#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ৮
গৌধুলি বিকেল হয়ে এসো আমার শহরে,,
নিস্তব্ধে তা উজাড় করে দেবো!
গৌধুলি বিকেল হয়ে নামো আমার নগরে,,
সাদরে তা গ্রহণ করে নেবো!..
গৌধুলি সন্ধ্যা হয়ে এসো আমার তীরে,,
নিজেরকে যে উজাড় করে দেবো!
গৌধুলি সন্ধ্যা হয়ে নামো আমার নীড়ে,,
সাদরে তা বরণ করে নেবো!..
_______লামিয়া সুলতানা সিলভী
গৌধুলি মানেই বিকালের রোদ লালচে আভায় মিলে যায় অন্তরালে,, আকাশে বুকে এক রত্রিম আভার প্রলব পড়ে! আকাশে উড়া মুক্ত পাখিগুলো ফিরে যায় নিজ নিজ নিজ নীড়ে,,সন্ধ্যার আভাষ উপচে পড়ে সন্ধ্যা নদীর তীরে,,তীরে থাকা নৌকাগুলো পৌঁছে যায় গন্ত্যবে! সূর্যাস্তের পর রাত শুরু হবার মাঝের সময় টাই হলো গৌধুলি লগ্ন! এই লগ্নে এক অদ্ভুত মায়া বিরাজ করে,,যা কেবলই অদৃশ্যমান তবে অনুভব করা যায়! সন্ধ্যার শেষভাগে যখন পৃথিবী এমন একটি বিন্দুতে অবস্থান করে তখন তার কেন্দ্রে স্থানীয় দিগন্তের ছয় ডিগ্রী অবস্থান থাকে,, সে সময়ের বাহিরে সাধারণভাবে কোন কিছু পড়া যাবে না,,তখনই কেবল কৃত্রিম আলোকসজ্জার প্রয়োজন হবে ধরনীর বুকে!..
ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক মায়াবী রমনী,,শীতলকর হাওয়া তাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে বাড়বার! হাওয়ার প্রবল বেগে তার পড়নের হালকা গোলাপি রঙের সুতি শাড়ির আচল উড়ে বেড়াচ্ছে আর সাথে উড়ছে তার কোমড়ে পড়ে থাকা ঘন কালো কেশ,,তার এলোকেশ গুলো ভীষণ দুষ্টুমি করছে তার সাথে,,বারবার তাকে বিরক্ত করছে তার জানান দিচ্ছে রমনীর চোখে-মুখে,ঘাড়ে-গলায় কিন্তু তাতেও তার মনযোগ সরেনি! সে খুব মনোযোগ সহকারে গৌধুলি লগ্নকে উপভোগ করছে! এ যেনো এক অমৃত সুধা- প্রকৃতির সৌন্দর্য শুষে নিতে কার না ভালো লাগে?
আর তার থেকে কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক উপভোগ করছে রমনীর সৌন্দর্যকে! তার নযরে ঠিক এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরি রমনি লাগছে দাঁড়িয়ে থাকা এই নিশ্চুপ মানুষটিকে!..
পাশে থেকে কেও বলে ওঠলো,,
ইশাঃ অর্ক ভাইয়া আমাদের দিকেও একটু তাকাও,,তোমার ছোট ছোট ভাই-বোনেরা তোমার অপেক্ষায় বসে আছে! আর তুমি কিনা শুধু তোমার বউকেই দেখছো? কাল বাদে পরশু তো আমরা চলেই যাবো আর তুমিও চলে যাবে তখন তুমি মন ভরে বউকে
দেইখো!
শিশিরঃ দেবো এক চড়,,বেশি ফাজিল হয়েছো তুমি? ( কান টেনে)
তিয়াশঃ এই জন্যই তো পরিক্ষায় শুধু লাড্ডু পায় দেখোনা,, আউট নলেজ বেশি ওর মাথায়! ঘিলুহীন মহিলা,,( মাথায় চাপ্টি মেড়ে)
ইশাঃ আউ,,তিয়াশ ভাইয়া তুমি কিন্তু খুব খারাপ,,আমি মোটেও লাড্ডু পাই না,,আর তোমার মতো খারাপ স্টুডেন্টও না!..
তিয়াশঃ এই জন্যই তো বলি তোর মাথায় ঘিলু কম,,আমি খারাপ ছাত্র হইলে পাবলিকে পড়তাম না ন্যাশনালে পড়তাম! ( ভাব দেখিয়ে)
ইশাঃ পড়ই তো জগন্নাথে তাতেই এতো ভাব?
তিয়াশঃ ( অবাক হয়ে) তোর মতো বেয়াদব মেয়ে পৃথিবীতে দুটো নেই,,তুই জগন্নাথেই চান্স পেয়ে দেখা,, দেখি কত পারিস!..
ইশাঃ আমি বাংলাদেশে থাকবোই না,,ইউএস যেয়ে পড়বো!..
তিয়াশঃ ও বাবাগো মাইয়ায় কয় কি,,, ( হাসতে হাসতে নিচে বসে পড়ে)
ইশাঃ ( মুখ বাঁকিয়ে) ন্যাকামো বাদ দাও,,এখানে হাসির কি হইলো? আযব!..
তৃষাঃ দুটাকেই এখন চটকোনা দিবো,,এততো ঝগড়া কই পাস তোরা? অলওয়েজ সাপে-নেয়ুলে লেগেই থাকে তোদের! শয়তান গুলা,,, ( বিন্দুর দিকে তাকিয়ে) ভাবি ও ভাবি ওখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করো এখানে এসো!..
শিশির, তৃষা আর রুদ্রা এতোক্ষণ ওদের ঝগড়া শুনছিলো,,,শিশির অবশ্য এসব পাত্তা না দিয়ে রুদ্রাকে কোলে নিয়ে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো আর আড়চোখে বিন্দুকে দেখছিলো,, তৃষার ডাকে এবার ফোন থেকে মুখ তুলে বিন্দুর দিকে তাকায়..
বিন্দুঃ (মিষ্টি হেসে ওদের দিকে আসছিলো) হ্যা বলো!.
রুদ্রাঃ মাম্মা জানো,, এই ইশা ফুপি আর তিয়াশ চাচ্চু সে কি ঝগড়া ( মুখে হাত দিয়ে হাসছিলো)
বিন্দুঃ তাই? আমার ধানী লংকা দেবড়ের,,,
তিয়াশঃ এই ওয়েট ওয়েট,, ভাবী কে ধানী লংকা? কাকে বলছো? আমাকে?
বিন্দুঃ আমি বলিনি, ইশা সেদিন বলছিলো!.
তিয়াশ এবার ইশার দিকে রাগী মুডে তাকিয়ে,,
তিয়াশঃ তোর ক্লাস তো আমাকে নিতেই হবে, বেশি বার বেড়েছে তোর!..
শিশিরঃ তিয়াশ নিচে যা,,ডেলিভারি ম্যান এসে গেছে,,যা যা অর্ডার করেছিলাম মিলিয়ে সব নিয়ে আয়!..
তিয়াশঃ আমি?
শিশির চোখ গরম করে তাকাতেই তিয়াশ অনিচ্ছা শর্তেও নিচে যায়,,,
মূলত সবাই এখন শিশিরদের বাসার ছাদে ছিলো,, ওরা কালকেই বিন্দুদের বাড়ি থেকে চলে এসেছে! সকল আত্নীয়-স্বজনরা চলে গিয়েছে,,বিন্দুদের বাড়িতেও আর শিশিরদের বাড়িতেও শুধু তৃষা আর ইশা যায়নি,, শিশিররা যেদিন ঢাকায় যাবে তৃশারাও ওইদিন যাবে,, ইশা চলে যেতে চেয়েছিলো অনেকবার কিন্তু তৃষা যাবেনা,, ও জেদ ধরে বসে আছে বিন্দু ভাবীরা যেদিন যাবে আমরাও ওইদিনই যাবো!
আজকে শিশির ওদের ট্রিট দিবে ওর বিয়ের তবে বাড়িতেই,, তাই ফুড পান্ডা তে অর্ডার করেছে কে কি খাবে সেগুলো যা তিয়াশ আনোট নিচে গেলো!..
______________
সন্ধার পর,,,
বিন্দু রুদ্রাকে পড়তে বসিয়েছে,,মেঘকে কোলে নিয়েই পড়াচ্ছে! মেঘ আজকে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছে তাই বিন্দু এখন মেঘকে ঘুম পাড়ায়নি কোলে নিয়ে বসেছে!..
রুদ্রা পড়ছে আর ওর ভাইকে আদর করছে,, আদর করবেই না কেনো এত সুন্দর বাচ্চাকে কেও আদর না করে পারে? মেঘের গালগুলো একদম মাখনের মতো স্ফট,, গালে ফু দিলেই নড়ে যায়,, আর একটা বিশেষত্ব হলো হাসলে গালে টোল পড়ে যার জন্য ওর সৌন্দর্য দ্বিগুন বেড়ে যায়! আর এই বিশেষত্ব পেয়েছে শিশিরের কাছে,, শিশিরও হাসলে গালে টোল পড়ে! মেঘ দেখতেও হয়েছে ওর বাবার মতোই সুন্দর কিন্তু গায়ের রঙ পেয়েছে ওর মা মেঘলার মতো! শিশির অনেক সুন্দর আর স্মার্ট হলেও খুব একটা ফর্সা না! শ্যামলা বর্ণের গায়ের রঙ,, মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি,, ঘাড়ের কাছে একটা ছোট্ট কুচকুচে তিল আছে যা বিন্দুকে খুব আকর্ষন করতো শিশিরের দিকে! ১০ বছর আগেও এই সৌন্দর্যে প্রায়ই বিভর হয়ে তাকিয়ে থাকতো বিন্দু!..
বিন্দুর হঠাৎই মনে পড়ে ওর আর শিশিরের কাটানো এক মুহুর্ত,,,
বিন্দুঃ শিশির তোমার ঘাড়ের এই তিলটা এততো কিউট কেনো?( হাত দিয়ে)
শিশিরঃ আমার সবকিছুই কিউট,, এই জন্যই দেখোনা কতো মেয়ে আমার প্রেমে পড়ে প্রতিদিন! আমি কিউট না হলে কি পড়তো,, বলো?
বিন্দুঃ ( হাত সরিয়ে) ভালো,, ( মন খারাপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে)
শিশিরঃ জেলাস?
বিন্দুঃ নাহ,,
শিশিরঃ জানোতো কালকে মেঘলা আমার কাছে এসে বল,,,,( থামিয়ে দেয় বিন্দু)
বিন্দুঃ স্টপ ইট,,তুমি জানোনা আমি মেঘলা আপুর কথা শুনতে পারিনা কেনো বারবার ওর কথা বলে আমাকে রাগাও? সমস্যা কি তোমার? আমি অনেকদিন তোমাকে নিষেধ করেছি ওর কোন কথাই আমাকে বলবে না,, তাও কেনো বলো!..
শিশিরঃ ( কাছে টেনে এনে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে) আমার বিন্দুবালার বুঝি হিংসে হচ্ছে? কেনোগো আমি তো তোমারই আছি সব-সময় আর মেঘলা তো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড! ও কখনো তোমার জায়গা নিবে না!..
বিন্দুঃ “আমার জায়গা নিবে” এই কথাটা কেনো উঠছে শিশির? সে তোমার ফ্রেন্ড হয় ভালো কথা ফ্রেন্ড তো ফ্রেন্ডের মতোই থাকবে,,আর আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড আমার সাথে ওর তুলনা কেনো করছো?
শিশিরঃ রেগে যাচ্ছো কেনো? আমি কি এমন বলেছি?
বিন্দুঃ ( নিজেকে ছাড়িয়ে) রেগে যাওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? আমি-তুমি যখনই একসাথে বসি তখনি মেঘলা আপুর নামটা ওঠে,,কেনো শিশির? এমনটা কেনো করো আমার সাথে? তুমি কি এই নামটা ছাড়া অন্য ফ্রেন্ডের নাম বলো আমি কিচ্ছু বলবো না!..
শিশিরঃ এতো পীড়া কেনো দাও আমায়? এতো সন্দেহ কেনো? তোমার কি মনে হয় আমি মেঘলার প্রতি উইক?ওকে ভালোবাসি?
বিন্দুঃ আমি কিন্তু কখনো সেটা বলিনি,, তুমি নিজে নিজেই বলছো! একটা কথা আছে জানোতো “ঠাকুরঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি” তোমারও সেইম অবস্থা হয়েছে!..
শিশিরঃ ওয়াট ডু ইউ মিন বাই দ্যাট?
বিন্দুঃ আমি কিচ্ছু মিন করতে চাচ্ছি না! শুধু এতোটুকুই বলবো,, তোমাদের দুজনে চাহনী শুধুমাত্র ফ্রেন্ডশিপেই সীমাবদ্ধ না! মেঘলা আপুর তো অনুভূতি আছেই তোমার প্রতি,, তোমারও আছে কিনা সেইটা শিওর হও তারপর বলতে এসো! ( পাশে থেকে ব্যাগ নিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে) আমি বাসায় যাচ্ছি,, যদি কথা বলতে ইচ্ছে হয় কল দিও,, বাই!..
বিন্দু চলে যায়,,আর শিশির তার আগের কাজেই মন দেয় মানে লেকের পানিতে ঢিল ছুড়তে থাকে! বিন্দুর দিকে একবার তাকায়ও না! আজকে মেঘলা একটা ক্লাস করেই বাসায় চলে গিয়েছে কোন একটা কাজে! ওদের ছুটি পর ক্যাম্পাসে থেকে বেড়িয়ে পাশেই এক লেকের পাড়ে শিমুল গাছের নিচে সিঁড়ির ওপর শিশির বসেছিলো! আর হাতে অনেকগুলো ইটের টুকরো নিয়ে পানিতে ঢিল মারছিলো! বিন্দু ক্লাস থেকে বের হয়ে শিশিরকে কল দিয়ে জানতে পারে শিশির লেকের পাড়ে সিড়িতে বসে আছে আর বিন্দুও তাই এখানে চলে আসে!..
বিন্দুর ভাবনা জগৎ থেকে বের হয় রুদ্রার চিল্লানীতে,,
রুদ্রাঃ আউউ,,,ভাই ছাড় আমার চুল,, মাম্মা আমার চুল ছিড়ে ফেললো! ছাড়িয়ে দাওনা,,,
বিন্দুঃ তুমি লেখা বাদ দিয়ে ওর সামনে এসেছো কেনো? তোমাকে আমি বললাম টেবিলে বসো আর তুমি বিছানায় বসলে ভাইয়ের সাথে খেলবে আর পড়বে জন্য,, তাহলে এখন বোঝো কেমন লাগে! ( চুল ছাড়িয়ে)
রুদ্রাঃ ভাই অনেক দুষ্টু মাম্মা,,
বিন্দুঃ ছোট বেলায় তুমি কি কম দুষ্টু ছিলে? একবার তো তোমার পাপার নাক কামড়ে ছিড়ে ফেলার অবস্থা,, নাক পুরো লাল করে ফেলেছিলে!..
রুদ্রাঃ সত্যিই? পাপা অনেক ব্যাথা পেয়েছিলো? ( লেখা বাদ দিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে)
বিন্দুঃ হ্যা,, তোমার পাপার তো চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছিলো ব্যাথায়,,তাও তোমায় কোল থেকে নামায়নি! আমি তোমাকে বকা দিচ্ছিলাম তাও আবার আমিই বকা খাই তোমার পাপার কাছে! দুদিন ভরা ব্যাথার মেডিসিন আর বরফ দিয়ে সেটা সেড়ে যায়!..
শিশিরঃ আমার রুদ্রানী এতো দুষ্টু ছিলো? দেখে তো মনে হয় না,,( দড়জায় দাঁড়িয়ে ছিলো)
ভেতরে এসে রুদ্রার পাশে বিছানায় বসে,,
রুদ্রাঃ হ্যা বাবাই মাম্মা তো তাই বলছে আমি নাকি পাপার নাক ছিড়ে দিয়েছিলাম কামড়ে! আমার তো কিচ্ছু মনেই নেই!..
শিশিরঃ ( রুদ্রার গাল টেনে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে) আর কি কি করতো আমার রুদ্রানী?
বিন্দু এবার নড়েচড়ে বসে,, কিন্তু কিছু বলে না! ও শিশির কে দেখলেই নিজেকে কেমন একটা গুটিয়ে নেয় এটা শিশির অনেকবার খেয়াল করেছে!..
রুদ্রাঃ মাম্মা বলো আমি আর কি কি দুষ্টুমী করেছি?
বিন্দুঃ তুমি তোমার বাবাইয়ের কাছে পড়ো আমি তোমার দাদীমার কাছে থেকে ঘুরে আসি দেখি কিছু লাগবে কিনা! ( মেঘকে নিয়েই চল্র যেতে লাগে)
শিশিরঃ ইগনোর করছো?
বিন্দুঃ মানে? ( পিছে ফিরে)
শিশিরঃ মানে আবার কি? আমি যখনি তোমার সামনে থাকি তুমি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াও,,মনে হয় আমাকে দেখে অসস্থি ফিল করো,,তারমানে তো এটাই দাঁড়ায় তুমি আমাকে সহ্য করতে পারো না! আমাকে ইগনোর করছো!..
বিন্দুঃ না,, এমন কিছুই না!
শিশিরঃ এমনই কিছু,,তুমি তো আগে এমন শান্ত ছিলে না,,অনেক কথা বলতে আমার সাথে,, আমিই তোমার ভালো থাকার একমাত্র কারণ ছিলাম! আর এখন দেখো আমাকে দেখেই তোমার সব ভালো লাগা উড়ে যায়! (উঠে দাড়িয়ে) কেনো বিন্দু?
বিন্দুঃ আগে? হুম, আগের সাথে এখন কথাটার অনেক তফাৎ আছে! আগে কথাটা হলো অতীত আর এখন আমি বর্তমানে অবস্থান করছি! অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ- এই তিনটার মাঝে বর্তমান কেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ,, কারণ অতীত আমাদের পেছনে পড়ে থাকা গতকাল অথবা গত দিনের সমষ্টি,, যা আমি হাজার চেষ্টা করার পরেও ফিরে পাবো না! অথ্যাৎ বিগত দিনের কথা ভেবে ফালতু কষ্ট পেয়ে কোন লাভ নেই! আর অতীতের সাথে এই অশান্ত আমি টাও বদলে গিয়েছে অনেক আগে! আর কি যেনো বলছিলেন,,ইগনোর? এক সময় আপনেও আমাকে করতেন! কই আমি তো কখনো অভিযোগ করিনি!..
শিশিরঃ রিভেঞ্জ নিচ্ছো? আমি তখন করতাম জন্য এখন তুমি করছো?
বিন্দুঃ ( তাৎছিল্লের হাসি দিয়ে) রিভেঞ্জ নেওয়ার মধ্যে মানুষ যতটা অর্জন করতে পারে তার চেয়ে ঢেড় বেশী অর্জন করতে পারে ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাই আমি তখনই আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি! আর জানেন তো,, কাওকে অতিরিক্ত ভালোবেসে গুরুত্ব দিলে, সে আপনাকে সস্তা ভেবে অবহেলা করবে–এটাই বাস্তব কথা! আর আমার ক্ষেত্রেও সেইম হয়েছিলো!..
বিন্দু কথাগুলো বলে শিশিরকে উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে! আর শিশিরও নিচের দিকে তাকিয়ে বসে পড়ে! রুদ্রাও ওর বাবাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,, ওর ছোট একটা মাথায় এতো বড় বড় কথা কিছুই ঢুকলো না! শুধু ওর মাম্মা আর বাবাইয়ের মুখপ্রাণে তাকিয়ে ছিলো!..
আর এদিকে,,,
ইশা বসে আছে ওদের রুমের বেলকোনিতে,, বেলকোনির লাইট অফ করা রুমে ওর বোন তৃষা কথা বলছে তার বিএফের সাথে আর ইশা বেলকোনিতে বসে ব্যাস্ত নগরী দেখছে! আজকের আকাশ একদম পরিষ্কার,,, তারা ভরা আকাশে একটুকরো চাঁদেরকণার পুরো আসমানের সুন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে! আকাশ পরিষ্কার হলেও পরিষ্কার নেই ইশার মন তার মন বিষাদে ভরা! একটু আগে ছাদের কথা
মনে পড়তেই চোখের পানি চিকচিক করে উঠলো!..
বিকেলে ছাদে ওরা যখন ছিলো তখন ভালোই ছিলো সবকিছু কিন্তু সন্ধ্যার পর যখন সবাই নেমে আসে ইশাকে তিয়াশ আসতে দেয়নি! ওর কুটলটি বুদ্ধি দিয়ে ইশাকে আটকায় কারোর সন্দেহ করারও কোন অবকাশও রাখে না!
ইশাঃ কি হয়েছে তিয়াশ ভাইয়া কিছু বলবে? নিচে কেন যেতে দিলে না?
তিয়াশ ছাদের দড়জা লাগিয়ে ইশার হাত টেনে নিয়ে ছাদের কোণায় যায়!
তিয়াশঃ ( ইশার কোমড় জরিয়ে ধরে) তোমার সাথে প্রেম করবো এখন তাই! ( সামনের দিকে মুখ আগায়)
ইশাঃ মানে? কি করছো? ছাড়ো আমাকে,,এতো কাছে কেনো আসছো?
তিয়াশঃ কেনো সমস্যা কোথায়? আমি কাছে আসলেই শুধু সমস্যা? অন্যকেও আসলে খুব ভালো লাগে?
ইশাঃ ( নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে) কি যা তা বলছো? অন্যকেও মানে? কে আমার কাছে আসলো? ওয়াট ডু ইউ মিন?
তিয়াশ এবার কোমড় ছেড়ে ইশার চুলের মুঠি ধরে মুখের কাছে মুখ এনে,,
তিয়াশঃ তোকে আমি বলেছিলাম না আমার পারমিশন ছাড়া তুই ভাতও গিলতে পারবি না আর সেখানে তুই কালকে নিশান্তকে কাছে গিয়ে এতো পিরিত দেখালি কেনো? এই তোর সমস্যা কি? একজনকে দিয়ে মন ভরে না? হাজারটা পুরুষ লাগে তোর? নিশান্ত কে? তোর প্রেমিক পুরুষ? বলতি অর্ক ভাইয়ার সাথে তোরও বিয়ে দিয়ে দিতাম!..
ইশাঃ ( চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে,,,চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করছে) তুমি খুব খারাপ,, নিশান্ত ভাইয়ার সাথে অজান্তার জন্য কাপল ডান্স করেছিলাম! সেখানে তো সবাই ছিলো! তাহলে তুমি এতো বাজে বাজে কথা কেনো বলছো আমাকে? চুল ছাড়ো আমি ব্যাথা পাচ্ছি!..
তিয়াশঃ ( রাগে ফুশতে থাকে) তুই কেনো ওই বাসায় গিয়েছিলি,,তোকে আমি নিষেধ করেছিলাম না? ( হাত খামচি দিয়ে ধরে) তুই আমাকে রিফিউস কেনো করিস? তোর কি মনে হয় আমি তোর যোগ্য না? তাহলে শুনে রাখ,, তুই আমার যোগ্য না আর কখনো হবিও না! তবুও তোকে আমার চাই,, তুই সারাজীবন আমার হয়ে থাকবি! চাইলেও আমার থেকে তোর মুক্তি নেই! আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তোকে মেরে ফেলবো! আর নিশান্ত তোকে কোথায় কোথায় ছুয়েছে? হাতে তাইনে? ( হাতে কামড় দেয়) আর কোথায়, পেটে? ( ইশাকে পেছনে ঘুড়িয়ে ওর ঘাড়ে থুতনি থেকিয়ে পেটে খামচি দেয় জোরে) আর কোথায়, তোর চুলে? ( ইশার চুল আবার হাতে পেচিয়ে চুলের মুঠি ধরে) আর কখনো কোন ছেলের কাছে যেতে যেনো না দেখি আজকে অতি সামান্য ভাবে বুঝালার এর ফল কি হতে পারে আর এই ভুল সেকেন্ড বার হলে এর চেয়েও খারাপ কিছু হবে! আর নিশান্ত না? নিশান্তকে আমি দেখে নিচ্ছি! আমার জিনিসের দিকে তাকানোর ফল কি হতে পারে? ও হারে হারে বুঝবে এবার! চল এবার নিচে,,( তিয়াশ ইশাকে টানতে টানতে নিচে নিয়ে যায়)
তিয়াশঃ তোমার আচারণ এতো ছোটদের মতো কেনো? তুমি এডাল্ট তোমাকে এসব মানায় না তিয়াশ ভাইয়া! ( চোখ মুছতে মুছতে) আমার পেটে অনেক ব্যাথা করছে,, তোমার মতো জঘন্য মানুষ যে আমার কাজিন হতে পারে আমার ভাবতেই খারাপ লাগছে! তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে ভালোবাসবো? ( নিচে যেতে যেতে)
তিয়াশ আর কিছু বলে না আজকে অনেক করে ফেলেছে এর চেয়ে আর বেশি কিছু বললে সত্যিই খারাপ হয়ে যাবে! ইশা ওকে খারাপ ভাবুক এতে ওর কিছু যায় আসে না কিন্তু ইশা তো ওর নিজের,, ইশাকে আঘাত করতে তিয়াশও চায় না তবে ওর মাথায় রাগ উঠলে ওর জ্ঞান থাকে না ও কি করে বসে সে নিজেও জানে না!..
#চলবে…
[ আমি প্রচুর অলস,,আমার সবকিছুতেই অলসতা,,লিখতেও আমার আলসেমি লাগে তাই এই পর্বটা দিতে দেরি হলো! নেক্স পর্ব তাড়াতাড়িই দিবো ইনশাল্লাহ,, আর আমি একবারে বসে কিছু লিখিনা,,একটু একটু করে লিখি তাই মনোযোগও সরে যায়,,পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বসেও লেখা হয় না! তারপরও কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবন]