#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“তোশামণি ক্লাসে চল।”
“যাচ্ছি দাঁড়া।”
বাতাসে তোশার মসৃণ চুলগুলো উড়ো উড়ি করছে।সেগুলো কানের পিঠে গুঁজে নিলো।বড্ড উত্তেজিত দেখাচ্ছে তাকে।মাঠের একদম শেষ মাথায় গেটের কাছে কবীর দাঁড়িয়ে আছে গাড়ী নিয়ে।নিশ্চয় তোশার জন্য এসেছে।কিন্তু এখনও তো ছুটির অনেকক্ষণ বাকী।কবীরের তামাটে শক্ত মুখখানার দর্শনে তোশার অশান্ত মন আরো জ্ব লে উঠলো।মেয়েটা যেন এতোদূর থেকেও তামাটে পুরুষটির গায়ের তীব্র সুগন্ধ পাচ্ছে।
“কী হলো তোশামণি ক্লাসে চল।কাকে দেখিস এভাবে?”
বান্ধুবীর সামনে প্রচন্ড লজ্জা অনুভব হলো তোশার।সে ঈষৎ কেঁশে বলল,
“কাওকে না।চল স্যার এসে পড়বে।”
ফিরে যাওয়ার সময় তোশা বারবার পিছন ফিরে দেখছিলো।বড্ড মন খারাপ হয়ে গেলো তার।ব্যক্তিটা একবার বারান্দায় তাঁকালে অন্তত কোনো ইশারায় অপেক্ষা করতে বলতো।অথচ ছোট্ট কিশোরী তোশামণি টের পেলো না কবীর শাহ নামক সবথেকে নিষ্ঠুর অঘোষিত গোপনীয় প্রেমিকটি তার জন্য নয়।অন্য কারো সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।মিনিট দশেক পর কাঙ্ক্ষিত রমনীর দেখা পেলো কবীর।দিশা নিশ্চুপ হয়ে তার পাশে এসে দাঁড়ালো।
“গাড়ীতে উঠে বসো দিশা।”
দিশা উষ্ণ শ্বাস ফেললো।টিস্যু দিয়ে মুখবিবরে লেপ্টে থাকা ঘামগুলো মুছে নিয়ে বলল,
“কেন ডেকেছো সেটা বলো।”
“তুমি নিশ্চয় চাইবেনা সকলের সামনে আমার মেজাজ খারাপ আর তোমার সম্মানহানী হোক।”
“তাই?যে পুরুষ বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায় আমাকে সাধারণ ফুলের টোকাও দেয়নি সে প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার পর বৃহৎ কিছু করবে বলে আমার মনে হয়না।”
কবীর এগিয়ে এলো দিশার দিকে।তার পুরু ভ্রু দুটো সদা প্রিয় ছিল দিশার নিকট।অতীতের অভ্যেস থেকে কীনা নিজের ব্যবহার করা টিস্যু দিয়ে কবীরের কপালের ঘাম মুছে দিলো দিশা।
“তুমি আরো তামাটে হয়ে গিয়েছো কবীর।”
প্রশ্নটির জবাব না দিয়ে দিশা টেনে সজোরে গাড়ীর ভেতর ফেললো কবীর।কোনোকিছু নিয়ে বড় রেগে আছে সে।কবীর নিজেও গাড়ীর ভেতরে গিয়ে বসলো।
“তোমাকে কী কোর্ট থেকে আহনাফের থেকে দূরে থাকতে বলা হয়নি?তবে এই স্কুলে এতো মাস ধরে চাকরি করার সাহস পেলে কোথায় থেকে?”
“কবীর নিজের ভুলটা শুধরে নাও।আমি একবারও আহনাফের সাথে কথা বলিনি।ইনফ্যাক্ট ও আমাকে দেখেওনি।আমি নাইন ও টেনে ক্লাস নেই।”
“ভুল বললে।গতকাল দেখেছে।এবং রাতে আমাকে জানিয়েছে।”
দিশা একটু মনক্ষুন্ন হয়ে বলল,
“আমাকে দেখেও ও কথা বলেনি কেন?”
দিশার মাতৃত্বের উপর পুরোদমে বিদ্রুপ করে হেসে কবীর বলল,
“তুমি ওর মা হওয়ার মতো কিছু করেছো?এক মিনিট তুমি বৃষ্টিদের ক্লাস নাও?”
“হ্যাঁ।”
“অথচ বৃষ্টি আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি।”
“একটা বিষয়কে বড় করে নিচ্ছো কবীর।বৃষ্টির কী দরকার তোমাকে বলার জন্য?এমন না ওর সাথে টিচার-স্টুডেন্টের বাহিরে কোনো সম্পর্ক আছে আমাদের।”
“না থাকুক।তোমাকে কেন আশেপাশে টলারেট করবো আমি?”
“তো কাকে করবে?মায়ানের মেয়ে তোশাকে?”
কথাটি সুঁচালো ছুঁ ড়ি র মতোন কবীরের বুকে এসে লাগলো।হুট করে উত্তেজিত হয়ে দিশার চোয়াল চেপে ধরলো সে।
“তোশার কথা আসছে কেন এখানে?ও শুধু তোমার স্টুডেন্ট।”
“লাগছে কবীর।”
“লাগুক।তোশার কথা মাথা থেকে সরিয়ে দাও।”
“কেন লজ্জা পাচ্ছো তুমি?ইশ যখন তুমি আমার সাথে ভালোবাসার রাত গুলো উদযাপনের করতে তখন তোমার বর্তমান মায়ের বুকে শুয়ে ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি শুনতো।কীরকম বিদঘুটে বিষয় হয়ে গেলো না কবীর?মায়ান জানে?তাছাড়া কী যাদুবলে মেয়েটা সুন্দর,ব্যক্তিত্ববান,আদর্শবান,নিজ নীতিতে অবিচল থাকা কবীর শাহকে মানিয়েছে।বাই এনি চান্স?”
“মুখ সামলে কথা বলো দিশা।তোশা খুব ভালো একটা মেয়ে।”
“থাকুক।কিন্তু যে তোমাদের কথা শুনবে সেই তো বলবে মেয়েটা তোমার সুগারবেবি।খরচ করো ওর পিছনে?”
“স্টপ দিশা।আমি কী করি সেগুলো তোমার দেখার বিষয় নয়।”
“অবশ্যই দেখার ব্যাপার আছে।ছেলেটা এখনও তোমার কাছে আছে।তার জন্য ভবিষ্যত দেখতে হবে তো নাকী?যদিও মনে হয়না তোশাকে তুমি বিয়ে করবে।শুধু শুধু চুইংগামের মতোন চিবানোর কী দরকার?”
“ও চুইংগাম না।জলজ্যান্ত একজন মানুষ।পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মানসিকতা আর মন ওরমধ্যে আছে।এইযে যেসব কথা বললে সব গুলো অনুচিত ছিল তোমার।যাই হোক কথাগুলো যেন আমার মধ্যে থাকে।ভুলক্রমে লিটল চেরির কাছে বললে আমি তোমাকে ছাড়বো না দিশা।
কবীর নিজের সীটে ফিরে এসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।রাগে তার মুখটা রক্তিম হয়ে উঠেছে।দিশার চোখ দুটো অশ্রুসজল হয়ে উঠলো।এই ব্যক্তিটা একসময় শুধু তার ছিল।অথচ আজ সব পরিবর্তন কেন হয়ে গেলো?
” লিটল চেরি?ভালো নাম দিয়েছো তো।যাই হোক আমার ক্লাস আছে।তাও আবার তোমার লিটল চেরির ক্লাসে।ভালো থেকো।”
“দাঁড়াও দিশা।আহনাফ কিংবা তোশা দুজনের থেকে দূরে থাকবে।”
“তোমার তোশামণির সঙ্গে আমার কোনো দেনাপাওনা নেই।যদি আহনাফের কথা আসে তবে আমার বলতে হবে ছেলেটা আমারও অংশ।পেটে ধরেছি।তাই অধিকার আছে।”
দিশা গাড়ীর দরজাটি খুলে বাহিরে চলে গেলো।কবীর অবশ্য তাকে বিদায় দিলো না।চোখের কার্ণিশে জমে থাকা অশ্রুগুলো বাম হাতের পিঠের সাহায্য মুছে নিলো।হুট করে ঝুঁকে কবীরের উদ্দেশ্যে বলল,
“তুমি আমার ছিলে কবীর।সেখানে তোমার নতুন প্রেমিকাকে চোখের সামনে দেখতে পেয়ে খুব খারাপ লাগে।”
“নিজেদের দোষে প্রাক্তন হয়েছি দিশা।এখানে নতুন কারো দোষ নেই।”
(***)
স্কুল থেকে বড্ড দুঃখিত মন নিয়ে বাসায় ফিরে এলো তোশা।ভেবেছিল ছুটির পর কবীরকে দেখতে পাবে।কিন্তু ব্যক্তিটা তো ছিলনা তখন।এজন্য বাসায় ফিরে এসে রুমে দিকে ছুটতে লাগলো।তোশার নানী রাহেলা আড়চোখে নাতনিকে দেখলো।বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছে ইদানীং।কবীরের নাম্বার ডায়াল করতেই রিং হতে লাগলো।সঙ্গে তোশার বুকের হৃদপিন্ডের লাব-ডাব শব্দের গতি বাড়ছে।রিসিভ হতে তোশা শুধালো,
“চলে গেলেন কেন?”
কবীর বিরক্তি হয়ে বলল,
“তুমি করিডোর থেকে দেখছিলে কেন আমাকে?”
“বাহ!দেখার মানুষ দেখবো না?”
অন্যসময় হলে কবীর হেসে ফেলতো একথায়।কিন্তু আজ দিশার কথায় বড় প্রভাবিত হয়েছে সে।
“আমাকে আর ফোন করবেনা তুমি।যা হচ্ছিলো তা বাদ।”
“কেন?কী হলো হঠাৎ?”
“সব তোমাকে বলতে হবে আমার?ইডিয়ট কোধাকার।”
ফোনটা কেঁটে গেলো।এরপর যতোবার ব্যাক করলো তোশা ততোবার বিজি পেলো।মানে লোকটা তার নাম্বার ব্ল্যাকলিস্টে রেখেছে।তীব্র যন্ত্রণায় বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো।এমন সময় কল্লোল আপেল খেতে খেতে রুমে এসে তোশার পাশে বসলো।
“জানিস তোশামণি কলি খালামণিরা আসছে খুব তাড়াতাড়ি।”
নিজের কষ্ট লুকানোর জন্য তোশা হাসার প্রয়াস করে বলল,
“তাই?”
“হ্যাঁ।পাত্র দেখছে তার জন্য।ওইযে কবীর আঙকেল।সেই হচ্ছে পাত্র।”
শিউরে উঠলো তোশা।অনুভূতির আরশিমহলে কাঁপন সৃষ্টি হলো।সবটা ভেঙে পড়বেনা তো এবার?
চলবে।