#মায়া
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-১৮(অন্তিম পর্ব)
শুভ্রা সীমান্তের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে বারান্দায়। সীমান্তের মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। শুভ্রাকে খুঁজতে খুঁজতে সে অনেকটা পাগল হয়ে গিয়েছিলো। তারপর সেই রহস্যময় বাড়িতে গিয়েছিলো সে ছুটতে ছুটতে। আর সেখানেই খুঁজে পেয়েছিলো তার প্রিয়তমাকে আলিফের সাথে।
এদিকে আলিফও চুপচাপ বসে আছে সেই বাড়ির সামনে। তার ভালোও লাগছে সীমান্তের নন্দিতার প্রতি ভালোবাসা দেখে, আবার খারাপও লাগছে এইটা ভেবে নন্দিতা কখনোই তার হবে না।
বাড়ির ভেতরে থাকা কিছু শুকনো মুখ আলিফকে পড়তে পারে এখন। আলিফ আর তাদের অবস্থা অনেকটা একই। কেউই নন্দিতার কাছে আসতে পারবে না কখনো। দূর থেকে ভালোবাসা যে কতোটা কষ্ট তারা হয়তো সারাজীবন তা অনুভব করে যাবে।
তাদের মধ্যে শুধু একটাই পার্থক্য আলিফ বেঁচে আছে, আর তারা মৃত। আলিফ তবুও তো পারবে নন্দিতার সামনে আসতে মানুষের বেশে। কিন্তু তারা তো সেটাও পারবে না।
গীতের শেফাকে অনেক ভালো লেগেছিলো। প্রথম দিন থেকেই সে শেফার সাথে খেলাধুলা করতো। শেফা যতোদিন ছিলো, তার হাসিতে অদৃশ্য আত্মাগুলো অনেকটাই শান্তিতে ছিলো। কিন্তু এখন বাড়িটি আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। ভালো শক্তির প্রভাব কমে যাচ্ছে, আর খারাপ শক্তি বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
চন্দ্রগ্রহণের সময় খারাপ শক্তির প্রভাব অনেক বেড়ে যায়, তাই সেদিন আলিফের সামনেই দারোয়ান চাচা খারাপ জ্বিনের হাতে দেহ ত্যাগ করে। কিন্তু আলিফ কিছুই করতে পারে নি। তাই এখনো তার ভেতর অপরাধবোধ কাজ করছে। সে মনুষ্যজাতির সাথে বহুদিন ধরেই আছে, যার ফলে তার নিকট আত্মীয়দের সাথে তার দেখা হয় না।
তার একমাত্র দায়িত্ব যতোদিন সবুজের আত্মার মুক্তি হবে না সে ততোদিন নন্দিতার সাথেই থাকবে। তাকে যদি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে হয়, তবে সে তাই করবে।
ইদানীং শয়তান সাক্কারের উপর খুবই ক্ষিপ্ত। কারণ সাক্কার ছেলের প্রেমে অন্ধ। সে মাঝে মাঝে ভুলভাল কাজ করে ফেলে, যার ফলে শয়তানের অনেক পরিকল্পনা নষ্ট হয়ে যায়। আর মানুষ দিন দিন খুবই সচেতন হয়ে পড়ছে। তারা সাক্কারের ফাঁদে পা দেয় না আর। তার উপর সাক্কার যাদের টার্গেট করে রেখেছে, আলিফ তাদের আগেই সতর্ক করে দেয়, যার কারণে সাক্কারের কালো জাদু আর কারো উপরই কাজ করে না।
কয়েকটা মাস কেটে গেলো। শুভ্রা রাত দিন শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে চাই, তার পরিবারের লোকেরা যাতে ভালো থাকে আর সাক্কারের খারাপ প্রভাব যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে যায় তার ও তার পরিবারের উপর থেকে।
হঠাৎ একদিন আলিফ হুট করে শুভ্রা ও সীমান্তের সাথে দেখা করতে চলে আসে।
সীমান্ত: তুমি বাসায় কেন এসেছো?
আলিফ: ক্ষমা করবেন, আমি নন্দিতা ও আপনাকে একটা খবর দিতে এসেছি।
শুভ্রা সীমান্তের হাত চেপে ধরলো।
সীমান্ত: আসলে বাচ্চাদের কিছু একটা হয়ে গেলে?
আলিফ: আমাকে ভয় পাবেন না। আমি কোনো ক্ষতি করবো না কারো।
শুভ্রা: কি হয়েছে বলো?
আলিফ: সাক্কার আর বেঁচে নেই।
শুভ্রা আর সীমান্ত কথাটি শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
আলিফ: সাক্কারের উপর শয়তান ক্ষেপে ছিলো। শয়তানই সাক্কারকে মেরে ফেলেছে। তার লাশ শহীদপুর গ্রামের একটি খালে পাওয়া গেছে।
শুভ্রা: সেটিই সাক্কার কিভাবে বুঝলে?
আলিফ: কিছু জ্বিন বাধ্য হয়ে সাক্কারের গোলামী করতো। তারাই জানিয়েছে।
শয়তান মানুষের শত্রু। এইটা এক অদৃশ্য সত্তা। এটি যেকোনো রূপে মানুষের সামনে আসে, আর মানুষকে খারাপ কাজ করতে বাধ্য করে। মানুষ যতোই তাকে উপরে উঠায়, সে ততোই মানুষকে নিচে নামিয়ে দেয়। এই শয়তান সাক্কারকে মানুষ খুন করতে বাধ্য করেছিলো। সে একজন হিংস্র মানুষে পরিণত হয়েছে। আর আজ তার হিংস্রতা তাকে শেষ করে দিয়েছে। এখন শয়তান হয়তো নতুন কোনো সাক্কারকে বানিয়ে ফেলেছে তার গোলাম।
এদিকে সাক্কারের মৃত্যুর পর সেই গ্রামে থাকা খারাপ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। খারাপ জ্বিনদেরও বন্দি করে ফেলা হয়। তাদের জ্বিনদের রাজ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আলিফও এখন চিন্তা মুক্ত। সবুজের আত্মার শক্তিটাও কমে যাবে খুব শীঘ্রই।
সবুজের আত্মাকে দুর্বল করার জন্য গ্রামে গ্রামে কোরআন খতম দেওয়া হয়। এরপর একদিন ইমাম সাহেব আলিফকে বললেন, এখন সবুজকে পুরোপুরি মুক্তি দেওয়ার জন্য, তার অবশিষ্টাংশটুকু নিয়ম কানুন মেনে মাটি চাপা দিতে হবে। কারণ সেই ঘরে এখনো সবুজের অবশিষ্টাংশ আছে।
তার আগেই আলিফ, নন্দিতা ও তার স্বামী-সন্তানদের নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়, যাতে সবুজের আত্মার প্রভাবটাও কোনো ক্ষতি করতে না পারে তাদের।
এরপর কিছু হুজুর সেই বাড়িটিতে যায় আলিফকে নিয়ে। তারপর বন্ধ সিঁড়িটির তালা খুলে দেয়। ধীরে ধীরে তারা দরজাটির কাছে যায়। এরপর দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে। এটি সেই দরজা যেটি রোজ শুভ্রার স্বপ্নে আসতো। দরজাটি খোলার পর একটা নিচু সিঁড়ি নেমে যায় নিচে। তারা অন্ধকার ঘরটিতে ঢুকার সাথে সাথেই খুব উদ্ভট একটা গন্ধ পায়। বিশ্রী গন্ধে গা গুলিয়ে আসলো সবার। তবুও অনেক কষ্টে তারা ভেতরে ঢুকলো। আলিফ আলো জ্বালালো। ঘরটিতে রক্তের ছাপ পুরো দেয়ালে, সেই রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। রক্তমাখা দেয়ালে একটাই নাম লেখা আছে- ‘নন্দিতা’।
ঘরটিতে পা দেওয়া যাচ্ছে না। চারপাশে পোকামাকড় আর মাকড়শার জালে ভরে গেছে। খুব সাবধানে তারা সবুজের হাড়গুলো বের করে আনলো। তারপর সেটিকে মাটি চাপা দিয়ে দিলো।
এরপর আলিফ সিঁড়ি ঘরটি পরিষ্কার করে দেয়।
বাড়িটি এখন নতুনভাবে সাজানো হলো। নন্দিতার ঘরটিও আলিফ নিজ হাতে সাজালো। গ্রামে মানুষ আবার আসতে শুরু করলো। আলো জ্বলতে শুরু করলো প্রতিটি বাড়িতে। এখন দোকানপাট রাত বারোটার পরও খোলা থাকে। সূর্যগ্রহণ চন্দ্রগ্রহণে আর নরবলি হয় না। সবাই এখন সুখেই আছে।
আলিফেরও এখন যাওয়ার সময় হয়েছে। সে অনেকটা বছর তো ছিলোই এই বাড়িতে।
সে যাওয়ার আগে নন্দিতাকে জানিয়েছে, তার আপনজনের শেষ ইচ্ছে, বাড়ির মেয়ে যাতে বাড়িতেই থাকে। নন্দিতা ফেলতে পারে নি তার কাছের মানুষের শেষ ইচ্ছেটা। তাই সীমান্ত, শিশির-শেফা ও রোকেয়া হোসেনকে নিয়ে নন্দিতা তার বাড়িতে উঠে আসে।
নন্দিতা জানে সবুজের আত্মার মুক্তির পর তার পরিবারও মুক্তি পেয়েছে। এখন হয়তো তারা কখনো আর কল্পনাতেও তার কাছে ফিরে আসবে না।
কয়েক সপ্তাহ পর–
সীমান্ত তার চাকরী ফিরে পেয়েছে। শিশিরকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। বাড়িতে শেফা আর রোকেয়া হোসেনকে নিয়ে নন্দিতার ভালোই দিন কেটে যায়। সে এখন শুভ্রা নেই। তার আপনজনদের দেওয়া পরিচয়, তার আসল পরিচয়৷ নন্দিতা শাহরিয়ার নদী, শাহরিয়ার খানের মেয়ে।
অফিস থেকে ফিরেই সীমান্ত খুব ক্লান্ত। ঘুমটা তার আজকাল বেশি পায়। খাওয়া দাওয়া করেই আজ সবাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছে। সীমান্ত আর নন্দিতা এখন নন্দিতার ঘরটিতেই থাকে৷ রোকেয়া হোসেন শিশির আর শেফাকে নিয়ে রীতিকার ঘরে থাকেন, যেই ঘরটিতে শুভ্রা স্বামী সন্তানদের নিয়ে প্রথম উঠেছিলো।
সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। নন্দিতার কেমন যেন ছটফট লাগছে, তাই সে করিডরে হাঁটছিলো। হঠাৎ শীতল হাওয়া এসে তার চুলগুলো নাড়িয়ে গেলো। নন্দিতা খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। এই শীতল স্পর্শ কার? আলিফের? নাকি তার মায়ের? কারণ মা আর আলিফ যখন আশেপাশে থাকতো তখন এই স্পর্শ সে অনুভব করতো।
খুব অস্বস্তি লাগছিলো নন্দিতার। তাই সে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লো।
হঠাৎ দেয়ালে খুব জোরে জোরে শব্দ হচ্ছে, সেই শব্দে নন্দিতার ঘুম ভেঙে যায়। মনে হচ্ছে যেন কেউ মাথা ঠুকছে দেয়ালে। ভয়ে নন্দিতা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো। বুকটা ধকধক করছো তার। ঘড়িতে দেখলো রাত সাড়ে তিনটা।
শব্দটি পাশের ঘর থেকেই আসছে, সেই সিঁড়ি ঘরটি থেকে।
সীমান্তকে কয়েক বার ডাকলে সে৷ কিন্তু সে গভীর ঘুমে মগ্ন।
অনেকটা সাহস নিয়ে দরজার কাছে গেল সে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সব ঠিকঠাক আছে। একবার গিয়ে বাচ্চাদের দেখে আসলো। তারাও গভীর ঘুমে মগ্ন। শব্দটা এখনও আসছে। সে দোয়া পড়তে পড়তে সিঁড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। সিঁড়ি ঘরটি খোলায় ছিল। নন্দিতা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে লাগলো। এরপর দরজাটির কাছে আসলো। তার হাতের স্পর্শে দরজাটি ঠাস করে খুলে গেল। সাথে সাথেই নন্দিতার বুকটা কেঁপে উঠলো।
সে কোন শব্দ করতে পারছে না। কথা আটকে গেছে গলায়। সাহস নিয়ে ঘরটিতে ঢুকলো। সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো ধীরে ধীরে। ঘরটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। সে মোবাইলের আলো জ্বালালো। আলোটা পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই আলোতে নন্দিতা দেখলো, একটা ছেলে একপাশে জড়সড় হয়ে বসে আছে। তার হাত পা কাপছে। মুখ দিয়ে সে উদ্ভট সব শব্দ উচ্চারণ করছে। নন্দিতা ধীর পায়ে সেই ছেলেটির কাছে গেলো।
কাঁপা কন্ঠে বললো,
নন্দিতা: ক…..ক…..কে?
ছেলেটি মাথা তুলে নন্দিতার দিকে তাকালো। চোখগুলো কালো ঘুটঘুটে। মুখে রক্তের দাগ।
নন্দিতা কয়েক পা পিছিয়ে গেল।
ছেলেটি উঠে দাঁড়ালো। নন্দিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
-আমায় চিনতে পেরেছো? আমি সবুজ। আমি যেতে পারি নি তোমার মায়া ছেড়ে। তোমার সুর আমায় ফিরিয়ে এনেছে আবার।
মুহূর্তেই ছেলেটি কালো ধোঁয়ায় পরিণত হয়ে নন্দিতার দিকে ধেয়ে আসলো। আর নন্দিতা চিৎকার দিয়ে উঠলো।
সীমান্ত চিৎকার শুনে হুড়মুড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো নন্দিতা কাঁপছে। সীমান্ত শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরলো।
সীমান্ত: শুভ্রা, কি হয়েছে তোমার? এই শুভ্রা, কথা বলো।
নন্দিতা চোখ খুলে সীমান্তকে দেখে দেহে প্রাণ ফিরে পেলো।
নন্দিতা: দুঃস্বপ্ন ছিলো।
সীমান্ত: এখনো কি সেই স্বপ্ন?
নন্দিতা: তুমি চিন্তা করো না। কিছু হবে না আমার। এইটা শুধুই স্বপ্ন।
সীমান্তকে আশ্বাস দিয়ে নন্দিতা উঠে পড়লো বিছানা ছেড়ে।
ফজরের আজান ভেসে আসছে। ফ্রেশ হয়ে নন্দিতা সেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে, যেই বারান্দায় দাঁড়াতে তার ভালো লাগতো। চোখ বন্ধ করে মৃদু হাওয়া অনুভব করছে সে। আর ভাবছে, এটা শুধুই স্বপ্ন আর কিছুই না।
হঠাৎ মনে হলো কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। শীতল স্পর্শটা আরো কাঁপিয়ে তুলছে নন্দিতাকে। পাশ ফিরে দেখলো কেউ নেই।
এক রাশ ভীতি নিয়ে রুমে এলো শিশির আর শেফাকে দেখতে। বের হওয়ার সময় তার চোখ পড়লো সেই ইজি চেয়ারটির দিকে। সেটি দুলছে খুব ধীরে ধীরে। মনে হচ্ছে কেউ বসে আছে সেই চেয়ারে। কাছে যাওয়ার সাহস হলো না নন্দিতার। অবশ লাগছে তার শরীর। দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো সে। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে হাসিমাখা মুখে।
-তোকে খুব মনে পড়ছিলো। তোর মায়া ছাড়তে পারি নি আমরা। আর গীত তো শেফাকে ছাড়া থাকবেই না। আমরা তাই ফিরে এসেছি আবার।
নন্দিতা চোখ খুলে তাকালো সামনে। কেউ নেই কোথাও। ইজি চেয়ারটি এখন আরো জোরে জোরে দুলছে। বোঝায় যাচ্ছে কেউ চেয়ার ছেড়ে উঠেছে তাই এভাবে দুলছে।
নন্দিতা শেফার কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। পাশে তার ড্রয়িং খাতাটি ছিলো। কয়েকদিন আগেই কিনে এনেছিলো সীমান্ত। তা দেখেই শেফা অনেক খুশি হয়েছিলো। খাতাটি পেয়ে আঁকতে বসে যায় শেফা।
খাতাটি খুলে দেখলো নন্দিতা। একটা ফ্যামিলির ছবি এঁকেছে তার মেয়ে। নিচে লেখা শেফার ফ্যামিলি।
এতো সুন্দর করে ছবি কি তার মেয়ে আঁকতে পারবে?
সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠলে নন্দিতা শিশির ও শেফাকে ছবিটি দেখায়।
শিশির জানায় সে কোনো ছবি আঁকে নি।
কিন্তু শেফা জানায় ছবিটি গীত এঁকেছে।
নন্দিতা: তুমি গীতকে চেনো?
শেফা মাথা নাড়িয়ে বললো, হ্যাঁ, ছোত্ত তালামনি।
নন্দিতা: কে বলেছে?
শেফা: তালামনি বলেচে।
নন্দিতা: এই ছবিটিতে এরা কারা?
শেফা যা বললো তার অর্থ ছবিতে যারা আছে তারা হলো তার বড় নানা-নানু, নানা-নানু, মামা-মামী, খালামনি আর বাবা-মা।
কোণায় আরো একটু দূরে আরেকজনের ছবি এঁকেছে সে, এইটা কে?
শেফা ভাঙা স্বরে বললো, আলিফ।
নন্দিতা হাসলো।
মনে পড়লো আলিফের একটি কথা,
আলিফ: আমি ততোদিন থাকবো, যতোদিন সবুজের আত্মার মুক্তি হবে না। আর আমি সেই আত্মাকে তোমার আশেপাশে কখনো আসতে দেবো না। সে তোমার ক্ষতি করতে পারবে না কোনোদিন।
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে নন্দিতা সীমান্তের নিয়ে আসা হারমোনিয়ামে হাত দিলো আর মনে মনে বললো,
আমি পারি নি এই সংগীতের মায়া ছাড়তে, তারাও পারে নি আমার মায়া ছাড়তে। মায়ার বাঁধন অনেক জটিল, যেই জটিলতার সমাধান কখনোই হয় না।
সম্পর্কে মায়া থাকবেই, সেই সম্পর্ক হোক খারাপ বা অসুস্থ, হোক বা সুন্দর ও পবিত্র।
নন্দিতা এখন মন থেকে চাই, থাকুক আলিফ, থাকুক তার আপন মানুষগুলো তার পাশে। তারা তো পাশেই আছে, চোখ বন্ধ করে তাদের রোজ কল্পনায় আনবে নন্দিতা।
আর সবুজ সে শুধু মিথ্যে স্বপ্ন হয়ে আসবে, যে স্বপ্ন ঘুম ভাঙলেই হারিয়ে যায়। বাস্তবে যার কোনো স্থান নেই।
#সমাপ্তি
(ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন লাগলো জানাবেন)