মনের ক্যানভাসে পর্ব ৫

0
566

#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:৫
#Tabassum Ferdous Samiya

আমি ভাইয়ার রুমে এসে তো পড়লাম কিন্তু এখন কি করবো তাই ভাবছি। জায়ান ভাইয়া আমাকে আসতে বলে, এখন নিজেই তো আসছে না! ভাবছি ভাইয়া যখন আসছে না তাহলে,আমি একবার ভাইয়ার রুমের ব্যালকনি থেকে ঘুরে আসি। যে ভাবা সেই কাজ চলে গেলাম ব্যালকনিতে। জায়ান ভাইয়া রুমের ব্যালকনিটা অনেক বড় আর নানান রকম লতা,পাতা ফুল গাছে ভর্তি। ব্যালকনির এক সাইডে দোলনা আছে।আমি সে খানে গিয়ে বসলাম,তখনই জায়ান ভাইয়া তার রুমে আসলেন।আর আমাকে রুমে না দেখতে পেয়ে জোরে চেঁচিয়ে ডাকতে লাগলেন। আমি ভাইয়ার ডাক শুনে পেয়ে ,ভাইয়াকে বললাম আমি ব্যালকনিতে তুমি এখানে আসো।ভাইয়া আমার কথা মত আসলেন আমার কাছে আর রাগী গলায় বললেন,

“তুই সকালে কোন সাহসে আমাকে মিথ্যে কথা বললি? তুই জানিস না আমি মিথ্যে বলা একদম পছন্দ করি না,তাও কেন সাহসে আমাকে মিথ্যে কথা বললি বল?”

ভাইয়া এমন রাগী গলার কথা শুনে ভয়ে আমার মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছে না।আমি দোলনাতে বসা অবস্থায় একবার মাথা উঁচু করে ভাইয়ার দিকে তাকালাম, দেখি জায়ান ভাইয়া আমার দিকে কিছুটা ছুঁকে এসে আবার ধমক দিয়ে বললেন,

“এখন মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কোন অ্যানসার মি ড্যামেট?”

ভাইয়ার এত জোরে চেঁচিয়ে কথা বলার কারণে, আমার চোখের কোণায় জল জমে গেল,কিন্তু তাতে জায়ান ভাইয়ার কোনো হেলদোল হলো না।তিনি আগের মতোই বলতে লাগলেন,

“দিন দিন তোর সাহস বের হচ্ছে তাই না?এখন যদি আমার কথার উত্তর না দিস তাহলে, তোর জন্য তা মোটেও ভালো হবে না।তুই খুব ভালো করে আমাকে জানিস তোর সাথে আমি কি করতে পারি!তাই আমাকে যেন আর একটা কথাও খরচ করতে না হয় বলে দিলাম।”

জায়ান ভাইয়ের কথা শুনে আমি ভয়ে ভয়ে দোলনা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার কথার উত্তর দিলাম,

“তখন আমি ইচ্ছে করে মিথ্যে কথা বলিনি।তুমি আমার হাত অনেক শক্ত করে ধরে ছিলে আর আমি অনেক ব্যথা পাচ্ছিলাম।সেই জন্যই তখন মিথ্যে বলে পালিয়ে ছিলাম, আর তুমি তো আমার হাত ছাড় ছিলে না।”

কথাটা বলেই আমি সেখানে দাঁড়িয়ে কেঁদে দিলাম। আর আমাকে সেখানে এমন করে কাঁদতে দেখে জায়ান ভাইয়া রীতিমতো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো! জায়ান ভাইয়া আমাকে কি বলবে তা আর ভেবে পাচ্ছে না। আমি ঠিক একইভাবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছি। ভাইয়া আমার আর একটু কাছে এসে শান্ত গলায় বললেন,

“এই মেয়ে এই কান্নার থামা বলছি।প্লিজ থাম আমি আর বকবো না তোকে।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি একটু কান্না থামিয়ে চোখ তুলে তাকালাম,দেখি ভাইয়া কেমন যেন অস্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,

“সত্যি তো আর বকবে না আমায়?আবার যদি বকো তাহলে কিন্তু আমি খালামণিকে বলে দিব।তুমি সব সময় আমার সাথে এমন করো। শুধু শুধু আমাকে কোন কারন ছাড়াই বকো! আচ্ছা তুমি সব সময় আমাকে কেন এমন ধমক আর বকা দাও বলতো?

আমার কান্না থেমেছে দেখে ভাইয়া আবার আগের মত গম্ভীর গলায় বললেন,

“তোর কাছে আমি এত কথা বলতে বাধ্য নই। যদি আর বকা না খেতে চাস তাহলে,বেরিয়ে যে আমার রুম থেকে।”

জায়ান ভাইয়ার কথার প্রতি উত্তরে আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু সাহস নিয়ে বলতে লাগলাম,

“কেনো করো আমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার? তোমার কি কখনো আমার সাথে একটু ভালো ভাবে কথা বলতে ইচ্ছা করে না?আচ্ছা, আমি ছোট থেকে তোমাদের বাসায় থাকি বলে কি আমাকে নিয়ে তোমার এত প্রবলেম?বলো না জায়ান ভাইয়া একবার বলো শুধু,আমার নিজেরও খারাপ লাগে জানো এই ভাবে দিনের পর দিন অন্যের বাসায় থাকতে। কিন্তু কি করবো বলো আমার কাছে তো যাওয়ার কোন জায়গা নেই! যাওয়ার জায়গা থাকলে আমি কখনো এখানে থাকতাম না।”

এক নিশ্বাসে গড়গড় করে মনের সব কথাগুলো বলে যাচ্ছিলাম,কিন্তু আমার কথার মাঝে হঠাৎ জায়ান ভাইয়া আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে এগিয়ে আসলেন এবং আমার দু,হাত শক্ত করে চেপে ধরলেন আর রাগী গলায় চেঁচিয়ে বলল,

“কি বললি তুই এই বাসায় থাকতে চাস না? কোথায় যাবি তুই খুব বড় বড় কথা বলতে শিখে গেছিস তাই না বেয়াদব! সবাই তোকে আস্কারা দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছি ,আর একবার যদি তোর মুখে এইসব উল্টোপাল্টা কোন কথা আমি শুনি তাহলে, একটা থা’প্প’রের সব কয়টা দাঁত ফে’লে দিব বেরিয়ে যা আমার রুম থেকে।”

কথাগুলো বলার সময় ভাইয়ার চোখ গুলো একদম র’ক্তে’র মত লাল হয়ে ছিল। আমি কি কথা বলছিলাম তা ভেবে এখন নিজের উপরে রাগ হচ্ছে।কেন যে কথাগুলো বলতে গেলাম আমি।কথাগুলো না বললে হয়তো আমাকে এমন ধমক খেতে হতো না! ইস হাতগুলো কেমন শক্ত করে ধরেছে,কি ব্যথা পাচ্ছি আমি। ভয়ে কিছু বলতে পারছি না,যদি আবার বকা দেয়। তাই নিচের দিকে চোখ করে চুপ করে রইলাম। আমাকে এমন চুপ থাকতে দেখে, ভাইয়া একটু পর আমার হাত ছেড়ে দিলো আর কয়েক বার ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শান্ত করলেন এবং আমাকে শান্ত গলায় বলল,

“যা এখন আমার রুম থেকে আর ফারদার তোর মুখে যেন আমি এইসব কথা না শুনি।খুব শখ তোর তাই না এই বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার? তোকে আমি কখনো এই বাসা থেকে যেতে দিব না কথাটা কানে ভালোভাবে ঢুকিয়ে নে।”

আমি আর কোন প্রকার বাক্য ব্যয় করলাম না।সেখান থেকে দৌড়ে আমার নিজের রুমে চলে গেলাম আর বিছানায় ওপর হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম, আর মনে মনে বলতে লাগলাম,

“কেন কেন কর তুমি সব সময় আমার সাথে এমন? আমি কি খুব খারাপ আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না ?তোমার মনে কি আমার জন্য একটু অনুভূতি নেই?আমার এই মনের লুকানো অনুভূতি কি তুমি কখনো বুঝবেনা?তোমার এত বকা এত কথা শুনে আমি তাও তোমার কাছে যাই।আর তুমি সব সময় আমার সাথে একই ব্যবহার কর।আমি কি কখনো তোমাকে বোঝাতে পারবো না যে, আমি তোমাকে কতটুকু ভালবাসি।”

এইসব কথা মনে মনে আওড়াতে আওড়াতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।ঘুম ভাঙলো খালামণির ডাকে মিটিমিটি চোখ খুলে দেখি,খালামণি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আর ছোট ছোট করে আমার নাম নিয়ে ডাকছে। খালামণিকে এভাবে দেখে আমি খালামনির কোলে মাথা রেখে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললাম,

“খালামণি তুমি কখন এলে?”

খালামণি আমার কথা শুনে বললেন,

“এইতো এখনই এলাম তোকে ডাকতে। ওঠ এখন অনেকটা বেলা হয়েছে শাওয়ার নিয়ে নিচে আয়, রাফসানদের বাসার সবাই এসে পড়েছে।”

খালামনির কথার প্রতি উত্তরে আমি খালামণিকে বললাম,

“আচ্ছা,আমি শাওয়ার নিয়ে আসছি তুমি যাও।”

খালামণি আমার কথা শুনে পুনরায় বললেন,

“তাড়াতাড়ি আয় তবে আমি গেলাম,ওদিকে অনেক কাজ আছে। একা হাতে সব সামলাতে পারছিনা তুই আয়,আমাকে একটু আমায় সাহায্য করবি।”

খালামনির কথার প্রতি উত্তরে আমি বললাম,

“আচ্ছা তুমি যাও আমি ১৫ মিনিটের মধ্যে আসছি।”

খালামণি আমার কথা মত নিচে চলে গেলেন। আর আমি উঠি ওয়াশরুমে শাওয়ার নেওয়া বের হলাম। তারপর রেডি হয়ে একবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলাম ।তারপরে আর কি সোজা নিচে চলে আসলাম। নিচে এসে দেখি খালামণি রাফসান ভাইয়ের আম্মু আর আব্বুর সাথে কথা বলছে, কিন্তু সেখানে জায়ান ভাইয়াকে দেখতে পেলাম! না থাক ভালোই হয়েছে,এখন থেকে আর আমি তার কাছে যাব না। দুপুর দুইটা বাজে আমি সবার সাথে টুকটাক কিছু কথা বলি খালামণিকে কাজে সাহায্য করছি। ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজানোর পরে খালামণি সবাইকে ডাকলেন খাওয়ার জন্য,সবাই এসে একসাথে খেতে বসলো খাওয়া-দাওয়া শেষে বেশ কিছুক্ষণ সবাই মিলে গল্পগুজব করল। তারপর বিকালের দিকে রাফসান ভাইয়েরা চলে গেলেন।

চলবে

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।আর সবাই কমেন্ট বক্সে জানাবেন গল্পটা কেমন হয়েছে। প্লিজ সবাই ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here