ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু পর্ব_১৪

0
1312

ভালোবাসি_প্রিয়_সিজন_টু
পর্ব_১৪
#সুলতানা_সিমা

আজ এক সপ্তাহ হলো শান্তি চৌধুরী পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। এই একসপ্তাহ দিনরাত মিহান উনার সেবা করেছে। মিহান ছোট থেকেই এমন। তাঁর দাদীর কিছু হলে সে সব ছেড়ে দেয়। তাঁর প্রিয় বইটাও অপ্রিয় হয়ে যায়। তাঁর দাদী আর বই ছাড়া কিছুই তাঁর কাছে আগে নয়। আগে তাঁর দাদী আর পরে বই। তারপরে দুনিয়ার সবকিছু। দিহানও মিহানের মতো দাদীকে খুব ভালোবাসে সেও। কিন্তু এবার যেন দিহান পুরোপুরিই বদলে গেছে। দিন রাত ২৪ঘন্টা সে ফোন নিয়ে পড়ে থাকে। না খাওয়ার জন্য ভাবে না অন্যকিছু। সারাদিন শুধু ফোন আর ফোন। কখনো চ্যাট করে কখনো ফোনে কথা বলে। সুমনা চৌধুরী বুঝে গেছেন দিহান প্রেম করে। প্রেম করলে অবশ্য উনার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু উনার ভয় হয়। যদি কোনো খারাপ মেয়ে হয় আর দিহানকে ঠকায়। তখন?
_কিরে এখনো ভাত বাড়ছিস?” দিলারার কথায় ভাবান্তর ঘটে সুমনার। ছেলের বিষয়টা এতো বেশি ভাবাচ্ছে উনাকে যে উনি সব কাজে গন্ডগোল পাকাচ্ছেন। সকালে হানিফ চৌধুরীর কাপড় ধুয়ে দিতে গিয়ে অর্ধেক কাপড় বালতিতে রেখে চলে এসেছেন। সুমনা ভাত বেড়ে দিলেন৷ সায়রা সব টেবিলে নিয়ে রাখলেন। দিলারা উপরে গেলেন সবাইকে খেতে ডাকতে। উনাদের বাসায় খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট টাইম আছে। কিন্তু থাকলে কি হবে? কেউ টাইম দেখে টেবিলে এসে বসবেনা। ভাত বেড়ে সবাইকে ডেকে ডেকে আনতে হয় গিয়ে। দিলারা সবাইকে ডেকে আসার পরে ইশি দিশা আগে নেমে আসলো। দুজন এসে পাশাপাশি বসলো। তারপর লুপা রুহান আর দিয়া আসলো। ইশি সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আছে কখন মিহান নিচে আসবে। মিহানকে না দেখলে তাঁর ভালো লাগেনা। সবকিছুতে সে মিহানকে চায়। একটু পরে মিহান তাঁর দাদীকে নিয়ে নেমে আসলো। মিহানকে দেখেই ইশি হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো। তাঁর চোখ আটকে গেলো মিহানের গেজ দাঁতের হাসিতে। এতো সুন্দর কেন এই ছেলেটা? ইশির কাছে,এই বাড়ির সব থেকে বেশি সুন্দর মানুষটা হচ্ছে মিহান। তাঁর উচ্চতা,সিক্স প্যাক বডি,ফর্সা গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি,চিল্কি খাড়া চুল,তাঁর গেজ দাঁতের মিষ্টি হাসি সব কিছুই পাগল করার মতো। মিহান এসে তাঁর দাদীকে বসিয়ে উনার পাশের চেয়ারে সেও বসলো। তাঁর পাশে একটা চেয়ার ফাঁকা। এইখানে এসে দিহান বসবে। ইশি উঠে দৌঁড়ে গিয়ে মিহানের পাশের চেয়ারে বসলো। এভাবে বসায় সবাই তাঁর দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকালো। ইশি জোরপূর্বক হেসে প্লেট উল্টালো। মিহান এসবে খেয়াল করেনি। সে হেসে হেসে শান্তি চৌধুরীর সাথে কথা বলছিলো। যখন দেখলো দিহান আসেনি তখন গলা উঁচিয়ে ডাক দিলো,

“দিহায়ায়ায়ায়ান। এই দিহান। তারাতাড়ি খেতে আয়।” দিহানকে ডেকে আবার শান্তি চৌধুরীর দিকে তাকালো। তাকিয়ে দেখল উনি অগ্নিচোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন। মিহান বলল,”আমি কি কিছু করেছি?” শান্তি চৌধুরী বললেন,”তোদের কতোদিন বলেছি তোরা বড়দের তুইতোকারি করবি না, নাম ধরে ডাকবি না। দিহান তোর এক বছরের বড় হয়। তোদের কথাবার্তায় তোদের কেউ শিক্ষিত ফ্যামেলির সন্তান বলবে না।” মিহান কোমল গলায় বলল,”দাদুমনি আস্তে কথা বলো। তোমার সমস্যা হবে।” শান্তি চৌধুরী রাগে মিহানের থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন। দিশা বলল,”ভাইয়া এবার তোর বউয়ের রাগ ভাঙা।” শান্তি চৌধুরী দিশার দিকে রাগি লুকে তাকালেন। এইমাত্র উনি কি বললেন? তবুও তুই করে বলছে। দাদীর রাগি লুক দেখে দিশা নিজের প্লেটে ভাত বাড়তে লাগলো। আড়চোখে একবার শান্তি চৌধুরীর দিকে তাকালো। উনি এখনো রাগি লুকে তাকিয়ে আছেন। মিহান শান্তি চৌধুরীর গালে চুমু খেয়ে বলল, “আমার সুন্দরী বুড়ি, এবার কী খেতে পারি?” শান্তি চৌধুরী মৃদু হাসলেন।

দিহান ফোন টিপে টিপে এসে নিচে নামলো। ফোন টিপে টিপে চেয়ারে ধরে টান দিলো। ইশি ধমক দিয়ে বলল,”একটা মানুষ বসে আছে এখানে। চোখে পড়েনা তোর?” দিহান একবার তাকিয়ে আবার ফোন টিপতে টিপতে গিয়ে দিশার পাশের চেয়ারে বসলো। সায়রা চৌধুরী সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। সুমনা দিলারাকে বলল,”ভাবি তুমি খেতে বসো।” দিলারা পরে খাবেন বললেন। দিহান চ্যাট করছে আর মিটিমিটি হাসছে। ইশি দিশাকে ইশারা দিলো দিহান কার সাথে কথা বলে দেখতে দিশা উঁকি দিয়ে দেখল তার প্রাণের ভাই নাউজুবিল্লাহ টাইপ কথা বলছে। দিশা নিজে লজ্জা পড়ে গেলো৷ ইশি ইশারায় বলল, কি? দিশা ইশারায় বুঝালো বাদ দে। ইশি বুঝে গেলো কেস কি। সে দিহানকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,”দিশা জানিস নতুন প্রেম সাংঘাতিক।”ইশির কথা কানে আসতেই দিহান ইশির দিকে কপাল কুঁচকে তাকাল। মেসেজে ফোন কেঁপে ওঠতেই আবার ফোনে মনোযোগ দিলো। দিশা বলল,”হ্যাঁ রে। নতুন নতুন প্রেম শুরু হলে মানুষ যে কতো কি করে তা বলে লাভ নেই। জানিস? আমার একটা ফ্রেন্ড আছে ও যখন প্রথম প্রেমে পড়লো তখন টয়লেটে বসে হাগু করতে করতেও কথা বলতো।” লুপা মাত্র মুখে ভাত ঢুকিয়েছিলো। দিশার কথায় সে হা হয়ে গেলো। দিয়া লুপার দিকে তাকিয়ে বলল,”আপু তুমি কি মুখ নাড়াতে পারছো না?” দিয়ার কথায় সবাই লুপার দিকে তাকালো। লুপা মুখে ভাত নিয়ে হা করে রাগি চোখে দিশার দিকে তাকিয়ে আছে। দিশা বলল, “কিরে মুখ বন্ধ কর।” লুপা মুখের সব ভাত প্লেটে ফেলে বলল,”ছিঃ আপু। খাবার টেবিলে বসে যা নয় তা বলে যাচ্ছো। খাবই না আমি। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।” লুপা নাক ছিটকাতে ছিটকাতে টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো। লুপার কান্ডে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। মিহানও হাসছে। ইশি মিহানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মানুষের গেজ দাঁতের হাসি এতো সুন্দর হয় কেন। মিহান হাসি থামিয়ে দিশাকে বলল,”দিশা তোর মুখের লাগাম থাকা দরকার।

_________________________

ঢাকা থেকে আসার পর আজ প্রথম শামুর সাথে দেখা করবে নীল। নিজেকে স্বাভাবিক করতে তাঁর একসপ্তাহ সময় লেগে গেছে। এই একসপ্তাহ সে প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় খুন হয়েছে অতীত নামক অস্ত্রের কাছে। মানুষের জীবনের সব থেকে কঠিন কাজ হচ্ছে, কারো প্রতি মায়া কাটানো। কিন্তু এই কঠিন কাজে একবার সফল হয়ে গেলে দ্বিতীয় বার মনে মায়া জন্মানোটা কঠিন। আর সফল না হলে মায়া নামক ছোট্ট শব্দটা বার বার বেহায়া করে তুলে। কখনো নিজের কাছে কখনো অন্যের কাছে। নীলের মনের ঘরের কোনো একটা কোণে হয়তো লুপার প্রতি মায়া রয়ে গেছে। তাইতো তমালপুরে লুপার সাথে দেখা হওয়ায় এলোমেলো হয়ে গেছিলো সে। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছিলো তাঁর সবকিছু। লুপাকে কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছিলো না। বার বার পুরনো দিনে চলে যাচ্ছিলো তাঁর মন। কিন্তু সব সময় যে আবেগকে প্রশ্রয় দিতে নেই। লুপার মতো মেয়েকে ভালোবাসা যায়না। ও ভালোবাসার যোগ্য না। ওর মতো মেয়ে নিয়ে শুধু ফুর্তি করা যায় ভালোবাসা যায়না।

রেডি হয়ে বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো নীল। আজকেও যেতে মন চাইছে না তাঁর। কিন্তু শামু ফোন করে বলল সে একটা পার্কে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে৷ নীল প্রথমে যাবেনা বলল। কিন্তু পরক্ষণে সে বেরিয়ে গেলো। শামুর অনেক অভিযোগ জমা হয়েছে নীলের উপর। নীল কেন ফোন দেয়না,কেন মেসেজ দেয়না,কেন তাঁর ফোন তুলেনা। আরো অনেক কিছু। নীল নিজের সমস্যা বলে সব সামলে নিয়েছে। কিন্তু শামু বুঝতে চায়না। সে কেঁদে কেটে বন্যা করে দিচ্ছে। শামুর সাথে সম্পর্কটা ছিলো লুপার উপর রাগ করে। কিন্তু শামু তাকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে। সে চায়না সে যেভাবে ধোঁকা খেয়েছে যেভাবে ঠকেছে সেভাবে কেউ ধোঁকা খাক বা ঠকুক। শামুর জন্য তাঁর খুব মায়া হয়। অনেকবার চেয়েছে শামুকে বলতে, শামু তুমি বিয়ে করে নাও। কিন্তু বলতে পারেনা। তাঁর মনে হয় শামুর মন ভেঙে যাবে। মন ভাঙার কষ্ট সে বুঝে। সে চায়না আর কেউ এই কষ্টটা পাক।

পার্কে পৌঁছে দেখলো শামু একটা পিচ্চি বাচ্চার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। নীল গিয়ে শামুর পাশে বসলো। তাঁদের মধ্যে এক হাত দূরত্ব। শামু এখনো খেয়াল করেনি নীল এসেছে। নীল গলা খাঁকারি দিলো। শামু তাকিয়ে দেখলো নীল বসে আছে৷ শামু তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো। কতদিন পর নীলকে দেখেছে সে। মনে হচ্ছে কতো যুগ পরে দেখেছে। নীল ঢাকায় আসার পরে কতবার বলেছে এসো একবার দেখা করি। কিন্তু নীল আসেনি। বলেছে তাঁর কাজে সে ব্যস্ত। অথচ শ্রাবণের কাছে ফোন দিলে শ্রাবণ জানাতো নীল রুমেই বসে আছে। অভিমানে শামুর চোখ ছলছল হয়ে এলো। শামুর ছলছল চোখ দেখে নীল বলল,”সরি দেরি হয়ে গেলো।”শামু মুখ ঘুরিয়ে নিলো। অভিমানে তাঁর চোখের পানিটা গড়িয়ে পড়লো। পিচ্চিটা ফ্যালফ্যাল চোখে শামুর দিকে তাকিয়ে তাকলো। শামু ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে পিচ্চির হাতে দিলো। চকলেট পেয়ে সে পিচ্চিটা দৌড়ে চলে গেলো। নীল শামুকে বলল,”কাঁদছো কেন? দেরিতে এসেছি বলে?” শামু কিছু বলল না। চোখের পানি মুছে চুপচাপ বসে থাকলো। আবারও পানি বেরিয়ে আসলো৷ নীল বলল,”কেঁদো না প্লিজ। বললাম তো সরি।” শামু এবারও চুপ। সে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু অভিমানে তাঁর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। নীল শামুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। শামু মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নীল কানে ধরলো। তারপরে বলল,”সরি। প্লিজ কান্না থামাও। দেখো কান ধরেছি।” শামু তাকালো না। সে না তাকালেও ঠিক দেখতে পারছে নীল কানে ধরে আছে। নীলের এই কাজকর্ম গুলো শামুকে নীলের প্রতি আরো দূর্বল করে দেয়। চাইলেই সে এই একতরফা সম্পর্ক থেকে বের হতে পারেনা। অনেকবার চেয়েছে এই সম্পর্কের ইতি টানতে কিন্তু পারেনা সে। শামু দেখলো একটা মেয়ে তাঁদের পিক তুলছে। শামুর রাগ হলো। এতোক্ষণ ধরে এই মেয়েটা সব কাপলদের পিক তুলে যাচ্ছে। আজব মেয়ে একটা। সে নিজেই তো বস্তা মার্কা একটা ছেলের সাথে বসে আছে। তাহলে তাঁর সাথে পিক তুলেনা কেন? শামু গম্ভীর গলায় নীলকে বলল,”উঠো মানুষজন দেখছে।
_দেখুক।” শামু আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল,”
_মেয়েটা ছবি তুলছে।” নীল তাকালো। নীল তাকাতেই মেয়েটা আরেকটা ক্লিক মেরে দিলো। শামু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, “কত্ত বড় সাহস মেয়েটার চোখে চোখ রেখে পিক তুলে।” নীল কানে ধরেই বলল,”তুলুক। আগে বলো সরি এক্সেপ্ট করছো।” শামু মৃদু হেসে হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছলো। নীল দাঁড়িয়ে গেলো। বেঞ্চে বসতে বসতে বলল,” ছবি তুলছে বলে এতো রাগছো কেন? বাদ দাও।” শামু বলল,”বাদ দিবো মানে? এসব যদি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়?
_ দিক যত দিতে পারে। আজকাল পিক হোক বা ভিডিও হোক সব এডিট বলে চালিয়ে দেওয়া যায়।” শামু আর কিছু বলল না। নীল বলল,”রাগ ভেঙেছে?” শামু মৃদু হাসলো। তারপর বলল,”চোখ বন্ধ করো।
_কেন?
_করো প্লিজ।” নীল চোখ বন্ধ করে নিলো। শামু ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করলো৷ বক্সের ঢাকনা খুলে নীলের নাকের সামনে তুলে ধরে বলল,”বলোতো কী।”নীল চোখ বন্ধ রেখে বলল,
_ কী কী?
_আরে শুকে বলো।” নীল ঘ্রাণ শুকে প্রফুল্ল হয়ে বলল,”পায়েস।” বলেই চোখ খুলে ফেলল। পায়েস দেখে শামুর হাত থেকে বক্স নিলো। তারপর বলল,”তুমি রান্না করেছো?” শামু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে চামচ বের করে দিলো। নীল চামচ হাতে নিয়েই খেতে লাগলো। শামু হেসে উঠল। নীল পায়েস পছন্দ করে জানতো কিন্তু পাগলের মতো পছন্দ করে জানতো না। নীল দু-তিন চামচ খাওয়ার পরে তাঁর মনে পরে গেলো লুপার কথা। সেদিন লুপা পায়েস রান্না করেছিলো যা নীল ছুঁয়েও দেখেনি। শুনেছিলো পায়েস রাঁধতে গিয়ে নাকি লুপার হাত পুড়ে গেছিলো। নীলের বুকটা ভারি হয়ে এলো। হাত থেকে বক্স রেখে দিলো সে। শামু বলল,”কি হলো ভালো হয়নি?
_ন্ন না ভা ভালো হয়েছে। তু তুমি খাও। আমার পে পেটে স সমস্যা। বেশি খাবোনা।[মিথ্যে বলল]” শামু কথা বাড়ালো না। বক্সটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলো। তাঁর মনটা খারাপ হয়ে গেলো৷ কেন জানি মনে হচ্ছে নীল তাকে মিথ্যে বলছে। নীলের মুখটা বিষন্ন লাগছে। আচ্ছা কী এতো কষ্ট নীলের? শামুর একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। নীল বলল,”আ আজ তাহলে উঠি।
_একটু হাঁটি প্লিজ।” শামু কন্ঠে মিনতি। নীল বলল”
_হুম চলো।

___________________

অরিন মাত্র পড়তে বসেছে। বসতেই তাঁর ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল। অরিন চেয়ার ছেড়ে উঠল। হয়তো দিহান মেসেজ দিয়েছে। দিহানের সাথে একটুবেশিই কথা হয় তাঁর। তবুও অরিনের মনে হয় কম কথা হয়৷ দিহানের গলা না শুনলে তাঁর ঘুম আসেনা। দিহানের সাথে সারাদিন কথা বলতে ইচ্ছে করে। অরিন জহুরা বেগমকে দিহান আর তাঁর বিয়ের কথা সব বলে দিতে চেয়েছে। কিন্তু সাহস পাচ্ছেনা। এরকম বিয়ের কথা কি সত্যিই বিশ্বাস যোগ্য? কেউ কি বিশ্বাস করবে এটা? আর প্রমাণ চাইলে কি বা প্রমাণ দেখাবে? শুধু কী মুখের কথা? অরিনকে এখনো তিনি ফোনে কথা বলতে দেখেননি। তাই অরিনকেও প্রশ্ন সম্মুখীন হতে হয়নি। যখন তিনি সেলাই ঘরে গিয়ে সেলাই করতে বসেন রান্না করতে যান বা বাইরে কাজ করেন তখন অরিন দিহানের সাথে কথা বলে। আর উনি ঘরে থাকলে চ্যাট করে। এতো এতো কথা বলার পরেও তাঁদের কথা শেষ হয়না।

অরিন ফোন হাতে নিয়ে দেখলো দিহান মেসেজ দিয়েছে “কল দেই?” অরিন হাসলো। ছোট করে হুম পাটিয়ে দিলো। লেখাপড়া বাদ দিয়ে যে হারে সে কথা বলছে, আল্লাহই জানে তাঁর পড়ালেখার কি হবে। দিহান ফোন দিলো। অরিন একবার উঁকি দিয়ে দেখলো তাঁর মা কই। উনি রান্না করছেন। অরিন ফোন রিসিভ করে এসে চেয়ারে বসলো।
ফোন রিসিভ করতেই দিহান বলল”
_মিস ইউ বউপাখি।”
_দিনে কয়বার বলতে হয় এইটা?
_সারাদিনই তো মিস করি বউপাখিটাকে।” অরিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। দিহান বলল”
_কি করো সোনা?
_আপনার সাথে কথা বলি। আপনি?
_তোমাকে মিস করি।” অরিন কিঞ্চিৎ শব্দ করে হেসে উঠে। দিহান বলে”
_ইশ হাসিটা শুনে তো ইচ্ছে করছে এখনই চলে আসি। আর তারপর আমার বউপাখিটাকে,,,
_কেমন আছেন?” অরিন বুঝে গেলো দিহান কোন লাইনে চলে যাচ্ছে, তাই কথা ঘুরিয়ে নিলো। দিহান বলল”
_একটু আগেই তো কথা হলো তখন তো বললাম কেমন আছি। এখন আমার রোমান্টিক মুডে পানি ঢালতে হলো? ” অরিনের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। একটু আগে যখন দিহান ফোন দিয়েছিলো তখন বলেছে আগামী সপ্তাহে সে চলে যাবে। আর নাকি দুতিন বছরের ভেতর আসবে না। অরিনের ভয় হয়। এই দুতিন বছর সে কিভাবে থাকবে। যদি এই দুতিন বছরে সে দিহানকে হারিয়ে ফেলে? দিহান বলল,”বউপাখিটা চুপ কেন গো? ঝাড়ি দেইনি তো সোনা।” অরিন ভেজা গলায় বলল”
_আপনার না গেলে হয়না?
_আমি পিএইচডিটা করেই চলে আসবো সোনা। তুমি চিন্তা করো না। আজ দাদুমনি সুস্থ হয়ে গেছে। আজই দাদুমনিকে জানিয়ে দিবো। যাওয়ার আগে একটা ব্যবস্থা করে যাবো সোনা ভয় নেই। তুমি তো বলেছো দাদুমনি তোমায় চেইন পড়িয়েছেন। তাহলে আর ভয় কিসের?
_তবুও আমার ভয় হচ্ছে।
_ভয় নেই সোনা। আমি আছি তো তোমার সাথে। শুনো একটা গুড নিউজ আছে।
_কি?
_আমি দু-তিন দিনের ভেতর আসবো। এবার না বলোনা প্লিজ। আর না বললেও আমি কিন্তু শুনবো না।
_এবার আমি না বলবোই না।” অরিনের চোখ থেকে জল বেরিয়ে এলো। এতোদিন দিহান আসতে চেয়েছে অরিন শুধু না বলেছে। গিয়েছে তাঁরা এক সপ্তাহ হয়নি এখন যদি আবার তমালপুর আসে তাহলে ডাক্তার বাড়ির সবাই সন্দেহ করবে সেজন্য। কিন্তু এখন আর অরিন না বলবে না। দু-তিন বছরের জন্য দিহান চলে যাবে একটা পলক দিহানকে সামনে থেকে দেখতে চায় সে। যদিও ভিডিও কলে তাঁদের বেশিরভাগ সময় কথা হয়, কিন্তু ভিডিও কল আর সামনে থেকে দেখা কি এক?

অরিন আর দিহান কথা বলতে থাকলো। কথা বলতে বলতে এক ঘন্টা পার হয়ে গেলো। অরিনের সেদিকে খেয়ালই নেই। সেলাই মেশিনের শব্দ আসছে। অরিনের বুকটা ধুক করে উঠলো। তাহলে তাঁর মায়ের রান্না শেষ? রান্না শেষ করে কি উনি শুবার ঘরে একবার এসেছেন নাকি সোজা সেলাই ঘরে গিয়েছেন? এখানে আসলে অবশ্য অরিনকে ফোনে কথা বলতে দেখে কিছু জিজ্ঞেস করতেন। অরিন বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে আবার কথা বলতে লাগলো।

শাওন এসে অরিনদের দরজার সামনে দাঁড়ালো। জহুরা বেগমের সাথে কথা বলতে এসেছে সে। বাজার থেকে আসার সময় শুনেছে ইমনের সাথে অরিনের বিয়ের আলাপ চলছে। শাওন এসেছে জহুরাকে বিয়ে দিতে না বলতে। সেলাই মেশিনের শব্দ শুনে বুঝে গেলো উনি ওই ঘরে। সেলাই ঘরে যেতে পা বাড়িয়ে থেমে গেলো। অরিনের গুন গুন আওয়াজ আসছে। এটা পড়ার ধরন নয়। কারো সাথে কথা বলছে। শাওন পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকলো।

_ছিঃ আপনার একটুও লজ্জা নেই। মুখে যা আসে তাই বলে যান।” শাওন কপাল কুঁচকে তাকাল। ফোনের ওপাশের কথা শাওন শুনতে পাচ্ছেনা। অরিন আবার বলল,”ইশ। বউ বলে এতো লুচ্চামি মার্কা কথা বলতে হবে? আমার বুঝি লজ্জা লাগেনা?

_কার সাথে কথা বলছো তুমি?” হঠাৎ কারো গলা কানে আসতেই পুরো গা ঝাকিয়ে কেঁপে উঠলো অরিন।

চলবে,,,,,,।

যারা এখনো গ্রুপে এড হননি এড হয়ে যান প্লিজ।

https://facebook.com/groups/248089863499125/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here