মায়া,পর্ব:১৭

0
1433

#মায়া
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব: ১৭

অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি রাত, যদিও আকাশে একটি চাঁদের স্থান হয়েছে। কিন্তু সেই আলো মানুষের মনের ভয় দূর করতে পারছে না।

সাক্কার পলাতক। পুলিশ তাকে এখনো খুঁজছে। পত্রিকায় তার ছবি ছাপানো হয়েছে। শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘সাক্কার, একজন মারাত্মক খুনী, যার হাতে প্রাণ দিয়েছে শহীদপুর গ্রামের হাজারো মানুষ।

পত্রিকায় ছাপানোর পর থেকে মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি হয়েছে, কারণ সবাই তার খারাপ শক্তি চর্চার ব্যাপারে জেনে গেছে। কয়েক পাড়ার মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলেও গেছে। আর তাদের ভীতির একমাত্র কারণ ছিলো সাক্কার হয়তো প্রতিশোধ নিতে আবার আসবে।

দাদাজানের কপালে চিন্তার রেখা। বাড়ির সবাই আতংকে আছে। যদিও নন্দিতাকে শহরে পাঠিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তবুও যদি সাক্কার নন্দিতার খোঁজ পায়?

দাদাজানের রক্ষণশীলতার কারণে তার বাড়ির মেয়েদের এখনো গ্রামের মানুষজন চেনে না। আর তারা বাইরে গেলে মুখ ঢেকে বের হতো। শুধু নন্দিতা একটু ব্যতিক্রম ছিলো। যদিও খুব বড় গন্ডিতে তাকে পা ফেলতে হয় নি। বাড়ির সীমানায় ছিলো তার উন্মুক্ত ঘুরাঘুরি করার শেষ গন্ডি।
একমাত্র মেয়ে লিপির সাথে যা হয়েছে তা বাড়ির বাকী মেয়েদের সাথে দ্বিতীয়বার ঘটতে দিতে পারেন না তাদের দাদাজান। তাই তিনি অনেক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি তার দুই নাতিকে বাইরের দেশে পড়াশুনার জন্য পাঠিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু নাতনিদের হাতের বাইরে যেতে দেন নি।

রীত আর তিথীর কলেজ পড়াশুনা শহরে হয়। সেখানেই মেয়েদের হোস্টেলে ছিলো তারা দুইজন। কিন্তু নদী তখনো স্কুলেই পড়তো।

গ্রামে মেয়েদের আলাদা স্কুল ছিলো, আর নন্দিতাকে সেখানেই ভর্তি করানো হয়েছিলো, তবে সে কখনো তার পরিচয় প্রকাশ করে নি। কারণ তাদের পরিবারের সাথে শত্রুতা আছে এক পক্ষের, সেটি তাদের ছোটবেলা থেকেই শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্কুলে বিশেষ কোনো বান্ধবী তার হয় নি। বরং স্কুল তার ভালোই লাগতো না। কারণ সেখানেও তার নিরাপত্তার জন্য কেউ না কেউ থাকতোই। নদীর নিজেকে স্বাধীন মনে হতো শুধুই তার ঘরে। কারণ সেখানেই তাকে পাহারা দেওয়ার মতো কেউ থাকতো না।

শহরে যাওয়ার পর তার অনেক ভালো লাগছিলো। অনেক বান্ধবীও জুটিয়েছে সে৷

এদিকে সাক্কার যখন জানতে পারে তার ছেলে আর বেঁচে নেই, আর তার মৃত্যুর কারণ তার শত্রুর নাতনি নদী। তখন সে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে নি। সাক্কারের গুরু তাকে বলেছিলো, তার একমাত্র ছেলে সবুজের আত্মা বন্দি হয়ে আছে একটি ঘরে৷ যেই ঘরে কোনো খারাপ শক্তির প্রবেশ সম্ভব না। তার আত্মার মুক্তির জন্য সেই মেয়েটিকে হত্যা করতে হবে যেই মেয়েটির জন্য তার প্রাণ চলে গেছে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে সেই ঘরটি খুঁজে বের করতে হবে। আর সেইঘরে একজন সাধারণ মানুষ, যার উপর কোনো খারাপ শক্তির প্রভাব নেই, সে যদি প্রবেশ করতে পারে, তবে সবুজের আত্মা সেই মানুষটির শরীরের সাহায্যে বের হতে পারবে সেই ঘর ছেড়ে। আর পাশাপাশি প্রতি অমাবস্যায় একজন নরবলি দিতে হবে সবুজের আত্মাকে শক্তিশালী করার জন্য।

কিন্তু সাক্কার জানতে পারে নি নন্দিতাকে শহরে পাঠানো হয়েছে। তাই সে নন্দিতা ও তার পরিবারকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। আর সে সুযোগও পেয়ে যায়।
রীতিকার মেহেদী রাতে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছিলো। এই সুযোগে সাক্কার তার শত্রুর পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

আলিফ সেদিন বাড়িতে ছিলো না। রীতিকার বিয়ে উপলক্ষে নন্দিতা ছুটি নিয়ে গ্রামে আসছে, তাই সে নন্দিতাকে আনতে গিয়েছিলো স্টেশনে।

কিন্তু নন্দিতা ঠিক সময়ে বাস ধরতে পারে নি। যার ফলে সে রাতেই একটি গাড়ি ভাড়া করে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত নয়টায় শুরু সেই বিভীষিকা। মুখোশধারী কিছু লোক চোখের পলকে ঝাপিয়ে পড়ে বাড়ির পাহারাদারদের উপর। ঘটনার আকস্মিকতার ফলে কারোরই প্রস্তুতি ছিলো না শত্রুদের প্রতিহত করার।

দারোয়ান চাচা তার আপন ভাইকে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখে, তাড়াতাড়ি মাদ্রাসায় এসে সাহায্য চান। সেই সূত্রে আলিফের কাছে পৌঁছে যায় খবর। সে বাড়ি পৌঁছে দেখলো অনেকেই রীতিমতো মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। আর অনেকে নিজের জীবন বাঁচাতে লুকিয়ে গেছে বাড়ির বিভিন্ন কোণায়। দাদাজানের শরীরে ছুরিঘাত করা হয়েছিলো।

তিনি নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে আলিফকে বললেন, দাদাজান: নন্দিতার চিহ্ন আমি মিটিয়ে দিয়েছি। নন্দিতার ছবি আর তার পরিচয় সব শেষ করে দিয়েছি। নন্দিতার থাকার ঘরটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলাম। এখনো হয়তো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয় নি। তাই ভয় লাগছে আলিফ, তাদের হাতে যদি কিছু লেগে যায়? নন্দিতার ফোন এসেছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ফিরবে। তুমি ওকে আসতে দিও না। সে আর কখনোই এই বাড়ি যাতে না ফেরে। তুমি চলে যাও নন্দিতার কাছে। এখানে থেকে লাভ নেই। যাও নন্দিতার কাছে।

দাদাজান আরো কিছু বলতেন, তাকে হয়তো বাঁচানোও যেতো। কিন্তু হঠাৎ মুখোশধারী একজন দাদাজানের দিকে দৌঁড়ে এসে তার গলায় ছুরিকাঘাত করে। আর তখনই গলগল করে রক্ত বের হতে থাকে তার গলা বেয়ে।

আলিফ এরপর আর পেছনে ফিরে তাকায় নি। নন্দিতাকে আটকানোর জন্য বেরিয়ে পড়লো সেই বাড়ি থেকে। কিন্তু সে পৌঁছানোর আগেই নন্দিতার গাড়ি একটি মাইক্রোবাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্রিজ ভেঙে নিচে পড়ে যায়। নন্দিতা হয়তো সেদিনই তার পরিবারের সাথে অন্য পাড়ে চলে যেতো, কিন্তু আলিফ নন্দিতাকে বাঁচাতে পেরেছিলো। সে নন্দিতার রক্তাক্ত শরীর একটি ঢিপির উপর রাখলো। যেই গাড়িতে নন্দিতা ছিলো সেটিতে আগুন লেগে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তেই রোকেয়া হোসেন কিছু মানুষের সাহায্য নিয়ে নন্দিতাকে হাস্পাতালে নিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নন্দিতার ব্যাগটি উদ্ধার করে তার পরিচয়পত্রটি অক্ষত পায়, আর রোকেয়া হোসেনকে দিয়ে যায়।
নন্দিতা সেদিন রাতেই মারা গিয়েছিলো সবার দৃষ্টিতে। একমাত্র আলিফ ছাড়া কেউ জানতো না যে নন্দিতা বেঁচে আছে।

নন্দিতার জ্ঞান ফেরা অবধি আলিফ তার মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। এক সেকেন্ডের জন্যও আড়াল করে নি তাকে। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারলো নন্দিতার অতীতের কিছুই মনে নেই, তখনই সে নিশ্চিন্ত হলো। কারণ নন্দিতা আর কখনোই গ্রামে ফিরবে না। তবুও সে নন্দিতাকে ফেলে যায় নি। নন্দিতার আশেপাশে থাকতো। কিন্তু যেদিন সীমান্ত আর নন্দিতার বিয়ে হয়ে যায়, সেদিনের পর আলিফকে নন্দিতার আশেপাশে দেখা যায় নি আর। কিন্তু দায়িত্ব তো ফেলে দেওয়া যায় না। সাক্কারের কাছ থেকে এখনো নন্দিতা মুক্ত হয় নি। তাই দূর থেকেই আলিফ নন্দিতার দেখাশুনা করে।

এরই মধ্যে পত্রিকায় ছাপানো হয়, শহীদপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাড়ির সদস্যদের খুন করা হয়েছে। সবার লাশ শনাক্ত করা হয়েছে, শুধু একটি লাশ পাওয়া যায় নি। আর সেটি ছিলো নন্দিতা। সেইরাতে নন্দিতা বাড়িতেই ফিরে নি, তার লাশ কোথা থেকে আসবে?

এদিকে গ্রামের মানুষ ধারণা করে নেয়, খুনী সাক্কার ছাড়া আর কেউ নয়। আর সে-ই লাশটি নিয়ে গেছে খারাপ শক্তির প্রয়োগ করে তার ছেলেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরই সাক্কার জানতে পেরেছিলো সে যাকে মারতে গিয়েছিলো সে এখনো বেঁচে আছে। কারণ সে তো কোনো লাশ সরিয়ে ফেলে নি। আর প্রতিটি সদস্যের মৃত্যু নিশ্চিত করেই সে তার দল নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো সেই বাড়ি থেকে। পরবর্তীতে তার গুরু বিভিন্ন তন্ত্রসাধনা করে তাকে জানায়, নন্দিতা বেঁচে আছে। আর খুব শীঘ্রই সে বিয়ে করবে এবং যাকে বিয়ে করবে সেই ছেলেটি দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এই শহরেই তাদের অবস্থান।

এরপর থেকেই সাক্কার নন্দিতার স্বামীর খোঁজে লেগে পড়ে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত লোকেদের উপর কালো জাদু করতে থাকে। আর তার স্ত্রীদের নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে তাদের উপর তন্ত্রসাধনা করতে থাকে। কিন্তু কেউ সেই নন্দিতা হয় না। নন্দিতার সেই গানের মোহনীয় সুর সে কারো কন্ঠে পায় নি যেই সুরের মায়ায় পড়েছিলো সবুজ। সেই রূপের ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো নারীই এখনো সাক্কারের সামনে আসে নি।

কিন্তু ঘটনাচক্রে যদি কোনো স্ত্রীর বৈশিষ্ট্য নন্দিতার সাথে মিল হয়ে যেতো, সেই স্ত্রী সাক্কারের হাতে পড়ার আগেই, আলিফ তাদের শহীদপুর গ্রামে নিয়ে আসতো। আর এই গ্রামে তারা ততোদিন থাকতো যতোদিন আলিফ তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান না দিতো। আর তাদের আলিফের প্রস্তাবের রাজি হওয়া ছাড়া উপায়ও থাকতো না, কারণ তারা মারাত্মক ভাবে আর্থিক সংকটে পড়তো।

নন্দিতার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের দাফন বাড়ির পাশে একটি কবরস্থানে করা হয়। যেসব পুলিশ এই কেইসে কাজ করতে যায়, তাদেরকে খারাপ শক্তির সাহায্যে হত্যা করে সাক্কার। যার ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই সাক্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। আর এরপর থেকেই শহীদপুর গ্রামের সাথে বাইরের সব গ্রাম আর স্থানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গ্রামটিতে ভূত আছে এই ভেবে কেউ আর যায় নি সেই গ্রামে। আর গ্রামের স্থানীয় মানুষরাও গ্রাম ছেড়ে দেয়। যারা থাকতো তারা আলিফের উপর ভরসা করেই থাকতো।
গ্রামটিতে খারাপ শক্তির প্রভাব এখনো আছে। কারণ সবুজের আত্মা এখনো সেই গ্রামে, সেই বাড়িতেই বন্দি। আর আত্মাটা খুবই শক্তিশালী। ছাড়া পেলে কেউ সেই আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
সাক্কার এখনো জানতে পারে নি তার ছেলে কোথায় আছে। কারণ কোনো তান্ত্রিক তার ছেলের সঠিক অবস্থান তাকে জানাতে পারে নি।

তাই সাক্কার তন্ত্রসাধনা করতেই থাকে, যাতে তার ছেলের আত্মা বন্দি অবস্থায় থেকেও বাইরের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আর তাকে মুক্ত করার জন্য সেই দরজার কাছে আনতে পারে। কিন্তু যদি সবুজের আত্মা ব্যর্থ হয় নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা মানুষটিকে নিজের কাছে আনতে, তবে সে খুন হয়ে যায় খারাপ শক্তির প্রভাবে।

যার ফলে শিশির, ছোটু দুজনই সেই আত্মার নিয়ন্ত্রণে এসে সেই সিঁড়ি ঘরটিতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। শিশিরকে শুভ্রা বাঁচাতে পারলেও ছোটুকে বাঁচাতে পারে নি। ছোটু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছাদে চলে যায়, যেখানে খারাপ শক্তির প্রভাব ছিলো। আর তারাই ছোটুকে মেরে ফেলে।

শুভ্রা আলিফের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এতোক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে সে কথাগুলো শুনছিলো।

শুভ্রা বললো,
শুভ্রা: আমি কেন সেই দরজাটা স্বপ্নে দেখেছিলাম বার বার?

আলিফ: জানি না, হয়তো তোমাকে সতর্ক করার জন্য এই স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। তবে সবুজের আত্মা তোমাকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারছিলো না। আর চাইছিলো না তুমি সীমান্তের সন্তানের মা হও। তাই স্বপ্নের মাধ্যমে সে তোমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করতো। আর তখনই ভুলক্রমে যদি তুমি সেই দরজায় স্পর্শ করতে তখনই দরজাটা খুলে যেতো, আর সে তোমার বাচ্চাকে মেরে ফেলতো। এইটা কেবলই স্বপ্ন। সত্যটা হলো তুমি অতিরিক্ত চাপে থাকার কারণেই তোমার মিসক্যারিজ হয়েছিলো।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আলিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বললো,
আলিফ: সীমান্তের খারাপ অবস্থা আর তার উপর খারাপ শক্তির স্পর্শ পড়ার আগেই দাদাজান দারোয়ান চাচার স্বপ্নে এসে বলেছিলেন, নতুন কেউ আসলে এই বাড়িতে যাতে উঠতে দেয়। তুমিই নন্দিতা ছিলে তা দারোয়ান চাচা পুরোপুরি ধরতে পারে নি, শুধু আন্দাজ করেছিলেন। বাড়ির লোকেরা চেয়েছিলো তুমি যাতে এই বাড়িতেই থাকো। তাই আমি সীমান্তকে পথে আনতে বাধ্য হয়েছি। আমি চাই নি সীমান্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই সাক্কারের হাতে পড়ুক। কারণ সীমান্তের উপর যদি কোনো খারাপ শক্তির প্রভাব পড়তো, তবে তোমাকে সাক্কার খুঁজে পেতো সহজেই। সীমান্ত এখনো সাক্কারের নজরে পড়ে নি। তার আগেই আমি সীমান্তের অফিসের বসকে বলেছিলাম আমার সাহায্য করতে। তিনি সীমান্তকে প্রচন্ড বিশ্বাস করতেন, কিন্তু আমি তাকে বাধ্য করেছি সীমান্তের উপর মিথ্যে মামলা দেওয়ার জন্য। সব ঠিক করতে পারলে সীমান্ত তার স্থান আবার ফিরে পাবে। নন্দিতা, এই চাকরী তোমার জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কখনোই না। তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমি আর কোনো রাস্তায় খুঁজে পায় নি। সাক্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো কোনো শক্তি আমার নেই। তবে সাক্কার একবার ধরা পড়লে আর বাঁচবে না। তার উপর মনুষ্যজাতির মতো জ্বিন সম্প্রদায়ও ক্ষেপে আছে। সে আমাদের সম্প্রদায়ের অনেক জ্বিনকে বাধ্য করেছে তার গোলামী করতে।

শুভ্রা: এভাবে আতংকের ভীড়ে বেঁচে থাকা সম্ভব না। সাক্কারকে খুঁজে বের করা দরকার।

আলিফ: সাক্কারকে হাতের নাগালে পাওয়া যায় না। সে এমন স্থানে আছে যেখানে আমরা যেতে পারবো না। একমাত্র সাক্কারের মৃত্যু এই ধ্বংসলীলা আটকাতে পারবে।

শুভ্রা তার ঘরটির দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
শুভ্রা: এই ঘরটি থেকে গানের সুর কীভাবে আসলো?

আলিফ: সবুজের আত্মা তোমার উপস্থিতি পেয়েছে, তাই গানের আকর্ষণে তোমাকে তার কাছে আনতে চাইছে। কারণ সে জানে তুমি সংগীত প্রেমী।

শুভ্রা: কিন্তু তাকে তো বন্দি করা হয়েছে সিঁড়ি ঘরে, কিন্তু আমার ঘরে কেন থাকবে তার আত্মার স্পর্শ?

আলিফ: কারণ তুমি সেই ঘরে ছিলে। তোমার স্পর্শ ছিলো সবখানে। আর সবুজের আত্মা অনেক শক্তিশালী। তার স্পর্শ এই পুরো বাড়িতে বিদ্যমান। যে বন্দি থেকেও শিশির আর চিতুইকে নিজের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তার জন্য তোমার ঘরে নিয়ন্ত্রণ রাখাটা কোনো ব্যাপার না। তোমার ঘর আর তার বন্দি ঘরটির মধ্যে শুধুই একটি দেয়ালের ব্যবধান। তাই এই ঘরটিতে বেশিক্ষণ থাকলে সে তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here