মিঠা_রোদ পর্ব:৬৮

3
287

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার ছেলের মন ভে’ঙে মেয়েকে এতো বয়স্ক কারো কাছে বিয়ে দিচ্ছো।কল্লোল তোশাকে ভালোবাসে বিষয়টা কী কখনো বুঝতে পারো নি?”

নিজ ভাবীর কথায় তাহিয়া একটু দমে গেলো।সে জানতো না কল্লোল তোশাকে ভালোবাসে।তাছাড়া জানলেও বিশেষ কোনো উপকার বোধহয় ছিলনা।মুচকি হেসে তাই বলল,

“কল্লোলের জন্য লাল টুকটুকে বউ আনবো আমরা ভাবী।এসব বলো না।দুটো বাচ্চার এই বিয়ের অনুষ্ঠানে মন খারাপ হবে।”

“বলিনি তো কখনো।আজ ক্ষো’ভ থেকে বললাম।হ্যাঁ কবীর দেখতে সুন্দর।তোশার সাথে ভালো মানায়।কিন্তু খেয়াল করেছো দুজনের শারীরিক গঠণ কতোটা ভিন্ন?কবীরকে লাগে দৈ’ত্য আর তোশাকে ছোট বাচ্চা।”

“ভাবী আমি তোশার মা। এসব আমার সামনে বলো না।কিন্তু হয়েছে কী?”

“কল্লোল কাল কাঁদছিলো।আজ তোশার গায়ের হলুদ।কিন্তু একবারও দেখেছো রুম থেকে বের হতে?”

“দেখিনি।আমি ওর সঙ্গে কথা বলে নিবো।”

“দরকার নেই।এতে আরো ছেলেটা কষ্ট পাবে।তুমি বরং নিজের মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করো।সন্তান তো আমারও আছে ভাই।তাই বলে যাই চাইবে তাই কেন দিবো?”

তাহিয়া নিস্তেজ কণ্ঠে জবাব দিলো,

“আমি তোশাকে দেখে আসছি।”

চট জলদি ভাবীর চোখের আড়ালে চলে গেলো সে।পুরো বাড়ীতে নানান ধরণের মেহমান এসেছে।সবার চোখেমুখে এক কথা হেসেখেলে বেড়াচ্ছে।তাহিয়াকে যেই একটু একা দেখছে ওমনি কথাটা বলে দিচ্ছে।বোধহয় সারাজীবন বলবে।এসব কিছু মলিন হয়ে যায় যখন হাতের কাজ ফেলে প্রত্যেকবার তোশার রুমে গিয়ে মেয়েটাকে দেখে সে।কী সুন্দর লাগছে।বিয়ের রঙ লেগেছে যে।তাহিয়ার কান্না পায়।তার এমন গায়ের হলুদ হয়েছিলো না।কিন্তু সকলে বিয়ের পর বলতো কাঁচা হলুদের রঙ ফুঁটেছিলো তার চেহারাতে।আজ তোশার বাবা হয়ে মায়ান হয়তোবা এ বাড়ীতে এসেছে।নিজের কর্তব্য পালন করে চলেছে।মায়ের অবাক করা দৃষ্টিতে তোশার দৃষ্টি মিললো।সে বান্ধুবীদের মধ্যে বসে থেকে শুধালো,

“কিছু বলবে আম্মু?”

“হ্যাঁ।একদম কম সাজবে কিন্ত।আমার মেয়ে এমনি সুন্দর।”

তোশা হাসলো।সে বুঝতে পারে এটা মায়ের দৃষ্টির কথা না।তাহিয়া বিনা বাক্য ব্যয় করে মেয়ের মুখে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে চলে গেলো।অপ্সরা দুদিন আগে থেকে তোশাদের বাড়ীতে এসেছে।সে হাঁফ ছাড়ার মতোন করে বলল,

“ভাগ্যিস তোদের বিয়ে আগে হয়েছে।তা নয় আমি এখনও সন্দেহে থাকতাম।তামাটে পুরুষটি পাছে মত বদলে ফেলে।”

“না না।সে কখনো নিজের ওয়াদা ভুলে না।”

“ভুলবে কীভাবে?একদম যুবতী পাচ্ছে।সেটা দেখতে হবে না?আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমাদের খুশি দেখে।”

তোশার দূর সম্পর্কের এক খালাতো বোন কথাটি বলল।বাক্যটিতে গভীর বিদ্রুপ বিদ্যমান।তোশা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

“আমাদের খুশি দারুণ না?সকলে অবাক হয়।”

“একদম খুব দারুণ।দেখছি তো।”

রুমের পরিবেশ বদলে গেলো।তোশা খেয়াল করছে তার দাদীর বাড়ী থেকে আগত মানুষের থেকে নানীর বাড়ীর লোকেরা বেশী কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।কবীর নিষেধ করে দিয়েছে।সকলের থেকে উঠে নিজের ফোনের সন্ধান করলো।কবীরের সাথে অনেকটা সময় কথা হয়না।স্ক্রিন অন করে দেখতে পেলো উল্লাস এসএমএস করেছে।সে প্যারিসে একটি ফ্যাশন শো উপলক্ষে চলে যাচ্ছে।বিয়েতে আসতে পারবেনা।তোশার আরো খারাপ লাগলো এতে।সে জানে তাহিয়া বিয়েতে রাজী হওয়ার পিছনে উল্লাসের অবদান সবচেয়ে বেশী।সে আহনাফকে নিয়ে তাহিয়ার কাছে গিয়েছিলো।এরপর কীভাবে মানিয়েছে তা কেউ বলে না।উল্লাসকে সারাজীবন মনে রাখবে তোশা।এলেমেলো উল্লাস।হয়তোবা তার ভিন্ন কাহিনী, ভিন্ন গল্প আছে।কিন্তু তোশার নিকট সে প্রাণবন্ত জীবন।

(***)

“আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

কান থেকে হেড ফোন খুলে নিলো কল্লোল।এখন সন্ধ্যার সময়।তোশাকে হলুদ দিতে কবীরের বাড়ী থেকে মানুষ এসেছে।সকলের সঙ্গতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো দেখে কল্লোল ছাদে একা বসে ছিলো।বৃষ্টিকে এখানে দেখে কৌতুহলী হয়ে বলল,

“হ্যাঁ কী বলবে?”

“আমি আপনাকে ভালোবাসি।প্লিজ বিয়েটা আঁটকান।আমি আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।কখনো না।প্লিজ সিনিয়র।”

বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে কল্লোলের হাত ধরে ফেললো।আলো অন্ধকারে চোখ অশ্রুত টলমল করছে।

“হাত ছেড়ে কথা বলো বৃষ্টি।বিয়েটা আমার নয়।তোশা ও…”

সম্বোধনে আঁটকে গেলো কল্লোল।বৃষ্টি শক্ত কণ্ঠে বলল,

“কী বলে ডাকবেন?ভাই,আঙকেল?নাকী দুলাভাই?বলুন তো আপনি।জানি জবাব নেই।দেখুন তো দুটো মানুষ নিজেদের খুশির জন্য সকলের মনে কষ্ট দিলো।”

“কোথায়?প্রায় সকলে তো খুশি।”

“না।আমি না।তাদের বিয়ে হয়ে গেলে আমাদের কিছু সম্ভব না।”

“আমাদের কী কিছু হওয়ার কথা ছিল?তুমি ভালোবাসি বললে।আমি বলিনি।”

“তো কী?এরেঞ্জ ম্যারেজ হতো।তাহিয়া আন্টি আমার মা কে বলেছিলো।সব শেষ হলো ওদের জন্য।আপনি বিয়েটা আঁটকান।”

“থামো বৃষ্টি।শান্ত হও।”

বৃষ্টির নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে।কল্লোল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“আমি তোশাকে ভালোবাসি।সেটা এখন থেকে না।যেদিন থেকে মন নারীদের চিনতে শুরু করেছে।তোশা ও কবীর স্যারের সাথে সম্পর্কের কথা আমি অনেক দিন ধরে জানি।কিন্তু কখনো কাওকে বলিনি।চাইলে আমি বহু ছলের আশ্রয় নিতে পারতাম।কিন্তু এতে সুফল কী বলো?তোশা আমাকে ভাই হিসেবে মানে।আমি নিজে সুখী হতে গিয়ে ওদের যেখানে সম্পর্কের নাম আছে।দুটো মানুষ একে অপরের প্রতি লয়্যাল সেটা কেন ভা’ঙ’বো?আর তোমার আমার সম্পর্ক হতে গেলে এখনও কোনো বাঁধা নেই।কিন্তু আমি নিজে আগাবো না।”

“কেন?”

“অনুভূতি থাকতে হয় বৃষ্টি।যা নেই।তাছাড়া আমার জন্য কেন তোশা কষ্ট পাবে?ভালোবাসা পেতে হবে এটা বৃথা কথা।তবে তখুনি জোর করে পাওয়া প্রযোজ্য হয় যখন ভালোবাসার মানুষের ক্ষ” তি হয়না এতে।”

“এভাবে সরাসরি আমাকে বললেন যে পছন্দ করেন না?যদি পরিবারের দিক থেকে হয়?”

“আমি বলতে পারবো না বৃষ্টি।অথবা ভাবতে চাইনা।তুমি নিচে চলে যাও।এমন কথা অন্য কাওকে বলো না।”

বৃষ্টির পুরোপুরি মন ভে”ঙে গেলো।সে যাকে পছন্দ করে এতোদিন নিজের বাবাতুল্য চাচার কাছ থেকে অসন্তুষ্টি পেয়েছে।ভালো বন্ধুকে হে”য় করেছে সে তার কথাগুলোর দাম অবধি দিতে নারাজ?এটা কী ভীষণ খারাপ নয়।অভিমানে, দুঃখে সে দ্রুত নিচে নেমে গেলো।পিছন ফিরলে দেখতে পেতো যে কল্লোল এতোক্ষণ নিজের উদারতার কথা বলছিলো সেই ব্যক্তিরও মন ভেঙেছে।কল্লোল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোশাকে সে হলুদ লাগাবেনা।থাক না অনুভূতি গুলো আড়ালে।নতুন মানুষ আসবে তখন আপনা-আপনি সব ঠিক হয়ে যাবে।

(***)

অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত হয়ে গেলো।তোশা আজ তাহিয়ার সাথে ঘুমিয়েছে।সারাদিন ক্লান্ত থাকার দরুণ তাহিয়া গভীর ঘুমে মগ্ন।ধীর পায়ে পাশ থেকে উঠে এলো তোশা।পাছে কেউ যদি জেগে যায়।সবকিছু ঠিকঠাক দেখে দ্রুত বাগানে চলে এলো।যেখানে সরু দন্ডায়মান গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কবীর।অন্ধকার ছিল না পরিবেশে।তাই তোশা সব লাইট অফ করে এসেছে।কবীর ইশারাতে তোশাকে ডাকলো।

“আপনি ইদানীং খুব মুভির হিরোদের মতোন রোমান্টিক হয়ে গিয়েছেন।হলুদের দিন দেখা করতে আসতে হয়।”

“দেখো লিটল চেরী।আমি মুভির হিরো নই।বরং সাধারণ মানুষ।বউকে দেখতে মন চাইলো এসেছি।ভয় নেই আমি হলুদ সঙ্গে আনিনি।ওসব লাগাবো না।”

“তো কেন এলেন?”

“নিজেদের ব্যাচেলর লাইফের শেষ মুহুর্ত একসাথে অতিবাহিত করার জন্য।হ্যাঁ মানছি আমার দ্বিতীয় বিয়ে।কিন্তু বিশ্বাস করো ইদানীং খুব ইয়াং লাগে নিজেকে।এসো আমার কাছে।”

কবীর হাত বাড়িয়ে দিলো তোশার জন্য।যুবতী তা মুহুর্তে আঁকড়ে ধরলো।দুজনের কপাল একত্রে মিলিত হলো।চাঁদের আলো তাদের ডুবিয়ে দিচ্ছে যেন।কবীর ফিসফিস করে বলল,

“যদি তোমার আগে পৃথিবী থেকে চলে গেলে যাই। তাহলে তুমি এসব স্মৃতি, আমার সাথে বিয়ে মনে রাখবে লিটল চেরী?ভুলে যাবেনা?”

“প্রশ্নের উত্তর শোনার জন্য চিরকাল থেকে যান আমার নিকট কবীর শাহ।”

“আমার মনে হয় খুব বেশীদিন হবেনা একসাথে থাকা।”

“একথা কেন?আপনি সুস্থ সবল বাজপাখি।এসব ভুলে যান।”

তোশাকে বুকে আগলে রেখে আকাশ পানে তাঁকিয়ে থাকে দুজনে। গাঁদা ফুলের গন্ধে ভরে গিয়েছে পরিবেশ।শীতল সমীরণ ছুঁয়ে দিতে গিয়েও ভয় পাচ্ছে তাদের।পাছে বেলাডোনা ও তার বাজপাখির প্রেমেতে ব্যাঘাত ঘটে।

চলবে।

3 COMMENTS

  1. Ege defference love stroy ও এত সুন্দর হয় জানতাম না plz পরের পার্ট তো একটু দ্রুত দিয়েন,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here