মোনালিসা পর্ব ১০

0
2116

মোনালিসা
মৌমিতা_দত্ত
পর্ব ১০

ঘড়ির কাঁটায় রাত্রি দশটা। সমস্ত কাজ সেরে নিয়ে নিজের ঘরে এসে অর্ধেকটা শরীর বিছানায় এলিয়ে, একটা বালিশ বুকের কাছে টেনে নিয়ে তার উপর কাগজ আর পেনটা রেখে লিখতে শুরু করে লিসা। আজকের অদ্ভূত ঘটনার বিবরণ তাকে চিঠিতে বন্দি করতেই হবে।
প্রথম চিঠি আজ আর জোজোকে নয় নিজেকে লিখতেই শুরু করে সে। –

আমি লিসা,
আমার এই বাইশ বর্ষীয় জীবনে কতো কিছুর সাক্ষী থেকেছি। মানুষের বিচিত্র রূপ প্রত‍্যক্ষ করেছি প্রতিনিয়ত। মুখ আর মুখোশের মুখোমুখি হয়ে হাঁতরে বেড়িয়েছি আসল রূপটা দেখার জন‍্য । কিন্তু ,পারিনি! আর তাই প্রত‍্যেকটা ঘটনা শেষে এ যাবত নিজের কষ্ট থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে আমি সবকিছু চাওয়া পাওয়ার অধিকারের লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।
কিন্তু, আজকের ঘটনায় আমি স্তম্ভিত। কারণ, আমরা যতই চাওয়া পাওয়ার ঊর্ধ্বে নিজেদের রাখার চেষ্টা করিনা কেন, আসলে একটা সূক্ষ প্রাপ্তি বোধের আশা বোধহয় আমাদের মনে থেকেই যায়।
আজ অবধি চেনা পরিচিত বা অচেনা অপরিচিত কারোর জন‍্যই কোনো কৌতূহল আমার মনে স্থান পায়নি।
কিন্তু, আজ প্রথম আমার প্রতিবেশীর জিনিসের প্রতি আমার প্রবল কৌতূহল জন্ম নিলো। জানিনা, এ শুধু নিছক কৌতূহল নাকি দুর্বলতা!
হয়তো কোনো প্রতিবেশীই আজ অবধি অপর প্রতিবেশীর প্রতি কৌতূহল দমন করতে পারেনা। তাই হয়তো অন‍্যের হাঁড়ির খবর আর একজনই সবথেকে বেশি দিতে পারে। কিন্তু, এ অভ‍্যাস বা লক্ষণ যে সুশিক্ষার পরিচয় বহন করেনা।
আমার স্বামী আর আমার বর্তমান সম্পর্ক প্রতিবেশীর। তাই প্রতিবেশীর সবথেকে বেশিক্ষণ সময় কাটানো ঘরটা তার অবর্তমানে পরিষ্কারের অছিলায় আজ যখন আমি ঢুকলাম – তখন মনে মনে বেশ বুঝতে পারছিলাম, আসলে আমি তার ঘর পরিষ্কারের বাহানায় তার সঠিক মনের সন্ধান করছিলাম। আর এটা প্রথম বুঝলাম তার লেখা প্রথম চিঠি আবিষ্কারের পর।
অহেতুক কৌতূহলে গোগ্রাসে পড়লাম তার চিঠিটা।
যা পড়ার পর থেকে খালি মনে হচ্ছে। ঠিক যেন,তার মনের কোনো এক সুপ্ত সাগর বঞ্চনার ভাঁজ পড়তে পড়তেই একটি পর্বত রূপে গড়ে উঠেছে ,যাকে ভেঙে সুপ্ত জল আবিষ্কার করা ভীষণ কঠিন ব‍্যাপার।
সত‍্যি বলতে এ কাজ বা তার মনে স্থান পাওয়া আমার লক্ষ‍্য নয়।
শুধু আজ অবধি প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হয়ে আসা আমার মন যেন চাইছে আর একজন বঞ্চনার শিকারের মনের কাতরতা বুঝতে। কিন্তু, কেন! তার উত্তর আমি নিজেও জানিনা।
একজন প্রতিবেশী হিসাবেও প্রতিবেশীর পাশে আমি থাকতেই পারি। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম – আরও যদি কিছু জানতে পারি তাহলেও আমার প্রাথমিক কাজ হবে এই এক বছরে প্রতিবেশী হয়ে প্রতিবেশীর খোঁজ খবর রাখা।
আমি ঠিক কী ভুল জানিনা! তবে হ‍্যাঁ অন‍্য কোন প্রতিবেশীর মত খারাপ নই ,সেটুকু মনে রাখার মত কাজই করবো।

————————————-

চিঠিটা লেখা শেষ করে ব‍্যাগে ভরার সময় বাইরের ঘরে কাশির আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে লিসা।
ঘড়ির কাঁটায় সবে সাড়ে দশটা বাজে । এতো তাড়াতাড়ি রাজীবেরও ফেরার কথা নয় । তাহলে গেটের লক খুলে বাড়ির ভেতর অবধি কে আসবে ?
এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই বাইরের ঘরে রাখামাত্রই সে দেখে চোখমুখ লাল করে কাশতে কাশতেই ফ্রিজের দরজা খুলে একটা বোতল বের করছে রাজীব।

এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে রাজীব কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হাত থেকে এক প্রকার ছোঁ মেরে বোতলটা নিয়ে নেয় লিসা। এবং পরক্ষণেই লজ্জিত কন্ঠে বলে ওঠে, “মাফ করবেন, জেঠিমা বলে ঠান্ডা লেগে যদি কাশি হয় সেই সময় ঠান্ডা জল খেতে নেই। তাতে কষ্ট দ্বিগুণ হয়। তাই বোতলটা নিয়ে নিলাম।” এইবলে রান্নাঘরের ভেতর থেকে একটা সাধারণ জলের বোতল এনে রাজীবের দিকে এগিয়ে দেয় সে এবং বলে ওঠে, “কারোর মুখের থেকে জল কেড়ে নিতে নেই। আমার আচরণের জন‍্য আমি লজ্জিত। এটা ফ্রিজের জল নয়, এটা খেতে পারেন।”

অবাক দৃষ্টিতে বাচ্চা মেয়েটির মধ‍্যে নিজের মাতৃ রূপের দর্শন পেয়ে অবাক হয়ে যায় রাজীব। শুধু হাত বাড়িয়ে জলের বোতলটা নিয়ে বাধ‍্য ছেলের মত কয়েক ঢোক জল পান করার পর বোতলটা যথাস্থানে রেখে নিজের ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় আচমকাই লিসা বলে ওঠে, “আপনার খাবারটা আপনার ঘরে রাখা আছে। পারলে খেয়ে নেবেন। ”
অপ্রত্যাশিত কথা শুনে কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে, শুধু মাথা নেড়ে নিজের ঘরে হাঁটা লাগায় রাজীব।

জীবনে এই প্রথম তার জন্য কেউ খাবার গুছিয়ে রেখে দিয়ে গেছে। ভাবলেই কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। যে অনুভূতির ব‍্যাখ‍্যা বা বর্ণনা সম্ভব নয়।
সযত্নে গুছিয়ে রাখা খাবার গুলো খাওয়ার পর মনের মধ‍্যে এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি নিয়ে শুতে যাওয়ার আগের মুহূর্তেই হঠাৎ তার মনে হয় মেয়েটি খেয়েছে কিনা একবারও তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি তার! এতোটা অবিবেচক সে হল কী করে!
ভাবা মাত্রই মনে মনে লজ্জিত হয়ে লিসার ঘরে পা বাড়ানোর আগের মুহূর্তেই তার ফোনটা বেজে ওঠে।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠেছে এটা ফ্রিজের জল নয়, এটা খেতে পারেন।”

অবাক দৃষ্টিতে বাচ্চা মেয়েটির মধ‍্যে নিজের মাতৃ রূপের দর্শন পেয়ে অবাক হয়ে যায় রাজীব। শুধু হাত বাড়িয়ে জলের বোতলটা নিয়ে বাধ‍্য ছেলের মত কয়েক ঢোক জল পান করার পর বোতলটা যথাস্থানে রেখে নিজের ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় আচমকাই লিসা বলে ওঠে, “আপনার খাবারটা আপনার ঘরে রাখা আছে। পারলে খেয়ে নেবেন। ”
অপ্রত্যাশিত কথা শুনে কি বলবে বুঝে উঠতে না পেরে, শুধু মাথা নেড়ে নিজের ঘরে হাঁটা লাগায় রাজীব।

জীবনে এই প্রথম তার জন্য কেউ খাবার গুছিয়ে রেখে দিয়ে গেছে। ভাবলেই কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে তার। যে অনুভূতির ব‍্যাখ‍্যা বা বর্ণনা সম্ভব নয়।
সযত্নে গুছিয়ে রাখা খাবার গুলো খাওয়ার পর মনের মধ‍্যে এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি নিয়ে শুতে যাওয়ার আগের মুহূর্তেই হঠাৎ তার মনে হয় মেয়েটি খেয়েছে কিনা একবারও তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি তার! এতোটা অবিবেচক সে হল কী করে!
ভাবা মাত্রই মনে মনে লজ্জিত হয়ে লিসার ঘরে পা বাড়ানোর আগের মুহূর্তেই তার ফোনটা বেজে ওঠে।
ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে নাম ভেসে উঠেছে দিদি। ফোনটা ধরার পর বেশ কিছুক্ষণ রোহিনীর সাথে স্বাভাবিক কথপোকথনের পর হঠাৎই রোহিনী বলে ওঠে, “হ‍্যাঁরে লিসার খবর কী?”
“কে লিসা?”
এতোটা বোকা বোকা উত্তর ভাইয়ের কাছ থেকে আশা করেনি রোহিনী। তাই বেশ রাগত স্বরেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সে বলে ওঠে, “আজও কী নেশা করেছিস নাকি ? কে লিসা জানিস না। তোর বউ ‘মোনালিসা’। ওর ই তো বাড়ির নাম লিসা।” আসলে রোহিনীর বুঝতে অসুবিধা হয়না যে, তার ভাই আর লিসার সম্পর্ক এখনো তৈরীই হয়নি। তবুও সে কথা রাজীবকে বুঝতে না দিয়েই সে বলে ওঠে, “দে লিসাকে ফোনটা দে । ওর সাথে কথা আছে।”

“তুই ওর ফোনে ফোন করনা। ও পাশের ঘরে আছে।”

পাশের ঘরে আছে শুনে অজানা শঙ্কায় বুকটা ছ‍্যাঁত করে ওঠে রোহিনীর। সে বেশ বুঝতে পারে তার ভাইয়ের শুধু জীবনে নয়, ঘরেও স্থান হয়নি লিসার। এক প্রকার অপরাধবোধে ভেতরটা তছনছ হয়ে গেলেও, যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই সে বলে ওঠে, “আমি ওকে ফোনে পাচ্ছি না। ওর ফোন বন্ধ। তুই ওকে ফোনটা দে। ”

“ঠিক আছে তুই খানিক পরে কর। আমি ওকে বলে দিচ্ছি।”
এইবলে দিদির ফোনটা রেখে লিসার ঘরের দিকে পা বাড়ায় সে।
আধভেজানো দরজাটা খোলা উচিত কী উচিত নয় এই দ্বন্দ্বের মাঝে কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়ে অবশেষে দরজাটা হালকা খোলামাত্রই সে দেখে – দরজার দিকে পিঠ করে বসে কী একটা বাঁধানো ছবি হাতে নিয়ে একমনে কথা বলে চলেছে লিসা।
শেষ যে কটা কথা তার কানে এলো তা হল – “আমাকে ভুলে যেওনা। সব কাজ শেষে আমি ফিরবো, ঠিক ফিরবো।”

কথাটা শোনার পর নিজের কানকে কেমন যেন অবিশ্বাস হতে থাকে রাজীবের। বুকের ভেতরটা কেমন ছ‍্যাঁত করে ওঠে। তবুও সংযত থেকে গলার আওয়াজ করে সে ।

আর তাকে ঘরের সামনে দেখে ভুত দেখার মত অবস্থা হয় লিসার। কোনরকমে হাতের ফটোটা বালিশের তলায় লুকিয়ে রক্তশূন‍্য বিবর্ণ মুখে সে বলে ওঠে , “কিছু বলবেন?”

“দিদি ফোন করেছিল। তোমার সাথে কথা বলতে চায়। ফোনটা অন করে রাখো।”

“আমার ফোনে চার্জ নেই।” অপরাধীর মত কথাগুলো বলে লিসা।

আর এদিকে রাজীব তখন মনে মনে ভাবছে, “সারাদিন এতোই বাইরের মানুষের সাথে কথা হয় যে ফোনে চার্জটুকু অবধি থাকেনা।” মনের ভাবনা মুখে প্রকাশ না করেই সে বলে ওঠে, “চার্জ দিয়ে রাখো। কাল কথা বলো।” এইবলে কোনো প্রত‍্যুত্তরের আশা না করেই নিজের ঘরে গিয়ে দড়াম করে দ‍রজা বন্ধ করে দেয় সে।

সে রাতে দুজনেই জেগে থাকে দুটি আলাদা বিছানায়।

রাজীব নিজের বিছানায় শুয়ে একমনে তখন মেলাতে ব‍্যস্ত লিসার আসল রূপ কোনটা ! সেটা।
হঠাৎ করে গার্জেন হয়ে ওঠা রূপটা নাকি পরম যত্নে কোনো পশুকে আপন করে নেওয়া নাকি চরম কোনো সত‍্যি আড়াল করে ভালো মানুষ সেজে থাকার রূপটা!
সে রাতে তার ভাবনাকে উস্কে দিতে সঙ্গী হয় সিগারেট।
লিসার মুখটা মনে পড়লেই ভীষণ রাগ হয় তার। সে মনে মনে ভাবতে থাকে ,”সব মেয়েরাই আসলে এক। কী লিসা, কী উর্বশী! শুধু অভিনয়ের দক্ষতাটা একটু আলাদা বাকি সব এক।

আর অপরদিকে, নিজের বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে পড়া চাঁদের আলোর দিকে তাকিয়ে লিসা মনে মনে ভেবে চলেছে, রাজীব মানুষটা ভীষণ একা। কিন্তু, আজ ভাগ‍্যিস ফটোটা সে দেখে ফেলেনি। তাহলে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ পেলে তার আর লজ্জার শেষ থাকতো না। কোনো আঘাত পাওয়া মানুষকে নিজের আঘাত কখনো দেখাতে নেই। তাতে তার কষ্ট বাড়ে। একথা খুব ভালো করেই জানে লিসা। তাইতো তার বাবার জন‍্য ভালোবাসা, কষ্ট, সবকিছু সে আজ অবধি সবার থেকে আড়াল করে এসেছে । এবার সন্তর্পণে ফটোটা বের করে বাবার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,’আজ তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন আমার ভীষণ।’

একই বাড়িতে দুই বিছানায় জেগে থাকা দুটি মনের ভাবনার দর্শক শুধু ভগবান। যিনি অলক্ষ‍্যে থেকে হাসছিলেন। দুটি ভিন্ন মনের ভিন্ন চিন্তার গন্তব্য এক ভেবে।

এদিকে সারারাত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করার পর ভোরবেলা সবে তন্দ্রা এসেছে এমন সময় পাশের ঘরের দরজা খোলার আওয়াজে প্রবল রাগ সত্ত্বেও কৌতূহলবশত নিজের মনের দ্বারা চালিত হয়ে নিজের ঘরের দরজা ফাঁক করে বাইরে বেরিয়ে রাজীব দেখে, “এলোমেলো হয়ে থাকা শাড়ি আর চোখে মুখের আশেপাশে থাকা কিছু অবাধ‍্য চুল হাতে করে সরিয়ে ঘুম চোখে হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে চলেছে লিসা। সদ‍্য ফোটা ফুলের মত নিষ্পাপ লিসার মুখের দিকে এই মুহূর্তে কোনও জল্লাদও যদি তাকায় , তাহলে সেও হয়তো নিষ্ঠুরতা ভুলে যাবে। সারারাতের যত রাগ সব যেন এক মুহূর্তে গলে জল হয়ে যায় ।”

নিজের মনের চঞ্চলতা আড়াল করতেই ,সকালবেলা উঠেই কোনরকমে রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে রাজীব।
এতো সকালে অফিস খুলবে না সে বিলক্ষণ জানে। তাই পাড়ার মোড়ের চা – এর দোকানে গিয়ে বসে সে।
এবং চা – এ চুমুক দিতে দিতেই মনে মনে সে স্থির করে সত‍্য উদঘাটন সে করবেই। ফটোটা কার ছিল ঠিক খুঁজে বের করবে সে। তাকে আর বোকা বানাতে কেউ পারবে না।

এদিকে রাজীবের বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই স্নান সেরে তাড়াতাড়ি স্টাডিরুমের দিকে পা বাড়ায় লিসা। জলখাবার খাওয়ার কথাও তখন তার মাথায় নেই।
এদিক সেদিক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে “গৃহদাহ” বইয়ের মাঝামাঝি রাখা একটা কাগজ সে পায় । কাগজটা নিয়ে সে পড়তে শুরু করে । তাতে লেখা –

– রক্তের রঙ কী জানো ?
– লাল।
– রক্তের লক্ষ‍্য কী জানো ?
– শিরা উপশিরার অলিগলি পার করে হৃদপিন্ডে পৌঁছানো।
– রক্তপাত কখন ঘটে জানো?
– বাইরে থেকে শরীর যখন আঘাত প্রাপ্ত হয় তখন রক্তপাত ঘটে।
– সত‍্যি কী তাই! আরও একসময় রক্তক্ষরণ হয় জানো!
– কখন?
– যখন ভালোবাসার ছলনার নিষ্ঠুর প্রহারে ছিন্নভিন্ন হয়ে মন হাহাকার করে, হৃদপিণ্ডে প্রবল কম্পনের শুরু হয়, দুচোখের কোল ছাপিয়ে বন‍্যা নামে, শিরা উপশিরার গতিপথ হারিয়ে রক্ত হৃদপিণ্ডের বদ্ধ দ্বারে এসে থমকে দাঁড়ায় আর দুর্বল হৃদি তখন দ্বার উন্মুক্ত করতেও অক্ষম হয় ।
সেই ভয়াবহ ক্ষণে প্রবল রক্তপাত হয়, তবে সবটুকুই চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাই সেই রক্তপাতের আঘাতের দৃশ‍্য অধরাই থেকে যায়।
আর যুগে যুগে ব‍্যর্থ প্রেমিক/প্রেমিকা রাধাকৃষ্ণের মাঝেই নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে নেয়। হারিয়ে যায় স্বপ্ন, হারিয়ে যায় পথ।
আর মনের রক্ত স্নানে স্নাত হয়ে মৃত‍্যু হয় আর একটি মনের, একটি প্রেমের, আর একটি ভালোবাসার ।
দিনের শেষে একলা চলোদের ভিড়ে চলে বেড়ায় একটি জ‍্যান্ত লাশ।
বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি আর মনে ভালোবাসার ঘাটতির মাঝে দমবন্ধ অবস্থায় বেঁচে থাকে একটি জ‍্যান্ত লাশ।

– রাজীব

কাগজে লেখা কথাগুলো পড়ে নিজের মনের রক্ত যেন কেমন জমাট বাঁধতে শুরু করে লিসার। সে বেশ বুঝতে পারে চরম কোনো দুর্ঘটনার শিকার রাজীব।
রাজীবের জীবনের চরম দুর্দশার কারণটা যে আসলে কী ,সেটা জানার জন‍্য তার মন উৎসুক হয়ে ওঠে।

(চলবে……)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here