শেষের পাতায় তুমি, পর্ব:৭+৮

0
1074

#শেষের_পাতায়_তুমি?
#পর্ব-০৭
#writer_Shanta_islam

-আপনি তো আস্তো একটা বেয়াদপ মেয়ে,,একে তো আমার উপর এসে পড়েছেন তার উপর আবার চোখ মারছেন,,
উনাকে এভাবে বিরক্ত করতে ভালোই লাগছে,,আমি কিছু না জানার ভান করে বললাম,,,আপনি নিজেই তো আমার উপর পরে আছেন উঠছেন ও না আবার আমাকেই দোষ দিচ্ছেন। কথাটা বলা মাত্রই উনি উঠে যেতে নিলে পায়ে পা লেগে আবার আমার উপর এসে পরে। আমি অট্টোহেসে বললাম,,এবার বলেন কার দোষ। হঠাৎ সাদিক থেমে গেলেন। নিজেকে না সরিয়ে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,উনার চাহুনি দেখে কিছুটা লজ্জায় পরে গেলাম। সাদিক আমার সামনের ছোট ছোট চুলগুলো কানে গুজে দিলো। না এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে আমি একটা চিমটি কেটে বললাম,,,কি আমার প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি? কথাটা বলা মাত্রই মনে হলো সাদিকের মুখ কালোমেঘে ডেকে গেছে। সাদিক তারাহুরো করে আমার উপর থেকে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
কি হলো? সাদিক কি আমার দুষ্টুমিতে রাগ হয়েছে! হয়তো রাগ হয়েছে।
,
,
সুচরিতার হাসিটা দেখে কি যে হলো আমার। আমি ওর দিক থেকে চোখ সরাতেই পারছিলাম না। না না এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। ওকে সত্যিটা বলতে হবে। ওর সত্যিটা জানার অধিকার আছে। না চাইলেও ও এখন আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। এভাবে অন্ধকারে রেখে আমি ওকে ঠকাতে পারবো না।
,
,
সাদিক সেই যে কখন বাসা থেকে বের হয়েছে এখনো আসেনি। আমার শাশুড়ী দুকাপ চা নিয়ে রুমে আসলো। আমি উনাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম।
-দাড়াতে হবে না মা। আমাকে তোমার মায়ের মতোই ভাবতে পারো।
আমি উনার কথায় শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মোধন দিলাম,,কিন্তু নিজের মার মতো কি অন্যের মাকে এতো সহজে আপন ভাবা যায়। আমার এখনো মনে আছে ছোট বেলায় যখন মা রাগ করতো তখন বাবার কারণে আমাদের মারতে না পেরে মা জিনিসপত্রের উপর রাগ ঝারতো। আর যখন মার সাথে কথা বলতে যেতাম মা বলতো,,তোদের মা মরে গেছে,,আমি তোদের মা না,,আমাকে মা ডাকবি না। তখন আমিও মজা করে বলতাম,, আচ্ছা আন্টি রাগ কইরেন না। এ কথা শুনে মা আরো রেগে যেতো,,বিয়ের পর সব কিছুই বদলে যায় এমনকি বাবা মা পর্যন্ত। কিন্তু সব কি সহজে মানিয়ে নেওয়া যায়?
আমার শাশুড়ী আমার হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে বললো,,,আমাদের তেমন একটা কথা হয়নি। ভাবলাম কথা বলে আগে দুজন একটু ফ্রি হই,,আমার কোনো মেয়ে নেই,, দুই ছেলে,,তুমি এসে আমার মেয়ের কমতি পূরন করে দিয়েছো। আমি তোমাকে শুধু আমার বউ হিসেবে নয় মেয়ে হিসেবে চাই।
উনার কথা শুনে খুব ভালো লাগছে। মানটা হালকা লাগছে। একটু আগ মুহুর্ত পর্যন্ত উনার সাথে কথা বলতে ইতস্তবোধ হচ্ছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ফ্রিলি কথা বলতে পারবো।
উনি সাদিককে নিচে ঘুমোতে দেখেছেন,,না জানি আমার ব্যাপারে কি ভাবছেন তাই সকালের কথাটা আগে ক্লিয়ার করাই ভালো,,উনি চায়ের কাপে চুমুক দিলো। আমিও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চা টা রেখে
বললাম,,আসলে আজ সকালে যখন আপনি ডাকতে এসেছিলেন,,,কথাটা পুরো বলার আগেই উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,আমি সব জানি। এটাও জানি যে সাদিক আর তোমার বিয়েটাও ঘটনাচক্রে হয়েছে। কেও বিশ্বাস না করলেও আমি বিশ্বাস করি।
উনি যদি আগে থেকেই জানেন যে সাদিক আর আমার মধ্যে কিছু ছিলো না এক্সিডেন্টলি ওই ঘটনাটা ঘটেছিলো তাহলে বিয়ের আগে কিছু বলেননি কেনো?
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,,,,আপনি যদি সব জেনেই থাকেন তাহলে বিয়েটা থামাননি কেনো? বিয়েতে সম্মোতিই বা দিলেন কেনো?
উনি এক দীর্ঘশ্বাস ছেরে বললো,,শুধু সাদিকের জন্য। সাদিক যদি তোমার সাথে নতুন জীবন শুরু করতে পারে সেই আশায়। মা হয়ে ওকে এভাবে ধাপে ধাপে মরতে দেখতে পারবোনা।
উনার কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারছি না কিন্তু উনার চেহারায় স্পষ্ট হতাসা দেখতে পারছি হয়তো কিছু একটা আছে,,যেটা উনি আমাকে বলতে চাইছে। আমি উনার হাতে হাত রেখে বললাম,,,আপনি আমাকে নিজের মেয়ের দরজা দিয়েছেন,, নিজেই বলেছেন ফ্রিলি কথা বলতে,,,কি হয়েছে আমাকে বলুন মা।
উনি ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,এখন তুমিই শুধু পারো আমার সাদিককে বাচাতে। আমার সাদিক প্রতিদিন মরছে,, ওর বাচার আশাস দেখতে পারছি না। আর ওর এই অবস্থার কারণ একটাই ওর প্রাক্তন।
-সাদিকের প্রাক্তন?
-হ্যা সাদিকের প্রাক্তন,,,
শুনে অনেকটা অবাক হলাম,,সাদিকের কোনো প্রাক্তন ছিলো। যে ছেলে সব সময় চুপসে থাকে,, মেয়েদের থেকে দূরে থাকে,,এমন কি সবার সাথে বেশি একটা কথাও বলে না,,সে ছেলে যে এককালে প্রেম করেছিলো বা তারও যে একটা প্রাক্তন আছে কথাটা বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছে। আমি আগ্রহ নিয়ে উনার কথা শুনতে লাগলাম।
– সাদিকের প্রাক্তনের নাম ছিলো রিয়া। কলেজ লাইফ থেকে সাদিক আর রিয়ার সম্পর্ক ছিলো। রিয়া সাদিকের জীবনের প্রথম প্রেম ছিলো। শুরুর দিকে ভালো গেলেও হঠাৎ একদিন রিয়া সাদিকের সাথে ব্রেকাপের কথা বলে কারণটা অবশ্য আমি জানি না। কিন্তু সাদিক রিয়াকে খুব ভালোবাসতো,,,সাদিক কোনো মতেই রিয়াকে ছারতে রাজি ছিলো না। তখন থেকেই সাদিক চিন্তিত থাকতো,,হঠাৎ একদিন সাদিক রিয়াকে কিডনাপ করে। আর তার পরের দিনিই রিয়ার লাশ পাওয়া যায় পাশের ব্রিজ থেকে। পুলিশ তদন্ত করে বের করে রিয়া সুইসাইড করেছিলো। কিন্তু সেদিনের পর থেকে সাদিক নিজেকে দোষারোপ করে যে ওর জন্যই নাকি রিয়া মারা গেছে,,, আমি ওর মা,,আমি ওকে চিনি সাদিক কখনো কারো ক্ষতি করতে পারে না। জানি না সেদিন রাতে এমন কি হয়েছিলো যার জন্য রিয়া সুইসাইড করেছে কিন্তু সাদিককে যতবারি সেদিনের কথা জিজ্ঞেস করেছি সাদিক কিছু বলতে পারেনি। এর জন্য ওকে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ও নিজেকে দোষারোপ করতে করতে মানুষিক ভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। ওই দূর্ঘটনা থেকে ও এখনো বের হতে পারে নি। সাদিক নিজ থেকে কখনোই বিয়ে করতে চাইতো না। তাই তোমার সাথে সাদিকের বিয়েটা আমি মেনে নেই। যাতে সব কিছু ভুলে অন্য কারো হাত ধরে আমার ছেলেটা বাচতে শিখে। এই তিন বছরে সাদিক রিয়ার কবর ছাড়া আর কোথাও যায়নি। এমনো দিন গেছে সাদিক রিয়ার কবরের পাশেই রাত কাটিয়েছে।
আমি সবকিছু শুনে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে গেলাম। একজন মানুষ এতোটা ভালোবাসে কীভাবে যার জন্য নিজেকে গুটিয়েই সারাটা জীবন পার করতে চায়। আমি উনার হাত ধরে বললাম,,,চিন্তা করবেন না মা,,আমি সাদিকের সাথে আছি। যেভাবেই হোক আমি ওকে ওই পরিস্থিতি থেকে বের করবো। নতুন করে বাচতে শিখাবো।
সাদিকের মা কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো,,সেদিনের অপেক্ষা আছি মা।
,
,
রাত বারোটার বেশি বাজে সাদিক এখনো ফিরেনি। খুব টেনশন হচ্ছে। সাদিকের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরি হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভাঙে,,ঘরিতে তাকিয়ে দেখি রাত দুটো বাজে,,সাদিক এসেছে! সাদিককে দেখে আমি সোয়া থেকে ওর কাছে দৌড়ে গেলাম,,,সাদিক আমাকে ইগনোর করে ওয়াসরুমে যেতে চাইলে আমি সাদিকের পথ আটকে দাড়াই।
সাদিক-আজ সকালের জন্য দুখিত,,আসলে আমি ওমনটা করতে চাইনি,,,
আমি একটু রাগী গলায় বললাম,,,আমি কী সকালের কথা বলেছি?
-তাহলে কি অন্য কিছু বলবেন?
-হ্যা বলবো তার আগে আপনি না তুমি,,তুমি করে বলবে বুঝেছো!
-আপনি এভাবে রিয়েক্ট করছেন কেনো? সরুন আমি ওয়াসরুমে যাবো। কথাটা বলতে না বলতেই মেয়েটা রেগে আমার কলার চেপে ধরে,,
– আরে কি করছেন কি?
-আপনি না তুমি ওকে,,,
– আচ্ছা ঠিকাছে তুমি,,ছারো আমার কলার ছারো,,
-ছারবো না আগে বলো সারাদিন কোথায় ছিলে? ঘরে যে তোমার একটা বউ আছে সেটা কী ভুলে গেছো?

চলবে,,,,

#শেষের_পাতায়_তুমি?
#পর্ব-০৮
#writer_Shanta_islam

মেয়েটা মনে হয় সম্পর্কটাকে সিরিয়াস ভাবে নিচ্ছে। তাই এমন কথা বলছে। আমি কলার থেকে ওর হাত দুটো সরিয়ে বললাম,,,সুচরিতা তুমি এই সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছো,,তুমি ভালো করেই জানো আমি এই সম্পর্কে সইচ্ছায় জড়াইনি। আর এই সম্পর্ককে মানিয়ে নিতেও পারবো না। তাই স্বামী স্ত্রীদের মতো লেট করে আসলে টেনশন করা,,না গুমিয়ে জেগে থাকা এগুলো না করলেই ভালো।
আমার কথায় হয়তো বা মেয়েটা আঘাত পেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা তুলে ধরা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই।
সুচরিতা কিছুক্ষণ চুপ রইলো,,,ভাবলাম হয়তো মেয়েটা আমার কথায় কস্ট পেয়েছে। কিন্তু সুচরিতা যে আমার কথার এই উত্তর দিবে আমি কখনো ভাবিনি ও কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ কিছু একটা ভেবে এক রাস হাসি নিয়ে বললো,,,বাহ তুমি আমার নাম জানো,,ওও হাও সুইট,,
আমি ভেবে পারছি না এই মেয়ে মানুষ নাকি অন্য কিছু,মূহুর্তের মধ্যেই মুড চেঞ্জ,,,ওর কথা শুনে হাসবো না কাদবো বুঝতে পারছি না।
-তুমি অনেক অদ্ভুত একটা মেয়ে,,কথাটা বলে ওয়াসরুমে চলে গেলাম। বের হয়ে দেখি সুচরিতা খাবার নিয়ে বসে আছে।
-ওয়াসরুমে যেয়ে হিসাব নিকাশ করো নাকি? এতো দেরি লাগে কেনো? জলদি এসো আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। সুচরিতা প্লেটে খাবার বারতে বারতে কথাগুলো বলছিলো।
মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি জন্মগত পাগল এটাই ভাবছি। কিন্তু ওর মুখে একটা হাসি থাকে যেটা একদম আমার হৃদয়ে যেয়ে আঘাত করে।
-দেখুন আপনাকে একটু আগেই বললাম,,,,
– আবার আপনাকে,,,বার বার বললাম তুমি করে বলতে,,,এর পর আবার যদি আপনি করে ডেকেছো সেই অপরাধে থানায় কেস করে দিব।
– আমার ক্ষুধা নেই,,,কথাটা বলে যেই দুপা বারালাম,,পিছন থেকে কারো হাত আমার বা হাতকে আকড়ে ধরলো,,পিছু তাকিয়ে দেখি সুচরিতা আর ওর চেহারায় সেই আঘাত করা হাসিটা।
-এখন থেকে আমরা দুজন একি ছাদের নিচে থাকবো,, কতোদিন এভাবে একজন আরেকজনকে ইগনোর করবো,,আচ্ছা এর থেকে ভালো না আমরা ফ্রেন্ডসিপ করে ফেলি। এতে আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কও থাকবে না আর একি ছাদের নিচে ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে পারবো।
আমি শুধু ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ওই হাসিটা মুগ্ধ হয়ে দেখছি। কতো সুন্দর করে হাসিমাখা মুখ নিয়ে কথাগুলো বললো মেয়েটা,,আমি একরাশ হতাশা নিয়ে বললাম,,,রিয়ার মৃত্যুর পর ফ্রেন্ড ফ্রেন্ডসিপ সব বিসর্জন দিয়েছি।
-আচ্ছা রিয়া যদি বেচে থাকতো তাহলে কী ও তোমাকে এভাবে আধা মরা আধা বাচা অবস্থায় দেখতে চাইতো?
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবলাম আসলেই তো রিয়া কখনোই আমাকে এই অবস্থায় দেখতে চাইতো না। কিন্তু সুচরিতা রিয়ার ব্যাপারে কীভাবে জানলো। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সুচরিতা আমার মুখে খাবার ভরে দিয়ে বললো বাস আর কোনো কথা না আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। জলদি করে খাবার খেয়ে নেও এরপর যা বলার বলো।
আমারো প্রচুর ক্ষুধা লেগেছিলো তাই নাকুচি না করে খেয়ে নিলাম,,আমি বিছানা থেকে একটা বালিশ উঠাতেই সুচরিতা বললো,,,ভুলেও আজ নিচে ঘুমানোর চেস্টা করো না,,সকাল বেলা তোমার মা তোমাকে নিচে ঘুমোতে দেখে ফেলেছিলো,,,তুমি যেই কুম্ভকর্ণ কতোবার করে ডাকলাম উঠলেই না। আর তোমার মার নজরে আমি ভিলেন হলাম।
আমার ঘুমটা আসলেই খুব কড়া,,,একবার ঘুমোলে উঠতে খুব কস্ট হয়ে যায়।
– এই যে মি. ভাবনার জগৎ থেকে বের হন আর বালিশটা বিছানায় রেখে এক পাশে সুয়ে পরেন,,,
– কিন্তু দুজন এক খাটে,,,,
সুচরিতা আবার সেই মলিন হাসিটা দিয়ে বললো,,আমি বিছানার মধ্যে বালিশ দিয়ে দিচ্ছি। এবার ঠিকাছে?
মেয়েটাকে যতটা আহাম্মক ভেবেছিলাম ততোটা আহাম্মকও না।
লাইট অফ করে দিয়েছি,,,সাদিক ও পাশে সুয়ে আছে আর আমি এ পাশে। কাল রাতে নিচে ঘুমানোর কারনে হয়তো ওর কাধ ব্যথা হয়ে গেছে সকালে দেখেছিলাম বার বার কাধ ধরে কথা বলছিলো। এ দুদিনে সাদিকের প্রেমে পড়ে গেছি। কেনোই বা পড়বো না,,,একটা ছেলে তার সমস্তটুকু দিয়ে কীভাবে একটা মেয়েকে এতোটা ভালোবাসতে পারে যে তার মৃত্যুর পর ও সেই মেয়ের সৃতি আকড়েই আধ মরা হয়ে বেচে আছে। রিয়ার প্রতি সাদিকের ভালোবাসা দেখে আমিই সাদিককে ভালোবেসে ফেলেছি। যদি রিয়ার ভালোবাসার একটুকু অংশ আমি পাই তাহলে ক্ষতি কী? হঠাৎ ও পাশ থেকে সাদিক বলে উঠলো,,,সুচরিতা তুমি রিয়ার কথা জানলে কীভাবে?
আমি এ পাশে সুয়ে উত্তর দিলাম,,,আমি জাদু জানি,,জাদু দিয়ে সবার মনের কথা জানতে পারি,,,,কথাটা বলেই মেয়েটা খিলখিল করে হেসে দিল।
– মজা করছো! হয়তো মা বা রাফি তোমাকে বলেছে তাই না?
সাদিককে মিথ্যা বলবো না,,কারণ মিথ্যা দিয়ে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠে না তাই সত্তিটাই বললাম ওর মা সকালে আমাকে যা যা বলেছে সব বললাম,,,
সাদিক হতাশা জরজরিত কন্ঠে বললো,,,,প্রতিটি গল্পের দুটো পার্ট থাকে একটা যেটা আমরা চোখে দেখে থাকি আরেকটা যেটা আমাদের চোখে পড়ে না,,,আমার জীবনেরও দুটো পার্ট আছে একটা যেটা সবাই দেখেছে আর আরেটা যেটা আমি জানি কিন্তু কেও জানে না। আমি সাদিকের কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম। সাদিক কী বলতে চাইছে,,স্পষ্ট না হলেও রহস্যময়! আমি সাদিকের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,বন্ধু ভেবে কী আমাকে সবটা বলা যায় না? সাদিক সোয়া থেকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বললো,,,মিছে মিছে আমার জীবনের অভিসাপ্ত গল্প জানতে চাইছো কেনো?
আমি সাদিকের হাত ধরে বললাম,,,সাদিক প্লিজ আমি জানতে চাই,,,আমার জন্য জানাটা জরুরি,,,প্লিজ মানা করো না।

আর কতোদিন সবার থেকে সত্যটা লুকিয়ে রাখবো এমনিতেও একদিন না একদিন সত্য প্রকাশিত হবেই,,সিদ্ধান্ত নিলাম সুচরিতাকে সবটা বলবো কিন্তু সুচরিতা আমার উপর বিশ্বাস করবে কি না এটা ওর উপর ডিপেন্ড করে,,,সুচরিতা রিয়া বেচে আছে,,,,কথাটা বলা মাত্রই সুচরিতার চোখ দুটো বড় বড় করে বললো,,
-কি বলছো তুমি,,রিয়া বেচে আছে? ও যদি বেচে থাকে তাহলে এখন ও কোথায় আছে? আর পুলিশ কেনোই বা বললো রিয়া আত্নহত্যা করেছে?
সাদিক ওর ফোন থেকে রিয়ার একটা ছবি বের করে আমাকে দেখালো,,,রিয়া আর সাদিকের কলেজ লাইফে কীভাবে দেখা হয়েছে কীভাবে পরিচয় হয়েছে কীভাবে প্রেম হয়েছে সাদিক সব খুলে বললো,,
-তোমাদের সম্পর্কের সব কিছু ঠিক চলছিলো তাহলে রিয়া ব্রেকাপ কেনো করতে চাইলো?
– জানি না হঠাৎ একদিন রিয়া ব্রেকাপ করার জন্য অস্থির হয়ে উঠে কারণ জানতে চাইলে কিছু না বলে চলে যায়। রিয়াকে অনেক বার ফোন করি কিন্তু ফোন বন্ধ করে রাখতো এমনকি সব জায়গা থেকে আমাকে ব্লক করে রেখেছিলো,,কোনো ভাবেই আমি ওর সাথে কন্ট্রাক্ট করতে পারছিলাম না। আমি রিয়াকে অনেক ভালোবাসতাম। ও আমাকে ইগনোর করছিলো এটা মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম রিয়াকে কিডনাপ করবো। ভেবেছিলাম কিডনাপ করার পর ওকে বুঝাবো কনফেজ করাবো যাতে ও ব্রেকাপ না করে। যেই ভাবা সেই কাজ কিডনাপ করে রিয়াকে আমাদের অন্য এক বাসায় নিয়ে যাই। ও ছোটার জন্য অনেক জোড়াজুড়ি করছিলো,,,তাই রিয়াকে চেয়ারের সাথে রশি দিয়ে বেধেছিলাম যার কারণে ওর হাত অনেকটা ছিলে যায়। একটা পর্যায়ে আমি ওর কাছে আমার ভালোবাসার ভিক্ষা চাই,,যাতে ও আমাকে ছেরে না যায়। রিয়া শুধু বলেছিলো ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমাদের বিচ্ছেদ ছাড়া ওর কাছে আর কোনো উপায় নেই। আমি রিয়ার হাত খুলে মলম লাগিয়ে দিয়েছিলাম আর ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম এর পরে কি হয়েছে আমার আর মনে নেই। সকালে হুস আসলে উঠে দেখি আমি ফ্লোরে পরে আছি চেয়ারে রিয়া নেই। আমি ওকে অনেক খুজি কিন্তু বাসায় কোথাও ওকে পাইনি। অবশেষে রাস্তায় খুজতে বের হলে শুনতে পাই রিয়ার মতো একজন নাকি ব্রিজ থেকে জাপিয়ে আত্নহত্যা করেছে। কথাটা শুনা মাত্রই আমার শরীরের সব শক্তি যেনো নিমিষেই হারিয়ে যায়। কিন্তু মনের এক কোনায় এতোটুকু বিশ্বাস ছিলো যে রিয়া আত্নহত্যা করতে পারে না। অনেক কস্টে ডেট স্পটে যেয়ে দেখি একটা লাশ পরে আছে একদম রিয়ার মতো উপর থেকে নিচে পড়ায় লাশটার চেহারা থেথলে গেছে রিয়ার পড়নে যেই জামা ছিলো মেয়েটার পড়নেও সেই জামা ছিলো। বডি পুরো রিয়ার মতোই দেখতে কিন্তু আমি জানি ওটা রিয়া না।
– তুমি কীভাবে এতো সিওর হয়ে বলছো ওটা রিয়া না?
সাদিক একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বললো,,,,
-কারন রশি বাধার কারণে রিয়ার হাতে দাগ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু ওই লাশটার হাতে কোনো দাগ ছিলো না।
-তার মানে কি সত্যিই রিয়া বেচে আছে?
-জানি না,,সব ঘোলাটে মনে হয়! মাঝে মাঝে মনে হয় রিয়া বেচে আছে আবার মাঝে মাঝে মনে হয় আমার কারনেই হয়তো রিয়া আত্নহত্যা করেছে আমি একজন খুনি। কথাটা বলার সাথে সাথেই সাদিক ওর হাত দিয়ে ওর মাথাটা চেপে ধরে,,,
আমি সাদিকের এই অবস্থা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। সাদিক কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছো কেনো?
সাদিক কিছু বলছে না মাথাটা ধরা অবস্থায় ছটফট করতে করতে বিছানা থেকে পরে গেলো। আমি এই অবস্থা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না চিৎকার করে সাদিকের নাম নিলাম,,,আমার চিৎকার শুনে সাদিকের মা আর রাফি আমাদের রুমে আসে।
,
,
সাদিককে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে ও এখন ঘুমিয়ে আছে,,,প্যানিক এটাক হয়েছিলো,,সাদিকের নাকি মাঝে মাঝেই এমন প্যানিক এটাক হয়,, একটু আগেই সবাই রুম থেকে চলে গেলো। আমি সাদিকের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
-সাদিক হয়তো তোমার জীবনের প্রথম পাতায় রিয়া ছিলো কিন্তু এখন থেকে আমি তোমার জীবনের শেষের পাতা হতে চাই। আমাকে কী তোমার জীবনে একটু জায়গা দিবে? আমাকে কী রিয়ার ভালোবাসার একটু অংশ দিবে! তোমার জীবনে যদি বিন্দু পরিমান জায়গা করে নিতে পারি তাহলে হয়তো আমার জীবন পূর্নতা পাবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে আষাঢ়ের মেঘ নেমে এলো,,,আমি সাদিককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম,,,
গভীর রাতে সাদিকের গোঙ্গানির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো,,,চোখ মেলে দেখি সাদিক ছটফট করছে!

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here