মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং পর্ব ৫

0
941

#মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৫

(অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ)

-এইযে ভাইয়া শুনছেন?

রিসেপশনে কনে মানে অনুর ছবি তুলছিলো শুভ্র।কারও ডাকে সে পেছন ঘুরে তাকায়।কাওকে দেখতে না পেয়ে যখন সে ছবি তোলায় আবার মন দিবে ঠিক তখনই কেউ ওর চোখের সামনে তুরি মেরে বলে,,,

-নিচে দেখো নিচে।

শুভ্র নিচে তাকিয়ে মেঘকে দেখতে পায়।উপহাস্য কন্ঠে বলে উঠে,,,

-ওহ পিচ্চি তুমি?বলো কি দরকার?
-ডোন্ট কল মি পিচ্চি।আমি নাইনে পড়ি।কিছুদিন পর টেনে যাবো।
-দেখতে তো তুমি একদম বাচ্চাদের মতো।
-আপনার সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলার মুড বা ইচ্ছা কোনোটাই নাই আমার।
-জিজ্ঞাস করছে কে তোমাকে এইসব?

মেঘ ভেংচি কাটে।তারপর আবার বলে,,,

-আপনার ক্যামেরায় কিছু ছবি তুললাম না?ওগুলো কি দেওয়া যাবে?
-হুম,কেন দেওয়া যাবে না?আচ্ছা তুমি কি হোয়াটস অ্যাপ ইউজ করো?

ছবি তুলতে তুলতে বলে শুভ্র।মেঘ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।এমন অচেনা ছেলেকে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দেওয়া আদোও কি ঠিক হবে?ছেলেটা যদি পরে ডিস্টার্ব করে!অবশ্য মেঘের তেমন রূপ নেই যে সেই রূপে মুগ্ধ হয়ে ছেলেরা ডিস্টার্ব করবে!স্কুল লাইফে নাকি মেয়েরা অনেক প্রপোজ পায়!কিন্তু সত্যি বলতে মেঘ এখনো একটাও প্রপোজ পায় নি।বর্তমানে পুরাতন যুগের প্রেমপত্রের নতুন নাম অনলাইন কনফেশন।যা হরহামেশাই অনেকে পায়।কিন্তু মেঘের এমনই কপাল যে মেঘ কনফেশনও পায় নি।যার দরুন সে নিজেকে পৃথিবীর কুৎসিত মেয়েদের তালিকার সর্বপ্রথমে রেখেছে।

-কি হলো এতক্ষণ ধরে কি ভাবছো?হোয়াটসঅ্যাপ নামার দিলে বয়ফ্রেন্ড বকবে?নাকি ডিস্টার্বের ভয়ে।হোয়াটসঅ্যাপে ছবি রেগুলেশান ভালো থাকে তাই বললাম।অন্য কোনো মতলব নেই আমার।

শুভ্রের কথায় মেঘের ধ্যান ভাঙে।মেঘ আজ পর্যন্ত অনলাইন কনফেশন, প্রপোজ কিছুই পায় নি।আর লোকটা কি সুন্দর করে বয়ফ্রেন্ড ঢুকিয়ে দিলো!মেঘ জন্ম থেকে সিঙ্গেল।ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নেই।একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে,,

-না জেনে বুঝে কথা বলা আপনার পুরোনো দিনের অভ্যাস তাই না?আমি সিঙ্গেল। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নাই।
-বাচ্চা মানুষের সাথে কেউ প্রেমও করে না!
-বললাম না?আপনার সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলার মুড ইচ্ছা নেই আমার!নাম্বার দিচ্ছি।সময় করে ছবি গুলো পাঠিয়ে দিয়েন।

মেঘের কথা শুনে শুভ্র মেঘের হাতে নিজের ফোন দেয়।হঠাৎ করে একজন অপরিচিত ছেলে এভাবে ফোন সাঁধায় মেঘ ভেবাচেকা খেয়ে যায়।প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে মেঘ শুভ্রের দিকে তাকায়।তা দেখে শুভ্র বলে,,,

-বিজি আছি দেখতেই তো পারছো!কষ্ট করে এড করে নাও।

লোকটা এমন ভাবে মেঘকে তুমি তুমি করছে যেন মেঘ লোকটার বিয়ে করা বউ। অপরিচিত কেউ বিশেষ করে ছেলে কেউ মেঘকে তুমি তুমি করলে মেঘের আত্মসম্মানে খুব আঘাত করে। এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে শুভ্রকে কষিয়ে চড় দিতে পারলে ওর গায়ের জ্বালা মিটবে।কিন্তু না, মেঘ ভদ্র ঘরের মেয়ে।অনুষ্ঠান বাড়িতে এমন আচরণ মেঘের কাছ থেকে কেউ আশা করে না। এমনকি মেঘ নিজেও না!অনেকটা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মেঘ শুভ্রকে হোয়াটস অ্যাপ এ এড করে নেয়।


বউভাতের রাতের দিনই চলে আসে মেঘ বাসায়।সারাদিনের তীব্র ক্লান্তি চাপা পড়ে মেঘের ছবি পাওয়ার উত্তেজনার মধ্যে।ফ্রেশ হয়ে কোনো রকমে খেয়ে শুভ্রকে নক দেয় সে,,,

-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
-ওয়া আলাইকুমুস সালাম পিচ্চি

শুভ্র রিপ্লাই দেয়।মেঘ আবার মেসেজ দেয়,,,,

-ভাইয়া ছবিগুলা…..

শুভ্র মেঘের ছবি গুলো সেন্ড করে।কিন্তু কোনো এক কারণে মেঘের ক্যান্ডিড ছবিটা শুভ্র নিজের কাছে রেখে দেয়।মেঘও সেই ছবিটার কথা ভুলে যায়।কোনো রকমে ডিপি চেঞ্জ করেই মেঘ ঘুমিয়ে পড়ে।বাসায় আবার নিয়ম রাত এগারোটার পরে কেউ ফোন ধরতে পারবে না।আর মেঘ তো নাই ই!মেঘ বাবার কাছে অনেক অনুরোধে ফোন পেয়েছিলো।ইতিমধ্যে সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে।মেঘের ফোন রাখতে হবে এবার।ফোনটা পাশে টেবিলে রেখে মেঘ চোখ বুজে।


অনুষ্ঠান শেষে বুখারীদের বাসার ড্রয়িংরুমে আড্ডার আসর বসেছে।আড্ডায় থাকা সবাইই তরুণ তরুণী। নতুন বউ, বরকে ঘিরে বসেছে তারা।শুভ্র অন্য সবার সাথে দুষ্টুমি ফাজলামোতে ব্যস্ত।কিন্তু বুখারীর বোন বুশরা ব্যস্ত শুভ্রকে নিয়ে।কি যে আছে ছেলেটার মধ্যে যা বুশরাকে এত বিমোহিত করেছে।শুভ্র আর বুশরা আটমাসের ছোট বড় হলেও দুইজন একই সঙ্গে পড়ে।দুইজনই সদ্য ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।শুভ্র পাব্লিক ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য কোচিং করছে।বুশরার পয়েন্ট না হওয়ায় সে আপাতত ছুটিতে আছে।সময় হলে কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিয়ে নেবে।

অনু বুখারী নিজেদের লাভস্টোরি শোনাচ্ছে।আর তা সবাই মন দিয়ে শুনছে।সবাই না অবশ্য!বুশরার অসব দিকে কোনো ধ্যান নেই।সে এক দৃষ্টিতে বুখারীর দিকে তাকিয়ে আছে।আজ সে নিজের প্রিয়কে প্রাণভরে দেখবে। শুভ্র বেশ লম্বা।এই লম্বা হওয়াটাই মুলত বুশরার দুর্বলতার কারণ।শুভ্র সবার সামনে মাস্ক খুলে না।যারা ওকে আগে থেকে দেখেছে শুধুমাত্র তাদের সামনেই শুভ্র মাস্ক খুলে।এসএসসি দেওয়ার পর কোনো এক কারণে সে সব সময় মাস্ক পরে থাকে।আড্ডায় সব নিজেদের লোক জনই।তাও কোনো এক অজানা কারণে আজ শুভ্র মাস্ক পরে আছে।শুভ্রর ধুসর চোখ দুটো ভীষণ অমায়িক লাগছে বুশরার কাছে।বিয়েবাড়ির ব্যস্ততার কারণে বুশরার শুভ্রকে দেখা হয়ে ওঠেনি।সকাল বেলা গোসলের সময় বুশরা শুভ্রের মুখ দেখতে পায়।ঠোঁটের নিচে,ঠোঁটের ওপরে,আর থুতনীতে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে শুভ্রকে পুরোই কল্পনার জগতের কোনো এক বিশেষ চরিত্রের মতো লাগছিলো।শার্টলেস অবস্থায় থাকায় ফর্সা বুকে থাকা তিলটা সহজেই বুশরার নজরে পড়ে যায়।হা করে তাকিয়েছিলো বুশরা শুভ্রের বুকে তিলের দিকে।তখন তা দেখে শুভ্র বুশরাকে ধমক দিয়ে বলেছিলো,,,

-ওই মোটু কি দেখছিস?সামনে হট ছেলে দেখলে হুশ থাকে না না?নজর ঠিক কর।

বুশরা কিচ্ছু বলেনি।চাপা হাসি দিয়ে চলে আসে।ছোট বেলা থেকেই বুশরা ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারি।খেতে প্রচুর ভালোবাসে বুশরা।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আর পরিবারের ছোট সদস্য হওয়ায় আদরের কোনো কমতি ছিলো না বুশরার।এই ভালো স্বাস্থ্যের জন্য শুভ্র সবসময় বুশরাকে মোটু,হাতি বলে আখ্যায়িত করতো।প্রথমে বুশরার খুব রাগ হলেও পরে শুভ্রের সেই ডাকগুলোকেই বুশরা শুভ্রর ভালোবাসা হিসাবে নিয়ে নিয়েছে।

বাসায় ফিরতেই মিসেস মিতুকে রাগান্বিত অবস্থায় দেখে চমকে যায় মেঘ।যা ভয় করেছিলো তাই হয়েছে।প্রাইভেট থেকে বাসায় ফিরতে আজ তার গুণে গুণে পনেরো মিনিট লেট করেছে।বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খেতে গিয়ে আজ লেট হয়ে গেছে মেঘের।তাও সন্ধ্যার সময়।এমনেতেই বাঙালি মা দের একটা কমন ডায়লগ আছে।যেখানেই যা মাগরিবের আগে যেন তুই বাসায় আসিছ।মেঘের বাবা মা খুব কড়া।অবশ্য কড়া হবেনই বা না কেন?রিসেন্টলি মেঘের দুইটা ক্লাস মেট প্রাইভেটের নাম করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গিয়েছে।পালালো তো পালোই টিকটকারের সাথে পালালো।মজার ব্যপার হলো এই দুই মেয়ের বাবা-মা এদের ফোন কিনে দেয় নি।দুইজনেই দাদির ফোন দিয়ে প্রেম করেছে।আর শেষে পালালো।যাকে বলে দড়ি বেশি শক্ত করতে গিয়ে দড়িই ছিড়ে ফেলা।
এই ঘটনার পর থেকে মেঘের বাবা মার মেঘকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই।যদিও মেঘ ওই রকম মেয়ে না।কিন্তু বাবা মায়ের মন কি আর করার!এইজন্য মেঘকে মেঘের বাবা ছোট একটি এন্ড্রোয়েড ফোন কিনে দিয়েছে।বাইরে কোথাও কোনো সমস্যা হলে যেন সে বাবা মাকে জানাতে পারে।তাছাড়া পড়াশোনার কাজেও আজকাল ফোন লাগে।সাথে এটি বিনোদনেরও একটু অংশ হয়ে গেছে।মোট কথা এক ঢিলে দুই পাখি মারা।মেয়েকে তিনি বিশ্বাস করেন।তাও সতর্কতার জন্য মিসেস মিতু মাঝে মাঝে মেঘের ফোন চ্যাক দেন।

-এত দেরি কেন?

রাগান্বিত কন্ঠে বলেন মিসেস মিতু।মেঘ কাঁপা কন্ঠে বলে,,

-ফ্রেন্ডদের সাথে ফুচকা খেতে গিয়ে লেট হয়েছে।
-ফোন রিসিভ করলে না কেন?
-সরি আম্মু,সাইলেন্ট ছিলো ফোন।

এই ভুলের জন্য কয়েক দফায় বকা খেতে হয় মেঘকে।মায়ের বকুনি তার কেমন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সে মায়ের বকুনিকে কানেই তোলে না।পাত্তা দেওয়া তো দূরে থাক।একদিক দিয়ে মিসেস মিতু মেয়েকে বকছেন অন্যদিকে মেঘ তা মুখ টিপে হেসে ইঞ্জয় করছে।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here