শেষের পাতায় তুমি, পর্ব:৯

0
973

#শেষের_পাতায়_তুমি
#পর্ব-০৯
#writer_Shanta_islam

-সাদিক কি হয়েছে তোমার? সাদিক,,সাদিক,,,
কিছুক্ষণ পর সাদিক স্বাভাবিক হয়। আবার প্যানিক এটাক হয়েছিলো৷ সাদিককে এভাবে দেখে খুব খারাপ লাগছে,,যেভাবেই হোক ওকে এই ট্রোমা থেকে বের করতে হবে। সাদিকের মস্তিষ্ক থেকে রিয়ার সৃতি একেবারে মুছে ফেলতে হবে।
সাদিক টানা দু-দিন অসুস্থ ছিলো। বিছানা থেকে ভালো করে উঠতে পারেনি। দিন যত যাচ্ছে সাদিকের সাথে ততো ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
-এই যে আর কদিন এভাবে মরা মুরগীর মতো সুয়ে থাকবে,,উঠো জলহস্তির মতো শরীরটাকে একটু নাড়াচাড়া দেও।
সাদিক আমার কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,,,সুচরিতা তোমার মথা ঠিক আছে,,,আমাকে কোন এংগেল দিয়ে তোমার জলহস্তি মনে হয়।
-আমার তো সব এংগেল দিয়েই তোমাকে জলহস্তি মনে হয়। বিয়ের একটা মাস পার হয়ে গেলো আর তুমি সুয়ে বসে দিন পার করছো। আমার বান্ধুবিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছে তোর জামাই কি করে? এখন আমি কি জবাব দেই,,আমার জামাই একজন অলস প্রানী,,জলহস্তির মতো সারাদিন বিছানায় গড়াগড়ি করে আর সুয়ে থাকে,,,,তোমাকে বিছানায় জাগা দেওয়াটাই উচিৎ হয়নি আমার,,,,
-এক্সকিউজমি বিছানাটা আমার আর তুমি আমাকেই আমার বিছানায় জায়গা না দেওয়ার হুমকি দিচ্ছো?
-হ্যা দিচ্ছি,,,আজ এপার নাহয় ওপার হবে,,
সুচরিতাকে দেখে মনে হচ্ছে ওর মাথা চটে আছে,,এই ভালো থাকে আবার এই গরম হয়ে যায়,,মেয়েটার মুডের কোনো ভেলিভিশন নেই,,কখন ভালো মুডে থাকে কখন খারাপ মুডে থাকে বুঝা মুসকিল অবশ্য মুসকিল হবে নাই বা কেনো,,পৃথিবীর সব মেয়েদেরি মন বুঝা মুসকিল। এদের মন বুঝার কোনো মেশিন থাকলে ভালো হতো,,,আমি মা আর সুচরিতার উপর মেশিনটা অবশ্যই ট্রায় করতাম। কথাটা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে,,
– কী হলো,,তুমি এমন মুচকি মুচকি হাসছো কেনো? ভুতে ধরলো নাকি?
-এমনিই হেসেছি হাসাটাও কী অপরাধ হয়ে গেলো নাকি?
সুচরিতা আলমারি থেকে সাদা শার্ট আর প্যান্ট বের করে বললো,,,হয়েছে আর হাসতে হবে না,,যাও যেয়ে রেডি হয়ে নেও,,,
আগেই বলেছিলাম মেয়েদের মন বুঝা বড়ই মুসকিল,,মেয়েটা কি করতে চাইছে কিছু বুঝতে পারছি না। হঠাৎ রেডি হতে বললো কেনো? সুচরিতার হাত থেকে শার্টটা নিয়ে বললাম,,,কেনো রেডি হয়ে কোথায় যাবো?
-ইন্টারভিউ দিতে,,,
-কিহ! ইন্টারভিউ দিতে,,
-হ্যা ইন্টারভিউ,,এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
-অবাক হবো না,,কোন ইন্টারভিউ?কীসের ইন্টারভিউ? আমিই কেনো ইন্টারভিউ দিব?
সুচরিতা আমার হাতে প্যান্টটাও ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,
জবের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাবে,,আমি আগে থেকেই এপ্লাই করে রেখেছি।
-কিন্তু কেনো?
সুচরিতা ঠেলে ওয়াসরুমে ডুকোতে ডুকোতে বললো,,,কেনো মানে সারাজীবন কী বেকার থাকার ইচ্ছে আছে নাকি?
ইন্টারভিউয়ের জন্য সুচরিতা অনেক জোরাজুরি করলো। তাই বাধ্য হয়ে ইন্টারভিউ দিতে যেতে হলো। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের ফ্যাক্টরিটা মামা দেখাশোনা করে। মূলত ওখান থেকেই কিছু আসে যেটা দিয়ে সংসারটা চলে আসছে। রিয়া মারা যাওয়ার পর নিজেকে একটা রুমের মধ্যে বন্ধি করে নিয়েছিলাম,,আমার আশেপাশে যে আমার পরিবার আছে,,তাদের প্রতিও আমার একটা দায়িত্ব আছে সেটা ভুলে গিয়েছিলাম। বাসা থেকে বের হতেই ফোনে একটা মেসেজ আসলো,,অন করে দেখি সুচরিতা মেসেজ পাঠিয়েছে,,ইন্টারভিউয়ে যদি সিলেক্ট না হও তাহলে রাতের খাবার বন্ধ। আর বিছানায়ও সুতে দিব না। বেস্ট অফ লাক জলহস্তি।
কিছুক্ষণ পর মা আর রাফিরও মেসেজ আসলো,,,বাবা ভালো করে ইন্টারভিউ দিস ফকিরের কাছে পাচ টাকা মানত করেছি,, রাফি মেসেজ পাঠিয়েছে- ভাইয়া ইন্টারভিউয়ে যদি টিকে যাস তাহলে ছোট বেলার চিপসের মধ্যে পাওয়া সেই পান্ডাটার অর্ধেক মাথা ফিরত দিব। তার সাথে রেলগাড়ীর সেই চুরি করা নাটটাও ফিরত দিবো। বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি।
সুচরিতা যে পাগল তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু সুচরিতার সাথে থাকতে থাকতে আমার মা আর ভাইও যে পাগলদের খাতায় নাম লিখিয়েছে তা জানা ছিলো না।
ইন্টারভিউ শেষে রাত করে বাড়িতে ফিরলাম। একি দরজা খোলা এতো কেয়ারলেস ভাবে দরজাটা খুলে রেখেছে কেনো? চোর ডাকাত ডুকে পরলে কি হতো! বাসায় ডুকতেই দেখি অন্ধকার,,,এমন অন্ধকারের মধ্যে কিছুই দেখতে পারছি না। মা মা মা,,,,সুচরিতা,,সুচরিতা এতোবার ডাকছি কারোরি সারা পাচ্ছি না। কোনো বিপদ হলো না তো। হঠাৎ পায়ের মধ্যে কিছু একটা বাধলো,,পা দিয়ে নাড়া দিতেই ফটাস করে আওয়াজ হলো,,মনে হচ্ছে কোনো বোমা ফেটেছে। সাথে সাথে পুরো ঘরের লাইট জ্বলে উঠে,,,
-হেপি বার্ডে টু ইউ। হেপি বার্ডে ডেয়ার সাদিক হেপি বার্ডে টু ইউ। সাওন ইশা আর তানিয়াও এসেছে দেখছি। এক সাথে সবাই চেচিয়ে আমাকে উইশ করছে। আর আমি পাগলের মতো হা করে ভাবছি একটু আগে কি হলো,,,
রাফি- কিরে এখনো দাড়িয়েই থাকবি নাকি কেকটা কাটবি!
আজ আমার জন্মদিন ছিলো কিন্তু আমি নিজেই জানি না। তিন বছর ধরে নিজেকে এতোটা গুটিয়ে নিয়েছিলাম জীবনের মূল্যবান অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি।
আমি কেকটা কেটে মা আর রাফিকে এক পিস খাইয়ে দেই। সবাইকে একসাথে এভাবে দেখে ভালো লাগছে। অনেক দিন পর মন খুলে আনন্দ করলাম।
– সাদিক বৌমাকে খাওয়াবি না? ওয়ি তো তোর জন্য সবকিছু আয়োজন করলো!
রাফি- ভাইয়া তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস না।
সুচরিতা সব আয়োজন করেছে কথাটা শুনে ওর দিকে তাকাই। সুচরিতা এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। এখন খেয়াল করলাম ও আজ শাড়ি পরেছে। কেকটা খাইয়ে দিব কি না ভাবছি। জিনিসটা ওর ভালো নাও লাগতে পারে। কেক খাইয়ে দেওয়ার কথাটা ঘুরিয়ে বললাম নানি আসেনি কেনো তানিয়া?
-ওই বুড়ি আসেনি কেনো আমি কীভাবে বলবো উনাকে যেয়ে জিজ্ঞেস করো। কথাটা বলে তানিয়া খাওয়াতে মন দিলো।
ইশা- কি দরকার এই ভালো সময়টায় ওই বুড়ির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার। ভেবেছিলাম যাওয়ার সময় একটা ইদুর মরা বিষ নিয়ে যাবো বুড়ির গুলের কোটায় মিলিয়ে দিব। ইশার কথা শুনে সবাই অট্টোহাসিতে মেতে উঠে। সুচরিতাকে দেখতে পারছি না। ওকে একটা ধন্যবাদ জানানোর ছিলো। মা কে জিজ্ঞেস করলাম ও নাকি রান্না ঘরে। আমি রান্না ঘরে যেয়ে দেখি সুচরিতার চোখে পানি।
-সুচরিতা!
আমার ডাক শুনে ও একটু চমকে উঠলো। চোখ মুছতে মুছতে বললো,,তোমার কিছু লাগবে?
– তোমার চোখে পানি কেনো?
– ওহ পানি,,,পিয়াজ কাটছিলাম তো তাই!
আমি পকেট থেকে রুমাল বের করে সুচরিতার হাতে দেই আর ওকে ধন্যবাদ বলে ওখান থেকে চলে আসি।
,
,
সাওন, রাফি আর আমি ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছি। রাফি একটা মদের বোতলে সেভেনাপ ভরে নিয়ে এসেছে। আমরা আগে প্রায়ই এভাবে মজা করতাম,,মদের বোতলে সেভেনাপ খেলে অন্য একটা ফিলিংস আসে। মনে হয় সত্যি সত্যি মদ খাচ্ছি। একবার রাফিকে পাশের ফ্লাটের এক আংকেল থাপ্পড় মেরেছিলো অবশ্য সে তখন মাতাল ছিলো। সাওনও তখন আমাদের এখানে থাকতো।
সাওন রাফি আর আমি মিলে মদের বোতলে মুতে উনাদের দরজার সামনে গিফটের মতো বোতলটা সাজিয়ে রেখেছিলাম। দেখে বুঝা যাচ্ছিলো না যে ওটায় মদ না অন্যকিছু। মাতালকে মদ দেখালে সে কি তা না খেয়ে পারে। লোকটা ওই বোতল খেয়ে তিন দিন হসপিটালে ছিলো। কথাটা মনে পরতেই সবাই মিলে হেসে দিলাম।
সাওন এক মুঠ চানাচুর নিয়ে বললো,,ভাই আগের দিনগুলো ভালোই ছিলো,,বাঘ ছিলাম বিয়ের পর নিজেকে এখন বিড়াল বিড়াল মনে হয়।
রাফি সেভেনাপ খেতে খেতে বললো,,,কেনো ভাই ইশা ভাবি কি তোমাকে বেশি জ্বালায়।
সাওন বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,,,জ্বালায় মানে আমার বুকটা চিরে দেখ এখানে শুধু তেজপাতা পাবি কলিজা ফেফসা কিছুই নেই। আমার জীবনটা পুরো তেজপাতা হয়ে গেছে।
রাফি- শুধু তুমি না ভাই আমিও আছি। তানিয়া আমার জীবনে আসার পর থেকে জীবনটা শুধু তেজপাতা না আদা রসুন গুরামশলা সব হয়ে আছে।
-রাফি তোর সাথে সুচরিতার ছোট বোনের চক্কর চলছে?
-হ্যা সেদিন তানিয়াকে চিঠিটা আমিই দিয়েছিলাম আর প্রেম শুরু হয় সাদিক ভাইয়ার বিয়ের দিন।
-এটা তুই কি করেছিস রাফি সুচরিতা জানতে পারলে আমাকে আস্তো গিলে খাবে। এর আগে শুধু গালে চর মেরে ছেরে দিয়েছিলো এবার কি করে আল্লাহ মালুম।
-এরা তিন বোন একি ঘাটের মাঝি। কিন্তু বউয়ের রাগ থেকে বাচার জন্য নিঞ্জা টেকনিক আছে! সাওনের কথাশুনে রাফি বোতলটায় চুমুক দিয়ে বললো,,,কি টেকনিক ভাই আমাকেও একটু বলো।
সাওন- তুই পিচ্চি মানুষ তোকে বলা যাবে না। এটা শুধু বিবাহিতদের সিকরেট।
রাফি সাওনকে অনেক রিকয়েস্ট করায় সাওন মুখ খুললো,,,ইশা যখনি রেগে যায় সাওন নাকি চুমু খেয়ে রাগ কমায়। এতে ইশার রাগ নাকি পানিতে মিশে যায়। সাওনের কথা রাফি তাচ্ছিল্য সুরে বললো,,,এইটা তোমার বিবাহিত মানুষদের কথা? এখন পর্যন্ত কতোবার তানিয়াকে লিপকিস করেছি হিসাব নেই। রাফির কথা শুনে আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। বসা থেকে উঠে বললাম,,,সর্বনাশ রাফি এটা তুই কি করেছিস। সুচরিতা জানতে পারলে আমার কল্লা কাচা চিবিয়ে খাবে।
রাফি- ভাই তুমি এতো চিন্তা করছো কেনো? ভাবি রেগে গেলে সাওন ভাইয়ের টেকনিক কাজে লাগাবে তাহলেই হবে।
-পাগল হয়ে গেছিস তুই? আমি সুচরিতাকে লিপ কিস করবো?
-তুই এমন ভাবে বলছিস জেনো এখনো কিছু করিসনি,,
আমি মাথার চুল চুলকাতে চুলকাতে বললাম,,,হ্যাঁ মানে আসলে আমি এখনো কিছু করিনি।
আমার কথাশুনে রাফির হাত থেকে বোতলটা পরে যায় আর সাওনের হাত থেকে চানাচুরের প্লেট,,দুজন আমার দিকে কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বললো,,,,তুই এখনো ভার্জিন আছিস?

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here