মনের ক্যানভাসে পর্ব ৬

0
536

#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:৬
#Tabassum Ferdous Samiya

এখন রাত দশটা বাজে আমি আর খালামণির দুজনে ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছি। আর নাদিরা আপু তার রুমে বসে অনলাইন ক্লাস করছে। জায়ান ভাইয়ার সাথে শুধু এক বার দুপুরে দেখা হয়ে ছিল আমার। তারপর তাকে আর কোথাও দেখিনি। খালামণির কাছে শুনলাম জায়ান ভাইয়া নাকি আজকে তার বন্ধুর বাসায় রাতে বারবিকিউ পার্টি করবে।সেজন্য রাতে বাসায় ফিরবে না।কথা শুনে আমার মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেল।কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না। এইসব ভাবছি তখন খালামণি আমাকে বললো,

“সায়রা মা তোকে একটা কথা বলি?”

খালামনির এমন অনুরোধ পূর্ণ কথা শুনে আমি খালামণি কে বললাম,

“খালামণি তুমি এভাবে কথা বলছো কেন?তোমার যা মন চায় তাই বলবে,এতে আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করার কি আছে!”

খালামণি আমার কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,

“আয় তোর চুলে বিলি কে’টে দেই।”

খালামণির কথা মতো আমি খালামণির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।আর খালামণি আমার মাথায় চুলে বিলি কে’টে দিচ্ছি। এইভাবে কিছু সময় পেরিয়ে গেল আমি খালামণিকে বললাম,

“ও খালামণি তুমি জানো আমাকে কি বলবে বলছিলে,আর তো বলছো না এখন? তাড়াতাড়ি বলতো কি বলবে,তোমার কথা শোনার জন্য তো আমার মন অস্থির,অস্থির করছে।”

খালামণি পুনরায় আমার কথা শুনে একটু হাসলেন আর চুলে বিলি কে’টে দিয়ে বললেন,

“সায়রা কালকে বাসায় অপি আসবে আর আসে কয়েক দিন থাকবে আমাদের বাসায়।”

খালামণির কথা শুনে আমার মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল তার কারণ হলো,অপি আপু যখনই এই বাসায় আসে তখনই,আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। অনেক রকমের কথাও বলে কিন্তু খালামণি তাকে কিছু বলতে পারে না কারণ,সে হলো খালামণির ননদের একমাত্র আদরের মেয়ে। এখন তাকে কিছু বলাও যাই না তার কারণ হলো,অপি আপুকে কিছু বললে উল্টো আরো ঝামেলা হবে তাই।আমি বুঝতে পারলাম খালামণির আমার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। সেই জন্য আমি খালামণিকে বললাম,

“তাতে কি হয়েছে খালামণি অপি আপু আসলে আমার কোন সমস্যা হবে না।তুমি এত চিন্তা করো না তো সব সময় সবকিছু নিয়ে তুমি বেশি চিন্তা কর।এত চিন্তা করলে তো তোমার হাই প্রেসার হয়ে যাবে। এখন একটু নিজের শরীরের কথা ও তো ভাবতে হবে তোমাকে নাকি?”

খালামণি আমার কথার প্রতি উত্তরই বললো,

“হয়েছে পাকা বুড়ি তোকে আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না। তুই শুধু অপির কথায় কিছু মনে করিস না মা জানিসই তো ও কেমন।”

খালামনির কথা শুনে আমি তার উদ্দেশ্যে বললাম,

“হ্যাঁ,হ্যাঁ আমি সব জানি। তুমি আর এইসব নিয়ে ভেবো না তো,বাদ দাও এসব কথা চলো খেয়ে আসি আমার অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।”

খালামণি আমার কথা মত ডাইনিং রুমে উঠে চলে গেলেন। আর আমি আপুকে ডাকতে গেলাম।তারপর আমরা সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে যে যার মত ঘুমিয়ে পড়লাম।আমি রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি,

“সবই ঠিক আছে আমি অপির কথা নিয়ে এত ভাবি না কারণ,একটা খারাপ লোকের কথা শুনে তো আর এতগুলো মানুষের ভালোবাসা ভুলে গেলে চলবে না। কিন্তু কথা হচ্ছে জায়ান ভাইয়া সেই সকালের পর থেকে আমার সাথে আর কথা বলেনি।তখন আপুর শশুড় বাড়ি থেকে লোক আসে ছিলো ওই সময় ও কথা বলো না আমার সাথে। সকালের কথা গুলো শুনে কি ভাইয়া অনেক রাগ করেছে? এইসব নানান রকম চিন্তা ভাবনা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।”

আজকে একটু বেলা করেই ঘুম থেকে উঠেছি আমি রাতে ভাল ঘুম হয়নি। ঘুম থেকে উঠে শুনতে পেলাম একটি মেয়েলী গলা। বুঝতে আর বাকি রইল না মানুষটিকে! আমি ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম ড্রয়িং রুমে সেখানে গিয়ে দেখি অপি আপু চলে এসেছে। সোফাতে বসে নাদিরা আপুর সাথে গল্প করছে। আমাকে দেখে অপি আপু বললো,

“আরে সায়রা যে কেমন আছো?”

অপি আপুর কথার প্রতি উত্তরে আমি তাকে বললাম,

“ভালো,আমি কেমন আছো?”

অপি আপু আমার কথা শুনে তার মুখটা একটু বাঁকিয়ে বলো,

“আমিও ভালো আছি।আর তুমি তো ভালো থাকবেই এই ভাবে অন্যর বাসায় ফ্রী তে থাকা খাওয়া কি আর সবার কপালে থাকে নাকি!”

আমি মাত্রই নাদিরা আপুর পাশের সোফাতে বসতে যাব এমন সময় অপি আপু এই কথা বলে উঠলো। তার কথা আমার কানে আসা সত্ত্বেও আমি কিছু বললাম না।কারণ তার কথা তো আর মিথ্যা না সত্যই তো আমি অন্যের বাসায় থাকি। আর এখন যদি আমি তার কথার জবাব দিতে যাই তাহলে উল্টো ঝামেলা হবে।তাই চুপ করে থাকাই শ্রেয়। অপি আপুর এমন কথা শুনে নাদিরা আপু তাকে ধমক দিয়ে বললেন,

“এসব কেমন ধরনের কথা অপি তোকে না বলেছি, তুই সায়রার সাথে এভাবে কথা বলবি না। তাও কেন তুই ওর সাথে এইভাবে কথা বলিস?আর একটা কথা সায়রা তো আর তোদের বাসারটা খাচ্ছে না?আমাদের বাসারটা খাচ্ছে তাহলে তোর কোন এত সমস্যা? তুই কেন সব ব্যাপারে এত নাক গলাস?”

আপুর কথা শুনে অপি আপুর মুখটা একদম থমথমে হয়ে গেল। আমি আর তাদের মাঝে কোন কথা বললাম না। চুপচাপ সেখানে বসে রইলাম একটু পরে খালামণি আমাদের তিনজনকে ডাইনিং রুমে খাওয়ার জন্য ডাকলো। আমরা তিনজনই সেখানে গিয়ে যে যার মত খেয়ে আবার ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখতে লাগলাম।এমন সময় হঠাৎ কলিং বেলটা বেজে উঠলো। মনের অজান্তেই মনের মাঝে একজন ব্যক্তির নাম ভেসে আসলে সে হলো জায়ান ভাইয়া। আমি কাউকে কিছু না বলে দৌড়ে গেলাম দরজাটা খুলতে।দরজা খুলে দেখি জায়ান ভাইয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।দরজা খুলার শব্দে তার মাথাটা উপরে তুলে দেখলো আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে তার সামনে দেখে, একবার আমার দিকে কেমন যেন কাতর দৃষ্টিতে তাকালেন। এই দৃষ্টি কোনো মানে আমি খুঁজে পেলাম না!তার এই তাকানো দেখে আমি তাকে কিছু বলতে যাব এমন সময় আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি ভেতরে চলে গেলন।আমি তাকে কিছু বলার সুযোগ পেলাম না।আমি সেখানেই ঠাই দাড়িয়ে রইলাম।আর ভাইয়া গিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসলো।আর ওমনি অপি আপু ভাইয়াকে দেখে বলতে লাগলো,

“জায়ান কেমন আছো তুমি?আর এত খন কোথায় ছিলে হুম,জানো আমি তোমাকে বাসায় এসে কত খুঁজেছি আপু কে জিজ্ঞাসা করে দেখো।”

জায়ান ভাইয়া এত গুলো প্রশ্ন এক সাথে শুনে পাশ ফিরে একবার অপি আপুকে দেখলো আর তার পরে গম্ভীর গলায় বলো,

“অপি আমি তো আর বাচ্চা ছেলে না যে,কোথাও হারিয়ে যাবো তার জন্য আমাকে খুঁজতে হবে তাই না?”

ভাইয়ার এমন কথা শুনে অপি আপুর মুখটা আবার থমথমে হয়ে গেল।আর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এই সব কথা আমি শুনছি।এখন দরজাটা বন্ধ করে নাদিরা আপুর পাশে বসলাম।আর আপু দেখি রাফসান ভাইয়ার সাথে চ্যাট করছে।তার এই সব কথা বার্তা নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই। তারপর আমি এক বার জায়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম কিন্তু তিনি আমার দিকে তাকালেন না।আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল কেনো ভাইয়া আমাকে এমন এড়িয়ে চলছে?আমি এই সব ভাবছি এমন সময় অপি আপু আবার ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করল,

“জায়ান আজকে আমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবে?আমরা দুজন কোথাও থেকে একটু ঘুরে আছি।”

ভাইয়া অপি আপু হঠাৎ এমন কথা শুনে, রাগে গিয়ে অপি আপু কে বলো,

“অপি তোর মাথায় কি কোনো বুদ্ধি নেই?তুই কি দেখলি না এখন আমি বাইরে থেকে আসলাম?”

অপি আপু জায়ান ভাইয়া এমন রাগী গলায় কথা শুনে একটু ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু তাও আবার ভাইয়াকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় খালামণি আসলে আর জায়ান ভাইয়াকে বললো,

“জায়ান বাবা আমার তুই কখন এলি?”

জায়ান ভাইয়া খালামনির কথার প্রতি উত্তরে বললো,

“এইতো কিছু খন আগে আসলাম এখন ফ্রেশ হতে যাব আম্মু।আর আমার ক্ষিধেও পেয়েছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসে খাবো আম্মু।তুমি আমার খাবারটা নিয়ে আমার রুমে আসো।”

কথাটা বলে ভাইয়া উপরে চলে গেল।আর খালামণি আমাকে বললো,

“সায়রা মা তুই একটু যা তো জায়ানের খাবারটা দিয়ে আয়।আমার রান্না ঘরে কিছু কাজ আছে আমি যেতে পারবো না।”

খালামণির কথা শুনে আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম,আর তখনই অপি আপু বললো,

“মামী আমাকে দাও আমি দিয়ে আছি ওর খাবার!”

অপি আপুর মুখে ওর কথাটা শুনে আমি আর নাদিরা আপু হাঁ হয়ে তাকালাম একে ওপরের দিকে।আর অপি আপু তো তার মত করে বসে আছে সোফায়।অপি আপুর কথা শুনে খালামণি বললো,

“না,অপি তোমাকে কষ্ট করে জায়ানের খাবার দিয়ে আসতে হবে না।তুমি হলে এই বাসার মেহমান তোমাকে দিয়ে কি আর কাজ করানো যাবে নাকি!তুমি বরং নাদিরার সাথে বসে টিভি দেখ।”

কথা বলে খালামণি চলে গেল রান্না ঘরে আর আমি একবার পাশ ফিরে অপি আপুর দিকে তাকালাম দেখি তিনি আমার দিকে রাগী চোখ করে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমি তাতে বিশেষ কোনো দাম দিলাম না চলে গেলাম খালামণির পিছনে। কিচেনে যাওয়ার পরে খালামণি আমার হতে খাবারের প্লেট দিয়ে উপরে যেতে বললেন।আমি তার কথা শুনে উপরে চলে গেলাম।ভাইয়ার রুমে সামনে এসে কয়েক বার দরজার বাইরে থেকে ডাক দিলাম ভাইয়াকে কিন্তু, ভিতর থেকে কোনো প্রকার সাড়াশব্দ এলো না।তাই আমি সোজা রুমে ভিতরে চলে গেলাম।রুমের ভিতরে এসে আমি যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না!

চলবে

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।আর সবাই কমেন্ট বক্সে জানাবেন গল্পটা কেমন হয়েছে। প্লিজ সবাই ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here