পানপাতার ঘর? পর্ব ১+২

0
1867

পানপাতার ঘর??
পর্বঃ১+২
লেখা – Mahfuza_Monira

দুহাতে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে মিশি। এই নিয়ে চতুর্থ বারের মতো অংকে ডাব্বা মেরেছে সে। অবশ্য এই নিয়ে মিশির কোনো মাথা ব্যথা নেই। খাতায় একটা নাম্বার হলেই হয়। আর শূন্যও তো একটি নাম্বার নাকি?
অষ্টম শ্রেণিতে কোনোভাবে টেনেটুনে, এর ওর টা দেখে পাশ করে এসেছে। তাই বলে তো সববার পার পেয়ে যাবে না সে। নবম – দশমের অংক,সে তো বেশ কঠিন। প্রথমেই যদি এমন রেকর্ড ভাঙা ফেইল করে তবে পরে কি হবে! ভাবতেই মিশির বাবা বকর মোল্লা নিজের মাথায় আইস ব্যাগ চেঁপে ধরেন প্রতিবার।
আরো একজন আছে যে মিশিকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। সে হলো স্কুলের গণিত মাস্টার আলী বাবু। পারলে সে খাতায় অংক করে তা পানিতে গুলে খাইয়ে দেয় মিশিকে তবুও যদি মেয়েটার মাথায় অংক নিয়ে বুদ্ধি শুদ্ধি হয়!!
.
মিশি আড়চোখে বারবার দেয়ালের ভাঙা অংশ থেকে উঁকি মারা তেলাপোকা টাকে দেখছে। যখনি সে তেলাপোকাটার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে,সেটি দ্রুত ছুটে দেয়ালের সেই ভাঙা অংশের ভেতর চলে যাচ্ছে। মিশিকে দেখলেই সে নার্ভাস হয়ে পড়ছে। বেচারা কি মিশির প্রেমে পড়ে গেলো নাকি! কথাটা ভাবতেই নিঃশব্দে মিশি খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।
.
.
একে তো ফেইল মেরেছে! উপরন্তু কোনো লজ্জা শরম নেই! কান ধরে আবার হাসা হচ্ছে!!
আলী বাবুর মেজাজ চটে যায়। আজকে পুরো ক্লাসের সামনে বেতের বারিতে জখম করবেই করবে সে মিশিকে। আলী বাবু টেবিলের তলায় পড়ে থাকা বেত টা আলগোছে তুলে নেয়। ধিমি পায়ে এগোয় মিশির দিকে। মিশি মাস্টার মশাইকে আসতে দেখে হাসি থামায়। হাতে বেত দেখে নিজে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়।

আলী বাবু বেত উঁচিয়ে মিশিকে দেখিয়ে বলে-
– এটা দেখে তোর কী মনে হচ্ছে?
মিশি নিচু গলায় বলে-
– চকলেট কালার আর গু কালারের সম্মিলন। ২ টাকা দামের কোকোলা লাঠি গুলোর মতো লাগছে। খাবেন স্যার? শিপলুদের দোকানে ব্যাপক আছে সেগুলো। নারে শিপলু?

শিপলু বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায়। বোকা বোকা গলায় বলে-
– হ্যাঁ স্যার। খাবেন আপনি? বাবা কে বলিয়ে কয়েক ডিব্বা আপনার বাসায় পাঠিয়ে দেই?

আলী বাবু পড়েছেন মহা ঝামেলায়। মুখ টাকে পেঁচার মতো করে রেখেছেন। একদিকে মিশি অপরদিকে এই গাধা শিপলু!!

প্রথম সারিতে বসা উদয় মাস্টার মশাইয়ের চেহারা দেখে বেশ মজা পাচ্ছে। বেচারা কাকে রেখে কাকে মারবে,চয়েজ করতে পারছে না বোধহয়।

উদয় হাত তুলে। জোর গলায় বলে-
– স্যার,মিশিকে দু ঘা মেরে দ্রুত কাজ সারুন না! সময় যে চলে যাচ্ছে। ওদিকে ঢের অংক যে বাকি!

আলী বাবু তৃপ্তি পায়। সপাং সপাং করে দু ঘা বসিয়ে দেয় মিশির বাহুতে। মিশি দাঁতে দাঁত চেঁপে রয়। তার ইচ্ছে করছে উদয় কে আস্তো গিলে ফিলতে। বিখাউজ একটা!!
মিশি মনে মনে বলে-
– আজ ছুটি টা হোক,তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে!
.
উদয় বেশ মজা পায়। মিশির শরীরে পড়া প্রতিটা বেতের বারি যেন উদয়ের মনে এসির ঠান্ডা বাতাস বইয়ে দিচ্ছে। অংক বুঝার নাম করে প্রায় উদয় কে ডেকে নিয়ে ভীষণ অত্যাচার করে মিশি। উদয় মুখ বুজে সয়। কি বলবে! চেয়ারম্যান এর মেয়ে তো সে….!
.
.
.
‘এবার ঢাকা মেডিকেলে বাংলাদেশের নানান জেলা ও বিভাগ থেকে লাখো লাখো শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। তবে বিষ্ময়কর হলেও সবাইকে পেছনে ফেলে সব থেকে বেশি নাম্বার পেয়ে প্রথম জায়গা করে নিয়েছে নাফিসা খাতুন। রংপুরের ছোট একটি মফস্বল শহর থেকে উঠে এসেছে সে। তার বাবা একজন দিনমজুর এবং মা গৃহিণী। নাফিসা দেখিয়ে দিয়েছে যে নারীরা…..’

বাকিটুকু পড়ার আগেই বকর মোল্লা চেঁচিয়ে বলেন-
– থাম তো হাসিব! আর কিছু কি খুঁজে পাস না পেপারে!!!

হাসিব উদাসী ভঙ্গিতে পেপার ভাঁজ করতে করতে বলে-
– কেন স্যার! খবর টা খারাপ নাকি। সত্যিই মেয়েরা কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে যাচ্ছে!

বকর মোল্লা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন-
– শুধু আমার মেয়েটাই পারলো না!

হাসিব চায়ের পট থেকে চা ঢেলে বকর মোল্লার দিকে এগিয়ে দেয়। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বকর মোল্লার মনে পড়ে আজকে তো রেজাল্ট দেওয়ার কথা মিশির। বকর মোল্লা চায়ের কাপ টেবিলের উপর রেখে হাসিব কে আদেশ করেন আলী বাবু কে ফোন লাগাতে। সে জানতে চায় এবার তার ফেলটুশ মেয়ে পাশ করলো কিনা!
.
.
.
– লিমা,উদয় কে দেখেছিস?
লিমা তখন ঝালমুড়ি কিনায় ব্যস্ত। প্রতিদিন স্কুল শেষে ঝালমুড়ি খেতে খেতে বাড়ি না গেলে তার যেন চলেই না!
লিমা ঝালমুড়ি ওয়ালা কে টাকা দিতে দিতে বলে-
– হ্যাঁ। সে তো স্কুল ছুটির সাথে সাথেই বাসার পথ ধরেছে। এতক্ষণে হয়তো বাসায় ও চলে গিয়েছে।

মিশি রাগে গজগজ করতে থাকে। বিরবির করে বলে-
– আজ বেঁচে গেলি তবে প্রতিবার বাঁচবি না। তোকে আমি কাঁচা খাবোই খাবো রে বিখাউজ!!

লিমা চলে যেতে নিতেই মিশি থামায় তাকে।

– বাসায় যাচ্ছিস?
– হু কেন রে?
– আমার সাথে একটু শিপলুদের দোকানে চল না। ঐ যে বেতের মতো দেখতে লম্বা লম্বা কোকোলা গুলো কিনবো আর চাবিয়ে চাবিয়ে খাবো। শান্তি লাগবে। চল না…
তোকে আরো দশ টাকার ঝালমুড়ি খাওয়াবো নি।

লিমা রাজি হয়। দুজনে শিপলুদের দোকানের পথ ধরে।
.
.
.
– কাকু ও কাকু,বাসায় আছো?

মিশির চেঁচামেচি তে মইনুল সাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এই অবেলায় মিশিকে দেখে অবাক হন তিনি। মিশির কাছে এসে বিষ্ময় ভরা চোখে বলেন-
– কিরে! তুই এখানে! তাও এখন। কিছু হয়েছে?
মিশি বাজখাঁই গলায় বলে-
– হয়নি। তবে হবে। তোমার ছেলের হবে। আমি হওয়াবো। বুঝেছো?
মইনুল সাহেব ভ্যাবাচ্যাকা খান। এসব কি হবে হওয়াবোর কথা বলছে মিশি!
তিনি উদগ্রীব কন্ঠে বলে-
– হয়েছে টা কী! খুলে বল তো।
মিশি ফ্যাচফ্যাচ করে বলে-
– তোমার ছেলে, কত সাহস তার! আলী স্যার কে কিনা বলে আমায় লাগাক দু ঘা! সামান্য চার বারই তো ফেইল করেছি!! এমন কি হয়েছে তাতে। তাই বলে সেও আমার পক্ষ ছেড়ে স্যারের পক্ষে চলে যাবে? তুমিই বলো…

মইনুল সাহেব মৃদু হাসেন। মিশির মাথায় হাত রেখে বলেন-
– উদয় কে পড়ে দেখে নিস। আগে বাড়ি যা।এবারেও ফেইল মেরেছিস! তোর বাবা নিশ্চয়ই খবর পেয়ে গেছে এতক্ষণে! তাকে কিভাবে শান্ত করবি সেই চিন্তা কর আগে।

মিশি মাথায় হাত ঠেকায়। চিন্তিত গলায় বলে-
– উফ! বাবার কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম! উদয় কে পেলে ঐ বড় আমগাছ টার সাথে বেধে রাখবে শক্ত করে। আমি এসে ওর হাটু ভাঙবো। তারপর সেই হাটুর হাড্ডি দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে একা একা খাবো। ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে। বেধে রাখবে কিন্তু কাকু….

মিশি দৌড় লাগায়। তাকে যে এখুনি বাড়ি ফিরতে হবে!
মইনুল সাহেব “রাখবো রাখবো” বলে। মিশি দূর থেকেও তা শুনতে পায়।
মইনুল সাহেব মিশির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। বড্ড সহজ সরল মেয়েটা। শুধু একটাই সমস্যা…
অন্য সব বিষয়ে কোনো ভাবে পাশ করতে পারলেও কোনো বার অংকে পাশ করতে পারলো না….

মইনুল সাহেব ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। এরপর আবার বাসার ভেতরে চলে যান…
.
.
.
মিশিকে দেখা মাত্রই বকর মোল্লার শ্বাস বেড়ে যায়। তিনি জোড়ে জোড়ে ইনহেলার টানতে শুরু করেন। আর থেমে থেমে হাসিব কে বলেন-
– ওকে চলে যেতে বল। এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে সরতে বল। কেমন মেয়ে ভেবে দেখেছিস! এবারেও সে কিনা ফেইল!! মোল্লা বাড়িতে এত ফেইল কেউ করেনি আজ পর্যন্ত। আর সে কিনা মেয়ে হয়ে….
চলে যেতে বল হাসিব। ওকে চলে যেতে বল।

মিশি জানে এসব ইনহেলার টানা ফানা কিচ্ছু সত্য না। সব তাকে দেখানো! এর আগেও এমন কত হয়েছে…
কিছু একটা হলেই বাবা ইনহেলার নিয়ে বসে যান..
বিরক্তিকর!

মিশি কাধের ব্যাগ টা হাসিবের হাতে দিয়ে বলে-
– চার বারই না হয় ফেইল করেছি! তাতে কি হয়েছে। হাসিব চাচা, বাবাকে বলে দিও আমার যতবার ইচ্ছে ততবার ফেইল করবো। ফেইল করাও একটা টেলেন্ট,যেটা সবাই পারে না হুহ….

হাসিব চোখ বড় বড় তাকিয়ে থাকে মিশির দিকে। আর বকর মোল্লা মিশির কথা শুনে আরো জোরে জোরে ইনহেলার টানা শুরু করেন।

চলবে….

পানপাতার ঘর??
পর্বঃ০২
লেখা – Mahfuza_Monira

উউউউউ….
উদয় কে চেঁচাতে দেখে মিশি সিগারেটের শলায় আগুন ধরাতে ধরাতে বলে-
– আরেকবার চেঁচালে এই সিগারেট দিয়ে তোর গায়ে ফোসকা বসিয়ে দিবো। মনে রাখিস।
উদয় বিরবির করে বলে-
– এক তো এভাবে বেধে রেখেছিস আবার এখন বলছিস সিগারেট দিয়ে…
তুই চাচ্ছিস টা কি বলতো?

মিশি ক্ষেপা বাঘিনীর মতো উদয়ের শার্টের কলার চেঁপে ধরে।

– শালা,কিচ্ছু জানিস না তাইনা! স্যার করে বলে আমাকে মাইর খাইয়েছিস! আবার আমাকে ফাকি দিয়ে বাড়ি এসেছিস, লুকিয়ে লুকিয়ে চায়ের টং এ বসে অন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখছিস! আর তুই কিছু করিস নি! আমি তোর কলিজা চাই, শুনেছিস? সেই কলিজা চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো আমি। আমার মুখের দুপাশ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়বে। তোর কলিজার রক্ত।

উদয় গা ঝাড়া মেরে উঠে।
– প্লিজ,চুপ হো। ঘিন ঘিন লাগছে শুনতে এসব!
– তো আমাকে মার খাওয়ালি কেন স্যার কে বলে?
– ওকে, বাবা সরি। আমার ভুল হয়েছে। আমায় ক্ষেমা দে!!

মিশি মুখ ভেংচি মেরে উদয়ের শার্টের কলার ছেড়ে দেয়। বহু কষ্টে টং দোকান থেকে উদয় কে ধরে বেধে এনেছিল সে,এনে বড় বট গাছটার সাথে শক্ত করে বেধেছিল সে। ইচ্ছে ছিল সিগারেট দিয়ে ছ্যাকা দিবে অনেকগুলো। কিন্তু হলো না…
মিশির মন যে নরম,ভীষণ নরম। সেই নরম মনের গহীনে উদয় যে আরো নরম অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। সেই উদয় কে কষ্ট কি সে দিতে পারে!?

মিশি উদয় এর শরীর থেকে সমস্ত দড়ি খুলে দেয় এক এক করে। উদয় গায়ের শার্ট ঠিক করে। এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারে না সে! আর কত জ্বালাবে তাকে কে জানে।

উদয় মিশির দিকে আড়চোখে তাকায় একবার। এরপর চলে যেতে নিলেই মিশি বলে-
– শোন।

উদয় থামে। মিশির দিকে না ঘুরেই বলে-
– কি?
মিশি কাচুমাচু করে বলে-
– আচ্ছা, আমার ভেতর কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিস আজ?

উদয় এবার ঝট করে মিশির দিকে ফিরে। আগা গোড়া দেখে নিয়ে বলে-
– হ্যাঁ। আগের থেকে ভালো হচ্ছিস। আগে বেশি ডাইনি ছিলি,আর এখন কম ডাইনি হচ্ছিস। গুড গুড। ভেরিইইইইই গুড।

মিশি বিরক্তিকর সুরে বলে-
– শুধু এই পরিবর্তন টাই দেখলি!? আর কিছু দেখতে পাচ্ছিস না?

উদয় আরেকবার মিশিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলে-
– না তো!

মিশির গলা ধরে আসে। খুব কান্না পায় হুট করেই। ধরা গলায় বলে-
– ও! আচ্ছা বায়।

মিশি এক মুহুর্ত দাঁড়ায় না। প্রায় ছুটতে ছুটতে চলে আসে বটতলা থেকে। মনের আকাশে অভিমানের মেঘ করেছে তার। উদয়ের জন্য একটু সেজে এসেছিল আজ! আর উদয়!? দেখলোই না!
অদ্ভুত ছেলেটা।

না না অদ্ভুত না, খবিশ। মস্ত বড় খবিশ সে।
.
.
.
বকর মোল্লার প্রতি বিকেলে এক কাপ চা না হলে হয় না। আর সেই চা খানা তার স্ত্রী নতুবা বেগমের বানিয়ে দিতে হয়। আজো তার ব্যতিক্রম হয় না। নতুবা বেগম এক কাপ চা নিয়ে এসে বকর মোল্লার সামনে রাখেন। বকর মোল্লা তখন পত্রিকার পাতায় নতুন নতুন খবর উদঘাটনে ব্যস্ত। নতুবা বেগম সবিনয়ে বলেন-
– আপনি কি ব্যস্ত আছেন?
বকর মোল্লা পত্রিকার দিকেই চোখ রেখে বলেন-
– উঁহু। কিছু বলবে মিশির মা?
নতুবা বেগম মাথা নাড়েন।
– বলছিলাম কি! মেয়েকে দিয়ে তো পড়ালেখা হবে না। তাই কেন বৃথা চেষ্টা শুধু শুধু! বিদেশ ফেরত এক পাত্র আছে বুঝলেন! বেশ ভালো পাত্র। টাকা পয়সা আল্লাহর রহমতে কম না। মিশিকে নাকি দেখেছে সে। তার ভীষণ মনে ধরেছে আমার মেয়েকে। আপনি যদি রাজি থাকেন তবে….

বকর মোল্লা পত্রিকা টা রাখেন। তিনি নতুবার দিকে তাকান। নতুবার চোখ চকচক করছে। প্রায়শই অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লে নতুবার চোখ চকচক করে উঠে।

বকর মোল্লা নিজের মনেই ভাবেন।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করে এনেছিলেন এই ছোট মেয়েটাকে যে আজ এক জননীর মা! দীর্ঘ ১৫ বছর পর বড় সাধনা করে মিশি হয়েছিল তাদের। কত লোকে কত কথা বলেছে। সবাই তো ভেবেই নিয়েছিল নতুবা বন্ধ্যা। কোনোদিন সন্তান জন্মদান করতে পারবে না সে। কিন্তু বকর মোল্লা তার সিদ্ধান্তে অটুট ছিলেন। তিনি ভেবেই নিয়েছিলেন যদি সংসার করেন এই মেয়ের সাথেই করবেন। নইলে না…

বকর মোল্লা নতুবার হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলেন-
– যদিও মেয়ে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু তুমি যদি রাজী থাকো,তবে ডাকো একবার ছেলেকে। আমি দেখি সে কেমন।

নতুবার চোখ খুশিতে ছলছল করে উঠে। এই মানুষ টা এত ভালো কেন!?

.
.
.
মিশির মনের আকাশে যে অভিমান জমেছে তা কিছুতেই সরছে না যেন। তাই মিশি উদয় কে ডেকে পাঠিয়েছে। আজ শাস্তি দিবে সে উদয় কে। কঠিন শাস্তি। তাতে যদি তার মন একটু শান্ত হয়…
.
.
উঠোনে বসে আছে মিশি। উদয় এখনো আসছে না। বাদর টা কোথায় সময় খোয়াচ্ছে! কে জানে।
.
প্রায় ১৫ মিনিট পর উদয় হাজির হয়। মিশি গম্ভীর গলায় বলে-
– ৫ টায় আসতে বলেছিলাম। এখন ৫ টা ১৫ বাজে।
উদয় বই খাতা গুলো টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলে-
– সরি রে। চুমকি বললো ওর নাকি অংক সমস্যা। দেখিয়ে দিয়ে এলাম।

চুমকি মিশিদেরই ক্লাসমেট।
মিশির গা জ্বলে।
সে আরো গম্ভীর হয়ে বলে-
– ক্লাসের সবার অংক বোঝানোর দায়িত্ব কি তুই ই নিয়েছিস!?

উদয় ভ্রু নাচায়।
– কেন রে!? এ কথা কেন? জ্বলে তোর?

মিশি হাই তুলতে তুলতে বলে-
– মোটেও না। অংক করা আমায়।

উদয় অবাক হয়। মিশি কোনোদিন নিজ থেকে অংক করানোর কথা বলে না। আর আজ…
উদয় খুশি হয়। মেয়েটার বুঝি জ্ঞানবুদ্ধি হলো।
.
.
প্রায় ৪০ মিনিট অংক করানোর পর উদয় মিশির দিকে তাকিয়ে খুশি খুশি ভাবে বলে-
– খুব তো মনোযোগ দিয়ে দেখলি সব। এবার বল বুঝেছিস??

মিশি আবারো হাই তুলে।

– না রে। কিচ্ছু বুঝিনি। আবার বুঝা তো।

উদয়ের খুশি মুখে ঠাডা পড়ে যেন। রাগী গলায় বলে-
– তোর অংক বোঝা লাগবে না। আমি গেলাম। নিজে তো পড়বে না ঠিকঠাক আমাকেও পড়তে দেবে না! কি চাও,অংক বুঝতেছি। এই বাহানায় আমার পড়া টাকে লাটে উঠাতে পারবো না।

উদয় উঠলে মিশিও উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে এসে উদয়ের পিঠে সটাশ করে দুটো কিল বসায়।
উদয় ‘ও মাগো’ বলে নিচু হয়ে বসে পড়ে।
মিশি চোখ পাকিয়ে বলে-
– এবার বল কি যেন বলতেছিলি!

উদয় পিঠের উপর হাত বুলাতে বুলাতে বলে-
– বলছিলাম যে পড়াবো তো। যতক্ষণ চাস পড়াবো। সারা রাত ধরে পড়াবো। সকাল হলেও থামবো না, তোকে অংক বুঝিয়ে যাবো। আজকে তোকে পড়াতে পড়াতে শহীদ হয়ে যাবো। নে, বস বস।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here