মনের ক্যানভাসে পর্ব ৮

0
610

#মনের ক্যানভাসে🌼
#পর্ব:৮
#Tabassum Ferdous Samiya

বিকেল সাড়ে চারটা বাজে আমরা সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছি।আমি আর খালামণি পাশা পাশি বসে টিভি দেখছি।আর নাদিরা আপু ফোনে কথা বলছে তার শাশুড়ীর সাথে।অপি আপু তার ফোনে কি যেন করছেন আমি এই সব কিছু নিয়ে ভাবছি না।আমার তো শুধু সকালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।তখন জায়ান ভাইয়া হঠাৎ ওই ভাবে আমার এত কাছে চলে আসাটা আমি কিছুতেই স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছিনা। বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা ছিল উনার কথার মাঝে,কাছে আসার মাঝে।এই সব ভেবেই তো আমার শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছে মনে মাঝে, কেমন যেন নিজেকে খুব সুখী সুখী মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার কাছে আসাতে।এই সব ভাবছি তখন অপি আপু খালামণিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“মামীমণি জায়ান কোথায়? ওকে তো দেখতে পাচ্ছি না?সেই একবার লাঞ্চ টাইমে দেখলাম তার পরে আর দেখা হলো না!”

খালামণি অপি আপু কথা শুনে বলো,
“জায়ান হয়তো ওর রুমে ঘুমাচ্ছে।আর অপি একটা কথা বলি তোমাকে শুনো, জায়ান তোমার থেকে বেশ কয়েক বছরের বড় তাই, তুমি জায়ানকে ভাইয়া বলে ডাকবে কেমন।”

খালামণির কথা শুনে অপি আপুর মুখটা একদম চুপসে গেল।অপি আপু আবার খালামণিকে থমথমে গলায় বলল,

“আসলে কি বলো তো মামীমণি জায়ান আমার থেকে মাত্র এক কি দেড় বছরের বড় হবে। তাই ওকে আর কি ভাইয়া বলবো জায়ানই ঠিক আছে। আর আমি জায়ান বলেই কমফোর্ট ফিল করি।”

অপি আপুর কথা শেষ হতে না হতেই খালামণি আবার অপি আপুকে বলো,

“তাও জায়ান তোমার থেকে বড় হয়। তাই তুমি তাকে ভাইয়া ডাকার চেষ্টা করো এখন থেকে ঠিক আছে।”

খালামণির কথা শুনে অপি আপু একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল,
“আচ্ছা, চেষ্টা করব।”

কথাটা বলি অপি আপু তার মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে একটা ভেংচি কাটলো। ঠিক তখনই নাদিরা আপু আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বলল,

“চল আমরা আজকে সন্ধ্যায় কোথাও থেকে ঘুরে আসি। আর আসার সময় বাইরে থেকে ডিনার করে আসবো কেমন।”

আমি নাদিরা আপুর কথা শুনে বললাম,
“ঘুরতে গেলে তো ভালোই হবে। কিন্তু আজকে আকাশে বেশ মেঘ করেছে। যে কোনো সময় বৃষ্টি হতে পারে আর এই অবস্থায় বাইরে যাওয়া কি ঠিক হবে?”

আমার কথা শুনে অপি আপু লাফ দিয়ে বলে উঠলো,
“এই মেয়ে তুমি এত বেশি বুঝো কেনো সব সময়? আপু যখন বলছে তখন আমরা যাবো।আর আমি তো আসার পরেই জায়ানকে বলেছি যে, আমি আর ও একসাথে ঘুরতে যাবো।আর এখন যখন আপু ও বলো তাহলে আর দেরি কেনো একটু পরেই বেরিয়ে পরি।”

অপি আপুর কথা শুনে আমি চুপ করে রইলাম।কারণ পাগলের সাথে তর্ক করতে নেই পাগল বেটি। তখন নাদিরা আপু অপি আপুর উদ্দেশ্যে বলল,

“অপি সায়রা কিন্তু কথাটা খারাপ বলেনি। আজকে বাইরের ওয়েদারটা বেশি ভালো না যে কোন সময় বৃষ্টি হতে পারে।”

তখন খালামণি শান্ত গলায় সবার উদ্দেশ্যে বলল,
“সায়রা একদম ঠিক বলেছে এই আবহাওয়াতে আর বাহিরে যেতে হবে না।”

তখন অপি আপু খালামনি কে বলল,
“মামীমণি প্লিজ তুমিও এখন সায়রার মত বলো না। আর এখন বৃষ্টি হবে না দেখো, আমরা তো একটু ঘুরে চলে আসব।”

খালামণি আর কিছু বলো না শুধু বলল,
“তোদের যা ইচ্ছা তাই কর আমার কিছু বলার নেই।আমার কথা তো আর কেউ শুনবি না।”

কথাগুলো বলে খালামণি তার রুমে উঠে চলে গেল। এখন বসে রইলাম আমরা তিনজন তখন নাদিরা আপু বলল,

“আসলে কি বলতো আমিও বাহিরে যেতাম না এই আবহাওয়ার মাঝে। কিন্তু তোদের ভাইয়া বলল আজকে সে তোদের ট্রিট দিবে।তার জন্য এখন তোদের নিয়ে যেতে হবে আমায়।”

নাদিরা আপুর কথা শেষ হতেই অপি আপু এক্সট্রা একটু ভাব নিয়ে আমাদের দুজনকে বলল,

“সেই যাই হোক আমার কথা একটাই, আর তা হলো জায়ান আমার সাথে যাবে।”

অপি আপুর কথা শুনে নাদিরা আপু বলল,
“সে পরে দেখা যাবে জায়ান আমাদের সাথে সেভাবে কোথাও যায় না। আর আজকে যদি যেতে রাজি হয় তাহলে তো ভালোই।”

নাদিরা আপু আর অপি আপু ঘুরতে যাওয়ার বিষয় নিয়ে নানা রকম কথা বলছে। আমি আর সেসব কান দিলাম না। আমার তো এখন রাগ হচ্ছে অপি আপুর ওপরে। এই মেয়েটা সব সময় শুধু জায়ান জায়ান করে কেনো আমি বুঝি না। সব কিছুর মাঝে শুধু জায়ান ভাইয়াকে টেনে নিয়ে আসবে। যেন সে তাকে ছাড়া একা পা ও চলতেই পারে না। এই মেয়ের ঢং দেখলে আমার গা জ্বলে কিন্তু তাও, তাকে কিছু বলতে পারি না।এই সব ভাবনার মাঝে নাদিরা আপু আমাকে বলো,

“কিরে সায়রা তুই এত কি ভাবছিস তখন থেকে?”

আপুর কথা শুনে আমি একটু চমকে গেলাম তার পরে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,
“কই কিছু ভাবছি না তো।বলো আপু কি বলবে?”

আমার কথা শুনে অপি আপু আর নাদিরা আপুকে কিছু বলতে দিলো না সে নিজেই আমাকে খোঁচা মেরে বলতে শুরু করলো,
“তুমি যখন কিছু ভাবছো না তাহলে তো আমাদের সব কথা শুনতে পেয়েছো।তাই না তাহলে আবার আপুকে জিজ্ঞাসা করছো কেনো?”

অপি আপুর কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।তখনই নাদিরা আপু বলল,
“হয়েছে এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত কথার কি আছে!আর একবার বলে দিলেই তো হয় তাহলে আর এত কথা হয় না।”

নাদিরা আপুর কথা শুনে অপি আপু বলল,
“ভালো লাগে না সব সময় এই মেয়েটা ভাব ধরে বসে থাকবে। আর আমাদের ওকে তা বারবার বলতে হবে। অন্যের বাসায় থেকে কি করে যে এত ভাব নেই লোকে বুঝি না।”

অপি আপুর কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল।আমি এখন আবার কি করলাম যে তার জন্য আমাকে এই সব কথা শুনাল?মনে মনে ভাবছি ওই সময় নাদিরা আপু অপি আপুকে ধমক দেয় বলল,
“অপি তুই আবার শুরু করেছিস?”

অপি আপু নাদিরা আপুর কোনো কথার উওর দিলো না উল্টো আপু কে বলল,
“আমি ভুল তো আর কিছু বলিনি।যা বলেছি সব কথা একদম ঠিক বলেছি।এখন আমি যাই আমাকে আবার রেডি হতে হবে।”

কথাটা বলে অপি আপু সোফা থেকে উঠে চলে গেল। আমি আর নাদিরা আপু সেখানেই বসে রইলাম।তখন আপু আমাকে বলল,

“তুই ওর কথাই কিছু মনে করিস না। জানিস তো অপি একটু পাগল টাইপের মেয়ে।”

আপুর কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম।
তখন আপু আবার বলল,
“শোন তখন যে কথা বলছিলাম তা হলো, আজকে আমরা শাড়ি পড়ে ঘুরতে যাব বুঝলি!”

আপুর কথা শুনে আমি অনেক খুশি হলাম আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম। কারণ শাড়ি তো আমার আছে কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারি না। আপু আমার অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো আমার কি সমস্যা।তাই আপু মৃদু হেসে আমাকে বলল,

“তোর এত চিন্তা করতে হবে না। আমি তোকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিব।তখন আর শাড়ি পড়ে হাঁটতে তোর কোনো রকম অসুবিধা হবে না।এখন যা তোর একটা সুন্দর শাড়ি নিয়ে আমার রুমে আয়।আর আমি যাই জায়ানকে বলে আসি ওকে ও আমাদের সাথে যেতে হবে।”

আপুর কথা শুনে আমার মনটা একদম ভালো হয়ে গেল।কারণ আমার শাড়ি পড়তে অনেক ভালো লাগে।কিন্তু আমি শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারি না বলে কখনো তেমন বেশি একটা শাড়ি পরিনা। আর এখন যখন আপু বলো ভালোভাবে শাড়ি পরিয়ে দিবে তাহলে তো আর কোনো অসুবিধা নেই।মনে মনে এই সব ভেবে নিয়ে আমি আপুকে বললাম,

“আচ্ছা, তুমি যাও তাহলে আর আমি গিয়ে আমার জন্য একটা শাড়ি নিয়ে তোমার রুমে যাচ্ছি।”

কথাটা শুনে আপু উপরে চলে গেল। আর আমিও আপুর পেছনে পেছনে যাচ্ছি আমার রুমে।খালামণিদের বাসাটা ডুপ্লেক্স হওয়ার কারণে জায়ান ভাইয়া আর আপুর রুমটা উপরে, আর সাথে আমার রুমটা উপরে দিয়েছে। কিন্তু আমি খালামণির সাথে নিজে থাকি।আমার সব জিনিস পত্র উপরে আমার রুমে রাখা আছে। তাই এখন আমাকেও উপরে যেতে হবে। আমার রুমে এসে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করলাম। আর তা নিয়ে চলে গেলাম আপুর রুমে।

——————

সন্ধ্যা সাতটা বাজে এখন, ড্রয়িং রুমে বসে আছে জায়ান ভাইয়া। আপু আমাকে রেডি করে এখন নিজে রেডি হচ্ছে। আর আমাদের অপি আপা তিনি আগেই রেডি হয়ে চলে গেছে জায়ান ভাইয়ের কাছে। আমি আর আপু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে আসলাম।আজকে আমি লাল রঙের একটা শাড়ি পড়েছি। যার মধ্যে সোনালী আর কালো সুতার কাজ করা বর্ডার রয়েছে সাথে ম্যাচে ব্লাউজ। আর একদম সিম্পল মেকআপ। আমার এত ভারী মেকআপ করতে কখনোই ভালো লাগেনা। তাই সব সময় সিম্পল মেকআপ করি। মুখে হালকা ফাউন্ডেশন আর চোখের নিচে কাজল,চোখের উপরে আয়লাইনার আঁকা টানা ভাবে।আর ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক ব্যাস। আমাদের দুজনকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে অপি আপু বলল,

“ওই তো আপু চলে এসেছে জায়ান।”

অপি আপুর কথা শুনে জায়ান ভাইয়া নিচের দিকে থেকে মাথা তুলতে তুলতে রাগী ভাবে বলল,

“এত সময় লাগে তোদের রেডি হতে আমি সেই কখন থেকে বসে আছি কি এত করিস তোরা?”

ব্যাস এরপর জায়ান ভাইয়া আর একটাও কথা বলতে পারিনি। জায়ান ভাইয়ার চোখ এসে পরলো আমার উপরে। আর আমাদের দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। তার চোখে আমার চোখ পড়তেই আমার সকলের কথা মনে পড়ে গেল।তার জন্য আমি জায়ান ভাইয়ার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। কিন্তু উনি আমার দিক থেকে চোখ ফেরালেন না। এক মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। এভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে, অপি আপু যখন দেখল জায়ান আমার দিকে এদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখন অপি আপু জায়ান ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“কি হলো জায়ান ওভাবে ওদিকে তাকিয়ে কি দেখছো চলো এবার আমাদের যেতে হবে।”

অপি আপু কথা শুনে যেন জায়ান ভাইয়া তার হুশ ফিরে পেল। আর আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আমতা আমতা বলল,

“হ্যাঁ হ্যাঁ, চল এবার আমাদের বেরোতে হবে। আম্মু যাবে না বলল আমাদের একা যেতে হবে।”

কথাটা বলে জানেন ভাইয়া আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সোফা থেকে উঠে বাহিরে চলে গেল। আর আমরাও ভাইয়ার পেছনে বের হলাম। বাহিরে আসতেই নাদিরা আপু আমাদের বলল,

“আজকে আমরা সবাই রিক্সা করে যাব।”

নাদিরা আপুর কথা শুনে অপি আপু মুখটা ছোট করি বলল,
“বাসায় গাড়ি থাকতে রিক্সাতে কেন যাব? আমার রিক্সা তে একদম ভালো লাগে না।”

আমি অপি আপুকে বললাম,
“কেনো আপু রিক্সাই করে গেলেই তো ভালো হবে। প্রকৃতির খোলা বাতাস উপভোগ করা যাবে আর তার উপরে আজকে আকাশে মেঘ করেছে রিক্সা করে ঘুরতে বেশ ভালো লাগবে।”

আমার কথা শুনে জায়ান ভাইয়া বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে আজকে আমরা সবাই রিক্সা করেই যাব। তোরা এখানে দাঁড়া আমি দুটো রিক্সাওয়ালা মামাকে ডেকে নিয়ে আসি।”

কথাগুলো বলে জায়ান ভাইয়া রিক্সা ডাকতে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে দুটো রিক্সা নিয়ে এসে নাদির আপুকে বলল,

“তুই আর অপি এই রিক্সাতে উঠ।আমি আর সায়রা পেছনেরটায় আসছি।

জায়ান ভাইয়া কথা শুনে অপি আপু তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলো,

“না না, সায়রা কেন তোমার সাথে যাবে? আসো না তুমি আর আমি একসাথে যাই। আর ওরা দুজন আরেকটাতে যাক তাহলেই তো হয়।”

অপি আপুর কথা শুনে জায়ান ভাইয়া ঘাড়কাত করে একবার অপি আপুর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলল,

“অপি আমি বেশি কথা বলা সুন্দর করি না। তাই একবার যেটা বলেছি সেটা চুপচাপ কর। আর তোর যদি যেতে ইচ্ছে না করে তাহলে তুই বাসায় যা।”

ব্যাস আর একটাও কথা খরচ করতে হলো না ভাইয়াকে।চুপচাপ গিয়ে বসে পড়লো রিক্সাতে। আমি আর জায়ান ভাইয়া আরেকটা রিক্সাতে পাশাপাশি বসলাম। তারপর রিক্সা মামা রিক্সা চালানো শুরু করল। ঠিক তখনই হঠাৎ জায়ান ভাইয়া!

চলবে

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ব্যস্ততার কারণে রিচেক করতে পারিনি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here