শিশির বিন্দু পর্ব ৭

0
478

#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ৭

রাতের নিস্তব্ধতায় ঢেকে আছে শহরের বুক, পাশে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় নিশ্চুপ হয়ে আছে নগরী! আধার কালো রাত রোজ অপেক্ষা করে তার পুরোনো দিনের সংগী ভোরের আলোকে,,তারা যেনো পালাক্রমে নিজেদের রূপ বদলায়! তাদের মাঝেও চলে এক নিরব প্রতিযোগীতা কে আগে ধরনীর বুকে নামবে,, কার আলোয় নগরবাসী মুগ্ধ হবে,, সূর্যের আলোয় নাকি চাঁদের আলোয়?

চারপাশে পিনপিন নিরাবতা,,মাঝে মাঝে দুএকটা কুকুরও ডেকে ওঠছে! ছাদের সকল লাইট অফ করা,,মাথার উপরে রয়েছে এক পূর্ণতিথী চন্দ্র যার আলোয় ভরে যাচ্ছে ধরণীর বুক,, তাতে কোন বৈদ্যুতিক আলোর প্রয়োজন নেই! তারা ভরা আকাশের নিচে চলছে একদল কিশোর-কিশোরী আড্ডা,, যা শুধু ওই নীল আকাশই সাক্ষী! সাথে আরো আছে মনোরঞ্জক করা হাওয়া যাকে এক কথায় বলে “মুনলিট নাইট”! ধরনী এই অপরূপ রূপে আমি মরিতেও দ্বিধাবোধ করবো না! উফফ,,কিযে অস্থির মূহুর্ত যে সেখানে উপস্থিত না থাকবে সে উপলব্ধি করতে পারবে না!

সবাই খেলা থেকে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিতে গল্প করছিলো আর সে গল্পে আসর জমাতে বসেছে শিশির,,, গ্রামে ওর দাদুবাড়ির ভূতের গল্প সবাইকে শোনাচ্ছে! সবাই খুব মনযোগ দিয়ে শুনলেও ভয় পাচ্ছিলো ছোটরা! রুদ্রা তো ওর বাবাই মানে শিশিরের গলা জরিয়ে ধরে বসে আছে,,আর রাফান নকশার কোলে,, পিও ওর বোন পুষ্পার সাথে সেঠিয়ে বসে আছে কাছে,, এদিকে নিশা তো ভয়ে ইন্দুর বুকের মধ্যে যেনো ঢুকে যাবে এমন অবস্থা! অজান্তাও ইশাকে ধরে আছে কিন্তু ইশার কোন ভয় লাগছে না, এগুলো তো ওর শিশির ভাইয়া গল্প শোনাচ্ছে ওদের দাদাবাড়ির,, ওর সাথে তো আর ঘটছে না এখন! আর ইশা বরাবরই খুব সাহসী মেয়ে,,এসব তো বিশ্বাস করেই না কেও বললেও অযুক্তি বলে মনে হয়! এখনও এসব আছে নাকি,,আযব! তবে রুশা গিয়ে বসেছে তিয়াশের পাশে আর একটু পর পর ভয়ে তিয়াশের হাত চেপে ধরছে! তিয়াশের প্রচন্ড বিরক্ত লাগে এই রুশা নামক মেয়েটিকে তবে কিছু না বলে ভাবীর কাজিন হয়, মান-সম্মান বলেও কিছু একটা আছে! তিয়াশ হাত বারবার সরিয়ে নিচ্ছে রুশার থেকে! তিয়াশের ঠিক এই মুহুর্তে ইশাকে থাঠিয়ে কয়েকটা চড় লাগাতে ইচ্ছে করছে,,, কারণ ইশাকে ওর পাশে অনেকবার বসতে বলেছিলো কিন্তু এই মেয়ে কিছুতেই বসবে না,, সে বসেনি তার বান্ধুবি অজান্তার কাছে বসবে বলে! ইশা বসবেই বা কোন আহ্লাদে কারণ তিয়াশের পাশে বসলে তিয়াশ ওর গলা চিবিয়ে খাবে,, যে রেগে আছে ইশার ওপর!..

শিশিরঃ সেদিন তো ছোট মা ( তৃষা- ইশার মা) দুই ঘন্টা জ্ঞান হারিয়েছিলো,, তারপর থেকে শুরু হলো তার জ্বর আর সাথে পাগলামী,,কাওকে দেখতেই তো পারতো না আর তিনি তখন ছিলো নতুন বউ তাই আমাদের কাছে যেতে তো দূরে থাক ঘরের দড়জা পর্যন্ত খুলতো না!..

রুদ্রাঃ ও বাবাই প্লিজ আর বলো না,, ভয় লাগছে তো,,,( কানে হাত দিয়ে)

শিশির ঠোঁট প্রসারিত করে,,,

শিশিরঃ আচ্ছা বাবা বলবো না,,তাহলে চলো খেলা স্টার্ট করি!..

রুশাঃ হ্যা জিজু তাই করো,, খুব ভয় লাগছে ( তিয়াশের পাশে বসেই)

ইশা একবার রুশার দিকে তাকায় আর একবার তিয়াশের দিকে তাকায় বাঘিনী চোখে! কিন্তু এতে তিয়াশের কিছু যায় আসে না একটু আগে সেও নিশান্ত নামের ছেলেটির সাথে নেচেছিলো তখন তিয়াশেরও অনেক খারাপ লেগেছে! আর ইশাকে পাশে বসতে বললেও বসে না তাই এখন বাঘিনীর চোখে তাকিয়ে লাভ নেই!..

রুদ্রা কাচের বোতলটি ঘুরায় আর তার মুখ গিয়ে পড়ে শিশিরের দিকে! আর শিশির ট্রুথ নেয়,, তখন সিফাত প্রশ্ন করে,,,

সিফাতঃ জিজু আপনার লাইফে সবচেয়ে ইমপ্রটেন্ট কে?

শিশিরঃ আমার মা,,(কিছুক্ষন থেমে) আব্বুও প্রিয় তবে আম্মুর মতো ওতো ভালো আমি কাওকেই বাসতে পারবো না ! ”মা” শব্দটি ছোট হলেও এর গভীরতা অনেক,,এই শব্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সকল মায়া-মমতা,অকৃত্রিম স্নেহ, আদর-ভালোবাসা সব,,সব সুখের কথা! বাবা- মায়ের তুলনার সাথে কোন কিছু তুলনা চলে না! মায়ের স্পর্শেই সন্তান ধীরে ধীরে পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠে! তাই আমাদের উচিৎ তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা!..

নিশান্তঃ আচ্ছা জিজু এই দুই দিনে আপনার বিন্দু আপুর প্রতি ভালোবাসা কতটুকু জন্মালো?

শিশির মৃদু হেসে একবার বিন্দুর দিতে তাকায় তারপর নিশান্তের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,,,

শিশিরঃ তোমাদের ভাষ্যমতে বিন্দু আমার দু দিনের চেনা,,,আর এই দুই দিনের চেনায় কেও কাওকে ভালোবাসতে পারে না! মোহ টা হয়তো জন্মাবে কিন্তু ভালোবাসা না,,মোহ কেটে গেলেই সে তোমার অপ্রিয় হয়ে উঠবে! অনেকেই আছেন মোহকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করেন! কেউকে পছন্দ হলেই মনে করেন এই বুঝি ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে কাওকে ভালো লাগাটা ভালোবাসা না! মোহ হয়ত তীব্র হয় কিন্তু এর স্থায়িত্ব কম আর ভালোবাসার অনুভুতি কখনো শেষ হবার না! তবে এটা সত্য মোহ আসতে আসতে ভালোবাসাতে পরিণত হয়! আই থিংক,, বোঝাতে পেরেছি তোমাদের!.( একদমে কথাগুলো বলে)

তিয়াশঃ আচ্ছা ভাইয়া আমি একটা কথা ভাবছি,, তুমি যে প্রথমে বললে আমাদের ভাষ্যমতে বিন্দু ভাবী তোমার দুই দিনের চেনা,, আমাদের ভাষ্যমতে কেনো হবে? তোমরা তো বিয়ের দিনই একে অপরকে প্রথম দেখো,, তাহলে কি ভেবে নিবো তোমরা পূর্ব পরিচিত??

শিশিরঃ আরে না ওটা তো কথার কথা ছিলো,,এবার যেনো কার পালা? ( কথা এড়িয়ে)

রাফানঃ আংকেল আমার,,,

শিশিরঃ হুম তাহলে শুরু করো,,,

রাফান ঘুরাতেই এবার ওর বাবার দিকে গিয়ে থেকলো বোতলের মুখ,,তাকে বলা হলে সে ট্রুথ নিবে জানায়! যে বিচ্ছুগুলো আছে ডেয়ারে কি না কি দেবে আল্লাহই জানে,,,

বিন্দুঃ আচ্ছা রাফেজ ভাই,, আপনার আর নকশা আপুর প্রথম দেখা নাকি অনেক ইন্টারেস্টিং ভাবে হয়েছিলো,, আজকে তাহলে সেই গল্প শোনান, কখনো সময় হয়নি সেভাবে শোনার!..

রাফাজঃ ওরে আল্লাহ তেরো বছর আগের কাহিনী তো আমারই মনে নেই! তোদের কিভাবে বলবো,,,

নিশাঃ প্লিজ জিজু বলোনা,,তোমার আর বড় আপুর ফার্স্ট ডেট কিভাবে হয়েছিলো,,,

রাফাজ হেসে বলতে শুরু করে,,,

আজ থেকে তেরো বছর আগে আমি আমার জীববের সবচেয়ে সুন্দর মানুষটি কে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করি! তখন আমি চট্টোগ্রামে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তাম! তো সেবার ছিলো আমার লাস্ট সেমিস্টার,,পরিক্ষার কিছুদিন আগে বাবার কি একটা কাজে যেনো গ্রামে এসেছিলাম! একদিন বিকেলে ঘুম থেকে ওঠে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটা নদীর পারে যাই,,তখনি আমার “শ্যামাঙ্গী” কে দেখবার সুযোগ হয়! সে তার এক বান্ধুবী,,কী যেনো নাম ছিলো? ( নকশার দিকে তাকিয়ে)

নকশাঃ রিমা,,,( মিষ্ট হেসে বললো)

রাফেজঃ হুম,,রিমাকে নিয়ে ঘাটে এসেছিলো! আমি একটা বটগাছের নিচে দড়িয়ে ছিলাম, তো হঠাৎ দেখি দুজন যুবতী মাঝি জন্য অপেক্ষা করছিলো! আমার কাছে তাদের মধ্যে চুলে জবা ফুল গুজে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে বেশ লাগে,, এই প্র‍থম কোন যুবতীর দিকে চোখ যায়! কি মায়াবী তার চোখ,,চোখের মায়াতেই আমি উলোট-পালোট হয়ে যাই! ( নকশার দিকে তাকিয়ে) তোদের আপুর চুলতো আগের থেকেই মাশাল্লা,,ছেড়ে দিকে পিঠ গড়িয়ে হাটু বরাবর,,সেদিন খোলাই ছিলো সাথে গুজে দেওয়া জবা ফুল আমি কি যে দেখলাম মনে হলো আমার সামনে আসমান থেকে এক পরী নেমে এসেছে,, আমার ”শ্যামাঙ্গ পরী”! ( নকশা এবার লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকায়) আমি কি করলাম জানিস,,লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কথোপকথন দূরে থেকেই শুনে ফেললাম! মূলত সেদিন রিমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো তাই তোদের নকশা আপু আমাদের গ্রামে এসেছিলো! তখন তাদের বাড়ি তো নদীর ওপার ছিলো! তো রিমার জন্যই ঐদিন নকশাকে দেখতে পাই,,রিমা নকশাকে নৌকায় তুলে দিয়ে যে বাড়ি যাবে! সে আর হলোনা,, হা হা হা,,আমার বোকা শ্যামাঙ্গী এতোটাই বোকা ছিলো যে নাকের ফুল পানিতে পড়ায় জুরে দিলো কান্না!..

রুশাঃ জিজু,,নাকের ফুল কিভাবে পড়ে গেলো? কেও না খুললে তো নাক থেকে একা একা পড়বে না!..

নকশাঃ আরে,,রিমাকে দিয়েছিলাম! ওরে দেখতে আসবে তো ওর নাক খালি কেমন একটা দেখায় না? ওরা তো খুব গরীব ছিলো তাই ওর কোনো সোনার গহনা ছিলোনা! আর আমার কাছেও ওইদিন নোজপিন ছাড়া কোন গহনাই ছিলোনা সাথে,, তাই নোসপিন টাই দিয়েছিলাম পড়তে! মা তো দেখিস কেমন করে পড়তে দিতো না কিছু,, আমি নকি হারিয়ে ফেলবো সব! তোকে যেমনটা করে আমার বেলায় তার চেয়েও দ্বিগুন কঠোর ছিলো!..

বিন্দুঃ তারপর?

নকশাঃ তারপরে আর কি,, আমি নাকফুলটা জোর করেই রিমাকে পড়াই,, আমাদের কারোর আর মনে ছিলো না! পড়ে যখন খেওয়া ঘাটে আসি তখনই রিমার মনে পড়ে আর ও আমায় ফিরে দিতে চায়! আমি পড়ে নিবো জানাই কিন্তু মহারানী তখনি আমায় দিবে! আমিও মার ভয়ে নিয়ে নেই,,কিন্তু নোজপিন পড়াতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়! আমার তো গলা, হাত-পা সব শুখিয়ে যায় আমার যে মা তাকে আমি কি জবাব দিবো তাই কান্না করি! আর তারপর মাঝি আসলে মাঝির নৌকায় রিমাকে নিয়ে ওঠে পড়ি নোজপিন খোজার জন্য! আর যখন নৌকাটা ছাড়বে ঠিক তখনি তোদের ভাইয়া লাভ দিয়ে সামনে আসে,,,,( থামিয়ে রাফেজ বলে)

রাফেজঃ বাকিটুকু না হয় আমিই বলি শ্যামাঙ্গী,,, ( নকশার দিকে তাকিয়ে)

নিশান্তঃ ওহো জিজু,,এখনো কত রোমান্টিক তুমি,,শ্যামাঙ্গী আয় হায়,, মে মারযাবা,,( পাশে থেকে নিশান্ত বলে ওঠে)

রাফেজঃ তো? আমাদের ভালোবাসা কি তোদের মতো নাকি,, যে দুইদিনেই ভুলে যাবো? এখনকার ছেলে মেয়েরা কি যে হয়েছে বাবারে,, শোন বাঙালী আর কিছু জানুক বা না জানুক জমিয়ে প্রেম করতে ভালো জানে! আগের যুগের প্রেমও তেমন ছিলো,,আমারও তাই( নকশা কে চোখ মেরে)

ইন্দুঃ তারপর বলেন রাফেজ ভাইয়া,, নকশা আপু নৌকায় উঠতে লাগলে??

রাফেজঃ ওহ,,,নকশা যখন উঠলে লাগে নৌকায় তখন আমি গিয়ে নৌকায় ওঠে পড়ি! ওর কার্যকলাপে কিছুটা রাগ হয় ওর ওপর,,,বাড়ি যাবি যা ভালো কথা তা না করে এক রতি নাক ফুলের জন্য এতো বড় নদীতে নৌকা করে খুজবে! ভাবা যায় এটা? এতোটা বোকা মেয়ে এখনও আছে! আমার তো আমার শ্বাশুড়ি মায়ের ওপর চরম রাগ উঠে,,,কে এই মহিলা?যার জন্য এই অবেলায় আমার শ্যামাঙ্গীকে তার নোজপিন খুজতে হয়!.

তৃষাঃ তারপর?

রাফেজঃ তারপর আর কি আমিও নৌকার ওঠে পড়লাম! তবে যাত্রী হয়ে না নিলাম এক ভিন্ন চরিত্র! আমার বাবা তো তখন আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলো,,তাই আমাদের কথাতেই সব চলতো! মাঝিকে বলার সাথে সাথে সে নেমে যায় আর তার জায়গা নেই আমি! ঐবার প্রথম মাঝি সেজেছিলাম,,ভাবতে পারিস তোদের বোনের জন্য ইঞ্জিনিয়ার রাফাজ শেখ থেকে সেদিন হয়ে উঠলাম মাঝি রাফাজ! হা হা হা,, তারপর পুরো নদী খুজে না পেয়ে ওদের ওই পাড়ে নামিয়ে আমি একা একাই বাড়ি ফিরি চারদিকে গ্রামের পরিবেশ দেখতে দেখতে!..

নিশাঃ তোমারে ওই আপুটা মানে রিমা আপু চিনতো না? মাঝির ড্রেস কই পেলে?

রাফেজঃ আরে বোকা,, মাঝির ড্রেস কেনো পড়বো ওদের সামনেই তো আমি মাঝিকে সরিয়ে উঠলাম,, তোর আপু আর রিমা তো নোজপিন নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো আমি আদো নৌকায় কেনো উঠলাম সেটা দেখার সময় আছে নাকি তাদের? নোজপিন খুজতে যেয়ে জবা ফুলও পানিতে ফেলে ভুলে! রাগ যা হয়েছিলো মনে হলো কয়েকটা চড় লাগিয়ে দেই,,নাক ফুলের জন্য নিজেও না পানিতে পড়ে যায়! আর এদিকে রিমাও আমাকে তেমন চিনতো না,,কারণ আমি বেশীরভাগ সময় শহরে পড়ালেখার জন্য কাটিয়েছি! গ্রামে আমার বাবার প্রভাব থাকলেও আমার প্রভাব ছিলো না! বাবার পরিচয় না দিলে কেও আমায় চিনতোই না! আর জানিস আমি আবার সিংগার ছিলাম,, ভার্সিটির টপার সিংগার,,সেদিনের কাহিনীর সাথে একটা গানের খুব মিল খুজে পাই,, তাই খালি গলায় সেদিন গানটা গেয়েও ফেলি!..

বিন্দুঃ কি গান? এখন শোনান রাফেজ ভাই!..

রাফেজ মৃদু হেসে আজও খালি গলায় গানটি গেয়ে উঠলো! আর সিফাতকেও গিটার বাজাতে নিষেধ করেছিলো,,

একটা ছিলো সোনার কন্যা
মেঘ বরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিলো সেই কন্যার দেশ,,
দুই চোখে তার আহারে কি মায়া
নদীর জলে পড়লো কন্যার ছায়া…

তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে নাও গড়াইয়া চলি,,
আমি তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে নাও গড়াইয়া চলি…

কন্যার ছিলো দীঘল চুল
তাহার কেশে জবা ফুল(২)
সেই ফুল পানিতে ফেইলা কন্যা করলো ভুল,,,
কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলবো না…

একটা ছিলো সোনার কন্যা
মেঘ বরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিলো সেই কন্যার দেশ,,
দুই চোখে তার আহারে কি মায়া
নদীর জলে পড়লো কন্যার ছায়া…

হাত খালি, গলা খালি
কন্যার নাকে নাকফুল (২)
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করলো ভুল…

কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলবো না…

একটা ছিলো সোনার কন্যা
মেঘ বরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিলো সেই কন্যার দেশ,,
দুই চোখে তার আহারে কি মায়া,
নদীর জলে পড়লো কন্যার ছায়া..

এখন নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে
নাও গড়াইয়া চলি(২)..

সবুজ বরণ লাউ ডাগায়
দুধ সাদা ফুল ধরে
ভুল করা কন্যার লাগি মন আনচান করে(২)…

আমার মন আনচান করে(৩)…

সবার করতালি তে রাফেজের ধ্যান ফেরে,,,তার মনে হচ্ছিলো সে যেনো আগের জীবনে তার ‘শ্যামাঙ্গীর’ সাথে কাটানো মুহূর্তে ফিরে গিয়েছে! বাঁকা হাসি দিয়ে,,,

শিশিরঃ ওয়াও জিজু দারুন ইন্টারেস্টিং ছিলো!..

রাফেজঃ হ্যা শিশির,,,

নিশান্তঃ বিয়ের ঘটনা বললে না? কিভাবে তোমার আর নকশার আপুর বিয়ে হয়? তখন তো আমি খুব ছোট 3 তে মেবি পড়ি কিছুই মনে নেই!..

রাফেজঃ অন্য একদিন আবার সবাই এক হলে বলবো!..

রাত তখন ৩:০০ টা বাজে,,সবার এবার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন,, কালকে আবার সবাই চলে যাবে! তাই আর বেশি দেরি না করে হাসি-ঠাট্টার-তাশার মাঝে ওদের আড্ডা এক রকম শেষ হলো! শেষে সবার জোরাজুরিতে শিশি-বিন্দু কে গান করতে হলো! ওরা রাজি না হলেও সবাই জোর করে ধরে ডুয়েট গাওয়ার জন্য তাই ওরাও রাজি হয় আর গিটার বাজায় সিফাত,,,

শিশিরঃ দূরে যে ছিলে,
ভালোই তো ছিলে,
প্রেমের চিঠি পুরোনো খামে!

বিন্দু একবার ভ্রু কুঁচকে তাকায় শিশিরের দিকে,, এই গান কেনো গাইছে শিশির তবে যাই হোক, সবার সামনে তো কিছু বলতেও পারবে না তাই সেও তাল মিলিয়ে গেয়ে ওঠলো,,,

বিন্দুঃ আড়েলে রাখি,
আমি সামলে দু চোখে,
লুকিয়ে রাখা পুরোনো নামে!
দেখা হবে, ভাবিনি আগে!..

এবার দুজন একসাথে গলা মিলিয়ে,,

দূর দূরে বহুদূরে,
পথ গেছে সরে,
কেনো এলে তবে ফিরে
অচেনা এ তীরে,
স্মৃতিদের ভীরে
হারিয়ে গেছি কবে যে!..

রুদ্রা এবার শিশিরের থেকে দৌড়ে এসে ওর মায়ের কোলে বসে,,,

বিন্দুঃ দূরে থেকেও
ক্ষণিকের কাছে আসা,,
অবুঝ সময় মূহুর্ত অজানা!

শিশিরঃ ওও,,,
আগলে আছি যেটুকু,
আছি বেঁচে
বলবো কি করে
যেটুকু বলার আছে!
দেখা হবে, ভাবিনি আগে!

আবার দুজন একসাথে গলা মিলিয়ে বলে,,

দূর দূরে বহুদূরে,
পথ গেছে সরে,
কেনো এলে তবে ফিরে
অচেনা এ তীরে,
স্মৃতিদের ভীরে
হারিয়ে গেছি কবে..

দূর দূরে বহুদূরে,
পথ গেছে সরে,
কেনো এলে তবে ফিরে
অচেনা এ তীরে,
স্মৃতিদের ভীরে
হারিয়ে গেছি কবে যে!..

গানটার সাথে ওদের জীবনের অনেকটাই মিল আছে সেটা আর কেও না বুঝলেও শিশির-বিন্দু ঠিকই বুঝেছে!..

#চলবে…

[ আসসালামু ওয়ালাইকুম,, কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছে! গল্প কেমন লাগছে জানাবেন,, কারোর কোন অভিযোগ থাকলেও করতে পারেন,,,গত দুই পর্বে একজন বলেছিলো,, গল্প শুরু হলো শিশির-বিন্দু দিয়ে আর এখন সব এলোমেলো,,,তার উদ্দেশ্যে বলছি গল্পের শিশির-বিন্দুটা মেইন টপিক,,একটা গল্প সাজাতে হলে মেইন টপিকের বাহিরেও ছোট-খাটো অনেক চরিত্র দিয়ে সাজাতে হয় তা নাহলে গল্পের মাধুর্য প্রকাশ পাবে না! আমরা কোন পরিক্ষা দিতে বসলে প্রশ্ন যেমনই হোক মূল কথার বাহিরেও অনেক কিছু লিখতে হয় নাইলে মার্ক ভালো আসে না গল্পও তাই! তবে পরের পর্বগুলোতে শিশির-বিন্দু কেই ফোকাস বেশি করবো,,,হ্যাপি রিডিং❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here