শিশির ধোয়া গোলাপ পর্ব ২

0
1881

#শিশির_ধোয়া_গোলাপ

#ইভান_ডালী

#পর্বঃ০২

আদনান চলে যেতে নিলেই আরোহী সামনে দাড়িয়ে বলল,সকালে কিছু না খেয়ে বাহিরে যেতে নেই। আদনান কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।আবরার চোধুরি নিরব চাহনি তে তাকিয়ে রইলেন। আরোহী মন খারাপ করে যেতে নিলেই আবরার চোধুরি বললেন, মন খারাপ করো না মা। তবে আমি শুধু বলবো তুমি চাইলে আমার ছেলেটাকে অন্ধকার শহর থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে পারো।

– আচ্ছা বাবা। আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবো।

– তুই পারবি মা, আমি জানি তুই পারবি।

সময় হলে আরো জানতে পারবি আস্তে আস্তে। এখন চল তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

আবরার চোধুরি রাহেলা নামে কাউকে ডাকতেই মাঝবয়সী এক মহিলা আসলেন।আরোহী কে দেখেই বলতে লাগলো,

– এইডা বুঝি আমাগো ছোট সাহেবের বউ।

– হুম। আর আরোহী ইনি হচ্ছেন আমাদের পুরাতন সার্ভেন্ট। তবে আমরা তাকে আমাদের পরিবারের সদস্য বলেই মনে করি।

আরোহী রাহেলা বেগম কে সালাম করতেই রাহেলা বেগম চমকে উঠেন,তিনি বললেন

– এইডা কি করলা তুমি, আমাকে সালাম করলা ক্যন?

– বারে, আপনি আমার গুরুজন তাই সালাম করেছি।
– তাই বইলা সালাম করবা আমারে।আমি হইলাম গিয়া কাজের লোক। আমারে সালাম করতে হইবো না।

– আরোহী একদম ঠিক করেছে। আর তুমি তো আমাদের পরিবারেরই একজন।বললেন,আবরার চোধুরি

– বড় সাহেব আপনাগো মতো মানুষ আছে বইলাই আমরা গরিবে গো দু বেলা খাওন জুটে।আর এই বউ তো ঘরের লক্ষী হইবো,মিলাইয়া নিয়েন।

– আচ্ছা, এই বাসার রান্না কি আপনি করেন?

– হো,মা। আমিই করি।

– এখন থেকে আপনার আর রান্না করার প্রয়োজন নেই।আমি করবো।কোথায় রান্নাঘর একটু দেখিয়ে দিবেন?

– এইডা কি কও মা, তুমি শশুর বাড়ি নতুন আইসাই কাম করবা আর আমি বইসা থাকমু। তোমার কিচ্ছু করতে হইবো না।

– আমার মেয়ে টা যখন করতে চাইছে, করতে দাও রাহেলা, তবে তুমি সাথে থেকে সবটা বুঝিয়ে দেও।

– আচ্ছা।

রাহেলা রান্নাঘরে নিয়ে আরোহী কে সবটা বুঝিয়ে দিলেন, আরোহীর সাথে টুকিটাকি সাহায্য করে রাহেলা বেগম। আরোহী রাহেলা বেগম কে জিঙ্গাসা করে,আচ্ছা আপনাদের ছোট সাহেব কি পছন্দ করে?

– হের তেমন কোনো পছন্দ নেই।আর হে তো বাসায় তেমন খাওয়া দাওয়া করে না।

– হুম বুঝলাম। ( তাহলে কি তিনি আজ আসবেন না, মনে মনে)

_____________________________________________

আবরার চোধুরি আদনান কে ফোন করে,তিনবার রিং হবার পর আদনান ফোন ধরে।

-আদি আজ তুমি লান্স বাসায় এসে করবে।আমি কোনো অজুহাত শুনতে চাই না।

– বাবা….

– আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি আসবে।

– আচ্ছা, আমি আসতেছি।

আরোহী নিজের রুমে ফোন হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলে,

– আচ্ছা তিনি কি আসবেন না? আমি কি ফোন করবো। না থাক যদি ব্যস্ত থাকেন। আমার জন্য যদি কাজের কোনো ব্যঘাত হয়।তার চেয়ে দিবো না। মনে মনে কথাগুলো বলে আরোহী বেড সাইটে ফোন রাখতেই দেখে আদনান ঘরে প্রবেশ করেছে।আরোহী আদনানের হাত থেকে কোর্ট টা নিতে গেলেই আদনান আরোহী কে পাশ কাটিয়ে বেড সাইটে কোর্ট রেখে দিলো। আরোহীর ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলেও প্রকাশ করে নি।আদনান ফ্রেশ হয়ে আসতে নিলেই আরোহী বললো,
– আমি চেয়েছিলাম ফোন করবো, কিন্তু আপনি তার আগেই এসেছেন, ভালোই হলো আমার খুব ইচ্ছা ছিলো সবাই এক সাথে বসে খাবে।আমাদের বাসায় সবাই একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করি।

– বাবা আসতে বললো তাই এসেছি।বাট আই গেইস্ তুমি বাবাকে দিয়ে ফোন করিয়েছো আসতে, রাইট।

– জ্বি না, মিস্টার স্বামী মশাই। আমি বাবাকে কিছুই বলিনি। আর আপনি শুধু শুধু বাবার দোষ দিচ্ছেন কেন? এটা বললেই হয়,নতুন বউকে রেখে অফিসে মন বসছিলো না।

– হোট ডু ইউ মিন, আমাকে কি সে রকম মনে হয় তোমার?

– আমি যা ভেবেছিলাম তার থেকে একটু বেশি মনে হয়।

– আমার রাগ সম্পর্কে তোমার ধারনা নেই। আর তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছি বলে ভেবো না কিছু বলবো না।

– হ্যা, তাই তো আপনার তো অনেক রাগ, রাগ উঠলে কি কি করবেন?( আরোহী একটু সামনে এসে ন্যাকা ভঙ্গিতে বললো।)

– দেখো সামনে এসো না, আমি তোমাকে যথেষ্ট ভদ্র ভেবেছিলাম, কিন্তু তুমি তো একটা গুন্ডি।

– গুন্ডির কিছুই দেখাইনি,তবে দেখাবো।আপনি কাল থেকে আমাকে রীতিমতো এবোয়েড করছেন।

– এখন খেতে দিবে না চলে যাবো?

– সকালে বাবা সামনে ছিলো তাই ভদ্রতা বজায় রেখেছি কিছু বলিনি, তবে এখন থেকে আপনি না খেয়ে বাসার বাহিরে যেতে পারবেন না। এমন কি ডিনার ও বাসায় এসে করবেন।

– তুমি কে যে আমার উপর খবরদারি করছো?

– আমি আপনার কে সেটা আপনি ভালো জানেন।এখন খেতে চলুন।

আরোহী চলে যেতেই আদনান হাফ ছেড়ে বাঁচে। মেয়েটা বড্ড বেশি কথা বলে, তবে কিছু বলাও যাবে না টোলারেট করতে হবে আমাকে।

আদনান নিচে নেমে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। আরোহী সবাই কে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে।সবাই খাচ্ছিল এমতাবস্থায় আবরার চোধুরি বললেন,
-আদি আমি চাই তুমি আর আরোহী কয়টা দিনের জন্য কোথাও ঘুরতে যাও।

– বাবা তুমি জানো আমার পক্ষে কাজ রেখে কোথাও যাওয়া পসিবল না।

– কাজ নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না ম্যানেজার আছেন আর বাকিটা আমি সামলে নিতে পারবো।

– বাবা……

– আদি কোনো অজুহাত নয়।

– বাবা আমি কিছু বলতে চাই? বলল আরোহী

– বলো মা।

– বাবা আমি আমার গ্রামের বাসায় একটু ঘুরে আসতে চাই।

– ঠিক আছে মা। তুমি যখন চাইছো তবে তাই হবে।আর আদি কাল সকালেই তোমরা যাচ্ছো।দেটস্ ফাইনাল।

আদনান খাওয়া শেষ করে উপরে আসতেই আরোহী বলল,

– মিস্টার নিরামিষ স্বামী আপনি একটু রাতে তাড়াতাড়ি আসবেন।

– কেন?

– আপনার যেমন নতুন বউ ছাড়া থাকতে ইচ্ছা করে না, আমার ও তো আমার নিরামিষ স্বামী টাকে ছাড়া ভালো লাগে না। আপনার মুখ খানা দেখার জন্য চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকি।

– আমার নাম আছে তুমি সেটা রেখে কি সব নিরামিষ বলছো কেন?

– আপনি যে নিরামিষ তাই।একটু রোমান্টিক হতে পারেন না, আনরোমান্টিক ।

আদনান আরোহীর হাত চেপে কিছুটা কাছে এসে বললো,

– আমি আনরোমান্টিক, নিরামিষ?

– হ্যা, আপনি তাই। এখন জগড়া না করে অফিসে যান। কাল থেকে মিশন শুরু।

– আমি জগড়া করছি না, ওকে আর কিসের মিশন?

– সেটা না হয় আমার ওপর ছেড়ে দিন।

আদনান কিছু না বলে অফিসে চলে গেল।তবে সে ঠিক বুঝতে পেরেছে এই মেয়ের মাথায় কিছু ঘুরছে।

এদিকে, আরোহী মৃদু হেসে বলে, মিস্টার নিরামিষ স্বামী আগে আগে দেখো হতা হে কেয়া।
আরোহী তার বাবা মা কে ফোন করে জানিয়ে দেয় তারা আসছে। ফোন রেখে দিয়ে আরোহী আবরার চোধুরি র কাছে গিয়ে বসলেন।

– কিছু বলবি মা।

– না, বাবা।তবে একটা কথা জানার ছিলো।

– বাবার কাছে কিছু বলবে তাতে এরকম আমতা আমতা করার কি আছে। বল কি জানতে চাও।

– বাবা…. (আরোহী আবার থেমে যায়)

– বুঝেছি, আদির বিষয়ে জানতে চাচ্ছো তাই তো। ছেলে একটু রাগি হলেও মনটা ভালো আছে। ওকে নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই।

– সে তো গ্রাম্য এলাকায় কখনো থাকেনি, যদি আনইজি লাগে?

– সেটা তো লাগবেই। তবে আমি এটাও জানি আমার মেয়েটা সব সামলে নিবে।
তারপর, আরোহী আর আবরার চোধুরি কিছুক্ষণ গল্প করে।

রাত ১১ টা আরোহী এখনো নিজের ঘরে একা বসে আছে। এদিকে আদনানের আসার নাম নেই। আরোহী না খেয়ে বসে আছে আদনান আসলে এক সাথে খাবে। অপেক্ষা করতে গিয়ে আরোহী ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়েছে।
রাত ১১ঃ৩০ এ আদনান বাসায় আসে।এসে ফ্রেশ হতেই দেখে আরোহী শুয়ে আছে। তবে রাহেলা আন্টি যে বললো,ও খায়নি না খেয়েই কি শুয়ে আছে।একবার কি ডাকবো?

-এই মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি। আদনান কথাটি বলে দেখে আরোহীর কোনো হেলদোল নেই। আদনান আরেকটু ঝুঁকে এসে জিজ্ঞেস করে আবার।

আরোহীর ঘুম বড্ড গভীর তাই আদনানের কোনো কথা আরোহীর কান পর্যন্ত পৌছালো না। আদনান এবার আরোহীর মুখ পানে তাকিয়ে আছে। কেউ ঘুমোলে যে কাউকে এতটা মায়াবি লাগে সেটা আদনান আরোহী কে না দেখলে হয়তো বুঝতো না। আদনান কাঁপা কাঁপা হাতে আরোহীর গাল স্পর্শ করে।

অথঃপর……..

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here