মন পিঞ্জর পর্ব ৯

0
1009

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_০৯

আঁখি আয়ানকে দেখে কিছুই বললো না,ওকে দেখেও যথারীতি না দেখার ভান করে যেতে নিলো আঁখি,আয়ান তৎক্ষনাৎ চট করে আঁখির হাত ধরে নিলো।

কি অসভ্যতা করছেন আপনি হাত ছাড়েন আমার?

আমি হাতে ধরলে সমস্যা,আর আধা রাতে অন্য পুরুষের সাথে জড়াজড়ি করতে সমস্যা হয় না বুঝি তোমার?

কথাটা শুনে আদৃতের বেশ খারাপ লাগলো,শক্ত কন্ঠে বললো এবার।

এটা কোন ধরনের ব্যবহার করছেন আপনি,একটা মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার কোনো অধিকার নেই আপনার।

আপনি কোন অধিকারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কথা বলেন ড.আদৃত চৌধুরী?

কথাটা শুনে আদৃত কিছু বলবে এর আগেই আঁখি টান দিয়ে আয়ানের কাছ থেকে নিজের হাত ছাঁড়িয়ে নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলতে শুরু করে।

আর ইউ সিরিয়াস মি.আয়ান রাহমান?স্বামী স্ত্রী? লজ্জা করে না আপনার এমনটা বলতে?ভুলে গেছেন না কি ডিভোর্স পেপার আপনিই নিয়ে এসেছিলেন,আর সেটাতে আমাদের দুজনেরই সাইন করা শেষ, তবে তারপরও এমন কথা বলতে আপনার মুখ কাঁপলো না,ঘরে বউ রেখে অন্য মেয়েকে নিজের স্ত্রী দাবি করতে লজ্জা করলো না।

হ্যাঁ ডিভোর্স হয়েছে তাই বলে তুমি লাইসেন্স পেয়ে যাও নি অন্য ছেলের সাথে নোংরামি করার,আমিও তো বলি একা একা কি করে সব চালিয়ে নেয়,এখন দেখি সব চালিয়ে নেওয়ার জন্য মালদ্বার সঙ্গিও করে নিয়েছো।

আয়ানের কথাটা কর্নপাত হতেই আদৃতের মাথায় আগুন ধরে যায়,হাত তুলেই আয়ানের নাক বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় এতে আয়ান ছিটকে পড়ে রাস্তায়,আদৃত গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে।

যে পুরুষ মেয়েদের সম্মান করতে জানে না সে পুরুষ নামে কাপুরুষ হয়।
আয়ান আরও চটকে যায় এবার,নাক দিয়ে ওর খনিক রক্ত ঝরতে শুরু হয়,নাক মুঁছে আদৃতের দিকে তেঁড়ে আসে কিছু কথা বলতে বলতে।

তুই আমাকে পুরুষত্ব শিখাবি,আজকে দেখে নেবো কার গায়ে কতো জোর।

কথাটা বলে আয়ান আদৃতের গায়ে হাত তুলবে এর আগেই আদৃতের ঠিক সামনে ঢালরুপে এসে খাঁড়া হয় আঁখি,আয়ান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, অতিরিক্ত রাগে ঘন ঘন নিশ্বাস ছাঁড়ছে,আঁখি এবার আবারও ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো।

যথেষ্ট হয়েছে মি.আয়ান রাহমান আর না,অনেক দেখিয়ে দিয়েছেন আপনি আপনার পুরুষত্ব আর না,আমার পোঁড়া কপাল ছিলো যে আমি আপনার মতো পুরুষের প্রেমে পড়েছিলাম,আপনার মতো পুরুষকে ভালোবাসার চেয়ে সারাজীবন একা কাটানোই টা ভালো হতো আমার জন্য,সত্যিই আজকে নিজের উপরই আমার অনেক লজ্জা হয় যে আমি আপনার মতো একটা লোককে কখনো ভালোবেসেছিলাম,ছি।আর আপনার থেকে আর বেশি কিছু কি করে আশা করা যেতে পারে, যে যেরকম অন্যকেও সেরকমই ভাববে,আমার ভেবে একটুও আশ্চর্য হচ্ছে না যে আপনার চিন্তা ধারা এতোটা নিচ ,ছি।চলে যান আমার সামনে থেকে,চলে যান বলছি।

আয়ান আর দাঁড়ালো না সেখানে রক্তচক্ষু নিয়ে আদৃতের দিকে তাকাতে তাকাতে স্থান ত্যাগ করলো,তখনি আঁখির হঠাৎ আবার মাথা ঘুড়িয়ে গেলো পড়ে যেতে নিলে আদৃত ওকে ধরে নিলো,আঁখি জ্ঞান হাঁড়িয়েই গেলো সাথে সাথে।

এদিকে আয়ান গাড়ি ছুঁটাচ্ছে হাওয়ার বেগে, আঁখি আর আদৃতের সেই ক্ষণের সেই মুহুর্তের ছবি সরছে না ওর চোখের সামনে থেকে,এদিকে আঁখির বলা প্রতিটা কথা বার বার শ্রবন ইন্দ্রিয়তে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত,কথাগুলো যেনো আয়ানের বুকে গিয়ে ছুঁড়ির মতো ঢুকে পড়েছে,কোনোমতেই কথাগুলো ভুলতে সক্ষম হতে পারছে না আয়ান,মেজাজটা বিগড়ে আছে পুরো,চোখদুটোর লাল বর্ন ভাব যেনো যেতেই চাচ্ছে না ওর,হঠাৎই গাড়িতে ব্রেক কষলো আয়ান,নেমে গেলো গাড়ি থেকে,তারপর অতি রাগে গাড়ির গ্লাসে সজোরে একটা ঘুষি মারলো যাতে গ্লাস ফেটে অনেকগুলো কাচ ওর হাতে ঢুকে গেলো,হাত বেয়ে রক্ত ঝরছে,কিন্তু সেদিকে যেনো কোনো খেয়ালই নেই আয়ানের,মাথায় এখনও চড়ে বসে আছে আঁখি।
_________________

আলতো করে চোখ খুললো আঁখি,নিজেকে একটা আলিশান রুমে আবিষ্কার করলো,আশেপাশে কাউকেই দেখতে পেলো না,আঁখি বুঝে উঠতে পারছে না আঁখি এ কোথায় এসেছে ও?বেড থেকে নেমে গিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে হাঁটতে লাগলো,হঠাৎই নজর গেলো রুমের সাথে সংযুক্ত করা বিশাল এক বারান্দার দিকে,আঁখি উকি দিলো সেদিকে, দেখলো বারান্দার এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত,এদিকে নিজের রুমে কারো নড়াচড়া অনুভব করতে পেলো আদৃত তাই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আঁখি দাঁড়িয়ে আছে,মুখে ওর অনেক প্রশ্নের ছাঁপ স্পষ্ট বুঝতে পারলো আদৃত,এগিয়ে এলো আঁখির পানে,এসে প্রায় দৃঢ় কন্ঠেই বললো।

আপনি কখন উঠলেন মিস আঁখি।

আমি কখন উঠেছি এটা জেনে লাভ কি আপনার?আপনি এটা বলেন আমি এখানে কি করে আসলাম?

আস্তে করে কথা বলেন,আসলে আপনি তখন অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন তাই আমি আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি।

আপনি নিয়ে এসেছেন মানে,আপনি কি করে আনলেন আমায়?

আপনার তো পাখা নেই আর থাকলেও অজ্ঞান অবস্থায় তো আর উড়তে পারতেন না তাই আপনাকে প্রথমে গাড়িতে তারপর কোলে করে এনেছি।

হোয়াট আপনি আমাকে কোলে নিয়েছিলেন,একটা মেয়ের অনুমতি ছাঁড়া আপনি তাকে কোলে কি করে নিতে পারেন?

তবে কি তখন আপনাকে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করতাম যে,এই যে মিস আঁখি আমি আপনাকে কোলে নিবো কি না?

হ্যাঁ তাই করতেন?আপনি আমাকে জাগাতে পারতেন,জাগলে তো আমি নিজে থেকে বাড়ি চলে যেতাম,এখানে কেনো আনলেন আপনি আমাকে?পাশেই তো ঝিল ছিলো ওখান থেকে পানি এনে আমাকে জাগিয়ে তুলতেন।

দেখেন এটা কোনো সিনেমা না যে একজন অজ্ঞান হলো আর অপরজন পানি ছিটা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরালো, আমি একজন ডাক্তার তাই চেক আপ না করে রোগীর জ্ঞান পানি দিয়ে বা অন্য কিছু করে ফিরাবো না,কারন অনেকসময় সাথে সাথে জ্ঞান ফিরানো ঠিক হয় না।

ও আমার আল্লাহ, এ কোন গুনি ডাক্তারের পাল্লায় ফেললেন আপনি আমায়?ওকে ঠিক আছে ফাইন,যা হবার হয়ে গেছে আর কখনো কোনো মেয়েকে না বলে কোলে নিবেন না,ওকে এবার আমি চলি।

আরে আরে চলি মানে,দাঁড়ান ওখানে।

আঁখি চট করে দরজা খুলে যেতে গেলে আদৃত ওকে আটকায়,আঁখি হতবাক হয় ওর এহেন কান্ডে। ভ্রুযোগল কুঁচকে এবার জিজ্ঞেস করে।

কি হয়েছে আমাকে যেতে দিচ্ছেন না কেনো?

আমি আপনাকে যেতে দেবো না কেনো?অবশ্যই আপনি চলে যাবেন তবে লুকিয়ে,এভাবে যাওয়া শুরু করলে যে কেউ আপনাকে দেখে ফেলবে।

তো দেখে ফেললে কি?আপনি কি এ ঘরে চুরি করতে এসেছেন যে ভয় পাচ্ছেন?

আমি নিজের ঘরে চুরি করতে আসবো কেনো?

এটাই তো বলতে চাইছি আমি আপনি নিজের ঘরে ভয় কেনো পাচ্ছেন?আপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন সবাইকে বললে সবাই বিশ্বাস করবে না বুঝি?

করবে,কিন্তু আপনাকে দেখলে ক্যাল্যাঙ্কারিও হবে।

আমাকে দেখলে ক্যাল্যাঙ্কারি হবে কেনো?

ইশ আপনি এতো কথা বলেন কেনো বলেন তো?চুপ থাকেন আর কথা বললে আসতে বলেন।আপনার তো বাড়ি গেলেই হবে তাই না।এতো কিছু জিজ্ঞেস করার কি আছে এখানে।

এতো ক্ষেপছেন কেনো?আপনার কথার কোনো আগাগুঁড়া বুঝতে পারি না আমি তাই বার বার প্রশ্ন করি,ওকে আর করবো না এবার চলেন।

ধন্যবাদ আপনাকে,এবার চলেন,আর হ্যাঁ আমার সাথে আসেন আর শব্দ করবেন না।

তারপর দুজন ধিমি পায়ে বাইরে চলে গেলো,এদিকে সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও একজনের চোখ ফাঁকি দিতে পারলো না আদৃত আঁখি,আর সে আর কেউ নয় সায়েদা।
ওর বড় বড় চশমার আড়াল থেকে সব স্পষ্ট দেখতে পেলো।

আরে এই তো সেই আঁখি আরোহী আপুর প্রতিরুপ,ভাইয়াতো এর কথাও ঘরে বলতে চান না,আর এদিকে মাঝ রাতে ওকে ঘর ঘুরে দেখাচ্ছেন,না এটা তো মোটেও ভালো ঠেকছে না আমার কাছে,ব্যাপারটা কি?আমি ওর কথাও বললে সমস্যা আর নিজে ওকে ঘরে আনলে সমস্যা না,ভাইয়ার সাথে কথা বলতেই হবে দেখছি।

আজ এই প্রথম নিজের ঘরে চোরের মতো অনুভব করতে হলো আমায় শুধু আপনার জন্য।

আপনার পায়ে ধরে আসি নি আমি এখানে আপনি নিজে এনেছেন।

ওকে ভুল হয়েছে আর আপনাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার আগে ১০০ বার ভেবে নিবো এবার চলেন।

আচ্ছা আপনি আমাকে এভাবে চোরের মতো বাইরে নিয়ে এলেন,তবে তখন ভিতরে কিভাবে নিয়ে গেলেন?

তখন তো আপনি প্যাকপ্যাক করার জন্য জ্ঞানে ছিলেন না তাই কাজের লোককে বলে সহজে দ্বার খুলিয়ে আপনাকে নিয়ে গেছিলাম,এবার অন্ততো এসব কথা বাদ দিয়ে চলেন।

আমি যাবো না আপনার সাথে।

এবার কি হলো।

আমি কারোই হেল্প নিতে চাই না,আপনি আমাকে এতোটা হেল্প করেছেন এটার জন্য ধন্যবাদ, আপনি তা না করলেও পারতেন,করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ, এবার আমি নিজে যেতে পারবো।

দেখেন জেদ ছাড়েন আর চলেন,অনেক রাত হয়েছে।

আপনিও মেয়ে ভেবে দূর্বল ভাবছেন আমায়?

ইশ,এই আপনি এতো জেদি কেনো,আমার তো মনে হয় নারী জাগরনের দ্বিতীয় অগ্রদূত আপনিই হবেন,আমি আপনাকে মেয়ে ভেবে দূর্বল ভাবছি না,আপনি বর্তমানে আমার বাড়িতে আছেন আর আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া আমার দায়িত্ব, আপনার জায়গায় কোনো ছেলে হলেও আমি তাই করতাম,এবার দয়া করে আর কথা না বাড়িয়ে আপনি গাড়িতে উঠে পড়বেন আশা করছি।

আপনি নিজের দায়িত্বের দোহাই দিলেন বলে উঠলাম,নইলে উঠতাম না।কথাটা বলে আঁখি গাড়িতে ঢুকে পড়লো।

আনবিলিভেবল।

অসহ্যকর ভঙ্গিতে বিড়বিড়িয়ে কথাটা বলে গাড়িতে চড়ে বসলো আদৃতও।

কিছুসময় পর আঁখির নির্দেশনা অনুযায়ী ওর বাড়ির ঠিক সামনে এনে আদৃত আঁখিকে নামায়,আঁখি নেমে যায়,দুকদম ঘরের দিকে এগিয়ে গেলে আবারও থমকে দাঁড়িয়ে ফিরে আসে আদৃতের পানে।

কি হলো, কিছু বলবেন?

আসলে আপনাকে ধন্যবাদ বলতে চাই,তখন আমার হয়ে আপনি ওভাবে প্রতিবাদ করলেন তো তাই।

আপনার জায়গায় অন্য মেয়ে হলেও আমি তাই করতাম মিস আঁখি,মেয়েদের সম্মান যে করতে জানে না সে কখনো একজন মানুষ হওয়ার যোগ্য না।ওকে চলি।

তারপর চলে যায় আদৃত, আঁখিও নিজের ঘরে চলে যায়,ঘরে যাবার পর আঁখির মনে পড়ে আয়ানের করা তখনকার কান্ড,চোখ বেয়ে আবারও অশ্রু গড়াতে শুরু হয়,আয়ান কখনোই আঁখিকে বুঝতে চায় নি,আর আজকে যে আয়ান নিজের সব লিমিট ক্রস করে গেলো,আদৃত তখন আয়ানের উপর প্রহার করলে তা আঁখির মনে ব্যাথা সৃষ্টি করে কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের কাছে যে নিজের অনুভুতিকে মেরে ফেলতেই হবে আঁখিকে,এটাই যে এখন ওর ভালো থাকার একমাত্র সম্বল।
____________________

সারারাত বাড়ি ফিরলো না আয়ান,সকাল প্রায় ১০ টা বাজে,আয়ান বাড়িতে প্রবেশ করলো,ঘরে ঢুকার আগেই চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেলো আয়ান,ছুঁটে গেলো ঘরের ভিতর।গিয়েই দেখতে পেলো আয়েশা মাহির হাত পিছন দিকে করে মুড়ে ধরেছে,আর মাহি হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করছে,মিরা রাহমান ওদের ছাড়াতে ব্যার্থ,আয়ান ছুঁটে গিয়ে নিজের ব্যান্ডেজ করা হাতেই মাহিকে আয়েশার কাছ থেকে ছাঁড়ালো।

কি হয়েছে? তুই মাহিকে এভাবে ধরে রেখেছিলি কেনো আয়েশা?

বেবি দেখো তোমার বোন আমাকে মারছে,তুমি না এলে তো আমায় মেরেই ফেলতো।
ন্যাকা কান্না করতে শুরু করলো মাহি,আয়েশা এবার ঝাঁঝাঁলো কন্ঠে বলে উঠলো।

হুহ,বেবি,তোর বেবিগিরি ছাড়াচ্ছি আমি,তোর সাহস কি করে হয় আমার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করার?

কি?মাহি তুমি আয়েশার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেছিলে?

ইয়ে মানে,আসলে বেবি,ও নাস্তা বানিয়েছিলো যা একদম ভালো হয় নি,আমি সত্যটা বলেছিলাম তাই আমায় বলে কি জানো?বলে না খেলে রেখে দিতে আর নিজে পারলে রান্না করে খেতে,বলোতো এমন কথা কি করে মেনে নিবো আমি,তাই আমার রাগ উঠে গিয়েছিলো।
ন্যাকা মুখ বানিয়ে কথাগুলো বললো মাহি।

হোয়াট এতো ছোটো কথার জন্য তুমি আমার বোনের গায়ে হাত তুলতে গিয়েছিলে।

এটা তোমার কাছে ছোটো কথা মনে হয় বেবি,ও আমায় অপমান করলো নিজে রান্না করে খাওয়ার কথা বলে আর তুমিও আমাকেই শ্বাশাচ্ছো।

অপমান?অপমান কোথায় হলো মাহি এটা?রান্না করা কি অপমানের কাজ,রান্না ভালো লাগে নি ভালো কথা নিজে করে খেয়ে নিবে এতে দোষের কি।
আর ঘরের নতুন কাজের লোক কই?ও থাকতে এমন অবস্থা কেনো সৃষ্ট হবে?

ওটা তোমার স্ত্রীকেই জিজ্ঞেস করো ভাইয়া।

বলো মাহি কি হয়েছে?শালিকা কোথায়?

ওকে আমি বার করে দিয়েছি,রাতে আমাকে একটা ফেসপ্যাক বানিয়ে দিতে বেশি সময় লাগিয়েছিলো তাই।

হোয়াট,আর ইউ সিরিয়াস,এর জন্য তুমি ওকে কাজ থেকে বের করে দিয়েছো।

হ্যাঁ।
মাহি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো কথাটা।এবার আয়ানের অনেক রাগ হলো,নিজের রাগ দমন করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

সরি বলো মাহি আয়েশাকে।

আমি কেনো ওকে সরি বলবো?আমি কেনো আমার জুতোও ওকে সরি বলবে না।

তুমি বলবে,তোমাকে সরি বলতেই হবে মাহি।
ধমক দিয়ে কথাটা বললো আয়ান।

তুমি আমায় ধমক দিলে বেবি,আমার সাথে এমন ব্যবহার করলে,তুমি আমায় একদম ভালোবাসো না একদম না।

কথাটা বলে মাহি ন্যাকা কান্না করে চলে গেলো রুমে,মিরা রাহমান এবার নরম স্বরে বললেন।

তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে বকতে গেলি কেনো আয়ান,যা গিয়ে ওর রাগ ভাঙা।

আয়ান মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে রুমের পানে পদার্পণ করলো।

তোকে বলেছিলাম আয়েশা শুধু শুধু ঝগড়া না ঝরাতে,ঘরে অশান্তি এনে কি লাভ।

ঘরে আমি অশান্তি আনছি না মা,অশান্তি ঘরে অনেক আগেই এসেছে আর সেটা নিয়ে এসেছে তোমার ছেলের,একদিন এই অশান্তিই আমাদেরও এ ঘর থেকে ভাইয়া থেকেও দূর দেবে তুমি দেখে নিও।

কথাটা বলে আয়েশা স্থান ত্যাগ করলো,মিরা রাহমান নিরাশায় ভরা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।

__________________

আজকে কলেজে আসতে না আসতেই আঁখি সায়েদাকে জব্দ করলো,সায়েদাকে দুদিন থেকেই আঁখি ফলো করছিলো,কারন সায়েদা আঁখির একই ক্লাসে পড়ে আর সারাদিন আঁখির দিকে তাকায় একটু পর পর,এবার আঁখি সামনাসামনি গিয়ে ওকে এটার কারন জিজ্ঞেস করেই নিলো।তারপর সায়েদা বরবর করে সবকিছু পরিষ্কার করে বলে দিলো।

আসলে আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না,আপনি দেখতে ঠিক হুবহু আমার ভাইয়ার মরহুম স্ত্রী আরোহী আপুর মতো,তাই সেদিন আপনাকে দেখে ভুঁত বলে চিৎকার করেছিলাম আমি,ড.আদৃত আর ড.নোমান আমার দুই ভাই,আর আরোহী আপু আদৃত ভাইয়ার স্ত্রী ছিলেন,দুবছর আগে একটা এক্সিডেন্টে উনি মারা যান।

আপনি কি সত্যিই বলছেন?আমার মতো হুবহু দেখতে এটা কি করে সম্ভব।

আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না তো আমি এখনই উনার ছবি দেখাচ্ছি আপনাকে।

তারপর সায়েদা আরোহীর ছবি দেখালে ওটা দেখে হতভম্ব হয়ে যায় আঁখি,এ যে সত্যিই আঁখির হুবহু কপি,আঁখির তো মনে হলো ওটা যেনো ওর নিজেরই ছবি,কিন্তু এটা ওর ছবি না এটা অন্য কারো ছবি যে দেখতে ঠিক আঁখিরই প্রতিরূপ,তারমানে সায়েদা সত্যিই বলছে বুঝতে পারলো আঁখি,তারপরও নিজের চোখে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না, আঁখি এবার অন্য অনেককিছুও বুঝতে সক্ষম হলো।

এজন্যই কি আদৃত স্যার সেদিন আমার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন, কালকে ক্লাস করানোর সময় নোমান স্যারও আমার দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকাচ্ছিলেন,আর কাল রাতে এজন্যই মনে হয় স্যার আমাকে উনার ঘরের সবার সামনে আসতে দিচ্ছিলেন না,কিন্তু আমার মতো হুবহু দেখতে অন্য কেউ কি করে হতে পারে,সায়েদার ফোনে ছবি দেখে তো অবিশ্বাসও করা যাচ্ছে না।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here