শ্রেয়সী পর্ব ৫

0
311

#শ্রেয়সী
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

বন্দীময় এক কুটিরে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার নামই জীবন। এই বন্দীময় মূহুর্ত গুলো একেকটা মৃ’ত্যু সমতুল্য বলা যায়। যেমন আমার জীবন। ছোট থেকে এখন পর্যন্ত বাড়ি থেকে একা বেরোতে পারিনি। সব সময় পাশে কেউ না কেউ তো থেকেছে। স্কুলে যেতেও বাড়ির গাড়ি আর গার্ডসদের নিয়ে যেতে হয়েছে। বিষয় গুলো আমার কাছে ভীষণ পীড়াদায়ক। বাবার মুখের উপর কথাও বলতে পারি না। যার দরুন বাবার আদেশ মেনে গার্ডস এবং গাড়ি দুটো নিয়েই চলতে হয়।
হায়! আমার পরিচয় দেওয়া হলো না। আমি শ্রেয়সী। শ্রেয়সী রাহমানী! তিন ভাইয়ের এক মাত্র বোন। বাবার বেশ আদরের। পৃথিবীর প্রতিটা সন্তানই তার বাবার কাছে খুব বেশি আদরের হয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই।
মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর বাড়িতে তা’ন্ড’ব’লী’লা শুরু হয়। আমার ছোট থেকে ইচ্ছে ভিন্ন শহরে গিয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু আমার সম্মানিত ভাইগন এবং আমার শ্রদ্ধেয় বাবা তা কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না। তাদের কথা,”আমাদের মেয়ে এখনও ছোট। ভিন্ন শহরে গিয়ে কার কাছে থাকবে? কে দেখভাল করবে? দেশের যা পরিস্থিতি।” তাদের এসব কথায় আমি দমে যাওয়ার পত্রি নই। একদমই নই। ওরা যদি আমার কথা না শোনে, আমার কথা না মানে তাহলে আমি কেনো মানবো? অনশনব্রত করবো। যাকে বলে কঠিন ব্রত। হ্যাঁ!

দুদিন ধরে ঘরে বন্দী হয়ে বসে আছি। ঘর থেকে বেরও হইনি। ভাইয়া দের সাথে কথা তো দূর মুখও দর্শন করিনি একদম। নিজেরা তো ঠিকি বাহির থেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেছে। আর আমাকে কিনা নিজের দেশের শহরে পড়তে দিবে না। তা তো এই শ্রেয়সী মানবে না। কক্ষনও না।

-“শ্রেয়ু দরজা খোল।”

হঠাৎ দরজার করাঘাতে টেবিল থেকে উঠে দরজার সম্মুখে দাঁড়াই।

-“কি হয়েছে? ডাকছো কেনো?”

-“কত দিন ঘর বন্দী হয়ে থাকবি? ঘর থেকে বেরিয়ে আয়।”

-“কেনো বের হবো? তোমাদের কথায় সব চলবে নাকি? আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। এত দিন অনেক সহ্য করেছি আর নয়। মানে নাআআ”

আমার চিৎকার দরজার অপর পাশে মা জোরে এক রামধমক দিয়ে বসে আমাকে। আমি ধমক খেয়ে চুপ মেরে ভয়ে দরজা খুলে দেই।

-“চ’ড় দিয়ে একদম সব দাঁত ফেলে দিব বে’য়া’দ’ব মেয়ে কোথাকার।”

ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো মুখ করে মায়ের মুখশ্রীতে দৃষ্টি আবদ্ধ করি,
-“একদম ন্যাকামো করবে না আমার সাথে। কি ভেবেছো? বুঝি না আমি তোমার সব নাটক। খেতে চল আমার সাথে।”

-“খাব না আমি।”

-“কেনো খাবে না?”

-“তোমরা আমাকে ভালোবাসো না। আমি না খেয়ে ম’রে যাবো।”

আচমকা ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দেয় আমার মা শেজু রায়তা। এবার আর আমি চোখের জল আটকে রাখতে পারি না। টপটপ করে আপন মনে গড়িয়ে পরতে থাকে আমার নোনাজলের স্রোত। কোত্থেকে যেনো দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে তনুফ ভাইয়া মায়ের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
-“কথায় কথায় চ’ড় কেনো মারতে হবে মা? বুঝিয়ে বলা যায় না? আমার বোনটা এখনও ছোট অনেক। ওর মনটা এখনও কাঁচা। একটুতেই ভেঙ্গে যায়। তার গায়ে হাত তোলা কি খুব বেশি প্রয়োজন মা?”

-“চুপ করো তনুফ। তোমার বাবা আর তোমরা মিলে ওকে মাথায় তুলেছো। মি’চ’কে শ’য়’তা’ন একটা। বয়স কত হয়েছে এর? এখনই অন্য শহরে পড়তে চায় তাও একা। চ’ড় দিলেই সব ভূত বেরিয়ে যাবে।”

-“এটা তুমি বসে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলতে পারো। এভাবে গায়ে হাত তুলে ঠিক করোনি।”

-“কাকে তুমি ঠান্ডা মাথায় থাকতে বলছো? তোমাদের গায়ে কখনও হাত তুলেছি? তুলিনি। কারণ কি জানো? তোমরা তিনজন আমাকে কখনও জ্বালাতন করতে না। কিন্তু এই মেয়ে তোমাদের তিনজনের বকেয়া সুদেআসলে সব শোধ করছে।”

-“শান তোমাকে কত জ্বালাত ভুলে গেলে?”

-“শানের বিষয় আলাদা।”

-“আলাদা কেনো হবে মা?”

-“অতশত বোঝাতে পারব না। তোমার আদরের বাদর বোন কে বুঝিয়ে খেতে এসে নিচে। তোমার বাবা আর শাদমান বসে আছে।”

-“তুমি যাও আমি বোন কে নিয়ে আসছি।”

মা আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে নিচে চলে যায়। তনুফ ভাইয়া আমার কাঁধ জড়িয়ে ঘরের ভিতরে নিয়ে এসে বিছানায় বসি দেয়। ভাইয়াও আমার পাশে বসে পরে।

স্থীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-“শহরে পড়ার ভূত মাথায় কে চাপিয়েছে?”

আমি নাক টেনে জোরে শ্বাস নিয়ে বলি,
-“কেউ দেয়নি ভাইয়া আমি নিজের ইচ্ছায় পড়তে চাই।”

-“তুই কি জানিস শ্রেয়ু আমাদের শহরে বড় শহরের ছেলে-মেয়েরাও পড়তে আসে। আমাদের শহরেই তো দেশের সবচেয়ে ভালো কলেজ আছে। তুই সেখানে পড়বি।”

-“আমার দরকার নেই ভালো কলেজের। আমি এখানে পড়ব না।”

-“কেনো পড়বি না কারণটা বল।”

-“আমার গার্ডসদের সাথে যেতে একদমই ভালো লাগে না। ওদের নিয়ে গেলে কেমন বিলাসীতা মনে হয়।”

-“ওদের আর পাঠাব না। তাহলে চলবে তো?”

আমি মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সম্মতি দেই। ভাইয়া এক হাত দিয়ে আমার কাঁধ জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“তাহলে সমস্যা কোথায় বল।”

-“ভাইয়া বাবা তো সব সময় বলে আমাদের আশেপাশে অনেক শত্রু। যারা আমাদের ক্ষতি করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। সে জন্য তো তোমাকে শান ভাইয়াকে এমনকি দাদাভাই কেও ভিন্ন শহরে পড়াশোনা করিয়েছে। এখন আমি যদি এখানে ভর্তি হই তোমরা কি গ্যারেন্টি দিতে পারবে ওরা আমার ক্ষতি করবে না?”

আমার কথায় তনুফ ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ করে নিচে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“বাবার সাথে আমি কথা বলব। এবার খুশী?”

ভাইয়ার কথায় আমি চিৎকার করে হেসে ভাইয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। ভাইয়াও হাসছে।
-“এবার তে অনশনব্রত ব্রেক করে খেতে যাবি? জলদি চল না হয় মা এসে এবার আমাকেও চ’ড় মা’র’বে।”

নিচে গিয়ে দেখি দাদাভাই, ভাবি, বাবা আর মা খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। মা আমাকে দেখে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”মেয়ে কে দিন দিন আদরে আহ্লাদী করছো।” বাবা মায়ের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চুপচাপ খেতে থাকে। আমি গিয়ে বাবার পাশের চেয়ারে বসে পরি। বাবার দিকে তাকিয়ে বড়সড় হাসি দেই। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-“তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো আম্মু।”
উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ সম্মুতি দিয়ে খাওয়া শুরু করি। বাবার খাওয়া শেষ হওয়ায় উঠে যেতে থাকে। তনুফ ভাইয়া বাবাকে থামিয়ে বলে,
-“বাবা তোমার আর ভাইয়ার সাথে জরুরি কথা ছিলো।”

পাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে দাদাভাই বলে,
-“কি বিষয়ে কথা বলবি?”

দাদাভাই বরাবরই গম্ভীর প্রকৃতি। তবে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। সব সময় আমার সাথে মোলায়েম কন্ঠে কথা বলে। তনুফ ভাইয়া দাদাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“শ্রেয়ুর বিষয়ে ভাইয়া।”

ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাদাভাই। আমি ভয়ে ঢোক গিলে খাওয়ায় মনোযোগ দেই।
-“খাওয়া শেষ করে তোমরা আমার ঘরে এসে। সেখানেই সকল বিষয় আলোচনা হবে।”

বলেই বাবা চলে যায় নিজের ঘরে। আমি তনুফ ভাইয়ার দিকে তাকালে ভাইয়া আমাকে চোখের ইশারায় আশ্বাস দেয়।
_______________

-“তুমি কি বলতে চাইছো তনুফ? আমি শ্রেয়সী কে অন্য কোথাও পড়তে পাঠাই?”

-“বাবা তুমি আমাকে, ভাইয়াকে, শানকে দূরে রেখেছো শুধুমাত্র শত্রুর থেকে বাঁচানোর জন্য। তাহলে শ্রেয়সী কে এখানে ভর্তি করিয়ে বিপদে ফেলা হয়ে যাবে না বাবা?”

-“তাহলে কি শ্রেয়সী কে ওর ইচ্ছে মত ছেড়ে দিব?”

-“আমি তা বলছি না বাবা। এ শহরে আনাচে কানাচে আমাদের বিরোধী দলের লোকের অভাব নেই। শ্রেয়সী কে রাস্তায় কিছু করবে না তার কি গ্যারেন্টি বাবা?”

আমি দরজার আড়াল থেকে ভাইয়া আর বাবার সব কথা শুনছিলাম। আচমকা কথা থেমে যাওয়ায় খানিক চিন্তায় পরে যাই। চুপ হয়ে গেলো কেনো ওরা। অনেক্ক্ষণ পর বাবা বলে,
-“শ্রেয়সী কে শহরেই পড়তে পাঠাব। কিন্তু ওর সাথে দেখা করতে যাবে না কেউ।”

পাশ থেকে ভাবি বলে উঠে,
-“দেখা করতে না গেলে শ্রেয়সী অত দূর থাকবে কি করে?”

-“ফোনে যোগাযোগ করবে। ওকে আমি ফোন কিনে দিব।”

দাদাভাই বলে,
-“কিন্তু বাবা দেখা কেনো করতে যাবো না?”

-“কারণ আমি চাই না আমার মেয়ের কোনো ক্ষতি হোক। শ্রেয়সীকে শহরে পাঠিয়ে দিব এ কথা কাউকে জানানো যাবে না। আমরা বার বার শ্রেয়সীর সাথে দেখা করতে গেলে যে কেউ সন্দেহের বসে শ্রেয়সীর হদিস পেয়ে যাবে। সেই চিন্তা করেই মানা করছি।”

-“আরেক বার ভেবে নেও বাবা। এভাবে এত দূর শ্রেয়সী কে পাঠানো ঠিক হবে না৷ ওও এখনও ছোট। বোঝার বয়সও তেমন নয়। বাইরের দুনিয়ার সাথে খুব কম মিশেছে।”

দাদাভাইয়ের কথা শেষ হতেই তনুফ ভাইয়া বলে,
-“রৌদ্রসী শ্রেয়সীর ছোট বেলার বন্ধু। ওর পরিবারের সাথে কথা বলে ওকেও শ্রেয়সীর সাথে পাঠিয়ে দেই?”

বাবা প্রশান্তি নিশ্বাস টেনে বলে,
-“ঠিক আছে এখনই যোগাযোগ করো।”

দাদাভাই বাবাকে বলে,
-“হূট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিও না বাবা। চিন্তাভাবনা করো তারপর সিদ্ধান্ত নিও।”

দাদাভাইয়ের কথার সাথে তাল মিলিয়ে মা বলে,
-“একদম ঠিক বলেছিস। ইঁচড়েপাকা মেয়েটা কোথাও পাঠানোর দরকার নেই। বাদর মেয়ে। নিজের হাতে খাবার খেতে পারে না ঠিক মতো সে থাকবে একা। দুদিন পর কেঁদে কে’টে চলে আসবে বলে দিলাম।

মায়ের কথায় ভাবি ফিক করে হেসে দেয়। আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে খুশিতে হাত তালি দিয়ে ফেলি। বোঝে উঠার সাথে সাথে দৌড়ে রুমে চলে আসি। একটু পর তনুফ ভাইয়া ঘরে এসে বলে,”শান তোর সাথে কথা বলবে। তুই কথা বল আমার কাজ আছে।” কথা শেষ হলে ফোনটা ঘরে দিয়ে আসিস।”
বলেই ফোন রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

-“কিরে বুচি শুনলাম তোকে নাকি বাবা শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে?”

-“পড়তে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে।”

-“আরে তুই বাবা মা কে এতই জ্বালাস যে তোকে বাড়ি থেকে বিদায় করছে।”

-“বলেছে তোমাকে? আমার মতো এত শান্ত ভদ্র বাচ্চা এই সিলেট শহরে আর একটাও পাবে না।”

ফোনের অপর পাশ থেকে শান ভাইয়া হেসে কুপকাত। হেসেই যেনো মৃ’ত্যু বরণ করার পণ নিয়েছে।

-“কি বললি? তুই বাচ্চা? ঠিক সময় বিয়ে দিলে বাচ্চার মা হতি।”

বলেই আরেক দফা হাসিতে ফেটে পরে শান ভাইয়া। দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার কলে বলি,
-“বুড়ো কোথাকার। তোমার লজ্জা করে না? আজ পর্যন্ত একটা গার্লফ্রেন্ড তো দূর মেয়ে বন্ধুও জুটাতে পারোনি। আবার বড় বড় কথা।”

-“তুই কি জানিস? আমি যেনো একবার চোখ তুলে কারো দিকে তাকাই তার জন্য তারা মরিয়ে হয়ে যায়। এই শান রাহমানী রমনীগণের পিছু যায় না। রমনীরা শানের পিছু আসে।”

-“চাপাবাজী সব। এত চাপা আসে কোত্থেকে ভাইয়া?”

-“চাপাবাজী হতে যাবে কেনো? শান রাহমানী যা বলে সত্য বলে। সদা সত্য!”

-“কথায় কথায় এমন ডায়ালগ দিবে না তো।”

-“ডায়ালগের কি হলো? আমি শান রাহমানী তা বলব না?”

-“বলতে থাকো আনলিমিটেড। রাখছি আমি।”

খট করে ফোন রেখে দেই। উৎসুক মুনটা ঝগড়া করে খারাপ করার একদম ইচ্ছে নেই আমার। বাবা শহড়ে পড়ার জন্য রাজি হয়েছে তা নিয়ে আমি মহা খুশি। তার থেকে বড় কথা আমার সাথে রোদ্দুও যাবে।
জীবনের আরেক নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি। জানা নেই আমার এই অধ্যায় কেমন হবে। তবে যেমনই হোক জীবনের সবটা আনন্দ দিয়ে উপভোগ করবো। আমার ভাবনার মাঝেই মা ঘরে এসে বলে,
-“পরশু তোমাকে ঢাকা পাঠানো হবে। আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখো।”

-“পরশু কেনো মা? আমার রেজাল্ট আরো একমাস পর দিবে।”

-“তনুফ কোচিং-এ ভর্তি করিয়ে দিবে তোমাকে সেখানেই পড়বে।”

-“থাকবো কোথায় আমি? তোমাদের ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে আমার।”

-“ন্যাকামো করবে না আমার সাথে। আমাদের ছাড়া না থাকতে পারলে যাওয়ায় জন্য জেধ করতে না।”

-“রোদ্দু যাবে না?”

-“যাবে।”

বলেই ঘর থেকে চলে যায় মা। আমি পুরো রুমে দৌড়ে লাফিয়ে নিজের আনন্দ উপভোগ করছি। ইশ! কতই না আনন্দ হবে সেখানে। কেউ থাকবে না। না বাবা, না ভাইয়ারা আর না কেনো গার্ডস। ইয়েএএ!

আমার ঢাকায় চলে যাওয়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে। বাবা গতকাল আমাকে একটা ফোন কিনে দেয়। শান ভাইয়া আমার ফোনে কল করে আনন্দ বিলাস করছিলো। উচ্চস্বরে হেসে বলছিলো,” যাক অবশেষে আমাদের বাড়ি পেত্নী মুক্ত হলো।”
দাদাভাই যাথা রীতি গম্ভীর। আমি গিয়ে পাশে বসতেই বলে উঠে,
-“আমাদের ছাড়া ভালো থাকবি।”

আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। দাদাভাই চোখের পানি মুছে বলে,”বোকা আর কেউ যাক বা না যাক আমি তোর সাথে দেখা করতে যাব। মন খারাপ করবি না একদম।”

-“সত্যি যাবে তো?”

-“তোর ভাবি কেও নিয়ে যাবো। চল দেরিয়ে হয়ে যাচ্ছে।”

আমার হাত ধরে নিয়ে যায় গাড়ির কাছে। বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে,”একদম দুষ্টমি করবে না আম্মু। সব সময় ভালো মেয়ে হয়ে থাকবে।” আমি মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ সম্মতি দেই৷ অঝোরে কাঁদছে মা। মায়ের কাছে যেতে শক্ত করে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। ভাবির চোখও ঝাপসা। অতঃপর বুকে কষ্টের পাহাড় বেঁধে সবাই কে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসি। রোদ্দুকে ওর বাড়ি থেকে নিয়ে যাবো।

রোদ্দু আর আমি গাড়িতে বসে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছি। দাদাভাই আর তনুফ ভাই একটু পর পর পিছনে ফিরে আমাদের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিচ্ছে।
হঠাৎ মনে হচ্ছে গাড়ির গতি অনেকটা বেড়ে গেছে। তনুফ ভাই বার বার পিছনে মুড়ে গভীর ভাবে কিছু পর্যবেক্ষণ করছে। দাদাভাই মনোযোগ সহকারে সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চলাচ্ছে। আমি কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে ভাইয়া কে প্রশ্ন করি,”কি হয়েছে দাদাভাই এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছো কেনো? এ্যাক্সিডেন্ট হয়ে যাবে তো।”

তনুফ ভাইয়া ব্যস্ত কন্ঠে বলে,
-“ভয় পাস না শ্রেয়ু। ব’দ’মা’শ গুলো পিছু নিয়েছে।”

পাশ থেকে রোদ্দু কান্নার স্বরে বলে,
-“শ্রেয়ু আমরা মনে হয় আর বাঁচবো না। কপালে ওদের হাতেই ম’র’ন লেখা ছিলো?”

বলে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয় রোদ্দু। রোদ্দু কান্না দেখে আমি ফিক করে হেসে দেই। তনুফ ভাইয়া একটা ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।
পিছনে তাকিয়ে দেখি দুটো গাড়ি একদম আমাদের গাড়ির কাছে চলে এসেছে। ভয়ে আমার হাত পা বরফের ন্যায় জমে যাচ্ছে। কি হবে? তবে কি আজ এখানেই জীবনে সকল অধ্যায়র পাঠ চুকে যাবে?

~চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here