অস্তিত্ব,পর্ব:১

0
2370

ঘড়ির কাটা সাতটার ঘর ছুঁইছুঁই। আজ প্রাইভেট পড়তে পারবে কি না তা নিয়ে ওর যথেষ্ট চিন্তা হচ্ছে। সাতটা পনেরো থেকে পড়ানো শুরু হয়।এদিকে অনবরত ফোন বেজেই যাচ্ছে তার।ব্যাগটা নিয়ে আধাদৌড়ে বাসা থেকে রাস্তায় দাড়ালো সে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। অস্থির চিত্তে বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে সে।আবারও ফোনটা বেজে উঠল তার।এদিকে গাড়িও পেয়ে গেছে সে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বাজখাই গলায় চেচিয়ে উঠলো মুহিন,

“কিরে মায়া,আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো।বেচে আছিস নাকি মারা গেছিস।মারা গেলে বল এম্বুলেন্স পাঠাই।”

দ্যাখ মুহিন। আমি ইচ্ছে করে লেট করিনি।আর এতক্ষণ যখন অপেক্ষা করতে পারছিস তাইলে এই দুইমিনিট দাড়াতে পারবিনা।কোন লেভেলের মন্ত্রী তুই। আর তোর কি কখনো দেরি হয়না।

একদফা ঝগড়া তাদের ফোনেই হয়ে গেল।মায়া যতক্ষণ এ পৌছালো ততক্ষণে সাড়ে সাতটা বাজে।বাসস্টপ এ নেমে অনুসন্ধানী চোখে ওদের খুজতে থাকে।ওই তো যাত্রী ছাউনিতে ওরা বসে আছে।সাবধানে রাস্তা পার হয়ে ওদের কাছে গেলো মায়া।চারজনের ছোট্ট কাফেলার সামনে দাড়ালো সে। ইচ্ছে মতো কথা শুনাচ্ছে মুহিন।তার ভাষ্যমতে মায়ার মতো অলস আর কান্ডঙ্গানহীন মেয়ে দুনিয়া ছেকে দুটো পাওয়া যাবে না।ওকে ধরে দুবেলা ম্যানহলে চুবানো উচিত।

মুহিনের ননস্টপ বকবকানিতে বিরক্ত হয় আশা।প্রায়
সারারাত ধরে সে জেগে ছিলো।ঘুম হয়নি।আবার এসেও পড়তে পারল হয়।মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেলো তার।আশার গায়ের রং একেবারে ফর্সা। যাকে বলে দুধে আলতা। লম্বায় আর শরীর স্বাস্থ্যে একদম পারফেক্ট সে।ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়।শান্তার হাতে থাকা বায়োলজির নোটটা ছো মেরে নিয়ে ব্যাগে রাখতে রাখতে মুহিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

“এখন থাম।অনেক হইছে।আর ভালো লাগছে না। আর যদি না থামিস এই কোদাল দিয়ে তোর মাথা ফাটায় দিবো।”
আশার কথায় সবাই ওর দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যিই ওর হাতে কোদাল। বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে ওঠে শান্তা, “একি আশা তুই কোদাল কই পাইলি।আগে তো দেখি নাই”।
শান্তার এই বোকা বোকা কথায় মেজাজটা আরও বিগড়ে যায় আশার।এই মেয়েটা অলওয়েজ ভুলভাল কথা বলে।বিরক্ত ভরা কন্ঠে বলে ওঠে আশা,” পান্তার মা তুই জানিস না।ওই যে ওখানে আইসিটি ভবন আর হাইটেক পার্ক হচ্ছে ওখানে মাটিকাটার কাজ নিয়েছি রোজ তিন’শ টাকা।”
এরই মাঝে ফোনটা বেজে ওঠে ইমরান এর। ফোনস্কীনে বাংলা ফন্টে লেখা “রোজা”ভেসে আছে।হালকা গলায় দুএকটা কথা বলে ফোনটা কেটে দেয় ইমরান।আশা আর মুহিন রাগে ফেটে যাচ্ছে। চশমাটা ঠিক করে পড়ে স্কার্ফটা ঠিক করতে করতে বলে ওঠে শান্তা, যা হইছে হইছে। এখন কি করবি। বাসায় যাবি নাকি অন্য কিছু ভাবনা আছে।
ইমরান এর কথায় সবাই রাস্তায় নেমে পড়ে কারন ওদের জন্য আরেক চাতক পাখি বসে আছে।কখন ওরা নামক বৃষ্টির দেখা পাবে।

#অস্তিত্ব
#বনলতা
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here