বলে,
-“চলে আসছে অস্কার প্রাপ্ত ঝগরুটে ব্যক্তি।”

তেজ দেখি রেদ্দু বলে,
-“আর আপনি বুঝি ঝগড়ার উপর পিএইচডি করছেন।”

-“তোমার মত ঝগরুটে মেয়ের সাথে ঝগড়ায় পারতে হলে অবশ্যই ঝগড়ার উপর পিএইচডি করতে হবে।”

-“আপনি কি জানেন আপনার মধ্যে বিন্দু পরিমান ম্যানার্স নেই?”

-“একদমই জানি না। পুঁচকে মেয়ের থেকে শিখতে হবে।”

-“পুঁচকে কাকে বললেন?”

-“ওপস স্যরি! পুঁচকে মেয়ের মায়ের থেকে শিখতে হবে।”

-“কি বলতে চান হ্যাঁ? আপনি যে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে চান তা বলুন।”

রোদ্দু আর সাজ্জা নামে ছেলেটা ঝগড়া করেই যাচ্ছে। কথার পিঠে কথা বাড়ছে বৈ কমছে না। রোদ্দু কে থামানো যাবে না তা বেশ বুঝতে পারছি।
এদের ঝগড়ার মাঝে আরাবী হুংকার দিয়ে বলে ওদের থামতে। ওনার হুংকারে পুরো পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়। উপস্থিত সকলে স্তব্ধ। আমিও ভয় পেয়ে কেঁপে উঠি। খানিক বাদেই দেখি আরাবী এগিয়ে আমার সম্মুখে দাঁড়ায়। তার দৃষ্টি ঠিক আমার অক্ষিদ্বয়ে। কেমন যেনো ঘোর লাগা দৃষ্টি। পলক ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মৌনতা ভেঙে আরাবী বলে,
-“আজ থেকে ঠিক একমাস আমি যা যা বলব ঠিক তাই তাই করতে হবে। এটা তোমার পানিশমেন্ট।”

আরাবীর বলা বাক্যে ধ্যান ভাঙ্গে আমার। তার কথা বুঝতে কয়েক পলক সময় লাগে। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করি,
-“আমি তো কিছু করিনি। তাহলে পানিশমেন্ট কেনো?”

-“উঁহু! তেমার কোনো দোষ নেই। দোষ তোমার বান্ধবীর। সে আমার বন্ধুর সাথে ঝগড়া করেছে। তার শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।”

পাশ থেকে রোদ্দু তেড়ে এসে বলে,
-“কেনো কেনো? ঝগড়া করেছি আমি শাস্তি শ্রেয়ু পাবে কেনো? আমাকে দিন।”

-“না তোমাকে দিলে ব্যপারটা ঠিক জমবে না।”

-“কি বলতে চাইছেন?”

-“দেখো তুমি আমার বন্ধুর সাথে ঝগড়া করেছো। তার জন্য আমার হৃদয়ে খুব বড়সড় একটা দুঃখ লেগেছে। এখন এই দুঃখ লাগাটা যেনো তুমি উপলব্ধি করতে পারো তার জন্য আমি তেমার বান্ধবী কে শাস্তি দিব। কথা ক্লিয়ার?”

রোদ্দু নাক সিটকে মুখশ্রী কুঁচকে বলে,
-“ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে আসেন? নাকি এসব ফালতু কাজ করতে আসেন?”

-“আজ্ঞে আপনাদের মতো বাঁদর সুন্দরীগন কে রেগ করতে।”

আরাবী কথায় আশে পাশে যেনো হাসি ঝুলি বসে যায়। আমি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি। কিছুক্ষণ পর পর রোদ্দু আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। তাতে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি তো ভাসছি অন্য এক জগতে। যেখানে আছে কোনো এক বক্র হাসির, ঘোর লাগা দৃষ্টির যুবক।

-“এই যে মিস?(কিছুক্ষণ থেমে) যাতা না কি নাম যেনো আপনার?”

আরাবী প্রশ্ন ফ্যালাফ্যালা করে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। আপাতত আমার মুখ দিয়ে কথা বের হওয়ার নয়। আরাবী ভ্রু নাচিয়ে আবারও একই প্রশ্ন করে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে বলে,
-“এভাবে চুপ থেকে লাভ নেই। যতক্ষণ না প্রশ্নের উত্তর দিবে এখান থেকে এক পা-ও নড়তে দিচ্ছি না।”

-“এই আপনি কে হ্যাঁ? এভাবে দুটো বাচ্চা মেয়ে কে এখানে আঁটকে রাখতে লজ্জা করছে না?”

রোদ্দুর কথায় সাজ্জাদ নামে ছেলেটা উচ্চস্বরে হেসে দেয়। আরাবী ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রোদ্দুর পানে। অতঃপর আমার পানে তাকিয়ে বলে,
-“নিজ থেকে বললে আমি কোনো ঝামেলা করবো না। কিন্তু যদি আমি নিজে তোমার সব ইনফর্মেশন বের করি তাহলে ব্যপারটা খারাপ হয়ে যাবে।”

আরাবীর পাশ থেকে একটা ছেলে বলে,
-“আরাবী প্লিজ যেতে দে। বাচ্চা মেয়ে ওরা কি বুঝে?”

-“তুই চুপ কর। আমাকে আমার কাজ করতে দে। তো মিস.যা-তা নিজের নাম বলো।”

আমি খুব কষ্টে গলা দিয়ে শব্দ বের করি,
-“শ্রেয়সী! শ্রেয়সী রাহমানী।”

ফিসফসি করে বলে আরাবী,
-“আজ থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত আমার প্রেয়সী।”

বড় বড় চোখ করে আরাবী দিকে তাকাই। তার ওষ্ঠে পূর্বের সেই বক্র হাসি। কেউ শুনেছে কি না জানি না। তবে তার কথা আমার কর্ণপাত ঠিক ঘটেছে। পেছন মুড়ে দ্রুত প্রস্থান করে সে। আর রেখে যায় তার প্রতি সহস্রাধিক কৌতূহল। ভালো লাগা এবং খারাপ লাগা দুই অনুভূতি মধ্য খানের বিপাকে ঠেলে দেয় আমায়। কি নাম এই অনুভূতির। জানা নেই আমার।

-“বিভীষিকা কেথাকার।”

রোদ্দুর চিৎকারে কেঁপে উঠি আমি। ওর দিকে তাকাতেই দেই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার মুখশ্রীতে। ওর ওমন চাহনি আমার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। তাই জিজ্ঞেস করি,
-“কি হয়েছে? পেত্নীর মতো চোখ মুখ করে তাকিয়ে আছিস কেনো?”

-“এখন জিজ্ঞেস করছিস কি হয়েছে? এতক্ষণ যে ওই ছেলে গুলো ঝগড়া করে গেলো তখন তোর ধ্যান কই ছিলো? নাকি ধ্যান বাবাজি হয়ে গেছিলি?”

-“ওরা ঝগড়া করেনি। করেছিস তুই। যে চেয়ে ঝগড়া বাধালে নিজেকেই হারতে হয়। তাই তুইও পারিসনি।”

-“বিভীষণ কোথাকার। এই ওই ছেলেটা তখন বিরবির করে কি বললো রে?”

রোদ্দুর প্রশ্নে প্রথমে থমকে যাই আমি। অজানা এক শিহরন বয়ে যায় সর্বাঙ্গে। আবারও ধ্যানে চলে যাচ্ছি মনে হচ্ছে। তবে এবার আর রোদ্দু ধ্যান করতে দিলো কই। ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কিরে বল কি বলে গেলো?”

-“বলেছে তুই একটা পাগল, মেন্টাল। যত দ্রুত সম্ভব তোকে মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিতে। এবং সকল খরচ ওনি বহন করবেন।”

-“কিহ? এত্ত বড় সাহস। আমাকে পাগল বলে। ওদের তো আমি দেখে নিব। চল আমার সাথে।”

-“আরে দাঁড়া। কোথায় যাচ্ছিস?”

-“মা’রা’মা’রি করতে। চল তুই।”

-“রোদ্দু থাম প্লিজ। এসব একদম ভাল্লাগছে না।”

কোনো মতে টেনেটুনে রোদ্দু কে আঁটকে দেই। হঠাৎ পিছন থেকে আমাকে কেউ ডেকে উঠে। পিছনে ফিরে দেখি আরাবী সাথে থাকা ছেলেটা। তবে নামটা ভুলে গেছি। কিন্তু এ এখানে কেনো এসেছে? আবার রেগ করতে নয় তো? আমার ভাবনার মাঝেই ছেলেটা বলে
-“দেখুন কিছু মনে করবেন না। ওরা একটু এমনই। মজা করার জন্য এসব করে। সিরিয়াস নিবেন না প্লিজ।”

-“না! ঠিক আছে। আমরা এটা নিয়ে কিছু মনে করবো না। নিশ্চিন্তে থাকুন।”

-“ওদের হয়ে মাফ চেয়ে নিচ্ছি আমি। মাফ করে দিবেন প্লিজ।”

-“আরে না না! আমি কিছু মনে করিনি। ওসব নিয়ে ভাববেন না।”

-“যাক শুনে প্রশান্তি হলো। আপনার সাথে তো পরিচয়ই হয়নি। আমি শাহীর মীর। অনার্সে পড়ছি। আপনি?”

-“আমি শ্রেয়সী রাহমানী। ইন্টারে ভর্তি হয়েছি।”

-“ওহ বেশ ভালো।”

রোদ্দু লোকটার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“তা মশাই শুধু আমার বান্ধবীর পরিচয় নিলেন যে? আমার পরিচয় জানতে চাবেন না?”

লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে গেছে। নিজেকে সামলাতে পারলেও গুছাতে পারছে না। কথা বলতে গিয়েও থেমে থেমে যাচ্ছে। অতঃপর বলে,
-“সরি! আসলে তেমন করে খেলয়া করিনি। আপনি?”

-“রোদ্রসী! শ্রেয়ু আমি সেম ব্যাচ। আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড।”

-“আচ্ছা আজ আসি তাহলে। পরে কোনো একদিন চা খেতে খেতে কথা হবে।”

মুখে ভ্যাঙ্গচি কে’টে রোদ্দু বলে,
-“আমরা চা খাই না।”

-“তাহলে অন্য কিছু। আজ তাহলে আসি।”

দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়। রোদ্দু সেদিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে আমার পানে আবদ্ধ করে বলে,
-“দেখলি শ্রেয়ু? এই ছেলেটাও বন্ধুদের মতো বাজে একদম।”

-“মানে? বাজের কি দেখলি তুই?”

-“শুধু তোর পরিচয় নিলো। আবার বলছে চা খাওয়ার কথা।”

-“তুই বেশি বেশি ভাবছিস। ছেলেটা ওমন না।”

-“হ্যাঁ বাদ দে। তুই কি বুঝবি? গাধা কোথাকার।”

ক্লাস রুমের পথে যেতে থাকে রোদ্দু। আমার মস্তিষ্ক এক জায়গাতেই আটকা পরে আছে। তা হলো আরাবী বলা বাক্যে। কি ছিলো তাতে? জানা নেই তা। আপতত সেদিকে মন দিতে চাচ্ছি না। তাই ক্লাসে চলে গেলাম।
____________________

আজের দিনটা অন্য দিনের তুলনায় অনেকটা আলাদা ঠেকছে আমার কাছে। নিত্য দিনের গন্ধটা আজ নেই। কেমন যেনো এক অজানা শিহরণ বইছে অন্তরালে। হাজার খানেক ভাবনা নিয়ে টেবিলে বসে আছি। আর রোদ্দু সে তো ঘুমতে ব্যাস্ত। ওর ঘুমটা আমার ঠিক সহ্য হলো না। ওর পাশে গিয়ে জোর করে উঠিয়ে বলি,
-“রোদ্দু শোন না। তোর সাথে একটু কথা বলতাম।”

রোদ্দু ঘুমের ঘোরে বলছে,
-“শ্রেয়ু যা বলার কাল বলিস। আমাকে ঘুমতে দে।”

-“আচ্ছা একটা কথা বল। তোর কি সেই বক্র হাসির ছেলেটার প্রতি কোনো টান অনুভব হয়েছে? বা তাকে দেখে কোনো অনুভূতি?”

-“মাঝ রাতে কি যা-তা বলছিস? ছাড় তো ঘুমতে দে।”

-“বল না প্লিজ। ওই ছেলেটাকে দেখে তোর কোনো অনুভূতি হয়নি?”

-“শ্রেয়ু আমার কখনও কাউকে দেখে কোনো অনুভূতি হয়নি। এবার যা ঘুমতে দে।”

বলেই আমাকে একটা ধাক্কা দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে পরে। এদিকে যে আমি ওর ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেছি। সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কোমরে বেশ ব্যথা পাই। কোনো মতে নিজেকে সামলে উঠে বিছানায় গিয়ে বসি। আমার বিছানার পাশেই ছোট একটা জানালা। জানালা বলতে ভালো লাগে না। বাতায়ন! হ্যাঁ বাতায়নই আমার কাছে অনুভূতি অনুভব। তবে কি অনুভূতি তা আমার অজানা।
বাইরেটা বেশ অন্ধকার। আবছাও দেখা যাচ্ছে না। শীতল হওয়ায় সর্বাঙ্গ কেঁপে কেঁপে উঠছে। আনমনে বসে আছি। মস্তিষ্কে বারংবার সেই বক্র ওষ্ঠের হাসি চারণ করছে। সেই মানবের বক্র হাসির ওষ্ঠদ্বয় যতবার মনে পরছে ততোই আমার ওষ্ঠ প্রসারিত হচ্ছে। অক্ষযুগল বন্ধ করে বাতায়নে মাথা ঠেকিয়ে বসি। খানিকক্ষণ পর বোধ হলো শীতল হওয়া কেমন উষ্ণতা অনুভব হচ্ছে। আবদ্ধ অক্ষিদ্বয়েই ভ্রুযুগল কুঁচকে যায় আমার। হওয়া উষ্ণতা বোধ হচ্ছে কেনো? উত্তর খুঁজতে বাতায়নের বাহিরে দৃষ্টি আবদ্ধ করি। সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠে পিছিয়ে যাই। আমার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আমার ঠিক সম্মুখে থাকা আগন্তুক কে এখানে এভাবে আসা করিনি। তবে কি সমস্ত কিছু আমার মনের ভুল নাকি সত্যি? তা জানতে আবারও আগের জায়গায় গিয়ে চুপ করে বসে পরি।

-“ভয় পেয়েছো?”

তার করা প্রশ্নে আরও এক দফা চমকে যাই তার মানে সে সত্যি এসেছে। আমার কন্ঠ থমকে গেছে। তবুও খুব কষ্টে প্রশ্ন করি,
-“আপনি সত্যি……. ”

-“হ্যাঁ সত্যি এসেছি।”

-“কিন্তু কেনো? তাও এত রাতে।”

-“এই মেয়ে আমার মুখে মুখে তর্ক করো কেনো? বলেছি না তোমাকে পানিশমেন্ট দেওয়া হবে। আমি যখন যা করব, যা বলব সব শুনবে এবং মানবে। কোনো কথা নয়।”

-“তাই বলে এত রাতে এখানে কেনো এসেছেন? কেউ দেখে নিলে আমার বিপদ।”

-“চুপ! কেউ দেখবে না। আর তোমার কোনো বিপদ হতে দিব না আমি। মনে রেখো সব সময়।”

-“এত উপরে উঠলেন কি করে?”

-“মই দিয়ে।”

-“যদি পরে যান।”

-“পরে গেলে ম’রে যাব। আমি বেঁচে থাকলেও কিছু হবে না। না থাকলেও কিছু হবে না।”

-“উঁহু! আপনার আব্বু আম্মু কষ্ট পাবে।”

-“ওসব তোমাকে ভাবতে হবে না।”

-“একা এসেছেন?

-“না নিচে সাজ্জাদ, তৌফীক, আসিফ ওরাও আছে।”

-“প্লিজ চলে যান। কেনো এসেছেন?”

-“যাব। শোনো।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করি। সে আবারও তার কথা শুনতে কাছে ডাকছে। আমি বিনা বাক্যে খানিকটা সম্মুখে এগিয়ে যাই। অতঃপর সে ফিসফিস করে বলে,

-“প্রেয়সী মোর শ্রেয়সী। নিজের অন্তরালের সকল অনুভূতি কে জানান দেও। সেই অনুভূতির রাজত্ব করতে আরাবী এসে গেছে। তোমার হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দন শুধুই এই আরাবী নামে স্পন্দিত হবে। তোমার অন্তরালের সকল অনুভূতির রাজত্ব কেবল আরাবী প্রণয়নে শাসিত হবে।”

~চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here