পর্ব-৭(শেষ পর্ব)
#শেষ_থেকে_শুরু।।
,
,
মাহি রুমে আসতেই আমি ওকে বসতে বলি।
কিন্তু আবার চুপ চাপ বসে আছি।
আমার মন আমাকে বার বার বলছে বলে দে। অনেকটা সময় ধরে মনের মধ্যে কথা গুলো রেখে দিয়েছিস।
মাহি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকাই আবার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি।
মাহিঃকিছু হয়েছে? কোনো সমস্যায় আছেন?
আমি মনে মনে ভাবছি বলতে পারছিনা এইটাইতো সমস্যা৷
আমিঃ ভালো আছেন?
মাহিঃ হ্যা। কিন্তু এইটা বলার জন্য?
আমিঃ না মানে ( আমিতো পুরো ঘেমে শেষ। এসির রুমে বসে ঘামছি)
মাহিঃ আপনার কি শরীর খারাপ?
আমিঃ না। আচ্ছা আপনি কাজ করুন দরকার হলে ডাক দিবো।
মাহি উঠে চলে যাচ্ছে। আমি ওকে পেছন থেকে ডাক দেই-
আমিঃশুনুন
মাহি পেছন ফিরে তাকাতেই-
আমিঃ আজকে আমাকে একটু সময় দিবেন। কথা ছিলো।
মাহি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে – এইটার জন্য?
আমিঃ হ্যা।
মাহি হালকা হাসি দিয়ে- বললেই পারেন। এইটার জন্য এমন করার কি আছে।
এর পর চলে যায়। আর আমি ভাবছি বলে তো দিলাম কিন্তু গিয়ে কি বলতে পারবো নাকি আবার এই একি অবস্থা হবে।
আমি ভাবতে ভাবতে কখন সময় হয়ে গেছে যাওয়ার খেয়াল নেই।
মাহি এসে ডাক দিলো।আর বললো ও নিচে দাড়িয়ে আছে।
আমিও নিচে গিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হই।
আজকে একটা পার্কে গেলাম।
পার্কটা প্রায় ফাকা।
দুইজন বসে আছি। নদীর দিকে মুখ করে।
মাহিঃ আপনি জানি কি বলবেন?
আমিঃ হ্যা।
এর পর চুপ করে আছি। মাহি দেখছি চুপ চাপ বসে আছে। সব নিরব। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
মাহিঃ আমার দিকে তাকিয়ে- কি হলো কি ভাবছেন? বলেন?
আমিঃ আচ্ছা আমি ছেলেটা কেমন? মানে যদি কাউকে বিয়ে করি সেকি খুশি হবে?
মাহিঃ এইটার জন্য।
বলেই হেসে দিলো।
আমিও বেকুবের মত হাসছি।
মাহিঃ আমার মতে আপনি খুব সহজ একটা মানুষ। যাকে যে কেউ পড়তে পারে কোনো সমস্যা ছাড়াই। আপনাকে যে পাবে সে অনেক লাকি হবে। আর এখন এই প্রশ্ন? কাউকে পছন্দ হয়েছি নাকি?
আমিঃ ইয়ে মানে বিয়ে নিয়ে ভাবা হচ্ছে৷
মাহি আমার দিকে তাকিয়ে বলছে ওয়াও। আগে বলবেন না৷
আমিঃ না মানে
মাহিঃ মেয়েটা কে?
আমিঃ আরে শুনুন। আসলে মেয়ের বাবা মা রাজি। কিন্তু মেয়েকে বলা হয়নি৷
মাহিঃ আমি কথা বলবো মেয়ের সাথে। আপনার মত ছেলেকে হাত ছাড়া যেনো না করে।
আমিঃ শুনুন আগে।
মাহিঃ কি শুনার আছে এখন বিয়ের শানাই বাজবে।বলেই হাসছে মাহি।
আমিঃ আরে আমি আপনার কথা ভাবছি।
মাহি শুনেই চুপ হয়ে যায়।
আমিঃ আপনি না বললেন আমার মত ছেলে হয়না। যে পাবে সে অনেক খুশি হবে। তাহলে আপনি আবার ফিরে আসুন।
আমাকে শেষ থেকে আবার শুরু করার আরেকটা সুযোগ দিন।
আমি চাই আবার আমরা শুরু করি।
মাহি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিঃ আপনার বাবা মাও রাজি কিন্তু আপনাকে বলেননি। আমি মানা করেছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম যে আপনি কি চান।
মাহি এর পর আবার নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিও তাকিয়ে আছি৷
হঠাৎ মাহি উঠে চলে যাচ্ছে৷কিছুই বলেনি।
চলে গেলো।
আমি ওইখানেই বসে আছি। একটা কিছু বলে যেতো। কি জন্যে গেলো।
২ ঘন্টা ধরে ওইখানেই বসে ছিলাম।
একটু পর কল আসে মাহির বাবার।
আংকেলঃ তুমিকি ওরে কিছু বলছ?
আমিঃ হ্যা সব। কিন্তু কোনো উত্তর দেয়নি৷
আংকেলঃবাসায় আসলো এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমিকি সত্যি মেনে গেছি কিনা৷ পরে নিজের রুমে চলে গেলো।
আমিঃ হয়তো চায়না আংকেল।
আংকেলঃ আমরা মানাবো তুমি ভেবোনা।
আমিঃ না আংকেল যদি ও না চায়তো আমি জোর করবোনা।
আংকেলঃ ঠিক আছে৷
এর পর আমি বাসায় চলে যাই। কিন্তু কিছুই ভালো লাগছেনা।
কিছু একটা বলে সেতো।
পরেরদিন অফিসে আসলো না মাহি৷
আমি ভাবলাম হয়তো আর আসবে না৷ আমি মাহির বাবাকে কল দেই।
আমিঃ আংকেল মাহি কই?
আংকেলঃ ওতো ওর রুমে সকালে যেতে বললাম অফিসে কিন্তু বলে ওর ভালো লাগছেনা ও যাবে না।
আমিঃ আংকেলকে বললাম সমস্যা নেই।
এর পর বসে আছি কিন্তু কোনো কাজেই মন বসছেনা।
কিন্তু দুপুরের সময় মাহির নাম্বার থেকে কল আসলো দেখে আমিতো অবাক।নাম্বারটা সেভ ছিলো। কিন্তু কতটা সময় পর কল আসলো আমার খেয়াল নেই।
আমিঃ হ্যালো।
মাহিঃ আপনি আমাকে আবার ফিরে কেনো চান? মানে আমিতো আপনার এত বড় সমস্যার কারন ছিলাম। বলা যায় আপনার জীবন এইদিক থেকে ওইদিক করে দিয়েছি।
আমিঃ কিছুক্ষন চুপ থেকে- দেখুন আসলে যখন আমাদের বিয়ে হবে তখন আমি আপনার সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানতাম না। বাবা মার ইচ্ছায় বিয়ে করছিলাম।কিন্তু আপনাকে কেনো জানি ভালো লাগতো।
যখন বিয়েটা আর হলো না তখন কেনো জানি সব সময় নিজের মাঝে মনে হতো কিছু একটা হারিয়েছি।
এর পর আপনার সাথে পরিচয় হলো। কথা শুরু হলো। তখন দেখলাম যেমনটা সবার ইচ্ছা থাকে তার জীবন চলার সাথীটা হবে আপনি ঠিক তেমন।
আপনার সাথে সময় কাটাতে কাটাতে একটা সময় বুঝতে পারি ওইযে শূন্যতা অনুভব করতাম সেইটা আপনি।
যখন আপনি বলেন আপনি আমার উপর রাগ নন৷ তখন আমার উপর থেকে বড় একটা বোঝা সরে যায়।
একটা সময় বুঝতে পারি আমি আপনাকে ভালোবাসি।
হ্যা ভালোবাসি এই জন্যই আবার আমি ফিরে পেতে চাই৷
আমাদের শেষ হয়ে যাওয়া সেই গল্পটা আবার নতুন করে শুরু করতে চাই।
মাহি এইসব এতক্ষন চুপ চাপ শুনছিলো।
মাহিঃ ধন্যবাদ সব কিছু সত্য করে বলার জন্য।
এর পর ফোনটা রেখে দিলো ।
আমি বসে আছি আর ভাবছি কেনো এই প্রশ্ন। কেনোই না আমি আজকে নির্ভয়ে বলে দিলাম সব। কিছুই জানি না।
এর পর দুইদিন হলো মাহির কোনো খবর নেই। আমি কেনো জানি ফোন দিতে পারিনি।
দুইদিন পর হঠাৎ কল আসলো।ফোন দিয়ে বললো – ভালো আছেন?
আমিঃ হ্যা৷
মাহিঃ কালকে বিকেলে একটু বাড়ি আসবেন?
আমিঃ হ্যা।
এর পর আবার রেখে দেয়৷
পরেরদিনের অপেক্ষায় আমি রাতে আর ঘুমোতে পারিনি।
পরেরদিন বিকেলে আমি ওর বাড়ি যাই।
আংকেল আমাকে দেখে বলে ও কিছু বললো?
আমিঃ না।
আংকেলঃ ও ছাদে আছে।
আমি এর পর ছাদে যাই।
গিয়ে দেখি এক কোনায় বসে আছে।
আমি ওর দিকে গিয়ে পাশে বসে পরি।
মাহি আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের মত বসে পরে।
আমিও চুপ চাপ বসে আছি৷
মাহিঃ আসলে আমি ওইভাবে আসতে চাইনি। কিন্তু আমার কিছুই বের হচ্ছিলো না মুখ দিয়ে।
আমি আসলে ভাবিনি আপনাকে নিয়ে৷ কিন্তু যখন বললেন। ভেবেছিলান না করে দিবো কিন্তু সব জানার পর আমি নিজ থেকেই আবার সব কিছু কেনো জানি ভাবতে থাকলাম। এবং শেষে-
এর পর চুপ হয়ে গেলো । কিছুক্ষন পর–
মাহিঃ এখনো বুঝেন নাই উত্তরটা?
আমিঃ উত্তর?
মাহি হেসে দিলো
মাহিঃ আপনি আসলেই খুব বোকা৷
আমিঃ মানে?
মাহিঃ আমি পারমিশন দিলাম শেষ থেকে শুরু করার সব কিছু।
আমি যেই খুশি হয়ে ওর দিকে তাকালাম। তখনি মাহি বলে বসে – কিন্তু আমার সর্ত আছে।
আমিঃ কি সর্ত?
মাহিঃ মা বাবাকে মাফ করে ফিরে জাবেন। আমার পুরো বাড়ি চাই।আমার সবার সাথে থাকার খুব ইচ্ছা।
আমিঃ এইটাই?
মাহিঃ হুম।
আমি বললাম আমি রাজি।
এর পর দুইজন চুপ করে বসে আছি।
হয়তো এখন কিছু বলার পালা কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না।
মাহিঃ কিছু বলবেন না?
আমি বুঝতে পারি কিন্তু মুখ দিয়ে আসছেনা।
আমি আস্তে আস্তে আমাদের মাঝে যে হাতটা ছিলো। ওর বাহাতটা আমি আমার ডান দাত দিয়ে ধদি। শুধু আংগুল গুলো।
এর পর সেই এক ভাবেই বসে।
আমিঃ আমি আপনাকে ভালোবাসি।
মাহি হাহা ঃ আপনাকে?
আমিঃ না মানে তোমাকে।
মাহিঃ হুম।
আমিঃ হুম?
মাহিঃ হ্যা হুম।
আমিঃ তুমি কিছু বলো।
মাহিঃ এখন না অন্য কোনো একদিন।
আমিঃ এখন প্লিজ।
মাহিঃ না।
আমি চুপ করে বসে আছি।
মাহি আমাকে ডাক দেয়। এই শোন।
আমিঃ হ্যা?
মাহি আমার কানের কাছে এসে বলে- ভালোবাসি তোমাকে বোকা ছেলে।
এর পর অনেক্ষন সময় চলে যায়৷ পরে হাত ধরেই নিচে আসি৷ ওর বাবা মা খুশিতে মিষ্টি নিয়ে আসে।
আমি আমার বাবা মাকে বুঝিয়ে আবার কথা বলাই। এবং শেষে এইবার আমাদের বিয়েটা খুব সুন্দর ভাবেই হয়ে যায়৷
আমাদের সেই শেষ হয়ে যাওয়ার গল্পটা আবার শুরু হলো। হয়তো সেই শেষ থেকে আমাদের আবার কাছে আশার গল্পটা শুরু হয়েছিলো। এবং নতুন শুরুটা আমাদের জন্য শুভ হবে তাই আমি দোয়া করি।এখন মা খুব খুব খুশি মাহির মত বউ পেয়ে৷ মা বাবা ভুল করেছিলেন তারা তা বুঝেছেন। তাই এখন আমার খুশির কোনো শেষ নেই।
,
,
The End…..
,
(লিখার ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন)
,
,
#লেখকঃইমাম।
,