যখন_তুমি_এলে। #পর্ব- ২৩।

0
652

#যখন_তুমি_এলে।
#পর্ব- ২৩।
#লেখা- জাহান লিমু।

ফোন অন করতেই, কল,মেসেজের নোটিফিকেশনে আরাদের ফোন হ্যাং হওয়ার যোগাড়!
এতো দরদী কোথা থেকে আসলো, সেটাই আরাদ ভেবে পাচ্ছে না।
কল লিস্ট চেক করার আগে, উপরে একটা মেসেজ দেখে আরাদ থমকে গেলো। মেসেজ লিস্টে গিয়ে,আরো বেশ কয়েকটা মেসেজ দেখতে পেলো। কিন্তু সবকিছু আরাদের মাথার একপাশ দিয়ে চলে গেলো।
কললিস্টে গিয়ে দেখলো,রোহানীর অগনিত কল।
ডাটা অন করে মেসেঞ্জারে ঢুকলো সে। সেখানে রোহানীর বেশ কয়েকটা মেসেজ। এবার আর আরাদের বুঝতে বাকী রইলো না যে,কোন বড়সড় ঝামেলা হয়েছে।
কিন্তু এখন আরাদ কি করবে?
রোহানীর বাসায় যাবে?
যেই ভাবা, সেই কাজ।
কিন্তু তখনি আরাদের ফোন বেজে উঠলো। নাম্বারটা দেখে, সাথে সাথেই রিসিভ করলো সে। অপর পাশের ব্যক্তি কি বললো কে জানে। কিন্তু আরাদ শুধু বললো, আপনি গ্রিন ক্যাফে তে বসুন। আমি দশ মিনিটে আসছি। গাড়ি বের করে আরাদ দ্রুত রওনা দিলো। ওর অসুস্থতায়, এদিকে মনে হচ্ছে বড় কোন গলদ হয়ে গেছে।
রাস্তায় হালকা জ্যাম থাকায়, আরাদের পৌঁছাতে প্রায় বিশ মিনিট লাগলো। তাও বাইক হওয়ার কারনে, এতো কম সময়ে আসতে পেরেছে। বড় গাড়ি গুলো এখনো আঁটকে আছে।
আরাদ ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে কোনরকমে চলে এসেছে। যদিও এখনি গাড়ি চালানোটা ঝুঁকিপূর্ণ বটে। তবে সে ধীরে সুস্থই চালালো। আর ক্যাফেটেরিয়া টা কাছেই।

সেখানে পৌঁছে দেখে,তানিম বিষন্ন মুখ করে বসে আছে।
আরাদকে দেখে সে ম্লান হাসি দিলো। তবে সেটা যে বেশ জোর করে,তা বুঝাই যাচ্ছে। আরাদ গিয়ে মুখোমুখি বসলো। তানিম আগেই কফির অর্ডার দিয়ে রেখেছিলো। তাই আরাদ যাওয়ার সাথে সাথেই কফি হাজির।
আরাদ কফি হাতে নিয়ে এক চুমুক দিলো। কিন্তু তানিম কফির মগের চারদিকে হাত ঘুরাতে লাগলো। সেটা দেখে আরাদ বললে, ” এতো সহজেই ভেঙে পড়লে,প্রেম করার সাহস কোথা থেকে পেয়েছিলেন?”
আরাদের কথায় তানিম নড়েচড়ে বসলো। তারপর বললো,
” তুমি এটাকে সহজ মনে করছো? তোমার বন্ধু আমাকে রিজেক্ট করেছে। তাও অনেকদিন রিলেশানের পর। শুধু রিজেক্ট নয়,একেবারে বিয়ে করে ফেলতে বলেছে। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগই দেয় নি। আর তুমি সেটাকে সহজ বিষয় বলছো?”
আনবিলিভেবল!
আরাদ কেমন করে যেন হাসলো। তারপর বললো,
” আপনার মনে হয় না,এর পিছনে বড় কোন রহস্য আছে?”
তানিম কপাল কুঁচকে তাকালো। এভাবে অবশ্য ভেবে দেখেনি।
আরাদ বলতে লাগলো, আমার বন্ধুকে আমি চিনি। চিটিং করার মেয়ে সে নয়। কিন্তু আপনার মনে হলো না, সে বিশেষ কোন সমস্যায় পড়ে হয়তো, এতোবড় সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আপনাকে?”
তানিম আরাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই,রোহানীর বাবা যে ওদের বাসায় এসেছিলো, সেটা বললো। সেটা শুনে আরাদ বললো,
” বাবা এসেছিলো, মা তো আসেনি?”
তানিম ভ্রু কুঁচকে বললো, “মা আসাটা কি বেশি জরুরি?”
আরাদ কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বললো, গারো উপজাতির একটা বৈশিষ্ট্য, আমাদের সাধারণদের মধ্যেও আছে। আর সেটা হলো, মাতৃতান্ত্রিক পরিবার। আর রোহানীর পরিবারকে সেরকম বলতে পারেন। ওর বাবা সেখানে কিছুই না। ওর মায়ের কথাতেই সব হয়। ওর বাবা ওর মায়ের কথার বাইরে টু শব্দটাও করতে পারে না। আমিতো ওকে ছোটবেলা থেকে চিনি,তাই ওর পরিবার সম্পর্কেও ভালো জানি। আমারতো মনে হচ্ছে, ওর মা কোনকিছু টের পেয়ে ফেলেছে। আর তিনি কোনদিনই, এরকম কোন ছেলেকে এক্সেপ্ট করবেন না। যে মহিলা সারাক্ষণ নিজের ক্লাস নিয়ে চলে,সে কখনোই তার ক্লাস থেকে নিচু কোন পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিবে না। এটা অবশ্য আমি আগেই জানতাম। রোহানীকে বুঝিয়েছিও সম্পর্কে জড়ানোর আগে। কিন্তু ও যে কেন তবুও আমার কথা পাত্তা দিলো না, কে জানে।
কোন সম্পর্ক শুরু করার আগে থেকেই যদি বুঝা যায় যে, সে সম্পর্কের কোন ভবিষ্যৎ নেই,তবে বোধহয় না আগানোই ভালো। হ্যাঁ,মানুষের মন পরিবর্তনশীল। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের মন একটা শক্ত খোলসে ঢেকে থাকে। তাই কোন কিছু তাদের মনের দরজায় কড়াঘাত করতে পারে না। বাহির থেকে ধাক্কা খেয়ে, ফিরে আসে। আর রিতি চৌধুরী তেমনই একজন মহিলা।
আরাদের কথা শুনে, তানিম স্তব্দ হয়ে বসে রইলো। এমন কিছু সে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি। আর পারবে কি করে?
রোহানীকে যখনি ওর মায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতো, সে কৌশলে কথা এড়িয়ে যেতো। মাকে নিয়ে বিশেষ কোন অনুভূতি ছিলো না ওর মাঝে। বাবাকে নিয়ে তাও অল্প ছিলো। তবে তানিমের ঠিকই মনে হতো,ওদের পরিবারে কোন ঘাপলা আছে। স্বাভাবিক নয়,ওদের পরিবারটা। এখন বুঝতে পারলো, ঘাপলাটা তাহলে রোহানীর মা।
কিন্তু তিনি এমন অদ্ভুত কেন?
সেটার কারন কেউ জানেনা,রোহানীর বাবা ব্যতীত। কিন্তু তিনিও কেন যেন কাউকে কিছু বলেন না।
তানিমের এখান থেকে আরাদ সরাসরি রোহানীর বাসায় গেলো। বরাবরের মতই দরজাটা খুললো,সোহানী।
আরাদ ভেবে পাই না,এই মেয়েটা ওর আসার কোন সংকেত পেয়ে যায় কিনা। আরাদকে দেখে অবশ্য সে বেশ খুশি হলো বলে মনে হলো। আরাদ আঁড়চোখে এদিক-ওদিক দেখে নিলো। উদ্দেশ্য রিতি চৌধুরী বাসায় আছে কিনা,সেটা দেখা। উনি অবশ্য বেশিরভাগ বাসায় থাকেন না। তবে দুর্ভাগ্যজনক বা সৌভাগ্যজনকভাবে আজকে তিনি বাসায়। এবং ড্রয়িংরুমেই বসে টিভি দেখছেন। আর কি যেন খাচ্ছেন। ভীষণ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। এই বয়সেও নিজের ফিগার মেইনটেইন করে চলেছেন। আরাদের মাঝে মাঝে, রোহানীকেই রিতি চৌধুরীর মা মনে হতো। আসলে স্থুলতা, মানুষের বয়সকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য রোহানীও এখন যথেষ্ট স্লিম হয়েছে। যে কারনে আরাদ এখন আর বাচ্চাহাতি নামটা ডাকতে পারে না।
আরাদ কি যেন ভেবে,সরাসরি রিতি চৌধুরীর সামনেই গেলো, রোহানীর কাছে না গিয়ে। আরাদের সাথে রিতি চৌধুরীর বড়জোর কয়েকবার দেখা হয়েছে। কারন তিনি তার সন্তানদের জীবন নিয়ে কোন মাথা ঘামান না। তিনি কেবল নিজের বিলাসিতা,স্ট্যাটাস এসব বুঝেন। আরাদের মাঝে মাঝে এই মহিলাকে মানসিকভাবে অসুস্থ মনে হয়।
আরাদ সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে কুশলাদি জানতে চাইলো। রিতি চৌধুরী বোধহয় আরাদকে ঠিকভাবে চিনতে পারলেন না। অনেকদিন আগে দেখেছিলেন। আরাদ খুব বেশিও আসেনা রোহানীদের বাসায়। আরাদ নিজের পরিচয় দিলো।
তাতে অবশ্য রিতি চৌধুরী চিনলো কিনা কে জানে। তবে উনি আরাদকে বসতে বললেন।
আরাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” ঠিক সময়েই এসেছো তুমি। বন্ধুর বিয়েতে, বন্ধুই তো সবথেকে আগে উপস্থিত থাকবে। আরাদ এটা শুনে খুব বেশি শক খেলো বলে মনে হলো না। সে অনুমান করছিলো,এমন কিছুই হতে পারে। তাই সেও স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
” হ্যাঁ,নিশ্চয়ই।”
দূর থেকে সেটা শুনে দু’বোন আকাশ থেকে পড়লো। আরাদ কি বলছে এসব? আর সে এখানে কেনইবা এসেছে? রোহানীর মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। এতোদিন কোন যোগাযোগ ছিলো না। আর আজকে কোন ফোন না দিয়ে একেবারে সরাসরি বাসায়!
সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে রোহানীর। এইমুহুর্তে আরাদের সাথে কথা বলাটা জরুরী। কিন্তু কিভাবে?

ঐদিকে শুনতে পেলো, আরাদ ওর মাকে কিসব উল্টাপাল্টা বলে চলেছে। রিতি চৌধুরী এরমাঝেই এলইডিতে ঐ ছেলের বাড়িগাড়ির ছবি দেখাতে শুরু করলো আরাদকে। আজকাল তো টিভিও ওয়াইফাই কানেক্টেড।আরাদও সেসব দেখে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করতে লাগলো। ছেলের নিজের কানাডায় বিজনেস আছে। সেখানেও একটা নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে। এছাড়া ঢাকা দুই-তিনটা, বাসা বিভিন্ন জায়গায়।
গাড়িই আছে তিন-চারটা। তাও সব হাই ব্রেন্ডের। মার্সিডিজ থেকে শুরু করে ফেরারি। আরাদ বুঝতে পারলো,রিতি চৌধুরীর এই ছেলেকে পছন্দ করার কারন।
ছেলেও দেখতে ফর্সা,সুঠাম দেহ। এককথায় অপছন্দ করার কোন অপশনই নেই।
সবকিছু দেখে আরাদ বললো,
” ছেলে তো মাশাআল্লাহ, লাখে একজন।”
এটা শুনে রিতি চৌধুরী বোধহয় বেশ গর্বিত বোধ করলেন। সেটা তার চোখমুখই বলে দিচ্ছে।
আরাদ এবার সর্বশেষ প্রশ্নটা করলো। তা বিয়ের ডেট কবে ফিক্সড করেছেন আন্টি?
” সামনের মাসের তিন তারিখ।”
ওপাশ থেকে রোহানী বিয়ের ডেট শুনে স্তব্দ হয়ে গেলো। কারন সে নিজেও জানেনা, বিয়ের তারিখ। ভেবেছিলো আরাদ হয়তো ওর মাকে বুঝাবে। কিন্তু এই ছেলে তো আরো মাকে উৎসাহ দিয়ে চলেছে। এইমুহুর্তে আরাদকেই রোহানীর শত্রু মনে হচ্ছে। যদিও তারও বিশেষ কিছু করার ছিলো না। তবে শেষ ভরসা ছিলো আরাদ।
আর এখন কোন ভরসায় নেই,ভাগ্যে যা আছে তাই মেনে নিতে হবে। রোহানী দরজা থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। আরাদ ঠিকই আঁড়চোখে রোহানীকে দেখছিলো। কিন্তু এইমুহুর্তে কথা বলা যাবে না। সে জানে, রোহানী এখন রাগে ফুঁসছে।
তবে শেষ মুহুর্তে আরাদ কি করবে,সেটা সে নিজেও ভেবে পাচ্ছে না। হাতে মাত্র একসপ্তাহ সময় আছে।
পরিস্থিতি কি তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো?

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here