মিঠা রোদ পর্ব ১২

0
2139

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:১২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমাদের সম্পর্কটি অনুচিত কেন?বয়স নাকী বাবা-মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বটা কারণ?”

“যদি বলি দুটোই?তাছাড়া আমার আগেও..।”

কথাটি শেষ হওয়ার পূর্বে ওয়েটার এসে টেবিলে খাবার রেখে গেলো।কবীর নিজ উদ্যোগে লবস্টার ছাড়িয়ে তোশার প্লেটে তুলে দিলো।

“আপনি বেশী ভাবছেন কবীর।দেখবেন সকলে মেনে নিবে।সমস্যা হলো আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা নেই।”

“ওহো তোশামণি।বয়স অনুযায়ী ভালোবাসা সম্পর্কে একটু বেশীই কৌতুহল হয়ে আছে তোমার মন।পড়াশোনা এতোটা পারো?ওয়েল চলো ধরি কয়েকটা প্রশ্ন।”

তোশার চোখদুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।এই সুদর্শন তামাটে বর্ণের অহংকারী পুরুষটি কী মনে করে তাকে?

“উহু,সবসময় আমি কেন পরীক্ষা দিবো?উল্টো আজ আপনাকে প্রশ্ন করবো আমি।বলেন গ্যালিলিও এর সূত্র কী?প্লবতা সম্পর্কে বলেন।উত্তল, অবতল দর্পণ কোনগুলো।কখন প্রতিবিম্ব বড়-ছোট হবে?বলেন বলেন কবীর শাহ।”

কবীর ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি সংবরণ করলো।উচ্ছ্বল প্রাণবন্ত কিশোরীর চোখদুটো জবাবের জন্য চকচক করছে।মেয়েটা কী ধরে নিয়েছে সে এসব প্রশ্নের জবাব জানেনা?নাহ,মেয়েটাকে আজ আবার হারাতে হবে।উষ্ণ শ্বাস ফেলে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিলো কবীর।তোশামণি ঈষৎ বি র ক্ত হলো।মন খারাপের সুরে বলল,

“আপনি সবসময় জিতে যান।বয়সে বড় হলে সকলে জিতে যায় তাইনা?”

“ধরে নাও তাই।”

“যখন আমি বড় হবো।মানে ইউনির্ভাসিটিতে পড়বো তখব দেখবো কীভাবে হারিয়ে দেন আমাকে।”

কবীর শুধু হাসলো তোশার কথায়।সেই অবধি কী তাদের সম্পর্ক এগিয়ে যাবে?নিজের প্লেট থেকে কিছুটা উঠিয়ে তোশার প্লেটে দিলো কবীর।বিষয়টা নিছক অভ্যেসের ফলে হয়েছে।দিশাকেও সে এমনভাবে মায়া-মমতা দিয়ে আগলে রেখেছিলো।

“তোশা একটা কথা তোমার মাথায় আসেনা কেন আমি তোমার সাথে খেলায় নামলাম?চাইলে তো তাহিয়া কিংবা মায়ানকে বিষয়টা জানাতে পারতাম।তারা হ্যান্ডেল করে নিতে পারতো।”

কপালের একপাশে বিরক্ত করতে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে নিলো তোশা।

“এসেছিল।আমি জিজ্ঞেস করবো ভেবেছিলাম।”

“কয়েকমাস আগে আমি যখন আমার বন্ধু এলেক্সের বিয়েটা এটেন্ড করতে গিয়েছিলাম তখন একজন লেখকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।নাম রিকার্দো কুয়ারেজমার।আমাকে ড্রিংক অফার করে।তখন বসে বসে আলাপের সময় রিকার্দো আমাকে নিজ জীবনের একই রকম ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা শুনান।সে নিজেও সতের বছর বয়সী টিনেজারের সঙ্গে একমাস কম্পিটিশন করেছে।”

তোশা উত্তেজিত হয়ে বলল,

“তাদের বিবাহিত জীবন এখন কেমন চলছে?”

কবীর হেসে ফেললো তোশার কথায়।যে হাসিতে কিশোরীর মনের বাগানে সুগন্ধ মেখে প্রজাপতি উড়ে গেলো।আজও ব্যক্তিটার হাসি চোখ অবধি পৌঁছায়নি।

“তাদের বিয়ে হয়নি।এমনকি সম্পর্কও হয়নি।মেয়েটা চৌদ্দ দিনে নাকানিচুবানি খেয়ে পালিয়েছে।”

“আপনি ভাবছেন আমিও সেরকম করবো?”

“আমি জানি শেষটা রিকার্দোর সঙ্গে যা হয়েছে সেটি হবে।সত্যি বলি?তখুনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই তুমি এগিয়ে এলে আমি এই প্রতিযোগীতা আনবো দুজনের মধ্যে।এতে সাপও ম র বে..।”

“আর লাঠিও ভাঙবেনা।তাইতো?”

“হ্যাঁ।”

তোশার শ্বাস ভারী হয়ে এলো।সাদা মুখটা ছোট্ট চেরি টমেটোর মতোন রক্তিম হয়ে উঠেছে।মেদুর গালটি টেনে দিলো কবীর।

“রাগলে তোমাকে পেঁকে যাওয়া চেরি টমেটোর মতোন লাগে।”

“ওই মেয়েটির মতোন আমি না।পালাবো না।ঠিক ত্রিশ দিন পুরো করবো।”

“করো সমস্যা নেই।শেষে দেখা যাবে আমি জিতবো।তবে বেশী কষ্ট না পেলে পিছিয়ে যাওয়া উত্তম।”

তোশা রেগে কবরীরের শার্টের কলার হাতের মুঠোয় ভরে নিলো।

“কবীর শাহ ওভার কনফিডেন্স খুব খারাপ জিনিস।এটা কী আপনার আম্মু শিখায়নি?”

“আমার মা তো অনেক কিছু শিখিয়েছে।যেমন ছোট্ট বাচ্চাদের সঙ্গে লাগতে নেই।”

“ইশ,ছোট বাচ্চা তাইনা?আম্মু, আব্বুর রিলেশন কতো বছরে হয়েছিল মনে আছে?আমি জানি সতের তে।”

“তাই?তোমার বাবার বয়স কতো ছিল তখন জানো?ঠিক সতের।ক্লাসমেইট ছিল মায়ান-তাহিয়া।আমার বয়স কতো থার্টি সিক্স।মানানসই হলো।ঠিক ওদের জন্য আমি তোমার সাথে কঠোর হতে পারছিনা।”

খুব কান্না পাচ্ছে তোশার।ব্যক্তিটা কেন বুঝতে পারছেনা কিছু।হুট করে মেয়েটির কী হলো।নিজ থেকে কবীরের বুকে মাথা রাখলো।পুরুষটির গায়ের তীব্র সুগন্ধ প্রাণভরে নিলো সে।বুকের অস্থিরতা তো কমছেনা।কবীর নির্বিকার বসে আছে।মেয়েটির প্রতি অবাঞ্চিত অনুভূতি গুলো বেড়ে উঠুক তা সে চায়না।যা সমাজ,নীতি, সম্পর্ক বিরুদ্ধ সেসব অনুভূতি শুধু দুঃখ ও ভাঙন বয়ে আনে।

“শুনেন কবীর শাহ।আমি তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা সত্যিই আপনাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি।সরাসরি কখনো বলেছিলাম কথাটি?”

তোশার ছোট্ট ছিমছাম দেহের উষ্ণতায় বিভোর হয়ে থাকা কবীর বলল,

“এসব বাচ্চামো আবেগ,মায়া ছাড়া কিছু নয়।”

“আবেগ,মায়াও অনুভূতি।আর যেকোনো অনুভূতি ভাঙলে খুব কষ্ট হয়।”

তোশার এমন বড় ধরণের কথায় কবীর অবাক না হলেও ফোনের ওপাশে থাকা নারীটি ভীষণ অবাক হলো।এতো অনুভূতি নিয়ে কথাগুলো তার শেখানো নয়।তোশার নিজ থেকে বলা।ভালোবাসা চাওয়া পাওয়া মাঝেমধ্যে সত্যিই বড় বিচিত্র আচরণ করায় মানুষকে দিয়ে।

(***)

কবীরের কথাটি সত্য হলো।প্রতিযোগীতার দ্বিতীয় পর্বে খুব বাজেভাবে হেরে গেলো তোশা।যে মা তাকে বকেনা সে রে গে আজ অনেক কথা শুনিয়েছে।এমনকি লকেটটা আপাতত তাহিয়ার জিম্মায় আছে।কী অসহ্য যন্ত্রণা ভালোবাসায়।যেখানে বয়স না মিললে হবেনা।ত্বকের রঙে না মিললে হবেনা।টাকা পয়সায় না মিললে হবেনা।সম্পর্কে না মিললে হবেনা।তাহলে যে অনুভূতি না হওয়ার থাকে সেটা তৈরী হয় কেন?বড় বড় অশ্রুকণা মুছতে মুছতে কবীরের নাম্বারে ডায়াল করলো তোশা।ওপাশ থেকে রিসিভ হওয়ার পর কান্নার শব্দ শুনে আনমনা পুরুষালি শক্ত কণ্ঠে কবীর বলে উঠলো,

“হেরে গেলে তোশামণি।কাল আবারও কী তৃতীয় পর্বে সামিল হতে চাও?হেরে যাবে কিন্তু।”

তোশা কান্নারত কণ্ঠে জবাব দিলো,

“হেরে যাওয়ার জন্য হলেও আবার একই খেলা খেলবো।”

“আমাকে হারিয়ে ফেলার এতো ভয় তোশামণি?”

কবীর প্রশ্নটি করতে গিয়ে নিজেও কেমন অসহায় বোধ করলো।বুকের ভেতর থেকে শূন্য হয়ে আসছে তার।কেন অবাঞ্চিত মায়া জন্মে মানুষের?সেই প্রশ্নের জবাব নেই।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here