মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং পর্ব ২

0
1455

#মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট২

(অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ)

-আচ্ছা,শান্ত ভাইয়া!তোর যদি কারও সাথে তীব্র শত্রুতা থাকে তাহলে জানিস কি করবি?তাকে তীব্র ভালোবেসে ছেড়ে দিবি।দেখবি সে মরে গেছে।

মেঘের কথা মতো মেঘের সাথে ছাদে এসেছিলো শান্ত।বেশ ভালোই পাশের বিল্ডিংয়ের বিয়ে বাড়ির মেয়েদের নাচ দেখছিলো শান্ত।মেঘের হঠাৎ এমন কথায় শান্ত তাজ্জব দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকায়।মেঘ তো এমন কথা বলার মেয়ে না।ছোট বেলা থেকে শান্ত ওকে দেখছে।এই মেয়ে কোনো কিছুই সিরিয়াসলি নিতো না।সব হেসে কিংবা দুষ্টুমির ছলে উড়িয়ে দিতো।অবশ্য বেশ অনেক দিন ধরেই মেঘের আচরণে বিশাল পরিবর্তন এসেছিলো।ম্যাচিউরিটি এসেছিলো।সবাই ধরে নিয়েছিলো মেয়েটা বড় হয়েছে।শান্তও তাই ধরে নিয়েছিলো।কিন্তু মেয়েটা যে একদিন হঠাৎ করে এমন যে হৃদয় ভাঙা কথা বলবে তা শান্ত কল্পনাতেও ভাবে নি।কথায় মনে হচ্ছে ওকে কেউ তীব্র ভাবে ভালোবেসে ছেড়ে দিয়েছে।শুভ্রের সাথে ঝামেলা হয়নি তো?মেঘ আর শুভ্রের সম্পর্ক হাতে গোনা মেঘের কিছু কাছের মানুষজন জানে।শান্ত তারমধ্যে একজন।শান্ত সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,,

-Megh are you ok?

মেঘ কথার উত্তর দেয় না।শুধু একটা কৃত্রিম হাসি দেয়।শান্ত আবার জিজ্ঞাসা করে,,,

-শুভ্রের সাথে তোর কিছু হয়েছে?

মেঘ এবার কেঁদেই দেয়।শান্ত নিশ্চিত হয়ে যায় কিছু হয়েছে ওদের মাঝে।মেঘকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে ছাদে থাকা অন্যান্য ফ্ল্যাটের কিছু মহিলা আড়চোখে তাকাচ্ছে।পাশের বিল্ডিং থেকেও বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত কিছু ছেলে ওদের দিকে তাকিয়ে কানাকানি করছে।শান্ত মেঘকে আড়ালে নিয়ে যায়

-বল এখন কি হয়েছে!
-লিসেন,তুই আমার সামনে কখনো ওই রাস্কেলটার নাম নিবি না।আর যারা জানে তাদেরও মানা করে দিবি আমার সামনে ওই রাস্কেলটার নাম নিতে।

কাঁদতে কাঁদতে বলে মেঘ।শান্ত মেঘকে আশ্বাস দেয়।তারপর বলে,,,

-এবার পুরো ঘটনা খুলে বল।
-তুই আর আমি কি?
-খালাতো ভাই বোন।
-তো ওই রাস্কেলটা কোন আক্কেলে বলে আমি তুই গার্লফ্রেন্ড -বয়ফ্রেন্ড?আমি নাকি ওই লোকটার সাথে টাইম পাস করেছি!আমি নাকি তোর সাথে প্রেম করি।

মেঘের কথা শুনে শান্ত কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।মেঘ যেন শান্তর অনুভুতিতে ছোট্ট করে টোকা দিলো।শান্ত মেঘকে সেই ছোট বেলা থেকেই পছন্দ করে। জানলে যদি মেঘ কথা বন্ধ করে দেয় তাই শান্ত মেঘকে কিচ্ছু জানতে দেয় নি। শান্ত মেঘকে নিজের অপুর্ণতা হিসেবে ধরে নিয়েছে।মানুষের কিছু ইচ্ছে কখনো পূরণ হয় না।মেঘ শান্তর সেই অপূর্ণ ইচ্ছে।এগুলো ভাবতে ভাবতে যে কখন শান্তর চোখের কোণে পানি জমেছে শান্ত বুঝতেই পাই নি।শান্তর চোখের কোণে পানি দেখে মেঘ বলে,,,

-ছ্যাকা দেওয়া হইছে আমায়।কাঁদবো আমি।তুই কাঁদিস কেন?

শান্ত তাড়াহুড়ো করে চোখের পানি মুছে মুখে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,,

-আমার বোনকে এমন ভাবে ভুল বুঝছে আমি কাঁদবো না?
-কিন্তু তোর তো খুশী হওয়ার কথা!

মেঘের কথা শুনে শান্ত ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। বড় বড় চোখ নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকায় শান্ত।তোতলাতে তোতলাতে বলে,,

-মা..মা..মানে?
-ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি আমি কাঁদলে, কষ্ট পেলে তুই খুশী হতি।তাও বললাম আর কি!

মেঘের কথা শুনে শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,,

-ছোট বেলা আর আছে নাকি এখন। এনিওয়ে ওসব বাদ দে।আমি শুভ্রকে বুঝিয়ে বলবো নি ওর ধারণা ভুল।
-কিচ্ছু বলতে যাবি না তুই,কিচ্ছু না।যা বুঝার বুঝেছে, আমি ঠিক থাকলেই হলো।সবাইকে নিজের মতো ভাবে।
-নিজের মতো মানে?
-আরেহ ওর ফুফাতো বোনের সাথে লটরপটর আছে।বুশরা মানে ওর ফুফাতো বোন আমায় বিভিন্ন ভাবে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝানোর চেষ্টা করছিলো যে she loves shuvro..! I’m just a disaster in the middle of them…যা হওয়ার হয়ে গেছে।বাদ দে।শুভ্র নামের ঐ লোকটার কথা কখনো আমার সামনে তুলবি না।আর শোন আমি মুভ অন করবো। তুই হেল্প করবি তো?

কথাটা বলে মেঘ বুক ভরা আশা নিয়ে শান্তর দিকে তাকায়।মেয়েটা মাঝে মাঝে এমন ভাবে তাকায় না?যে শান্ত মেয়েটার প্রেমে না পড়ে পারে না।শুভ্র আলতো করে চোখ বুজে মেঘকে আশ্বাস দেয়।
যে যার মতো করে দাঁড়িয়ে ছিলো ছাদের রেলিং ধরে।হঠাৎ করেই মেঘ বলে,,,

-জানিস শান্ত ভাইয়া?যাকে আমি ভালোবাসি আমি না তার মুখ কখনো দেখি নি!
-ভালোবাসি মানে?

শান্ত প্রশ্ন ছুড়ে মারে।মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,

-হ্যাঁ,আমি এখনো শুভ্রকে ভালোবাসি।আমি যে ওর মায়ায় পড়েছি!প্রেমে পড়লে তো ওকে খুব সহজে ভোলা যেত!কিন্তু আমি যে ওর মায়ায় পড়েছি।আর এই মায়া কাটাতে এই জনমটা দিব্যি কেটে যাবে।

-ভাইয়া তুই সিগারেট খাচ্ছিস?

রাত দেড়টায় কেউ আচমকা পেছন থেকে ডাক।দেওয়ায় চমকে কেঁপে উঠে শুভ্র।পেছন ঘুরে শিশিরকে দেখতে পায় শুভ্র।শিশিরকে দেখে সে হাত থেকে জলন্ত সিগারেটটা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষিয়ে দেয়।পায়ের তলায় জলন্ত সিগারেটের উত্তাপে ছ্যাকা খেয়ে যন্ত্রণায় শুভ্র চোখ বন্ধ করে দেয়।

-তুই তো সিগারেট খাওয়ার ছেলে না ভাইয়া!তুই সিগারেট খাচ্ছিস কেন?কি হয়েছে তোর?

শুভ্র এবারও চুপ।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,

-তুই বুঝবি না।ঘুমা যা।
-না বললে কিন্তু আমি আব্বুকে সব বলে দেবো

শুভ্র কিছু বলে না।যে যা খুশী তাই বলুক।মানুষ শুভ্রকে মারুক কাটুক শুভ্রের তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।শুভ্র এখন জ্যান্ত লাশ।ওর আত্মা ভেতর থেকে মরে গেছে শুধুমাত্র মেঘের বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য।একটা মানুষের আত্মা যখন ভেতর থেকে মরে যায় তখন মানুষটা জ্যান্ত লাশ হয়ে যায়।জ্যান্তলাশ হয়ে বেঁচে থাকার যন্ত্রণাটা খুব অসহনীয়। কেউ কেউ তো এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে।কিন্তু কি লাভ অন্যের জন্য নিজেকে শেষ করে!যার জন্য শেষ করে সে তো দিব্যি ভালো থাকবে।শুভ্রের থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে শিশির বুঝতে পারে যে শুভ্রের মন খারাপ।এই সময় শুভ্রকে বিরক্ত না করাই ভালো।শিশির চলে যায়।শিশির চলে গেলে শুভ্র আবার সিগারেট ধরায়।
সময়ের সাথে মানুষ পালটায়।শুভ্র কখনো চায়ের দোকানে বসে চা পর্যন্ত খায় নি।এখন সেই শুভ্র একের পর এক সিগারেট শেষ করে যাচ্ছে।আচ্ছা!মেঘ এখন কি করছে?নিশ্চিয়ই শান্তর সাথে কোনো এক বিশেষ মুহুর্ত কাটাচ্ছে।মেঘ কিভাবে পারলো শুভ্রকে এভাবে ঠকাতে?কি এমন ক্ষতি করেছিলো শুভ্র মেঘের যার কারণে মেঘ শুভ্রকে এভাবে মেরে চলে গেলো!মেঘ কি জানতো না শুভ্রের ভেতরের সবটা জুড়ে মেঘ ছিলো।মেঘ চলে যাওয়ায় শুভ্রের ভেতরটা একদম ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মনে হচ্ছে শুভ্র এখনই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে।

ডায়বেটিসের রোগী আকরাম সাহেব।প্রায়ই তার প্রস্রাবের বেগ পায়।রাতে তিন চার বার টয়লেটে যেতে হয়।ওয়াশরুম থেকে ফেরার পথে মেঘের রুম থেকে কারও গোঙানির শব্দে তিনি মেঘের ঘরে উঁকি দেন।দেখে মেঘ কাঁপছে আর গোঙাচ্ছে।গিয়ে মেঘের কপালে হাত দিতেই দেখেন জ্বরে মেঘের গা পুড়ে যাচ্ছে। তিনি স্ত্রী মিতুকে ডাকেন।কড়া গলায় ঝাড়ি দিয়ে বলেন,,

-মেয়ের জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।আর তুমি কিচ্ছু জানো না?

স্বামীর ধমকে মিসেস মিতু কেঁপে উঠেন।কাঁপা কন্ঠে বলেন,,,

-বিকেলে গোসল করেছে তাই হয়তো…
-বিকেলে গোসল করবে কেন ও?
-সেটা তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাস করো।
-মুখে মুখে তর্ক করো আবার!যাও গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসো।

মিসেস মিতু নিজের ঘরে ওষুধ আনতে যান।আকরাম সাহেব ব্যাকুল হয়ে মেয়েকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন।বসে দাঁড়ানোর নূন্যতম শক্তিটুকু নেই মেঘের।বাবার কোলে বার বার ঢোলে পড়ে সে।মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আকরাম সাহেবের অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়।মেঘ তার কলিজার টুকরা।মেঘের একটু কিছু হলেই তিনি ব্যাকুল হয়ে পরেন।

মিসেস মিতু ঘর থেকে ওষুধ নিয়ে আসেন।আকরাম সাহেব মেয়েকে ওষুধ খাইয়ে মেয়ের শিওরের পাশেই বসে থাকেন।স্বামীকে রেখে মিসেস মিতুও ঘরে যেতে পারেন না।মেঘের টেবিলের চেয়ারে বসেন তিনি।সারাদিনের ক্লান্তিতে মিসেস মিতুর চোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘুমের দেশে তলিয়ে যান।মেয়ের পাশে বসে আকরাম সাহেবও পাড়ি জমান ঘুমের দেশে।

চলবে,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here